#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
#পর্ব : ৩
🌸
সকাল থেকে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত রোশনি।সকাল থেকে না খাওয়া আর তার উপর মাথার উপর এই তীব্র রোদের প্রকোপে যেন দমটাও নিতে পারছে না রোশনি।বাম হাতে ব্যাগটা শক্ত করে ধরে ডান হাতে কপালে জমে থাকা ঘামটুকু মুছে নিলো রোশনি।তৃষ্ণাতে গলা ফেটে যাচ্ছে যেন।রোশনি আরো একটু এগিয়ে গিয়ে সামনের দোকান থেকে একটা পাউরুটি,কলা আর তারসাথে একবোতল পানি কিনলো।খাবার গুলো ব্যাগে ঢুকিয়েই হাটা শুরু করলো।কিছুটা দুরেই গাছের নিচে একটা বসার জায়গা দেখতে পেয়ে সেদিকটাতেই গেলো রোশনি।বেঞ্চে বসেই আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো।জায়গাটা অনেকটাই নিরিবিলি।মানুষের আনাগোনা থাকলেও সবাই নিশ্চুপ যাওয়া আসা করছে।রোশনি ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে একটু পানি খেতেই ব্যাগে থাকা ফোনটা তুমুল বেগে বেজে উঠলো।রোশনি বোতলটা পাশে রেখেই ব্যাগ থেকে ফোনটা বার করলো।মোবাইলের স্ক্রিনে পিয়া নামটার সাথে একটা মিষ্টি মেয়ের ছবি ভেসে উঠলো।ছবিতে সে কি নিখুত ভাবেই না হাসছে,,,,,বামপাশের বাকা দাতটাও যেন নিজের সৌন্দর্য মেয়েটার মুখে ছড়িয়ে দিচ্ছে।ছবির মেয়েটার এমন হাস্যজ্জল মুখটা দেখেই কিছুটা নড়েচড়ে বসলো রোশনি।কলটা রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে তুমুল গতিতে কথা বলে উঠলো পিয়া।
___দোস্ত,,,,,,,পেয়েছিস চাকরিটা…..? আর না পেলেও চিন্তা করিস না। আজ না হয় কাল একটা না একটা ব্যবস্থা হয়েই যাবে।তাই অযথা চিন্তা করিস না।
এদিকে পিয়ার কথা শুনে রোশনি একটা মলিন হাসলো।কবে থেকেই তো একটা চাকরির জন্যে এখানে ওখানে ছুটে বেড়াচ্ছে।পড়াশোনাটাও যে ও কমপ্লিট করতে পারে নি।অনার্সের পরিক্ষাটাও দেওয়া হয়ে উঠলো না চাচির জন্যে।ওটার সার্টিফিকেটটা থাকলেও হয়তো চাকরি খুজতে সুবিধা হতো।এতো জায়গায় ঘুরেও লাভ বিশেষ হলো না।প্রত্যেকবারই যখন চাকরি না পেয়ে এমন ভেঙে পড়ে রোশনি তখন এভাবেই বলতে থাকে পিয়া।আর পিয়ার কথা শুনে রোশনির মনে আবারো চাকরি খোজার মনোবল বাড়ে।নতুন উদ্যোমে আবারো শুরু করে চাকরি খোজার কাজ।
রোশনি পাশ থেকে পাউরুটি আর কলা মুখে দিয়ে বলে ওঠে…..
