শেষ বিকেলের আদর❤️পর্ব ৫৮

0
4941

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পর্ব : ৫৮

🌼
ঘড়ির কাটা বলছে এখন দশটা বেজে দুই মিনিট।সফট মিউজিকের তালে এখনো কেউ কেউ পা মেলাচ্ছে।আদি আর পিয়া তখন কোনায় দাড়িয়ে টুকটাক কথা বলছিল।হুট করেই কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল আদিকে।আদি নিজেও কয়েক সেকেন্ড থম মেরে দাড়িয়ে থেকে নিজেকে সামলালো।মেয়েটা এটুকুতেই থামলো না।পিয়াকে আরেক দফা অবাক করে দিয়ে হুট করেই চুমু দিয়ে বসল আদির গালে।পিয়ার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।এই মেয়ের সাহস কত…? বউ এর সামনে তার জামাইরে চুমাইতেছে!!পিয়া চোয়াল শক্ত করে আদির দিকে তাকাতেই দেখল আদির ঠোটে মুচকি হাসি।আদি পিয়াকে সম্পূর্ন উপেক্ষা করে হাসি হাসি মুখ করে মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,

-আরে পিয়া তুমি…!!!কত দিন পরে দেখা!!!দেশে কবে আসছো..?

মেয়েটাও হাসিতে গদগদ হয়ে বলল,

-এই তো দুদিন আগেই আসছি।তোমার তো খোঁজই নাই।আগের নাম্বারটা কি হইছে? দেশে ফিরে সবার প্রথমে আমি তোমার নাম্বারে ফোন দিসি।নাম্বার সুইচট্ অফ কেন?

-আগের ফোনটাতো হারিয়ে গেছে।নাম্বারটাও উঠানো হয় নি আর।এনিওয়েজ,,,, বিডিতে যখন এসেই গেছো তখন রেগুলার কথা হবে আই হোপ।

-ইয়া অফকোর্স। আচ্ছা আমি একটু বাকিদের সাথে দেখা করে আসি।

-শিওর।

পিয়া নামক মেয়েটা চলে যেতেই ফুসে উঠল পিয়া।চোয়াল শক্ত করে বলল,

-কে ছিল মেয়েটা?

-সি ইজ পিয়া।তোমার নামের ডুপ্লিকেট।এক সাথে দুটো পিয়া!!!সুন্দর না বিষয়টা?

কথাটা বলেই হাসল আদি।তবে সেই হাসি বেশিক্ষন টিকল না।পিয়া শক্ত গলায় প্রশ্ন করল,

-এটা মোটেই সুন্দর কিছু না।ও তোমাকে কিস কেন করল?

-ও আমার এক্স।কিস করতেই পারে।রিলেশনে থাকাকালীন কত করেছে।এখন করলে কি সমস্যা..?

পিয়া আতকে উঠে বলল,

-কত করেছে মানে? ছিঃ আদি।তোমার তো দেখি চরিত্রগত সমস্যা আছে।তুমি প্রেম করতা ঠিক আছে তাই বলে চুম্মাচাটি করবা?

-রিলেশনে থাকলে এমন অনেক কিছুই হয় পিয়া।ইটস নট আ বিগ ডিল।আর তুমি এত ওভার রিয়্যাক্ট করতেছো কেন? আর ইউ জেলাস?

-অবশ্যই আমি জেলাস।আমার সামনে আমার জামাইকে চুমু দিবে,,জড়িয়ে ধরবে আমি জেলাস হবো না?আমার জামাইকে আমি এখনো কিস করলাম না আর অন্য মেয়ে এসে কিস করবে সেটা আমি মেনে নিবো?

পিয়ার কথায় মুচকি হাসল আদি।পিয়া চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই পিয়ার শাড়ির আচল টেনে চুমু দেওয়া গাল মুছে নিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল।পিয়া বিড়বিড় করতে করতে পা বাড়ালো আদির পেছনে।এই ছেলেকে বিশ্বাস নেই।কোন দিন থেকে আবার কোন এক্স চলে আসে ঠিক নেই।এই ছেলেকেই কেন তার জামাই হতে হল?

