শরতের বৃষ্টি পর্ব-৯

0
2568

#শরতের_বৃষ্টি
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৯

সূর্য প্রায় পশ্চিমাকাশে ডুবে গিয়েছে৷ পুরো আকাশ এখনও কিছুটা রঙিন। চারদিক পুরোপুরি অন্ধকার হয়নি। মসজিদ থেকে আযান শোনা যাচ্ছে। কলেজ মাঠে অনুষ্ঠানের জন্য কাজ করছিলো অনেকেই। সাজ্জাদ আর ওর বন্ধুরাও তাদের মাঝে আছে। যদিও কেনো কাজে হাত দেয়নি ও। শুধু সিনিয়ার হিসেবে অর্ডার করেছে সবাইকে। কলেজের বড় ভাই আবার এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় সবাই ওর কথা শুনতে বাধ্য। সাজ্জাদের কানে আযান পৌছাতেই ও সবাইকে চিল্লিয়ে বললো।

“সবাই কাজ ছাড়ো! সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। নিজ নিজ বাড়িতে গিয়ে পড়তে বসো নাহয় নামাযে যাও!”

কথাটা বলে চেয়ার ছেড়ে উঠলো সাজ্জাদ। টিস্যু দিয়ে হাত মুছতে মুছতে সামনে আগাতে লাগলো। যদিও ওর হাতে ময়লা লাগেনি তবুও ওর অভ্যাস একটু পর পর হাত টিস্যু দিয়ে মুছা। কারন ওর হাত ঘামায় বেশি। সাজ্জাদের সাথে ওর বন্ধুরাও আছে। সাজ্জাদ টিস্যুটা ফেলে ওদের দিকে তাকিয়ে বললো।

“চল নামাযে যাই!”

সবাই ওর কথা মতো মসজিদে চললো। সাজ্জাদ নিয়মিত নামায না পড়লেও মাঝে মাঝে পড়ে। ও একটু আড্ডাবাজ আবার এলাকায় মাস্তানি করে বেড়ায়। কিছু ছেলেদের সাথে মারামারিও করে। তবে যারা খাবাপ তাদের সাথেই ওমন ব্যবহার করে কিন্তু তা এলাকার মানুষ বোঝেনা। চোখের সামনে যা দেখে সেটাই বিশ্বাস করে। কিছু কিছু মানুষের কাছে সাজ্জাদ বাজে ছেলে হলেও আবার অনেকের কাছে ও খুব প্রিয়। বিশেষ করে মেয়েদের কাছে। ওর স্টাইলে যে কোনো মেয়ে ফিদা শুধু আঁখি ছাড়া। ওর কাছে সাজ্জাদ শুধুই ওর শত্রু। সাজ্জাদ নামায শেষ করে চায়ের দোকানে গেলো। ওখানে বসে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়েই বন্ধুদের বললো।

“আমার খুব ঘুম আসছে রে! চল বাড়ি যাই!”

সবাই ওর দিকে অবাক চোখো তাকালো। অর্নব ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে বললো।

“এই সন্ধ্যা বেলা তোর ঘুম আসছে?”

ওর কথা শুনে সাজ্জাদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই রনি সবার দিকে তাকিয়ে বললো।

“তোরা বুঝলি না রে! বিয়ের কথা উঠতেই ওর ঘুম পাচ্ছে। মানে ওর বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে। একবার ভাব তোরা! যদি ও বিয়ে করে বউ বাড়িতে নিয়ে আসে। তাহলে তো সারাদিন রুম থেকেই বের হবে না।”

কথাটা বলেই রনি জোরে হেসে ফেললো। ওর কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো। ওদের হাসতে দেখে সাজ্জাদ রেগে রনিকে একটা লাত্থি দিলো। রনি সরে যাওয়ায় ওতটা লাগেনি ওর শরীরে। রনি আবার বসতে বসতে বললো।

“মামা তুই রাগ করতে পারোছ কিন্তু কথাটা ১০০%খাটি!”

