শুকতারা (পর্ব-৬)

0
1468

#শুকতারা (পর্ব-৬)
#হালিমা রহমান

সূচির মনের অবস্থা নাজুক।রত্না যাওয়ার পর থেকে ভাল্লাগে না নামের এক অদ্ভূত ভূত ভর করেছে মেয়েটার উপর।কিছু ভালো লাগছে না। কেন ভালো লাগছে না তা বেশ বুঝতে পারছে সূচি।দোটানায় পরে গেছে সে।রত্না বলেছে ফয়সালের বাড়ি থেকে ওকে দেখতে আসবে।নিঃসন্দেহে সূচির জন্য এ এক বিশাল সু-খবর।যতটা শুভ হলে কোনো খবরে মানুষ আনন্দ পায়, ঠিক ততোটাই সুখবর।তবুও মনের এক কোনে অনিশ্চয়তার মেঘ ভর করেছে।’যদি’ শব্দটা ভয় দেখাচ্ছে ঘাড় নেড়ে,মাথা ঝুকিয়ে।রত্না খুব হুজুগে।যদি ওর খবর ভুল হয়? যদি ফয়সালরা না আসে? যদি সূচিকে পছন্দ না হয়? সূচির বুক কেঁপে উঠে।আশা-নিরাশার মাঝে ডুবে ডুবে মরছে।এতো এতো প্রার্থনার ফল ফয়সাল,সূচির আকাঙ্ক্ষা,ইচ্ছা,আগ্রহ, ভালোলাগা,ভালোবাসা — সব অনুভূতির কেন্দ্র তো সেই একটা মানুষ।কাজী ফয়সাল।

রত্না বলেছে সূচিকে পছন্দ করেছে ফয়সালের মা,রোমেলা বানু।সূচির সারা শরীর শিরশির করে। বাবা-মায়ের চোখে সূচি সুন্দর না।আহামরি সৌন্দর্যের অভাবে সেদিনও বাবা আফসোস করলো।বাড়িশুদ্ধ সবার চোখে সূচি শ্যামলা,ভূমির মতো সুন্দর না।সূচির প্রশংসা ভূমি ছাড়া আর কেউ করে না। তবে কি দেখে পছন্দ করলো ফয়সালের মা? কখন দেখলো সূচিকে? কোন সাজে দেখলো? এতো এতো চোখ সৌন্দর্য খুঁজে পায় না,ফয়সালের মা কি এমন সৌন্দর্য খুঁজে পেল? সেও কি ভূমির মতোই ব্যতিক্রম? মানুষটাকে কোনোদিন চোখে দেখেনি সূচি।গ্রামে তার দুর্নাম।রোমেলা বানু নাকি বড় বউয়ের সাথে মিলেমিশে থাকতে পারে না,সারাদিন খিটখিট করে। এতো এতো দুর্নামের পরেও সূচির মনে খুব শ্রদ্ধাবোধ জেগে উঠে। রোমেলা বানু সামনে থাকলে হয়তো টুপ করে একবার কদমবুসি করতো। সূচির স্থির বিশ্বাস রোমেলা বানু ভূমির মতোই।ভূমির মতোই অসাধারণ, ব্যতিক্রমী।

পুকুরের দিকটায় অনেক বাঁশগাছ।ছোট-খাটো এক বাঁশঝাড় যেন।ঘন বাঁশগাছের নিচে দাঁড়িয়ে সূচির মনে এক অদ্ভূত ইচ্ছা জাগে।যদি আল্লাহর রহমতে এখানে কিছু হয়ে যায়,তবে সময় করে রোমেলা বানুকে একটা প্রশ্ন করবে সূচি।কোনো এক অলস সময়ে তার পায়ের কাছে বসে প্রশ্ন করবেঃ” আমার সৌন্দর্য কারো চোখে পড়ে না,তাই অসুন্দর বলে তাচ্ছিল্য করে। আপনি কি করে সৌন্দর্য চিনেছিলেন? আমাকে কেন পছন্দ করেছিলেন?”

