শর্বরী
অলিন্দ্রিয়া রুহি
(১২-শেষ পর্ব)
বিছানায় কুসুম নেই। নেহাল দরজা আঁটকে সঙ্গে করে আনা চিপসের প্যাকেটগুলো ডিভানের উপর রাখলো। উঁচু গলায় বার দুয়েক ডাকতেই বাথরুমের নব ঘুরলো। সেদিকে ফিরে তাকাতেই অনুভব করল,একটা ভারী কিছু বিদ্যুৎ বেগে তার বুকের উপর চেপে বসেছে। নিজেকে ধাতস্থ করে তিরতির করে কাঁপতে থাকা কুসুমকে জোরে আঁকড়ে ধরলো সে। কুসুম ফোঁপাচ্ছে। তার দুই চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জলপ্রপাতের ন্যায় অশ্রু ফোঁটা। নেহাল বুঝতে পারছে না আচমকা কী এমন হলো মেয়েটির! কুসুমকে বিছানায় বসিয়ে নেহাল উঠে দাঁড়াতে চাইলে অনুরোধের কণ্ঠে কুসুম বলল,
“প্লিজ, যেয়ো না। আমার সাথে থাকো।”
“আমি যাচ্ছি না কোথাও। তুমি কাঁদছো কেন কুসুম? কী হইছে? খারাপ স্বপ্ন দেখছো?”
কুসুম দুইদিকে মাথা নাড়লো। ঘরে আলো জ্বলছে। সেই আলোয় পরিষ্কার পুরো ঘরে চোখ বোলালো। কোথাও কেউ নেই। স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলেও পুরোপুরি স্বস্তি পেলো না কুসুম। ওটা কী ছিল! ভাবতেই শিরদাঁড়া কাঁপছে। অস্থির চোখে উদ্বিগ্ন নেহালের পানে চাইলো সে। সময় নিয়ে বলতে শুরু করল নিজের ভয় পাওয়ার কথাটি।
“আমি ভেবেছিলাম তুমি এসেছো। কিন্তু চোখ খুলে দেখি একটি মেয়ে। আমাদের ঘরে ঢুকে দরজা আঁটকে দিয়েছে। আমি অবাক হয়ে উঠে বসি। যখন ডাক দেই,তখন আমার দিকে ফিরে তাকাল। আর..আর আমি দেখলাম..”
কুসুম পুনরায় ফুঁপিয়ে উঠল। নেহাল তাকে বুকের ভেতর টেনে নেয়। মাথায় আলতোভাবে হাত বুলিয়ে দিয়ে কপালে চুমু আঁকে। আশ্বস্ত করে। বলে,
“বলো আমাকে। এখন তো আমি আছি। ভয় নেই।”
“ওটা খুব জঘন্য চেহারার কিছু ছিল নেহাল। খুবই ভয়ংকর দেখতে। আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। আমি দিশেহারা হয়ে পড়ি। তৎক্ষনাৎ বাথরুমটা চোখে পড়ে,আর দৌড়ে ঢুকে যাই। এরপর আমি জানি না ওটা কই! তোমার গলার স্বর শুনতে পেয়েই বেরিয়ে আসি।”
কুসুম কাঁদছে। নেহালের ভ্রু জোড়া কুঁচকে রয়েছে। কুসুমের কথার অর্থ বোঝার চেষ্টা করছে সে। কুসুম নিশ্চয়ই কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছে। নেহাল বলল,
“তুমি দুঃস্বপ্ন দেখেছো। নতুন জায়গায় আসলে এরকমটা হয়। এটা স্বাভাবিক। তুমি ভয় পেয়ো না আর। স্বপ্ন কেটে গেছে। আসো, শুয়ে পড়ো।”
“আমার তবুও ভয় লাগছে নেহাল। আর ওটা মোটেও স্বপ্নের মতো লাগছিল না। স্বপ্ন কখনো এতটা জীবন্ত হয়!”
“মাঝে মাঝে হয়। এখন আমি আছি তো। আর আমি কোথাও যাবো না। দরকার হলে সারারাত লাইট জ্বালানো থাকুক, সমস্যা নেই।”
“তুমি লাইটের আলোয় ঘুমাতে পারো না। লাইট জ্বালিয়ে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। লাইট নেভাও। আমি ঘুমাতে পারব।”
“সত্যি তো?”
