#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পর্ব : ৩৭
🌼
হঠাৎই ঘুমটা ভেঙে গেলো রোশনির।নাকে জোড়ালো একটা গন্ধ ভেসে আসছে।এই সুন্দর গন্ধটা পরিচিত তার।রোশনি চোখ না খুলেই মুচকি হাসলো।আরো কিছুক্ষন অধিরের বুকের সাথে মিশে রইলো।তাকাতে ইচ্ছে করছে না তার।অদ্ভুদ ভাল লাগায় অবশ হয়ে আসছে শরির।বেশ কিছুক্ষন পর রোশনি চোখ মেলে তাকালো। অধিরের ঘুম এখনো ভাঙে নি। ঘুমের মাঝেও রোশনিকে আঁলতো হাতে জড়িয়ে রেখেছে। রোশনি একটু নড়তেই ঘুমের মধ্যেই মুখ কুচকালো অধির।রোশনিকে আরো একটু শক্ত করে চেপে ধরতেই ঠোটের কোনে হাসির রেখা ফুটলো।অধিরের চোখ মুখ কুচকানোতে ভিষন হাসি পেল রোশনির।ঠোট টিপে হেসে অধিরের ঘুমন্ত মুখটাতে নজর দিতেই স্থির হলো দৃষ্টি।সব সময় স্টাইল করে গুছিয়ে থাকা চুলগুলো এখন বড্ড এলোমেলো দেখাচ্ছে।তবুও রোশনির কাছে মনে হচ্ছে চুল গুলো বেশ নিয়ম মেনেই কপালে পড়ে আছে।ঘন কালো দাড়িগুলো কাট কাট চোয়ালের সাথে একটু বেশিই মানানসই।রোশনির ইচ্ছে করছে অধিরের এলোমেলো চুলগুলোকে আরো একটু এলোমেলো করে দিতে।চাপ দাড়ি গুলোকে আঁলতো ছুয়ে দিতে।রোশনি হাত উঠিয়ে যত্ন নিয়ে অধিরের চুলগুলো নিয়ে খেলতে লাগলো।এরপর গালে হাত রাখলো।খুব সাবধানে অধিরের দাড়িগুলোতে হাত বুলাতে থাকলো।হঠাৎ করেই রোশনির দৃষ্টি থমকে গেলো অধিরের কালচে লাল ঠোঁট জোড়ার দিকে।খাড়া নাকের নিচে কালচে লাল ঠোটটাকে অনেকটাই আকর্ষণীয় দেখাচ্ছে।রোশনি নিজের অজান্তেই কতোক্ষন লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে ছুঁয়ে দিতেই হালকা নড়ে উঠলো অধির।সাথে ঠোটের কোনে দেখা গেল শব্দহীন মুচকি হাসি।অধিরের ঘুমন্ত মুখটাকে আরো কিছুক্ষন খুটিয়ে খুটিয়ে দেখার পর অনেকটা ফিসফিসিয়ে বলতে শুরু করলো রোশনি,
-ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় একদম বাচ্চাদের মত লাগছে আপনাকে।একদম শান্ত, নিষ্পাপ। ওই যে কিছু বাচ্চা হয় না? যাদের দেখলেই আদর করে দিতে ইচ্ছে করে ঠিক তেমনই আদুরে দেখাচ্ছে আপনাকে এই মুহূর্তে। কিন্তু জেগে উঠলেই একদম সিংহ রুপ ধারন করেন।রাগে উচু নাকটা আরো উচু করে তোলেন।ইনাফ ইজ ইনাফ রোশনি।তোমার কি মনে হয় আমি ভালবাসার মানে বুঝি না?তোমাকে এক কথা আর কতোবার বুঝাবো? অধির চৌধুরির নজর থেকে কেউ বাচতে পারে না।ইন্টারেস্টিং ভেরি ইন্টারেস্টিং।
