শেষ বিকেলের আদর❤️পর্ব : এক্সট্রা পর্ব

0
3952

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
এক্সট্রা পর্ব

🌼
-ভাইয়া প্লিজ যেও না।ভাবি বুঝাও না ভাইয়াকে।ভাইয়া প্লিজ যেও না।প্লিজ ভাইয়া।

অধির শুনলো না।এক হাতে ব্যাগ আর অন্য হাতে রোশনির হাত শক্ত করে ধরে আছে সে। চোখ মুখ বেশ গম্ভির।আদির কান্নায় রোশনির চোখও ভিজে এসেছে।কিন্তু এই মুহূর্তে অধিরকে কিছু বলার সাহস তার নেই।এতো কিছুর পরেও এই বাড়িতে থাকা মানে নিজের আত্মসম্মান বিলিয়ে দেওয়া।দেমির,দিয়া দুজনেই অধিরকে আটকানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু অধির শুনেনি।ঝুমা চৌধুরি এক কোনায় দাড়িয়ে মুখে কাপড় চেপে কাঁদছেন।রুমা চৌধুরি তাকে সামলানোর চেষ্টা করছে।অধির পা বাড়াতে নিলেই অধিরের এক হাত শক্ত করে চেপে ধরে আদি।অধির এবং রোশনির দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,

-প্লিজ ভাইয়া যেও না।সাহিলও নেই।এখন তুমিও চলে যাচ্ছো।আমি একা কিভাবে থাকবো?প্লিজ যেও না। আচ্ছা ঠিক আছে…।তোমরা যদি চলেই যাবে তাহলে আমিও যাবো।তোমাদের ছাড়া আমি এখানে থাকতে পারবো না।আমিও যাবো তোমাদের সাথে। চলো…..

-পাগলামো করিস না আদি।তুই কোথাও যাবি না।এখানেই থাকবি।সবার খেয়াল রাখতে হবে তোকে।আর একটা কথা…দাদি এবং সাহিলকে কিছু জানাস না।তোর যখন মন চাইবে আমাদের সাথে দেখা করে যাস।এখন যেতে দে…

আদির হাত ছাড়িয়ে সামনের দিকে পা বাড়াল অধির।পেছন থেকে আদি চেঁচিয়ে উঠল

-আরে কেউ আটকাও ওদের….বড় আম্মু,,দিয়াপু তোমরা তো ওদের আটকাও।

কারো সাহস হল না অধিরকে আটকানোর।অধির দরজা অবধি যেতেই পিয়াকে দেখে থমকে গেল অধির রোশনি।।হাতে ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে পিয়া।অধির,রোশনি যতোটা বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে ঠিক ততোটা বিষ্ময় পিয়ার চোখে মুখেও।রোশনির মুখ থেকে আপনা আপনিই বেরিয়ে এল,

-পিয়া তুই…!!!তুই এখানে কেন? আজ না তোর বিয়ে? বিয়ে ছেড়ে এখানে কেন এসেছিস?হাতে ব্যাগ কেন…?

পিয়াকে দেখে আদি নিজেও বেশ অবাক হল।তাহলে কি পিয়ার বিয়েটা ভেঙে গেছে? ভেঙে গেলে ভালোই হয়েছে। স্বামি থাকতে দ্বিতীয় বার বিয়ে করা? এবার মজা বুঝো।কিন্তু পিয়া এখানে কেন? কি করতে চাইছে মেয়েটা?এমন নানান প্রশ্ন মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে আদির।পিয়া ব্যাগ রেখে এগিয়ে এল।রোশনির সামনাসামনি দাড়িয়ে বলে উঠল,

-আমার কথা ছাড়।তোরা কোথায় যাচ্ছিস? এই রোশু…তোর চোখে পানি কেন? কি হয়েছে? ভাইয়া কি হয়েছে ওর? কাঁদছে কেন ও?আর আপনারা যাচ্ছেনই বা কোথায়?

