#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পর্ব : ৫০
🌼
“কিছু মেয়ে জন্মই নেয় রাজকুমারীর তকমা নিয়ে।ভাগ্যও তাদের সাথে কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করে না।তাদের এই রাজকীয় জিবন সবসময় ঝকঝকে ভাবেই চলতে থাকে।একদম ফেরি টেলস এর মত।এমন সুন্দর জিবন পেলে কেউ কি করে খুশি না হয়ে থাকতে পারে…!!না চাইতেই তারা সবকিছু পেয়ে যায়।কিন্তু ভালোবাসা…!!পৃথিবীর সমস্ত খুশি পায়ের কাছে পড়ে থাকলেও ভালবাসাটা বোধ হয় নিয়তি থেকেই মেলে।আমার জন্ম ভিষনই আমির খানদান থেকে।এজন্যই আমার জিবন রাজকুমারীর মত।কিন্তু যেই ভালবাসার সন্ধানে আমি ছিলাম… সেটা আমি কোথাও খুজে পায়নি।ছোট বেলায় যেমনটা আমি ফেরি টেলস এ পড়েছিলাম,,,সেখানে যতোই মনস্টার আর ইভিল ক্যারেক্টার থাকুক না কেন…পাশাপাশি কিছু ভালো ক্যারেকটারস্ও থাকত।যা সেই গল্পে একটা হ্যাপি এন্ডিং দিতো।ঠিক তেমন ভাবেই একদিন আমি আমার প্রিন্স চার্মিং খুজে পেলাম।আজ তার সাথে আমি ডান্স করেছি।”
প্রথম দু’পৃষ্ঠা বাদ দিয়ে এতোটুকুই লেখা।এরপর আর কোনো লেখা নেই।জয় ছোট্ট শ্বাস টেনে ডায়েরিটা বন্ধ করল। অনুমতি ছাড়া কারো ডায়েরি পড়া একদমই উচিত নয়।তবুও কেন জানি জয় ডায়েরিটা খুলেই ফেলল।দুপুরে রিয়া ভুল করে তার ডায়েরিটা ফেলে রেখেই চলে গেছে।সন্ধ্যার দিকে ডায়েরিটাতে নজর পড়ে জয়ের।প্রথমে ভেবেছিল ডায়েরিটা এভাবেই থাক। পরে না হয় রিয়াকে ফেরত দিয়ে দেবে কিন্তু সময়ের সাথে সাথে প্রবল ইচ্ছে জাগল ডায়েরিটাতে কি লেখা আছে? ওই টুকু পিচ্চি মেয়ে পার্সোনাল আর কিই বা লিখবে? তবুও জয় এড়িয়ে গেছে ব্যাপারটা। পারমিশন ছাড়া কারো ডায়েরি পড়া ভদ্রতার মধ্যে পড়ে না।এরপর সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামলো।রাতের খাবার আর কাজ সেড়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই হুট করে ডায়েরির কথা মাথায় আসল। টেবিলের উপর থেকে ডায়েরিটা তুলে নিয়ে বেশ কিছুক্ষন উল্টে পাল্টে দেখল জয়।মন চাইছে ভেতরে কি লেখা আছে সেটা পড়তে অথচ মষ্তিষ্ক বলছে ভুলেও এটা করো না।মন আর মষ্তিষ্কের তর্ক বিতর্কে অতিষ্ট হয়ে অবশেষে ডায়েরিটা খুলেই ফেলল জয়।প্রথম দুটো পাতা খালিই ছিল।জয় ভেবেছিল রিয়া হয়ত এটাতে এখনো লেখা শুরু করে নি।কিন্তু পরের পাতাটা উল্টাতেই গুটি গুটি অক্ষরে লেখা গুলো চোখে পড়ল।জয় আবারো পাশ ফিরে ডায়েরিটার দিকে তাকাল।পরবর্তি পাতায় কি লেখা আছে সেটা তার জানতে ইচ্ছে করছে ব্যপক হারে।অবশেষে আবারো ডায়েরিটা হাতে তুলে নিল জয়।যেখান থেকে শেষ করেছিল সেখান থেকে তিনটে পাতা পরেই আবার নতুন লেখার লাইন শুরু হয়েছে।জয় বেশ মনোযোগ নিয়ে পড়তে শুরু করলো,
