শেষ বিকেলের আদর❤️পর্ব : ৪৩

0
3667

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিক্তিকা ইসলাম
পর্ব : ৪৩

🌼
কানে হেড ফোন গুজে মোবাইলের স্ক্রিনে দৃষ্টি রেখে আনমনে হেঁটে চলেছে আদি।অলস পায়ে হাঁটতে হাঁটতে জমিদার বাড়ি থেকে অনেকটাই দূর অবধি চলে এসেছে সে।সময়টা শেষ বিকেল।চকচকে আকাশে মেঘ জমেছে। বাতাসে ঠান্ডার আমেজ।কোকড়ানো সুন্দর চুলগুলোও ধানক্ষেতের মত হাওয়ায় দুলছে।চিকন রাস্তার দুপাশে ধানক্ষেত। আদি আরো কিছুটা সামনে হেঁটে গেল।রাস্তার একপাশে বড় গাছের নিচে বাশের তৈরি মাচায় গিয়ে বসল।কিছুক্ষন মেয়েদের সাথে টেক্সট করে হেডফোন কানে গুজে লম্বালম্বি হয়ে শুয়ে পড়ে চোখ বুজলো।প্রায় বেশ কিছুক্ষন পরে কয়েকজন মানুষের ছুটাছুটি অনুভব করতেই চট করে চোখ মেলে তাকায় আদি।কয়েকজন ছেলে একটা মেয়েকে তাড়া করছে।যদিও মেয়েটার মুখ দেখা যাচ্ছে না।আদি কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকেই ওদের পেছনে ছুট লাগালো।ততোক্ষনে মেয়েটাকে ধরে ফেলেছে ছেলেগুলো।আদি দ্রুত দৌড়ে ওদের কাছাকাছি যেতেই ছেলেগুলো কপাল কুচকে তাকাল আদির দিকে।আদি মেয়েটার দিকে না তাকিয়েই ছেলে গুলোর উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,

-হোয়াটস আপ ব্রো? এভাবে একটা মেয়েকে সবাই মিলে তাড়া করছো কেন?

ছেলেগুলো কিছু বলবে তার আগেই মেয়েটা বিষ্ময় নিয়ে বলে উঠল,

-আদি!!!

পরিচিত কন্ঠ কান অবধি পৌছাতেই সচেতন চোখে তাকালো আদি।সামনে পিয়াকে দেখে বেশ অবাক হল সে।অনেকটা সন্দিহান গলায় বলে উঠল,

-মিস ঝগড়ুটে!!!তুমি এখানে কিভাবে?

পিয়া জবাব দেওয়ার আগেই ছেলেগুলোর মধ্যে থেকে একজন বলে উঠল,

-ওই মিয়া কে আপনি?যেই হোন এখান থেকে যান।আমাদের কাজ করতে দেন।

আদি ছেলেটার কথায় খুব একটা পাত্তা দিল না।পিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

-ছেলেগুলো কে? তোমার পরিচিত?

পিয়া ঘৃনা নিয়ে তাকালো ছেলেগুলোর দিকে।বিরক্তির সুর তুলে বলল,

-আরে ধুর এরা আমার পরিচিত হতে যাবে কেন?এই যে দেখছো না,,এই কালা ব্যাটা কাল একটা মেয়েরে টিজ করায় সাইজ করছিলাম।আজ পুরো দলবল নিয়ে আসছে আমারে মারতে।

-ওয়াও ইন্টারেস্টিং তো।তা তুমি এভাবে দৌড়াচ্ছো কেন? কালকের মত আজকেও ওদের সাইজ করে দাও।

-আমাকে কি তোমার সুপার ওমেন মনে হয়? এতো গুলো ছেলের সাথে একটা মেয়ে হয়ে পারবো আমি?

আদি যেন চিন্তিত মুখে তাকাল।বলল,

-তাহলে এখন কি হবে?

-কি হবে মানে? মারো ওদের।

-কি? আমি কেন মারতে যাবো? সমস্যা যেহেতু তোমার তখন তুমিই ফাইট করো।আমি এসবের মধ্যে নেই।তোমার মত ঝগড়ুটে মেয়ের জন্যে মারামারির কোনো প্রশ্নই আসে না।আমি বরং যাই।