শেষের কথাগুলো অনেকটা অধিরের মতো করেই বললো রোশনি।রোশনি আরো কিছু বলবে তার আগেই সাডেনলি চোখ খুলে অধিরকে তাকাতে দেখে চমকে উঠল রোশনি।অধিরের চোখ মুখ ভিষন গম্ভির দেখাচ্ছে।চোখ দুটোতে রাগ স্পষ্ট।রোশনির হঠাৎ করেই ভিষন ভয় লাগছে।অধির এবার তার সাথে কি করবে সেটা ভেবেই শিউরে উঠছে শরির।তাকে নিশ্চয় দু চারটে চড় থাপ্পর দিয়ে বলবে,ইউ স্টুপিড গার্ল অধির চৌধুরিকে নকল করার সাহস কোথায় পাও তুমি?কথাগুলো ভেবেই করুন চোখে তাকালো রোশনি।অধির আগের মতোই থমথমে চোখে চেয়ে আছে।রোশনির ভয় বাড়তে লাগলো।কপালে কি ঘাম জমেছে? জমতেই পারে।এখন সে যেই পরিস্থিতে আছে সেই পরিস্থিতে আর কিছুক্ষন থাকলে হয়তো স্ট্রোকের মত ভয়াবহ ঘটনাটাও ঘটিয়ে ফেলতে পারে।এমন কিছু হওয়ার আগে তাকে এখান থেকে পালাতে হবে।একবার এখান থেকে যেতে পারলে সারা দিনেও অধিরের সামনে সে আসবে না।যেই ভাবা সেই কাজ।রোশনি এক মুহূর্ত দেরি না করে অধিরের বুক থেকে উঠে যেতে নিলেই অধির আরো শক্ত করে চেপে ধরে রোশনির কোমর।রোশনি কিছুক্ষণ চেষ্টা চালিয়েও লাভ কিছু হল না।অধিরের দানবীয় হাতের বাধন থেকে মুক্তি মিলল না।রোশনি ক্লান্ত হয়ে অধিরের দিকে করুন চোখে তাকালো।রোশনির এখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি টাইপ অবস্থা।মাঝে মাঝে সে কেনো যে এতো বোকামি করে বসে কে জানে।অধির হাতের বাধন শক্ত করে চোখ মুখ গম্ভির করে বলে উঠল,
-তো এমন লাগে আমি রেগে গেলে?তুমি আমাকে….অধির চৌধুরিকে নকল করছো?
রোশনির এবার ভয়ে হার্ট এ্যাটাকের মত অবস্থা।ভেতরে ভেতরে ভয় পেলেও উপরে সেটা প্রকাশ করলো না।কোনো রকম হাসার চেষ্টা করে বলল,
-না না আমি এসব করি নি।আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম।
-আচ্ছা তাহলে তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই আমাকে নকল করছিলে তাই তো?তোমার কোনো ধারনা আছে অধির চোধুরিকে নকল করে ভাঙানোর পরিনাম কি হতে পারে?
রোশনি এবার আরো খানিকটা চুপসে গেলো।ভয়ে তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।মিইয়ে আসা গলায় তবুও সাহস করে বলে উঠল,
-দেখুন আপনি যেমনটা ভাবছেন তেমন কিছুই না।ফাস্ট অফ অল আমি আপনাকে নকল করছিলাম না।আমি তো ব্যস নিজের সাথে কথা বলছিলাম।এন্ড সেকেন্ড অফ অল….
রোশনির কথার মাঝেই বলে উঠল অধির,
-সেকেন্ড অফ অল নয়।ইটস সেকেন্ডলি।
রোশনি বুঝতে না পেরে বলল,
-এ্যা…..
-এ্যা না হ্যা।সেকেন্ড অফ অল হয় না।এটা সেকেন্ডলি হবে।
রোশনি ভ্রু কুচকালো।লোকটা তার কথার ভুলটা দেখতে পাচ্ছে অথচ সে যে ভয়ে রিতিমত কাপাকাপি করছে সেটা চোখে পড়ছে না?
