#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পর্ব : ৪০
🌼
লাঞ্চ ব্রেকের খানিক পরেই অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে সোজা এখানেই এসেছিল জয়।এই তো এখানেই রোশনির সাথে তার প্রথম দেখা।সব কিছু এখনো কত স্পষ্ট।পুরোনো সৃতি গুলো আওড়াতে আওড়াতেই এক কাপ চায়ের অর্ডার করেছিল জয়।কাঠের তৈরি চিকন বেঞ্চটাতে বসে সেসবই ভাবছিল জয়।এর মাঝে রিয়ার এমন হুট করে আসাটা তার খুব একটা পছন্দ হচ্ছে না।তার এমন নিঃসংকোচ কথাগুলোকেও পছন্দ করা যাচ্ছে না।জয় তখনও ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।রিয়া বাম হাতে গলায় জমে থাকা ঘামটুকু মুছে নিয়ে বিরক্তিতে মুখ কুচকালো।জয়কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল,
-এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? পালিয়ে যাচ্ছি না।আগে চা টা অর্ডার করুন তারপর না হয় এভাবে তাকিয়ে থাকুন।
রিয়ার কথায় দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো জয়।খানিক অস্বস্তি বোধ হলেও খুব সাবধানে সামলে নিলো নিজেকে।বাম হাতে ভ্রু চুলকে বলল,
-আমার মনে হয় না এই চা তুমি খেতে পারবে?এটা কোনো দামি স্ট্রলের দামি চা নয়।এটা রাস্তার ফুটপাতের টঙ দোকানের চা।এর থেকে…
জয়ের কথার মাঝেই চোখ মুখ ফুলিয়ে তাকালো রিয়া।বিরক্তি সুর তুলে বলল,
-আপনি এতো বেশি কথা বলেন কেন বলেন তো? আমি বলেছি আমি দামি চা ছাড়া খাই না?আমি জানি এটা ফুটপাতের টং দোকানের চা।এখন বেশি কথা না বলে অর্ডার করুন।নয়তো আপনারটা নিয়ে নিবো।
জয় ভুস করে নিশ্বাস ছাড়লো।দোকানিকে আরো এককাপ চা দিতে বলে রিয়ার দিকে তাকালো।রিয়া তখন পনিটেইল করা চুলগুলোকে কাঠি দিয়ে আটকাতে ব্যস্ত।শরিরে হালকা গোলাপি রঙের টপ আর কালো রঙের লেডিস জিন্স। হাটুর দিকটাই খানিক ছেঁড়া ছেঁড়া।সেখান থেকে পায়ের ফর্সা রঙটা স্পষ্ট নজরে আসছে।জয় নজর সরিয়ে অন্য দিকে তাকালো।এদিকে দোকানি চা আর বিস্কুট দিতেই বেঞ্চে পা তুলে আরাম করে বসলো রিয়া।চায়ের মধ্যে বিস্কুট ডুবিয়ে খেতেই জয়ের ভ্রু জোড়া খানিক কুচকালো।কোনো বড় ঘরের মেয়েরা সচরাচর এমনটা করে না।হয়ত সেসব মেয়েদের কাতারে রিয়া পড়ে না।জয় দির্ঘশ্বাস ফেলে বাকি চা টুকু শেষ করে উঠে দাড়ালো।দোকানিকে চায়ের দাম দিয়ে রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
-আমাকে বাসায় যেতে হবে।তুমি চা ইনজয় করো।
জয় চলে যেতে নিলেই রিয়া ভ্রু কুচকে তাকালো।গরম চায়ে ফু দিয়ে এক চুমুক দিয়ে বলে উঠল,
-আপনি তো মানুষটা বেশি ভালো না দেখছি।আমাকে একা রেখে চলে যাচ্ছেন? এটা কেমন ম্যানারস শুনি?
