শেষ বিকেলের আদর❤️পর্ব : ৩৮

0
4360

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পর্ব : ৩৮

🌼
সারা দিনের সব ঝামেলা আর কাজ সেরে অধির যখন রুমে এলো ঘড়িতে তখন বারোটার বেশি বাজে।হাতের কোর্টটাকে বিছানার উপর ছুঁড়ে দিয়ে অলস পায়ে সোফায় গিয়ে বসতেই ক্লান্তিতে ভেঙে আসতে লাগলো শরির।ঘামে ভেজা শার্টের উপরের দুটো বোতাম খুলে দিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিল।সোফায় মাথা ঠেকিয়ে সিলিংয়ের দিকে মুখ উঠিয়ে চোখ বুজে লম্বা শ্বাস নিতেই রোশনির শরিরের মিষ্টি গন্ধ নাকে এসে লাগলো।পুরো রুম জুড়েই রোশনির শরিরের মাতাল করা গন্ধ ছড়িয়ে আছে। এটা কেবল অধিরই অনুভব করতে পারে। এটা অনুভব করার অধিকার আর কাউকে দিতেও চায় না সে।অধিরের ভাবনার মাঝেই রোশনি এসে দাড়ালো সামনে।অধিরের ক্লান্ত মুখটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ভ্রু কুচকে প্রশ্ন ছুড়ল,

-ঠিক আছেন আপনি?

অধির চোখ মেলে তাকালো।রোশনির স্নিগ্ধ মুখের দিকে কিছুক্ষন নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে জবাব দিলো,

-ইয়া।

রোশনির ঠিক বিশ্বাস হলো না কথাটা।সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলল,

-এমন দেখাচ্ছে কেন আপানাকে? কিছু হয়েছে?

অধির রোশনির হাত ধরে টেনে পাশে বসালো।রোশনির চুলগুলো আলতো হাতে কানের পাশে গুজে দিতে দিতে বলল,

-ঠিক আছি সুইটহার্ট। ব্যস একটু টায়ার্ড লাগছে।এখনো ঘুমাও নি কেন?

-ঘুমিয়েছিলাম।কিছুক্ষন আগেই ঘুমটা ভেঙে গেলো।

অধির রোশনির গালে নিজের আঙুল চালাতে চালাতে বলল,

-ডিনার করেছো?

রোশনি ছোট্ট করে উত্তর দিলো,

-না

অধির ভ্রু কুচকে তাকালো।বলল,

-কেন? এতো রাত হয়ে গেছে আর তুমি না খেয়ে বসে আছো? শরির খারাপ হবে তো রে বাবা।নিজের একটু খেয়াল রাখতে শেখো সুইটহার্ট। মানছি জিবনটা তোমার কিন্তু তুমি জান তো আমারই।তুমি বসো আমি খাবার নিয়ে আসছি।

অধির উঠতে নিলেই রোশনি হাত চেপে ধরলো।অধির ভ্রু কুচকে তাকাতেই রোশনি বলল,

-আপনাকে আনতে হবে না।আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি নিয়ে আসছি।এমনিতেই আপনাকে ভিষন ক্লান্ত দেখাচ্ছে।

খাওয়া দাওয়ার পাট চুকিয়ে বিছানায় যেতে প্রায় দেড়টার মত বাজল।রোশনিকে বুকে টেনে নিতেই গুটি শুটি মেরে মিশে রইল অধিরের বুকে।কিছুক্ষনের মাঝে ঘুমিয়েও গেল।অধির রোশনির মাথায় ঠোট ছুঁইয়ে চোখ বুজতেই আজকের ঘটনাটা মনে পড়ে গেলো।

ফ্লাশব্যাক…..