রত্না চলে গেছে একটু আগে। সূচিকে খবর দিয়েই বেড়িয়ে গেছে।মাগরিবের আযানের হয়তো কিছুক্ষণ বাকি। আশপাশ অন্ধকারে ছেয়ে গেছে প্রায়।এখানে অন্ধকার ঝুপ করে নেমে আসে, ঠিক শ্রাবণের এক পশলা বৃষ্টির মতো।সূচি গ্রামের মেয়ে, অন্ধকারে ভয় তার কম।সূচি ঠায় দাঁড়িয়ে রয়।ঘরে যেতে মোটেও ইচ্ছা করছে না। সূচি যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেটা মনিদের জায়গা।আগে সুপারির বাগান ছিল কিন্তু এখন আর নেই।অযত্নের দরুন গুটিকয়েক সুপারি গাছ আর দুই-তিনটে নারিকেল গাছ চোখে পড়ে।বাকি সবই ছন্নছাড়া জঙ্গলের মতো।বাঁশঝাড়,আগাছা,পরগাছা,স্বর্ণলতা,ঘাস–সব মিলিয়ে ছোট-খাটো এক জঙ্গলের রূপ নিয়েছে পুকুরের দক্ষিণ দিকটা।হলদে হলদে নাম না জানা ছোট ছোট ফুলগুলো ফুটে আছে সূচির ডানদিকেই।এরা অখ্যাত অথচ দেখতে ভারী মিষ্টি।সূচির ভীষণ ভালো লাগে ফুলগুলো।অকারণেই অনেকগুলো ফুল ছিঁড়ে ওড়নার আঁচলে নেয় সূচি।অন্ধকারের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে কুয়াশা।মনিদের ঘর কাছেই।মনি হয়তো মাটির চুলায় আগুন দিয়েছে,ধোঁয়ার গন্ধ ভেসে আসছে এদিকে।সূচি প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেয়।এই গন্ধটা সূচির খুব পছন্দ।ঘাটে বসে বসে রনি লুঙ্গি ধুচ্ছে।জোরে জোরে কথা বলছে লিলির সাথে।সব ছেলেমানুষী কথা।সূচি সেদিকে কান দেন না।হুট করেই অবসন্নতা ঘিরে ধরেছে তাকে।ঘরে যেতে ইচ্ছা করছে না,নড়া-চড়া করতে ভালো লাগছে না,কোনো শব্দ মনে ধরছে না,কিছুই ভালো লাগছে না।দুটো পাখি উড়ে গেল মাথার উপর দিয়ে।পাখিরাও নীড়ে ফিরছে।সূচি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো।শরীরে চাদরটা আরো ভালোভাবে জড়িয়ে নিলো।সূচির মনের কোনে ভেসে উঠলো এক শান্ত-শিষ্ট চেহারা।তার মাথাভর্তি কোঁকড়া চুল,ঠোঁটের কোনে স্নিগ্ধ হাসি।সূচির ভালো লাগলো,খুব বেশি ভালো লাগলো।আশ-পাশের শীতের বাতাসেও প্রেম প্রেম গন্ধ।সূচির খুব প্রেম করতে ইচ্ছে করছে।মনে মনে ফয়সালকে নিয়ে এক মহাকাব্য রচনা করতে ইচ্ছে করছে। শীতের হাওয়ায় এভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে তিরতির করে কাঁপতে কাঁপতে ফয়সালের কথা ভাবতে ইচ্ছে করছে। সব শব্দ থেমে যাক,বাতাস বন্ধ হয়ে যাক,হাজার রকম গন্ধ মিলিয়ে যাক শূন্যে। সূচি অনন্তকাল মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে একমনে ভাবতে থাকুক ফয়সালের কথা।

