#শুধু_তোমায়_ঘিরে
#লেখিকাঃসীমা
part 3
—খুব শখ না অন্যের বউ হওয়ার? তোকে না বলেছি আমি তোকে বিয়ে করবো।কান খুলে শুনে রাখ আমি ছাড়া তোকে কেউ বিয়ে করতে পারবে না।
রিয়াদ আনিশাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।আনিশার বাবা মা আনিশাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেন।
আনিশাকে ওর বাবা বলে,
—মারে এমন জীবন কাটানোর চেয়ে তুই কোথাও পালিয়ে যা।
—বাবা আমি কোথায় যাবো?রিয়াদ আমার পিছু ছাড়বে না।
—তুই তোর বোন রিমির বাড়িতে যা।ওখানের ঠিকানা রিয়াদ জানে না।
—ঠিক আছে বাবা আমি তাই যাব।
পরদিন সকালে আনিশার মা আনিশার সব কাপড় গুছিয়ে দেয়।কিছু টাকা হাতে দিয়ে আনিশাকে বলে,
—সাবধানে যাবি মা।
আনিশা ওর বাবা মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।আনিশার বাবা বলে,
—তাড়াতাড়ি যা মা।রিয়াদ আজ আবার গায়ে হলুদের জন্য আসবে।
আনিশা বাবা মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রিমির বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হয়।পথিমধ্যে রিয়াদের সঙ্গে দেখা হয়।মুখ ঢাকা থাকায় রিয়াদ আনিশাকে চিনতে পারেনি।আনিশা বুক কেঁপে ওঠে রিয়াদকে দেখে।রিয়াদ কাছে এসে বলে,
—আপনি কি এখানে নতুন?
আনিশা মাথা নাড়ায়।
—আপনি যান।
আনিশা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এগিয়ে যায়।
রিমি বাড়িতে পৌছে দরজা নক করলে রিমি দরজা খুলে দেয়।আনিশাকে দেখে রিমি খুশি হয়।বলে,
—আনিশা কেমন আছিস? বাবা মা কেমন আছে?
—ভালো আপু।তোমরা কেমন আছো?
–ভালো তোর কাছে যেতে আমরা চাচ্ছিলাম একটা জরুরী কথা বলতে।
—জরুরী কথা?কি আপু?
—পরে বলবো আগে ভিতরে আয়।
আনিশাকে নিয়ে রিমি ভিতরে যায়।রিমির মধ্যবিত্ত পরিবারে বিয়ে হয়ে হয়েছে।শ্বশুর শ্বাশুরী দুই ননদ আর স্বামীকে নিয়ে সংসার রিমির।চার বছর হয়ে গেলোও সন্তান হয়নি রিমির। এ জন্য অনেক কটু কথা শুনতে হয়।বাড়িটার পাঁচটা রুম একটাতে রিমির শ্বশুর শ্বাশুড়ি থাকে,একটিতে দুই ননদ রাশেদা এবং মরিয়ম থাকে,একটিতে রিমি আর তার স্বামী থাকে।বাকি দুটোর মধ্যে একটি স্টোর রুম আর অন্যটি অতিথী আসলে থাকতে দেয়।
রিমি আনিশার হাত ধরে শ্বাশুরীর সামনে যায়।আনিশাকে দেখে রিমির শ্বাশুরী খুব খুশি হয়।আনিশা বুজতে পারে না কেনো এরা খুশি হচ্ছে এত?এরাই আনিশার বাবা মাকে যৌতুকের টাকার জন্য অনেক কথা শুনিয়েছে।রিমির শ্বাশুরী বলে,
—আনিশা মা কেমন আছিস?
—আসসালামু অলাইকুম আন্টি ভালো আছি আপনি কেমন আছেন?
—ভালো মা। রিমি যা আনিশার জন্য কিছু খাবার নিয়ে আয়।
—আনছি মা।
রিমি কিচেনে যায়।আনিশাকে হাত ধরে পাশে বসায় রিমির শ্বাশুরী।বলে,
—কত শুকিয়ে গেছিস ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করিস না?
—করি আন্টি।
—তোকে এবার মোটা বানিয়ে তারপর বাড়িতে পাঠাবো।
রিমির ননদেরা রিমির শ্বাশুরীর রুমে ঢুকে।আনিশা ওদের দেখে মাথা নিচু করে।রাশেদা এবং মরিয়ম এর আগে আনিশা যতবার এসেছে ততবারেই অপমান করেছে।দুজনে আনিশার অনেক বড় ওদের বাজে ব্যবহারের জন্য এখনো ওদের বিয়ে হয়নি।
রাশেদা বলে,
—আনিশা কেমন আছো?
—ভালো আপু।
—মাথা নিচু করে আছো কেনো?মা আনিশাকে নাস্তা করতে দাও।
—রিমি আনতে গেছে।
—রিমি ভাবি এত দেরী করছে কেনো?মরিয়ম গিয়ে দেখতো।এতদূর থেকে এসেছে তবু নাস্তা দিতে পারেনা তাড়াতাড়ি।
—যাচ্ছি আপু।
মরিয়ম কিচেনে যায়।আনিশা সবার ব্যবহার দেখে অবাক হয়ে যায়।এত ভালো ব্যবহার করছে এর মানে কি?রিমি নাস্তা নিয়ে এসে বলে,
—আনিশা খেয়েনে।
—আপু এসবের কি দরকার ছিলোনা?
—চুপ করে খেয়ে এখন তোকে সুস্থ থাকতে হবে।
—আপু?