___

অধির যখন রুমে এল তখন অচেতন অবস্থায় মেঝেতে পড়ে ছিল রোশনি।এক মুহূর্তের জন্য পুরো পৃথিবীটায় যেন থমকে গিয়েছিল অধিরের।দৌড়ে গিয়ে রোশনির পাশে হাটু ভেঙে বসে রোশনিকে তুলে বুকে জড়িয়ে নিয়েছিল। একের পর এক ডাকেও যখন রোশনির সাড়া শব্দ পাওয়া গেল না ভয়ে হাত পা জমে গেল অধিরের।অধিরের ডাকাডাকিতে তখন সাহিল,নাতাশা,জয়,রিয়া, পিয়া এসে হাজির হয়েছে। রোশনিকে অজ্ঞান দেখে মুহূর্তেই চোখ ছলছল করে উঠল জয়ের।চেয়েও কেন ভুলতে পারে না সে এই মেয়েটাকে? রিয়া জয়ের দিকেই তাকিয়ে ছিল।সে জানে আজও রোশনির প্রতি জয়ের মনে এক ফোটা ভালবাসাও কমে নি।রোশনির মত ভাগ্য হয়ত সবার থাকে না।দুটো মানুষের স্বার্থহীন ভালবাসা পাওয়াটা সহজ কথা নয়।রিয়া ছোট্ট শ্বাস টেনে সবার অগোচরে চোখ মুছলো।রোশনিকে উঠিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ফোন করা হল ডক্টরকে।ডক্টর এসে রোশনিকে দেখে নিয়ে কিছু ঔষুধের নাম প্রেসক্রাইব করে দিয়ে একা অধিরের সাথে কথা বললেন।ডক্টরের ভাস্যমতে খাওয়া দাওয়া ঠিক মত না করার কারনে শরির অনেক উইক হয়ে পড়েছে রোশনির।তার উপর কোনো বিষয়ে হয়ত অনেক বেশি চিন্তিত রোশনি। মানসিক ট্রেস সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়েছে।ডক্টর চলে যেতেই একে একে বেরিয়ে গেল বাকি সবাই।রাত বেশি হওয়ায় আজকের রাতটা এখানেই কাটানোর প্ল্যান হল।যে যার বরাদ্দকৃত রুমে চলে যেতেই রোশনিকে বুকে জড়িয়ে বালিশে হেলান দিয়ে বসল অধির।অবাধ্য চুল গুলোকে কানের পাশে গুজে দিয়ে ঠোট ছোঁয়ালো কপালে।পরপর দুটো চুমু দিতেই চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পড়ল একফোটা গরম জল।ধরে আসা গলায় বিড়বিড় করে বলল,

-আই এম সরি সুইটহার্ট। আই এম রেইলি ভেরি সরি।আমার জন্যেই তোমাকে এতো কষ্ট পেতে হয়েছে।আমাকে মাফ করে দাও সুইটহার্ট। শেষ বারের মত মাফ করে দাও।আই লাভ ইউ সুইটহার্ট। আই রেইলি ডু।

অধিরের কথার মাঝেই ফোন বাজল।অধির বাম হাতে চোখ মুছে ফোন তুলে নিতেই দেখল দিদাম ফোন করেছে।দিদাম কেন এতো রাতে তাকে ফোন করবে? তার থেকেও বড় প্রশ্ন দিদাম তো এখন জেলে আছে।তাহলে ফোন কিভাবে করছে?অধির ভ্রু কুচকে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে রিসিভ করল।ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই দিদামের গলা ভেসে এল কানে।অধিরের চোয়াল শক্ত হল।এই মেয়েটার জন্যেই রোশনির সাথে এতো ভুল বুঝাবুঝি। রোশনির এই অবস্থার জন্যেও এই মেয়েটা দায়ি।

-তুমি আবার কেন ফোন করেছো?আর কি চাই? আর তুমি না জেলে আছো? তাহলে ফোন কিভাবে করছো?

-অধির আমার কথাটা একবার শুনো প্লিজ।আমি তোমাকে সবটা বলছি।জেল থেকে এক সপ্তাহ আগেই আমি মুক্তি পেয়েছি।সেটাও রোশনির জন্যেই। রোশনির কথাতেই পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে আমায়।আমি আমার কাজের জন্য লজ্জিত অধির।রোশনি ভিষন ভাল মেয়ে।আমি ওর ক্ষতি করার চেষ্টা করলাম অথচ ওই আমায় জেল থেকে বের করল।

অধির আবারো চোয়াল শক্ত করে কঠিন গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

-ফোন কেন করেছো? তোমাকে আমি সাবধান করছি দিদাম।আর একবার যদি তুমি রোশনির কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করো,,, আমি তোমাকে জিন্দা ছাড়বো না।

-এমনটা আর কোনো দিনই হবে না অধির।যে আমাকে অন্ধকার জিবন থেকে মুক্তি দিলো তার কোনো ক্ষতি আমি করবো না।আমি এতোটাও বেঈমান না।আগামী কাল আমি ভাইয়ার কাছে চলে যাচ্ছি।

-তো আমাকে ফোন করার কারন?