***

মাটির উঠোনে কাঠ দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে মিষ্টি আলু পোড়া দিচ্ছে চম্পা।রনি,লিলি,মনি,জয়া,আলেয়া বানুসহ সবাই গোল হয়ে বসে আছে চারদিকে।কেউ কেউ আগুন পোহাচ্ছে। জয়া,মনি নিচুস্বরে রসালো আলোচনা করে মিটমিটিয়ে হাসছে।এমন আড্ডায় সূচিই হয় মধ্যমনি।তবে আজ তার দেখা নেই।চম্পা উঠোন থেকেই গলা উচিঁয়ে ডাকলো সূচিকে।

_” সূচি,আলু পোড়া খাবি না?”

সূচি জানলা দিয়ে মাথা বের করে।কাঠের শিক ভেঙে গেছে অনেক আগেই।তাই সহজেই মাথা বের করা যায়।সূচিও গলা উঁচিয়ে জবাব দেয়ঃ” আজকে খাব না,ভাবি।”

_” ক্যান? শরীর খারাপ?

_” না, ভালো লাগছে না।আমি ঘুমাব।”

সূচি জানলা আঁটকে দেয়।ঘুমানো তো বাহানা মাত্র।সে এখন আড়ি পাতবে।বাবা-মা খাচ্ছেন।ঘরের কারো সাথে কথা বলে না বলে সূচি এখন আগে আগেই একা একা ভাত খেয়ে নেয়।তারপর দরজা আঁটকে নিজের ঘরে বসে থাকে।অথবা কখনো আগে আগেই ঘুমিয়ে পড়ে।আজ আর ঘুমাতে গেল না সূচি।বাবা-মার কথা শুনতে হবে।রত্নার কথা যদি সত্যি হয়,তবে বাবা-মা নিশ্চয়ই সে কথা আলোচনা করবে।আর আলোচনা কানে এলেই সূচিও নিশ্চিত হতে পারবে।রত্নাকে খুব বেশি একটা বিশ্বাস নেই।পাগল মেয়ে কি শুনতে কি শুনেছে। পুরোপুরি নিশ্চিত হতেই ঠান্ডা টিনের সাথে কান পাতে সূচি।মুহূর্তেই সারা শরীর অবশ হয়ে আসে। ইশ! টিন কি ঠান্ডা! মনে মনে হাসে সূচি।ফয়সালের জন্য কত কষ্ট করছে! এখানেই যদি বিয়ে হয় তবে বিয়ের পর সব সুদে আসলে উসুল করবে সূচি।একচুল ছাড় দেবে না।বিয়ের কথা মাথায় আসতেই আবার হাসে সূচি।কোথায় আছে কি,পান্তা ভাতে ঘি।পাত্রপক্ষ এখনো দেখতেই এলো না অথচ সূচি বিয়ে অবধি ভেবে ফেললো।সত্যিই প্রেমে পড়ে মেয়েটার মাথাটাই বিগড়ে গেছে।

_” তেলাপিয়া মাছের মাথাটা দিমু?”—চামচে মাথাটা তুলে প্রশ্ন করেন সাহিদা বেগম।

_” না, দিও না।সূচি কী করে?”

_” জানি না।ভাত খায়া মনে হয় ঘুমাইতে গেছে।আমার লগে কথা কয় না।”

মমিন শেখ দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।আফসোস করে বলেনঃ” মাইয়াটারে নিয়া কি করা যায় কও তো? আমার লগেও কথা কয় না।মরা মানুষের মতো ল্যাট মাইরা থাকে।”

সাহিদা বেগম এক লোকমা ভাত মুখে দেন।চিবিয়ে চিবিয়ে বলেনঃ” থাক যেমনে মন চায়।অশান্তি তো কম হইব।”

_” আজকে কি হইছে জানো?”

_” কি?”

_” সূচির লেগা সম্বন্ধ আইছে।”

অবাক হয়ে যান সাহিদা বেগম।এটা নতুন খবর।ভাতের প্লেট মাটিতে রেখে আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করেনঃ” পাত্র কে?সূচিরে চিনে? আমগোরে চিনে?”

