#শরতের_বৃষ্টি
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–১৩
সূর্যোদয়ের সময় পৃথিবী যেনো অপরূপ রূপে সাজে। নানা রকম মুগ্ধতায় পৃথিবী ছেয়ে যায়। রক্তিম সূর্য হালকা পুবাকাশে উঁকি দিয়েছে। চারপাশে আবছা আলো দেখা যাচ্ছে। চারপাশে নানা রকম পাখিদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। সূর্য উঠতেই পাখিদের ঘুম ভেঙে গেছে। অনকেই খাবারের সন্ধানে বেড়িয়ে গেছে। বিভিন্ন গাছের ডালে দোয়েল পাখি নেচে নেচে মিষ্টি সুরে ডাকছে। একেক পাখির একেক মধুর সুর। আঁখি মন ভরে পাখিদের ডাক শুনছে। অনুভব করছে মিষ্টি একটা সকাল। আঁখি ফজরের নামায পড়ে বেলকনিতে গিয়ে মিষ্টি সকাল দেখছে। ওর মনটা একেবারে ফুরফুরে হয়ে গেছে। আঁখি লম্বা শ্বাস নিয়ে মুচকি হেসে পাশে গাছপালার দিকে তাকালো। গাছে সুন্দর সুন্দর পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে। কিছু পাখি একা আবার কিছু পাখি জোড়া বেধে বসে ডাকছে। কাপল দুটোকে দেখতে ভালোই লাগছে। আঁখি ভাবলো এখন এক কাপ কফি হলে মন্দ হতোনা। কফি খেতে খেতে ওদের সাথে আরও কিছু সময় কাটিয়ে নাচ প্রাক্টিজ করবে। যেই ভাবা সেই কাজ। আঁখি রান্না ঘরে চলে গেলো কফি বানাতে। কিছুক্ষণ পর কফি নিয়ে আবারও বেলকনিতে ফিরে এলো আঁখি। আস্তে আস্তে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে আর ঠান্ডা আবহাওয়া উপভোগ করছে। কফি শেষ করে আঁখি নিজের নাচ প্রক্টিজ করতে গেলো।
সূর্যের কিরন সাজ্জাদের চোখে পড়তেই ওর ঘুম ভেঙে গেলো। ও বুঝে গেলো সকাল হয়েছে। সাজ্জাদের ঘুম খুব ভারি একবার ঘুমোলে সহজে উঠেনা। সকাল বেলা কখনও ৯টার আগে উঠেনা। মাজে মাঝে ১০টাও বাজায়। আগে মাজে মাঝেই কলেজে দেরি করে যেত। ছট বেলায় তো স্কুলে যেতেই চেত না। মিসেস শাহনাজ জোর করে উঠিয়ে স্কুলে নিতেন। সাজ্জাদের চোখে আলো পড়তেই ও কপাল কুঁচকে চোখে হাত দিলো। গায়ের পাতলা কম্বলটা মাথা পর্যন্ত টেনে ঢেকে নিলো। তবুও আজ কেনো জানি ওর ঘুম আসছে না। মনে হচ্ছে আঁঁখি জোরে গান বাজিয়ে নাচছে। যদিও আখি আজ খুব আস্তে নাচছে। খুব কেয়াল না করলে ওর গান শোনা যায়না। তবুও সাজ্জাদের মনে হয় ও জোরে নাচছে৷ প্রতিদিন শুনতে শুনতে ওর এটা শুধু কানে বাজে এখন। সাজ্জাদ বিরক্ত নিয়ে উঠে বসলো। গায়ের কাঁথাটা সরিয়ে উঠে বেলকনিতে গেলো। বেলকনিতে গিয়ে ওর মেজাজ আরও খারাপ হলো। কালো রংয়ে পুরো বেলকনি নষ্ট হয়ে আছে। সাজ্জাদ দেগে ওগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকলো। কাল রাতে ও যা ভেবেছিলো তাই হয়েছে৷ তাড়াতাড়ি এসেও আঁখি কে পেলো না। যতটুকু আঁখি কে শাস্তি দিতো তা শুধু ওর রাগের কারনে ফসকে গেলো। সাজ্জাদ রেগে বেলকনির রেলিং শক্ত করে ধরলো। দাঁতে দাঁত চেঁপে বললো। “মিস চক্ষু! তোমায় যদি এর শাস্তি না দিচ্ছি তবে আমার নামও সাজ্জাদ নিশান্ত খান নয়।”
কথাটা বলেই সাজ্জাদ রেগে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
আঁখি নাচ প্রাক্টিজ শেষ করে ডাইনিং টেবিলে এসেছে। ডাইনিং টেবিলে আসতেই দেখলো আতিক সোফায় বসে কার্টুন দেখছে। মিসেস রোকেয়া রহমান রান্না ঘরে সকালের নাস্তা বানাচ্ছেন। আমিনুর রহমান এখনও বাজার থেকে ফিরেনি। আঁখি আস্তে করে আতিকের পাশে বসে পড়লো। ওর থেকে রিমোট টা নিয়ে নিজেরর পছন্দের চ্যানেলে দিলো। আঁখি মুচকি হাসি দিয়ে সোফায় বসে টিভি দেখতে লাগলো। আতিক বোকার মতো তাকিয়ে আছে। কেমন চিলের মতো ছোঁ মেরে ওর রিমোট টা নিয়ে গেলো। আতিক রেগে আঁখির দিকে তাকিয়ে বললো।
“আপু! এটা তুই কি করলি?”