-সরি মিস রিয়া।বাট আমি থাকতে পারছি না।বাসায় যাওয়াটা ইমপর্টেন্ট।
জয়কে বড় বড় পা ফেলে চলে যেতে দেখে চায়ের কাপ রেখেই উঠে দাড়ালো রিয়া।বেঞ্চের উপর থেকে ব্যাগটা তুলে কাঁধে ঝুলিয়ে জয়ের পেছনে ছুটলো।কয়েক কদম যেতেই কিছুর সাথে বেধে ছিটকে পড়লো মাটিতে।অসাবধানতায় কাধের দিকটাই খানিক ব্যথাও পেল।রিয়া অস্ফুট শব্দ করতেই পিছনে ফিরে তাকালো জয়।রিয়াকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে একপ্রকার ছুটে এলো।রিয়ার পাশে পা ভেঙে বসে রিয়াকে তুলতে তুলতে বলল,
-পড়লে কিভাবে? বাচ্চাতের মত দৌড়ানোর কি দরকার ছিল শুনি?
রিয়া ঠোট ফুলিয়ে বলল,
-আপনার জন্যেই তো পড়ে গেলাম।আপনি ওমন করে চলে যাচ্ছিলেন কেন আমায় ফেলে?
জয় ভুস করে নিশ্বাস ছাড়লো।রিয়াকে ধরে তুলে দাড় করিয়ে বলল,
-কোথায় লেগেছে দেখাও।
রিয়া কাধের বাম সাইডে ইশারা করে বলল,
-এখানে লেগেছে।
জয় কাধের দিকে তাকাতেই দেখলো রিয়ার বাম কাধ খানিক লালচে হয়ে আছে।জয়ের কপালে দু তিনটে চিন্তার ভাজ পড়লো।
-শোল্ডার এমন লালচে দেখাচ্ছে কেন? মাটিতে পড়ে এমন হওয়ার কথা নয়।আগে ব্যথা পেয়েছিলে?
রিয়া মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো।জয় প্রশ্ন ছুড়ল।বলল,
-কবে?
-কাল রাতে।
-ডক্টর দেখিয়েছিলে?
-না।
-হোয়াট? এতোটা অাঘাত পেয়েছো আর বলছো ডক্টর দেখাও নি?আচ্ছা এখন চলো।
-কোথায়?
-কোথায় মানে? অবশ্যই ডক্টরের কাছে।
-না না আমি যাবো না।আমি কোনো ডক্টরের কাছে যেতে পারবো না।ডক্টরের কাছে গেলেই জোর করে ইনজেকশন দিয়ে দিবে।আমি যাবো না।
-একটাও কথা না বলে চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসো।ডক্টর না দেখালে তোমার ব্যথা আরো বাড়বে।চলো।
রিয়া আর কথা বাড়ালো না।জয় গাড়ির দরজা খুলে দিতেই ভদ্র মেয়ের মত গাড়ির সিটে গিয়ে বসলো রিয়া।জয়ও দির্ঘশ্বাস ফেলে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করলো।গাড়ি চলতে শুরু করতেই রিয়া বলে উঠল,
-এর আগে তো গাড়িটা দেখিনি।নতুন নিয়েছেন?
-হুম।
-উফফ ভিষন গরম।একটু এসিটা অন করুন না।
-এসি অন করা যাবে না। ঠান্ডায় তোমার কাধে প্রবলেম হবে।
জয়ের কথায় গাল ফুলিয়ে জানালার দিকে মুখ করে বসলো রিয়া।বাতাসে রিয়ার কাধ অবধি স্কার্ল করা চুল গুলোকে উড়তে দেখেই জানালার গ্লাস তুলে দিলো জয়।রিয়া জয়ের দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে বলে উঠল,
-গ্লাস কেন তুলে দিলেন? আমার গরম লাগছে।গ্লাস নামান।
-গ্লাস নামানো যাবে না।তোমার কাধে বাতাস লাগলে প্রবলেম হবে।ব্যথা বাড়তে পারে।
-ফর গড সেক গ্লাস নামিয়ে দিন।আমি গরমে ঘেমে যাচ্ছি।প্লিজ….
