শেষ বিকেলের আদর❤️পর্ব : ৩৯

0
4367

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পর্ব : ৩৯

কালো চাদরে মোড়া বিছানায় পা ঝুলিয়ে থমথমে মুখে বসে আছে অধির।চোখে মুখে অসহায়ত্বের চিহ্ন স্পষ্ট।বাইরের তখন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।খোলা জানালার পর্দা ভেদ করে আসা ঠান্ডা বাতাসে শরির ঠান্ডা হয়ে এলেও ঠান্ডা হচ্ছে না হৃদয়।বুকের ভেতর হঠাৎ হঠাৎই ভিষন জ্বালা করে উঠছে।তবে সেদিকে রোশনির খুব একটা খেয়াল নেই।সে ব্যাগ গুছাতে ব্যস্ত।যেন এই মুহূর্তে এটা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো কিছুতে তার মনোযোগ দেওয়া একেবারেই উচিত নয়।অধির বলে যে একটা মানুষ তার সামনে বসে আছে সেটাও যেন তার চোখে পড়ছে না।রোশনির কার্যকলাপ ভাল করে দেখে নিয়ে নড়ে চড়ে বসলো অধির।বাম হাতে চুল গুলোকে পেছনের দিকে ঠেলে দিয়ে তৃতীয় বারের মত বলল,

-না গেলে হয় না সুইটহার্ট?

আগের ন্যায় এবারও বেশ করুন শুনালো কথাটা।পূ্র্বের মত এবারও জবাব দিলো না রোশনি।নিজের ব্যাগ গুছাতেই ব্যস্ত সে।রোশরির থেকে তৃতীয় বারেও কোনো উত্তর না পেয়ে অধির বুঝলো রোশনি যাবেই।অধির দির্ঘশ্বাস ফেলল।বউটা ঠিক তার মতই জেদি।দিন দিন তার মতই একরোখা হয়ে উঠছে।একবার যখন যাবে বলেছে তখন দুনিয়া উল্টে গেলেও তার যাওয়া বন্ধ হবে না।রোশনি থাকবে না কথাটা মাথায় আসতেই চারপাশ কেমন বিষাক্ত লাগতে লাগলো অধিরের।রুমের ঠান্ডা পরিবেশকেও বিষের মত মনে হচ্ছে।মেয়েটা ছাড়া থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়।এখনই কেমন দম বন্ধ লাগছে অধিরের।অফিসে কাজের প্রেশারটা কম থাকলে সে নিজেও যেত রোশনির সাথে।অধিরের ভেতর থেকে দির্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসল।ঠান্ডা রুমটা হঠাৎই বিষাক্ত কিছু দির্ঘশ্বাসে ভরে উঠলো।অধির রুম ছেড়ে বারান্দায় চলে যেতেই গোপনে দির্ঘশ্বাস ফেললো রোশনি।আড়চোখে অধিরের ক্লান্ত মুখটাকে দেখার চেষ্টা করেও দেখতে পেল না।অধির পেছন ফিরে দাড়িয়ে আছে।রেলিং এ হাত লাগিয়ে মেঘে ঢাকা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।এতোক্ষনে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিটাও থেমে গেছে।তবে মাঝে মাঝেই প্রচন্ড ঝংকারে কেঁপে উঠছে আকাশ।সেই সাথে কাঁপছে অধিরের বুকের ভেতর।রোশনি চোখ ফিরিয়ে নিল।কয়েকদিন ধরে মনের ভেতর জমতে থাকা প্রশ্নের উত্তর পেতেই এই দূরত্ব।অনেক তো হল।এবার সে জানতে চাই। জমে থাকা সব প্রশ্নকে ঝেড়ে ফেলে নতুন করে শুরু করতে চাই।রোশনি ব্যাগ গুছানো শেষ করে লাইট অফ করে বিছানায় গিয়ে বসলো।জানালা দিয়ে একবার উঁকি দিলো অধিরের দিকে।অধির আগের মতই দাড়িয়ে আছে।রোশনি বুঝতে পারছে অধিরের মন খারাপ, কষ্ট হচ্ছে।অদ্ভুদভাবে রোশনিরও কেন জানি খারাপ লাগছে।বুকের ভেতর কোথাও একটা খালি খালি মনে হচ্ছে।রোশনি চোখ বুজে শ্বাস নিলো।সাথে সাথেই জয়ের বলা কথাগুলো কানে বাজতে লাগল।