___আমার কথা ছাড়….।তোর কি খবর বল।আজকেও কি তোর মা তোকে বিয়ে দেওয়ার জন্যে ছেলে ধরে এনেছে…?
___মা বলিস না তো।কোন দিক থেকে ওনাকে মা মনে হয় বলতো…? সৎ মা বুঝি এমনই হয় রোশনি।মা তো মাই হয়,,,,,সেখানে সৎ আর আপন বলে কিছু হয় নাকি…? তুই তো জানিস আমি কত চেষ্টা করলাম ওনাকে নিজের মায়ের জায়গায় বসাতে।কিন্তু ওই মহিলা কিছুতেই আমাকে সহ্য করতে পারে না।সারা দিন বিয়ে বিয়ে করে মাথাটা শেষ করে দেয়।কবে না জানি বাড়ি ছেলেই চলে যায়……
পিয়ার বলা কথা শুনে ছোট্ট করে নিশ্বাস ফেললো রোশনি।পৃথিবীতে কেউই সুখী নয়।সবারই নিজের ব্যক্তিগত কিছু কষ্ট থাকে।সেটা একান্তই নিজের। কেবল নিজেকেই সেই ব্যাথা সহ্য করতে হয়।কেউ তার দুঃখ শুনে হয়তো কিছু সময়ের জন্য তার জন্যে হা হুতোশ করবে। আবার কয়েক মুহূর্ত পরে অন্যের কষ্টের কথা ভুলেও যাবে।নিজের কষ্টটা শুধুই নিজের। তাই কারো সামনে নিজের দুঃখ জাহির করে নিজেকে দুঃখী প্রমান করার কোনো মানেই হয় না।
রোশনি আরো কিছুক্ষন কথা বলে ফোন কাটে।এতোক্ষনে রোশনি খেয়াল করলো তার পাশে একটা ছেলে বসে আছে।আর অদ্ভুুদ ব্যাপার হলো ছেলেটা ভ্রু কুচকে রোশনির দিকেই তাকিয়ে আছে।উজ্জল শ্যামলা রঙের ছেলেটার মুখটা বেশ মায়াবি।কিন্তু এই মুহূর্তে ছেলেটার প্রতি কোনো মায়া আসছে না।তবে বিরক্তিটা ঠিকই ভর করলো কপালে।আর আপনা আপনিই কপালটা কুচকে গেলো রোশনির।ছেলেটা একবার রোশনি তো,একবার রোশনির হাতে থাকা পাউরুটি আর কলার দিকে তাকাচ্ছে।ছেলেটাকে এভাবে তাকাতে দেখেই বিরক্তিটা আরো কিছুটা বেড়ে গেলো রোশনির।
___এই যে মিষ্টার,,,,সমস্যা কি আপনার…?এভাবে আমার খাবারের দিকে তাকিয়ে আছেন কেন…?
রোশনির কথায় ভ্রু দুটো আরো কিছুটা কুচকে গেলো ছেলেটার।
___এটা আমার খাবার….
ছেলেটার অতি নরম স্বরে বলা কথাটাও যেন সহ্য হলো না রোশনির…..
____ওহ রেইলি…..এটা আপনার খাবার…? বুদ্ধু মনে হয় আমাকে দেখে….? নাকি আমার কপালে লেখা আছে আমি পাগল…? কোনটা…?
___দেখুন….আমি সেটা বলছি না।কিন্তু সত্যিই খাবারটা আমার ছিলো…..
ছেলেটার কথায় আবারো একঝাক বিরক্তি এসে ভর করলো রোশনির।
___এই দেখুন ,,,,,,, আমার একদমই আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।এমনিতেই মাথা ভর্তি টেনশন নিয়ে ঘুরছি তারউপর আপনার এই সব ফালতু কথা শুনেই আমার মেজাজ আরো খারাপ হচ্ছে।যান তো এখান থেকে।
ছেলেটা কিছুক্ষন রোশনির দিকে তাকিয়ে থেকেই উঠে চলে যায়। রোশনিও সেদিকে পাত্তা না দিয়ে হাতে থাকা বাকি কলা আর পাউরুটি টুকু খেয়ে নেয়।তারপর সোজা বাড়ি চলে আসে।
রাতে যখন রোশনি ফোনটা বের করার জন্যে ব্যাগটা খোলে তখনই যেন থমকে যায় রোশনি।কারন তার ব্যাগের মধ্যেই তকর পাউরুটি আর কলা পড়ে আছে।তারমানে তখন সে ওই ছেলেটার খাবারই খেয়েছি।তারউপর আবার ওনাকে রাগও দেখিয়েছি।রোশনি সাথে সাথেই জিব কেটে কপালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে।রোশনিকে এমন ভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আয়াশ রোশনিকে বলে ওঠে…..
___বাডি,,,,,এভাবে দাড়িয়ে আছো কেন….?
আয়াশের কথায় চোখ মেলে তাকালো রোশনি।তারপর গুটি গুটি পায়ে আয়াশের সামনে গিয়ে বসলো।বিছানায় পা তুলে বসে আয়াশের দিকে তাকালো অসহায় ভাবে।
___নকুল আজ না আমি একটা ভুল করে ফেলেছি…. কিন্তু সত্যি বলছি,,, আমি জেনে শুনে কিচ্ছু করি নি।আমি কি করে জানবো বল ওটা ওর খাবার ছিলো….