-অযথা জিদ করো না রিয়া।
রিয়া বিরক্ত চোখে তাকালো।বললো,
-দেখুন গ্লাস নামিয়ে দিন।নয়তো আমি আপনার মনোযোগ নষ্ট করে দিবো।এতে করে এক্সিডেন্ট হবে আর আমরা দুজনেই মরে যাবো তাও একই সাথে।ভেবে দেখুন।এমনটা না চাইলে তাড়াতাড়ি জানালা খুলে দিন।
জয় শান্ত চোখে রিয়ার দিকে তাকিয়ে না শোনার ভান করে ড্রাইভিং এ মন দিলো।রিয়া বুঝলো জানালা খুলবে না।দুনিয়া উল্টে ফেললেও খুলবে না।অসভ্য লোক একটা।
প্রায় মিনিট দশেক পরে একটা হসপিটালের সামনে এসে গাড়ি থামালো জয়।গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির অপর পাশে গিয়ে দরজা খুলে রিয়াকে নামতে বললেও রিয়া ঠাঁই বসে রইলো।
-বেরিয়ে এসো।
-আমি একদম ঠিক আছি। একটু আগে অল্প একটু ব্যথা থাকলেও এখন একদম ব্যথা নেই।আমি একদম ঠিক আছি।প্লিজ না যাই?
জয় নিজেই রিয়ার সিট বেল্ট খুলে গাড়ি থেকে নামালো।রিয়ার হাত ধরে হসপিটালের ভেতর যেতে যেতে বলল,
-তুমি ঠিক আছো কি না সেটা ডক্টর বলবে রিয়া।এটা তোমার কাজ নয়।সো যার কাজ তাকেই করতে দাও।
রিয়াকে নিয়ে ডক্টরের কেবিনে বসে আছে জয়।ডক্টর রিয়ার কাধের ক্ষত জায়গাটা দেখে নিয়ে সোজা হয়ে বসলেন।জয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-তেমন গভির কোনো ক্ষত না।ভয়ের কিছু নেই।ব্যস কিছু মেডিসিন প্রেসক্রাইব করে দিচ্ছি নিয়মিত খেলে খুব তাড়াতাড়ি রিকভার হয়ে যাবে।আর এখন একটা ইনজেকশন দিতে হবে।মিস নিলিমা ওনার জন্যে ইনজেকশন রেডি করুন।
-ইয়েস স্যার।
এদিকে ইনজেকশনের কথা শুনতেই ভয়ে চুপসে গেলো রিয়া।অসহায় চোখে একবার জয় তো এক বার ডক্টরের দিকে তাকালো।জয়কে নির্বিকার বসে থাকতে দেখে ডক্টরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো রিয়া,
-কি বললেন ইনজেকশন? ইনজেকশনের কি দরকার? কাল রাতেই তো আমি মেডিসিন নিয়েছি।ইনজেকশনের কোনো দরকার নেই।আমি একদম ঠিক আছি।আমাদের আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।জয় চলুন এবার।
জয় বিরক্ত চোখে তাকিয়ে বলল,
-ওটা কাল রাতে নিয়েছো রিয়া।এখনো অবধি যখন ব্যথা কমে নি তখন ডক্টরকে ডক্টরের কাজ করতে দাও।চুপ করে বসো।আর ডক্টরের কথা শোনো।
-ডক্টরের কথা তো শুনলামই এবার চলুন।দেখুন আমি একদম ফিট আছি।আপনি হয়ত জানেন না আমি অনেক শক্তিশালী। আমার শোল্ডারে অনেক শক্তি।এই দেখুন একদম ব্যথা নেই।
রিয়ার কথা শেষ হতেই ডক্টর বলে উঠলেন,
-দেখুন মিস রিয়া এখন যদি আপনাকে ইনজেকশন দেওয়া না হয় তবে রাতে আপনার ব্যথা বাড়তে পারে।এবং পরিবর্তিতে এটার জন্যে বড় কোনো প্রবলেম ফেস করতে হতে পারে।এতে আপনারই কষ্ট করতে হবে।তখন আপনিই কাঁদবেন।