আদির কথায় রাগে আর বিরক্তিতে শরির ঘিনঘিন করে উঠল পিয়ার।আদির মুখের দিকে তাকাতেই হাতের মুঠো শক্ত হয়ে এল তার।সেদিকে দৃষ্টি রেখেই একটা ছেলের নাক বরাবর ঘুষি মারলো পিয়া।ছেলেটা প্রচন্ড চিৎকার করে দু কদম পিছিয়ে যেতেই মুখ হা করে খুলে গেল আদির।মেয়েটা যে ঝগড়ুটে সে ব্যাপারে তার কোনো সন্দেহ ছিল না।কিন্তু এই মেয়ে তো শুধু ঝগড়ুটে না পাশাপাশি গুন্ডিও।বাকি ছেলেগুলো ভাবতেই পারে নি পিয়া এভাবে হঠাৎ করে অাঘাত করবে।ছেলেগুলো একে অপরের দিকে তাকিয়ে একটা ছেলে পিয়ার দিকে হাত বাড়াতে গেলেই পেট বরাবর লাথি মারে পিয়া।ছেলেটা কিছুটা পিছিয়ে যায়।পিয়া আশে পাশে তাকাতেই একটা শুকনো ডাল দেখতে পায়।মাটি থেকে সেটা তুলে ছেলে গুলোকে বেদম পিটাতে শুরু করে।পিয়ার এমন রুপ দেখে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে আদির।শুকনো ঢোক গিলে পিয়ার মুখের দিকে তাকাতেই দেখল রাগে টকটকে হয়ে আছে মুখ।হঠাৎই একটা ছেলে পিয়াকে পেছন থেকে আক্রমন করতে নিলেই বুক বরাবর লাথি মেরে বসে আদি।আদির শক্ত পোক্ত লাথি খেয়ে দূরে গিয়ে মাটিতে ছিটকে পড়ে ছেলেটা।পিয়া ভ্রু কুচকে আদির দিকে তাকায়।আদি ততোক্ষনে বাকি ছেলে গুলোকে পিটাতে শুরু করে দিয়েছে।পিয়ার নজর আদির দিকেই।হঠাৎ করেই আদিকে বেশ রাগান্বিত দেখাচ্ছে।পিয়ার আশেপাশে খেয়াল নেই।আর সেই সুযোগেই একটা ছেলে পেছন থেকে এসে পিয়ার মাথায় ডাল দিয়ে বারি দেয়।পিয়া কিছু বুঝে ওঠার আগেই জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পরে।রাস্তার পাশেই ছিল ছোট্ট একটা পুকুর।বেসামালে পুকুরেই গড়িয়ে পড়ে পিয়া।পানির ঝপাৎ শব্দে থেমে যায় আদির শক্ত হাত।পেছনে ফিরে পিয়াকে দেখতে পায় না সে।পুকুরের দিকে চোখ যেতেই দেখে পানিতে ডুবে যাচ্ছে পিয়ার শরির।আদি পিয়ার নাম ধরে চিৎকার করে পুকুরে লাফিয়ে পড়ে।এই সুযোগে ছেলেগুলোও দ্রুত সরে পড়ে।আদি পিয়াকে পাঁজাকোলা করে তুলে এনে রাস্তার পাশে ঘাসের উপর শুইয়ে দেয়।গালে মুখে হালকা হাতে চড় দিতে দিতে পিয়াকে ডাকতে থাকে।কিন্তু পিয়ার জ্ঞান নেই।

-পিয়া?এই পিয়া? উঠো না।কথা বলো।পিয়া..পিয়া.. পিয়া?

এতো ডাকার পরেও পিয়ার সাড়া পাওয়া গেল না।কিছুক্ষনের মাঝে আকাশ ফেটে বৃষ্টি নামলো।আদির এবার চিন্তা হচ্ছে। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।সেই সাথে ঝুম বৃষ্টি।আদির মাথায় আসছে না এখন কি করা উচিত।এদিকে পিয়ারও জ্ঞান নেই।এভাবে ঝুম বৃষ্টিতে ভেজাটাও খুব একটা ভালো হবে না।আদি মুখ ভরে শ্বাস নিয়ে পিয়াকে কোলে তুলে নিলো।ছোট ছোট পা ফেলে এগিয়ে যেতে লাগলো বাড়ির পথে।বৃষ্টির পানিতে মাটির রাস্তাগুলো অনেকটাই পিচ্ছিল হয়ে গেছে।হাটতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে আদির।তারউপর অন্ধকার হয়ে এসেছে অনেকটাই।
বেশ কিছুদুর যাওয়ার পরে একটা ছাউনি চোখে পড়ল আদির।আদি পিয়াকে নিয়ে সেই ছাউনির নিচেই আশ্রয় নিলো।বৃষ্টির গতিও বোধ হয় বাড়লো খানিক।ভেজা খড়ের উপরই শুইয়ে দিল পিয়াকে।জায়গাটা খুব বেশি বড় নয়।বৃষ্টির ছাঁট এসে লাগছে ওদের গাঁয়ে।আদি পিয়াকে আড়াল করে বসল ।আদি কখনও এমন সিচুয়েশনে পড়ে নি।এ ধরনের সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করার মত অভিজ্ঞাও তার নেই।বাজ পড়ার তীব্র আলো পড়তেই পিয়ার মুখ স্পষ্ট হলো।সেই মুখ দেখে আদির বুক কাঁপলো।আজ যদি সে না থাকতো তাহলে পিয়ার কি হত? কি কি করতো ছেলে গুলো এতোক্ষনে?না আদি আর ভাবতে পারছে না।আর ভাবতে চাই না সে।আদি পিয়ার মাথাটা কোলের উপর তুলে নিয়ে বেশ কয়েক বার ডাকলো।কিন্তু পিয়া সাড়া দিল না।আদি একটা দির্ঘশ্বাস ফেলে পেকেটে হাত ঢুকিয়ে ফোন খোজার চেষ্টা করলো। কিন্তু পাওয়া গেল না।আদির চিন্তাটা যেন সময়ের সাথে সাথে তরতর করে বাড়তে লাগলো।ফোনটা নিশ্চয় ওখানে পড়ে গেছে।শেষ আশাটাও নিভে গেল আদির।ফোনটা থাকলে অন্তত অধিরকে ফোন করা যেত।আদি চোখ বুজে লম্বা শ্বাস টেনে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো।বেশি প্যানিক হয়ে পড়লে মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়।তাই যতোটা সম্ভব প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখা প্রয়োজন।তাহলে কোনো না কোনো উপায় ঠিক খুজে পাওয়া যায় সেই প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার।কথাটা হামেশাই বলত অধির।আজ ভাইয়ের কথামতই নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রাখার চেষ্টা করছে আদি।কিন্তু এতো চেষ্টার পরেও ফলাফল শূন্য।সেই প্যানিকই হয়ে যাচ্ছে বারবার।আজ মনে হচ্ছে তার ম্যাচিউর হওয়াটা অনেক বেশি দরকার ছিল।অধির বা সাহিলের মত ম্যাচিউর নয় বলে নিজের প্রতিই ভিষন রাগ হচ্ছে তার।ওর জায়গায় অধির বা সাহিল হলে ঠিক কোনো না কোনো উপায় খুজে বের করে ফেলতো।
আদির চিন্তার মাঝেই খুকখুক করে কেশে উঠল পিয়া।আদির হুশ এল।পিয়ার দিকে তৎক্ষণাৎ তাকিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