দিদাম তখন রোশনিকে কিভাবে সরানো যায় সেটাই চিন্তা করছিল।মেয়েটা হঠাৎ করেই তার থেকে সবকিছু ছিনিয়ে নিচ্ছে।তার অধিরকে কেড়ে নিয়েছে।এটা সে কিছুতেই মেনে নেবে না।যে কোন মূল্যেই সে রোশনিকে অধিরের জিবন থেকে সরাতে চাই।দিদামের চিন্তার মাঝেই ফোন বেজে উঠল।স্ক্রীনে ভেসে ওঠা নাম্বারটা দেখে কিছুক্ষন একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে ফোন উঠালো।ওপাশ থেকে কিছু বলতেই দিদাম বলে উঠলো,

-তেমন কিছু না।ব্যস এটাই বুঝতে পারছি না ওই দুটাকার মেয়েটাকে কিভাবে শেষ করবো? অধির ওই মেয়েকে এমন ভাবে সিকিউর করে রেখেছে যে ওই মেয়ে অবধি পৌছানো ইমপসিবল।আমার মাথায় আসছে না কি করবো।তোমার কাছে কোনো প্ল্যান আছে?

ফোনের ওপাশের ব্যক্তি কিছু বলতেই দিদাম ভ্রু কুচকালো।বিরক্ত হয়ে বললো,

-আর ইউ ম্যাড? এতে অধিরের রেপুটেশন খারাপ হবে।।রোশনির কিছুই হবে না।আর অধির যদি একটা বার জানতে পারে এটার পেছনে আমরা আছি তাহলে আমাদের শেষ করতে ওর এক সেকেন্ডও লাগবে না।

ওপাশ আরো কিছু বলতেই দিদাম বলে উঠলো,

-তুমি সিওর এটা করলে অধিরের থেকে রোশনির দুরত্ব বেড়ে যাবে?

ওপাশের ব্যক্তি কিছু বলতেই দিদামের ঠোটের কোনে হাসি ফুটলো।

-মানে এমনটা হলে রোশনি অধিরকে ভুল বুঝবে।এটা অবশ্য ঠিকই বলেছো।আমি যতদুর রোশনিকে চিনি ও অধিরের এই কাজটা কিছুতেই মেনে নেবে না।ট্রিপিক্যাল বউদের মত ভুল বুঝবেই।দুরত্ব বাড়াবে।রোশনির দূরে সরে যাওয়া মানে অধির ভেঙে পড়বে।আর সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগাতে হবে।ওই সুযোগে অধিরের কাছে গিয়ে ওকে আমার বশ করে নিবো।আর একবার অধির আমাদের ফাঁদে পা দিলে ওই দু পয়সার মেয়েকে সারা জিবনের মত অধিরের জিবন থেকে উপড়ে ফেলবো।আই থিংক দ্যাটস এ গুড আইডিয়া।এখন প্ল্যানটা কাজ করলেই হয়।

আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন কাটলো দিদাম।ঠোটে শয়তানি হাসি ফুটিয়ে বেলকোনিতে চলে গেল।

—–

-ওই কুত্তার বাচ্চাকে পাওয়া গেছে?

অধিরের ছোট্ট প্রশ্নটাই খানিক চিন্তিত দেখালো শাহিনকে।শাহিনের প্রতিটা কার্যকলাপ সচেতন চোখে পর্যবেক্ষণ করলো অধির।কাচের টেবিলের উপর ওয়ালপেপারটা ঘোরাতে ঘোরাতে চোয়াল শক্ত করে বলল,

-আমি না শোনার মুডে নেই শাহিন।অলরেডি একটা দিন কেটে গেছে। আমি ইমিডিয়েট ওই শুয়ো* বাচ্চাকে আমার সামনে দেখতে চাই।এট এনি কস্ট।বুঝেছো?

অধিরকে রেগে যেতে খানিক নড়ে চড়ে দাড়ালো শাহিন।শির দাড়া খাড়া করে বলে উঠল,

-আমরা ওকে খুজে তো পেয়েছি স্যার বাট ও বেঁচে নেই।

অধির খানিক চিল্লিয়ে বলে উঠল,

-হোয়াট?

