শুধু_তোমায়_ঘিরে #লেখিকাঃসীমা part 4

0
485

#শুধু_তোমায়_ঘিরে
#লেখিকাঃসীমা
part 4
আনিশা ছেলেটার কোলে জ্ঞান হারালো।ছেলেটাকে কোলে করে আনিশাকে গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যায়।সেখানে একজন ডক্টর এগিয়ে আসে।
—স্যার আপনি এখানে?
—এই মেয়েটা আমার গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়েছে ওকে বাচান।
—ওকে স্যার।নার্স এদিকে আসুন।
ডক্টর নার্স মিলে আনিশাকে ওটিতে নিয়ে যায়।অপারেশন সাকসেসফুল হয়।ডক্টর ওটি থেকে বের হয়ে খবরটা দিতে ছেলেটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
—স্যার মেয়েটা আপনার কে?
—কেউ না এক্সিডেন্ট করেছিলো তাই বাচিয়ে নিয়ে এসেছি।আমি আসি ওর দিকে খেয়াল রাখবেন।
এতক্ষন যে ছেলেটা কথা বলল তার নাম তাসিন।দেশের একজন বড় বিজনেসম্যান বাড়িতে বাবা মা ঈশান মানে তাসিনের ছেলেকে নিয়ে সংসার। ঈশানের বয়স চার বছর।তাসিন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বারোটা বেজে গেছে ঈশান তাসিনকে ছাড়া খায়না।এতক্ষন বুজি না খেয়ে বসে আসে।তাসিন দেরী না করে বাড়িতে আসে।বাড়িতে ঢুকে দেখে তাসিনের বাবা মা ঈশান সবাই টেবিলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে সামনে সব খাবার ঢেকে রাখা।তাসিন সবাইকে ডেকে দেয়।
—মা বাবা উঠো।
—তুমি এসেছো তাসিন(সবাই তাসিনের ডাকে জেগে ওঠে)বসো আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
—মা তোমাকে কত বলেছি আমার জন্য অপেক্ষা করো না কিন্তু তুমি তো শুনো না।(বসতে বসতে)
—আমাদের যেভাবে তো বোঝার তো বুঝিয়েছিস ঈশান তো মানে না।ও তো জেদ ধরে বসে আছে তোমার সাথে খাবে বলে।
তাসিন ঈশানকে আস্তে করে ডাকে।ঈশান ঘুম থেকে উঠে তাসিনের গলা জড়িয়ে ধরে।
—বাবা মাকে খুজে পেয়েছো?
—হুম বাবা কালকে নিয়ে আসব।
—থ্যাংক ইউ বাবা(গালে চুমু দিয়ে)
তাসিনের স্ত্রী ঈশানী তিনবছর আগে এক্সিডেন্টে মারা গেছে।ঈশান ছোট তাই ওকে বলা হয়েছে ওর মা বেচে আছে।তাসিনের কাছে প্রতিদিন বায়না করে ওর মাকে আনার জন্য কিন্তু তাসিন শুধু বলে আনবে।তাসিন জানে ঈশানী বেচে নেই।আনিশাকে দেখে তাসিন প্রথমে চমকে গিয়েছিলো কারন ঈশানীর মত দেখতে হুবহু আনিশা।ঈশানকে আগে বলেছিলো আজ ওর মায়ের খোজ না আনলে কিছু খাবে না।
ঈশানকে খাইয়ে দিয়ে তাসিন ওকে নিয়ে রুমে যায় ঘুমাতে।ঈশান প্রশ্ন করে,
—বাবা মা কি আমাদের চিনতে পারবে?
—কেনো পারবে না? তুমি ঘুমিয়ে পড় নাহলে তোমার মায়ের কাছে নিয়ে যাব না।
ঈশান ঘুমিয়ে পড়লে তাসিন ওর বাবা মার রুমে যায়।দরজায় গিয়ে নক করে,
—বাবা আসব?
—আয় তাসিন।
তাসিন রুমের ভিতরে ঢুকে।
—-তাসিন ঈশানকে মিথ্যা কথা বললে কেনো?
—-বাবা কি করবো আজ এই কথা না বললে কি হতো তুমি তা জানো?
—জানি তাই বলে এত বড় মিথ্যা কথা?কালকে ওর মাকে না পেলে কি করবে তা জানো?
—বাবা ঈশানীর মত একটা মেয়েকে আমি বাচিয়েছি।
—মানে কি খুলে বলো।
তাসিন সব খুলে বলল।
—সব বুঝলাম কিন্তু মেয়েটা কি ঈশানী হওয়ার অভিনয় করতে পারবে।
—চেষ্টা করতে কি বাবা?আমার ছেলের জন্য সব করবো।
—আল্লাহ সব ঠিক করে দিবে।
তাসিন রুমে এসে ঈশানের পাশে ঘুমিয়ে পড়ে।পরদিন সকালে ঈশান আগে ঘুম থেকে উঠে তাসিনকে ডাকে।
—-বাবা উঠো মাকে আনতে যাব।
—ঈশান ঘুমাতে দাও তো?
—-না মায়ের কাছে যাবো (কান্না শুরু করে।)
—আরে বাবা কান্না করো না চল নিয়ে যাচ্ছি তোমাকে।
ঈশান খুশিমনে ফ্রেশ হতে চলে যায়।তাসিন মুচকি হেসে দেয়।ঈশানকে রেডি করিয়ে তাসিন ওকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
—বাবা মায়ের কিছু হয়েছে কি?এখানে আমাকে নিয়ে আসলে কেনো?
—তোমার মা কাল এক্সিডেন্ট করেছে শোনো মাকে বেশি জ্বালাবে না।
—ঠিক আছে বাবা।