“সত্যি।”
নেহাল স্মিত হেসে ঘরের বাতি নিভিয়ে দিয়ে বিছানায় এসে বসল। কুসুম শুয়ে পড়েছে। শরীর থেকে শার্টটা খুলে নেহালও শুয়ে পড়ল। ঘরে এসি চলছে বিধায় হালকা শীত অনুভব হচ্ছে। পায়ের কাছ থেকে পাতলা কম্ফোর্ট টা নিয়ে গায়ে জড়ালো নেহাল। জড়িয়ে দিলো কুসুমকে। একহাতে কুসুমকে নিজের বাহুডোরে আঁকড়ে ধরে ধীরে ধীরে তলিয়ে গেল ঘুমের রাজ্যে। ঘুমাতে পারল না কুসুম। ওটা স্বপ্ন ছিল না,এ তার মনের কথা। যদি স্বপ্ন না হয়ে থাকে,তবে কী ছিল ওটা! ভয়ে চোখ খিঁচে রেখেছে সে। খরগোশের বাচ্চার ন্যায় জুবুথুবু হয়ে নেহালের বুকের ভেতর ঢুকে চোখজোড়া বুজে রইলো বেশ অনেকক্ষণ।
***
ছাদে কারও হাঁটা-চলার আওয়াজ ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জয়নাল উঠে বসল আজকে। অন্যদিন নিজেকে গুটিয়ে নিলেও আজকে সবটা তদন্ত করতেই হবে তাকে। ভয় পাওয়া মানে অর্ধেক হেরে যাওয়া। নিজের এবং পরিবারের সকলের জীবন রক্ষার্থে তাকে ভয় পেলে চলবে না। আর শিমুলের মুখোশও টেনে বের করতে হবে অতিদ্রুতই। ঘরের লাইট জ্বালানো না জয়নাল। হাতে ফোন নিয়ে পা টিপে টিপে বেরিয়ে এলো রুমের বাইরে। দরজার নিচ দিয়ে হালকা হলুদাভ আলো জ্বলছে। এর মানে শিমুল জেগে রয়েছে। কিন্তু কী করছে সে! জয়নাল পা টিপে টিপে শিমুলের ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। তার প্রাণ কাঁপছে। মনে হচ্ছে,অন্ধকারের ভেতর দিয়ে এই বুঝি কোনো দানব প্রাণী অথবা অন্য জগতের কেউ এলো আর তার ঘাড়টা মটকে দিয়ে চলে গেল। আল্লাহর নাম নিয়ে বুকে ফুঁ দেয় জয়নাল। উবু হয়ে দরজার নিচ দিয়ে ঘরের ভেতর কী চলছে তা দেখার চেষ্টা করে। কতগুলো মোমবাতি জ্বলছে। শিমুল বসে রয়েছে। যদিও তার মাথা দেখা যাচ্ছে না ততটা। তার সামনে কিছু আঁকাবাঁকা রেখা টানা। সে বসে রয়েছে একধ্যানে… জয়নাল নিজের ফোন বের করে রেকর্ডিং চালু করল। ক্যামেরার ফোকাসটা দরজার নিচ দিয়ে সেট করে একপাশে সরিয়ে রেখে উঠে দাঁড়াল সে। কান পেতে রইলো, ভেতরের পিনপতন নিরবতাকেও শোনার চেষ্টা যেন। ক্ষণকাল কাটলো। একসময় শুনতে পেল শিমুলের চাপা স্বরের কথাগুলি…
“দরকার পড়লে ওকেও দিয়ে দিবো আমি। আর কত প্রাণ চাই তোমার? আমার গর্ভের তাজা প্রাণের স্বাদ তুমি ভালোভাবেই উপভোগ করতে পারবে। তবুও আমার কাজটি দ্রুততার সঙ্গে করে দাও। চোখের সামনে অপ্রিয় মানুষগুলোর ঘোরাঘুরি যে সহ্য হচ্ছে না! তোমার দেওয়া পানি খাইয়ে বাবা-মাকে যেভাবে হাত করে রেখেছি,সেভাবে কেন ওই জয়নালকে হাত করতে পারছি না,জানি না! ও কী আমার দেওয়া পানি খায় না? ও যদি আমার আয়ত্তে না-ই আসে,তবে বেঁচে থাকার কীইবা প্রয়োজন! শেষ করে দাও। কেইবা ধরতে যাচ্ছে তোমাকে? রাতের আঁধারে ভয় দেখিয়ে মেরে ফেলো,যেন হার্ট অ্যাটাক করেছে এমন। আর কুসুম? ওর কী খবর? তুমি আজ গিয়েছিলে ওর কাছে?”