-ইয়েস স্যার।হি ওয়াজ ডেড।ঢাকার বাইরে বডি পাওয়া গেছে।কেউ বা কারা ওর মাথায় গুলি করেছে।এরপর আমরা যাতে খুজে না পায় সে জন্য বডিটাকে ঢাকার বাইরে ফেলে এসেছিল।এখনো অবধি জানা যায় নি এসবের পেছনে কে বা কারা আছে।তবে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা করি খুব শীঘ্রই জানতে পেরে যাবো।

শাহিনের কথায় ভ্রু জোড়া খানিক কুচকে এলো অধিরের।চিন্তাটাও বাড়লো বোধ হয়।শাহিনকে কেবিন থেকে যেতে বলে চেয়ারে গা এলিয়ে দিলো।চেয়ারে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে পেপার ওয়েটটা ঘোরাতে ঘোরাতে ভাবতে লাগলো এসবের পেছনে কে থাকতে পারে।কিছুক্ষন ভেবেও তেমন কাউকে পেল না।তবে দিদামের প্রতি সন্দেহ হচ্ছে খানিক।কোথাও এসবের পেছনে দিদাম নেই তো? রোশনিকে যে সে একেবারেই সহ্য করতে পারে না সে ব্যাপারে নিশ্চিত অধির।কিন্তু দিদাম কি কাউকে খুন করতে পারে?অধিরের মাথা কাজ করছে না।তবে দিদামের প্রতি সন্দেহটা থেকেই যাচ্ছে।দোটানায় মাথাটা যখন ভোঁতা হয়ে আসছিল তখনই ইন্টারকমে ফোন এলো অধিরের।টেলিফোন তুলে কানে ধরতেই রিসিপশনের মেয়েটি বলে উঠলো,

-স্যার একটা মেয়ে এসেছে। আপনার সাথে দেখা করতে চাচ্ছে।

-আমি এখন বিজি আছি মিস লারা।ওনাকে বলো ওয়েট করতে নয়তো কাল আসতে।

-সরি স্যার বাট উনি বলছেন ইটস আর্জেন্ট।ওনার জিবন মরন নাকি জড়িয়ে আছে।

অধির দির্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

-ওকে। পাঠিয়ে দাও।

অধিরের কপাল কুচকালো খানিক। তবে সেটা ওই আগুন্তক মেয়েটির জন্যে না রোশনির জন্যে।রোশনিকে মারতে চাই কে সেটাই মাথায় আসছে না তার।রোশনিকে মেরে কার কি লাভ হতে পারে? অধিরের চিন্তার মাঝেই কেবিনের দরজায় কেউ নক করলো।অধির চিন্তার জগৎ থেকে বেরিয়ে আগুন্তককে ভেতরে আসতে বলতেই জিন্স শার্ট পড়া একটা মেয়ে ভেতরে এলো।টেবিলের সামনে দাড়াতেই চোখ মুখ কুচকে তাকালো অধির।ভ্রু জোড়া কুচকে রেখেই বললো,

-টেইক ইউর সিট।

মেয়েটি মুচকি হেসে চেয়ার টেনে বসলো।মেয়েটাকে কিছুক্ষন সচেতন চোখে পর্যবেক্ষণ করে কপাল কুচকালো অধির।সোজা হয়ে বসে প্রশ্ন ছুঁড়লো,

-হু আর ইউ?এখানে আসার কারন?মিস লারা বললেন এখানে আসাটা আপনার জন্যে ভিষন ইমপর্টেন্ট।জিবন মরনের ব্যাপার টাইপ কিছু বলছিল।সো জানতে পারি বিষয়টা কি?

অধিরের প্রশ্ন শুনে হাসলো মেয়েটি।অধিরের দিকে অন্যরকম ভাবে তাকাতেই অধিরের কুচকানো ভ্রু আরো খানিকটা কুচকে গেলো।মেয়েটার হাবভাব খুব একটা সুবিধার নয়।কথায় কথায় ঠোটের কোনের হাসিটাও বেশ সন্দেহজনক। মেয়েটাকে আরো কিছুটা খেয়াল করে দেখতেই চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো অধিরের।চোয়াশ শক্ত করে শান্ত গলায় বলল,

-কি উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে এসেছো? আমি জানি তুমি এখানে এমনি এমনি আসো নি। এখন বলো উদ্দেশ্যটা কি?