-পিয়া..?ঠিক আছো তুমি?ভয় পেও না আমি আছি তোমার কাছে।তোমার কি বেশি কষ্ট হচ্ছে?

আদির কোনো কথায় পিয়ার মষ্তিষ্ক অবধি পৌছালো না।পিটপিটে চোখে আদির ঝাপসা হয়ে আসা মুখটাই শুধু দেখতে পেল পিয়া।বেশিক্ষন চোখ জোড়াও খুলে রাখা সম্ভব হল না।পিয়াকে আবারো চোখ বুজতে দেখতে কপালে চিন্তার ভাজ পড়ল আদির।পিয়ার পুরোপুরি জ্ঞান ফিরে নি বিষয়টা বুঝতেই পিয়াকে টেনে তুলে একহাতে জড়িয়ে নিল আদি।পিয়ার মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে ভাবতে লাগল বাড়ি পর্যন্ত কিভাবে যাওয়া যায়।প্রায় মিনিট পাঁচেক পর টর্চ লাইটের আলো দেখতে পেল আদি।লাইটের আলোটা তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে।আদির ঠোটের কোনে হাসি ফুটল।নিশ্চয় গ্রামের কোনো লোক হবে।কিছুক্ষনের মধ্যে মধ্যবয়সী দুটো লোক এসে ওদের সামনে দাড়ালো।আদি ওনাদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

-প্লিজ আমাদের হেল্প করুন।আমরা ভিষন বিপদে পড়েছি।

লোক দুটোর চোখে মুখে কৌতুহল। দুজন দুজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে একজন বলে উঠল,

-এই সময়ে আপনেরা এহানে কি করেন?আর ওই মাইয়াডা এমনে পইড়া আছে ক্যান?হেতি আপনের কি লাগে?

লোকটার কথা শেষ হতেই দ্বিতীয় লোকটা বলে উঠল,

-দেহোস না পোলাডারে কেমন চিন্তিত দেখাইতাছে।বুকের সাথে কেমন কইরা আগলাই রাখছে।হেতের বউ ছাড়া আর কি হইবো?

প্রথম ব্যক্তিটি প্রশ্নবোধক চোখে তাকিয়ে বলে উঠল,

-মাইয়াডা কি আপনের বউ লাগে?

আদি সচেতন চোখে তাকালো।পিয়াকে তার ফ্রেন্ড হিসেবে পরিচয় দেওয়াটা বোধ হয় উচিত হবে না।ইট পাথরের উন্নত শহরগুলোতে ফ্রেন্ড শব্দটা কমন হলেও গ্রামে এর রুপ ভিন্ন।লোক গুলো যদি জানে তারা স্বামি স্ত্রী নয় তাহলে নিশ্চয় সাহায্য করবে না।আদির ভাবনার মাঝেই ওদের মধ্যে থেকে একজন বলে উঠল,

-কি হইল কথা কন না ক্যান?হেতির লগে আপনের সম্পর্ক কি?

আদি ওদের কথায় সাঁই দিয়ে বলল,

-জ্বি!! ও আমার বউ।আমরা শহরে থাকি।এখানে ঘুরতে এসেছি।পথে কিছু বিপদে পড়ে আমার বউ জ্ঞান হারায়।এই বৃষ্টি আর অন্ধকারে বাড়ি ফিরতে পারছি না।দয়া করে আপনারা যদি একটু সাহায্য করতেন।

হঠাৎ অধিরের কথা কানে যেতেই বাস্তবে ফিরল আদি।অধিরের করা প্রশ্নে রাতের ঘটনা মনে পড়ে গেছিল তার।আদিকে চুপ করে থাকতে দেখে দ্বিতীয় বারের মত প্রশ্ন করল অধির,

-কি চিন্তা করছিস? কোথায় ছিলি রাতে?কত বার কল করেছি? ফোন সুইচট্ অফ কেন?

