শিমুল ফুল পাঠ-৬

#শিমুল_ফুল
#পর্ব_০৬
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

শিমুল পুষ্পর হাত ধরে বাঁশ জাড়ের আড়ালে গিয়ে নিচু হয়ে বসে পড়ে।পুষ্প খুব ভ/য়ে কেঁ/দে দেয়,
“আব্বা জানতে পারলে মে/রে ফেলবে শিমুল ভাই।”

শিমুলের বুকেও টিপটিপ করছে।প্রিয় মানুষকে কাছে পাওয়ার ইচ্ছা আছে কিন্তু এভাবে রাতের আধারে ধরা খেয়ে কাছে পাওয়ার ইচ্ছা নেই।পুষ্পর হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,”চুপ।”

দুইজন পুরুষ টর্চ লাইট জ্বালিয়ে এগিয়ে আসে।লাইটের আলোয় দেখে বাঁশের জার থেকে ঘেউঘেউ করে দুইটা কুকুর বেড়িয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।বয়ষ্কমতোন লোকটা বলে,
“আরে,দেখ দেখ এটা কু/ত্তা।”

অন্যজন সন্দেহে কপাল কুচকে লাইট এপাশে ওপাশে মা/রে।কাউকে দেখতে না পেয়ে বলে,
“সালার কুত্তা দাড়াই আছে!আর আমি কিনা ভাবলাম ঘুঘু পাখি ফাদে ফালামো”

বয়ষ্ক লোকটা বললো,
“তুই হারা/মজাদা,কু/ত্তার প্রেম পিরিতে ডিস্টাব করলি।”

দুজনেই কথা বলতে বলতে চলে যায়।পুষ্প বুকে থু থু ছিটিয়ে শিমুলের দিকে তাকায়।
শিমুল তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
“ভ/য় পেয়েছিলি?”

“খুব।”

শিমুল হেসে বললো,
“ভ/য়ের কি আছে?দেখলে বিয়ে পড়িয়ে দিতো।”

পুষ্প ভড়কে চোখ খোচ করে তাকায়।
“শখ কতো।”

পুষ্পর কথা শুনে শিমুল বললো,
“শখের আবার কি?তোর কপাল খুলে যেতো আমার মতো বর পেলে।”

“লাগবে না।”

“বুঝলে এই কথা বলতি না গা/ধী।”

পুষ্প তাকিয়ে থাকে কিন্তু কিছু বলেনা।

শিমুল আবার আফসোসের সুরে বললো,
“শেষমেষ কু/ত্তা বানায় দিলো।কি কপাল!”

পুষ্প হেসে ফেলে।মাথা নেড়ে বললো,
“ভালো হয়েছে।”

“বজ্জাত পিচ্ছি তোর জন্যই এই শিমুলকে কেউ কু/ত্তা বলার সাহস পেয়েছে।”

পুষ্প অবাক হয়ে বললো,
“আমি কি করলাম!”

“প্রতিদিন দেখা করতে ডাকিস তাই তো আসি।আর আজকে ধরা খাচ্ছিলাম।”

শিমুলের কথা শুনে পুষ্পর ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাক হয়ে যায়।গলায় অবাক হওয়ার রেশ লাগিয়ে বলে,
“আমি কবে ডাকলাম?”

শিমুল ট্রাউজার থেকে ময়লা ঝেড়ে বললো,
“সামনে যা।আমি তাকিয়ে আছি এক দৌড়ে ঘরে যাবি।”

পুষ্প আবার বলে,
“আমি কবে ডাকলাম।”

শিমুল মাথা নাড়িয়ে হাসে।তারপর সামনে ঝুকে বললো,
“আপনিই তো প্রতিদিন ডাকেন ম্যাডাম।এখন যান আবার কেউ কু/ত্তা তাড়াতে চলে আসবে।”

পুষ্প শিমুলের কোকড়া চুলের দিলে তাকায় এক ঝাকড়া চুল মাথা ভরে আছে।মাথা নাড়িয়ে হাসলে হাসির সাথে চুল দুলে উঠে।এমন পরিস্থিতিতেও তার ইচ্ছে করে এলোমেলো চুল আরো এলোমেলো করে দিতে।কিন্তু সব ইচ্ছা পুরন করতে মানা,ইচ্ছাটা টুপ করে গিলে ফেললো।
“আর রাতে আসবেন না।”

শিমুল ভ্রু কুচকে বললো,
“কেন?”