মেয়েটা এবারো হাসলো।টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস তুলে নিয়ে গলা ভেজালো।অধির সবটা সূক্ষ্ম ভাবে শুধু দেখে গেলো।অধিরের দিকে আরো একবার লোভাতুর চোখে তাকিয়ে বলে উঠল,

-ইউ আর সো হট মিষ্টার অধির চৌধুরি।একদম খেয়ে নিতে ইচ্ছে করছে।বাই দা ওয়ে আপনার স্মার্টনেস দেখে আমি ইমপ্রেসড। একবার দেখেই বুঝে গেলেন আমি কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছি? ওয়াও… ইটস আনবিলিভেবল।আপনার মত সুপুরুষ খুব কমই দেখেছি আমি।

অধিরের চোয়াল শক্ত হয়ে এল।সামনের দিকে ঝুকে টেবিলের উপর দু হাত রেখে রাগি গলায় বলে উঠল,

-তোমার এসব ফালতু কথা শোনার টাইম আমার নেই।কি উদ্দেশ্যে এসেছো সোজা সোজা বলে দাও।

-আই নো অধির চৌধুরির সময়ের মূল্য অনেক।তবে আমার উদ্দেশ্য জানতে হলে তো আপনাকে সময় দিতেই হবে মিষ্টার চৌধুরি।

অধিরকে রেগে যেতে দেখে মুচকি হাসলো মেয়েটা।চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে অধিরের কাছে এগিয়ে যেতেই ভ্রু কুচকে তাকালো অধির।মেয়েটা ডান হাতে অধিরের গাল ছুঁয়ে দিয়ে শয়তানি হেসে নিজের শরিরের শার্টের উপরের বাটন খুলতে শুরু করলো।দু-তিনটে বাটন খুলতেই অধির চোয়াল শক্ত করে তাকালো।নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে বলল,

-হোয়াট আর ইউ ডুয়িং? ইউ রাবিশ গার্ল।আর ইউ…

অধিরকে কথা শেষ করতে না দিয়েই মেয়েটা বাংলা সিনেমার মত নিজের শার্ট ছিঁড়তে ছিঁড়তে বলে উঠল,

-রিল্যাক্স মিষ্টার চৌধুরি।এতো হাইপার হওয়ার কি আছে? চিল ম্যান।আমার উদ্দেশ্য জানতে চাচ্ছিলেন না?এখুনি বুঝে যাবেন আমার উদ্দেশ্য কি।

মেয়েটা শয়তানি হেসে পনিটেইল করা চুলগুলো খুলে এলোমেলো করলো খানিক।ঠোটের লিপস্টিক আর কাজলটাকে হালকা হাতে লেপ্টে দিয়ে অধিরের দিকে বাকা হেসে তাকাতেই দেখলো অধির ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা আবারো শয়তানি হাসলো।অধিরের দিকে আরেক পলক তাকিয়ে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলো চিল্লাতে চিল্লাতে।মুখটাকে দুঃখী দুঃখী করে কান্নায় ভেঙে পড়ে চিল্লাতে চিল্লাতে বলতে লাগল,

-প্লিজ সামবডি হেল্প মি।প্লিজ হেল্প মি।প্লিজ কেউ আমাকে বাঁচান ওনার থেকে।প্লিক হেল্প মি।

মেয়েটার চিৎকারে ততোক্ষণে সবাই এসে গেছে।ছেড়া শার্ট,এলোমেলো চুল আর লেপ্টে যাওয়া লিপস্টিক আর কাজলে কাদতে থাকা মেয়েটাকে দেখে সবাই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।সাহিলও এসে গেছে ততোক্ষণে।মেয়েটাকে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখেই কপালে তার দু তিনটে চিন্তার ভাজ পড়ল।মেয়েটাকে কিছু বলবে তার আগেই দরজা ঠেলে বেরিয়ে এলো অধির।শান্ত চোখে মেয়েটাকে দেখে পকেটে হাত ঢুকিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালো।অধিরকে দেখেই ভয়ার্ত মুখে তাকিয়ে আবারো কাদতে শুরু করলো মেয়েটা।বললো,