—আনিশা বউমা ঠিক বলেছে খেয়ে নাও।
আনিশা হাত দিয়ে খেতে দেয় না।রিমির শ্বাশুরী খাইয়ে দেয়।খাওয়া শেষে আনিশাকে বিশ্রাম নিতে বলে।রিমি রুমে নিয়ে যায়।রুমটা সুন্দর করে সাজানো যা আগে ছিলো।আনিশার মাথায় কিছুই ঢুকছে না হঠাৎ সবার ভালো ব্যবহার করার কি অর্থ হতে পারে?আনিশাকে বিশ্রাম নিতে বলে রিমি বাইরে যায়।আনিশাও বেডে শুয়ে পড়তে ঘুমের দেশের যায়।
এদিকে আনিশা বাড়ি থেকে পালিয়েছে শুনে রাগে ফেটে পড়ে।আনিশাদের বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর করে।বারবার আনিশার বাবা মাকে বলছে আনিশা কই?তারা চুপ করে আছে।তারা জীবন দিয়ে দিলেও বলবেনা।রিয়াদ এবার প্রচন্ড রেগে গিয়ে আনিশার বাবাকে লাথি মারে।রাগে থরথর কাপছে।বলে,
—আনিশা কই?কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস?
—বলবনা তোর মত জানোয়ারের হাতে আমরা আনিশাকে তুলে দিবো না।
—বুড়োর খুব তেজ দেখছি।যেখানে আনিশা থাক না আমি ওকে খুজে বের করবো।বাচতে চাইলে এখনও বল আনিশা কই?
—আমরা জীবন দিবো তবু বলবো না।
—ঠিক আছে তোদের ইচ্ছা পূরন হোক স্বপন এদের গুলি করে মেরে লাশ গুম করে দে।
—ঠিক আছে ভাই।
—মেরে ফেলো আমাদের জীবন দিয়েও যদি আমাদের মেয়ের জীবন বাঁচবে আর কিছু চাই না…
আনিশার বাবা আর কিছু বলার আগে স্বপন আনিশার বাবা মা গুলি করে দেয়।আনিশার বাবা মার মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত গুলি চালাতে থাকে।মৃত্যুর আগে আনিশার বাবা বলে,
—আল্লাহ আমার মেয়েটাকে নিরাপদ রেখো।
রিয়াদের লোকজন লাশ গুম করে দেয়।পুলিশ তদন্ত করলেও কিছু পায়না লোকজন ভয়ে মুখ খুলেনা।কমিশনার সন্দেহ করে রিয়াদকে কিন্তু প্রমানের অভাবে ধরতে পারেনা।
,
,
আনিশার ঘুম ভেঙ্গে দেখে ওর রুমে সবাই এসেছে।আনিশার দুলাভাই রিশাদও এসেছে।রিমি বলল,
—আনিশা তোর কাছে একটা জিনিস চাইব দিবি?
—কি আপু? তার আগে তোমাদের একটা কথা বলি আমাকে এখানে কিছুদিন থাকতে দিবে?
—কয়েকদিন কেনো?একবছর থাকতে হবে।
—না আপু এতদিন থাকতে পারবো না।
—পারবি জানি ডক্টর বলেছে আমি মা কোনোদিন হতে পারব না।আমাকে রিশাদ ডিভোর্স দিবে তুই বাঁচা আমাকে?
—আমি কিভাবে বাঁচাবো?
রিমির শ্বাশুরী বলে,
—নিজের বোনের সংসার বাঁচাতে চাইলে রিশাদের সন্তান তোমাকে জন্ম দিতে হবে।সন্তান হলে তুই চলে যাবি।
আনিশা নির্বাক হয়ে যায়।এই জন্য এত খাতির করা হচ্ছে।রিমি বলে,
—আনিশা আমার সংসার বাঁচা বোন।
—আমি পারবো না আমি আমার সতীত্ব নষ্ট করতে পারবো না।ক্ষমা করে দিয়ো।
—পারবি না কেনো? রিশাদ আমরা চলে যাচ্ছি তুমি কাজ শুরু করে দাও।
আনিশা রিমির পা জড়িয়ে ধরে।
—আপু প্লিজ আমার এতো বড় ক্ষতি করো না।
—এটা না করলে আমার মা ডাক কোনোদিন শোনা হবেনা।
আনিশা অনেক মিনতি করে কিন্তু কারো মন গলেনা।সবাই বের হয়ে যায়।রিশাদ দরজা লক করে আনিশার দিকে এগুতে থাকে।আনিশা বলে,
—দুলাভাই আমি আপনার ছোটো বোনের মতো ছেড়ে দিন আমাকে।
—না আনিশা রিমিকে দেখতে গিয়ে তোমাকে খুব পছন্দ হয়। তোমার বাবা মা বিয়ে দিলো না আজ এতদিন পর মনের আশা পূরনের সুযোগ পেয়েছি কিভাবে ছাড়ি বলো?এসো কাছে এসো।
আনিশার ওড়না ধরে টানাটানি শুরু করলে আনিশা একটা ফুলদানি তুলে রিশাদের মাথায় মারে।রিশাদ আনিশাকে ছেড়ে দিয়ে দুহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে।আনিশা দরজা খুলে পালিয়ে যায়।সবাই রিশাদকে নিয়ে ব্যস্ত তাই আনিশার দিকে কেউ তাকায়নি।
আনিশা দৌড়াতে দৌড়াতে একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খায়।গাড়ির থেকে একটা ছেলে নেমে এসে আনিশাকে তুলে ধরে। বলে,
—আপনি ঠিক আছেন তো?
আনিশা ছেলেটার কোলে জ্ঞান হারালো।ছেলেটাকে কোলে করে আনিশাকে গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যায়।সেখানে……
চলবে