-সে যাই হোক।সেকেন্ড অফ অল হোক বা সেকেন্ডলি হোক সেটা আসল বিষয় নয়।আসল কথা হল আমি আপনাকে নকল করি নি।সত্যি বলছি।বিশ্বাস করুন।
অধিরকে সন্দিহান চোখে তাকাতে দেখে করুন স্বরে বলল রোশনি,
-বিশ্বাস হচ্ছে না?
অধির ডানে বামে মাথা দুলালো।যার অর্থ তার বিশ্বাস হচ্ছে না।রোশনি এবার আরো মিইয়ে গেলো।নিজের বোকামিতে নিজের গালেই দু চারটে কিল ঘুষি বসাতে মন চাইছে।কি দরকার ছিলো এসব করার।এবার ঠ্যালা সামলাও।রোশনির ভাবনার মাঝেই চোয়াল শক্ত করে বলতে লাগলো অধির,
-তুমি বুঝতে পারছো আমার নকল করে কতো বড় ভুল তুমি করেছো?তোমার কোনো ধারনা আছে তোমার এই ভুলটা আমার কতোটা…
এটুকু বলে থামলো অধির।রোশনি অসহায় মুখ করে মাথা নিচু করতেই বাকা হাসি ফুটে উঠলো অধিরের ঠোটে।রোশনির কোমরটাকে চেপে নিজের সাথে আরো খানিকটা মিশিয়ে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
-ভালো লেগেছে সুইটহার্ট। আই লাইক ইট।
অধিরের কথা শেষ হতেই চোখ তুলে তাকালো রোশনি।অধিরের ঠোটের কোনে হাসি দেখেই নাক ফুলালো।অধিরের বাহুতে দু চারটে কিল ঘুষি দিতেই ”আহ”শব্দ করে উঠলো অধির।রোশনি বেখেয়ালিতে অধিরের ক্ষত জায়গাটাতে আঘাত করে ফেলেছে।রোশনি ভিষন ব্যস্ত ভঙ্গিতে অধিরের ক্ষত জায়গার ব্যান্ডেজের উপর খুব যত্ন নিয়ে আলতো হাতে ছুয়ে দিতে দিতে বলে উঠল,
-সরি সরি। আমি খেয়াল করি নি।আমার একদমই মনে ছিল না।খুব লাগলো না?
অধির হাসলো।রোশনিকে এতো ব্যস্ত হতে দেখে মনের কোথাও একটা ভিষন খুশি অনুভব করলো।অধিরকে হাসতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকাল রোশনি।বলল,
-হাসছেন কেন? ব্যথা পেলে কেউ হাসে?
অধির ঠোটে হাসি বজায় রেখেই বলল,
-এমন ব্যথায় হাসতে হয় সুইটহার্ট। তুমি বুঝবে না।এখন তাড়াতাড়ি আবার হাত বুলাতে শুরু করো তো।তোমার হাতে ম্যাজিক আছে সুইটহার্ট। ছুঁয়ে দিলেই ব্যথা কমে যাচ্ছে।বাপরে,,,!!তোমার হাতের ছোঁয়াতেই যদি ব্যথা কমে যায় তাহলে ঠোঁটের ছোঁয়াতে কি হবে বুঝতে পারছো? হাতের ম্যাজিক তো দেখালে এবার একটু ঠোটের ম্যাজিকটা দেখাও তো সুইটহার্ট।ফাস্ট ফাস্ট…