জয় যেদিন চৌধুরি ম্যানশন ছেড়ে চলে যাচ্ছিলো ঠিক তার আগের রাতে রোশনির সামনা সামনি হয় জয়।জয়কে দেখে চোখ নামিয়ে নেয় রোশনি।অপরাধবোধ আর নিজের প্রতি বিতৃষ্ণায় নিজেকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব মনে হচ্ছিলো তার।জয়ের ঠোটের কোনে তখন এক চিলতে শুকনো হাসি।নিরবতা কাটিয়ে জয়ই মুখ খুলল।বলল,

-এভাবে চোখ নামিয়ে নিও না প্লিজ।তোমাকে এভাবে দেখতে আমার ভাল লাগে না।

রোশনি চোখ তুলে তাকালো।জয়ের নিষ্পাপ চোখের দিকে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে না পেরে আবারো চোখ নামিয়ে নিলো।নিচু গলায় বলল,

-তোমার চোখে চোখ রাখার মত ক্ষমতা আমার আর নেই জয়।সেই অধিকারও হয়ত হারিয়েছি আমি।

-বন্ধুর চোখে চোখ রাখতে বুঝি অধিকার লাগে? যদি অধিকার লেগেও থাকে তবে সেই অধিকার এখনো তোমার নামেই আছে রোশনি।এটা আমি অন্য কাউকে দেবো না।

রোশনি এক পলক জয়কে দেখে নিয়ে আবারো মাথা নিচু করলো।কিছুক্ষন নিরব থেকে আবারো মুখ খুলল জয়।উপচে পড়া মায়া নিয়ে বলল,

-কাল চলে যাচ্ছি।যাওয়ার আগে তোমার কাছে একটা জিনিস চাইবো। দেবে?

রোশনি অসহায় মুখ করে তাকালো।মিইয়ে যাওযা গলায় বলল,

-তোমার দেওয়ার মত আমার কাছে কিছুই নেই জয়।কেন আমার অপরাধবোধটাকে বাড়াচ্ছো?

-আমি যেটা চাই সেটা কেবল তোমার কাছেই আছে রোশনি।বলো দেবে?

-কি চাই?

-আমাদের বন্ধুত্বটাকে।আগের সেই বন্ধু রোশনিকে চাই আমার।যে আমার সাথে মাথা নিচু করে নয় মাথা উচু করে কথা বলতো।সেই বন্ধটাকে ফিরে পেতে চাই যে বিনা দ্বিধায় তার সব কষ্টের কথা আমাকে বলতো।ফিরিয়ে দাও প্লিজ।আমার ভালবাসা চাই না।আমি শুধু আমার সেই পুরোনো বন্ধুটাকে ফিরে পেতে চাই।ভালবাসা না পেলেও বেঁচে থাকতে পারবো কিন্তু তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারছি না আমি।তোমার এই অসহায় মুখটাও সহ্য করতে পারছি না আমি।সবকিছু ভুলে আবারো আগের মত হয়ে যাও প্লিজ।আমার সেই পুরোনো বন্ধুটাকে ফিরিয়ে দাও।

রোশনি আর নিজেকে আটকাতে পারলো না।অবাধ্য নোনাজল চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ল।জয় হাত বাড়িয়ে দিতেই দূর্বল হাতে হাত মেলালো রোশনি।রোশনির ততোক্ষণে হিচকি উঠে গেছে।জয় বাম হাতের আঙুল দিয়ে নিজের চোখের পানিটুকু মুছে বলে উঠল,

-তোমাকে এখন ঠিক পেত্নীর মত দেখাচ্ছে রোশনি।কমপ্লিটলি পেত্নী।তোমার কান্নাটা ভিষনই বাজে। আমি বাদে অন্য কেউ থাকলে নিশ্চত সে অজ্ঞান টজ্ঞান হয়ে যেত।আমি একটু বেশি সাহসি কিনা তাই তোমার মত পেত্নীর সাথে বন্ধুত্ব করেছি।আর এখনো অবধি নিজের ভারসাম্য বজায় রেখে অজ্ঞানও হয় নি।আই এম প্রাউড অফ মাইসেল্ফ।এজ এ ফ্রেন্ড তোমারও উচিত আমাকে নিয়ে প্রাউড ফিল করা।

কান্নার মাঝেই হেসে ফেলল রোশনি।জয়ের বাহুতে দু চারটে কিল ঘুষি দিতেই হাসলো জয়।বাহুতে হাত ঘষতে ঘষতে বলল,

-বাপরে পেত্নীর গায়ে এতো শক্তি?