আয়াশ কিছু না বুঝে চোখ ছোট ছোট করে তাকালো।
___কি হয়েছে…?
রোনি আয়াশকে সবটা বলতেই আয়াশ শব্দ করে হেসে ওঠে।আর রোশনি ওর দিকে অসহায় বাচ্চার মত তাকিয়ে থাকে।
___তুই হাসছিস…? আমার ভিষন খারাপ লাগছে।একে তো আমি ওর খাবার খেলাম আর তার উপর কতগুলো কথা শুনালাম….. ছেলেটার মুখ দেখেই মনে হচ্ছিলো ভিষন খিদে পেয়েছিলো…..
___ছেলেটার নাম জানো তুমি…..?
___আমি কি করে জানবো..? আমি কি কখনো দেখেছি নাকি ওকে…..
__তাহলে আর কি করার…? ভুলে যাও সব…..
__কিন্তু….
___তাহলে এক কাজ করো।তুমি বরং কালও ওখানে যাও সেই সময়ে।যদি কালও আসে ছেলেটা ওখানে….
আয়াশের কথাটা কানে যেতেই চোখ মুখ চিকচিক করে উঠলো রোশনির।কিছুটা নড়ে চড়ে বসেই বলে উঠলো….
__সেটাই ভালো হবে বুঝলি।কাল আমি ওখানে গিয়ে অপেক্ষা করবো।যদি কালও আসে ছেলেটা।দেখা হলে বরং আমি সরি বলে দিবো…..এখন শুয়ে পড় জলদি।অনেক রাত হয়েছে….
রোশনিও রুেমর লাইট অফ করে সিলিং এ ঝুলানো স্টার লাইট গুলো জ্বালিয়ে দেয়।তারপর আয়াশের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে।যথারিতি সকালে উঠে রান্না সহ বাকি কাজ গুলো সেরে রোশনি দুপুরের দিকে বেরিয়ে পড়ে কালকের সেই জায়গায়।আধা ঘন্টা ধরে বসে থেকেও ছেলেটার দেখা পেলো না রোশনি।আরও দশ মিনিটের মত অপেক্ষা করে সোজা চলে এলো বাড়ি।এভাবেই কেটে গেলো আরো দুটো দিন।রোশনি এতো দিনে ওই ছেলেটার কথা ভুলেও গেছে।রোশনি সব কাজ সেরে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।পিয়া একটা কাজের ব্যবস্থা করেছে।সেখানেই যাবে এখন রোশনি।রোশনি রিকশা থেকে নেমে সোজা একটা ক্যান্টিনে চলে যায়।গিয়েই দেখতে পায় পিয়া ক্যান্টিনের সামনেই দাড়িয়ে আছে।রোশনিকে দেখতে পেয়েই হাত নাড়ালো পিয়া।রোশনিও মুচকি হেসে চলে গেল পিয়ার কাছে। রোশনি যেতেই পিয়া রোশনিকে হাগ করলো।
__চল ভেতরে….
রোশনিও মাথা নেড়ে পিয়ার সাথে চলে গেলো।ক্যান্টিনের মধ্যে ঢুকতেই দেখতে পেলো একটা চিকন পাতলা মহিলা চেয়ারে বসে আছেন।পিয়া রোশনিকে নিয়ে ওনার সামনে দাড়ালো।
___আস সালামু আলাইকুম…..
মহিলাটাও মিষ্টি হেসে বলে উঠলো…
___ওয়ালাইকুম আস সালাম…..
তখনই পিয়া এক নাগাড়ে বলে উঠলো….