-শুনলাম তোমার আর রোশনির মাঝে রিলেশনটা আগের মত নেই।না থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এতে রোশনির কোনো দোষ নেই অধির।আমিই ওকে বাধ্য করেছিলাম ওটা করতে।রোশনিকে আমি ড্রাগস দিয়েছিলাম।ওটা ভিষন স্ট্রং ছিল এবং খুব সহজেই মানুষকে হিপনোসিস করা যায়।আমি রোশনিকে হিপনোসিস করি এবং তোমাকে মেরে ফেলতে বলি।কিন্তু ওর ভালবাসার কাছে হিপনোসিস বেশিক্ষন টিকলো না।ওর কোনো দোষ নেই অধির।সবকিছুর পেছনে আমি ছিলাম।রোশনি তোমায় ভিষন ভালবাসে।প্লিজ সবটা ঠিক করে নাও।কাল চলে যাবো।তোমাকে এগুলো না বলে স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। এগুলো জানাতেই ফোন করেছিলাম।ডিস্টার্ব করার জন্যে সরি।ভাল থেকো অধির।বাই….।

অধির ফোন পাশে রেখে চোখ বুজলো।ভুল বুঝাবুঝির রেশ ধরে আজ এই দিনটাতে এসে পৌছেছে তারা।যেখানে দুজনের কারোরই দোষ ছিল না।কষ্টটাও দুজনে সমান ভাবেই পেয়েছে।অধির দির্ঘশ্বাস ফেলে রোশনির কপালে ঠোট ছোঁয়ালো।দুহাতে শক্ত করে জড়িয়ে নিতেই ঘুমের ঘোরে বুকে নাক ঘষল রোশনি।অধিরের ঠোটের কোনে শুকনো হাসি ফুটল।রোশনিকে আরো একটু নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ঘুমের প্রস্তুতি নিলো।

___

বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে জয়।চোখ মুখ থমথমে।কপালে সূক্ষ্ম চিন্তার ভাজ।চিন্তার কারনটা হয়ত আঁচ করতে পারছে রিয়া।রুমে আসার পরে একটা কথাও বলে নি জয়।হয়ত পুরোনো ব্যথাটা আবারো দাগ কেটেছে মনে।রিয়া ছোট্ট শ্বাস টেনে বিছানার কোনায় গিয়ে বসল।গলার স্বরটাকে স্বাভাবিক করে বলল,

-আমার কিছু প্রশ্ন আছে।তুমি উত্তর দিবে সেগুলোর?

জয় হাসার চেষ্টা করে তাকাল।বলল,

-হুম বলো।

-ওয়াইফাই(Wi-Fi) এর ফুল ফর্ম কি?

-ওয়্যারলেস ফিডালিটি(Wireless Fidelity)

-নাসার(Nasa) ফুল ফর্ম?

-ন্যাশনাল এরোনটিক্স এবং স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন(National Aeronautics and Space Administration)

-ওকে।হোয়াট ইজ দা ফুল ফর্ম অফ গুগোল(Google)?

-গ্লোবাল অর্গানাইজেশন অব ওরিয়েন্টেড গ্রুপ ল্যাঙ্গুয়েজ অব আর্থ।যদিও অফিশিয়ালি গুগোলের কোনো ফুল ফর্ম নেই।ইট জেনারেটেড ফ্রম আ ওয়ার্ড “গুগোল(googol)” হুইচ মিনস্ আ হিউজ নাম্বার।

-ব্রিটেনের প্রেসিডেন্ট কে?

-ব্রিটেনের প্রেসিডেন্ট হয় না রিয়া।প্রাইম মিনিস্টার হয়।প্রশ্ন করার আগে ভেবে তো করো।

-ওকে।এটাই লাস্ট।আর(R) ফর..?