জয় আরো কিছু বলবে তার আগেই চোখ রাঙিয়ে তাকালো রোশনি।জয় মুখে আঙুল দিল।রোশনি জয়ের দিকে তাকাতেই দেখল জয় মুখে আঙুল দিয়ে মিটিমিটি হাসছে।রোশনি আবারো একটা কিল বসালো জয়ের বাহুতে।এরপর দুজনেই একসাথে ফিক করে হেসে উঠল।রোশনি হাসতে হাসতেই চোখের পানিটুকু মুছল।রোশনির মুখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎই সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে উঠল জয়,

-অধির তোমাকে সত্যিই ভিষন ভালবাসে রোশনি।মেনে নাও ওকে।আমি জানি তুমি আমার জন্যে এগিয়ে যেতে পারছো না।তুমি ভাবছো তুমি আমাকে ঠকিয়েছো।এমনটা নয় রোশনি।তুমি আমাকে ঠকাও নি।ব্যস আমার কপালে তুমি ছিলে না তাই তোমাকে পাওয়া হল না।

কিছুক্ষন থেমে আবারো বলতে শুরু করলো জয়,

-অধির আর আমার ভালবাসার মধ্যে অদ্ভুদ এক পার্থক্য আছে জানো।ওর ভালবাসায় পাগলামো আছে আর আমার ভালবাসায় অপেক্ষা।অধিরের পাগলাটে ভালবাসার কাছে আমার ভালবাসাটা ফিকে হয়ে গেছে।তাই বলে আমার ভালবাসা হেরে যায় নি।একটা কথা কি জানো? তুমি আমাকে কোনো দিন প্রেমিক নজরে দেখোই নি।তুমি আমাকে শুধু একটা বন্ধু হিসেবে দেখেছো।আর সেই বন্ধুত্বটাকেই ভুল করে ভালবাসা ভেবে নিয়েছো।আমার তোমার সম্পর্ক বন্ধুত্ব পর্যন্তই।আমিও বন্ধুত্বটাকে ভালবাসায় পাল্টাতে গেছিলাম। কিন্তু পাল্টাতে পারি নি।এটা আমার ব্যর্থতা। সিদ্ধান্তটাই হয়তো ভুল ছিল।কখনো কখনো বন্ধুত্ব ভালোবাসায় পাল্টে যায়।কিন্তু আমার ভালবাসা বন্ধুত্বেই সীমাবদ্ধ। আমি আমার ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি।নিয়তির সাথে আর বোঝাপড়া আমি চাই না। বিশ্বাস করো এরপর আর কোনো দিন ব্যর্থ প্রেমিক হয়ে তোমার কাছে ভালবাসার অধিকার নিয়ে দাড়াবো না।বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে হয়ত হুটহাট চলে আসবো। ট্রাস্ট মি আমার ভালবাসাটা সব সময় বন্ধুত্বেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

রোশনি সবটা শুনেও কিছু বললো না।জয় আবারো বলল,

-ভালো থেকো রোশনি।এন্ড থ্যাংক ইউ আমার আগের বন্ধুটাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যে।অধিরের সাথে এগিয়ে যাও।একটা কথা মনে রাখবে।লাভ ডাজেন্ট নিড টু বি পার্ফেক্ট।ইট জাস্ট নিড’স টু বি ট্রু।অধিরের থেকে বেশি ভাল তোমায় কেউ বাসতে পারবে না রোশনি।হয়তো আমিও না।

জয় চলে যেতে গিয়েও থেমে গেল।বলল,

-অধিরকে ভালবাসো?