রোশনির মাথায় কথাটা ঢুকতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগল।কথাটা বুঝতে পেরে অধিরের দিকে তাকাতেই দেখলো তার ঠোটে দুষ্টু হাসি।রোশনি রেগে মেগে অধিরের বুকে দু চারটে কিল ঘুষি মেরে ক্ষান্ত হল।অধির পুরোটা সময় হাসতে ছিল।রোশনি ঠোট ফুলিয়ে ক্লান্ত চোখে তাকালো অধিরের দিকে।অধিরের হাসিটা হঠাৎই মিলিয়ে গেল।চোখে মুখে ফুটে উঠলো অব্যক্ত কিছু ঝাঁঝালো নেশা।অধিরের গভির দৃষ্টিতে দৃষ্টি নামিয়ে নিলো রোশনি।ওই গভির চোখে দ্বিতীয় বার তাকানোর মত সাহস হয়ে উঠলো না তার।রোশনির হঠাৎই মনে হলো সে লজ্জা পাচ্ছে।সেমন তেমন লজ্জা নয় লজ্জায় একেবারে মরে যাওয়া টাইপ লজ্জা পাচ্ছে।
অধির বাম হাতে রোশনির থুতনি ধরে চেয়ে রইলো কিছুক্ষন রোশনির কাঁপা ঠোটের দিকে।রোশনির সারা শরির লজ্জায় অবশ হয়ে আসছে।বাম হাতে অধিরের বুকের দিকটা খামচে ধরতেই হালকা ব্যাথা অনুভূত হল অধিরের।তবে সেদিকে খুব একটা খেয়াল নেই তার।সে তো রোশনিতে মগ্ন।রোশনির থুতনি ধরে ওর ঠোটের দিকে এগিয়ে যেতেই দরজায় কেউ নক করল।অধিরের হুশ এলো।রোশনিও নিজেকে সামলে নিয়ে দ্রুত বিছানা ছাড়লো।অধির বিরক্তিতে মুখ ফুলিয়ে কটমট চোখে দরজার দিকে তাকাল।
অন্ধকার রুমের মধ্যে চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে দিদাম।সামনে পেতে রাখা ছোট্ট টেবিলটার উপরে কালো রঙের রিভলবার। সেই রিভলবারের দিকে চেয়েই ভয়ে জড়োসরো হয়ে কাপছে একজন।ভয়ে তার হাত পা কাপছে।সে সাথে কাপছে বুক।অন্যকে মারতে তার বুক হাত কিছুই কাপে নি কখনো।তবে আজ তার হাত, বুক গলা সবই কাপছে।কাঁপার যথাযথ কারনও যে আছে।অন্যকে মারা আর নিজেই নিজেকে মারা ব্যাপারটা তো এক নয়।লোকটা একটা শুকনো ঢোক গিলে অশ্রভেজা চোখ নিয়ে দিদামের দিকে তাকালো।লোকটার করুন চেহারা দেখেও খু্ব একটা মায়া হলো না দিদামের।আগের মতোই পায়ের উপর পা তুলে বসে রইলো আরাম করে।
-প্লিজ ম্যাডাম এবারের মত মাফ করে দিন।আমি তো ওই মেয়েটাকেই গুলি করেছিলাম। মাঝখান থেকে হুট করে স্যার এসে গেলেন।বিশ্বাস করুন আমার এতে কোনো দোষ নেই।আমাকে আর একটা বার সুযোগ দিন। আমি এবার মেয়েটাকে শেষ করেই ছাড়বো।প্লিজ ম্যাডাম।
দিদাম একটু ঝুকে টেবিলের উপর রিভলবারটা ঘুরাতে লাগলো।খুবই শান্ত গলায় বললো,
-দোষটা কার সেটা জেনে আমার লাভ নেই।সেটা জানতেও চাইছি না। ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত,,, তুই আমার অধিরকে আঘাত করেছিস।এর শাস্তি তো তোকে পেতেই হবে।আর এমনিতেও আমি যদি তোকে ছেড়েও দিই তবুও তুই বাচবি না।অধির তোকে ঠিকই খুজে বের করবে। এরপর অধির তোকে ঠিক কতোটা কষ্ট দিয়ে মারবে সেটা আমি জানি না।তবে তোর ধারনাও নেই অধির কতোটা হিংস্র ভাবে তোকে শেষ করবে।এত কষ্ট করে মরার থেকে নিজে থেকেই শান্তিতে মরে যা।মরতে তো তোকে এমনিতেই হবে।সেটা তোর নিজের হাতে হোক,আমার হাতে হোক বা অধিরের হাতে।তাই বলছি অযথা সময় নষ্ট না করে নিজেই নিজেকে শুট কর।আমার হাতে টাইম নেই। তোর কাহিনি শেষ করে বিয়েতে এটেন্ড হতে হবে ।আফটার অল আমার ফ্রেন্ডের বিয়ে বলে কথা।নে তাড়াতাড়ি কর।
