শরতের বৃষ্টি পর্ব-২

0
4485

#শরতের_বৃষ্টি
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–২

“কিসের এত ভাব গো তোমার কিসের এত ভাব?
ভেবেছো কি পড়ছে দেশে মেয়েদের অভাব!
পেখম মেলে বসলে তো আর ময়ূর হয় না কাক!
আমার মতো স্বামী পাবে এটাই তোমার লাখ!
নারী হয়ে জন্মীয়েছো করতে স্বামীর ঘর…
আমায় তুমি ভাবতে পারো তোমার হুবুবর।
আমায় তুমি ভাবতে পারো তোমার হুবুবর।”

বাইকে উপর বসে বন্ধুদের সাথে মিলে গান গাইছে সাজ্জাদ। মাঝে মাঝে তুড়ি বাজাচ্ছে বা বাইরের উপর হাত দিয়ে শব্দ করছে। খুব হাসাহাসি করে গান গাইছে। পাশ দিয়ে কলেজের মেয়েরা যাচ্ছে। আঁখি একটু দূরে দাড়িয়ে আছে। এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। ও খুব ভয় পাচ্ছে। সকালের জন্য যদি সাজ্জাদ কলেজের সবার সামনে ওকে ধরে তো কি করবে? হালকা ঢোক গিলে আস্তে আস্তে সামনে আগাচ্ছে। সাজ্জাদ গানে ব্যস্ত আঁখি ভাবছে এর মাঝেই ও ফুরুত করে চলে যাবে কিন্তু আফসোস। আঁখি কিছুদূর আগাতেই সাজ্জাদ বাইক নিয়ে সোজা ওর সামনে এসে থামলো। এভাবে আসাতে আঁখি ভয় পেয়ে দু কদম পিছিয়ে যায়। সাজ্জাদ সানগ্লাসটা খুলে সাদা গেঞ্জিতে ঝুলিয়ে রাখলো। বাইকের আয়নায় চুলগুলো স্টাইল মেরে একটু হাত দিয়ে ঠিক করে সিটি বাজিয়ে ঘার ঘুড়িয়ে আঁখির দিকে তাকালো। সাজ্জাদকে তাকাতে দেখে আকি ভয় পেয়ে গেলো ঢোক গিলে এদিকে ওদিক তাকাতে লাগলো। সাজ্জাদ মুচকি হেসে পরনের জ্যাকেটটা ঠিক করে বাইক থেকে নেমে পড়লো। ও নামতেই আঁখি জোর পূর্বক হাসলো।
সাজ্জাদ ওসবে পাত্তা না দিয়ে পা ঝুলিয়ে বাইকের বসে বললো।

“আমি কি? সকালে কি যেনো বলেছিলে?”

আঁখি এবার বড়সর ঢোক গিললো। হালকা হেসে বললো।

“আপনি কি মানে? আমি তো সকালে অনেক কথাই বলেছি আপনি কোনটার কথা বলছেন?”

সাজ্জাদ বাইক থেকে সোজা হয়ে দাড়িয়ে গেলো। আঁখির দিকে দু কদম এগিয়ে দাঁতে দাঁত চেঁপে বললো।

“সকালে আমায় কিসের সাথে তুলনা করেছিলে? আমি জানি কি? তখন ঠিকঠাক শুনতে পাইনি।”

আঁখি জোর পূর্বক ঠোঁট প্রসারিত করলো। দাঁতে দাঁত চেঁপে মনে মনে বললো। “শালা সাজগাজের বাচ্চা! তোকে আমি দেখে নিবো। তুই ভিখারী চরম লেভেলের ভিখারী তুই।”

“কি হলো? এখন বোবা হয়ে গেলে? সকালে তো ঠিকই পটপট করে বলছিলে। এখন বলো?”

আঁখি মুচকি হেসে বললো।

“আপনি মানুষ। আমার মতো সাধারন মানুষ! আমার যেমন দুটো হাত আছে পা আছে আপনারও দুটো হাত আছে পা আছে। কথা বলার জন্য একটা মুখও আছে। মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য গরুর মতো দুটো চোখও আছে আপনার।”

“সাট আপ!”