-প্লিজ আমাকে বাচান।প্লিজ ওনার হাত থেকে আমার সম্মান বাঁচান। আমায় সাহায্য করুন।

মেয়েটার কথায় আর বিধ্বস্ত চেহারায় সবাই যেন বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেল।অধির যে এমন একটা কাজ করতে পারে সেটা কেউ কখনো কল্পনাতেও আনে নি।অধিরের প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে।এই রাগি মুডি ছেলেটা আর যাই হোক কোনো মেয়ের সাথে এমন জঘন্য কাজ কিছুতেই করবে না।কিন্তু মেয়েটার বিধ্বস্ত চেহারা যে অন্য কিছু বলছে।চোখের সামনে জলজ্যান্ত প্রমান থাকতেও কি তাদের অধিরের প্রতি অবিশ্বাস করা উচিত নয়?অধির তখনও খুব স্বাভাবিক ভাবে দাড়িয়ে আছে।সাহিল অধিরের পাশে এসে দাড়াল।অধিরের শান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত গলায় বলল,

-হোয়াট ইট দিস অধির? ইটস টোটালি রাবিশ।মেয়েটা কে? কি বলছে এসব?

অধির আগের মতোই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে দাড়িয়ে রইলো।মেয়েটা আর ঠিক কি কি করসে চায় সেটাই দেখতে চাই সে।অধিরকে চুপ থাকতে দেখে মেয়েটা কাদতে কাদতে বলে উঠল,

-আমি বলছি।আমার নাম তনিমা।আমি এখানে ওনার সাথে দেখা করতে এসেছিলাম কারন আমার একটা চাকরির ভিষন প্রয়োজন ছিল।কিন্তু উনি বললেন এখন নিয়োগ দেওয়ার মত কোনো পদ খালি নেই।চাকরিটা তিনি দিতে পারবেন না।আমি তখন আমার প্রবলেমটা ওনাকে বলি। আমার বাবা অসুস্থ তার ইমিডিয়েট অপারেশন করাতে হবে আমার কিছু টাকা চাই…বিনিময়ে আমি সব কাজ করতে রাজি আছি।সেকথা শুনেই উনি আমাকে তার সাথে রাত কাটানোর প্রপোজাল দিলেন।আমি যখন সেই জঘন্য প্রপোজালে রাজি হলাম না তখনই উনি জোর জবরদস্তি করতে শুরু করলেন আমার সাথে।আমি কোনো রকমে পালিয়ে এসেছি।প্লিজ আপনারা আমাকে সাহায্য করুন।রক্ষা করুন।

কথাগুলো বলেই আবার কান্নায় ভেঙে পড়লো।সবার যেন কথাগুলো বিশ্বাসই হচ্ছে না।অধির যে কোনো দিন কোনো মেয়ের অসহায়ের সুযোগ নেবে সেকথা কেউ ভাবতেই পারছে না।কিন্তু মেয়েটা তো আর তার সম্মান নিয়ে মিথ্যে কথা বলবে না।

অধিরের ভাবনার মাঝেই নড়ে চড়ে উঠল রোশনি।ঘুম ঘুম চোখে অধিরের মুখের দিকে তাকাতেই দেখল অধিরকে বেশ খানিকটা চিন্তিত দেখাচ্ছে।রোশনি হাই তুলে বলে উঠল,

-এখনো ঘুমোন নি?

অধিরের ভাবনার সুতো কাটলো।রোশনির ঘুম জড়ানো কন্ঠটাকে খেয়ে নেওয়ার প্রবল ইচ্ছে জাগছে মনে।মেয়েটা কি বোঝে না তার এই কন্ঠে বার বার খুন হয় সে।অধির রোশনির কপালে ঠোট ছোঁয়াতেই আবেশে চোখ বুজে নিলো রোশনি।অধিরের দ্রুত গতিতে বয়ে চলা হার্ট বির্টের প্রতিটা শব্দ খুব মনোযোগ দিয়ে শুনে আবারো চোখ মেলে তাকালো।বলল,

-ঘুমান নি কেন?আপনাকে কেমন চিন্তিত দেখাচ্ছে।বলুন না কি হয়েছে।

অধির হাতের বাধন আরো একটু শক্ত করে বলে উঠল,

-চিন্তা হচ্ছে সুইটহার্ট। তোমাকে নিয়ে ভিষন চিন্তা হচ্ছে।

-আমাকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে?