শিমুল থামে। খসখসে একটি আওয়াজ শোনা যায় এরপর। সেই কথার মর্মার্থ জয়নাল ধরতে পারল না। একটুপর শোনা গেল শিমুলের গা শিউরে দেওয়া হাসির শব্দ।
“ভয় পেয়েছে তাহলে! ওদের হানিমুন আমি ভয়মুনে পরিণত করব দেখো। শোনো, আর দুটোমাস গেলেই তুমি আমার গর্ভপাত করিয়ে দিও। খেয়ে নিও ওকে। আমার আপত্তি নেই। কুসুমের সন্তানকেও খেয়ে নাও। আর ওর এত এত রক্তপাত ঘটাবা,রক্তস্বল্পতার কারণে ও যেন মারা যায়,বুঝলে? তারপর নেহালকে আমার বশবর্তী করে দিবা। এইটুকুই কাজ তোমার। বিনিময়ে তিন তিনটে প্রাণ পাবে তুমি। দুটি ছোট্ট প্রাণ, আর ওই বুইড়াটারেও। চলবে তো?”
জয়নালের হাত গুলো নিশপিশ করছে। এখুনি ঘরে ঢুকে শিমুলের চুল ধরে আছাড় মারতে পারলে কলিজায় ঠান্ডা পানি পড়তো। কিন্তু এটা করা যাবে না। যে খেলায় শিমুল নেমেছে,তা ভয়ংকর! যেই শয়তানের মাধ্যমে কাজগুলো করাচ্ছে ও, তার মাধ্যমে জয়নালেরও ক্ষতি করাতে পারবে। তার চাইতে অন্য উপায় অবলম্বন করা ভালো। জয়নাল নিচু হয়ে নিজের ফোনটা তুলে নিলো। যেভাবে নিঃশব্দে এসেছিল,সেভাবেই নিঃশব্দে চলে এলো নিজের রুমে।
ফোনে করা ভিডিও রেকর্ডিংটা চালু করল সাউন্ড কমিয়ে। নাহ,দেখা যাচ্ছে না কাউকেই। শিমুলের মাথা দেখা না গেলেও বসে রয়েছে যে,তা বোঝা যাচ্ছে। তবে মজার ঘটনা হলো এই যে,শিমুলের উচ্চারিত প্রতিটি কথা স্পষ্ট শোনাচ্ছে। কিন্তু এই রেকর্ডিং দিয়ে কী করবে জয়নাল! ভেবে পাচ্ছে না। হুজুরের সঙ্গে দেখা করতে যাবে? তাতে যদি দেড়ি হয়ে যায়৷ শিমুল যে শুধু তারই না, কুসুম নামের পবিত্র মেয়েটিরও ক্ষতি করতে চাইছে। চাইছে ওর বাচ্চাকে শেষ করে ফেলতে। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, শিমুল গর্ভবতী! এটা নয়ন জানে না? জানার পরও শিমুলকে ছেড়ে দিলো? নিজের বাচ্চার কথা ভাবলো না! জয়নাল মাথা দোলালো। হয়তো নয়ন জানেই না শিমুলের গর্ভবতী হওয়ার ঘটনাটি। তাকে জানাতে হবে। নয়নের সাহায্য প্রয়োজন। জয়নাল একা কিছুই করতে পারবে না, যতই রেকর্ডিং থাকুক। সাহস দেওয়ার জন্য হলেও পাশে কাউকে দরকার।