অধির প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,

-আমরা কিছু দিনের জন্য অন্য বাড়িতে যাচ্ছি।কিন্তু তুমি এখানে? তোমার তো আজ বিয়ে…

আদি এবার ভয় পাচ্ছে।পিয়া এবার কি বলবে কে জানে?যদি সত্যিটা বলে দেয়? তবে তো অধির তাকে আস্ত রাখবে না।পিয়া আদির কাচুমাচু মুখের দিকে এক বার তাকিয়ে নজর সরালো।শান্ত গলায় বলল,

-বিয়ে তো হয়ে গেছে।তবে সেটা আদির সাথে।সেজন্যেই তো ব্যাগ ট্যাগ নিয়ে শ্বশুর বাড়ি চলে এলাম।

পিয়ার কথাটা বলতে দেরি কিন্তু সবার চমকাতে দেরি হল না।আদির অবস্থা করুন।পিয়া যে এভাবে বিয়ের বিষয়টা সামনে আনবে সেটা কোনো দিন চিন্তাও করে নি সে।রোশনি বিরক্ত চোখে তাকাল।বলল,

-এটা কি ধরনের ফাজলামি পিয়ু।আজ তোর বিয়ে আর তুই এখানে এসে মজা করছিস?

-তোর মনে হচ্ছে আমি মজা করছি?আমি সিরিয়াস ইয়ার।বিশ্বাস না হলে আদিকে জিজ্ঞাসা করে দেখ।ওর কথা নিশ্চয় বিশ্বাস করবি?তাছাড়া আমার কাছে প্রমানও আছে।

পিয়া এবার আদির দিকে তাকালো।গলার স্বর উচু করে বলল,

-কি মিষ্টার আদিল চৌধুরি…? সবাইকে বল আমাদের বিয়ের কথা।আমার কথা তো কেউ বিশ্বাস করছে না।তুমি বললে যদি বিশ্বাস করে…..।

আদি চোখ রাঙিয়ে তাকালো পিয়ার দিকে।তবে পিয়ার মধ্যে তেমন কোনো ভ্রুক্ষেপ দেখা গেল না।আদির মন বলছে পিয়া পাগল হয়ে গেছে।আশ্চর্য..!! শেষ পর্যন্ত একটা পাগলের সাথে সংসার করতে হবে তাকে?আদি যখন পিয়ার পাগল হওয়া নিয়ে চিন্তা করছে তখনই গম্ভির গলায় ডেকে উঠল অধির,

-আদি…?

আদি চমকে উঠল।নির্ঘাত ভাইয়া তাকে চড় থাপ্পড় দিয়ে বাড়ি ছাড়া করবে ।রাগের মাথায় পিয়াকে উঠিয়ে আনাটা একদম উচিত হয় নি তার।এই অতি সাধারন কথাটা যদি কাল বুঝতে পারতো তাহলে আজকে তাকে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতো না।কে জানে তার কপালে এখন কি আছে।অাদির চিন্তার মাঝেই দ্বিতীয় বারের মত ডেকে উঠল অধির।আদি ভয়ে ভয়ে অধিরের সামনে এসে দাড়ালো।অধিরের থমথমে মুখের দিকে তাকাতেই ভয়ে কলিজা কেপে উঠল।অধির শক্ত গলায় প্রশ্ন ছুঁড়লো,

-পিয়ার কথাটা কি ঠিক?

আদি জবাব দিল না।অধির আগের থেকেও শক্ত গলায় প্রশ্ন করলো,

-আমি জানতে চেয়েছি পিয়া যা বলছে সত্যি কি না?

অধিরকে রেগে যেতে দেখে ভয়ে শুকনো ঢোক গিলল আদি।গলাটা শুকিয়ে এসেছে প্রায়।আজ তার কপালে নিশ্চিত মৃত্যু লেখা আছে।আদি আরো একবার শুকনো ঢোক গিলে নিচু স্বরে বলল,

-আসলে ভাইয়া….

