শেষ বিকেলের আদর❤️পর্ব : ২

0
5716

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
#পর্ব : ২

🌸
এলার্মের তীক্ষ্ণ শব্দে মুহূর্তেই ঘুমটা ভেঙে গেল রোশনির।হাত বাড়িয়ে টেবিল ঘড়িটা অফ করে চোখ পিটপিট করে তাকালো রোশনি।গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে আয়াশ।রোশনি মুচকি হেসে আয়াশের চুলগুলো নেড়ে কপালে একটা চুমু দিলো।বিছানা থেকে নেমে গায়ের কুচকানো টিশার্টটা টেনে ঠিকঠাক করে ওয়াশরুমে চলে গেলো।খানিক বাদে বাইরে এসে সোজা রান্না ঘরে গেল চা বানাতে।চিনির কৌটা খুলতেই দেখলো কৌটা পুরো খালি।পর মুহূর্তেই মনে হলো কাল পায়েস রান্না করতেই চিনি শেষ হয়ে গেছে।একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে লম্বাচুল গুলো কাঠি দিয়ে বেধে বাগানে এলো।এখনো পুরোপুরি আলো ফোটেনি চারপাশে।কিছুক্ষন বাগানের মধ্যেই পায়চারি করতে লাগলো রোশনি।

___এই মাসের বাকি দিনগুলো কিভাবে পার করবো…? হাতে তো একদমই টাকা নেই।

এই রকম নানা চিন্তা করতে করতেই সকালের আলো ফুটতে শুরু করলো।রোশনি একটু ঝুড়ি এনে কিছু সবজি তুলে নিলো।তারপর বাগানে ঝড়ে পড়া পাতা গুলো পরিষ্কার করে গাছে পানি দিতে শুরু করলো।তারপর চলে গেলো রান্না ঘরে।রান্না শেষ করে হাত মুছতে মুছতে গিয়ে দেখলো আয়াশ এখনো ঘুমিয়ে আছে।রোশনি মুচকি হেসে আয়াশকে ডাকতে লাগলো।আয়াশের চুলগুলো নাড়তে নাড়তেই আদুরে গলায় ডাক দিলো রোশনি।

___নকুল সোনা,,, উঠে পড়ো।সকাল হয়ে গেছে তো।উঠে পড়ো সোনা…..

রোশনির ডাকেই চোখ পিটপিট করে তাকালো আয়াশ।ঘুম জড়ানো গলাতেই ভেঙে ভেঙে বলে উঠলো….

___গুড মর্নিং বাডি…..

রোশনিও আয়াশের মাথায় চুমু দিয়ে বলে উঠলো…

__গুড মর্নিং। অনেক ঘুম হয়েছে। এবার জলদি জলদি উঠে পড়ো।স্কুলে লেট হয়ে যাবে নয়তো…..

আয়াশও লক্ষি ছেলের মত হেলতে দুলতে ওয়াশরুমে চলে গেলো।এরপর আয়াশকে রেডি করিয়ে,,খাইয়ে দিয়ে,স্কুল ব্যাগ,লাঞ্চ বক্স সব গুছিয়ে স্কুলে পাঠিয়ে দিলো।তারপর নিজেও রাজস্থানি খাদি ড্রেস পড়ে চুল গুলো ছেড়ে অল্প একটু সেজে নিল।রুমের বাইরে আসতেই দেখতে পেলো রাহেলা বেগম টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে।রোশনিকে দেখেই রাহেলা বেগম ভ্রু কুচকে তাকালেন।রোশনি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বেড়িয়ে এলো বাড়ি থেকে।তারপর হাটতে শুরু করলো রাস্তার ধার ধরে।