পরদিন দোকান খুললো না জয়নাল। বাকি রাতটুকু অতিমাত্রায় ছটফটানি আর উশখুশানি সহ্য করে কোনোমতে কাটিয়েই ভোরের পরেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে সে। নয়ন তখনো ঘুমিয়ে… জয়নালকে আচমকা সকাল সকাল দেখে তাজ্জব হয়ে যায় পরিবারের প্রতিটি সদস্য। সবার সঙ্গে কথা আছে, নয়নকে একবার ডাকুন বলে সোফায় গা এলিয়ে দেয় জয়নাল। তার বিমর্ষ চেহারায় বলে দিচ্ছে,কিছু একটা হয়েছে। চোখ ডলতে ডলতে সোফাঘরে এসে দাঁড়ায় নয়ন৷ জয়নালের লাল চোখ দেখে তার ঘুম উড়ে যায়। কী হয়েছে জানতে চাইলে শিমুলের সব কথাই খুলে বলে সে ধীরেসুস্থে। সবার মুখ ‘হা’। শিমুল গর্ভবতী! অথচ নয়ন কাউকে এটা জানায়নি! নয়নের কী নিজের বাচ্চার প্রতি চিন্তা নেই অন্তত? আবার আরেকটি বিয়ে করতে চলেছে সে! মরিয়ম বেগম, হাবিব শিকদার রেগে গেলেন। নয়ন ব্যাপারটা গোপন রাখতে চেয়েছিল। কেন যেন শিমুলকে আর নিচে নামাতে ইচ্ছে করেনি তার। কিন্তু এখন পরিস্থিতি এমন,সত্য না বললে দোষ না করেও সে দোষী সাব্যস্ত হবে। তাই একটা লম্বা দম ফেলে শিমুলের পেটে কার সন্তান তা খুলে বলতেই জয়নাল হতভম্ব চোখে চেয়ে রইলো। মিতুর গা রি রি করছে। পেট গুলুচ্ছে। একটা মেয়ে হয়েও কতটা নিচে নেমেছে শিমুল! ছি! ভাবাই যায় না। শিমুলকে সামনে পেলে মিতু যে কী করে ফেলত,আল্লাহ মালুম! জয়নাল ক্ষমা চাইলো। তার মুখে মেদুর রঙের ছায়া। বলল সে,
“আমার আরও কিছু বলার আছে নয়ন।”
“বলুন।”
ফোনে করা রেকর্ডিংটা চালু করে চুপচাপ বসে রইলো জয়নাল। শিমুলের বলা প্রতিটি কথা সবার কানে যাচ্ছে,সেই সাথে অজানা আশংকায় কেঁপে উঠছে সকলে। মিতুর চোখ ফেটে পানি বেরিয়ে এলো। কুসুমের এতবড় ক্ষতি করতে চলেছে সে! যদি না জানতে পারত সময় থাকতে,তবে কী হতো! হাবিব শিকদার জোরালো কণ্ঠে বললেন,
“এই মেয়ে খুনী। ওকে এক্ষুনি পুলিশে দেওয়া উচিত। জয়নাল, আমরা তোমার বাসায় যাবো। এই রেকর্ডিং আমাদের চাই। আমাকে দাও। ও মেয়েকে এখনই না আঁটকালে বড় সমস্যা হয়ে যাবে।”
“আমি আপনাদের সাথে আছি আংকেল। যা ইচ্ছে করুন। ওকে আঁটকান। আমার একদম শক্তি নেই ওর সাথে যুদ্ধ করার আংকেল। নিজের মায়ের পেটের বোন আমার! ভাবতেই লজ্জা লাগছে। আমি…আমি এসব থেকে মুক্তি চাই আংকেল। মানসিক ভাবে এই সমস্ত কিছু সহ্য ক্ষমতার বাইরে…”
জয়নাল মাথা দু’হাতে চেপে ধরল। এর কিছুক্ষণ পরই নয়ন,হাবিব শিকদার ও জয়নাল মিলে পুলিশসহ বাড়িতে প্রবেশ করে। শিমুল আরামে ঘুমুচ্ছিল। সে টেরও পাইনি, তারই তল দিয়ে কী কী ঘটে যাচ্ছে! একটা মহিলা কনস্টেবল হাত ধরে ঝাঁকি দিলে পিটপিট করে চোখ খোলে শিমুল। সঙ্গে সঙ্গে গাল গরম হয়ে ওঠে তার। আরেকজন মহিলা কনস্টেবল এসে শিমুলকে তাগাদা