-আপনার যা করার করুন ডক্টর।ব্যস শুধু ঠিক করে দিন।
জয়ের কথা শুনে চোখ রাঙিয়ে তাকালো রিয়া।তবে জয়ের মধ্যে তেমন কোনো হেলদোল দেখা গেল না।রিয়া ডক্টরের দিকে তাকিয়ে মেকি হাসার চেষ্টা করলো।বলল,
-আপনি ভুল ভাবছেন ডক্টর।আমি একদমই কাঁদি না।আমার চোখে তো এক ফোটা পানিও আসে না।ইনফ্যাক্ট আমি তো জন্মের সময়ও কাঁদি নি।ইউ নো হোয়াট?আমি ভিষন শক্তিশালী।স্ট্রং গার্ল।প্লিজ আমি ইনজেকশন দিতে চাই না।
রিয়া শেষের কথাটা বেশ অসহায় মুখ করে বলল।কিস্তু এতেও লাভ বিশেষ হল না।জয় বিরক্ত চোখে তাকিয়ে বলে উঠল,
-রিয়া প্লিজ তোমার বাজে কথা বন্ধ করো আর ডক্টরকে ইনজেকশনটা লাগাতে দাও।বাই দা ওয়ে তুমি কি ইনজেকশনকে ভয় পাচ্ছো?
জয়ের প্রশ্নে খানিক ভাব নিয়ে বসলো রিয়া।
-মোটেই না।আই এম ব্রেইভ গার্ল।স্কুলে যখন ভ্যাকসিনেশনস এর লাইন লাগতো তখন সবার আগে আমি দাঁড়াতাম।সবার আগে বুঝেছেন?।সবাই বলতো দেখো কত সাহসি মে…..
রিয়ার কথার মাঝেই ডক্টর বলে উঠলেন,
-সাহসীদেরই কিন্তু আগে ইনজেকশন দেওয়া হত।রাইট মিস রিয়া?
রিয়া মাথা দুলিয়ে হ্যা বলল।নার্স ডক্টরের দিকে ইনজেশন এগিয়ে দিতেই শুকনো ঢোক গিলল রিয়া।টেবিলের উপর থেকে ব্যাগটা তুলে নিয়ে দৌড় দেওয়ার প্রস্তুুতি নিতেই জয় এসে সামনে দাড়ালো রিয়ার।রিয়া পাশ কেটে দৌড়াতে নিলেই জয় রিয়ার বাহু ধরে আটকায়।রিয়া জয়ের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্যে ছুটাছুটি করতে থাকে।
-ছাড়ুন ছাড়ুন আমায়।আমি ইনজেকশন দিবো না।ছেড়ে দিন আমায়।
-রিয়া রিল্যাক্স। শান্ত হও।পালাচ্ছো কোথায়? আমার কথা শোনো। ডক্টর কিছু করবে না।শান্ত হও।
-কেউ বাঁচাও আমায়।হিউম্যানিটির জন্যে হলেও বাচাও।সিকিউরিটি….?বাচাও আমায়।আমি ইনজেকশন দেবো না।ছাড়ুন আমায়।
-রিল্যাক্স রিল্যাক্স।ব্যস হয়ে গেছে।
জয়ের কথায় সরু চোখে তাকালো রিয়া।সন্দিহান গলায় বলল,
-হয়ে গেছে!!!!সত্যিই হয়ে গেছে?
জয় মাথা নাড়াতেই চোখ বড় বড় করে তাকালো রিয়া।অবিশ্বাসের সুর তুলে বললো,
-সত্যিই হয়ে গেছে? আল্লাহ আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।কই টের পেলাম নাতো?
-তাহলে আরেকবার দিতে বলি?
-না না দরকার নেই বাবা।আল্লাহ বাঁচাইছে।
জয় বিরক্ত চোখে চেয়ে বলল,
-এবার যাওয়া যাক? এমনিতেই অনেক কান্ড করে ফেলেছো এখানে।আর কিছুক্ষন থাকলে পাবনার টিকেট কর্নফর্ম।চলো।
-হুম।
জয় আর রিয়া কেবিন থেকে চলে যাওয়ার জন্যে পা বাড়াতেই ডক্টর বলে উঠলেন,
-মিস রিয়া?