আদি কি বলবে খুজে পাচ্ছে না।অধিরকে সে বরাবরই ভয় পায়।সেটা প্রকাশ না করলেও মনে মনে যে সে জমের মত ভয় পায় সেটা সে ভালো করেই জানে।আদির কপালে ঘাম জমতে শুরু করেছে।বার কয়েক শুকনো ঢোক গিলে অধিরের সরু চোখের দিকে তাকাতেই হাত পা অবশ হয়ে আসতে শুরু করলো তার।আদির ঘর্মাক্ত চোখে মুখে গভির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে প্রশ্ন ছুড়ল অধির।বলল,

-এভাবে ঘামছিস কেন? শরির ঠিক আছে?

আদি হাসার চেষ্টা করল।বাম হাতে কপালের ঘামটুকু দ্রুত মুছে নিয়ে বলে উঠল,

-হ্যা ভাইয়া একদম ঠিক আছি।গরম পড়েছে তো তাই একটু ঘাম ঝরছে আরকি।

অধির সন্দিহান চোখে তাকালো।গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে প্রশ্ন করল,

-তুই গরম পেলি কোথায়?সারা রাত বৃষ্টির হওয়ায় এখন অনেকটাই ঠান্ডা পড়ে গেছে।তোর এরপরেও গরম লাগতেছে?

আদি আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অধির বলে উঠল,

-আচ্ছা বাদ দে।এবার বল কোথায় ছিলি সারা রাত?আর ফোনই বা সুইচট্ অফ কেন?

কথাটা শেষ করে গ্লাসে চুমুক দিলো অধির।ঠান্ডা পানিতে গলা ভিজিয়ে টেবিলের উপর গ্লাসটাকে রেখে আদির দিকে তাকিয়ে সোজা হয়ে দাড়াল ।আদি জানে অধির তার প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত এখান থেকে যাবে না।আর না তাকে যেতে হবে।আদি মিথ্যে কিছু কথা সাজাতে লাগল।মিথ্যে বলাতে অনেকটাই এক্সপার্ট সে।কারো কাছে ধরা না খেলেও অদ্ভুদভাবে এই একটা মানুষের কাছেই খুব বাজে ভাবে ধরা খেয়ে যায় সে।অধিরের কাছে কোনো সুপার পাওয়ার আছে কি না সে বিষয়ে অনেকটাই সন্দেহ আছে আদির।মিথ্যে কিছু শব্দের পসরা সাজাতে বার বার ব্যর্থ হয়েই খুব গোপনে দির্ঘশ্বাস ফেলল আদি। বাম হাতে ভ্রু চুলকে আমতা আমতা করে বলে উঠল,

-আসলে ভাইয়া আমি একটা ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গেছিলাম।বৃষ্টির কারনে বাড়ি ফিরতে পারি নাই।

অধির ভ্রু কুচকে তাকালো।সন্দিহান গলায় প্রশ্ন করল,

-ফ্রেন্ড? রুপপুরে তোর ফ্রেন্ড কোথায় পেলি?

-ভার্চুয়াল ফ্রেন্ড ভাইয়া।ফেসবুকে পরিচয়।ওদের বাড়ি এই গ্রামের এক গ্রাম পরেই।আমি এখানে শুনে মিট করতে চাইল।তো ওর সাথেই দেখা করতে গিয়েছিলাম।

-ওকে।কিন্তু তোর ফোন অফ ছিল কেন?

-আসলে ভাইয়া ফোনটা হারিয়ে গেছে।কেউ হয়তো…

আদির কথার মাঝেই নিজের ফোনটা আদির দিকে ছুড়ে দিল অধির।আদিও অভিজ্ঞ ব্যক্তির মত হাতের মুঠোই ক্যাচ করল ফোনটা।অধির সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বলল,

-তোর ভাবির ফোনটাও ভেঙে গেছে।শাহিনকে ফোন দিয়ে দু’টো ফোনের অর্ডার দে।আর দাদিকে জানাস না বাইরে ছিলি।তাহলে একটা মাইরও মাটিতে ফেলবে না।

-ওকে ভাইয়া।

অধির চলে যেতেই হাফ ছেড়ে বাঁচলো আদি।ভাগ্যিস অধির ওর কথা বিশ্বাস করেছে।নয়ত এতোক্ষনে তার উপর দিয়ে ঠিক কোন ঝড় বয়ে যেত সে নিজেই জানে না।আদি মুখ ভরে শ্বাস টেনে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।কালকের ঘটনা সে ভুলে যেতে চাই।এই বিয়ের কোনো মানে নেই তার কাছে।কোনো মানে নেই।

সকাল সাড়ে আটটা।কাঠের তৈরি পুরোনো জমিদারি খাবার টেবিলটাতে হরেক রকমের খাবার সাজানো।মিসেস আনোয়ারা চৌধুরি দেয়াল ঘড়ির দিকে চোখ বুলালেন।আটটা বেজে তেত্রিশের ঘরে কাটা।অথচ এখনো অবধি কেউ নিচে আসে নি।আনোয়ারা চৌধুরিকে চোখ মুখ কুচকাতে দেখে আয়াশ বলে উঠল,

-তুমি কি রেগে আছো?

