#শরতের_বৃষ্টি
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৪
আঁখি ভাবনা মতো নিজের কাজটা করে এসে খুশিতে লাফাচ্ছে। প্রতিশোধ নেওয়া শেষ এবার শুধু সাজ্জাদের রিয়াকশন দেখার পালা। প্রতিশোধ নিতে পেরে আঁখির কষ্টটা অনেকটাই কমে গেছে। মনের আনন্দে লাফাতে লাফাতে গোসল করতে চলে গেলো। মনের আনন্দে গুন গুন করে গান গেয়ে গোসল শেষ করলো আঁখি। গোসল শেষে বেলকনিতে বসে ওর চুলগুলো আঁচড়াচ্ছে। এমন সময় আঁখির ভাই আতিক দৌরে এসে বললো।
“আপু! আপু!”
আঁখি বিরক্তি নিয়ে ওর দিকে তাকালো। আতিক ক্লাস সেভেনে পড়ে। ওর থেকে ওর ভাই অনেক ছোট কিন্তু ও সবসময় আঁখির পিছেই লেগে থাকে। আঁখি চোখ গরম করে আতিকের দিকে তাকিয়ে আবার নিজের চুল আঁচড়াতে মন দিলো। আতিক এবার ওর পাশের চেয়ারে আয়েশ করে বসলো। আঁখি চোখ বাকিয়ে আতিকের দিকে তাকালো। আতিক হালকা হেসে বললো।
“আপু তুইতো অলরেডি ভাইরাল হয়ে গেছিস্!”
আঁখি ওর দিকে চোখ গরম করে তাকালো। ও ভাইরাল হতে কত চেষ্টা করেছে পারেনি। আজ হঠাৎ করে ভাইরাল হলো কি করে? আতিকের কথার মানে বুঝতে পারলো না ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। আতিক আবার বললো।
“কিরে এভাবে কি দেখছিস? খুশিতে হ্যাং হয়ে গেলি নাকি?”
“এই চুপ! আমি তোর থেকে সাত বছরের বড়। কি তুই তুই করছিস্? কতদিন বলবো আমায় আপনি করে বলে সম্মান দিয়ে কথা বলবি!”
“রাখ তোর আপনি বলা! আপু করে বলি এটাই বেশি। আপনি বলতে পারবো না!”
আঁখি এবার রেগে বললো।
“যা এখান থেকে।”
আতিক এবার আলসামী ঝেড়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো।
“আচ্ছা তুই যখন শুনবি না। আমি বরং আম্মুকে গিয়ে তোর ভাইরাল হওয়ার কথা বলে আসি।”
আঁখি ওর মায়ের কথা শুনে হালকা ঢোক গিললো। ওর মার যেই গ্যাজগ্যাজ করার অভ্যাস কত জানি রাগারাগি করে। তাই আতিক কে বসিয়ে বললো।
“বল কি দেখলি বল?”
“তোর গায়ে সাজ্জাদ ভাইয়া সেন্টারফ্রুট মেরেছে সেই ভিডিও পুরো কলেজে ভাইরাল। আসার সময় দেখে এলাম দোকানে বসে অনেকেই ওই ভিডিও দেখছে।”
কথাটা শুনেই আঁখির ছোট হৃদয়টা কাঁচের মতো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। আহত চোখে তাকিয়ে রইলো ওর ভাইয়ের দিকে। আতিক এবার দুষ্ট হেসে বললো।
“যাই! এবার আম্মুকে গিয়ে এই খবরটা দিয়ে আসি।”
আঁখি ওর মায়ের কথা শুনে বড়সড় ঢোক গিললো। আতিক কথাটা বলেই সামনে আগালো। আঁখি ওর মাকে বলছে ওর বান্ধবীরা মেরেছে। এখন যদি ওর আম্মু সাজ্জাদের কথা শুনে তো ওকে ধরে জন্মের মতো ধুইবে। আঁখি আতিককে পিছন থেকে ওর শার্ট টেনে ধরে বসিয়ে বললো।
“তুই আমার ছোট ভাই তাই তো? তোকে আমি চকলেট খাওয়াবো। আম্মুকে এই কথা বলিস না।”
আতিক বিরক্ত হয়ে ওর শার্ট ছাড়াতে ছাড়াতে বললো।
“চকলেট চকলেট করোছ সারাদিন। খাওয়াছ তো এক টাকার লজেন্স। কখনও তো পাঁচ টাকার ডেইরি মিল্ক ও তো হাতে দেসনি। বেশি চাইলে দুই টাকার চকো চকো ধরিয়ে দেস। আবার বলে চকলেট খাওয়াবো।”
মুখ ভেংচিয়ে কথাটা বললো আতিক। আঁখি জোর পূর্বক হাসলো। আতিকের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললো।
“আম্মু তোকে টাকা দেয় তা কি করোছ? সারাদিন শুধু আমার টাকার দিকে চেয়ে থাকোছ। তোর নজর তো ভালো না দেখছি।”
আতিক উঠতে উঠতে বললো।
“আচ্ছা তোর খাওয়ানো লাগবেনা। আমি আম্মুকে গিয়ে কথাটা বলছি।”
আঁখি আতিককে ধরে বললো।
“আচ্ছা বস! তোকে আজ পাঁচ টাকার ডেইরি মিল্ক খাওয়াবে।”
আতিক বিরক্তি নিয়ে ওর দিকে তাকালো। এর মানে ওর পছন্দ হয়নি। আখি জোর পূর্বক হেসে বললো।
“আচ্ছা তোকে দশ টাকা দামের চকলেট খাওয়াবো।”
আতিক মুখ ভেংচিয়ে বললো।
“আজ চকলেটে হবেনা।”
“তো!”