_” ফয়সাল,রোমেলার পোলা।রোমেলা নিজেই পছন্দ করছে।সূচিরে নাকি রত্নাগো বাড়িতে দেখছিলো,ওমনেই পছন্দ করছে।”

_” আলহামদুলিল্লাহ। পোলা তো মাশাল্লাহ অনেক ভালো।”

_” হ।”

কিছু একটা মনে পড়লো সাহিদা বেগমের।আমতা আমতা করে বললোঃ” কিন্তু রোমেলার অনেক দুর্নাম তো।বড় বউটারে বলে যন্ত্রণা দিছে অনেক।”

_” তুমি নিজের চোখে দেখছো?”

_” না, আমি কেমনে দেখমু?আমি কখনো গেছি ওইদিকে?”

মমিন শেখ বিরক্ত হন।কপাল কুঁচকে বলেনঃ” প্রধানমন্ত্রীর পিছেও মাইনষে তার নামে দুর্নাম করে।তুমি যেডা নিজের চোখে দেখবা,নিজের কানে শুনবা ওইটাই বিশ্বাস করবা।লোকের মুখের কথা বিশ্বাস কইরা লাভ আছে?ওরা পরশু আসব মেয়ে দেখতে।”

_” আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর কাছে লাখ কোটি শুকরিয়া জানাই।আপনেরে এডি কে কইছে?”

_” রতনে।রতনসহ আসব মনে হয়।”

_” বাজার-সদাই কইরেন তাইলে।আতপ চাউল লাগব,ফল-মূল লাগব,বিস্কিট,চানাচুর….

সূচি আর শুনলো না। টিনের কাছ থেকে সরে এলো। কথাটা তবে সত্যি।বাহ! দারুন তো।অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগছে সূচির।পাতলা কম্বল গায়ে জড়িয়ে খুঁটির সাথে ঝুলানো ছোট্ট আয়নায় মুখ দেখে সূচি। পরশু আসবে ফয়সালরা।একটু রূপচর্চা করতে হবে।চেহারার চামড়াগুলো একটু কুঁচকে আছে,সাদা সাদা হয়ে আছে নাকের আশেপাশে,ঠোঁটের কাছে।জয়া কিসব যেন দেয় চেহারায়।মধু,চালের গুঁড়া,কাঁচা হলুদ,নিমপাতা বাটা,আরো অনেককিছু।এসব যেদিন দেয় সেদিন জয়ার চেহারা খুব উজ্জ্বল দেখায়।খুব পরিপাটি ভাব ফুটে উঠে।জয়ার কাছ থেকে কালকে একটু চেয়ে আনতে হবে।ফয়সাল নিজেও খুব পরিপাটি।তার সামনে একটু সেজে-গুজে না গেলে হবে?

টিনের ঘরের ফাঁক-ফোকড় দিয়ে বাতাস আসছে।সূচির পশম দাঁড়িয়ে যায়।আড়িপাতার পর থেকে খুব ভালো লাগছে।সূচি নিশ্চিত হলো,মনের মধ্যেও চঞ্চল প্রজাপতিরা উড়তে শুরু করলো।তবে এখনো অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।চব্বিশ ঘন্টার চাইতে বেশি সময়।লাইট বন্ধ করে এলোমেলো পায়ে বিছানায় চলে যায় সূচি।কাঁথা মুড়িয়ে মনে মনে প্রার্থনা করে একনিষ্ঠভাবেঃ” ওই মানুষটারে আমার করে দাও খোদা।একটু দয়া করো।আমি আর কিচ্ছু চাই না।শুধু ভিক্ষা হিসেবে তারে দান করো।”