___আন্টি এটাই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড রোশনি…।ওর কথায় বলেছিলাম….
মহিলাটাও মুচকি হেসে আমার সাথে পরিচিত হয়ে নিলেন। তারপর আরো কিছু কথা বললেন।শেষ মেষ কাজটা পেয়েই গেলাম।স্যালারিটা একটু কম হলেও কাজটা করতে রাজি হলাম।মাস শেষে দশ হাজার টাকা আসলেও তো ভাইটাকে ভালোভাবে পড়াশোনা করাতে পারবে।
খানিক বাদে রোশনি আর পিয়া ক্যান্টিন থেকে বেড়িয়ে আসলো।তারপর দুজন মিলে গল্প করতে করতে রাস্তা ধরে হাটতে লাগলো।পিয়া বরাবরই বেশি কথা বলে।পিয়াই এটা ওটা বলে যাচ্ছে আর রোশনি মাঝে মাঝে শুধু হু হা করছে।পিয়ার কথার মাঝেই রোশনি দাড়িয়ে গেলো।
___কিরে এভাবে সটান দাড়িয়ে পড়লি কেন…..?
রোশনি একটা ছেলের দিকে তাকিয়ে পিয়াকে বলে উঠলো….
___চল আমার সাথে….
রোশনি পিয়ার হাত ধরে টেনে হাটতে শুরু করলো।
__এক্সকিউজ মি,,,,,,, হ্যালো শুনছেন……এই যে…
কোনো মেয়ের গলা শুনে পিছনে ফিরে তাকায় জয়।আর পিছনে ফিরতেই ভ্রু জোড়া কুচকে যায়।তবুও নিজেকে সামলে জয় বলে ওঠে….
__-জ্বি আমাকে বলছেন….?
___জ্বি আপনাকেই বলছি।চিনতে পারছেন আমাকে…..? ওই আমি আপনার খাবার….
রোশনি এটুকু বলতেই থেমে গেলো।ওই কথা মনে উঠলেও রোশনির ভিষন লজ্জা লাগে।রোশনিকে দেখেই জয় চিনে ফেলেছিল।রোশনির দিকে তাকিয়ে দেখে রোশনি হাত কচলাচ্ছে সমানে।জয় ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলে উঠলো….
__জ্বি জ্বি চিনতে পেরেছি।কিছু বলবেন….?
রোশনি যেন এটারই অপেক্ষায় ছিলো।
___আসলে আই এম সরি।আমি সেদিন বুঝতে পারি নি।আসলে ফোনে কথা বলতে বলতে খেয়ালই ছিলো না….. সরি এগেইন…..আপনার সেদিন খুব খিদে পেয়েছিলো না…?
রোশনির এমন ঠেস দেখে মুচকি হেসে উঠলো জয়।
__ইটস ওকে মিস…..
রোশনি সাথে সাথেই বলে উঠলো…
__রোশনি…
জয়ও মুচকি হেসে বলে উঠলো…
___তো মিস রোশনি,,,,,ওটা একটা মিসআন্ডারস্যান্ডিং ছিল।ফরগেট ইট….
রোশনিও যেন হাফ ছেড়ে বাচলো।এদিকে পিয়া একবার জয় তো একবার রোশনির দিকে তাকিয়ে আছে।সব কিছুই তার মাথার এক হাত উপর দিয়ে যাচ্ছে।কিছু বুঝতে না পেরে রোশনিকে হালকা গুতা দিয়ে উঠলো…..
___কাহিনি কি বলবি…? আর এই পোলাই কেডা…?
রোশনি পিয়াকে সবটা বলতেই অট্টহাসিতে মেতে উঠলো পিয়া।শব্দ করে হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরলো।ওর হাসি দেখে জয়ও হাসা শুরু করলো।আর রোশনি মুখ গোমরা করে দাড়িয়ে রইলো।
__সিরিয়াসলি ইয়ার,,,,তুই ওর খাবার নিজের মনে করে খেয়ে নিলি…? আবার ওকে বকাও দিলি…..
বলেই আবার হাসতে শুরু করলো পিয়া।
___সিরিয়াসলি,,,,,আমি তো এক মুহূর্তের জন্য ভেবেই নিয়েছিলাম নিশ্চয় ও পাবনা থেকে পালিয়ে আসা কেনো পাগল।আবার এটা ভেবে আমার মায়াও হয়েছিল যে এত সুন্দর মেয়েটা কিনা পাগল…..