ভ্রু কুচকে কথাটা বললো আঁখি। আতিক মুচকি হেসে শার্টের কলারটা ঠিক করে ভাব নিয়ে বললো।
“আজ আমাকে ৪৫ টাকার কোন আইসক্রিম খাওয়াতে হবে।”
আখি রেগে ওর দিকে তাকিয়ে বললো।
“এই তুই ভাই নাকি ডাকাত?”
“যা বলছি সেটাই নাহয় কথাটা আম্মুর কাছে পাচার হলেও হতে পারে।”
“আচ্ছা তোকে আইসক্রিমেই খাওয়াবো। আসরের পর দোকানে যাবো।”
“আচ্ছা!” কথাটা বলেই আতিক দৌড়ে চলে গেলো। আঁখি রেগে কিছুক্ষণ আতিকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। অগত্যা রেগে ফোসফাস করতে লাগলো। সাজ্জাদকে ওর কেটে টুকরো টুকরো করতে ইচ্ছা করছে। আঁখি রেগে আতিকের ফুল গাছের দিকে তাকিয়ে রইলো। ইচ্ছে করছে সব গাছে মই দিয়ে সাজ্জাদকে ফুলগাছ ভর্তা খাওয়াতে। আখি চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে রইলো। ভাবতে লাগলো সাজ্জাদ কে কি করে জব্দ করতে পারবে। আঁখির ভাবনার মাঝেই মিসেস রোকেয়া রহমান হাক ছেড়ে বললেন।
“এই আঁখি খাবার খাবি কখন? তাড়াতাড়ি খেতে আয়!”
আঁখি চুপচাপ খেতে চলে গেলো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে মন ফ্রেশ করে সুন্দর একটা ঘুম দিলো।
———————————-
ঘুমের মাঝেই আঁখি কে কেউ টেনে তুললো। আঁখি ঘুমের জন্য বসে থাকতে পারলোনা। বিড়বিড় করে আবার শুয়ে পড়লো।
“আমি আম্মুর কাছে যাচ্ছি কিন্তু…”
এই কথাটা আঁখির কানে যেতেই লাফ দিয়ে উঠলো। আমতা আমতা করে চুলগুলো ঠিক করে বসলো। বিরক্ত নিয়ে বললো।
“শান্তিকে একটু ঘুমোতেও দিবি না? কি শুরু করেছিস্?”
“বিকালে আইসক্রিম খাওয়ানোর কথা ছিলো। সন্ধ্যা হয়ে আসছে তোর বিকাল কখন হবে আপু?”
আঁখি উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে চুলগুলো ঠিক করে বেঁধে নিলো। মুখে একটু ক্রীম মেখে হালকা লিপস্টিক দিলো। আতিক ওর দিকে তাকিয়ে বললো।
“তোকে কি দেখাতে নিচ্ছি? এত সাজগোজ করছিস কেনো?”
আঁখি রেগে ওর দিকে তাকালো কিছুই বললো না। বললে আবার ওর মায়ের ভয় দেখাবে। আঁখি চুপচাপ চলে গেলো। মাথায় ওড়না দিয়ে ওর মায়ের কাছে গিয়ে বললো।
“আম্মু! একটু ছাদে যাচ্ছি।”
মিসেস রোকেয়া রহমান শোয়া অবস্থায় জবাব দিলেন।
“আচ্ছা যা! মাগরিবের আগে চলপ আসিছ্!”