জয় প্রায় সাথে সাথেই জবাব দিল,

-রোশনি।

কথাটা বলেই বুঝতে পারলো ভুল জায়গায় ভুল নামটা নিয়ে ফেলেছে সে।জয় অপরাধি চোখে রিয়ার দিকে তাকাতেই দেখল রিয়া ছলছল চেখে তাকিয়ে আছে।জয়ের নিজের প্রতিই রাগ লাগছে।এখন কি করে বুঝাবে সে এই পিচ্চি মেয়েটাকে? জয় ছোট্ট শ্বাস টেনে নিচু গলায় বলল,

-আই এম সরি রিয়া।ভুল করে মুখ থেকে বেরিয়ে গেছে।আমি তোমার নামটাই নিতে চেয়েছিলাম।বিশ্বাস করো ওকে আমি ভুলে গিয়েছি।এখন আমি শুধু তোমাকে ভালবাসি।

রিয়া কাতর গলায় বলে উঠল,

-সত্যিই ভুলে গেছো…?

রিয়ার নিষ্পাপ চোখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যে বলতে পারল না জয়।চোখ নামিয়ে নিয়ে নিচু গলায় বলল,

-আমি চেষ্টা করছি রিয়া।আমি ওকে ভুলে…ভুলে য..যাব….।

রিয়া তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে উঠল,

-যেখানে ভুলে যাওয়ার কথাটাই তুমি মুখ ফুটে বলতে পারছো না।সেখানে তুমি কিভাবে ওকে ভুলে যাবা? তোমার কষ্টটা আমার সহ্য হয় না জয়।ভাবি ভিষন খারাপ।ও তোমাকে কষ্ট দিয়েছে।

কথাটা বলতে বলতেই ফুপিয়ে কেদে উঠল রিয়া।জয় রিয়াকে টেনে বুকে জড়িয়ে নিয়ে মাথায় হাত রাখল।জয়ের আদুরে আল্লাদে আরো বেশি কান্না পাচ্ছে রিয়ার।দুহাতে জয়ের গেন্ঞ্জি খামচে ধরে ফুপিয়ে কান্না করে উঠল।জয় রিয়ার কপালে ঠোট ছুঁইয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে নরম গলায় বলল,

-কান্না কেন করছো পাগলি মেয়ে?কে বলল আমি কষ্টে আছি?যখন তুমি ছিলে না তখন হয়ত কষ্টে ছিলাম।কিন্তু এখন তো তুমি আছো।তুমি আমার কাছে থাকলে কি করে কষ্টে থাকি বলো?রোশনি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আগেই যেমন ছিল এখনও তেমনই আছে।ও আমাকে কখনোই বলে নি ও আমাকে ভালবাসে।আমিই বোকার মত ভালবেসে ছিলাম।প্রেমটা একা আমারই ছিল।প্রেম হল তীব্র যন্ত্রণাময় এক গভির সুখ।এই সুখটা হারাতে চাই না আমি।রোশনি আমাকে একদমই কষ্ট দেই নি রিয়া।তুমি ভুল বুজছো ওকে।কান্নাটা থামাও না পিচ্চি।একটু পরেই বলবা মাথা ব্যাথা করতেছে।।শান্ত হয়ে যাও সোনা।

রিয়ার কান্নাটা থামল কিছুটা।জয়ের বুকে গুটি শুটি মেরে মাঝে মাঝেই ফুঁপিয়ে উঠতে লাগল।জয় রিয়ার মাথার উপরে চুমু দিয়ে দির্ঘশ্বাস ফেলে বালিশে হেলান দিল।

এরপর কখন যে চোখটা লেগে গেছিলো বুঝতেই পারে নি।হঠাৎ কারো আর্তনাদে ঘুম ভাঙল জয়ের।চোখ মেলে তাকাতেই সব কিছু অন্ধকার মনে হল।আস্তে আস্তে অন্ধকারটা চোখে সয়ে যেতেই স্পষ্ট হল চারপাশ।মেঝেতে পা ধরে রিয়াকে বসে থাকতে দেখে এক প্রকার ছুটে এল জয়।রুমের লাইট জ্বালাতেই অশ্রুসিক্ত রিয়ার মুখটা স্পষ্ট হল।জয় অস্থির হয়ে রিয়ার পাশে হাটু মুড়ে বসে গালে হাত রাখল।আদুরে গলায় বলল,

-রিয়া..!!কি হয়েছে?কাঁদছো কেন পিচ্চি?