“এরপর বেশ অনেক গুলো দিন বাদে আমি আমার প্রিন্স চার্মিং এর দেখা পেলাম।আমার প্রাসাদেই কাজে এসেছে।আমি তো ভিষন খুশি।আমার রাজকুমারকে চব্বিশ ঘন্টা চোখের সামনে দেখতে পাবো সেটা ভেবেই পাক্কা দু ঘন্টা রুম বন্ধ করে নেচেছিলাম।কিন্তু আমার সেই খুশি বেশিক্ষন টিকল না।”
এই পাতাতে এতোটুকুই লেখা।জয়ের ভ্রু জোড়া কুচকে গেছে।খুশি বেশিক্ষন টিকল না মানে কি?জয়ের কৌতুহল বাড়ল।চাপা উত্তেজনা নিয়ে আরো দু পাতা উল্টে পরের অংশ খুজে পেল,
“আমার প্রিন্সটা ফেরি টেলস এর প্রিন্সের মতো একদমই হ্যাপি নয়।প্রিন্স চার্মিং এর বোধ হয় মন খারাপ।সব সময় কেমন গম্ভির মুখ করে থাকে।আমার দিকে ফিরেও তাকায় না।এমন কি আমি নিজে থেকে কথা বলতে গেলেও সে আমাকে এড়িয়ে যায়।প্রিন্স চার্মিং কি বুঝে না,,,,আমি এতে কষ্ট পায়…?প্রিন্সেস স্যাড হয়ে যায় তার ইগনোরেন্সে…।ভেবেছিলাম তাকেও আমি ইগনোর করবো।আমি তো প্রিন্সেস।প্রিন্সেসদের একটু অহংকার থাকতে হয়।সিদ্ধান্ত নিলাম ওই স্যাড আর গোমরা মুখো রাজ কুমারের সাথে কথা বলবো না।কিন্তু আমার এই সিদ্ধান্ত বেশিক্ষন টিকল না।পরের দিন তার দেখা পেয়ে আবারো ক্রাশ খেয়ে বসলাম।এরপর থেকে শুরু হল প্রিন্স চার্মিং এর সাথে আমার লুকোচুরি খেলা।লুকিয়ে লুকিয়ে রাজ কুমারকে দেখতে শুরু করলাম।এভাবেই সময় কাটতে লাগল।
রাজ কুমারকে ইমপ্রেসড করতে একদিন শাড়ি পড়ে খুব করে সাজলাম।ভেবেছিলাম তার সামনে দাড়িয়ে তাকে একদম চমকে দিবো।কিন্তু তেমন কিছুই হল না।সে তো আমার দিকে ফিরেও তাকাল না।আজ আমি রাজকুমারকে গান গাইতে শুনেছি।কিন্তু প্রিন্স স্যাড গান গাইছিলো।বুঝলাম আমার প্রিন্স চার্মিং এর হার্ট ব্রোকেন।সে অন্য কোনো রাজকুমারীকে ভালবাসে।”
এরপর আরো কয়েকটা পাতা ফাঁকা।কয়েক পাতা উল্টাতেই নতুন লেখার শুরু,
“ফেরি টেলস এর মত এই রাজকুমারটা অতোটা ভালো নয়।অনেক পাঁজি।আজ আমাকে জোর করে হসপিটালে নিয়ে গেছে পাঁজি রাজকুমার।রাজ কুমারের সাথে সাথে ডক্টরটাও ভিষন পাঁজি।আমাকে জোর করে ইনজেকশন দিয়েছে।একটা ক্যান্ডিও দিয়েছে।সেজন্য তাকে অল্প একটু ক্ষমা করে দিয়েছি।কিন্তু পাঁজি রাজ কুমারের উপর আমি রেগে আছি।ভিষন রেগে আছি।”
এরপরের লেখাটা আজকের।উপরে আজকের তারিখটাই লেখা।জয় আরো একটু মনোযোগ নিয়ে পড়তে শুরু করলো,