অন্যদিকে অধির ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেস হয়েই হেডফোন কানে গুজে বেরিয়ে যায় মর্নিং ওয়াকে।ওদের বাড়ির পিছন দিকটাই সরু লম্বা রাস্তার মত আছে।যার দুই পাশে ছোট ছোট ফুল গাছ লাগানো।আর মাঝে কিছু ফলের গাছ।অধির আধা ঘন্টা ধরে দৌড়াদৌড়ি করে জিমরুমে চলে আসে।ওদের বাড়িতেই একটা রুম জুড়ে শুধু দেশি বিদেশি জিব করা জিনিসপত্রে ভর্তি।এটা আদিলের জন্যেই করেছে অধির।এখানে অধির আর আদিলকে নিয়মিত দেখা গেলেও সাহিলকে খুব একটা দেখা যায় না।তাকে খুব কম সময়ই এখানে পাওয়া যায়।অধির আরো আধাঘন্টা জিম করে কিচেনে চলে আসে।তারপর ব্ল্যাক কফি বানিয়ে নিজের খোলা বেলকোনিতে চলে আসে।বারান্দার টবে ফুটে থাকা নানা রকম ফুলের গন্ধে আর কালো গোলাপের সৌন্দর্যে এই সকালো আরো বেশি সুন্দর মনে হয়।তবে অধিরের সেদিকে কোনো খেয়াল থাকে না।তার প্রতিটা সকালই এক।কোনো সকালকেই সে আলাদা ভাবে উপভোগ করে না।রোজ কার মত আজও কফিটা শেষ করে শাওয়ার নিতে চলে যায়।তারপর একেবারে রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে ব্রেকফাস্ট করতে।নির্দিষ্ট চেয়ারটা টেনে বসতেই আদিল আর সাহিল এসে ওর সামনে বসে যায়।

আদিল : গুড মর্নিং ভাইয়া…গুড মর্নিং সাহিল….

সাহিল : গুড মর্নিং…..

অধির : মর্নিং এভরিওয়ান….

ওদের কথার মাঝেই দাদিজান আদিলের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন….

___আদি,,,,,, অধির আর সাহিল কয়েক মাসের ছোটবড় সেটা জানিস তো…..?

দাদিজানের কথায় আদিল মাথা নাড়ালো।যার অর্থ সে জানে।আদিলের বাচ্চাদের মত মাথা নাড়াতেই দাদিজান বলে উঠলেন….

___তাহলে অধিরকে ভাইয়া আর সাহিলকে নাম ধরে কেন ডাকিস…..?

দাদির কথা শুনে একটু নড়ে চড়ে বসলো আদিল।দাদিকে এখন কোন যুক্তিটা দিয়ে বোঝানো যায় সেটাই ভেবে চলেছে ক্রমাগত।কিন্তু ঠিক ঠাক রকম কোনো যুক্তিই মাথায় আসছে না এই মুহূর্তে।

___আসলে দাদিজান কি হয়েছে বলো তো,,,,,?মাশহুর দি অধির চৌধুরিকে যদি আমি নাম ধরে ডাকি তাহলে ব্যাপারটা একটু কেমন হয়ে যায় না বলো…? আর এদিকে সাহিলকে দেখো…..কেমন নিরীহ বিড়াল ছানার মত মুখ,,,,,ওকে দেখলেই আমার কেমন নাম ধরে ডাকতে ইচ্ছে করে।মানে হলো,,,,, ওকে দেখলে আমার ভাই ভাই ফিলিংটাই আসে না…..ইউ নো হোয়াট….আমি….

আদিলকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়েই খাবার মুখে দিতে দিতে বলে ওঠে অধির….

____ওয়ে ড্রামাবাজ,,,অফ যা,,,আর ট্রাই করিস না।তোর এই ভিত্তিহীন লজিকটা কেউ বিশ্বাস করবে বলে মনে হয় না।সো এনার্জি ওয়েস্ট না করে খেতে শুরু কর….

অধিরের কথা শেষ হতেই আদিল মুখ গোমড়া করে মুখে খাবার পুড়ে দিলো।আর ওর অবস্থা দেখে সবাই মৃদু হেসে উঠলো।অধির রিয়ার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলে উঠলো…

____কাল রাতে কখন বাড়ি ফিরেছিস….?

অধিরের বলা কথাটা কানে যেতেই হালকা কেশে উঠলো রিয়া।কয়েকবার কাশি দিতেই অধির পানির গ্লাসটা রিয়ার দিকে এগিয়ে দিলো।রিয়া কাপা হকতে গ্লাসটা নিয়ে পানি টুকু খেয়ে নিলো….