আয়াশের কথায় ওর দিকে ফিরে তাকালেন মিসেস আনোয়ারা।চোখের চশমাটাকে দুই আঙুলে ঠেলে দিয়ে বলে উঠলেন,

-তোর মনে হচ্ছে আমি রেগে আছি?

আয়াশ মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলো।মানে তার মনে হচ্ছে।

-এমন মনে হওয়ার কারন?

-কারন বাডি যখন আমার উপর রেগে যাই বা বিরক্ত হয় তখন এভাবেই নাক মুখ কুচকে তাকাতো।বাডিকে এভাবে তাকাতে দেখেই বুঝে যেতাম বাডি আমার উপর রেগে আছে।তুমিও ওভাবেই তাকিয়ে আছো।এবার বলো তো,, কার উপর রেগে আছো তুমি?

আয়াশের কথায় মিসেস আনায়ারার কুচকানো ভ্রু জোড়া সোজা হলো।চেয়ারে আরাম করে বসে বললেন,

-সাড়ে আটটা পার হতে চলল অথচ কারো খোঁজ নেই।সব গুলো নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছে।এই গোলাপি?গোলাপি?

মিসেস আনোয়ারার উচু ডাক কানে যেতেই রান্না ঘর থেকে এক প্রকার ছুটে এলো পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের একটা মেয়ে।ওড়নার আচলে হাত মুছতে মুছতে বলল,

-কি হইছে গিন্নিমা?

-গিয়ে দেখতো আদি কি করছে। যদি ঘুমিয়ে থাকে এক গ্লাস পানি ঢেলে দিবি মাথায়।না গ্লাসে হবে না এক জগ ঢেলে দিবি।সারা রাত মেয়েদের সাথে প্রেমালাপ করে দিন ভোর ঘুমানো।উঠতে না চাইলে কান ধরে তুলে আনবি। বুঝেছিস?

গোলাপি না বুঝেই মাথা নাড়িয়ে আদির রুমের দিকে পা বাড়ালো।গোলাপি চলে যেতেই আনোয়ারা চৌধুরি আয়াশের দিকে তাকালেন।বললেন,

-তোরা এমন হুট করে কিছু না জানিয়ে চলে এলি যে।সকালেও তো আসতে পারতি।রাত বিরাতে কোনো অঘটন ঘটে গেলে?

আয়াশ চকলেটের শেষ টুকরোটা মুখে পুড়ে দিয়ে বলল,

-সব দোষ তোমার নাতির বুঝেছো?আমাকে রাতে জোর করে উঠিয়ে এনেছে লায়নটা।বউকে ছেড়ে থাকতে পারবা না ভালো কথা…তাই বলে আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে আমাকে উঠিয়ে আনতে হবে?এখন দেখো বউকে পেয়ে কেমন বেলা অবধি ঘুমোচ্ছে।আজ একটা বউ নেই বলে বেলা অবধি ঘুমাতে পারছি না।আমার অনেক দুঃখ বুঝলে?বেলা অবধি ঘুমোনোর জন্যে হলেও আমার একটা বউ দরকার।তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে?যদিও বুড়ি কাউকে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।আচ্ছা শোনো,,,, যতো দিন না আমার সত্যি বউ হয় ততোদিন তুমি আমার বউ হয়ে আমার সাথে ঘুমাবে।বুঝেছো?

আনোয়ারা চৌধুরি আয়াশের কান টেনে দিয়ে বললেন,

-ওরে দুষ্টু.. আমাকে বুড়ি বলা? আর নিজে কি হ্যা? বুড়োদের মত মুখে শুধু পাকা পাকা কথা।এই টুকু মুখ থেকে এত কথা বের হয় কিভাবে?আচ্ছা যা তোকে আমার পছন্দ হয়েছে।যত দিন তোর সত্যি বউ না আসে ততো দিন আমিই তোর বউ।আমারও তো বেলা অবধি ঘুমাতে ইচ্ছে করে নাকি?