রিয়া পিছনে ফিরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই ডক্টর মুচকি হেসে রিয়ার দিকে একটা ক্যান্ডি এগিয়ে দিয়ে বললেন,
-গেট ওয়েল সুন।
রিয়া ক্যান্ডিটা হাতে নিতে নিতে বলল,
-আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়া যাচ্ছে না ডক্টর।আপনি আমায় ইনজেকশন দিয়েছেন।তবে এই সুইট ক্যান্ডিটার জন্যে আপনার অপরাধটা ক্ষমা করা যাচ্ছে।বাট নট থ্যাংক ইউ।
ডক্টর মুচকি হাসলেন।জয় আর রিয়া হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে বসতেই জয় ড্রাইভ করতে শুরু করলো।রিয়া ততোক্ষণে ক্যান্ডি খেতে শুরু করেছে।জয়ের পেট ফেটে হাসি পাচ্ছে।সামান্য একটা ইনজেকশনে যে কারো এতোটা ভয় লাগতে পারে তা ওর জানা ছিল না।জয়কে ঠোট টিপে হাসতে দেখে রিয়া ঠোট ফুলিয়ে তাকালো।বলল,
-হাসছেন কেন?
জয় সামনের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলল,
-তুমি সামান্য একটা ইনজেকশনকে এতোটা ভয় পাও? আমি কখনো কাউকে এমন করতে দেখি নি।আর কি বলছিলে তখন? হিউম্যানিটি,,সিকিউরিটি। বাই দা ওয়ে,,,, কি ছিল এগুলো?
জয়ের ঠোটের কোনে দুষ্টু হাসি দেখতেই গাড়ির সিটের উপর পা তুলে আরাম করে বসলো রিয়া।ক্যান্ডি মুখে পুরে বলল,
-তখন মনে যা আসছিল তাই বলছিলাম।আমিও জানি না কি বলছিলাম তখন।
-সিকিউরিটি আসলেও বেচারা এটা বুঝতে পারতো না সে কাকে বাঁচাবে।তোমাকে,আমাকে,ডক্টরকে নাকি হিউম্যানিটিকে।
কথাটা বলেই হাসতে লাগলো জয়।রিয়া কিঞ্চিত রাগ দেখিয়ে বলল,
-এতে এতো হাসির কি আছে? অনেকের অনেক রকম ফোবিয়া থাকে।তেমনই আমার ইনজেকশন ফোবিয়া আছে।
-ইনজেকশন ফোবিয়া?
-আই মিন টাইপানোফোবিয়া।
জয় আবারো হাসলো।রিয়াকে বাচ্চাদের মত করে ক্যান্ডি খেতে দেখে বলল,
-কম ছে কম তুমি একটা ক্যান্ডি তো পেয়ে গেছো।আর কি চাই……
-একদম হাসবেন না।আমি চেয়েছি নাকি? ডক্টর নিজে থেকে আমায় দিয়েছেন।কি করতাম? মানা করে দিতাম? আমি এতোটা খারাপ মেয়ে না বুঝেছেন?
-তা তো আজ দেখতেই পেলাম।
-এই আপনি বিড়বিড় করে কি বললেন? বিড়বিড় করে কথা বলা মানুষ আমার একদম পছন্দ নয়।আর এমনিতেও আপনাকে পছন্দ করার কোনো প্রশ্নই আসে না।আপনার জন্যেই ওরা আমাকে ইনজেকশন লাগিয়েছে।আপনি ভিষনই খারাপ একটা মানুষ।
রিয়া নিজের মত করে বকবক করছে আর জয় শুনছে আর মুখ চেপে হাসছে।হঠাৎ জয় গাড়ি থামাতেই রিয়া ভ্রু কুচকে বলে উঠলো,
-এই আপনি গাড়ি থামালেন কেন? আমার বাড়ি এখনো অনেক দূরে।দেখুন আপনাকে খারাপ বলেছি বলে আপনি আমাকে গাড়ি থেকে নেমে যেতে বলতে পারেন না।একটা অসুস্থ মেয়েকে…..