____আসলে ভাইয়া,, কাল এক ফ্রেন্ডের বার্থডে ছিলো।দের সাথেই ক্লাবে গিয়েছিলাম।তাই একটু দেরি হয়ে গেলো…।সরি….

রিয়ার কথা শেষ হতে হতেই অধির চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো।টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে মুছতেই গম্ভির গলায় বলে উঠলো….

___এটাকে একটু দেরি বলে না রিয়া।কোনো ভদ্র ফ্যামিলির মেয়ে রাত একটা অবধি বাড়ির বাইরে থাকে না।আশা করি কি বলছি বুঝতে পারছো…?

রিয়া চোখ নামিয়ে মাথা নাড়ে।টেবিলে বসা সবাই চুপ করেই থাকে।রিয়া কটু বেশিই বেখেয়ালি হয়ে উঠছে দিন দিন।কাউকে দেখেই সে ভয় পায়না।একমাত্র অধিরকে ছাড়া।অধির সবাইকে বাই বলে বেড়িয়ে পড়ে।যথা রিতি নিজের ল্যাম্বারগিনি গাড়িতে উঠে ড্রাইভ করতে থাকে।

এদিকে রোশনি ক্যান্টিনে গিয়ে দেখে ক্যান্টিন বন্ধ।ক্যান্টিন বন্ধ দেখে বেশ অবাক হয় রোশনি।কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে দাড়িয়ে থেকে ফোন দেয় তিশা আন্টির কাছে।ক্যান্টিনটা ওনার স্বামীর।স্বামির মৃত্যুর পর উনিই দেখাশোনা করেন এটা।উনি বেশ ভালো মনের মানুষ। তাইতো রোশনি এতোটা ভালোবাসে।রোশনি ওনার নাম্বারে ফোন দিয়ে জানতে পারে উনি অসুস্থ।আর বাড়িতে কেউ না থাকায় ওষুধও আনতে পারছে না।রোশনি ফোন কেটে ব্যাগ চেক করে দেখে মাত্র ছয়শো টাকা আছে।কিছুক্ষন ভেবে ফার্মেসি থেকে ওনার বলা ওষুধ গুলো কিনে রাস্তা ধরে হাটতে থাকে।এদিকে অধিরও কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে কথা বলছে ক্লাইন্টদের সাথে।হটাৎই গাড়ির সামনে একটা মেয়ে চলে আসে আর সাথে সাথে অধির ব্রেক লাগায়।গাড়ির সামনে আর কেউ নয়,,,রোশনিই ছিলো।রোশনি এতোটাই ভাবনায় ডুবে ছিলো যে খেয়ালই ছিলো না সে কখন ফুটপাত থেকে রাস্তার মাঝামাঝি দিয়ে হাটতে শুরু করেছে।হঠাৎ সামনে জোরে গাড়ি চলে আসায় চোখ মুখ খিচে দাড়িয়ে যায়।এদিকে অধির রেগে স্টেয়ারিং এ বারি মেরে ওঠে…..