জয়ের কথায় কেঁপে উঠলো রোশনি।শরিরের প্রতিটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ শির শির করে উঠল।কখনো তো সো ভেবে দেখেনি সে অধিরকে ভালবাসে কিনা।ভাবার প্রয়োজনও পড়ে নি।রোশনিকে চুপ থাকতে দেখে জয় হেসে বলে উঠল,

-তুমি অধিরকে ভালবেসে ফেলেছো রোশনি।

রোশনি অনুভূতি শূন্য চোখে তাকালো।বলল,

-আমি অধিরকে ভালবাসি?

-হ্যা। তুমি ওকে ভালবেসে ফেলেছো।তুমি না চাইতেও ওর ভালবাসায় আটকে গেছো।

-না এটা সত্যি নয়।আমি অধিরকে ভালবাসি না।তুমি ভুল জানো।ভুল বুঝছো তুমি।

-আমি ভুল বুঝছি না রোশনি।বিশ্বাস না হলে পরিক্ষা করে দেখো।

-পরিক্ষা?

-হ্যা।

-কেমন পরিক্ষা?

-কিছুদিন অধিরের থেকে দূরে থেকে দেখো।কথায় আছে না,, দূরত্ব ভালবাসা বাড়ায়।সেই টেকনিকটাই ফলো করো।দূরে থেকে যদি তোমার মনে হয় তুমি অধিরকে মিস করছো,অধিরকে দেখার জন্যে ছটফট করছো তাহলে ভেবে নিও তুমি ওকে ভালবেসে ফেলেছো।যদি সময়ে অসময়ে অধিরের জন্যে মন খারাপ হয়,যদি ওর একটা ফোন কলের জন্যে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে ইচ্ছে করে, যদি অধিরের কথা মনে পড়ে রাতে তোমার ঘুম না আসে, সারাক্ষন যদি অধিরের কথায় মনে ঘুরঘুর করে তাহলে জেনে নিও তুমি অধিরকে ভালবাসো।

কিছুক্ষন নিরব থেকে রোশনি বলে উঠল,

-তুমিও নতুন করে শুরু করো জয়।নয়তো অপরাধবোধে আমি বাচতে পারবো না।

জয় কিছু বললো না।সব কষ্ট তার একার প্রাপ্য নয়।কিছু কষ্ট না হয় রোশনিও পাক।জয় চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।কিছুদূর গিয়ে পিছনে তাকিয়ে বলে উঠল,

-একটু অপরাধবোধ না হয় থাকুক তোমার ঝুলিতে।সেই অজুহাতে না হয় অসময়ে আমার কথা মনে করে একটুখানি কেঁদো।

—————————————

বাড়ির বাইরে গাড়ির কাছে দাড়িয়ে আছে সবাই।কাল রাতের বৃষ্টির পর আকাশ একদম চকচকে রৌদ্রতপ্ত।গরমও পড়েছে ভিষন।টকটকে লাল রঙের শার্টটা অনেকটাই ভিজে গেছে।গলায় ঝুলানো সানগ্লাসটা চোখে লাগিয়ে বিরস মুখে হাত ঘড়িতে চোখ বুলালো আদি।নাক মুখ কুচকে বললো,

-এখনো কেন আসছে না ভাবি? কতোক্ষন ধরে অপেক্ষা করছি।

পাশ থেকে ঝুমা চৌধুরি বলে উঠলেন,

-আমি আসার সময় তো দেখে আসলাম তৈরি হচ্ছে।এখনো হয় নি বোধ হয়।

আদি নাক কুচকালো।বললো,

-তৈরি হতে এতো টাইম লাগে? আমাকে দেখো।দশ মিনিটে তৈরি হয়েছি।তাও এতো হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে।মেয়েরা দেখলেই পটাপট ক্রাশ খেয়ে বসবে।আর ভাবি সকাল থেকে তৈরি হচ্ছে এখনো শেষ হল না।

পাশ থেকে ফোঁড়ন কাটলো রিয়া।কিটক্যাটে কামড় বসিয়ে বলল,

-খিচুড়ি তৈরি হতে কম টাইম লাগে এটা সবাই জানে আদি।টাইম তো লাগে বিরিয়ানি তৈরি হতে।এন্ড ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন মিষ্টার আদিল চৌধুরি,,,,খিচুড়ির চেয়ে বিরিয়ানির ডিমান্ড বেশি।