আঁখি ওর দিকে ঠোঁট উল্টে তাকালো। চোখ ছোট ছোট করে না জানার ভান করে বললো।
“কই? কি করলাম?”
“কি করছোছ সেটা আবার জিজ্ঞাসা করতাছোছ? দেখতে পাচ্ছিলি না আমি কার্টুন দেখছি? তুই চ্যানেল পাল্টালি কেনো?”
“আমার ওটা দেখতে ভালো লাগেনা তাই এটা দেখেছি।”
“তোর ভালো লাগেনা বলেই পাল্টাবি? তোর ভালো লাগলেই আমার কি না লাগলেই আমার কি? আগের চ্যানেলে দে!”
আতিকের কথা শুনে আঁখি রেগে ওর দিকে তাকালো। দাঁত চেপে ওর দিকে তাকালো। মানুষের ভাই কত ভালো থাকে আর ওর ভাই আস্ত একটা শয়তান। আঁখি আবার টিভির দিকে তাকিয়ে বললো।
“তুই সারাদিন টিভি দেখোছ তখন আমি কিছু বলি? আমি তো দেখতেও আসিনা। এখন আমি দেখছি আমায় বিরক্ত করবি না একদম। যা এখান থেকে!”
“এই তুই রিমোট দে!”
“রিমোট দিবো মানে? আমি দিবোনা সর এখান থেকে!”
আঁখি রিমোট শক্ত করে ধরে টিভি দেখতে লাগলো। আতিক জোর করে ওর থেকে রিমোট নিতে গেলো। দুজনে রিমোট নিয়ে টানাটানি করতে লাগলো। আতিক আঁখির সাথে শক্তিতে পারছেনা তাই জোরে চিল্লিয়ে ওর মাকে বললো।
“আম্মু! তোমার মেয়েকে এক্ষুনি রিমোট দিতে বলো। না হলো ভালো হবেনা বলছি।”
মিসেস রোকেয়া রহমান রান্না ঘরে রান্নায় ব্যস্ত। তিনি বিরক্ত নিয়ে কিছুক্ষণ রান্না অফ থেকে আবার নিজের কাজ করতে লাগলেন। আঁখি আতিকের কথা শুনে বললো।
“এই কি ভালো হবেনা রে? আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস্? আম্মু তোমার ছেলেকে ভালো হতে বলো? অভদ্র কোথাকার।”
আতিক রেগে গেলো আঁখির দিকে তাকিয়ে ফোসফাস করতে লাগলো। ও ছোট হয়েছে বলে কোনো দামেই পায়না আঁখির কাছে। আতিক আঁখির দিকে তাকিয়ে রেগে বললো।
“আমি অভদ্র? অভদ্র তুই। ছোটদের সাথে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় জানিস না।”
“ও লে লে.. আসছে ভদ্র ছেলে। আগে বড়দের সম্মান করতে শিখ! সম্মান পেতে হলে আগে সম্মান দিতে হয়!”