মিসেস আনোয়ারার কথা বলার ধরন দেখে হাসিতে লুটিয়ে পড়ল আয়াশ।এই বুড়িটাকে তার ভিষন পছন্দ হয়েছে।দেখতে যেন ঠিক পুতুলের মত।না না শুধু পুতুল নয়,,,বুড়ি পুতুল।আয়াশ নিজের মনেই কথাটা আওড়ে হাসিতে ফেটে পড়লো।

——-

বিশাল সাইজের ভারি ডিজাইনের খাটের উপর ছোট্ট শরিরটা এলোমেলো ভাবে পড়ে আছে।বুকের উপর থেকে আঁচলটাও সরে গেছে।বুক আর ধবধবে সাদা নরম পেটটা একেবারে স্পষ্ট।পায়ের দিকেও অনেক খানি উঠানো।এলোমেলো অবাধ্য চুলগুলো ছড়িয়ে আছে ঘুমন্ত মুখের উপর।অধির খুব সাবধানে দরজা লাগালো।চোখ ভরা নেশা নিয়ে ছোট ছোট পা ফেলে রোশনির পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো।রোশনির উন্মুক্ত পেটের দিকে চোখ যেতেই নেশা গাঢ় হল।অবাধ্য হাতটা বিনা দ্বিধায় চলে গেল নাভির খুব কাছে।নাভির চারপাশে আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতেই রাতের কথা মনে পড়ল অধিরের।
বাইরে তখন ঘন কালো মেঘের গর্জন।রোশনি তখন আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছিল।তখনই দরজা ঠেলে একটা ব্যাগ হাতে রুমে এলো অধির।চুলগুলো হালকা ভেজা।চোখে মুখে বিন্দু বিন্দু পানির ফোটা।লেমন কালারের শার্টটাতেও পানির ছাঁট।রোশনি অধিরের দিকে ফিরে দাড়াতেই রোশনির দিকে ব্যাগটা এগিয়ে দিল অধির।ব্যাগটা হাতে নিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ল রোশনি,

-কি এটা?

অধির রোশনির কোমর ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে আদুরে গলায় বলে উঠল,

-এখানে একটা শাড়ি আছে।আমি নিজে পছন্দ করে কিনেছি।আমি তোমাকে এই শাড়িতে দেখতে চাই সুইটহার্ট ।পড়বে তো?

রোশনি কিছু না বলে চোখ নামালো।অধির নিজের মনেই দির্ঘশ্বাস ফেলল।তারই হয়ত ভুল। সেই হয়তো ভুল ভেবেছিল যে রোশনি তাকে মেনে নিতে শুরু করেছে।যেই মানুষটাকে স্বামি হিসেবেই মানে না সেই মানুষটার কোনো ইচ্ছে বা প্রত্যাশা পূরন করবে এটা ভাবাও তো বোকামি।অধির একটু হাসার চেষ্টা করলো।ছোট ছোট চুলগুলোকে কানের পাশে গুজে দিতে দিতে বলল,

-ইটস ওকে সুইটহার্ট। তোমাকে পড়তে হবে না।তুমি শুধু এটা নিজের কাছে রেখে দিও তাতেই হবে।

অধির আর কথা না বাড়িয়ে কাবার্ড থেকে টি-শার্ট আর টাউজার বের করে ওয়াশরুমে চলে গেল।পাঁচ মিনিটের মাথায় শুকনো কাপড় পড়ে বেরিয়েও এলো। ভেজা কাপড়গুলো হাতে নিয়ে বেলকোনিতে পা বাড়ালো।একটা বারও আর রোশনির দিকে ফিরে তাকাল না।বেলকোনির দড়িতে ভেজা কাপড়গুলো মেলে দিয়ে দূরের অন্ধকারে চোখ রাখলো অধির।অধির জানত রোশনি পড়বে না।শাড়িটা কেনার সময় থেকেই জানত। তাহলে এখন এতো কষ্ট হচ্ছে কেন সেটাই বুঝতে পারছে না অধির।এমনটাই তো হবার ছিল।তাহলে এতো কষ্ট কেন হচ্ছে? জানা নেই অধিরের।এক তরফা ভালবাসায় অনেক কষ্ট।আর তার থেকেও বড় কষ্ট নিজের বউ এর থেকে ভালবাসা না পাওয়ার।অধির চোখ বুজে লম্বা শ্বাস নিল।বাইরে তখন ঝুম বৃষ্টি। আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে আকাশ ভেঙে মাটিতে আচড়ে পড়ছে বৃষ্টির একেকটা ফোঁটা।হঠাৎ অধিরের কানে ভেসে এলো মিষ্টি কোনো নেশাময় সুর।

-মিষ্টার চৌধুরি?