___হোয়াট দা হেল….

তারপরেই ব্লুটুথ কানে চেপে বলে ওঠে অধির…

___নাথিং মিষ্টার মেহতা।আই উইল কল ইউ লেটার….

অধির কান থেকে ব্লুটুথ খুলে গাড়ির সিটের উপর ফেলে দরজা খুলে বেড়িয়ে আসে প্রচুর রেগে।অধির রেগে কিছু বলতে যাবে তখনই চোখ যায় সামনে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে।ভয়ে চোখ মুখ খিচ। দাড়িয়ে আছে।যার জন্যে বাম গালের টোলটা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।মেয়েটার এমন ভয় মাখা মুখটা দেখেই অধির থেমে যায়।অধির এবার রোশনিকে ভালোাবে পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করে।চিকন,লম্বা,ফর্সা মেয়েটা যে যথেষ্ট সুন্দরি সেই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।অধিরের চোখটা আবারও আটকে যায় মেয়েটার গলার কিছুটা নিচে থাকা কুচকুচে কালো তিনটা তিলের দিকে।তিনটা তিল একদম কাছাকাছি ত্রিভুজ আকৃতিতে আছে।তিনটা তিলের দুরত্ব খুব বেশি নয়।তিলগুলো দেখেই অধিরের হার্টটা জোরে বিট করতে শুরু করলো।অধির বুঝতে পারলো তার শরিরটা মৃদু কাপছে।সাথে সাথেই অধির চোখ সরিয়ে মেয়েটার মুখের দিকে তাকালো।মেয়েটা এখনো চোখ খিচে দাড়িয়ে আছে।

____এই যে তিলোককন্যা,,,,,মরার জন্যে কি আমার গাড়িই চোখে পড়লো তোমার…? আর কোনো গাড়ি পাওনি…..?

গম্ভির পুরুষালী কন্ঠ কানে যেতেই কেপে উঠলো রোশনি।চোখ পিটপিট করে তাকাতেই দেখতে পেলে সুঠাম দেহের এক পুরুষ।চোখে মুখে বিরাজ করছে গাম্ভীর্যের ছায়া।রোশনি অধিরের চোখের দিকে তাকাতেই আবারো সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলো….কেন যেন ওই লোকটার চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না রোশনি।রোশনি নিচের দিকে তাকিয়ে বামহাতে কপালের ঘামটুকু মুছে নিলো।

___-ও হ্যালো মিস তিলোককন্যা,,,,,তোমাকেই বলছি,,,,শুনতে পাওনা নাকি…?

অধিরের তিলোকন্যা কথাটাই আবারো কেপে উঠলো রোশনি।নিজেকে সামলে কোনো রকম অধিরের দিকে তাকাতেই অধির বলে উঠলো….

___এই যে তোমাকেই বলছি….রাস্তার মধ্যে এভাবে হাটতে ছিলে কেন…? একটু হলেই তো এক্সিডেন্ট হয়ে যেত…..তখন তো…..

সামনে দাড়ানো লোকটার আর কোনো কথা কানে এলো না রোশনির।হঠাৎ করেই যেন চারপাশটা অন্ধার হয়ে যেতে লাগলো।সেই সাথে সামনে দাড়ানো সুদর্শন পুরুষটিও কোথায় যেন হারিয়ে গেলো।শরিরের সমস্ত ভর ছেড়ে দিতেই পা দুটোও যেন ভেঙে পড়লো।অধিরের কথা শেষ না হতেই খেয়াল করলো মেয়েটা তার বুকের উপরই ঢলে পড়লো।অধির দুহাতে রোশনির মাথা আর কোমরটা চেপে ধরলো।রোশনির মাথাটা বুকে পড়তেই কেপে উঠলো অধির।আঠাশ বছরের জিবনে তাকে এমন সিচুয়েশনে কখনোই পড়তে হয় নি তাকে।আর এই প্রথম কোনো মেয়েকে সে এই অদ্ভুদ নামে ডেকেছে।তিলোককন্যা….!!!!কথাটা মনে নে ভাবতেই অবাক হয় অধির।আর মেয়েটাকে বুকে নিতেই এমন অদ্ভুদ ফিলিংস কেন হচ্ছে।কই ওর ফিয়ান্সে ডায়না যখন ওকে জড়িয়ে ধরে তখন তো ওর এমন ফিলিংস হয় না।বরং কেমন অস্বস্তি লাগে।এসব ভাবতে ভাবতেই অধিরের চোখ যায় রাস্তায দাড়িয়ে থাকা লোকজনের উপর।অধির কিছু না ভেবেই রোশনিকে কোলে তুলে নেয়,,,তারপর দরজা খুলে গাড়ির সিটে বসিয়ে দরজা লাগিয়ে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে।তারপর রোশনির দিকে ঝুকে সিটবেল্ট লাগাতে গেলেই আবারো নজর যায় রোশনির গলার ওই তিলের দিকে।কিছুক্ষন এক দৃষ্টে তাকিয়ে থেকেই চোখ বন্ধ করে নেয় অধির….