সাজ্জাদ আবারও ওর দিকে রাগি চোখে তাকালো। আশিক রনির দিকে তাকিয়ে বললো।

“এই রনি! অনেক হেসেছিস্! এবার ওকে যেতে দে! নাহয় এখানেই ঘুমিয়ে পড়বে পরে আটার বস্তার মতো ওকে টেনে নিতে হবে। তার থেকে ভালো ও আগেই চলে যাক।”

সাজ্জাদ আর কিছুই বললো না। আজ সারাদিন একটু কাজ করেছে শরীরটা ক্লান্ত ওর। বাসায় গিয়ে বড় একটা ঘুম দিবে এসব ভেবেই ওদের বাই বলে উঠে চলে এলো। ওর পিছনে অন্তু আর ফাহিম উঠতে উঠতে বললো।

“আমরাও যাই! ভাইয়া না থাকলে আড্ডা ঠিক জমে না।”

ওদের কথা শুনে আশিক, অর্নব, রনিও নিজেদের বাড়ি চলে এলো। সাজ্জাদ বাইক নিয়ে গেইট দিয়ে ঢুকেই ওর বাগানের দিকে তাকালো। বাইকটা রেখে ওর বাগানের কাছে গেলো। ভালো করে দেখলো আঁখি ওর গাছের কিছু করছে নাকি। দেকলো নাহ! ওর গাছ একদম ঠিকঠাক আছে৷ আজ সকালে আঁখিকে যা ডোজ দিয়েছিলো তাতে তো কিছু করার কথা ছিলো কিন্তু ও কিছু করেনি কেনো সেটাই বুঝতে পারছেনা। সাজ্জাদ একটু অবাক হলো। পরক্ষনেই সিড়ি বেয়ে বাসায় চলে এলো। বাসার সামনে দাঁড়িয়ে কলিংবেল দিতেই মিসেস শাহনাজ দরজা খুললেন। দরজা খুলে তিনি অবাক হয়ে গেলেন। সাধারণত সাজ্জাদ এত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে না। আজ ফিরলো কেনো সেটাই ভাবছেন তিনি। সাজ্জাদ ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো।

“হাই মম!”

কথাটা বলে শিশ বাজাতে বাজাতে ভিতরে ঢুকলো। সোফায় বসে সাদিয়া কফি খাচ্ছিলো। সাজ্জাদকে দেখে থম মেরে বসে রইলো। মাগরিবের পর তো সাজ্জাদ কখনও বাড়ি ফিরেনা। তাড়াতাড়ি ফিরলেও এশার পর ফিরে। মিসেস শাহনাজ দরজা আটকে ওর কাছে এসে বললেন।

“কিরে? আজ এত তাড়াতাড়ি চলে এলি?”

সাজ্জাদ ওর মায়ের দিকে হালকা ঝুকে ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বললো।

“কাল বাবা বিয়ের কথা বলেছে। তাই এখন থেকেই বাসায় থাকার প্রাক্টিজ করছি।”

কথাটা বলে ওর মাকে চোখ টিপ দিলো। অগত্যা মুচকি হেসে শিশ বাজাতে বাজাতে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। মিসেস শাহনাজ থম মেরে দাড়িয়ে রইলেন। তিনি জানেন তার ছেলে অনেক ফাজলামী করে কিন্তু এতটা? সাদিয়াও কফি রেখে ওর ভাইয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। ও ভাবছে বিয়ের কথা শুনে ওর ভাই কি পাগল টাগল হয়ে গেল নাকি?