দেয় দ্রুত বিছানা ছাড়ার জন্য। কী হচ্ছে বোঝার সময়ও পায় না শিমুল। তার আগেই তাকে টেনে হিঁচড়ে বাইরে বের করে আনা হয়। ততক্ষণে বাবা-মা সহ পুরো এলাকায় রটে গেছে এই ঘটনা। সবার মুখে ছি,ছি,ধিক্কার। শিমুল অগ্নি চোখে জয়নালের দিকে তাকায়। জয়নাল চোখ সরিয়ে নিলো। বেরিয়ে গেল ঘর ছেড়ে। সত্যি বলতে,এই ব্যথা সে নিতে পারছে না। নিজের আপন লোক শত্রু হয় যার,সেই বোঝে মন ভাঙে কেমন করে! বাবা-মাকে শত ডেকেও লাভ হয় না এবার। এগিয়ে আসে না কেউ। উল্টো ভুল ভাঙে তাদের। তাদেরকে কীভাবে হাত করে রেখেছিল শিমুল! শিমুল জোরাজোরি করে ছাড়ানোর জন্য যতবার,গাল গরম হয় ততবার। এক পর্যায়ে সে হাল ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ পুলিশদের সাথে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। উপস্থিত সকলে তার নাম দিয়ে ফেলেছে ইতিমধ্যেই। “ডাইনি”…
শিমুল সহসা কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না। ভয় তার আরও এক জায়গায়,তার কাজ যে অসমাপ্ত রয়ে গেল! কিন্তু কালো জাদু কখনোই অসমাপ্ত থাকে না। হয় এসপার, নইলে উসপার। শয়তান কখনো খালি হাতে ফেরত যায় না- বললাম না? শিমুল পারবে না আর যোগসাধনা করতে। কিন্তু নিজেকে বিলিয়ে দিতে হবে এবার শয়তানের কাছে। নিজের তৈরি করা ফাঁদে নিজেই পড়ল! হাত-পা ভাঙলো তো ভাঙলো, নিজের জীবনটাও দিতে হবে এবার। রাগে,দুঃখে কান্না করে ফেলল শিমুল। এই প্রথম আফসোস হচ্ছে তার। কেন এতকিছু করতে গেল! নয়নের সঙ্গে ভালো থাকার চেষ্টা করলেই তো হতো… ভালোও থাকতো। কিন্তু না,অতি লোভে তার মাথা নষ্ট হয়ে গেছিল। আজ মাথা ঠিক জায়গায় এলেও আর উপায় নেই। সময় নেই…সময় গেলে সাধন যে হয় না!
***
পরিশিষ্ট- নয়ন এসেছে স্নেহাকে দেখতে। সঙ্গে তার পরিবার। আজ সোমবার। নেহাল,কুসুমও ফিরে এসেছে শিমুলের কান্ড শুনে। আর একদন্ডও মন বসেনি ওদের ওখানে। সিদ্ধান্ত নিয়েছে,বাবু হয়ে গেলে বাচ্চাকে নিয়ে একসঙ্গে ঘুরতে যাবে পরে কখনো। স্নেহাকে দেখার পর নয়ন আর তাকে আলাদাভাবে কথা বলার জন্য ঘরে পাঠানো হয়।
স্নেহা আগে আগে ঘরে ঢুকে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। তার অগ্নি চোখে নিজের মরণ খুঁজে পায় নয়ন। প্রশ্ন করে,
“এত রাগ কেন?”
“শুক্রবার আসার কথা ছিল আপনাদের!”
“একটা ঝামেলায় আঁটকে ছিলাম। তাকে তালাক দিয়েই এসেছি।”
“মানে!”