আতিক কতায় কিছুতেই পারছেনা। রিমোট নিতেও পারছে না। তাই রেগে আঁখির চুলগুলো টান দিয়ে নিজের রুমে দৌড়ে গিয়ে দরজা আটকে ফেললো। আঁখি একটু আগে চুলগুলো বেধে এসেছে আর আসতে না আসতেই নষ্ট করে দিলো। আতিককেও কাছে পেলোনা এর শোধ তুলতে। আঁখি রেগে চিল্লিয়ে ওর মাকে বললো।
“আম্মু! তোমার ছেলে আমার চুল ছিড়ে নিয়েছে। আমার কত সুনদর করে বেধেছিলাম তাও নষ্ট করে দিয়েছে। তুমি ওকে কিছু না বললে দেইখো কি করি!”
ওদের চিল্লাচিল্লি শুনে মিসেস রোকেয়া রহমান খুব বিরক্ত হলেন। রান্না ছেড়ে নাড়ুনি নিয়ে রান্নাঘর থেকে তেরে এলেন। আঁখি ওর মাকে দেখেই ভয়ে সিঁটিয়ে গেলো। মিসেস রোকেয়া রহমান নাড়ুনি উচিয়ে আঁখির দিকে তাক করে বললেন।
“তোদের জ্বালায় কি শান্তিতে ঘরে থাকা যাবেনা? তোরা কি থামবি নাকি আমি দুজনকে আচ্ছা মতো পিটাবো? সারাদিন একজন আরেকজনের পিছনে লেগে থাকোছ। দূরে গেলে বুঝবি কত ভালো লাগে।”
“আম্মু! তুমি সব সময় আমাকেই বকো। আতিককে কিছুই বলো না। এজন্যই তো বাদর হচ্ছে!”
রেগে কথাটা বলে আঁখি নিজের রুমে যেতে লাগলো। মিসেস রোকেয়া রহমান পিছন থেকে চিল্লিয়ে বললেন।
“হ্যাঁ ওই একটাই তো পারো! সবসময় দৌড়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করতে। এছাড়া তো একটাও কাজ পারোনা। যত্তসব বদমাইশের দল! ”
কথাটা বলেই মিসেস রোকেয়া রহমান রান্নাঘরে চলে গেলেন।
—————————-
কলেজের গেইট দিয়ে ঢুকতেই দেখলো সাজ্জাদ কলেজের মাঠে চেয়ারে নিয়ে বসে আছে। ওকে দেখেই আখির মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। আনিকা আসতে চায়নি বলছে আজ ক্লাস হবেনা শুধু কলেজ সাজানো আর প্রাক্টিজ হবে। তবুও আঁখি উৎফুল্ল হয়ে এসেছে কি হয় তা ও দেখবে। কিন্তু এসে কলেজের মাঠে যে সাজ্জাদকে দেখবে তা কখনও ভাবেনি। কলেজের বাইরে সাজ্জাদকে দেখে খুশি হয়েছিলো ভেবেছিলো আজ আসেনি। কিন্তু আজতো কলেজের মধ্যে চলে এসেছে। এখন আঁখির নিজের উপরেই রাগ হচ্ছে। আঁখি কে এভাবে দাড়িয়ে পড়তে দেখে আনিকা ওকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো।
“কিরে? দাঁড়িয়ে পড়লি কেনো? ভিতরে চল!”
আঁখি রেগে ওর দিকে তাকিয়ে বললো।
“ওই সাজগাজ এখানে কি করছে?”
“তুই সাজ্জাদ ভাইয়ার নামটা ঠিক করে বলতে পারোছ না? এজন্যই তো ভাইয়া তোকে চক্ষু বলে। ভাইয়া প্রতিবারেই এসব অনুষ্ঠানে কাজ করানোর দায়িত্ব নেয়।”
আনিকার কথা শুনে আঁখি রেগে বললো।
“ইস্ ভাই! তোর কোন মায়ের ভাই রে? ভাই ফুটাতে আসছে। ওই ফাজিল ছেলের আর গুনগান গাইছ না। তাহলে থাপ্পড় খাবি।”
আঁখির কথা শুনে আনিকা হালকা ঢোক গিলে বললো। আহত চোখে ওর দিকে তাকালো। আঁখি চোখ ছোট ছোট করে আনিকার দিকে তাকিয়ে বললো।
“আচ্ছা বলতো? এই ছেলেটা এত খারাপ তবুও একে দায়িত্ব দেয় কেনো?”