জয় কথাটা শেষ করেই হাত উঠিয়ে পিয়ার সাথে হাই ফাইভ করলো।
___তোরা ইচ্ছে করে আমায় লজ্জা দিচ্ছিস…।আমি কি ইচ্ছে করে খেয়েছি নাকি..?..?
রোশনির কথায় জয় আর পিয়া নিজেদের হাসি থামানোর চেষ্টা করলো।
__আচ্ছা যা হবার হয়ে গেছে।এখন তো আর কোনো সমস্যা নেই। এবার তো আমরা ফ্রেন্ড হতেই পারি তাই না……
পিয়া আর রোশনিও ফ্রেন্ডশিপ করতে রাজি হয়ে গেলো।কথার মাঝে পিয়া আর জয় আবারও রোশনিকে লজ্জায় ফেলতে সেদিনের কথা তুলে হাসতে শুরু করলো।রোশনি অসহায় মুখ করে তাকাতেই ওরা দুজন হাসি আটকানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু তবুও দুজনে ঠোট টিপে হাসতে লাগলো।রোশনি ওদের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই ওরা শব্দ করে হাসা শুরু করলো।আর এক পর্যায়ে রোশনিও ওদের সাথে তাল মেলালো।
হঠাৎই রিকশা ওয়ালার ডাকে বাস্তবে ফিরলো রোশনি।পুরোনো কথা মনে পড়তেই ঠোটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।
___আইয়া পড়ছি মা…..
রোশনি রিকশা থেকে নেমে ব্যাগ থেকে টাকা বের করে রিকশাওয়ালার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে উঠলো….
__এই নিন চাচা…..
রোশনি রিকশা ভাড়া দিয়ে তিশা আন্টিদের ছোট গেটটা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো।দরজা খোলা থাকায় সোজা রুমে চলে গেলো রোশনি।গিয়ে দেখলো পিয়া আগে থেকেই ওখানে বসে আছে।তিশা পিয়ার দুঃসম্পর্কের চাচি হয়।এতো দিন নানু বাড়িতে ছিল পিয়া।কাল রাতেই বাড়ি ফিরেছে।আর আজ সকালে রোশনিই ওকে ফোন করে জানিয়েছে তিশা ান্টির অসুস্থতার খবর।তাই সকাল সকালই চলে এসেছে আর রোশনির জন্য অপেক্ষা করছিলো এতোক্ষন।রোশনি পিয়ার সাথে কথা বলে থার্মোমিটার দিয়ে তিশা আন্টির জ্বর মাপে।তারপর রোশনির ফার্মেসি থেকে আনা ট্যাবলেট ওনাকে খাইয়ে দেয়।তারপর পিয়া আর রোশনি দুজনে চলে যায় রান্না করতে।
অন্যদিকে অফিসে নিজের কেবিনে বসে আছে অধির।না চাইতেও বারবার রোশনির কথা মাথায় আসছে তার।এখন কেমন আছে,,,,,জ্ঞান ফিরেছে কিনা,,,কিছু খেলো কিনা এমন হাজারো কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে অধিরের। অধির নিজেও বুঝতে পারছে না সে কেন বার বার ওই মেয়ের কথায় ভাবছে।অধির গায়ে থাকা ব্লেজারটা চেয়ারে রেখে উঠে দাড়ায়। সিগারেটের প্যাকেট হাতে নিয়ে থাই গ্লাসটা সরিয়ে দেয়।গ্লাস সরাতেই রোদের আলো অধিরের চোখে মুখে পড়ে।সিগারেট জ্বালিয়ে মুখে দেয়।আর নজর যায় দুরের ওই কৃষ্ণ চুড়া আর রাধা চুড়া গাছ দুটোর দিকে।দুটো গাছ পাশাপাশি কেমন মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে।লাল হলুদ ফুলে যেন ওদের অহংকারের পাল্লাটা আরো অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে।তাইতো গ্রীষ্মের এই পখর রোদেও দ্বিধাহীন ভাবে মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে।যেন কোনো কিছুকেই তারা পরোয়া করে না।অধিরও তো ওদের মতোই।সব সময় মাথা উচু করেই চলে এসেছে সে।কোনো কিছুকেই সে পরোয়া করে না।নিজের নিজের নিয়মে চলে।