“আজ আমি আমার মনের কথা রাজকুমারকে জানাবো।তাকে নিয়ে আমি কি ফিল করি সেগুলো সব বলবো।জানি না ফেরি টেলস এর প্রিন্স এর মত আমাকে একসেপ্ট করবে কি না!!তবুও আজ আমি আমার অনুভূতির কথা তাকে বলবো।রাজ কুমার যদি আজ আমায় ফিরিয়ে দেয় তাহলে রিয়া নামক রাজকুমারীটা ভিষনই স্যাড হয়ে যাবে।”
আর কিছু লেখা নেই।এরপর সবটা ফাঁকা।জয় ডায়েরিটা বন্ধ করে বিছানায় গা এলালো।মাথাটা ঝিম ঝিম করছে।মেয়েটা এখন কি করছে কে জানে..।জয়ের চিন্তা হচ্ছে।যদি আবেগের বশে ভুল কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে?এই বয়সি মেয়েরা ভিষনই আবেগ প্রবণ হয়।আবেগের বশবর্তী হয়ে মেয়েটা যদি নিজের ক্ষতি করে বসে তাহলে জয় নিজেকে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারবে না।জয়ের মাথাটা ক্রমেই ভারি হয়ে আছে।এখন আর ঘুম আসবে না।জয় দির্ঘশ্বাস ফেলে সিগারেটের প্যাকেট হাতে পা বাড়ালো বারান্দার দিকে।আরো একটা নির্ঘুম রাত সিগারেটের ধোয়ার সাথেই কাটাতে হবে তাকে।
——–
“পিয়া যখন মুক্তি পেল তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল।বিধ্বস্ত চেহারা নিয়ে টালমাটাল পায়ে যখন গেট পেরিয়ে ভেতরে গেল তখন পুরো বাড়িই ফাঁকা।বসার ঘর অবধি পৌছাতেই হাতে গোনা কয়েকজনকে চোখে পড়ল পিয়ার।তার মধ্যে আরাফও আছে।তবে বাবাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।পিয়ার মন অজানা ভয়ে কাপতে লাগল।বাবার কিছু হয়ে গেলে যে সে একদম মরে যাবে।এত বড় পৃথিবীতে এই একটা আশ্রয়ই তো তার আছে।সেটাও তো যদি হারিয়ে যায় তাহলে কোথায় যাবে সে?কে তাকে আগলে রাখবে বিনা স্বার্থে?পিয়া দুরুদুরু বুক নিয়ে হেঁটে চলল।বসার ঘরে পৌছাতেই সবার নজর পড়ল তার উপর।প্রায় সাথে সাথেই ছুটে এলেন পিয়ার সৎ মা মেহেরুন। চোখ মুখ শক্ত করে বললেন,
-এই পোড়ামুখী..???কোথায় ছিলি কাল থেকে? কোন আশিকের সাথে রাত কাটিয়ে এসেছিস? বিয়েটা তো ভেঙে গেছে।এবার কে বিয়ে করবে তোকে?তোর নাহয় কোনো মান ইজ্জত নেই,, আমাদের তো আছে নাকি? সবার কত রকম কটুকথা শুনতে হয়েছে ধারনা আছে তোর? সারা রাত আশিকের সাথে কাটিয়ে বাবু এখন বাড়ি ফিরছেন? আমার কথা না হয় বাদই দিলাম,,,,তোর বাবার মান সম্মানের কথাটা একটা বার ভাববি না? আজ তার যদি ভাল মন্দ কিছু একটা হয়ে যেত তাহলে এর দ্বায়ভার কে নিত? আমাদের মুখে চুন কালি লাগিয়ে এখন ঢং করে দাড়িয়ে আছিস কেন? সোনার টুকরো ছেলে যোগাড় করেছিলাম তোর জন্য।সহ্য হলো না? ছেলেটা ভালো দেখে এখনো অবধি এখানে বসে আছে।মেহমান….