সাজ্জাদ রুমে গিয়েই জ্যাকেটটা খুললো। সারাদিন বাইরের ধুলোবালি জমে আছে। তাই বেলকনি থেকে সাদা স্লিভলেস গেঞ্জি আনতে গেলো। সাকালে রোদ্রে শুকাতে দিয়ে গিয়েছে। ছাদে শুকাতে দিয়ে ওর গেঞ্জি ফালা গেছে। আর কখনও মনে থাকলে ছাদে শুকাতে দিবে না। বেলকনিতে গিয়েই কপাল কুচকে তাকালো। হালকা আলোতে বেলকনিতে কেমন জানি কালো ছিট ছিট দাগ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সাজ্জাদ অতটা গুরুত্ব দিলোনা। ভাবলো হয়তো হালকা আলোতে এমন দেখা যাচ্ছে। তাই নিজের গেঞ্জিটা নিয়ে চলে এলো। রুমে ডুকে গেঞ্জিটা পড়তেই দেখলো কালো কালিতে ভরে আছে গেঞ্জি টা। তারমানে বেলকনিতে কি এগুলো কালি? সাজ্জাদ তাড়াহুড়ো করে বেলকনির লাইট অন করে বেলকনিতে যেতেই ওর মাথায় বাঁশ। ওর সাদা রংয়ের বেলকনিতে সারা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কালো রং। সাজ্জাদ রেগে তাকালো। ওর পুরো বেলকনি নষ্ট হয়ে গেছে। ফ্লোরে, দেওয়ালে, এমনকি বেনকনিতে শুকাতে দেওয়া ওর সব ড্রেস নষ্ট হয়ে গেছে। সাজ্জাদের বুঝতে বাকি রইলো না এসব কে করেছে। আঁখি চাড়া এসব কেউই করতে পারেনা। কিন্তু আঁখিকে ওর রুমে ঢুকতে দিয়েছে কেনো সেটাই বুঝতে পারছেনা। সাদিয়া ছাড়া আঁখি কে কেউ ওর রুমে আনতে পারেনা। সাজ্জাদ খুব রেগে গেলো। চোখমুখ গরম করে রেগে ড্রয়িং রুমে গেলো। সাদিয়া সোফায় বসে ফোন টিপতে ছিলো। সাজ্জাদ রেগে ওর দিকে তাকিয়ে বললো।

“তোকে না কত দিন বলছি আমার অনুমতি ছাড়া কাউকে আমার রুমে ঢুকতে দিবি না?”

সাজ্জাদের রাগ দেখে সাদিয়া ভয় পেয়ে চুপ হয়ে গেলো। ওর ভাই রেগে আছে কেনো সেটাই বুঝতে পারছেনা। চিল্লাচিল্লি শুনে মিসেস শাহনাজ নিজের রুম থেকে দৌড়ে এলেন। সাজ্জাদ রেগে আবারও সাদিয়াকে বললো।

“কি হলো? চুপ করে আছোছ কেনো? কাকে নিয়ে আমার রুমে গিয়েছিলি?”

সাদিয়া আর মিসেস শাহনাজ কিছুই বুঝতে পারছেন না। আজ তো কেউ বাসায় আসেনি। সাদিয়া ভয় পেয়ে আস্তে করে বললো।

“আজকে তোর রুমে কেউয়েই যায়নি ভাইয়া!”

সাজ্জাদ এবার ভাবলো হয়তো আঁখি বাসায় ঢুকে লুকিয়ে ওর রুমে গিয়ে ওসব করেছে। তাই ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো।

“ওই চক্ষুকে বাসায় ঢুকতে দিয়েছো কেনো?”

মিসেস শাহনাজ আর সাদিয়া অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। মিসেস শাহনাজ কপাল কুচকে বললেন।

“আজ বাসায় আঁখি আসেনি। আঁখি কেনো? আজ কেনো মানুষেই বাসায় আসেনি।”

সাজ্জাদ এবার চরম রকমের অবাক হলো। আঁখি যদি না আসে তো ওমন করলো কে? কিভাবে ওর বেলকনি নোংরা হলো? তবে ওটা আকি ছাড়া অন্য কেউ ওমন করতেই পারেনা। আজ সকালে আঁখির বেলকনিতে কাদা মারছে বলেই ওমন করেছে এটা সাজ্জাদ ভালোই বুঝতে পারছে। সাজ্জাদ চুপ করে ভাবতে লাগলো। মিসেস শাহনাজ সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে বললেন।

“কি হয়েছে বলতো? এত রেগে আছিস কেনো?”