আনিকা জোরে শ্বাস ফেললো। ওকে যাই বলুক সাজ্জাদ ওর শত্রু। সাজ্জাদ কে নিয়ে যে ভালো কিছু বলবে সেও আঁখির চোখে খারাপ। আনিকা ওর দিকে তাকিয়ে বললো।
“সাজ্জাদ ভাইয়া কলেজের বেশিরভাগ স্যারের কাছে ভালো আবার কিছু কিছু স্যারের কাছে খারাপ। তেমনি এলাকায়েও বুঝলি? তাছাড়া সব মেয়েরা তো তার জন্য পাগল। পাগল হওয়ার কারন আছে। সাজ্জাদ ভাইয়া দেখতে খুব সুন্দর, টাকা পয়সা আছে। আবার অনেক ভাব নিয়েও চলে। এই কলেজে ভাইয়ার অনেক ক্ষমতা। কারন তার বাবা কলেজের সভাপতি।”
আনিকার কথা শুনে আঁখি মুখ ভেংচালো। রেগে সামনে আগাতে আগাতে বললো।
“ইস্ যেইনা চেহারা নাম রাখছে পেয়ারা। কোথায় সুন্দর রে? তার মধ্যে আমি সুন্দরের ‘স’ ও দেখিনা।”
আনিকা কিছুই বললোনা চুপচাপ সামনে চললো। কলেজের শহীদ মিনারে নতুন করে রং করাচ্ছে সাজ্জাদ। তাদের এটা ওটা বলে দিচ্ছে। বাকিরা কলেজের ময়লা পরিস্কার করছে। কেউ ক্লাসরুম ঝাড়ু দিচ্ছে। সবাই নানা কাজে ব্যস্ত। অনেকেই আজ আসেনি সবাই জানে আসলেই কাজ করতে হবে। সাজ্জাদের সাথে অর্নব, রনি, আশিক ও আছে। হঠাৎ করেই রনি অর্নবের বাহুতে জোরে ধাক্কা দিয়ে বললো।
“এই যে প্রেম দিওয়ানা! তোমার প্রেমিকা আসছে।”
রনির কথা শুনে অর্নব সামনে তাকিয়ে দেখলো আনিকা আসছে। বেগুনি একটা ড্রেস পড়া। চুলগুলো সামনে কিছু ছেড়ে রেখে বেঁধেছে। অর্নবের কাছে ওকে অপরূপ সুন্দর লাগছে। মন ভরে ওকে দেখতে লাগলো। এই মেয়েটার জন্যই ও অফিস রেখে কলেজের সামনে আড্ডা দেয়। দু বছর আগে থেকেই আনিকাকে অনেক পছন্দ করে। আনিকাকে একবার ওর মনের কথাও বলেছে কিন্তু আনিকা রিজেক্ট করে দিয়েছে। আর বলেছে ওর বাবা ওকে পড়ালেখা শেষ করার আগে বিয়ে দিবেনা। তবুও অর্নব মাষ্টার্স শেষ করে আনিকার বাড়ি প্রস্তাব পাঠিয়ে ছিলো কিন্তু ওর বাবা না করে দিয়েছে। অর্নবের বাবা একজন বিজনেসম্যান। অর্নব ওর বাবার কথায় অফিসেও জয়েন করেছিলো কিন্তু আনিকাকে না দেখে ওর কিছুতেই অফিসে মন বসেনা। তাই অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিলো। তখন থেকেই অর্নব ভেবে রেখেছে আনিকার পড়ালেখা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ও কলেজে এসে আনিকাকে দেখবে। আর এখনও সেটাই করছে। রনি অর্নবকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওর পিঠে চাপড় মেরে বললো।
“এবার চোখ ফিরা ভাই! মেয়েটার চেহারায় তোর বদ নজর পড়বে। দেখবি কাল আর ওর দিকে তাকানো যাবে না।”
কথাটা বলেই রনি শব্দ করে হাসলো। ওর দেখা দেখি আশিক ও হেসে উঠলো। অর্নব মুখ ভার করে ওদের দিকে তাকালো। সাজ্জাদ ওদের হাসি শুনে ওদের দিকে তাকালো। ওদের চোখ অনুসরণ করে সামনে তাকালো। সামনে তাকিয়ে আঁখিকে দেখে ওর রাগ উঠে গেলো। সাজ্জাদ রেগে রনির দিকে তাকিয়ে বললো।
“দাঁত কেলানো বন্দ কর! আনিকা আর চক্ষুকে ডাক দে!”
