শেষ বিকেলের আদর❤️পর্ব : ৪২

0
3877

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পর্ব : ৪২

🌼
মেঝেতে দু তিন টুকরো হয়ে পড়ে থাকা মোবাইল ফোনের দিকে তাকাতেই কান্না পাচ্ছে রোশনির।কেদে কেটে ভাসিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে অধির নামক এই অসহ্য দানবদেহী পুরুষটাকে।রোশনির কটমট দৃষ্টিতেও অধিরের মাঝে কোনো পরিবর্তন দেখা গেল না।রাজকীয় দেখতে সোফার হাতলের সাথে গেলান দিয়ে হাত ভাজ করে দাড়িয়ে আছে সে।খুবই স্বাভাবিক দেখাচ্ছে তাকে।অধিরকে দেখে যতোটা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে রোশনিকে দেখে ততোটাই ভায়োলেন্ট মনে হচ্ছে।রোশনির চোখ জোড়ায় বলে দিচ্ছে পারলে অধির নামক প্রানিটাকে সে নালার নোংরা পানিতে চুবাতো।রোশনি ফোনের টুকরো গুলোর দিকে কাতর চোখে তাকালো।সাথে সাথেই বাড়ল অধিরের প্রতি তীব্র রাগ।অধিরের দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে বলল,

-আপনি এটা করতে পারলেন?আগের ফোনটাও আপনার হাতে শহিদ হয়েছে।এখন এটাও ইহলোক ত্যাগ করলো।আমার ফোনের সাথে আপনার কোন জন্মের শত্রুটা বলেন তো?বলেন কেন ভাঙলেন এটা?

অধির ভ্রু কুচকে তাকালো রোশনির দিকে।রোশনির রাগান্বিত ফর্সা মুখটাতে দৃষ্টি স্থির করে বলল,

-ফোন রিসিভ করো নাই কেন? মানুষের ফোন কল যদি রিসিভ করতেই ইচ্ছে না হয় তাহলে সেই ফোন রেখে কি লাভ? তোমার ভাগ্য ভালো যে তোমাকে আছাড় মারি নাই।তুমি জানো আমার কি পরিমান রাগ উঠছিল।

-তাই বলে আপনি আমার ফোনটাকে শহিদ করে দিবেন?আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাই তো রিসিভ করতে পারি নাই।আর সামান্য এটুকুর জন্যে আপনি আমার ফোনটাকে আছাড় মারবেন?

-সরি।রাগ উঠছিল তাই ভেঙে ফেলছি।ঢাকা পৌছানোর সাথে সাথে নিউ ফোন পেয়ে যাবা।

-রাগ উঠলেই ফোন ভাঙতে হবে? এটা কোন দেশের নিয়ম শুনি?

-আরে বাপ বললাম তো নতুন ফোন পেয়ে যাবা।

অধিরের কথা বলার ধরন দেখে মাথাটা ধপ করে জ্বলে উঠলো রোশনির।টাকা আছে বলে এই লোকের বহুত ভাব।ফোন ভেঙেছে কোথায় নরম সুরে সরি বলে তাকে মানানোর চেষ্টা করবে তা না উল্টো আবার এ্যাটিটিউড দেখানো হচ্ছে।রোশনি কটমট করে বিছানার দিকে তাকাতেই দেখল বিছানার উপর আরাম করে অধিরের লেটেস্ট ফোনটা পড়ে আছে।রোশনি বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে গেল সেদিকটাই।ফোনটা হাতে তুলে নিতেই ভ্রু কুচকে তাকালো অধির।এই মেয়ের মতি গতি সুবিধার লাগছে না।অধির কিছু বলবে তার আগেই শরিরের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে ফোনটাকে ছুড়ে মারল রোশনি।টিটেবিলের কোনায় বাড়ি খেয়ে সাথে সাথে মৃদু ঝংকার তুলে দুনিয়া ত্যাগ করলো মোবাইলটা।রোশনির এহেন কাজে কপালের ভাজ মিলিয়ে গেল অধিরের।ফোনটাকে পৃথিবী থেকে বিদায় দিতে পেরে যেন মনের ভেতর বাকুম বাকুম করে উঠলো রোশনির।মনে মনে বললো,”এবার বুঝেন মজা।আমার ফোন ভেঙেছেন না? এবার ঠ্যালা সামলান?আমি কি জিনিস এখনো বুঝেন নাই মিষ্টার অধির চৌধুরি”।রোশনি যখন নিজের চিন্তায় বিভোর তখনই অনুভব করলো তার কোমরে কেউ আলতো ছোঁয়ায় ভরিয়ে দিচ্ছে।রোশনি চৌকিতে তাকালো।অধিরকে এতোটা কাছে দেখে চোখ বড় বড় করে বিষ্ময় নিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কোমর ধরে আরো একটু কাছে টেনে নিলো অধির।ঠোটে শয়তানি হাসি ঝুলিয়ে রেখে বলল,