মেহেরুনের কথার মাঝেই এগিয়ে এল আরাফ।মেহেরুনকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
-আমি পিয়ার সাথে আলাদা ভাবে একটু কথা বলতে চাই।আশা করি আপনার কোনো আপত্তি নেই।
মেহরুনের উত্তর না শুনেই পিয়ার হাত ধরে হাটা দিল আরাফ।পিয়ার রুমে এসে দরজা লাগিয়ে পিয়ার মুখোমুখি দাড়াল।পিয়াকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে শান্ত গলায় বলল,
-আমি তোমার মায়ের মত এটা জানতে চাইবো না যে তুমি কোন ছেলের সাথে ছিলে।তোমার প্রতি আমার বিশ্বাস আছে।সেই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই জানি তুমি ইচ্ছাকৃত ভাবে বাড়ি থেকে যাওনি।লোকে তোমাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করছে।যেটা আমার কাছে ম্যাটার করে না।লোকে কি ভাববে সেটা একান্তই তাদের ব্যাপার।আমি শুধু এটুকু জানতে চাই তুমি কোথায় ছিলে? আমি পুলিশেও ইনফর্ম করেছি।তারা হয়ত এখনো তোমায় খুঁজছে।
আরাফের কথার মাঝেই প্রশ্ন ছুঁড়লো পিয়া,
-বিয়েটা কি ভেঙে গিয়েছে?
হঠাৎ এমন প্রশ্নে ভ্রু কুচকে গেল আরাফের।পিয়ার অনুভূতি শূন্য মুখের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে সোজা হয়ে দাড়ালো।পকেটে এক হাত ঢুকিয়ে শিড় দাড়া সোজা করে বলল,
-বোধ হয় ভাঙে নি।আসলে এই বিষয়ে এখনো ভাবি নি।আমি বা মা কেউই না।ইনফ্যাক্ট মা তো তোমাকে নিয়ে চিন্তিত।
-তারমানে বিয়েটা আপনি এখনো করতে ইচ্ছুক?
আরাফ মুচকি হেসে জবাব দিল,
-মনে হয়।
-কেন? বিয়ের আগের রাতে বউ বাড়ি থেকে উধাও।ফিরলো পরের দিন বিকেলে।এরপরেও কেন বিয়ে করতে চান এমন একটা মেয়েকে? লোকে কি ভাববে একবারও ভেবে দেখেছেন?
-লোকে কি ভাববে সেটাও যদি আমরা ভাবি তাহলে লোকে কি ভাববে? আমি তোমাকে আগেই বলেছি পিয়া,,,,লোকে কি ভাবলো সেটা আমার কাছে ম্যাটার করে না।তোমার হাত পায়ের দাগ গুলোই বলে দিচ্ছে তুমি ইচ্ছে করে বাড়ি থেকে যাও নি।কেউ হয়ত তোমায় কিডন্যাপ করেছিল।এম আই রাইট?
পিয়া তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসল।খানিক অবাকও হল।কিছুক্ষন দম ধরে থেকে বলল,
-আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই আরাফ।আপনি কি শুনতে চান?
-ইমপর্টেন্ট না হলে বিয়ের পরে শোনা যেতে পারে।তোমার বাবা কিছুটা অসুস্থ হয়ে গেছেন।আই হোপ যে,,,বিয়েটা হলে উনি মানসিক ভাবে সুস্থ বোধ করবেন।
-ইটস টু মাচ ইমপর্টেন্ট আরাফ।আপনার কথাগুলে শোনা উচিত।
-ওকে ফাইন।বলো….
পিয়া ছোট্ট একটা শ্বাস টেনে আদির সাথে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা তাকে খুলে বলল।এমনকি তার কিডন্যাপের পেছনে যে আদি আছে সেটাও বলল।আরাফ সব শুনে স্তব্ধ বনে গেল।পিয়া ছোট্ট শ্বাস টেনে বিছানায় গিয়ে বসল।মুখ ফুলিয়ে শ্বাস নিয়ে বলল,
-আমি কিছু বুঝতে পারছি না এখন আমার কি করা উচিত।এই অবস্থায় আপনাকে বিয়ে করা মানে আপনাকে ঠকানো।আপনি ভিষন বাস্তববাদী এবং ভালো একজন মানুষ।আপনার থেকে সত্যিটা আর লুকিয়ে রাখতে মন সাঁই দিল না।বলে দিলাম।এবার আপনি বলুন,,আমার এখন কি করা উচিত?