ডাক দেওয়ার কথা শুনেই ওরা বুঝে গেলো আজ আঁখির কপালে মঙ্গল বাদে শনি রবি সোম বুধ সবেই নাচছে। রনি গলাটা ঠিক করে আনিকা কে ডাকলো। আনিকা বড় ভাই হিসেবে চুপচাপ এসে পড়লো। আঁখিও ওর সাথে আসলো। সাজ্জাদ আঁখির দিকে তাকালো না। মনে মনে বললো।” একটু অপেক্ষা করো! কষ্ট কাকে বলে বোঝাবো তোমাকে।” আঁখি সাজ্জাদের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে দাঁত চেপে মনেমমনে বললো। ” ইশ্ ঢং দেখো? আমার দিকে তাকাচ্ছেই না। মনে হয় আমাকে চিনেই না। শালা খচ্চর!”
সাজ্জাদ আড় চোখে এক পলক আঁখির দিকে তাকিয়ে আনিকার দিকে তাকালো। মুচকি হেসে বললো।
“আনিকা জানোই তো কলেজের অনুষ্ঠান হলে কত কাজ। ওদের সাহায্য করো।”
আনিকা এই ভয়টাই পাচ্ছিল। এজন্যই আসতে চায়নি তবুও আঁখির জন্য আসতে হলো। ও রেগে আঁখির দিকে তাকালো। আঁখি কোনো মতে জোর পূর্বক হাসলো। আনিকা জোরপূর্বক হেসে সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে বললো।
“ভাইয়া! আমার বাড়িতে জরুরি কাজ আছে। আমি আসতে চাইনি আঁখি জোর করে নিয়ে এসেছে। আমাকে বাড়ি যেতেই হবে ভাইয়া। সরি!”
আনিকার কথা শুনে আঁখি গরম চোখে ওর দিকে তাকালো। আসলেও আনিকার বাড়ি কাজ আছে। আজ ওদের খালামনির বাসায় যাবে। ওর মাকে বলেছে যাবে আর আসবে। কিন্তু এখানে এসে আটকে গেলো। ওর মা তো এবার ওকে বকবে। আনিকা হতাশ চোখে ওদের সবার দিকে তাকালো। ওর চেহারা দেখে অর্নবের খুব খারাপ লাগলো। ও সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে বললো।
“ছেড়ে দে! বললো তো জরুরি কাজ আছে।”
আনিকাকে কষ্ট দেওয়া সাজ্জাদের কাজ নয়। তাই মুচকি হেসে বললো।
“আচ্ছা তুমি যাও!”
আনিকা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে চলে যাচ্ছিলো। আঁখি ওকে হাত দিয়ে ধরে নিজেও বললো।
“আমার বাড়িতেও কাজ আছে আমিও যাই!”
কথাটা বলেই আঁখিও আনিকার সাথে পা বাড়াচ্ছিলো। কিন্তু সাজ্জাদ রেগে পিছন থেকে বললো।
“আমি একা আনিকাকে যেতে বলেছি। আনিকা একা যাবে। রনি! ঝাড়ু আন!”
আনিকা আঁখি কে বললো।
“দোস্ত ঝামেলা করিছনা আমায় যেতে দে! আম্মু বকবে।”
আঁখি আনিকার ব্যপারটা বুঝতে পেড়ে ওকে ছেড়ে দিলো। আনিকা চলে গেলো। আঁখি রেগে চুপচাপ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। রনি ঝাড়ু নিয়ে আসতেই সাজ্জাদ বললো।
“এই ঝাড়ু নিয়ে নিচের সব রুম পরিস্কার করবে। না করলে স্যারদের বলবো। রনি ওকে ঝাড়ু দে!”
“আমি ঝাড়ু দিতে পারবো না। কখনও ঝাড়ু দেইনি।”
“সবাই কাজ করছে। তোমাকেও করতে হবে। নাহয় স্যারকে ডাকবে এক্ষুনি যাও!
স্যারের কথা শুনে আঁখি চুপচাপ ঝাড়ু নিয়ে চলে গেলো। সাজ্জাদ বেজায় খুশি আঁখি কে খাটাতে পেরে। আঁখি সাজ্জাদ কে গালাগাল দিতে দিতে চলে গেলো।
ইনশাআল্লাহ চলবে……