-কি ভেবেছিলে আমার ফোন ভেঙে প্রতিশোধ নিবে?তোমার কি ধারনা অধির চৌধুরি সামান্য একটা ফোনের জন্য আফসোস করবে? ইউ আর রং মিসেস অধির চৌধুরি।সামান্য একটা ফোন ভেঙে আমাকে প্রতিঘাত করতে পারবে না।

রোশনি বিরক্ত চোখে তাকালো।ঠোট উল্টাতেই অধিরের নজর আটকে গেল রোশনির কোমল নরম ঠোটে।মাথাটা সামনের দিকে এগিয়ে নিতেই সাথে সাথে মাথা পিছিয়ে নিলো রোশনি।চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই অধির এক ভ্রু উচু করে প্রশ্ন করল,

-কি? এভাবে তাকানোর কি আছে? আমার বউ..যা ইচ্ছে করতে পারি।তার ফোন ভাঙার সাথে সাথে তাকে আদরও দিতে পারি।তবে বউ চাইলে চুমু দিতেও আমার বিশেষ আপত্তি নেই।

অধিরের কথায় আবারো শক্ত চোখে তাকালো রোশনি।রোশনিকে এভাবে তাকাতে দেখে অধির বলে উঠল,

-উফফ সুইটহার্ট এভাবে তাকিও না।খেয়ে নিবো কিন্তু।তখন আমার দোষ দিতে পারবে না।এমনিতেও চোখের সামনে এমন টেষ্টি বউ থাকলে কি নিজেকে দূরে রাখা যায়?তুমি তো এখন বউয়ের হক নিয়ে বিনা রিমোট কন্ট্রোল ড্রোনের মত এখানে সেখানে উড়ে বেড়াচ্ছো।এখন স্বামির হক অনুযায়ী আমারও তো উচিত বউকে একটু আদর করা।কি তাইনা?

কথাটা বলেই দুই ভ্রু উচিয়ে তাকালো অধির।মাথাটাকে আরো একটু সামনে এগিয়ে আনতেই অধিরের পায়ের উপর পাড়া দিলো রোশনি।অধির চাপা আর্তনাদ করে রোশনিকে ছেড়ে দুকদম পিছিয়ে এসে ডানপায়ের পাতার দিকে তাকিয়ে মুখ কুচকালো।রোশনির মুখে তখন বিজয়ের হাসি।সে হাসি একটুতে ফুরাবার নয়।রোশনিকে হাসতে দেখে নাক মুখ কুচকে তাকাল অধির।অধিরকে এভাবে তাকাতে দেখে হাসি থামিয়ে অনেকটা অধিরের মত করে বলে উঠল রোশনি,

-কি? এভাবে তাকানোর কি আছে?আমার স্বামি..যা ইচ্ছে করতে পারি।তার ফোন ভাঙার সাথে সাথে তার পায়ে পাড়াও দিতে পারি।তবে বর চাইলে দু চারটে কিল ঘুষি দিতেও আমার বিশেষ আপত্তি নেই।

রোশনির কথায় ভ্রু জোড়া আরো খানিকটা কুচকে গেল অধিরের।তার কথা তাকেই ফেরত দেওয়া হচ্ছে। রোশনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই রোশনির কোমর ধরে টান দিয়ে আবারো নিজের কাছে এনে ফেলল অধির।রোশনি দ্বিতীয় বারের মত চমকালো।অধিরের ঠোটে তখন দুষ্টু হাসি।অধিরের হাসির কারন খুজে পেল না রোশনি।চোখ দুটো ছোট ছোট করে প্রশ্ন করল,

-হাসছেন কেন?

অধির হাসতে হাসতেই জবাব দিলো,

-কই হাসছি না তো।

-আপনি হেসে হেসেই বলছেন হাসছেন না?মাথার তার কি সবই গেছে?