রিয়া ঠোট গোল করে পায়ের দিকে ইশারা করল।ডান পায়ের তালুতে কাচের ভাঙা টুকরো বিধে আছে।জয় ভ্রু কুচকে তাকালো।পা টাকে ভালো করে পর্যবেক্ষন করতে করতে বলল,

-কাচ ঢুকলো কিভাবে?

রিয়া ফুপাতে ফুপাতে নাক টেনে বলল,

-আমি তো পানি খেতে উঠেছিলাম।কিভাবে যেন গ্লাসটা হাত থেকে পড়ে গেল।অন্ধকারে হাটতে গিয়েই পায়ে বিধলো।

জয় ছোট্ট শ্বাস টেনে নরম গলায় বলল,

-আমার দিকে তাকাও।অন্যদিকে তাকাবে না।বুঝেছো?

রিয়া মাথা ঝাকাতেই খুব সাবধানে পা থেকে কাচের টুকরোটা বের করে নিলো জয়।রিয়া মৃদু ককিয়ে উঠতেই কিছুটা ঝুকে গিয়ে ক্ষত জায়গায় ফু দিতে দিতে বলল,

-এই তো হয়ে গেছে।কেঁদো না।ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি।একটা পেইন কিলার খেয়ে নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।ফার্স্ট এইড বক্স কোথায় আছে জানো?

রিয়া হাত দিয়ে দেখিয়ে দিতেই রিয়াকে পাঁজাকোলা করে তুলে বিছানায় বসালো।ড্রয়ার থেকে ফার্স্ট এইড বক্স বের করে ডেটল দিয়ে পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ বেধে দিল।একটা পেইন কিলার খাইয়ে দিয়ে রিয়াকে বুকে জড়িয়ে বিছানায় গা এলালো।

____

পিয়া যখন রুমে এল আদি তখন মেঝেতে বসে বিড়বিড় করছে।পিয়ার বুঝতে দেরি হল না আদি ড্রিংকস করেছে।পিয়ার ইচ্ছে করছে আদির মাথা ফাটিয়ে দিতে।ব্যাদ্দোব পোলা….। পিয়া চোয়াল শক্ত করে আদির সামনে দাড়াতেই হাত টেনে বসাল আদি।পিয়ার রাগান্বিত মুখের দিকে তাকিয়ে সুন্দর করে হাসল।আদির মুখভঙ্গি দেখে পিয়া নিজেও হেসে ফেলল।পিয়াকে হাসতে দেখে বাচ্চাদের মত ঠোট উল্টে বলে উঠল আদি,

-এই তোমার থেকে কি আমি লোন নিয়েছি?

পিয়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,

-লোন..!!নাতো।কেনো ?

আদি ঠোট উল্টে হেসে বলল,

-তাহলে তোমার প্রতি দিন দিন এতো ইনটারেস্ট কেন বাড়ছে আমার?

আদির কথা আর কথা বলার ধরন দেখে হেসে ফেলল পিয়া।আদির মুখোমুখি আরাম করে বসে শুনতে লাগল একের পর এক অদ্ভুত কথা।এক পর্যায়ে আদি হাই তুলতে তুলতে বলল,

-তোমায় একটা সিক্রেট বলি শুনো।আমি ওই…….

___

সকালে রোশনির ঘুম ভাঙলো অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখে।ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে চোখ খুলতেই অধিরকে দেখতে পেল রোশনি।অধিরের ঘুমটাও প্রায় ভেঙে এসেছে।অধির চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে রোশনিকে অস্থির দেখে সচেতন চোখে তাকালো।বালিশ থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে বসতেই ঘাড়ে টান পড়ল।অধিরের চোখ মুখ কুচকে এল।সারা রাত বালিশে হেলান দিয়ে ঘুমানোর ফলে ঘাড় অনেকটাই ব্যথা অনুভূত হচ্ছে।অধির তখনও এক হাতে রোশনিকে বুকে জড়িয়ে রেখেছে।অধির রোশনিকে কিছু বলবে তার আগেই দরজায় কড়া পড়ল।অধির গলার স্বর উচিয়ে বলল,