সাজ্জাদের ধমক শুনে আঁখি ভয় পেয়ে থেমে গেলো। সাজ্জাদ রেগে ওর দিকে তাকিয়ে বললো।

“তোমার সাহস তো কম না। সকালে ভিখারী বানালে একন আবার গরু বানিয়ে দিলে? তোমাকে তো?”

কথাটা বলে হালকা থামলো সাজ্জাদ। তারপর আঁখির দিকে তাকিয়ে বললো।

“এবার তুমি সারা রাস্তায় ভিক্ষা করবে। আমাকে ভিখারী বলা? এখানের সবার কাছে ভিক্ষা চাইবে।”

সাজ্জাদের কথা শুনে আঁখি চমকে গেলো। ও বুঝতেই পারেনি এমন কিছু বলবে। অগতয়া সাহস দেখিয়ে বললো।

“কখনই না। আমি কখনই এটা করবো না। কি করবেন আপনি?”

ওর কথা শুনে সাজ্জাদ একটা সেন্টারফ্রুট মুখে দিয়ে চিবাতে চিবাতে বললো।

“ভালো ভাবে বলছি শুনে যাও! নাহলে বিপদ আছে।”

আঁখি কোনো গ্রাহ্যই দিলো না। সাজ্জাদ ওর সব বন্ধুদের ডাকলো। সাথে একালার ছোট দু’টা ছেলেও আছে। ওরা সব সময় সাজ্জাদের সাথেই আড্ডা দেয়। ওদের আসতে দেখেই আঁখি ভয় পেয়ে গেলো। ঢোক গিলে থেমে থেমে বললো।

“আরে আরে ওনাদেরকে ডাকছেন কেনো?”

সাজ্জাদ ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বললো।

“ভিক্ষা চাইতে বলেছিলাম শুনলে না। কথায় আছে না, সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙুলটা তো বাকাতেই হবে। ভালো করে বলেছিলাম শুনো নি এখন তো অন্য পথ দেখতেই হবে।”

এর মাঝেই সাজ্জাদের বন্ধু অর্নব, রনি, আশিক, অন্তু ও ফাহিম চলে এসেছে। অন্তু আর ফাহিম সাজ্জাদের বন্ধু না। ওরা অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ে কিন্তু ওদের সাথে চলাফেরা করে। ওরা এসেই সাজ্জাদের পিঠে চাপড় মেরে পাশে দারিয়ে গেলো। আঁখি ওদের দেখেই বড়সর ঢোক গিললো। মনে মনে ভাবতে লাগলো সাজ্জাদ এবার কি করতে বলে ওকে। মনে মনেই সাহস নিয়ে বললো।” যা বলুক কিছুই করবো না। আমাকে তো জোর করে করাতে পারবেনা।” অর্নব সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে বললো।

“কি হয়েছে রে? ডাকলি কেনো?”

সাজ্জাদ ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বললো।

“অনেকক্ষন হলো আমরা কোনো বিনোদন দেখিনা চল এবার একটু আমাদের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করি!”

সবাই ভ্রু কুঁচকে তাকালো। সাজ্জাদের কথার মানে বুঝতে পারলোনা। সাজ্জাদ আঁখির দিকে তাকিয়ে বললো।

“কি চক্ষু? তুমি কি সবার কাছে গিয়ে হাত পেতে বলবে ‘ যে কেউ আমায় দয়া কইরা দুইটা টাকা ভিক্ষা দেন!’ কি বলবে?”

সাজ্জাদ হাত পেতে এ্যাক্টিং করে দেখালো। ওর সব বন্ধুরা উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো। মনেহয় কোনো সার্কাস চলছে। আসি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। মনে মনে খুব রাগ হচ্ছে ওর। সাজ্জাদ আবার বললে।

“কি হলো চক্ষু?”

আঁখি কপাল কুচকে সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে বললো।

“আমার নাম ঠিক করে বলেন!”

সাজ্জাদ উচ্চ স্বরে হেসে বললো।

“ঠিকই তো বলছি। আঁখি মানেই চক্ষু। আমি কি ভুল বলছি বল তোরা?”

ওর বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো সাজ্জাদ। ওর বন্ধুরা সবাই হেসে মজা নিয়ে বললো।

“নাহ নাহ ঠিকেই আছে। নামটা জোস!”