রোশনির এই কথাতেও হাসলো অধির।রোশনি এবার বিরক্ত চোখে তাকালো।লোকটার মাথায় হয়ত সমস্যা হয়েছে।সারা দিন অফিস,ফাইল,ল্যাপটপ আর মিটিং নিয়ে পড়ে থাকলে এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক।
অধিরের দৃষ্টি রোশনির গলার দিকে।সকালের কামড় দেওয়া জায়গাটুকু লাল টকটকে হয়ে আছে।ফর্সা চামড়ায় স্পষ্ট হয়ে আছে।সেদিকে তাকিয়েই অধির হাসছে।অধির আর রোশনির চোখাচোখির মাঝেই দরজা খোলার আওয়াজ কানে এলো।রোশনি অধিরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই মারাত্মক রকম কাজ করে বসল অধির।সাথে সাথেই শুরু হল হিচকি।অধির যে এমন একটা কাজ করবে তা কল্পনায় করে নি রোশনি। অধির টুপ করে রোশনির ঠোটে আলতো করে চুমু দিয়েই রোশনির থেকে দু কদম সরে দাড়িয়েছে।অধিরের মধ্যে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা না গেলেও রোশনির অবস্থা করুন।অধিরের কোমল ঠোটের স্পর্শে তার শরির যেন অবশ হয়ে আসছে ধিরে ধিরে।শরিরটাও বোধহয় ঠান্ডা হয়ে গেল হঠাৎই।চোখের পলক পড়ছে না।লজ্জা আর অস্বস্তিতে কাটা দিতে লাগল শরিরে।এদিকে দরজা ঠেলে ভেতরে এসে রোশনিকে এভাবে হ্যাং মেরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো আয়াশ,

-বাডি তুমি এমন হ্যাং মেরে দাড়িয়ে আছো কেন? তোমার আবারো হিচকি তুলছো?

আয়াশের কথাটা মষ্তিষ্ক অবধি পৌছাতেই হুশ হল রোশনির।চট করে দৃষ্টি নামাতেই দেখল অায়াশ দাড়িয়ে আছে।রোশনি কপাল কুচকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করল সত্যিই এটা আয়াশ নাকি অধিরের চুমুর সাইড এফেক্ট। আয়াশের ডাকে আবারো সচেতন চোখে তাকাল রোশনি।না এটা চোখের ভুল না,,,সত্যিই আয়াশ।কিন্তু ও কখন এল? তবে কি অধিরই ওকে নিয়ে এসেছে? রোশনি হাটু ভেঙে বসে আয়াশের হাত ধরে হাতের উল্টো পিঠে ঠোট ছোয়াল।গালে আলতো আদর দিয়ে কৌতুহলি গলায় প্রশ্ন করল,

-নকুল!!!তুই এখানে কিভাবে? কখন এলি?

সামান্য এটুকু কথার মাঝেই অসংখ্য বার হিচকি দিচ্ছে রোশনি।আয়াশ যেন এতে ভিষন বিরক্ত।

-উফফ বাডি পানি খেয়ে হিচকি থামাও।মিষ্টার লায়ন…? বাডিকে পানি দিন তো।নয়তো এই হিচকিতে আমি অজ্ঞান হয়ে যাবো।

অধির রোশনির দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিতেই কাপাকাপা হাতে গ্লাস হাতে তুলে নিল রোশনি।এক নিশ্বাসে গ্লাসের পানিটুকু শেষ করেও হিচকি বন্ধ হল না।আয়াশ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,

-পানি খেয়েও বন্ধ হল না?এবার কিভাবে বন্ধ করবো?

আয়াশের কথার পিঠে দুষ্টু হেসে বলে উঠল অধির,

-আমার কাছে একটা উপায় আছে হিচকি বন্ধ করার।যেটা করে হিচকি শুরু হয়েছে সেটা যদি আবার করি তাহলেই হিচকি বন্ধ হবে।তোমার বাডি চাইলে আবারো সেটা করতে আমার আপত্তি নেই।বাডিকে জিজ্ঞাসা করো আমার টেকনিকটা কাজে লাগাবো কি না?

অধিরের কথায় চোখ রাঙিয়ে তাকালো রোশনি।অধিরের হাসি কমল না।রোশনি ছোট্ট শ্বাস ফেলে তাকাতেই দেখল আয়াশ তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।একটা হিচকি তুলে বলে উঠল রোশনি,

-আবার কি? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?

-তোমার গলায় এটা কিসের দাগ?