-আমি আসলে নকলে শুনতে চাই নি আদি।হ্যা অথবা না তে উত্তর দেবে। পিয়া যা বলছে সেটা কি ঠিক?

আদি মাথা নিচু করে উত্তর দিল,

-হ্যা….

-কবে করেছো?

-রুপপুরে গিয়ে।

অধির সন্দিহান চোখে তাকালো,

-রুপপুরে মানে? ওখানে কিভাবে?

আদি সংক্ষেপে সবটা বলতেই অধিরের কপাল কুচকে এল।পিয়ার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল,

-ভেতরে যাও পিয়া।আজ থেকে চৌধুরি বাড়ির ছোট বউ তুমি।এই বাড়িতে সেই অধিকারেই থাকবে তুমি।

অধির এবার আদিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

-আদি পিয়াকে নিয়ে ভেতরে যাও।বিয়েটা যেই পরিস্থিতিতেই হোক না কেন বিয়েটা মিথ্যে নয়।আজ এবং এখন থেকে পিয়ার সমস্ত দায়িত্ব তোমার।আমি যেন তোমার নামে কোনো রকম কমপ্লেইন না শুনি।

আদি আর কথা বলার সাহস পেল না।অধির তাকে তখনই তুমি বলে সম্মোধন করে যখন সে তার উপর রেগে থাকে।আদি পিয়ার দিকে তাকাতেই দেখল পিয়ার ঠোটে রহস্যময় হাসি।

——-

বেডরুমের ঠিক মাঝ বরাবর মুখোমুখি দাড়িয়ে আছে রিয়া এবং জয়।রিয়ার চোখে মুখে লজ্জার রেশ।তবে জয়ের মনে অজানা আশংকা। রিয়ার এই হঠাৎ লজ্জা লজ্জা ব্যাপারটা খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছে না।জয় যেটা আন্দাজ করছে সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে সেই পরিস্থিতি কিভাবে হ্যান্ডেল করবে জানা নেই জয়ের।জয় মনে মনে একটাই প্রার্থনা করছে তার চিন্তাটা যেন ভুল প্রমানিত হয়।জয়ের ভাবনার মাঝেই মুখ খুলল রিয়া।জয়ের ভাবনাটাকে সত্যি প্রমান করে বলল,

-আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই।

জয় এই ভয়টাই পাচ্ছিলো।রিয়া কি বলতে চাই সেটা সে মোটামুটি আন্দাজ করতে পারছে।রিয়ার চোখ দেখেই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে সে কি বলতে চায়।

-দেখো রিয়া,,,আমার কাছে এখন একদম সময় নেই।অনেক কাজ জমা পড়ে আছে।আজকের মধ্যেই সেগুলো কমপ্লিট করতে হবে। তোমার কথা না হয় অন্য কোনো দিন শুনবো।এখন তুমি আসতে পারো।

রিয়া নাক ফুলিয়ে তাকাল।জেদ দেখিয়ে বলল,

-আমি জানি আপনার এখন কোনো কাজ নেই।তাই অযথা কাজের অজুহাত না দেখিয়ে চুপ করে দাড়িয়ে থাকুন।আমার কথাটা আপনাকে শুনতেই হবে।কথাটা না বলে আমি এখান থেকে নড়ছি না।

-রিয়া অযথা জিদ করো না।আমার সত্যিই অনেক কাজ আছে।প্লিজ তুমি যাও এখন।

-আমি বললাম না….আমি আমার কথাটা না বলে যাবো না।

জয় ভুস করে নিশ্বাস ছাড়ল।মেয়েটা ভিষনই জেদি।যেটা বলতে চাই সেটা না বলে সে কিছুতেই যাবে না এটা জয় জানে।কিন্তু মেয়েটা তার থেকে যা চাই সেটা তো দিতে পারবে না জয়।কি করে বুঝাবে সে? জয় টেবিলের উপর থেকে ফাইল তুলে নিতে নিতে বলল,