কথাটা বলেই পাশে দাড়ানো নাতাশার সাথে হাইফাইভ করলো রিয়া।বাকি সবাইও ঠোট টিপে হাসতে লাগলো।আদি ঠোট ফুলিয়ে তাকাতেই আদির পিটে চাপড় দিয়ে হেসে উঠল সাহিল।হাসতে হাসতেই বলল,

-রিয়ার সাথে কোনো দিনই পেরে উঠবি না তুই।তাই ওর সামনে অন্তত মুখটা বন্ধ রাখ ভাই।মাঝে মাঝে তোর জন্যে আমার খারাপও লাগে।এই তিন ফুটের পিচ্চি একটা মেয়ে তোকে পুরো ঘোল খাইয়ে দেয়? ইটস শেইমলেস।আই এম ডিছেপয়েন্টেড ইয়ার।

পাশ থেকে মুখ ফুলিয়ে বলে উঠল রিয়া,

-ভাইয়া আমি মোটেও তিন ফুটের পিচ্চি নই।আমি পাঁচ ফুট।

রিয়ার কথার মাঝেই হাত থেকে কিটক্যাট ছিনিয়ে নিয়ে মুখে পুড়লো আদি।চিবুতে চিবুতে বলল,

-কে বলল তুই পাঁট ফুট?তুই হলি তিন ফুটের লিলিপুট।আর লিলিপুটদের চকলেটস খেতে নেই।সেই সাথে অন্যের কথার মাঝে ফোঁড়নও কাটতে নেই।নয়তো পেট ব্যথা হয়।সেই সাথে ছ্যাঁকা খাওয়া স্বামিও জোটে কপালে।

আদির কথা শেষ হতেই রিয়ার জয়ের কথা মনে পড়লো।অদ্ভুদভাবেই লজ্জা পেল সে।আদিকে পাল্টা জবাব দিতেও ইচ্ছে করলো না আর।শরির ভরা লজ্জা নিয়ে মাথা নিচু করলো।

এদিকে রোশনি রেডি হয়ে আয়নায় শেষবার নিজেকে দেখে নিয়ে অধিরের দিকে তাকাতেই দেখল অধির অসহায় মুখে তার দিকেই চেয়ে আছে।রোশনি চোখ নামিয়ে নিলো।অধির ক্লান্ত পায়ে এগিয়ে এসে রোশনির সামনে দাড়িয়ে আলতো হাতে রোশনিকে বুকে টেনে নিলো।মাথায় ঠোট ছুঁইয়ে কাতর গলায় বলে উঠল,

-যেও না প্লিজ সুইটহার্ট। আমি থাকতে পারবো না।

-দেরি হয়ে যাচ্ছে মিষ্টার চৌধুরি।

অধির বুঝলো রোশনি কিছুতেই তার সিদ্ধান্ত বদলাবে না।দির্ঘশ্বাস ফেলে রোশনির মুখের উপর থেকে ছোট চুলগুলো সরাতে সরাতে বলল,

-ঠিক আছে যাও।সাবধানে থাকবে।একা একা কোথাও যাবে না।কোনো সমস্যা হলে আমাকে ফোন করবে।ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করবে।আর…..

রোশনি অসহায় চোখে তাকালো।ঠোট ফুঁলিয়ে বলল,

-ছোট বাচ্চাদেরও এভাবে কেউ ট্রিট করে না যেভাবে আপনি আমায় করছেন।কাল রাত থেকে এগুলো শুনতে শুনতে আমার মুখস্ত হয়ে গেছে।

-তুমি বিরক্ত হলেও কিছু করার নেই সুইটহার্ট। ওখানে গিয়ে বেশি উড়াউড়ি একদমই করবে না।আমার নজর কিন্তু সব সময় তোমার উপর থাকবে।

-আপনি ওখানেও আমার উপর নজর রাখার জন্যে লোক রাখবেন? আচ্ছা আমি কি ছোট বাচ্চা? এতো নজরে রাখার কি প্রয়োজন শুনি?দ