“একদিন না একদিন কেউ দেখে ফেলবে।”

শিমুল কিছু একটা ভাবে।
“সেটা পড়ে দেখা যাবে।এখন যা।”

পুষ্পর মনমতো হয়নি উত্তরটা।দ্রুত পা ফেলে ঘরে চলে যায়।শিমুল কোন কথাই স্পষ্ট করে বলে না।অথচ পুষ্পর ব্যা/কুল মন স্পষ্ট করে সবকিছু শুনতে চায়,জানতে চায় শিমুলের মনের সুপ্ত অনুভূতি।কিন্তু শিমুল তাকে এক সাগর পরিমাণ দ্বিধাদ্বন্দে ফেলে চলে যায়।

শিমুল পুষ্পর যাওয়ার পথে তাকিয়ে হেসে ফেলে।মনে মনে ভাবে “আল্লাহ!আর একটুর জন্য ধরা খাওয়া থেকে বাঁচলাম।”এই পুষ্পটা যদি বুঝতো শিমুল কিসের টানে ছুটে আসে তাহলে আরো কিছুক্ষণ শিমুলকে নিজেই আটকে রাখতো।সে আনমনে ভাবে আর রাতে দেখা করা ঠিক হবেনা,দরকার হলে পুষ্পকে তার কাছে নিয়ে রাখবে।সে দ্রুত পা ফেলে এগিয়ে যায়।তার ইচ্ছা নির্বাচনের পরেই তার আব্বাকে পুষ্পর কথা জানাবে।পুষ্পকে দূরে রেখে আর থাকা যাচ্ছে না,মেয়েটা যেন তার শান্তির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এর পরে শিমুল আর রাতে দেখা করতে আসেনি।কলেজে যাওয়ার পথে একটু চোখের দেখা এইটুকুই।দুজনের কথা হয়না অথচ চোখে চোখে যেন কথার ছড়াছড়ি।পুষ্প আড়চোখে যখন শিমুলকে দেখে শিমুলও তখন পা/গলের মতো তাকে দেখে।পুষ্পর মুখে ফুটে উঠে লাজুক হাসি আর শিমুলের মুখে হালকা মুচকি হাসির রেশ।ভালোবাসার কথা বলা হয়নি,কিন্তু দুজনের মুখেই সুখের ছোঁয়া।এভাবেই কেটে যায় কিছুদিন।
এর পরের কয়েক সাপ্তাহ শিমুলের খুবই ব্যস্ততায় কাটে সামনে তার আব্বার নির্বাচন।এই ঝামেলায় প্রতিদিন পুষ্পকে দেখতে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না।মোবাইলে ছবি দেখেই নিজেকে দমিয়ে রাখছে।একদিন হুট করে রাস্তায় আটকে বললো,

“এই পিচ্ছি দাঁড়া।”

পুষ্প দাঁড়ায়।নির্বাচনের কাজে যে শিমুল খুবই ব্যস্ত এটা জানে।

“তোকে একটা এন্ডোয়েড মোবাইল কিনে দেই?”

পুষ্প মাথা নেড়ে বললো,
“কেন?”

“কথা বলার জন্য।”

“কথা বলবো কেন?”

শিমুল বাইকের আয়না ঠিক করে বলে,
“কেন কথা বলা দরকার তুই জানিস না?”