-তোমাকে কে মারতে চাই? তোমাকে মেরে তারই বা কি লাভ হতে পারে? কিছু বুঝতে পারছি না।আজ প্রথম বার আমি ভয় পাচ্ছি সুইটহার্ট। তোমাকে হারানোর ভয়ে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি।তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি বাচবোনা সুইটহার্ট।

রোশনি অধিরের সাথে নিজেকে আরো একটু মিশিয়ে নিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগলো,

“আপনি থাকতে আমার কিছু হবে না আমি জানি।আপনি আমাকে সব বিপদ থেকে আগলে রাখবেন এটাও জানি।আপনার উপর আমার পুরো বিশ্বাস আছে।আর আজ আপনি কেন এতো চিন্তিত সেটাও জানি আমি।নাতাশা আপু আমায় সব বলেছে।আমি জানি আপনি কখনোই ওরকম জঘন্য কাজটা করতে পারেন না।আপনি এতোটাও খারাপ নন মিষ্টার চৌধুরি”

অধির দির্ঘশ্বাস ফেলে রোশনিকে বুকে জড়িয়ে চোখ বুজলো।অধির বুঝতে পারছে রোশনি তার প্রতি দূর্বল হতে শুরু করেছে।ধিরে ধিরে মেনে নিচ্ছে তাকে।নিজে থেকেই তার কাছে আসছে।অধির অপেক্ষায় আছে সেদিনটার যেদিন রোশনি তাকে তার ভালবাসার কথা বলবে।অধির চোখ বুজে লম্বা শ্বাস টেনে তখনকার কথা ভাবতে লাগল।

মেয়েটা যখন কেদে কেটে সবার সামনে অধিরকে খারাপ বানাতে ব্যস্ত ঠিক তখনই নাতাশা গিয়ে মেয়েটার গালে কষে একটা থাপ্পড় মারলো।মেয়েটা গালে হাত হতভম্ব চোখে তাকালো নাতাশার দিকে।বাকি সবারও একই অবস্থা।নাতাশা আরো একটা থাপ্পর মারতেই সাহিল এসে আটকালো ওকে।নাতাশা সাহিলের থেকে ছাড়া পাবার জন্যে মোচড়া মুচড়ি করতে করতে রাগি গলায় বলল,

-অসভ্য মেয়ে… তুই বানিয়ে বানিয়ে একটা মনগড়া গল্প বলবি আর আমরা সবাই সেটা বিশ্বাস করে নেবো?লজ্জা করে না নিজের ইজ্জত নিয়ে তামাশা করতে?তোকে আজ আমি মেরেই ফেলবো।তোর সাহস কি করে হয় অধিরের নামে মিথ্যে অপবাদ দেওয়ার? সাহিল ছাড়ো আমাকে।এই ফাজিল মেয়েটাকে উচিত শিক্ষা দিতেই হবে।ছাড়ো আমায়।

-রিল্যাক্স নাতাশা।এতো হাইপার হওয়ার মত কিছু হয় নি।আমরা জানি মেয়েটা মিথ্যে বলছে।রিল্যাক্স আমি দেখছি ব্যাপারটা।তুমি প্লিজ শান্ত হয়ে যাও।জাস্ট রিল্যাক্স ওকে?