***

খামারের কাজ খুব সহজ নয়।ধরা-বাধা কাজ নেই ঠিকই তবে সারাদিন খাটতে খাটতে প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই ভোরে উঠতে হয় ঘুম থেকে।বাড়ির কাছে খামার হওয়ায় ফয়সাল ব্রাশ করতে করতেই খামারে চলে যায়।গোয়াল ঘর থেকে গরু বের করে,ভুসি গোলায়,গরুকে খাওয়ায়।কখনো আবার ভাতের মার খেতে দেয়।।পুকুরে মাছ চাষ হয়।সেখানে খাবার দেয়।পুরো খামার ঘুরে ঘুরে গাছগুলো দেখে।রাতে কোনো সবজি বা ফল চুরি হল নাকি,নতুন সবজি হলো নাকি,এসব ঘুরে ঘুরে দেখে।অবশ্য চুরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।একটা কর্মচারী আছে খামারে,তার নাম আকাশ।গোয়াল ঘরের পাশেই খড় দিয়ে উঁচু করে একটা টংঘর বানিয়েছে ফয়সাল।আকাশ সেখানেই থাকে।রাতে খামার পাহারা দেয়।তাই চুরি হওয়ার সম্ভাবনা একদম কম।

নাস্তা খাওয়ার আগে একদফা কাজ করে বাড়ি ফিরলো ফয়সাল।ঘুরতে ঘুরতে গরম লাগছে খুব।তাই জ্যাকেট খুলে কাঁধে নেয় ফয়সাল।উঠোন ঝাড়ু দিচ্ছিলো হুমায়রা।সে ফয়সালের বড় ভাবি।ফয়সাল এক নজর দেখলো ভাবিকে। মা-ভাবি একসাথে থাকলে সারাদিন ঝামেলা হয়,অশান্তি হয়।তাই একবাড়িতে থাকলেও ঘর আলাদা।ফয়সালদের ইট-সিমেন্টের বিশাল ঘরের পাশেই আফজালের টিনের ছোট্ট ঘর।সেখানে আলাদা থাকে হুমায়রা।তার ছেলে-মেয়ে নেই।একা থাকে,আলাদা রান্না করে খায়,ঝুট-ঝামেলা এড়িয়ে চলে,ভালো লাগলে শ্বাশুড়ি-দেবরের সাথে কথা বলে,ভালো না লাগলে ফিরেও তাকায় না।এ এক অন্য পদের মানুষ।নিস্তব্ধ রাতের মতোই সে শান্ত,চুপচাপ,গম্ভীর।মাঝে মাঝে নিজেই অবাক হয় ফয়সাল।এতো চুপচাপ কী করে থাকে মানুষ? ঠোঁট,জ্বিভ অকেজো হয়ে যায় না?

জুতো খুলে ঘরে ঢুকতেই বসার ঘরে রতন কাকাকে চোখে পড়লো ফয়সালের।চেয়ারে বসে পান খেতে খেতে মায়ের সাথে কথা বলছে।ফয়সাল সালাম দিতেই একগাল হেসে সালামের উত্তর নিলো রতন পাটোয়ারী।অতি উৎসাহী হয়ে বললোঃ” এদিকে আইসা বসো,বাবা।শরীর ভালো?”

_” জ্বি,কাকা।আপনি ভালো আছেন?”

_” এই তো বাপ।আছি আল্লাহর রহমতে।”

বসার ঘরে সোফার বদলে একটা খাট রাখা।খাটেই কপাল পর্যন্ত ঘোমটা দিয়ে বসে ছিলেন রোমেলা বানু।ফয়সাল যেয়ে মায়ের পাশে বসে।মাকে ফিসফিস করে বললোঃ” অনেক ক্ষুধা লাগছে, আম্মা।ভাত দাও।আকাশের ভাতও দিয়ো।”

মধ্যমা আঙুলে রাখা চুনটুকু জ্বিভের আগায় চালান করে দিলেন রোমেলা বানু। শান্ত গলায় বললেনঃ” ভাত পরে খাও।জরুরি কথা আছে।কথা শুইনা নাও আগে।”

_” কী কথা?”