“না।”

শিমুল হেসে বললো,
“কেন জানিস না।”

পুষ্প চোখ তুলে শিমুলকে দেখে,
“এমনি।”

“আচ্ছা ছোট দেখে একটা বাটন ফোন দিবো।লুকিয়ে রাখতে সহজ হবে।”

পুষ্প মাথা নেড়ে বললো,
“আম্মা খুব চালাক।দেখে ফেলবে।”

“কিভাবে দেখবে?লুকিয়ে রাখবি।”

পুষ্প মাথা নেড়ে বললো,
“সম্ভব না শিমুল ভাই।”

শিমুল মাথা নেড়ে বলল,
“জ্বা/লা যন্ত্র/নার শেষ নেই।”
তারপর আর কিছুক্ষণ কথা বলে দুজনে বাড়ি চলে যায়।

পুষ্পর বাবা মিজান শেখ আজকে দোকানে যায়নি।অবশ্য উনি না গেলেও খুব বেশি একটা সমস্যা হবে না।দুইজন বাবুর্চি চারজন কর্মচারী তার হোটেলে কাজ করে।উনি শুধু ক্যাশে বসে থাকে।আজকে উনার বড় মেয়ে মুন্নী ঢাকা থেকে আসছে। সাথে মুন্নীর জামাই সাজ্জাদ আর মামাতো দেবর সাফিন আসছে।প্রায় এক বছর পরে মেয়ে আসবে বিধায় বাড়িতে যেন বিয়ে বাড়ির আয়োজন করা হয়েছে।পুষ্প খুশীতে বাক-বাকুম হয়ে বোনের জন্য অপেক্ষা করে।মুন্নী আপা মানে তার ভালো আপা।সব আবদারের জায়গা হলো মুন্নী।দশটার দিকে মুন্নীরা আসে।পুষ্প খুবই খুশী হয় মুন্নীকে পেয়ে।দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পরে সবাই গল্প জমায়।সাফিন পুষ্পকে বলে,
“পুষ্প তোমাদের গ্রামটা ঘুরিয়ে দেখাবে না?”

পুষ্প সাফিনের দিকে তাকায়।সাফিন বোধহয় পুষ্পকে পছন্দ করে,এই যে কথা বলার সময় কতো আগ্রহ দেখায়,কেমন করে যেন তাকায়।মুন্নী বলে,
“কি বলছো সাফিন?দেখাবেনা কেন?পুষ্প বিকালেই নিয়ে যাবি।”
পুষ্প মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানায়।

বিকালে পুষ্প সাফিনকে সাথে নিয়ে ঘুরতে যায়।পুষ্পের মনে শুধু ঘুরছে,শিমুল যেন না দেখে,শিমুলের চোখে যেন না পড়ে।”

বাড়ি থেকে হাটতে হাটতে দুজন কলেজের রাস্তায় চলে আসে।সাফিন পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বলে,
“পুষ্প তোমার বিশেষ কেউ নেই?”

সাফিন কায়দা করে বয়ফ্রেন্ডের কথা জানতে চাইছে।পুষ্পর শিমুলের কথা বলতে ইচ্ছা করছিলো,যদিও শিমুল তার বয়ফ্রেন্ড না।কিন্তু সাফিন যদি দুলাভাই আপাকে বলে দেয়,মাথা নাড়িয়ে বললো,
“না।”

সাফিন মুচকি হাসে।দাঁড়িয়ে হেসে বললো,
“তাহলে তো প্লাস পয়েন্ট।”

তখনি শো করে প্রচন্ড গতিতে বাইকটা এসে তাদের থেকে কিছুটা দূরে থামে।শিমুলকে দেখে পুষ্পর বুকটা ভ/য়ে কেঁপে ওঠে।সাফিনের দিকে তাকিয়ে দেখে সাফিন শিমুলের দিকেই তাকিয়ে আছে।শিমুল ঘাড় ঘুরিয়ে পুষ্পর দিকে তাকিয়ে আবারো প্রচন্ড গতিতে বাইক স্ট্রাট দেয়।বিকট শব্দ করে চলে যায়।পুষ্প চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস নেয়।সাফিন ভ্রু কুচকে বললো,
“পুষ্প লোকটা তোমার পরিচিত নাকি?”