অধির তাকালো না।তাকালেই যদি হারিয়ে যায় কল্পনায় আঁকা সেই প্রিয় মানুষটা।নেশাময় সুর আবারো কানে যেতেই চোখ মেলে তাকালো অধির।এই ডাককে উপেক্ষা করার শক্তি তার নেই।তবে পেছনে ফিরে তাকাতে ভয় হচ্ছে।বুকের বা পাশের হৃদপিন্ড জানান দিচ্ছে তিলোককন্যা তার দেওয়া শাড়িটা তাকে মুগ্ধ করতে পড়েছে।কিন্তু মষ্তিষ্ক বলছে না পড়ে নি।তোমাকে সিমপ্যাথি দেখাতে এসেছে।তাকিও না।অধির দোটানা নিয়ে ঠাঁই দাড়িয়ে রইলো।সত্যিই যদি তার ভাবনা ভুল প্রমান করে রোশনি শাড়িটা না জড়ায় শরিরে তাহলে আবারো হয়ত বুকের ভেতরকার ক্ষতটা বাড়বে।অযথা কষ্টের পরিমান বাড়িয়ে লাভ কি? কিন্তু মন কি আর যুক্তি বুঝে? মনের তীব্র আগ্রহের কাছে নতজানু হয়ে ফিরে দাড়ালো অধির।সামনের রমনিকে তার দেওয়া শাড়িতে দেখে শ্বাস আটকে এলো।হঠাৎই তীব্র গতিতে ছুটতে লাগল হৃদপিন্ডের একেকটা হৃদস্পন্দন। অধিরের চোখে ঘোর লাগল।নেশাময় জ্বালাতে শরির জ্বলতে শুরু করলো।অধিরের সেই ঘোর লাগা চোখের দিকে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারলো না রোশনি।চোখ নামিয়ে নিল।অধিরকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে শরির অবশ হয়ে আসতে লাগল।গলার কাছে দলা বেধে হারিয়ে গেল সাজানো কথার মালা।অধির রোশনির মুখোমুখি দাড়াতেই দুহাতে খামচে ধরলো শাড়ির কিছু অংশ।অধির ডান হাতে রোশনির থুতনি ধরে মুখ উঁচু করতেই আবেশে চোখ বুজে নিল রোশনি।ডান হাতে মুখের উপর উড়তে থাকা চুলগুলোকে সরিয়ে দিয়ে কিছু সময় ঘোরা লাগা দৃষ্টিতে চেয়ে রইল রোশনির স্নিগ্ধ মুখের দিকে।বাতাসের তোড়ে শাড়ির আঁচল উড়ছে।উড়ছে রোশনির লম্বা চুল।সেই চুলের মাতাল করা গন্ধে নেশা ধরে যাচ্ছে অধিরের।অধির রোশনির কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো।এরপর বন্ধ চোখ জোড়ার পাতায় ঠোঁট ছোয়াতেই বেসামাল হয়ে গেল রোশনি।শরিরের প্রতিটা শিরায় শিরায় কাঁপুনি ধরে গেল।গলা শুকিয়ে এলো মূহূর্তেই। অধির যখন রোশনির থুতনিতে থাকা টকটকে লাল রঙা তিলটাকে গভিরভাবে ছুয়ে দিল তখনই যেন নিজেকে শক্ত রাখা মুশকিল পড়ে পড়ল রোশনির।শরিরের ভার ছেড়ে দিতেই দুহাতে আঁকড়ে ধরল অধির।বলিষ্ঠ দুটো হাতে রোশনিকে নিজের সাথে চেপে ধরে বাকা হাসলো সে।রোশনির ঘাড়ে ছোট ছোট কয়েকটা চুমু দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,

-নিজেকে বাঁচানোর ভালো উপায় ইউজ করেছো সুইটহার্ট। আমাকে বেসামাল করে দিয়ে এভাবে পালিয়ে যাওয়া কি ঠিক ঘরওয়ালি? কোন নেশায় জড়াচ্ছো দিন দিন? আমি যে আরো বেশি করে প্রেমে পড়ে যাচ্ছি তোমার। কি আছে তোমার মধ্যে? কেন তোমাতেই এত আকৃষ্টতা?

বর্তমান…

রোশনি নড়ে উঠতেই অধিরের ঘোর কাটল।পেটের উপর আঙুলের অসহ্য অত্যাচারে ঘুমের মাঝেই চোখ মুখ কুচকাচ্ছে রোশনি।অধির বাকা হেসে রোশনির উপরে ঝুকে গেল।রোশনির নেশা ভরা ঠোটের দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,

-আমার ঘুম কেড়ে নিয়ে আরাম করে ঘুমানো হচ্ছে? উঠো না সুইটহার্ট। আমি তোমার লজ্জা রাঙা মুখটা দেখতে চাই।প্লিজ উঠো ঘরওয়ালি।

রোশনি চোখ মেলে তাকালো না।অধির এবার রোশনির গলায় মুখ গুজলো।ছোট ছোট আদরে ভরিয়ে দিতে লাগল সারা গলা। রোশনি চট করে চোখ মেলে তাকালো।অধিরকে এতোটা কাছে দেখে আর অধিরের এই অসহ্য অত্যাচারে শরির অবশ হয়ে এলো তার।ঘুম থেকে উঠেই অধিরকে এতোটা কাছে দেখবে ভাবতে পারে নি সে।রোশনি অধিরকে আটকাতে চাইল।অধিরকে কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারল না।গলার কাছে এসে সব কথায় যেন আটকে আসতে লাগলো।অধিরের ছোঁয়া গভির হচ্ছে।ঠোটের ছোঁয়া গাঢ় হচ্ছে।রোশনি জোরে জোরে নিশ্বাস নিতেই মাথা তুলে তাকাল অধির।রোশনি কিছু বলতে গিয়েও পারল না।গলার কাছে এসে দলা বেধে যাচ্ছে সব। রোশনির চোখের দিকে তাকাতেই বাকা হাসল অধির।রোশনির না বলা কথা গুলো তার চোখ জোড়া বলে দিচ্ছে।কিন্তু অধির সেদিকে পাত্তা দিল না।ঠোটে শয়তানি হাসি ঝুলিয়ে আবারো মুখ গুজল রোশনির গলায়।গলায় ছোট ছোট কামড় দিতেই দুহাতে বিছানার চাদর খামচে ধরল রোশনি।আস্তে আস্তে অধিরের কামড় গুলো চুমুতে পরিনত হল।অধির যখন পুরোপুরি রাতের প্রতিশোধ নিতে ব্যস্ত তখনই দরজায় কড়া পড়ল।রোশনি দরজার দিকে তাকিয়ে অধিরকে বলে উঠল,