একটু প্রস্তুতি নেন রোমেলা বানু।বক্তৃতা দেওয়ার ভঙ্গিতে বলেনঃ” তুমি বড় হইছো এখন।ভালো-মন্দ সব বুঝো,কামাই-রোজগার করো।তোমার সামর্থ্য আছে। একটা বিয়া-শাদির দরকার তোমার।আমারো একটা সঙ্গীর দরকার।বুঝতেই পারতাছো।এহন তুমি কি রাজি?”

হুট করেই খুব লজ্জা লাগলো ফয়সালের।আম্মা কি বিয়ের কথা বলছে? বিয়ের ইচ্ছা তো ফয়সালেরও আছে।সাথের সব বন্ধু-বান্ধবের বিয়ে হয়ে গেছে,শুধু ফয়সালই বাকি।মায়ের পছন্দের উপর শতভাগ ভরসা আছে ফয়সালের।মা নিশ্চয়ই খুব সুন্দর একটা বউ আনবে।সুন্দর,টুকটুকে একটা বউ।আহ! একটা সুন্দর ফুটফুটে,লাল টুকটুকে বউয়ের ইচ্ছা ফয়সালের অনেক দিনের।

ফয়সালের নিরবতাকে সম্মতির লক্ষণ মনে করলেন রোমেলা বানু।ঠোঁটের কোনে সন্তুষ্টির হাসি নিয়ে রতন পাটোয়ারীকে বললেনঃ” আমি কইছিলাম না আপনেরে? আমার পোলায় আমার কথার বাইরে কথা কইব না।আমার ইচ্ছাই ফয়সালের ইচ্ছা।”

_” তাইলে কালকেই চলেন।আপনার তো খুব পছন্দ মেয়েরে।”

_” হ।শান্ত,ভদ্র,বড়টার মতো হয় নাই। পরিবারও পছন্দ আমার।বড়লোকের সুন্দর মাইয়া তো আনলাম একটা।এবার মধ্যবিত্ত ঘরেই যাই।বুঝলেন ভাই,খালি সুন্দর দিয়াই সংসার চলে না।আমি এহন বুঝি।আচরণেই সব।”

কথাগুলো যে হুমায়রাকে উদ্দেশ্য করে বলা তা বেশ বুঝতে পারলেন রতন পাটোয়ারী। তিনি মাথা নেড়ে বললেনঃ” হ,ঠিক ঠিক।তাইলে সব ঠিকঠাক।আপনারা কালকে বিকালেই চলেন সূচিগো বাড়িতে।”

_” আচ্ছা।”

সূচির নাম খট করে কানে বাজলো ফয়সালের।সূচি কেন? সূচিদের বাড়িতে বিবাহযোগ্য মেয়ে তো শুধু সূচিই আছে।তারমানে কি সূচি?

_” আম্মা, সূচিদের বাড়িতে যাব কেন?”

_” সূচিরে আমার অনেক পছন্দ।ওরেই দেখতে যামু।আমার দেখার কিছু নাই, তুমিই দেখবা।”

মনে হচ্ছে ভিতরে কেউ চিরতার রস ঢেলে দিলো।শেষপর্যন্ত সূচিকেই পছন্দ হলো মায়ের? কি দেখে পছন্দ হল? রূপ,গুণ, মেধা কিছুই তো নেই মেয়েটার।তাছাড়া মেয়েটা অসামাজিক বটেও।প্রশ্ন করলেই কেবল মাথা নাড়ে।এই রূপহীন, গুণহীন,মেধাহীন, অসামাজিক মেয়টাকে নিজের পাশে কল্পনা করতেই মাথা ঘুরে উঠলো ফয়সালের।সূচিকেই কেন পছন্দ করলো মা? গ্রামে কি আর মেয়ে ছিলো না?

চলবে….

গ্রুপ লিংকঃ https://www.facebook.com/groups/2742587889373112/?ref=share_group_link

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here