লোকটা জানে তার বাচার আশা ক্ষীণ ।দিদামের হাত থেকে বেচে গেলেও অধিরের হাত থেকে সে বাচবে না।অধিরের হিংস্রতা সম্পর্কেও তার ভাল রকম ধারনা আছে।লোকটা কাপা কাপা হাতে টেবিল থেকে রিভলবারটা তুলে নিয়ে নিজের মাথায় ঠেকালো।বুকটা ভিষন রকম কাপছে তার।সে মরে গেলেও তার খোজ নেওয়ার মত কেউ নেই পৃথিবীতে।লোকটা চোখ বন্ধ করে ট্রিগারে চাপ দিতেই মাথা ভেদ করে গুলি বেরিয়ে গেল।রক্তান্ত শরিরটা সাথে সাথেই ঢলে পড়লো মাটিতে।কয়েক সেকেন্ডেই মৃত্যুর দুয়ারে পাড়ি জমালো।দিদাম বাকা হেসে উঠে দাড়ালো চেয়ার থেকে।টেবিলের উপর থেকে ফোনটা তুলে নিয়ে কানে ধরে বলে উঠলো,
-অল ডান।অধির এবার কিছুতেই জানতে পারবে না এর পেছনে কে ছিল।
ফোনের ওপাশ থেকে শুধু হাসির আওয়াজ শোনা গেল।দিদাম ফোন কেটে কালো পোশাকে দাড়িয়ে থাকা লোকদের ইশারা করে বলল,
-বডিটাকে এমন কোনো এক জায়গায় ফেলে দেবে যেখানে অধিরের নজর অবধি পৌছাবে না।
-ইয়েস ম্যাম।
________________________
কালকের ঘটনার পর আজ কারোরই মন মেজাজ ভাল নেই।তাই খুব সোজা সাপটা ভাবেই বিয়েটা হল।যদিও নাতাশা আর সাহিল বিয়ের ডেইট পিছাতে চেয়েছিল কিন্তু অধির পিছাতে দেয় নি।তাই খুব সিম্পল ভাবেই বিয়ের কাজ শেষ হয়েছে।
রাত সাড়ে এগারোটার মত বাজে।ফুলে সাজানো বিছানায় বসে আছে নাতাশা।সারা রুম জুড়ে মিটমিট করে ক্যান্ডেল জ্বলছে।রক্ত লাল গোলাপের সুগন্ধি পাপড়িতে ঢেকে আছে ঘরের মেঝে।বিছানাতেও ছড়িয়ে আছে অসংখ্য পাপড়ি।ফুলের ঝাঝালো গন্ধে ঘুম পাচ্ছে নাতাশার।তবুও ঘুম ঘুম চোখে প্রিয় মানুষটার জন্যে অপেক্ষার প্রহর গুনছে।এতো বছর পর তাদের ভালবাসা আজ পূর্নতা পেল।নতুন একটা নাম পেল। যেই মানুষটাকে ঘিরে এতো পাগলামি এতো স্বপ্ন বোনা সেই মানুষটাকে আজ নিজের করে পেল।একান্ত নিজের করে।যার বুকে শুধু তারই রাজত্ব চলবে।সেখানে অন্যকারো প্রবেশের অনুমতি নেই।নাতাশা ঘুম ঘুম চোখে হাই তুলে ঘড়ির দিকে তাকালো।বারোটা বাজতে আর মাত্র দুমিনিট বাকি।নাতাশা ক্লান্ত চোখে দরজার দিকে তাকিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাড়ালো।কফি মেশিন থেকে এককাপ কফি বানিয়ে চুমুক দিল।