অধির পরপর দুটো সিগারেট শেষ করে ব্লেজার হাতে কেবিন থেকে বেড়িয়ে যায়।তারপর সোজা চলে যায় হসপিটালে।মনটাকে কিছুতেই আটকাতে পারলো না অধির।বারবারই মনে হতে লাগলো তার একবার মেয়েটার খোজ নেওয়া উচিত।অধির চৌধুরি কখনই মন দিয়ে ভাবে না।সব সময় মস্তিষ্ক দিয়েই ভেবে এসেছে।মস্তিষ্ক যেটাতে সায় দিয়েছে ও সেটায় করেছে।আর সে বারবার প্রমানও করে দিয়েছে তার মস্তিষ্ক দিয়ে করা সিদ্ধান্ত ভুল নয়।কিন্তু আজ…? আজ কিছুতেই মনের কথাটা ফেলে দিতে পারলো না।তাইতো ছুটে চলে এলো হসপিটালে।অধির সোজা রিসিপশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।কিন্তু মাঝপথেই থেমে গেলো অধির।মেয়েটার নামটাও তো জানে না অধির।তাহলে রিসিপশনে গিয়ে কি বলবে সে।বিরক্তিতে ভ্রু জোড়া আপনা আপনিই কুচকে গেল।
অধির এক জায়গাতেই ঠায় দাড়িয়ে আছে।অধিরকে দেখতে পেয়েই সেই নার্সটা এক প্রকার ছুটে এলো অধিরের কাছে।অধিরের সাথে একটু কথা বলার সুযোগ সে কিছুতেই হাত ছাড়া করতে চায় না।মেয়েটা অধিরের সামনে দাড়িয়েই আস্তে করে ডেকে উঠলো…..অধির সামনে তাকাতেই দেখতে পেল সকালের সেই নার্সটা তার সামনে দাড়িয়ে আছে।যাক ভালোই হলো,,,, এর থেকেই বরং তিলোককন্যার খবরটা নেওয়া যাবে।
___তিলোককন্যা….আই মিন সকালের মেয়েটা কেমন আছে…? জ্ঞান ফিরেছে ওর….?
অধিরের মুখে তিলোককন্যা কথাটা শুনেই অবাক হলো মেয়েটা।তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে উঠলো….
___স্যার,,,,ম্যাম তো চলে গেছেন…
____হোয়াট…?চলে গেছে মানে…? কোথায় গেছে…?
__সেটা তো জানি না স্যার।ম্যামের জ্ঞান ফিরলো তারপর চলে গেলো…..
____জ্ঞান ফেরার পর কিছু খেয়েছে ও…?
___নো স্যার।আমি চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু উনি খেলেন না…..
কথাটা শুনতেই রাগ উঠে গেলো অধিরের।চোখ জোড়া হঠাৎ করেই লাল হয়ে গেলো।কপালের রগটাও ষ্পষ্ট হয়ে উঠছে।অধিরের এমন চেহারা দেখে ভয় পেয়ে গেলো নার্সটা।হঠাৎ এমন রেগে কেন গেলো,সে বুঝতে পারছে না।অধির হাত মুষ্টিবন্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।তারপর আর কোনো কথা না বলে সোজা হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে আসে।আর গাড়ির দরজা খুলে গাড়িতে উঠে বসে।সিটে বসতেই স্টেয়ারিং এ একটা বারি মারে অধির।এতোটা রাগ কেন হচ্ছে সেটাই বুঝতে পারছে না অধির।আসলে রাগটা কার উপর হচ্ছে আর কেন হচ্ছে সেটাই মাথায় আসছে না।ওই মেয়েটার উপর রাগ হচ্ছে এজন্যে যে মেয়েটা কিছু না খেয়েই চলে গেছে,,,,একবার অধিরের জন্য অপেক্ষা না করে নাকি ওই নার্সটার উপর…? যে সে কিছু তিলোককন্যাকে না খাইয়েই যেতে দিয়েছে….।অধিরের এখন নিজের উপরই রাগ লাগছে।একটা অপরিচিত মেয়ে সে কিছু খেলো কি খেলো না তার জন্যেই বা কেন এত ভাবতে হবে….? জাস্ট ডিসগাস্টিং……অধির কিছুক্ষন ছিটে মাথা লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে।তারপর গাড়ি স্টার্ট করে করে চলে যায় চৌধুরি ম্যানশনে।
চলবে………