রিয়ার কথার মাঝেই ধমকে উঠলো জয়।
-শাট আপ।কত কথা বলো তুমি? বাইরে তাকিয়ে দেখো শুধু আমাদের গাড়ি নয় সব গাড়িই দাড়িয়ে আছে।নিজের মত করেই বকবক করে চলেছে।
জয়ের রাম ধমকে মুখ ভেঙিয়ে বাইরের দিকে তাকালো রিয়া।সিগনালের কারনে সব গাড়িই থেমে আছে।গাড়ির গ্লাস এখন নামানো।রিয়া তখনও ক্যান্ডি খেতে ব্যস্ত।জয়ের হঠাৎই নজর গেলো রিয়ার সাইডে একটা কারে দুজন ছেলে রিয়ার দিকে বাজে নজরে তাকাচ্ছে আর হাসছে।ছেলে দুটোর ব্যবহারই বলে দিচ্ছে বড় লোক বাপের বিগড়ে যাওয়া বখাটে ছেলে তারা।জয় চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে গাড়ির গ্লাস উঠিয়ে দিল।গ্লাস তুলতেই রিয়া চোখ মুখ কুচকে তাকালো জয়ের দিকে।গাল ফুলিয়ে বলল,
-আবার কেন গ্লাস তুলে দিলেন? ডক্টর বললো তো সমস্যা হবে না।নামিয়ে দিন।
-নামানো যাবে না।চুপ করে বসে থাকো
।আর একটা কথা বলবে তো এক চড়ে দাত ফেলে দিবো।
রিয়া কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।জয়ের রাগি দৃষ্টি দেখে মুখ কাচুমাচু করে সিটে গা এলিয়ে দিল।সময় আসলে সেও দেখে নেবে এই ছেলেকে।কথায় কথায় খালি ধমক দিচ্ছে ব্যাটা? রিয়ার তবুও মনের মধ্যে কোথাও একটা ভিষন আনন্দ হচ্ছে।থেকে থেকেই কিশোরী মনটা নেচে উঠছে অদ্ভুদ এক ভালো লাগায়।বুকের ভেতর কিশোরী মনটাও যেন জয়ের রাগ,ধমকে বলা কথা গুলোকেও দারুন ভাবে ইনজয় করছে।
——————–
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা।নাতাশা বিছানায় বসে উপন্যাসের বই পড়ছিল।নাতাশা নাকের ডগা থেকে চশমাটা দু আঙুলে ঠেলে দিয়ে বই বন্ধ করল।বালিশেের উপর থেকে মোবাইল তুলে নিয়ে সাহিলের নাম্বারে ফোন লাগালো।প্রথম বারেই রিসিভ করলো সাহিল।সাহিল হ্যালো বলতেই শব্দহীন হাসলো নাতাশা।গলার স্বর খানিক গম্ভির করার চেষ্টা করে বলে উঠল
-হ্যালো? আচ্ছা শোনো? তুমি আমাকে ফোন করো আর ফোন করে বলো তুমি আমাকে মিস করছো?
-মানে?
-এতো মানে বুঝতে হবে না তোমাকে।যা বললাম তাই করো।আমাকে ফোন করো আর বলো তুমি মিস করছো আমায়।ওকে বাই।
নাতাশা ফোন কেটে মুচকি হাসলো।প্রায় সাথে সাথেই সাহিলের নাম্বার থেকে কল আসলো ফোনে।ফোনের স্ক্রীনে তাকিয়ে মুচকি হাসল নাতাশা।কল কেটে যাওয়ার ঠিক কয়েক সেকেন্ড আগে রিসিভ করে কানে ধরল নাতাশা।আগের ন্যায় গলার স্বর গম্ভির করে বলে উঠল,
-হুম বলো সাহিল।
-আই মিস ইউ নাতাশা।
নাতাশা শব্দহীন হেসে বললো,
-কি বললে আর এক বার বলো।
-আই মিস ইউ মাই বউ।
নাতাশা মুচকি হেসে বলল,
-আই মিস ইউ টু ।কখন আসবে?