-আমি বোধহয় জানি তুমি কি বলতে চাও।দেখো রিয়া,,, তোমার বয়স কম।এই বয়সে কাউকে ভাল লাগা খুব সাধারন একটা বিষয়।কাউকে ভাল লাগা দোষের কিছু নয়।তেমনই কাউকে ভালবাসাটাও দোষের নয়।কিন্তু তোমার বুঝতে হবে,, কোনটা ভাললাগা আর কোনটা ভালবাসা।আমার প্রতি তোমার অনুভূতিটা ভাললাগা ব্যতিত আর কিছু নয়।তাই এসব আজাইরা চিন্তা মাথা থেকে বের করে দিয়ে পড়াশোনাতে মনোযোগ দাও।

রিয়া বেশ অবাক হল।জয় কিভাবে বুঝে গেল সে কি বলতে চাই?জয় কি তাহলে তার মন পড়তে পারে? জয়ের প্রতি ভাল লাগাটা আরো এক ধাপ বাড়ল রিয়ার।

-দেখুন আমি এতো কিছু জানি না।আমি শুধু এটুকু জানি আপনার প্রতি আমার যে ফিলিংসটা আছে সেটা ভাল লাগা বা এট্রাকশন নয়।তার থেকেও বেশি কিছু।আমি এতো ঘুরিয়ে পেচিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না।সোজা কথা সোজা ভাবেই বলছি….আই লাভ ইউ…..।

জয় জানতো রিয়া এমন কিছুই বলবে।সেজন্যেই বোধ হয় সে চমকালো না।আগের মতোই শান্ত গলায় বলল,

-এটা সম্ভব নয় রিয়া।আমি তোমাকে আগেই বলেছি।আ..

জয়ের কথার মাঝেই প্রশ্ন করে বসল রিয়া,

-কেন সম্ভব নয় শুনি?কেন ভালবাসতে পারবেন না আমাকে? একটা মেয়ে নিজে থেকে আপনাকে আই লাভ ইউ বলছে আর আপনি ভং ধরছেন?

জয় এবার সোজা হয়ে দাড়ালো।রিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে উঠল,

-আমি ভং ধরছি না রিয়া।একটা মেয়ে যখন কোনো ছেলেকে আই লাভ ইউ বলে তখন সেই ছেলেটার জন্যে সব থেকে খুশির মুহূর্ত বোধ হয় সেটাই হয়।বাট আই এম সরি রিয়া….আমার মনে তোমার জন্যে কোনো ফিলিংস নেই।আই ডোন্ট মিন টু হার্ট ইউ।বাট আই এম বিং ওনেস্ট। একজন অারেক জনের সাথে কানেক্ট হওয়ার জন্যে এক সাথে ট্রাভেল করা জরুরি নয়।সেটা তো ব্যাগ প্যাক করার আগেই কানেক্ট হওয়া যায়।আমি তোমাকে ছোট করার জন্যে বা নিজেকে গ্রেট প্রমান করার জন্যে বলছি না।কিন্তু আমি তোমার এমন বিষয়ে টাইম কেন ওয়েস্ট করবো যেটা কখনো হবেই না?জেনারেলি এটা মেয়েদের ডাইলোগ।কিন্তু তোমার জন্যে আজ আমাকে বলতে হচ্ছে।লেটস বি গুড ফ্রেন্ডস…..

-ভালবাসা তো এক্সসেপ্ট করছেনই না উল্টে আবার ফ্রেন্ড হতে বলছেন? তাও শুধু ফ্রেন্ড,,,,, বেস্ট ফ্রেন্ড নয়।

জয় হেসে ফেলল।মেয়েটা গাল ফুলালে বেশ কিউট লাগে।ইচ্ছে করে আঁলতো করে টেনে দিতে।জয়ের এখনও ইচ্ছে করছে গালটা টেনে দিতে।কিন্তু বরাবরের মতোই সেই ইচ্ছেকে পাশে সরিয়ে বলে উঠল,

-ফ্রেন্ড হতে পারো।কিন্তু বেস্ট ফ্রেন্ড নয়।বেস্ট ফ্রেন্ড একজনই হয়।আর আমার যেহেতু আগে থেকেই একজন বেস্ট ফ্রেন্ড আছে সেহেতু তোমাকে বেস্ট ফ্রেন্ড বানানো যাচ্ছে না।তবে চাইলে ফ্রেন্ড হতে পারো।আমার আপত্তি নেই।

-ফ্রেন্ড আর বেস্ট ফ্রেন্ডের মধ্যে পার্থক্য কি?