আঁখি আর কথা বাড়ালো না। চুপচাপ চলে গেলো। নিচে যেতেই দেখলো সাজ্জাদের বাইক নিচে নাই। তারমানে এখনও বাড়ি আসেনি। দোকানের কাছে যেতেই দেখলো ওখানে সাজ্জাদ আর ওর দলবল সব আছে। সবাই বসে চা খাচ্ছে আর হাসাহাসি করছে। সকালের কথা মনে হতেই আঁখি রেগে সাজ্জাদের দিকে তাকালো। আঁখিকে দেখেই সাজ্জাদ হাসাহাসি থামিয়ে ওর দিকে তাকালো। আঁখি দোকানের কাছে যেতেই সাজ্জাদ গাইতে লাগলো।
“কিবা তোমার নাম গো কন্যা বাড়ি কোন গ্রাম!
কিবা তোমার নাম গো কন্যা বাড়ি কোন গ্রাম!
নাম ঠিকানা যদি জানিতাম…
তোমার বাড়ি ঘটক পাঠাইতাম
তোমায়, হিরো আলমের বউ বানাইতাম!”
এতখানি গেয়েই সাজ্জাদ উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো। ওর বন্ধুরাও সবাই হেসে গড়াগড়ি গাচ্ছে। একজন আরেকজনের গায়ের উপর পড়ছে। খুব মজা নিচ্ছে সবাই। আঁখি রেগে সাজ্জাদের দিকে তাকালো। সাজ্জাদ ভ্রু নাচিয়ে বললো।
“কি মিস চক্ষু? এখানে কি জন্য হঠাৎ?”
নামটা শুনেই আঁখির মুখটা বাঁকিয়ে গেল। আতিক ওদের মাঝে বসতে বসতে বললো।
“আর বইলেন না ভাইয়া! আমায় সবসময় শুধু একটাকার চকলেট ধরিয়ে দেয়। আজ বহুত ভয় দেখিয়ে রাজি করিয়েছি। আমার কিপ্টে বোন আজ আমায় আইসক্রিম খাওয়াবে তাই নিয়ে এসেছে।”
ওর কথা শুনে সবাই হেসে ফেললো। সাজ্জাদ ভাব নিয়ে বললো।
“আমি আমার ছোট বোনকে কত কিছু কিনে খাওয়াই আর তোকে শুধু আইসক্রিম? বার্গার, গ্রীল কিছু খাওয়াবে না? এত কিপ্টা? কিপ্টামিতে তো সাদিয়ার বাবাকেও হার মানাবে।”
“আপনার বাবাও এত কিপ্টে ভাইয়া?”
আতিকের কথা শুনে সবাই হেসে ফেললো। আঁখি রেগে ওর ভাইয়ের দিকে তাকালো। মনে হচ্ছে ওকে চোখ দিয়েই গিলে খাবে। আঁখি মনে বললো। “আংকেল ঠিকই করে। তোর মতো বুড়ো ছেলেকে টাকা দিবে কেনো? আমি হলে তো এক পয়সাও দিতাম না। নিজের রোজগার করার যোগ্যতা নেই? না থাকলে ভিক্ষা করে খা! শয়তান বেটা।”
আঁখি মনে মনে হাজারটা গালাগাল দিলো। রাগি চোখে সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে আতিককে একটা আইসক্রিম কিনে দিয়ে সামনে আগাতেই শুনলো সাজ্জাদ আবার হাসাহাসি করছে। আঁখি রেগে নিচ থেকে একমুঠ ধুলো নিলো। সাজ্জাদ সবার সাথে হাসাহাসি করছে সেই সুযোগে আঁখি ধুলো গুলো ওর গায়ে মেরে দিলো দৌড়। সাজ্জাদ বুঝতে পারেনি আঁখি এমন কিছু করবে। ওর পুরো শরীর মেখে গেছে। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করে হওয়ায় সাজ্জাদ চমকে দাঁড়িয়ে গেলো। রেগে আঁখির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো।
“এখন দৌড়ে নেও! দৌড়ে আর কতদূর যাবে? সেই আমাদের বাড়ি পর্যন্ত। হাতের কাছে তো পাবোই!”
ইনশাআল্লাহ চলবে……