-দরজা খোলা আছে।

অধিরের কথা শেষ হতেই ভেতরে এল মিরা।মিরাকে দেখা মাত্রই কিছুক্ষন আগে দেখা স্বপ্নটা চোখের সামনে ভেসে উঠল রোশনির।স্বপ্নে এই মেয়েটাই ছিল অধিরের সাথে।অধির এই মেয়েটাকে বিয়ে করছিল।রোশনির আর্তনাদেও অধির একটা বার ফিরে তাকায় নি তার দিকে। তার কান্নাটাও দেখে নি।রোশনি আবারো ঘামতে শুরু করল।স্বপ্নটা যদি সত্যি হয় তখন কি করবে সে? মরন ছাড়া তো আর কোনো উপায় থাকবে না।অধিরকে ছেড়ে থাকার কথাটা মনে আসলেও দম বন্ধ হয়ে আসে তার।সেখানে অধিরের পাশে অন্য কাউকে কি করে সহ্য করবে সে? রোশনির মাথা ভারি হয়ে আসছে।এমন দম বন্ধ স্বপ্ন সে আর দেখতে চাই না।মিরাকে এগিয়ে আসতে দেখেই অধিরের বুকের সাথে মিশে গেল রোশনি।বুকের কাছে গেন্ঞ্জি খামচে ধরে অস্থির চোখে তাকাতে লাগল মিরার দিকে।মিরা ভ্রু কুচকে তাকালো।রোশনির ভয়ের কারনটা ঠিক ধরতে পারছে না সে।রোশনিকে এমন করতে দেখে অধির রোশনির মাথায় হাত রেখে নরম গলায় বলল,

-কি হয়েছে সুইটহার্ট? আমি আছি তো তোমার কাছে।এই দেখো আমি তোমার কাছেই আছি।ভয় পেও না।

রোশনি অধিরের বুকে মাথা রেখেই চোখ তুলে তাকালো অধিরের দিকে।মিরার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে গেন্ঞ্জি খামচে গুটিশুটি মেরে বুকে মিশে গেল।মিরা ছোট্ট শ্বাস টেনে বলে উঠল,

-আমার মনে হয় ওর শরিরটা ঠিক নেই।আমি নাহয় পরে আসবো।তোমরা বিশ্রাম নাও।

অধিরও আর আটকালো না।মিরা চলে যেতেই অধির আদুরে গলায় বলে উঠল,

-কি হয়েছে সুইটহার্ট? শরির বেশি খারাপ লাগছে?

রোশনি বুক থেকে মাথা তুলে করুন চোখে চাইলো।ধরে আসা গলায় বলল,

-তুমি ওই মেয়েটাকে কেন বিয়ে করছো অধির?আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।তোমার পাশে অন্য কাউকে সহ্যও করতে পারবো না।এতো বড় শাস্তি আমায় দিও না অধির।

কথাটা বলতে বলতেই ফুপিয়ে কেদে উঠল রোশনি।অধির কিছু বুঝতে না পেরে ভ্রু কুচকে তাকালো।রোশনির চোখের নিচে পানি মুছে দিয়ে বলল,

-বিয়ে!!বিয়ে কেন করবো আবার? কে বলল আমি মিরাকে বিয়ে করছি?

রোশনি ফুপাতে ফুপাতে বলল,

-আমি স্বপ্নে দেখেছি তুমি ওকে বিয়ে করছো।

অধির রোশনিকে টেনে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলল,

-ওটা তোমার স্বপ্ন ছিল বাবা।তোমার মনে হয় তোমাকে ছেড়ে আমি অন্য কাউকে বিয়ে করবো? তোমাকে এতো সহজে ছাড়বো নাকি!!তুমি চাও বা না চাও,,, তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে।থাকবে না?

রোশনি আবারো ফুপিয়ে কেদে উঠল।অধির মুচকি হেসে বলে উঠল,

-এমনিতেও আমার সারা শরির জুড়ে তোমার দেওয়া খামচির দাগ।এগুলো দেখার পরে কি আর কোনো মেয়ে বিয়ে করতে চাইবে?

অধির কথাটা দুষ্টুমি করে বললেও ফুসে উঠল রোশনি।নাক টেনে বলল,

-একদম মেরে ফেলবো আবারো বিয়ের কথা বললে।তোমাকে আমি কাউকে দিবো না। বুঝেছো তুমি? তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না।তুমি শুধু আমার হয়ে থাকবে।

___

সকালে অধির আর রোশনির থেকে বিদায় নিয়েছে নাতাশা,সাহিল,পিয়া,আদি সহ জয় এবং রিয়া।গাড়ি চলছে বড় রাস্তা ধরে।আদির মাথাটা এখনো ঝিম মেরে আছে।রাতে জুসের মধ্যে কেউ একজন মদ মিশিয়ে তাকে খাইয়েছিল।কাজটা তার হারামি বন্ধুগুলোরই।এতে কোনো সন্দেহ নেই আদির।আদি ড্রাইভ করতে করতেই পিয়াকে প্রশ্ন করল,