জয় ছোট্ট শ্বাস টেনে বলতে শুরু করলো,

-ফ্রেন্ড ওরা যারা আমাদের বলা প্রতিটা গল্পকাহিনি শোনে।আর বেস্ট ফ্রেন্ড সেই কাহিনির অংশ হয়।মনে করো আমি হসপিটালে এডমিট আছি।ফ্রেন্ড এসে জিজ্ঞাসা করবে,, এখন তোর শরির কেমন।আর বেস্ট ফ্রেন্ড কি জিজ্ঞাসা করবে জানো…….?নার্স কেমন….?।

কথাটা বলেই হেসে ফেলল জয়।তাল মিলিয়ে রিয়াও হাসল।কিছুক্ষন চুপ থেকে আবারো প্রশ্ন করল রিয়া,

-বন্ধুত্ব আর ভালোবাসার মধ্যে পার্থক্য কি?

-বন্ধুত্ব আর ভালবাসার মধ্যে খুব সূক্ষ্ম এক পার্থক্য থাকে।যখন তুমি বিপদে পড়বে তোমার পাশে তখন কাউকে না পেলেও বন্ধুকে ঠিক পাশে পাবে।বন্ধু সব বিপদে তোমাকে সাথ দিবে।আর যদি ভালবাসার কথা বলো তাহলে বলবো,,,,,ভালবাসা একটা অনুভূতির নাম।সেই অনুভূতিটা কারো জন্যে মিষ্টি আবার কারো জন্যে তিক্ত।যাকে ছাড়া তুমি বাঁচতে পারবে না,নির্দিষ্ট কারো জন্যে কোথাও একটা শূন্যতা অনুভব করবে সেটাই ভালবাসা।একেক জনের কাছে ভালবাসার রঙ একেক রকম।ভিন্ন তার ধরন।কিন্তু বন্ধুত্বের রং অভিন্ন।বন্ধুত্বের সংজ্ঞা সবার কাছেই এক।ভালবাসা আর বন্ধুত্বের মধ্যে অদ্ভুদ একটা বিষয় কি জানো? বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা তৈরি হতে পারে কিন্তু ভালোবাসায় কখনোই বন্ধুত্ব তৈরি হয় না।

-ঠিক বুঝলাম না।

-আচ্ছা বুঝিয়ে বলছি।মনে করো তোমার সাথে কোনো এক ছেলের খুব ভালো বন্ধুত্ব। এক সময় দেখা গেল তোমাদের মাঝে ভাল লাগা তৈরি হবে।ভাল লাগা থেকে ভালবাসা।এবার ধরো,,, তুমি কাউকে ভিষন ভালবাসো।কিন্তু এতো ভালবাসার পরেও তোমাদের মাঝে কোনো বন্ধুত্ব নেই।এমনটা স্বাভাবিক। প্রথমে ভালবেসে ফেললে পরে বন্ধুত্বটা আর তৈরি হয় না।এবার বুঝেছো?

রিয়া ঠোট গোল করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই জয় মুচকি হেসে বলল,

-বুঝো নি তাইতো?

রিয়া মাথা দুলালো।যার অর্থ সে বুঝেনি।জয় ফাইলগুলো গুছাতে গুছাতে বলল,

-আচ্ছা বাদ দাও।এতো বুঝে কাজ নেই।

রিয়া এবার বিছানায় গিয়ে বসল।দেয়ালে জয়ের টানানো বড় সাইজের ছবিটা বেশ সময় নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল।না সে আরো বেশি করে প্রেমে পড়ে যাচ্ছে।জয় নামক পুরুষটাতে ক্রমেই সে হারিয়ে যাচ্ছে।রিয়া ছবির দিকে নজর রেখেই আবারো প্রশ্ন ছুড়ে বসল,

-একটা কথা বলুন,,,,,মনে করুন একটা মেয়ে আপনাকে ভিষন ভালবাসে।আপনি তার থেকে কি এক্সপেক্ট করবেন?