কথাটা বলেই আবার হেসে উঠলো। আঁখি দাঁতে দাঁত চেঁপে দাড়িয়ে আছে। ওর কলেজেও দেরি হয়ে যাচ্ছে। আঁখি চুপচাপ চলে যেতে নিলেই সাজ্জাদ ওর সামনে দাড়িয়ে পরলো। দুষ্ট হেসে ওর মুখের সেন্টারফ্রুটটা আঁখির মাথার উপরে মারলো। ওর বন্ধুদের ইশারা করতেই সবাই আঁখির গায়ে সবার মুখের সেন্টারফ্রুট মারলো। আঁখি অবাক হয়ে তাকালো। ও ভাবতেই পারেনি এমন হবে। সেন্টারফ্রুট গায়ের থেকে ছুটাতে গেলেই দেখলো ছুটাতে পারছেনা। চুলের সাথে লেগে আছে। রাগে দুঃখে আঁখির কান্না পেলো। সাজ্জাদ আঁখির কান্ড দেখে হেসেই যাচ্ছে। সাথে ওর বন্ধুরা তো আছেই। আঁখি সাজ্জাদের দিকে রেগে তাকিয়ে বাড়ির দিকে চলে গেলো। কিছুদূর গিয়ে সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে বললো।

“সাজগাজের বাচ্চা! তোকে আমি দেখে নিবো।”

কথাটা বলেই দিলো দৌড়। সাজ্জাদ আঁখির দিকে রেগে তাকালো। ওকে কি বলে সম্মোদন করলো বুঝতে পারলো না। ওর বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বললো।

“এই কি বলে গেলো রে ওই চক্ষু? ”

রনি ঠোঁট উল্টে বললো।

“জানিনা রে। তোদের কোনো মানেই বুঝিনা সারাদিন একজন আরেকজনের পিছনে লেগে থাকোছ!”

“আমি ওর পিছনে লাগিনা। ও আমার পিছনে লাগে। এই সাজ্জাদ নিশান্ত খান কারো পিজনে লাগেনা বুঝলি?”

ভাব নিয়ে কথাটা বললো সাজ্জাদ। এবার ওর বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বললো।

“সকালে খাইনি চল রেস্টুরেন্টে!”

সবাই বাইক নিয়ে চলে গেলো।

————————————

আঁখি বাড়ি যাচ্ছে আর রেগে কটমট করছে। পা দিয়ে শব্দ করে দোতলায় উঠলো। সাজ্জাদদের বাড়ির দরজায় কলিংবেল দিলো। সকাল ১০ সাজ্জাদের বাবা অফিসের জন্য বের হচ্ছিলেন তাই তিনিই দরজা খুললেন। আঁখিকে দেখে বললেন।

“কি ব্যাপার? তুমি কলেজে যাওনি?”

আখি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো।

“আমি গিয়েছিলাম কিন্তু সাজ্জাদ ভাইয়া কলেজের সামনে বসে ছিলো। আমি ওখান দিয়ে ঢুকতেই আমার গায়ে সেন্টারফ্রুট মেরেছে। সাথে তার বন্ধুরাও ছিলো। দেখেন আংকেল কি অবস্থা করেছে!”

আঁখি সেন্টারফ্রুট গুলো দেখিয়ে বললো। মিসেস শাহনাজ কাছেই ছিলেন তিনি ভয়ে ভয়ে স্বামীর দিকে তাকালেন। আশরাফ খান রেগে স্ত্রীর দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার আঁখির দিকে তাকিয়ে বললো।

“তুমি যাও ওকে আমি জিজ্ঞাসা করবো। ”

কথাটা শুনেই আঁখি নাচতে নাচতে তিনতলায় চলে গেলো। যেতে যেতে শুনলো আশরাফ খান তার স্ত্রীর সাথে রাগারাগি করছে। তার মানে আজ সাজ্জাদের খবর আছে। এটা ভেবেই আঁখি নাচতে নাচতে তিনতলায় চললো।

ইনশাআল্লাহ চলবে….

(গল্পটি কেমন লাগছে বলবেন প্লিজ?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here