-দরজায় কেউ এসেছে।প্লিজ ছাড়ুন।

অধির সরল না।গলায় মুখ গুজেই ঘোর লাগা গলায় বলল,

-কেউ নেই সুইটহার্ট।আজ কেউ আসবে না আমাদের মাঝে।ডিস্টার্ব করো না ঘরওয়ালি।

কথাটা বলেই আবারো নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল অধির।রোশনি জানে অধিরের এখন হুশ নেই।তার এখন অন্য দিকে খেয়াল নেই।রোশনি ছোট্ট শ্বাস টেনে গলার স্বর উচু করে বলল,

-কে?

দরজার ওপাশ থেকে শব্দ এলো,

-ভাবিজান মুই গোলাপি।গিন্নিমা খাওনের লাইগা ডাকতাছে।

-ঠিক আছে তুমি যাও।আমরা আসছি।

-জলদি আইহেন ভাবিজান।

রোশনি অধিরকে সরাতে চাইল।কিন্তু অধিরের শোক্ত পোক্ত বলিষ্ঠ শরিরটাকে নড়ানো তার কাম্য নয়।রোশনি হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিয়ে করুন গলায় বলল,

-অধির প্লিজ ছাড়ুন।দাদি ডাকছেন।

অধির থমকে গেল।মুখ তুলে বিষ্ময় নিয়ে রোশনির চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,

-কি বললে?

-দাদি ডাকছেন।

-তার আগে?

-কই কিছু বলি নাই তো।

-বলেছো।কি বলেছো আবার বলো সুইটহার্ট ।

রোশনি ভ্রু কুচকে তাকালো।তার মনে পড়ছে না এর আগে কি বলেছে।মাথায় আরো কিছুটা চাপ দিতেই মনে পড়ে গেল সে অধিরের নাম ধরে ডেকেছে।

-তুমি আমার নাম ধরে ডেকেছো ঘরওয়ালি।তুমি জানো আমি কতোটা খুশি হয়েছি?এখন থেকে মিষ্টার চৌধুরি নয় শুধু অধির বলে ডাকবে।আমি শুধু তোমার অধির হতে চাই সুইটহার্ট।তোমার অধির হয়েই থাকতে চাই।

রোশনি নিজের কাজে নিজেই লজ্জা পেল।অধিরের বাহুডোর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে বসলো।এলোমেলো খোলা চুলগুলোকে হাতখোপা করতে করতে দেখলো অধিরের চোখে মুখে শয়তানি হাসি।অধিরের এমন হাসির কারন খুজে পেল না রোশনি।হাত খোপা করতে করতেই ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করলো,

-এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?আর এভাবে হাসারই বা কি আছে?

অধির ঠোটের কোনে দুষ্টু হাসি বজায় রেখেই বলে উঠল,

-ইউ লুক সো এট্রাক্টিভ সুইটহার্ট।

-মানে?

-মানে তোমাকে এই মুহূর্তে ভিষন আবেদনময়ি লাগছে।

রোশনি কথাটা বুঝতে পেরে নিজের দিকে তাকাতেই চোখ কোটর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম হল।শাড়ির আচলটাকে বিছানায় অবলীলায় পড়ে থাকতে দেখে লজ্জায় কাটা দিয়ে উঠল শরির।অধিরের সামনে এভাবে ছিল এতোক্ষন কথাটা মাথায় আসতেই লজ্জায় কুকড়ে উঠল রোশনি।দ্রুত হাতে শাড়ির আচলটা তুলে নিজেকে আড়াল করার যথা সাধ্য চেষ্টা চালিয়েও লজ্জাটাকে কমানো গেল না।রোশনিকে এমন লজ্জা পেতে দেখে বাকা হেসে রোশনিকে টেনে বুকের সাথে চেপে ধরলো অধির।রোশনিও ঘাপটি মেরে অধিরের চোখের দৃষ্টি থেকে নিজেকে আড়াল করতে বুকের সাথে মিশে রইল।লজ্জা আর অস্বস্তিতে শিহরন বয়ে যেতে লাগল শিড়দাড়া দিয়ে।কখনো কখনো লজ্জার হাত থেকে বাচতে যে লজ্জা দিচ্ছে তাকে আকড়ে ধরেই লজ্জা নিবারন করতে হয়।রোশনির অবস্থাটাও আজ এমন।যাকে দেখেই এতো লজ্জা… তার বুকেই লজ্জা লুকাতে ব্যস্ত আজ।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here