অবাক হয় স্নেহা। নয়ন নার্ভাস। কীভাবে বলবে,খুঁজে পায় না। স্নেহা এগিয়ে বসে। নয়নের চোখে চোখ রেখে শুধু বলে,
“বলুন আমাকে। ভয় কী?”
এইটুকু কথাতেই ভরসা খুঁজে পায় নয়ন। গড়গড় করে বলে দেয় পূর্বের বিবাহের কথা। শিমুলের কথা। শিমুলের শাস্তির কথা…শিমুলের সঙ্গে শারিরীক ভাবে সম্পর্কের কথাও! বাদ দেয় না একটি ঘটনাও। সবটা ঠান্ডা হয়ে শোনে স্নেহা। এরপর হাসে। নয়ন পুনরায় প্রশ্ন করে,
“হাসছো কেন?”
“এমনিই। আমার সমস্যা নেই। তারপরও আমাকে বিয়ে করুন। বুড়ো লোকমানের চাইতে আপনি অনেক ভালো।”
“লোকমান?”
“বাসার সামনের দোকানী। ইতিমধ্যে জেনেছেন,আমার সৎ মা। উনি চান না আমার ভালো জায়গায় বিয়ে হোক। তাই বাবাকে ভুজুংভাজুং বুঝিয়ে ওই ছত্রিশ বছর বয়সী লোকমানের সঙ্গে বিয়ের কথাবার্তা বলে রেখেছিল। কোনো এক সুযোগে বিয়েটা দিয়ে দিতো, আমি নিশ্চিত ছিলাম। আপনার চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা ও আকর্ষণ দেখেছিলাম বলেই বিয়ের প্রস্তাব আনতে বলেছিলাম। আমি এই সংসার থেকে মুক্তি চাই। বাঁচতে চাই একটু। পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। হ্যাঁ,ভালোবাসি না আপনাকে আমি। কাউকে এক দেখাতেই ভালোবাসা যায় না। তবে আমি আপনাকে ভেবেছি,অনুভব করেছি। আপনার সঙ্গে ঘটা ছোট্ট মুহূর্ত গুলোর কথাই বারবার ভেসেছে চোখের পাতায়। আমাকে সুযোগ দিন একটা। জান-প্রাণ দিয়ে ভালোবাসার চেষ্টা করব ওয়াদা করছি। শুধু আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলুন। উদ্ধার করুন প্লিজ।”
বলতে বলতে কেঁদে ওঠে স্নেহা নয়নের হাতজোড়া আঁকড়ে ধরে। খানিকক্ষণ পর স্নেহাকে ভেতরে রেখেই বেরিয়ে আসে নয়ন। জানতে চায় তার মতামত। কবে বিয়েটা হলে ভালো হয়, এই সেই… নয়ন জানালো,সে আজকেই কাবিন করে রাখতে চায়। আগামী শুক্রবার অনুষ্ঠান করে উঠিয়ে নিয়ে যাবে স্নেহাকে। এতে কারো কোনো আপত্তি আছে কী-না। নয়নের পরিবারের কারোরই আপত্তি নেই। কিন্তু স্নেহার মা-বাবা মোচড়ামুচড়ি লাগালে তাদের বোঝায় হাবিব শিকদার। স্নেহার বাবা রাজী হলেও মা রাজী হতে চায় না। সে আসলে চায় না এত ভালো জায়গায় বিয়ে হোক। তাকে উপেক্ষা করেই স্নেহার বাবা আজকেই কাবিনের তারিখ নির্ধারণ করেন। ঘরের ভেতরে বসে থাকা স্নেহা মুচকি হাসে। অবশেষে তার ললাটেও সুখপাখি এসে বসতে চলেছে!
(সমাপ্ত)
(গল্পটি অনেক বড় হবে,এমনটাই ধারণা করেছিল সবাই। কিন্তু আমি আগেও বলেছি,এখনো বলছি,গল্প অতিরিক্ত টানাহেঁচড়া করে বড় করতে পারি না আমি! তাই শেষ করে দিলাম। জানাবেন কেমন হয়েছে। আমার বিজনেস পেজ- https://www.facebook.com/Aparahna-অপরাহ্ন-104124472042861/
লাইক দিতে ভুলবেন না যেন!)