____হোয়াটস রং উইথ মি…..???কি হচ্ছে এটা আমার সাথে…..? ডোন্ট ফরগেট ইউ আর অধির চৌধুরি।যে কোনো মেয়ের দিকে এভাবে তাকায় না।কুল,,,কুল…..

অধির জোরে জোরে কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে।তারপর সিট বেল্ট বেধে সোজা চলে যায় হসপিটালে।সেখানেও অধির রোশনিকে কোলে করে গাড়ি থেকে নেমে হসপিটালের মধ্যে ঢুকে যায়।হসপিটালের নার্স,ডক্টর আরও যারা উপস্থিত আছে সবাই অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।অধির চৌধুরির কোলে কোনো মেয়েকে দেখা নিশ্চয় কোনো সাধারন ব্যাপার নয়।অধির ডক্টরকে ডাকতেই দুজন লোক একটা স্ট্রেচার নিয়ে আসে আর অধির রোশনিকে সেখানে শুইয়ে দেয়।

___ডক্টর,,, তাড়াতাড়ি দেখুন ওর কি হয়েছে…..??

অধিরের কথাটা কানে যেতেই ডক্টর বিষ্ময় থেকে বেড়িয়ে রোশনিকে চেকআপ করতে থাকে।কিছুক্ষন বাদে অধিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে…

____ডোন্ট ওয়ারি মিষ্টার চৌধুরি।সকাল থেকে হয়তো কিছুখায়নি তাই শরির উইক হয়ে গেছে।আর উইকনেস থেকেই উনি জ্ঞান। হারিয়েছেন।বাট ডোন্ট ওয়ারি,,,,আমি কিছু মেডিসিন লিখে দিচ্ছি আর ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করলেই উনি ঠিক হয়ে যাবেন….আর এখন ওনাকে স্যালাইন দিতে হবে।ওনার শরির বেশ দূর্বল।

____ওকে ডক্টর।যা করার করুন।বাট ওকে সুস্থ চাই…..

অধির বিল পে করে,,,, একটা নার্সকে ওষুধ আনতে আর রোশনির জ্ঞান ফিরলে কিছু খাইয়ে দিতে বলে নার্সের হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে চলে যেতে নেয়।চলে যেতে গিয়েও আবার পিছনে ফিরে তাকায় রোশনির মুখের দিকে।তারপর হাটা দেয় বাইরের দিকে।

এদিকে জ্ঞান ফিরতেই চোখ খুলে তাকায় রোশনি।হাত নড়াতে গেলেই হাতে ব্যাথা লাগে।হাতের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় স্যালাইন চলছে।রোশনি কোনো রকম উঠে বসে।চোখ বন্ধ করে মাথাটা এক হাতে চেপে ধরতেই আস্তে আস্তে সবকিছু মনে পড়ে যায়। এদিকে রোশনির জ্ঞান ফিরতে দেখেই নার্সটা দৌড়ে চলে আসে।

___ম্যাম,,,,,এখন কেমন লাগছে…?

একটা মেয়েলি কন্ঠ কানে যেতেই চোখ মেলে তাকালো রোশনি।রোশনি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে মাথা নাড়ালো।মেয়েটাও মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করলো…

___ম্যাম কি খাবেন বলুন….?

রোশনি ভ্রু কুচকে তাকাতেই নার্সটা বলে উঠলো…

__এক্সচুয়েলি ম্যাম,,আপনি হয়তো সকাল থেকে কিছু খান নি।তাই সেন্স লেস হয়ে গেছিলেন। আর আপনাকে অধির স্যার এখানে নিয়ে এসেছেন।আর আমাকে বলে গেছেন যেন আপনার জ্ঞান ফিরলে আপনাকে কিছু খাইয়ে দিই।এবার বলুন ম্যাম,,,, কি খাবেন…?