জয় নিজের কাজে ব্যস্ত। রিয়ার দিকে না তাকিয়েই সে জবাব দিল,

-কান্না….

রিয়া এবার ছবি থেকে চোখ সরাল।জয়ের কথাটা ঠিক বুঝে উঠতে পারে নি সে।জয়ের উদ্দেশ্যে আবারো বলে উঠল,

-কান্না….!!

জয় ফিরে তাকালো।টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে হাত ভাজ করে দাড়াল।ঠোটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে বলল,

-হ্যা… কান্না।আমরা অন্যের জন্যে হাসি, রাগ, অভিমান এসবের অভিনয় খুব সহজেই করতে পারি।কিন্তু কান্না…!!!কান্নার অভিনয় আমরা করতে পারি না। কান্নাটা ভালবাসা থেকে আসে অভিনয় থেকে নয়।কেউ যদি কারো জন্যে কান্না করে তবে বুঝে নিতে হবে সে তাকে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভালবাসে।তখন তার উচিত সেই মানুষটাকে আপন করে নেওয়া।

জয়ের কথার মাঝেই আবারো প্রশ্ন ছুড়ল রিয়া,

-তাহলে আমিও যদি আপনার জন্যে কাঁদি তবে আমাকেও কি আপনি আপন করে নিবেন?

জয় এবার ধমকে উঠল,

-এই মেয়ে…প্রবলেম কি তোমার? এতোক্ষন ধরে তোমায় বুঝানোর চেষ্টা করছি আর তুমি সেই এক জায়গাতেই বসে আছো?তোমায় বলেছি না এটা সম্ভব নয়।আর তোমার বয়স কত হ্যা? আঠারোও তো হয় নি বোধ হয়।আসছে আবার প্রেম করতে।আমার বয়স কত জানো? আঠাশ বছর।তোমার থেকে দশ বছরের বড়।দশ বছরের মানে বুঝো? এখনো দুধের দাত পড়ে নাই সে আসছে ভালবাসার কথা বলতে।মাথা থেকে এসব আজাইরা চিন্তা ঝেড়ে পড়াশোনায় মন দাও।সামনে তোমার ব্রাইট ফিউচার।আমার থেকেও অনেক ভাল ছেলে তুমি পাবে।

জয়ের ধমকানিতে চোখ টলমল করে উঠল রিয়ার।বিছানা থেকে নেমে দাড়িয়ে নিচু গলায় বলল,

-আমার ভাল কাউকে লাগবে না।আপনাকেই চাই আমার।

জয় আবারো ধমকে উঠল।রাগ লাগছে ভিষন। মেয়েটা কেন বুঝতে চাইছে না এটা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়।

-আবারো কথা বলে!!এক ধমকেই কেঁদে কেটে ভাসিয়ে ফেলছো আবার আসছে প্রেম করতে ?এসব চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে আগের মত চলো।এসব করে অযথাই নিজে কষ্ট পাবে।আমার কথাটা মানো আর এসব চিন্তা মাথা থেকে বের করে দাও।

-আপনাকে এতো কিছু ভাবতে হবে না।আমার শুধু আপনাকেই চাই।ভাল খারাপ কাউকে চাই না আর।শুধু আপনাকে চাই।