সাহিলের কথায় নাতাশা শান্ত হল না।সাহিল অসহায় চোখে অধিরের দিকে তাকাতেই অধির চোখের ইশারাই শান্ত হতে বললো নাতাশাকে।এবার নাতাশা কিছুটা শান্ত হল।কটমট চোখে মেয়েটার দিকে তাকাতেই শুকনো ঢোক গিলল মেয়েটা।অধির চোয়াল শক্ত করে মেয়েটার সামনে দাড়াতেই ভয়ে কেপে উঠলো তনিমা মেয়েটা।বাম হাতে কপালের ঘামটুকু মুছে নিয়ে ভয়ে ভয়ে তাকাতেই দেখলো কঠিন চোখে তাকিয়ে আছে অধির।অধির বাম হাতে দাড়ি ঘষে ভ্রু উচিয়ে বলল,

-অধির চৌধুরির সাথে খেলতে এসেছো? অধির চৌধুরি সম্পর্কে কোনো ধারনা আছে তোমার? আমি কে না জেনেই আমার সাথে খেলতে চলে এলে?আমাকে বদনাম করতে এসেছো অথচ একবার দেখে নেবে না কেবিনে কোথাও সিসিটিভি ক্যামেরা আছে কি না?

অধিরের কথায় ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেল মেয়েটা।শুকনো ঢোক গিলে অধিরের দিকে তাকাতেই দেখলো অধিরের ঠোটে বাকা হাসি।

-অধির চৌধুরির সাথে খেলতে হলে মষ্তিষ্ক বুলেটের থেকেও বেশি তেজ হওয়া চাই।আমি সার্কাসের সিংহ নই। আমি জঙ্গলের হিংস্র সিংহ।আমার সাথে লাগতে এলে জিবন নিয়ে ফিরে যেতে পারবে না।নিশ্চয় বুঝে গেছো মি কি?এবার কোনো নাটক ছাড়া বলো কে পাঠিয়েছে তোমায়?

মেয়েটা ভয়ে ভয়ে তাকালো।তুতলে যাওয়া গলায় কোনো রকমে বলে উঠল,

-কেউ পাঠায় নি আমায়।

-আমি জানতে চেয়েছি কে পাঠিয়েছে তোমায় উইথ আউট এ্যানি ড্রামা।টেল মি স্টুপিড।

অধিরের উচু ধমকে ভয়ে কেপে উঠলো মেয়েটা।কথা বলার শক্তি টুকুও যেন লোপ পেলো কোথাও।কোনো মতে কাপতে কাপতে বলল,

-বিশ্বাস করুন স্যার আমি জানি না। আমার সাথে তার শুধু ফোনে টেক্সট হয়েছে।টেক্সটের মাধ্যমেই কেউ বলেছিল কাজটা করতে।বলেছিল কাজটা করলে আমাকে অনেক টাকা দেবে।টাকার লোভে পড়ে আমি এমনটা করতে বাধ্য হয়েছি স্যার।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন।আমি আর কখনো এমন কাজ করবো না।প্লিজ স্যার এবারের মত ছেড়ে দিন।

অধির চোয়াল শক্ত করে তাকাল।বলল,

-যে কাজটা করতে বলেছিল তার নাম্বারটা দাও।আর এখুনি আমার সামনে থেকে সরে যাও।নয়তো বেশিক্ষন নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না আমি।মেয়েদের গায়ে হাত তুলি না তাই এই যাত্রায় বেচে গেলে।নয়তো প্রান নিয়ে ফিরতে পারতে না।পরের বার এমন করলে আমি ভুলে যাবো তুমি একটা মেয়ে।

-সরি স্যার।আর এমনটা হবে না।এই যে নাম্বার।

মেয়েটা অধিরকে নাম্বারটা দিয়েই এক প্রকার দৌড়ে চলে গেলো।অধির সবাইকে কাজে যেতে বলতেই সবাই যে যার কাজে চলে গেল।অধির সাহিলের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

-নাম্বারটাই ফোন দিয়ে দেখ।

সাহিল মাথা ঝাকিয়ে ফোন লাগাল।তবে খুব একটা লাভ হলো না।নাম্বারটা সুইচড অফ দেখাচ্ছে।

-সুইচড অফ দেখাচ্ছে।

-নাম্বারটা শাহিনের কাছে দে।আর বলে দে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব এই নাম্বারের মালিককে যেন খুজে বের করে এট এ্যানি কস্ট।আমিও দেখি এর পেছনে ঠিক কার হাত আছে।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here