প্রথম চুমুকেই ঘুমের রেশটা কেটে গেল নাতাশার।কফি শেষ করে মফি মগটা যথা স্থানে রেখে বিছানার দিকে তাকাতেই চোখে পড়ল বিছানার একপাশে এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকা বিয়ের ওড়নাটার দিকে।নাতাশার এবার ভিষন মেজাজ খারাপ হচ্ছে।এতো দেরি করার কোনো মানে হয়?ঘড়ির কাটা বারোটা বেজে সাতের ঘরে পৌছাতেই দরজা খুলে ভেতরে এলো সাহিল।নাতাশা একবার চোখ মুখ কুচকে অন্য দিকে চোখ ফেরালো।সাহিল দরজা বন্ধ করে ধিরে সুস্থে এগিয়ে এসে কাবার্ড থেকে টাউজার আর গেন্ঞ্জি বের করতে করতে বলল,
-এখনো চেঞ্জ করো নাই? এতো ভারি পোশাক পড়ে না থেকে চেন্জ্ঞ করে নিলেই পারতে।
নাতাশা বড় বড় পা ফেলে সাহিলের দিকে এগিয়ে আসতেই ভ্রু কুচকে তাকালো সাহিল।নাতাশা সাহিলের কলার চেপে ধরতেই ভড়কে গেলো খানিক। নাতাশা দাতে দাত চেপে বলতে লাগল,
-শালা,,,একেতো এতো দেরি করে রুমে আসলি।একটা সরি তো বললিই না উল্টো এসব বলছিস? আজ যে আমাদের বাসর রাত সে কথা কি ভুলে গেছিস বান্দর পোলা?
সাহিল বিষ্ময় নিয়ে তাকালো নাতাশার দিকে।বছর খানিক আগে মাঝে মধ্যেই নাতাশা এভাবে কথা বলতো।কিন্তু আজ আবার এভাবে তুই তুকারি করে কথা শুনতে হবে সেটা কল্পনাও করে নি সে।তার উপর আবার শালাও বলছে।
-আরে বাবা আমি কি ইচ্ছে করে দেরি করেছি নাকি? আদিই তো আটকে রেখেছিল আমায়।এতো রেগে যাওয়ার কি অাছে? তোমার বোধহয় খিদে পেয়েছে তাই এমন রেগে যাচ্ছো।নাকি পেট ব্যথা করছে?
নাতাশা কটমট চোখে তাকালো।বলল,
-দেখো একদম আমাকে রাগাবে না বলে দিলাম।এমনিতেই আমি ভিষন রেগে আছি তোমার উপর।এখন তাড়াতাড়ি সরি বলো আর কাহিনি শেষ করো।
-আমি কেন অযথা সরি বলতে যাবো শুনি? আমার আসতে লেইট হয়েছে এতে আমার কোনো দোষ নেই।দোষ যদি কারো থেকে থাকে তবে সেটা আদির।সরি বললে ও বলবে।আমি কেন বলব?
-তুমি সরি বলবে কি না বলো?
-আজকেও তোমার ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে? আমার বাবা ঝগড়া করার মুড একেবারেই নেই।এখন কথা না বাড়িয়ে চেন্জ্ঞ করে এসো।
-আমি কথা বাড়াচ্ছি? আমি ঝগড়া করছি?
-তা নয় তো কি?
-কথা তুমি বাড়াচ্ছো।যখন একটা সরিতেই সব ঠিক হয়ে যেতে পারে তাহলে বলছো না কেন?
-আচ্ছা বাবা সরি।সব দোষ আমার।হ্যাপি? এবার যাও চেঞ্জ করে এসো।
-চেন্জ্ঞ করবো মানে? এখনো তো মুখ দেখাইই হলো না।এসো এসো তাড়াতাড়ি মুখ দেখাই এর কাজ শুরু করো।ঘোমটা তুলে কি কি বলবে তার স্পিচ তৈরি করেছো তো?