তাসিন ঈশানকে নিয়ে আনিশার কেবিনে যায়।আনিশা শুয়ে শুয়ে ম্যাগাজিন পড়ছিল। ঈশান আনিশাকে দেখে মা বলে জড়িয়ে ধরে।আনিশা হতবাক হয়ে যায় এমন ঘটনা দেখে।এই ছেলে কার? কেনো বা তাকে মা ডাকল?
আনিশা কিছু বলতে গেলে তাসিন ঈশারায় বারন করে।
—মা তোমার এত রাগ আমাদের ছেড়ে এতদিন কোথায় ছিলে?
তাসিন ঈশানকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
—মা অসুস্থ তুমি এক কাজ করো ডক্টর আংকেলের সাথে যাও।
ঈশান বাধ্য ছেলের মত চলে যায়।আনিশা বলল,
—আপনি আমাকে বাচিয়েছেন?
—হ্যা
—আপনাকে ধন্যবাদ। এই ছেলেটা কে?
—আমার ছেলে ঈশান।আমার স্ত্রী ঈশানী ওর বয়স যখন একবছর তখন ওকে ছেড়ে চলে গেছে।আপনার মত দেখতে ঈশানী তাই ও আপনাকে ঈশানী মনে করেছে।
—ওহ।
—কিছু মনে করবেন না আপনার নাম কি?
—আনিশা।
—তো আনিশা আপনার পরিবারের কাউকে ফোন করবো নাম্বার দিন।
আনিশা সব খুলে বলে।তাসিন সব শুনে বলল,
—আপনি আমার স্ত্রী হওয়ার অভিনয় করুন আমার ছেলেটার জন্য প্লিজ।আমি আপনাকে এর জন্য টাকা দিবো।প্লিজ
আনিশা ভেবে দেখলো এখন সে কোথায় যাবে?কোনো পরিচিত বাড়িতে উঠলে বা কতদিন রাখবে?বাড়িতে ফিরতে পারবে না রিয়াদের জন্য।আনিশা বলল,
—কতদিন অভিনয় করতে হবে?
—এক বছর।এর পর আমি ওকে নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাবো।
—ঠিক আছে।
ঈশান আবার কেবিনে আসে।আনিশা ঈশানকে কাছে টেনে নেয়।ঈশান কেদে দেয়।
—তুমি কাঁদছো কেনো?
—মা এতদিন আমাকে সবাই বলত আমি অনাথ ওদের বলব আমার মা বেচে আছে।মা তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে নাতো?
—না যাবো না।
—প্রমিছ।
—প্রমিছ।
ঈশান কান্নামিশ্রিত হাসি দিয়ে আনিশাকে জড়িয়ে ধরে।আনিশা ঈশানের মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া হয়।




আনিশাকে নিয়ে তাসিন বাড়িতে আসে।বাড়ির ভিতরে তাসিনের সাথে তার মত অবিকল দেখতে একটা মেয়ের ছবি দেখতে পায়।তাসিন বলে,ওটা ঈশানী।তাসিনের বাবা মা আনিশাকে দেখে অবাক হয়ে যায়।একদম ঈশানীর মত কেউ বলবে না যে এ ঈশানী নয়।ঈশান আনিশার হাত ছাড়েনি একটু।তাসিন বলল,
—-আমার বাবা মা।
—আসসালামু অলাইকুম আন্টি আংকেল কেমন আছেন?
—ভালো মা তুমি কেমন আছো?
—ভালো আন্টি।
ঈশান বলল,
—আমার মা অসুস্থ পরে কথা বলবে।মা রুমে চলো বিশ্রাম নিবে।
সবাই ঈশানের কথা শুনে হেসে দেয়।ঈশান আনিশার হাত ধরে রুমে টেনে নিয়ে যায়।আনিশা দেখে রুমটা এত বড় যে তাদের পুরো বাড়ির সমান হবে।সুন্দর করে গোছানো সবকিছু।ঈশান আনিশাকে বেডে বসিয়ে দিয়ে বলে,
—মা তুমি বিশ্রাম নাও আমি তোমার পাশে শুয়ে আছি।
—আমার বুকে আসে ঈশান।
ঈশান খুশি হয়ে আনিশাকে জড়িয়ে ধরে।দুজনে অল্প সময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে যায়।তাসিন রুমে এসে দুজনকে দেখে হেসে দেয়।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here