সাজ্জাদ রেগে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো।

“চলো! আমার রুমে চলো দেখবে!”

কথাটা বলে সাজ্জাদ ওর রুমের দিকে চললো। মিসেস শাহনাজ আর সাদিয়া ওর কথার মানে বুঝতে পারলো না। কপাল কুচকে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে সাজ্জাদের পিছনে পিছনে গেলো। সাজ্জাদ নিজের বেলকনিতে গিয়ে বললো।

“দেখো! আমার বেলকনির কি অবস্থা করেছে দেখো!”

মিসেস শাহনাজ আর সাদিয়া বেলকনির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো। এগুলো কি সেটাই বুঝতে পারছেনা। মিসেস শাহনাজ অবাক হয়ে বললেন।

“কিরে? তোর বেলকনির এই অবস্থা করছে কেনো?”

মিসেস শাহনাজের মতো সাদিয়াও জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নে মনে ভাবছে ওর ভাই কি বেলকনিতে অন্য ডিজাইন করেছে? যদি করেই থাকে তো রেগে আছে কেনো? সাজ্জাদ রেগে বললো।

“সকালে তো ঠিকই দেখে গিয়েছিলাম। এখন এসে দেখি এমন অবস্থা। এই চক্ষু ছাড় এমন কেউ করতেই পারে না।”

সাজ্জাদের কথা শুনে দুজনেই বিরক্ত হয়ে তাকালো। আঁখি আজ বাসায়েই আসেনি আর সাজ্জাদ ওকে দোষ দিচ্ছে। আখি ছাড়া কাউকে চোখেই দেখে না। সাদিয়া কপাল কুচকে রেগে সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে বললো।

“ভাইয়া! আজ আঁখি আপু বাসায় আসেনি। তার নামে দোষ দেওয়া ছাড়! তোর কিছু নষ্ট হলেই আঁখি আপুর দোষ দেছ। তুই কি নিজে চোখে দেখেছিস? অযথা দোষ দেওয়া ছাড়!”

কথাটা শুনে সাজ্জাদ ধমক দিয়ে বললো।

“চুপ কর তুই! আমার থেকে বেশি বুঝিস না। আঁখি ছাড়া কেউ এমন করতেই পারেনা বুঝলি?”

“আঁখি আপু ছাড়া আরও অনেক মানুষেই এই বিল্ডিংয়ে থাকে। একবার ভাব আঁখি আপু এটা কিভাবে করবে? আঁখি আপুর নামে দু লোকমা ভাত বেশি খাওয়া বন্ধ কর!”

রেগে কথাটা বলেই চলে গেলো সাদিয়া। সাজ্জাদ রেগে ওর যাওয়ার দিকে তাকালো। মিসেস শাহনাজ সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে বললো।

“থাক বাবা রাগিস না। না জেনে কথা বলা ঠিক না। আঁখি আজ বাসায় আসেনি। চিন্তা করিছ না কাল মনি আসলে ওকে দিয়ে পরিস্কার করাবো। এবার রুমে যা!”

কথাটা বলে মিসেস শাহনাজ চলে গেলেন। সাজ্জাদ জানে এটা আঁখিই করেছে। কিন্তু কি করে? সাজ্জাদ অনেক ভাবলো কিন্তু কোনো পথ দেখলো না। অনেকক্ষণ ভাবার পর সাজ্জাদ কিছু একটা ভেবে আলমারি থেকে গেঞ্জি বের করে পড়লো। গেঞ্জি টা পড়েই তাড়াহুড়ো করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।

ইনশাআল্লাহ চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here