নাতাশা ছোট ছোট পা ফেলে বিছানায় গিয়ে বসলো।বিয়ের ওড়নাটা তুলে মাথায় লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে ইশারাই সাহিলকে ডাকলো।বললো,
-এসো চলে এসো।আমি রেডি।
সাহিল ভ্রু কুচকে তাকাল।ছোট্ট দির্ঘশ্বাস ফেলে হাতের কাপড়গুলো সোফায় রেখে টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা ছোট্ট বক্স বের করে এগিয়ে গেল নাতাশার দিকে।নাতাশার সামনে দাড়িয়ে বক্সটা নাতাশার দিকে এগিয়ে দিতেই ঘোমটা উচু করে মুখ বের করে কটমট করে তাকাল নাতাশা।
-এটা কি হচ্ছে? মুভি দেখো নি?বাসর রাতে কেউ এভাবে মুখ দেখায় এর গিফট দেয়? প্রথমে ঘোমটা তুলতে হয় তার পর গিফট দিতে হয়।কিছুই জানো না দেখছি।নাও আবার নতুন করে শুরু করো।আমি আবারো ঘোমটা দিয়ে বসছি।এবার যেন ভুল না হয়।
নাতাশা ঘোমটা দিয়ে বসতেই দির্ঘশ্বাস ফেলল সাহিল।নাতাশার কথা মত ঘোমটা তুলতেই মিষ্টি করে হাসলো নাতাশা।হাত বাড়িয়ে বলল,
-আমার গিফট?
সাহিল নাতাশার হাতে বক্সটা ধরিয়ে দিতেই একগাল হাসলো নাতাশা।সাহিল কিছুক্ষন স্থির তাকিয়ে থেকে চেঞ্জ করার জন্যে ওয়াশরুমের দিকে আসতে নিলেই নাতাশার কথায় থমকে দাড়ালো।
-ও হ্যালো মিষ্টার।এদিকে আসো।
সাহিল এগিয়ে আসতেই নাতাশা বলে উঠলো,
-বিড়াল মারছো?
সাহিল কথাটা ঠিক বুঝলো না।বলল,
-কি?
-ওই যে মানুষে বলে না….?? শুরু থেকেই বউকে দাবিয়ে রাখো নয়তো মাথায় চড়ে বসবে।সেটাই করার চেষ্টা করছো তাই না?এমন কোনো সিন চলবে না এখানে বুঝেছো?চেষ্টাও করো না ওকে? নাও এবার পড়িয়ে দাও আংটিটা।
সাহিল এবার নাতাশার দিকে ঝুকে যেতেই মাথাটা পিছিয়ে নিলো নাতাশা।ভ্রু কুচকে সাহিলের দিকে তাকাতেই বাকা হাসলো সাহিল।দুষ্টু হেসে বললো,
-ভেবেছিলাম আজ তুমি অনেক টায়ার্ড তোমাকে আজ ছেড়ে দেই।কিন্তু তুমি তো দেখছি একদম ফুল ফমে আছো।ফুল এনার্জি।এখন তো ছাড়াছাড়ির কোনো নামই নেই। তো এবার বিড়ালটা মেরেই ফেলি কি বলো?
নাতাশা হঠাৎই ভিষন লজ্জা পেলো।এতোক্ষন তো সে মজা করছিল সাহিলের সাথে।সাহিল যে হঠাৎ করেই নিজের রুপে ফিরে আসবে কে জানতো।সাহিলের কথায় লজ্জায় রাঙা হতেই আরো একটু ঝুকে এলো সাহিল।সাহিলের নিশ্বাস নাকে মুখে আছড়ে পড়তেই নিশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো নাতাশার।লজ্জা আর ভাল লাগার মিশনে তৈরি অদ্ভুদ অনুভূতিতে মারা যেতে লাগলো ক্রমশ।
চলবে……..