আয়াশের কথায় অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল রোশনি।অধিরের সেই নির্মম কামড়ের ফলেই হয়ত দাগ পড়ে গেছে গলায়।এখন আয়াশকে কি বলে বুঝানো যায়?রোশনি আমতা আমতা করে কিছু বলবে তার আগেই অধির বলে দুষ্টু হেসে বলে উঠল,

-তেমন কিছু নয় আয়াশ।কেউ একজন ভালবেসে আদর করে দিয়েছে।এখন তুমি বাইরে গিয়ে খেল আর ভাবতে থাকো সেই একজনটা কে।আমি তোমার বাডির হিচকি বন্ধ করে কিছুক্ষনের মধ্যেই আসছি।ওকে?

আয়াশ মাথা ঝাকিয়ে সন্দিহান চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।এদিকে অধিরের কথায় চোয়াল ঝুলে পড়ার যোগাড় রোশনির।অদ্ভুুদ ব্যাপার হল তার হিচকিও বন্ধ হয়ে গেছে।এই লোকটা দিন দিন চূড়ান্ত ফাজিল হচ্ছে।কে বলবে এই শক্ত পোক্ত গুরু গম্ভির চেহারার পেছনে এমন বদমাইশ অসভ্য রুপও আছে।

————-

শূনশান নিরবতা।সেই নিরবতাকে কাটাতেই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছে।টিনের চালের উপর সেই বৃষ্টির ফোটা পড়তেই তৈরি হচ্ছে অদ্ভুদ এক ছন্দের বহর।অন্ধকার ঘরটিতে হ্যারিকেনের টিমটিমে আলো। শহুরে পরিবেশে হ্যারিকেনের দেখা না মিললেও বাংলার গ্রামেগঞ্জে এখনো এর অস্তিত্ব রয়ে গেছে।ছোট্ট জানালার ফাক গেলে বিদ্যুৎ চমকানির তীক্ষ্ণ আলো এসে আচড়ে পড়ছে চোখে মুখে।আদি হাত ঘড়িতে চোখ বুলালো।ঘড়ির কাটা দশের ঘর পেরিয়ে গেছে।শহরে এখন সন্ধ্যা রাত হলেও গ্রামে রাত দশটা মানে গভির রাত।আদি দির্ঘশ্বাস ফেলে পিয়ার থমথমে কালো মুখের দিকে তাকালো।ছোট্ট চৌকিটাতে পা ঝুলিয়ে বসে আছে।হ্যারিকেনের টিমটিমে আলোই স্পষ্ট না হলেও আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে। পিয়া অনুভূতিহীন চোখে তাকাতেই দেখল আদি তার দিকেই তাকিয়ে আছে।পিয়া বিরক্ত হল।এই ছেলেটাকে তার বরাবরই বিরক্ত লাগে।বার বারই চেয়ে এসেছে এই ছেলেকে যেন তার দ্বিতীয় বার আর দেখতে না হয়।কিন্তু নিয়তি তা চাইনি।তাই তো ঘুরে ফিরে তার সামনেই এনে ফেলছে।তবে আজকে যা হল তাতে সম্পূর্ন নিয়তির দোষ দেওয়া যাচ্ছে না।গ্রামের মানুষগুলোর উপর ক্ষোভ বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে নিজের উপর অকৃত্রিম রাগ।তার এখানে আসাটা একেবারেই উচিত হয় নি।নিরবতা কাটিয়ে পিয়াই প্রথমে মুখ খুলল।

-বেশি সিরিয়াসনেস দেখানোর প্রয়োজন নেই।যা হয়েছে সেটা টোটালি আনএক্সপেক্ট এক্সিডেন্ট।আর এটা ভুলে যাওয়াই বেটার হবে।আর যাই হোক তোমাকে স্বামি হিসেবে কখনোই চাইবো না আমি।

পিয়ার শেষের কথাটা আত্মসম্মানে লাগল আদির।পিয়ার দিকে কাট কাট চোখে তাকিয়ে ক্ষেপাটে গলায় বলল,

-এই যে মিস ঝগড়ুটে?আমারও কোনো শখ ছিল না তোমাকে বিয়ে করার।তোমার তো আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত।আফটার অল আমি তোমার সম্মান বাঁচিয়েছি।

পিয়া দাতে দাত চেপে তাকালো।বলল,

-ওহ রেইলি? তুমি আমার সম্মান বাচিয়েছো?তোমাকে স্বামি হিসেবে মেনে নেওয়াটাই তো সব চেয়ে বড় অসম্মানের।আসছে আমার সম্মান বাঁচাইতে।