-এইতো এক দেড় ঘন্টার মাঝেই চলে আসবো।
-ওকে।চলো এবার ফোন রাখো।আমাকে জ্বালিও না।আমার অনেক কাজ আছে।ভিষন ব্যস্ত।বাই।
ফোন কেটে মুচকি হাসলো নাতাশা।নাতাশা জানে,,, সাহিল তাকে সত্যিই মিস করছে।সাহিল তাকে কতোটা ভালোবাসে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।সাহিলের ভালবাসার গভিরতা মাপার ক্ষমতা তার নেই।হয়তো কোনো দিন হবেও না।আচ্ছা…এমন একটা জিবন সঙ্গী পেয়ে কি তার একটু অহংকার করা সাজে না? নিজেকে সব চেয়ে ভাগ্যবতী বলা কি ভুল কিছু হবে?
——————————
ঘড়ির কাটা দশটার ঘরে পৌছাতেই ক্লান্ত পায়ে রুমে ঢুকলো অধির।শরিরের সাথে সাথে মনটাও ভিষন ক্লান্ত আজ।সেই ক্লান্ত ভাবটা সময়ের সাথে সাথে আরো বেশি ভারি হচ্ছে।এয়ারকন্ডিশন যুক্ত রুমের ঠান্ডা বাতাসেও এক ফোটা স্বস্তি মিলছে না। কোর্টটাকে সোফায় ছুড়ে ফেলে পা বাড়ালো ওয়াশরুমের দিকে।শাওয়ার ছেড়ে নির্মিশেষ দাড়িয়ে রইলো।ঝর্নার ঠান্ডা পানিতে মূহূর্তেই শরির ঠান্ডা হয়ে এলেও ঠান্ডা হলো না বুক।বুকের ভেতর জ্বলতে থাকা ধিকিধিকি আগুনে ক্রমশই নিশ্বাস নেওয়াটা মুশকিল হয়ে দাড়াচ্ছে।অধির চোখ বুজে লম্বা শ্বাস নিলো।রোশনির মায়ায় মোড়া মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই বুক জ্বালা করে উঠলো আবারো।অধিরের ইচ্ছে করছে এখনই ছু্টে চলে যেতে রুপপুরে।যেখানে তার প্রানভোমড়াটা আছে।রুপপুর হল অধিরদের গ্রামের বাড়ি।সেখানেই ছিল অধিরের দাদুর জমিদারি।মিসেস আনোয়ারা চৌধুরি বছরের বেশি ভাগ সময় সেখানেই কাটান।অধির প্রায় এক ঘন্টা পর ওয়াশরুম থেকে বের হলো।ভেজা চুলগুলো ভালো করে মুছে নিয়ে ফোন হাতে বেলকোনির দিকে পা বাড়ালো।গ্যালারিতে ঢুকে রোশনির ছবিগুলোকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে ফোন লাগালো রোশনির নাম্বারে।কিন্তু রিসিভ হল না।প্রায় দু তিন বার ফোন দিয়েও রোশনিকে পাওয়া গেল না।অধিরের এবার মেজাজ খারাপ হচ্ছে।মেয়েটা নিশ্চয় নিজের মত মেতে আছে।এদিকে যে তার বিরহে একজনের খাওয়া ঘুম সব বন্ধ হতে বসেছে সেদিকে তার খেয়াল আছে?অধির আদির নাম্বারে ফোন লাগালো।উনি তো আবার আরো একধাপ এগিয়ে।ফোনটাই বন্ধ করে রেখেছে।অধিরের মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।তরতর করে বাড়ছে রাগের গতি। রোশনিকে দু চারটে চড় ঘুষি দেওয়ার প্রবল ইচ্ছেটাকে দমিয়ে আবারো ফোন লাগালো রোশনির নাম্বারে।এবার যদি মেয়েটা ফোন রিসিভ না করে তাহলে ওর কপালে দুঃখ আছে।
চলবে…….