পুষ্প মাথা নেড়ে বললো
“এলাকার ভাই।”

সাফিন সামনে হাটতে হাটতে বললো,
“যেভাবে এসে থামলো আর যে মা/রাত্মক দৃষ্টি দিয়ে তাকালো মনে হচ্ছে যেন বয়ফ্রেন্ড।”

পুষ্প পারেনা রা/গে সাফিনের চুল ছিড়ে ফেলে এই ছে/ছড়ার জন্যই বিপদে পড়তে হলো।
সাফিন বললো,
“আচ্ছা এসব বাদ দাও,এখন বলো আমাকে তোমার কেমন লাগে?”

পুষ্প কিছু বলার আগে,শিমুলের বাইকটা আবারো প্রচন্ড স্প্রিডে এসে থামে।তিয়াশ পেছন থেকে কিছু একটা বললে শিমুল জোড়ে একটা ধ;মক দেয়,পুষ্প ভ/য়ে কেঁ/পে উঠে।তারপর আবার চলে যায়।

সাফিন বিরক্তিতে মুখ কালো করে বললো,
“বাজে ছেলে নাকি?”

পুষ্প বললো,
“ভাইয়া চলেন বাড়িতে ফিরে যাই।”

বাড়িতে এসে পুষ্প ভ/য়ে ভ/য়ে সময় কাটায়,তার কেন জানি মনে হচ্ছে,শিমুল আজকে যেকোনো ভাবেই দেখা করবে।হলোও তাই।সন্ধ্যায় শিলা আসে।সবার সাথে কথা বলে পুষ্পকে একা ডেকে নিয়ে বলে,
“শিমুল ভাই দাঁড়িয়ে আছে।চল”

পুষ্প আশেপাশে তাকিয়ে বললো,
“কোথায়?”

“আমাদের বাড়ির পাশে।”

পুষ্প তার মাকে বলে শিলাদের বাড়ি যাচ্ছে,দুই মিনিটেই চলে আসবে।ধুরুধুরু বুক নিয়ে শিলার সাথে যায়।শিলাদের বাড়ির কাছে গিয়ে দেখে তিয়াশ আর শিমুল দাঁড়িয়ে আছে।পুষ্প গিয়ে শিমুলের কাছে দাঁড়ালে তিয়াশ আর শিলা দূরে চলে যায়।পুষ্প ভ/য়ে মাথা নিচু করে রাখে,কিন্তু শিমুল চুপ করে আছে দেখে মাথা উঠিয়ে তাকায়।শিমুলের দিকে তাকিয়ে পুষ্পর ভ/য় হয়,চোখগুলো লাল হয়ে আছে,মুখটা কঠিন করে তাকিয়ে পুষ্পকেই দেখছে।তখন শিমুল বললো,
“ছেলেটা কে?”

“আপুর দেবর।”

“পছন্দ হয়ে গেছে?”

শিমুলের কথায় পুষ্প চমকে বলে,
“না।”

“না কেন?হেসে হেসে তো ঠিকি কথা বলছিলি।”

পুষ্প ভ/য়ে ভ/য়ে বললো,
“এমন কিছু না।”

শিমুল একটু জোড়েই ধম/কে বলে,
“তাহলে কি হ্যাঁ?কিসের ঘুরাঘুরি?আমারে ভালো লাগেনা?ঢাকাইয়া পেয়ে পটে গেলি।”

শিমুলের ধ;মকে পুষ্পের চোখ জ্ব/লে পানি পড়ে।কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
“শিমুল ভাই…”

পুষ্পর কথা শেষ হবার আগেই শিমুল বলে,
“আমি দেখা করতে চাইলে সম/স্যা,কথা বললে সম/স্যা,আমি যা বলি তাই স/মস্যা।কিন্তু একদিনের পরিচয়ে ওই ছেলের সাথে কলেজ রোডে চলে গেলি?আবার রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাসাহাসি।”

পুষ্প কিছু বলতে গেলে শিমুল তাকে থামিয়ে বলে,
“এক কাজ করি আমি ম,রে যাই তখন যা খুশী তাই করিস।আর আমি তোকে এগুলা বলতেছি কেন?আমি কে?বা*ল।যা সর”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here