মেয়টার কথা গুলো শুনেই সেই সুঠাম দেহের পুরুষটার কথা মনে পড়লো রোশনির।আর সাথে সাথেই হালকা কেপে উঠলো।তবুও নিজেকে সামলে নিলো রোশনি।

___থ্যাংকস। বাট আমি কিছু খাবো না।

__ম্যাম,, স্যার শুনলে রাগ…..

মেয়েটার কথা শেষ করতে না দিয়েই রোশনি মুচকি হেসে বলে উঠলো….

___ডোন্ট ওয়ারি,,,,, কেউ কিছু বলবে না।আমার ব্যাগটা কোথায়…?

নার্সটা রোশনির ব্যাগটা এনে রোশনির হাতে দিলো।রোশনি এক হাতেই ব্যাগ থেকে ফোন বের করলো।ফোন খুলতেই দেখতে পেলো জয়ের পচিশটা মিসড কল আর সাথে কিছু টেক্সট। রোশনি ফোনটা আবারো ব্যাগে ঢুকিয়ে নার্সের দিকে তাকালো।

____আমাকে যেতো হবে।

__কিন্তু ম্যাম,,, স্যালাইন এখনো শেষ হয়নি।

রোশনি হাত থেকে সুইটা বের করতেই কিছুটা রক্ত বেরিয়ে এলো।নার্সটা একটু তুলো এনে রোশনির হাতে দিতেই রোশনি সুই লাগানো জায়গায় চেপে ধরলো।তারপর রিসিপশনে এসে বিলের কথা বলতেই সেখানে থাকা মেয়েটা বললো বিল পে করে দিয়েছে অধির চৌধুরি।রোশনি আর কিছু না বলে বাইরে চলে এলো।তারপর রিকশা ডেকে উঠে পড়লো তিশা আন্টির বাড়ির উদ্দেশ্যে।রিকশায় বসেই রোশনি জয়ের নাম্বারে কল দিলো।প্রথম বার রিং হতেই রিসিভ করলো জয়।

___রোশনি,,, ঠিক আছো তুমি…? কোথায় আছো…? ফোন রিসিভ করছিলে না কেন…? জানো কতো টেনশনে পড়ে গেছিলাম আমি….? ঠিক আছো তো তুমি…?

শেষের কথাটা বেশ করুন শোনালো রোশনির কাছে।রোশনি মুচকি হেসে উঠলো,,, তবে সেটা জয়কে বুঝতে দিলো না।

____উফফ,,,, থামবে তুমি…? বড্ড বেশি কথা বলো তুমি…।আর আমি ঠিক আছি।ওই সামান্য একটু মাথা ঘুরে গেছিলো….

___-কি…? মাথা ঘুরে গেছিলো…? আর এটা তোমার কাছে সামান্য মনে হচ্ছে..?নিশ্চয় ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করো নি।আমি জানতাম,,,,,আমি না থাকলে তুমি এমনটাই করবে….।এমন কেন তুমি…? একটু তো নিজের খেয়াল রাখতে শেখো রোশনি।

___আমি ঠিক আছি এখন জয়।এতো কেন চিন্তা করছো বলোতো?

___তুমি বুঝবে না।মেডিসিন নিয়েছো…?

___হুম।অধির চৌধুরি সব ব্যবস্থা করে দিয়েছে….

__অধির চৌধিরি….? ইউ মিন দি ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ম্যান অধির চৌধুরি….?

জয়ের গলাটা বেশ উত্তেজিত শোনালো।

__হুম…..

রোশনি সবটা বলতেই জয় বলে উঠলো…

__ওয়াও,,,,,,উনি আমার আইডল রোশনি।আমার তো শুনেই কেমন এক্সসাইটিং লাগছে…..

___হয়েছে।এখন রাখছি।পরে কথা হবে।বাই..

রোশনি ফোন কেটে মুচকি হেসে উঠলো।পাগল একটা….বলেই আবারো হেসে উঠলো রোশনি…..

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here