এতোটুকু বলতেই কেঁদে ফেলল রিয়া।বাম হাতে চোখের পানিটুকু মুছে নিয়ে ছুটে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।জয় দির্ঘশ্বাস ফেলে বিছানায় গা এলালো।মুহূর্তেই চোখের কোনা ভিজে এল।ভালবাসায় ভিষন কষ্ট।এটা সহ্য করার ক্ষমতা সবার থাকে না।সে চাইনা এই কষ্টে অন্য কেউ কষ্ট পাক।কিন্তু এই মেয়েকে কিভাবে বুঝাবে সে।এই মনটা যে অন্য কাউকে দেওয়া আর সম্ভব নয়।তার মনটা যে অন্য কেউ ভেঙে দিয়েছে।এখন চাইলেও সেই ভাঙা মন কাউকে দিতে পারবে না সে।জিবনটা এতো বিষাদময় কেন? কেন সব কিছু গল্পকথার মত সুন্দর আর হ্যাপি হয় না? কেন…..?

——–

আকাশে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের কুণ্ডলী। মিনিট দশেক আগে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে।দূরের কোনো এক গাছের ফাক গেলে কিছু নিশাচর পাখির ডাক ভেসে আসছে মাঝে মধ্যেই।পাখির সেই ভয়ানক ডাক বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনছে অধির।বাতাসে ঠান্ডার আমেজ।ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগতেই লোমকূপ দাড়িয়ে যাচ্ছে।তবে সেদিকে খুব একটা ভ্রূক্ষেপ নেই অধিরের।মনটা তার খুব একটা ভাল না। নানান চিন্তায় মাথা ধরে আছে।অধির চোখ জোড়া বন্ধ রেখেই জোড়ালো শ্বাস নিল।ঘুমহীন চোখ দুটো ভিষন জ্বালা করছে।একটু কাঁদলে বোধ হয় এই জ্বালা থেকে মুক্তি মিলতো।

-আপনি এখানে কি করছেন? ঘুমান নি এখানো?

অধির ফিরে তাকালো।বারান্দার দরজা ঘেষে ঘুমঘুম চোখে দাড়িয়ে আছে রোশনি।পরনে তার কুচকানো সুতি শাড়ি।এলোমেলো চুল আর ফোলা ফোলা চোখ।সব মিলিয়ে বেশ অগোছালো ।তবুও যেন অদ্ভুদ এক সৌন্দর্য ঘিরে রয়েছে সারা শরিরময়।অধির উপলব্ধি করলো,,,হঠাৎ করেই তার চিন্তাটা হারিয়ে গেছে কোথাও।এই মেয়েটার মুখ দেখলে সমস্ত চিন্তা যেন মুহূ্র্তেই কোথাও উবে যায়।অধির ইশারাই কাছে ডাকল।রোশনি ছোট্ট করে হাই তুলে এগিয়ে গেল।অধিরের কাছাকাছি গিয়ে দাড়াতেই রোশনির কোমরে হাত রেখে নিজের দিকে টেনে নিল অধির।রোশনির উড়তে থাকা ছোট ছোট অবাধ্য চুলগুলোকে কানের পাশে গুজে দিতে দিতে বলল,

-ঘুম আসছিল না সুইটহার্ট। কিন্তু আমার বউটা তো ঘুমোচ্ছিল। তার হঠাৎ ঘুম ভাঙল কি করে?ঘুম কুমারীর তো এতো সহজে ঘুম ভাঙে না।তাহলে…?

আপনার বুকে মাথা না রাখলে আমার এখন আর ঘুম আসে না অধির….কথাটা মনে মনে আওড়ালেও মুখে বলল না রোশনি।প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,

-আপনার কি মন খারাপ?

-না তো।কেন?