-কাল তোমার উত্তর দেওয়ার কথা ছিল পিয়া।

পিয়া জানালা থেকে মুখ সরিয়ে বলল,

-উত্তর তো আমি দিয়ে দিয়েছি।

আদি ভ্রু কুচকে তাকালো।সন্দিহান গলায় বলল,

-দিয়ে দিয়েছো মানে? আমার তো মনে পড়ছে না।আচ্ছা বাদ দাও।এখন আবার বলো।

-উঁহু,,,,, আর বলা যাবে না।কাল বলার কথা ছিল বলে দিয়েছি।মনে নেই সেটা তোমার সমস্যা।আমি দ্বিতীয় বার বলতে পারবো না।

আদি করুন চোখে তাকালো।রাতের কোনো কথায় তার মনে নেই।এটা জেনেও মেয়েটা ইচ্ছে করেই এমন করছে।পিয়ার দিকে আড় চোখে তাকাতেই দেখল পিয়ার ঠোটে দুষ্টু হাসি।এই মেয়েটা দিন দিন চূড়ান্ত ফাজিল হয়ে যাচ্ছে।আদি ভুস করে নিশ্বাস ছেড়ে ড্রাইভিং এ মনোযোগি হল।কিছুক্ষন নিরব থেকে বলল,

-রাতের কথা আমার কিছুই মনে নেই।তুমি আমাকে কি বলেছো সেটাও মনে করতে পারছি না।আপাততো মনে করতে চাইছিও না।তবে উত্তরটা যায় হোক না কেন….তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে।এতো সহজে তোমাকে ছাড়ছি না।

পাশ থেকে পিয়া বলে উঠল,

-জোর জবরদস্তি নাকি…?

আদি মুচকি হেসে বলল,

-ধরে নাও তেমনই।জিবনে সবকিছু ক্যাজুয়ালি নিই আমি।বিয়েটাকে সিরিয়াস নিয়ে নিয়েছি।এরপর তোমাকে।তোমার সাথে এক্সিডেন্টলি দেখা হল।অদ্ভুতভাবে বিয়েটাও হল এক্সিডেন্টলি ।তোমার আমার টম এন্ড জেরির সফরে কখন যে তোমায় ভালোবেসে ফেললাম বুঝতেই পারি নি।আমার কাছে প্রেম, ভালবাসা ছিল শুধুই টাইম পাস। মেয়েদের সাথে প্রেম করা,প্রপোজ করা, বাঁচা মরার কসম করা,,, সবই ছিল টাইম পাস।এখন মনে হচ্ছে ওগুলো শুধু টাইম পাসই নয় টাইম ওয়েস্টও ছিল।কিন্তু যখন তোমায় ভালবেসে ফেললাম তখন থেকে মনে হতে লাগল এমন টাইম ওয়েস্ট আমি সব সময় করতে চাই।এই দুনিয়াতে দুইটা জিনিস না কখনো নোটিশ নিয়ে এসেছে আর না আসবে।প্রথমটা এক্সিডেন্ট,,, দ্বিতীয়টা লাভ।এক্সিডেন্ট হলে আমরা টপকে(মরে) যায় নয়ত বেঁচে যায়।কিন্তু একবার লাভ হয়ে গেলে বাঁচার কোনো চান্স নেই।এন্ড আই ফিল ইট।আই এম স্ট্রংলি বিলিভ ইউ দ্যাট আই এম ইন লাভ উইথ ইউ।

পিয়া জবাব দিল না।হঠাৎ করেই কান্না পাচ্ছে তার।বিষন্নতায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাচ্ছে শরির,মন।পিয়া জানালায় মাথা ঠেকিয়ে বাইরে চোখ রাখল।ব্যস্ত শহরটাকে দেখতে দেখতেই চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পড়ল একফোটা নোনা জল।মাকে ভিষন মনে পড়ছে আজ। মাকে জড়িয়ে বলতে ইচ্ছে করছে,,,তোমার মেয়েকে ভালবাসার মানুষ আছে মা।তোমার মেয়ে আর একা নয়।নিষ্ঠুর পৃথিবীতে শক্ত করে হাত ধরার মত কেউ এক জন আছে তোমার মেয়ের পাশে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here