-ঝগড়া করাটা যে তোমার হ্যাবিট হয়ে গেছে তা বেশ বুঝে গেছি।এনি ওয়ে আমার এখন ঝগড়া করার মুড নেই।এমনিতেই টেনশনে আছি।ভাইয়া জানতে পারলে কি করবে আল্লাহ জানে।দোষ না করেও ভাইয়ার থেকে পিটুনি খেতে হবে।দোষটা যে তোমার নাকি আমার সেটাই বুঝতে পারছি না।

-দোষ আমাদের কারোরই না।দোষ যদি কেউ করে থাকে তাহলে করেছে গ্রামের লোকগুলো।কোনো কিছু না শুনেই নিজেদের মত গল্প বানিয়ে বিয়ের পিড়িতে বসিয়ে দিল
।আরে বাবা চোখে যা দেখবি সেটাই কি সবসময় সত্যি ধরে নিবি? সেটার পেছনের কাহিনি তো শুনবি নাকি?

-দুঃখজনক হলেও বলতে বাধ্য হচ্ছি যে,,, এই প্রথম তোমার কথার সাথে আমি একমত।হুট করেই কি থেকে কি হয়ে গেল।এখনো পর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারছি না আই এম ম্যারিড।এখন আমার গার্লফ্রেন্ড গুলোর কি হবে?

আদির কথায় ভ্রু কুচকে তাকালো পিয়া। নাক ছিটকে প্রশ্ন করলো,

-গার্লফ্রেন্ড গুলো মানে?টোটাল কয়টা গার্লফ্রেন্ড তোমার?

আদির ঠোটে দুষ্টু হাসি।বাকা চোখে তাকিয়ে বলে উঠল,

-ও মাই গড।আই কান্ট বিলিভ!! বিয়ে হওয়ার সাথে সাথে অধিকারবোধ দেখাতে শুরু করে দিয়েছো?এখনি এতো জেরা তাহলে ফিউচারে কি করবে?

পিয়া ঘৃনা নিয়ে তাকালো।নাক ছিটকে বলল,

-একদম ফালতু কথা বলবে না।তোমার প্রতি না আগে আমার কোনো অধিকারবোধ ছিল আর না ভবিষ্যৎ এ থাকবে।আজকের পর থেকে তোমার মুখটাও আমি দেখতে ইচ্ছুক নই।সেখানে অধিকার তো অনেক দূরের কথা।আর একটা কথা… আজকের এই ঘটনার কথা কেউ জানবে না।এই অপ্রত্যাশিত ঘটনা অপ্রকাশিতই থাকবে।এই বিয়ের কোনো মানে নেই।আর না আমি মানি। সো কাল থেকে আমিও ভুলে যাবো এবং তুমিও ভুলে যাবে।বুঝেছো তুমি?

-আমার অতো ঠ্যাকা পড়ে যায়নি এমন ফালতু বিষয় মনে রাখার।আমি তো এখনই ভুলে যেতে চাই।তোমার মত চুড়েলকে বউ হিসেবে মেনে নেওয়ার থেকে তো সন্ন্যাসী হওয়া অনেক ভাল।

আদির কথার পিঠে আর কথা বাড়াতে ইচ্ছে করলো না পিয়ার।মনটা বিষিয়ে উঠছে।এমন একটা বাজে আর ভয়ংকর সিচুয়েশনে পড়তে হবে হয়তো কোনো দিন কল্পনাতেও ভাবে নি। খু্ব শিঘ্রই আরাফের সাথে তার বিয়ে।আরাফ যদি আজকের ঘটনাটা জানতে পারে তাহলে সিচুয়েশনটা ঠিক কোথায় গিয়ে দাড়াবে জানা নেই পিয়ার।বাবার মুখটা মনে পড়তেই দির্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে।বাইরের তুফান তখনো কমে নি।ঝুম বৃষ্টির সাথে সাথে শুরু হয়েছে পৃথিবী কাঁটানো ঝড়।শাঁ শাঁ শব্দ তুলে কাপিয়ে দিচ্ছে সব কিছু।পিয়া মনে মনে ভাবে এখানে আসাটা তার উচিত হয় নি।একদমই উচিত হয় নি।এখান থেকে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সে বেরোতে চাই।বেরোতে চাই এই বিয়ে নামক মিথ্যে থেকে।

চলবে……

[পরবর্তি পর্বে আদি আর পিয়ার বিয়ের বিষয়টা ক্লিয়ার করা হবে।ততোক্ষন পর্যন্ত ধৈর্য ধরুন।সবাইকে অগ্রিম ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here