-সেটা তোমার না জানলেও চলবে।এখন চলো সবাই অপেক্ষা করছে।আর শোনো,, সময় করে আমাকে কিন্তু মিস করবে।

রোশনি চোখ মুখ কুচকে তাকালো।অধির রোশনির নাক টেনে দিয়ে বললো,

-মিস না করলে কিন্তু খবর আছে বলে দিলাম।

রোশনি নাক মুখ আরো খানিকটা কুচকে তাকাতেই অধির ওর হাত ধরে রুম থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে বলল,

-এভাবে তাকিও না।আমার মন ঘুরে যাবে।আর একবার মন ঘুরে গেলে তোমার যাওয়া ক্যান্সেল।

রোশনি আর অধির গাড়ির কাছে আসতেই আদি বলে উঠল,

-উফফ ভাবি… এতোক্ষনে আসলে? বরের সাথে রোমান্স করছিলে না?আই নো।কতো দিন দেখতে পাবে না বরটাকে।ইটস ভেরি স্যাড।

আদির কথা শেষ হতেই ওর পিঠে চাপড় বসালো অধির। বলল,

-এসব ফালতু কথা ছেড়ে শোন।সব সময় তোর ভাবির সাথে সাথে থাকবি।একদমই একা ছাড়বি না।মনে থাকবে কথা?

আদি মাথা নাড়ালো।মানে তার মনে থাকবে।রোশনির প্রতি অধিরের 🇧🇩কনসার্ন দেখে নাক ছিটকালেন রুমা চৌধুরি।ছেলেটা কি আস্তে আস্তে তার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে? এটা তিনি কিছুতেই মেনে নিবেন না।এই মেয়েকে যে করেই হোক অধিরের থেকে আলাদা করেই ছাড়বে।রুমা চৌধুরির ভাবনার মাঝেই মিসেস আনোয়ারা চৌধুরি বলে উঠলেন,

-আচ্ছা এবার তাহলে আমরা বেরিয়ে পড়ি।অনেকখানি রাস্তা যেতে হবে।দেরি করা ঠিক হবে না।

আনোয়ারা চৌধুরি,আদি আর রোশনি সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে বসলো।রোশনি গাড়ির জানালা দিয়ে অধিরের দিকে তাকাতেই দেখলো অধির করুন চোখে তাকিয়ে আছে।রোশনি জানে অধিরের কষ্ট হচ্ছে।গাড়ি গেট পেরিয়ে রাস্তায় আসতেই দির্ঘশ্বাস ফেলল রোশনি।চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস টেনে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করতেই পাশ থেকে আদি বলে উঠল,

-ভাবি তোমার কি খারাপ লাগছে?

-কই না তো।

-তাহলে এভাবে শ্বাস নিলে যে?

-তেমন কিছু নয় আদি।এমনিই।

আদি আর কথা বাড়ালো না।মোবাইলে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।রোশনিও গোপনে দির্ঘশ্বাস ফেলে বাইরের দিকে তাকালো।অবাধ্য বাতাসে উড়তে লাগল চুল।রোশনি অলস হাতে চুলগুলোকে কানের পাশে গুজে দিয়ে অধিরের ভাবনায় ডুব দিল।

———————————–

ঘড়িতে তখন তিনটা বেজে পনেরো।রাস্তার পাশে টং দোকানের কাঠের বেঞ্চে চায়ের কাপ হাতে বসে আছে জয়।মাথার উপরে উত্তপ্ত সূর্যের তাপে শার্টের অনেকটাই ভিজে এসেছে।গলার টাইটাকে টেনে টুনে আরো খানিকটা ঢিলা করে চোখ মুখ কুচকালো জয়।এই তীব্র গরমে আর টিকা যাচ্ছে না।জয় চায়ের কাপে চুমুক দিতেই হুট করে তার পাশে এসে কেউ বসল।আকস্মিক ঘটনায় খানিক চমকে তাকাতেই রিয়াকে দেখতে পেল।জয় ভ্রু কুচকে তাকাতেই এক গাল হাসল রিয়া।ঠোটের কোনে হাসি ঝুলিয়ে রেখেই বলল,

-চা খাচ্ছেন?আমিও খাবো।অর্ডার দিন।সাথে দুটো বিস্কুট।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here