-আমি জানি আপনার মন খারাপ।মায়ের উপর রাগ করে চলে আসাটা উচিত হয় নি।যতোই হোক উনি তো আপনার মা তাইনা? মায়েরা তো কখনো সন্তানের খারাপ চাইবে না।উনি হয়তো ছেলের বউ হিসেবে আরো বেটার কাউকে এক্সপেক্ট করেছিলেন।হয়ত দিদামের মত কাউকে বা দিদামকেই।

-আমার বেটার কাউকে তো লাগবে না সুইটহার্ট। আমার এই তোমাকেই লাগবে।তুমি যেমন তেমন ভাবেই তোমাকে চাই।আই এম ব্যাডলি অ্যাডিক্টেড টু ইউ।তোমার প্রয়োজনটা তো অন্য কাউকে দিয়ে পূরন করা সম্ভব নয়।আর যদি মায়ের কথা বলো,,,তবে মা আজ যেটা করেছে সেটা ক্ষমার অযোগ্য।

-মা তো মাই হয় অধির।আপনার ক্ষমা করে দেওয়া উচিত।একটা ভুল তো আল্লাহ্ও মাফ করে দেন।

অধির ছোট্ট শ্বাস টেনে বলল,

-মামলা যখন আল্লাহ্ এবং তাঁর বান্দার মাঝে হয় তখন আল্লাহ্ অবশ্যই মাফ করে দেন।কিন্তু দুটো মানুষের মাঝের মামলা মাফ করার অধিকার উনি কেবল মানুষকেই দিয়েছেন।

এই কথার পরে বলার মত আর কোনো কথা খুজে পেল না রোশনি।চুপটি করে দাড়িয়ে রইল।রোশনিকে কাঁপতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকাল অধির,

-শীত করছে?

রোশনি মাথা দুলিয়ে জবাব দিতেই অধির বলল,

-তাহলে রুমে চলো।

-আমার রুমে থাকতে ইচ্ছে করছে না।

অধিরের কুচকানো ভ্রু জোড়া আরো কিছুটা কুচকে গেল,

-রুমে থাকতে ইচ্ছে করছে না? তাহলে কোথায় থাকতে ইচ্ছে করছে?

-এখানে।

-এখানে? আচ্ছা ওয়েট,,,আমি আসছি।

অধির রুম থেকে পাতলা ব্লাঙ্কেট হাতে আবারো ফিরে এলো।বারান্দায় পেতে রাখা সোফায় আধশোয়া হয়ে রোশনিকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল।প্রায় আধা ঘন্টা কেটে গেলেও কারো চোখেই ঘুম নামক পাখিটা ধরা দিল না।রোশনি অধিরের বুকে কয়েকবার নাক এবং মুখ ঘষতেই প্রশ্ন ছুড়ল অধির,

-এই মেয়ে…!না ঘুমিয়ে কি হচ্ছে শুনি?

রোশনি বুক থেকে মাথা তুলে তাকালো।ড্রীম লাইটের হালকা আলোই অনেকটাই স্পষ্ট অধিরের পাতলা ঠোট জোড়া।রোশনি নজর সেদিকেই।তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকেই অদ্ভুুদ কাজ করে বসল ।অধিরের বুকের উপর হাত রেখে অধিরের ঠোটে ঠোট চেপে ধরল।হতভম্ব অধির বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইল শুধু।সব কিছু কেমন স্বপ্ন বলে বোধ হচ্ছে তার।অধিরের এই প্রথম হাত পা অসাঢ় হয়ে আসছে।রোশনি আগের মতোই তার ঠোট দখল করে আছে।মেয়েটা ঠিক আছে তো? নাকি এটা তাকে খুন করার নতুন কোনো টেকনিক? তাহলে তো সে প্রতি মূহূর্তে খুন হতে চাই।রোশনি বেশ অনেকক্ষণ সময় নিয়ে আদর দিয়ে সরে এল।নিজের কাজে হঠাৎই ভিষন লজ্জায় কুঁকড়ে গেল রোশনি।লজ্জা ঢাকতে অধিরের বুকেই মুখ লুকালো।হতভম্ব অধির হঠাৎই কোনো কথা খুজে পেল না।প্রিয় মানুষটার একটু ছুঁয়ে দেওয়াতে যে সুখ সেটা বোধ হয় আর কোথাও নেই।অধির বেশ কিছুক্ষন নিরব থেকে ফিসফিস করে বলে উঠল,

-দিনশেষে এমন মুগ্ধতায় বারবার জড়াতে চাই সুইটহার্ট।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here