আরাফ কিছুক্ষন ওভাবেই দাড়িয়ে থাকল।কিছুক্ষন বাদে ছোট্ট দির্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠল,
-তোমার উচিত বউ এর অধিকার নিয়ে আদিল চৌধুরির সামনে দাড়ানো।আই এগরি যে,,,বিয়েটা তোমাদের দুজনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে হয়েছে।কিন্তু আল্লাহর পবিত্র কালামকে সাক্ষী রেখে তোমরা বিয়ের মত পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছো।বিয়েটা তো মিথ্যে হতে পারে না তাই না?আচ্ছা মানছি,,,বিয়ে অবধি আদিল চৌধুরির কোনো ভুল ছিল না।কিন্তু কাল তোমাকে কিডন্যাপ করে সে অনেক বড় অন্যায় করেছে।তোমাকে যদি আজ আমি বিয়ে করি তবে আশে পাশের মানুষ তোমাকে নিয়ে নানা রকম বাজে মন্তব্য করবে।যদিও তাদের কথা আমার কাছে ম্যাটার করে না।তারপরেও তাদের কথা গুলো শুনে তোমার নিজের কাছে নিজেকে খারাপ মনে হবে। সস্তা মনে হবে।আমি চাইলেও ওদের সবার মুখ বন্ধ করতে পারবো না।হ্যা,,,হয়ত কিছু সংখ্যক মানুষের মুখ বন্ধ করতে পারবো।কিন্তু সবার না।তোমার হারানো সম্মানটা কেবল আদিল চৌধুরিই ফেরত দিতে পারবে।অন্য কেউ না।আর তারপরেও যদি তোমার মনে হয় তুমি আদিল চৌধুরির মোকাবেলা করতে চাও না দেন ফাইন,,, আমার তোমাকে বিয়ে করতে কোনো আপত্তি নেই।বাকিটা তোমার সিদ্ধান্তের উপর ডিপেন্ড করবে।
আরাফের কথার মাঝেই মুঠো ফোনটা বেজে উঠল।আরাফ আবারো কেটে দিল লাইন।পিয়া এতোক্ষন আরাফের প্রতিটা কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিল।আরাফের কথা গুলো কতটা যৌক্তিক সেটা নিয়েই ভাবছিল সে।কথাগুলো আসলেই সত্য।তার হারানো সম্মান এক মাত্র অাদির থেকেই পাওয়া সম্ভব।আদির সাথে বোঝাপড়া তাকে করতেই হবে।অপমানের প্রতিটা হিসেবে আদিকে দিতে হবে।পিয়ার এই ভাবনার সুতো কাটল আরাফের ফোনের আওয়াজে।পিয়া বেশ কয়েক বার খেয়াল করেছে কিছুক্ষন পরপরই আরাফের ফোনে কেউ কল দিচ্ছে।যতো বারই কল আসছে আরাফ ততোবারই কেটে দিচ্ছে।পিয়া নিচু গলায় বলল,
-কলটা হয়ত ইমপর্টেন্ট।আপনি কথা বলে নিতে পারেন।
-তেমন ইমপর্টেন্ট নয়।আবার অতোটাও আনইমপর্টেন্টও নয়।
পিয়া না বুঝতে পেরে বলল,
-ঠিক বুঝলাম না।
আরাফ ছোট্ট শ্বাস টেনে বলল,
-আসলে,,,, আমার প্রাক্তন ফোন দিচ্ছে।আট মাস আগেই আমাদের ব্রেক আপ হয়েছে
-কেন?
-আমার সাথে ওর চলে না।এটা আমার কথা নয়।আমার প্রাক্তনই এক সময় বলেছিল আমাকে।বলতে পারো এক কয়েনের এপিঠ-ওপিঠ ছিলাম আমরা।পাশাপাশি থেকেও দুজনের মাঝে চরম দূরত্ব।ও আমার থেকে যেসব এক্সপেক্ট করতো আমি তার কিছুই দিতে পারতাম না।বাবা মারা যাবার পর পরিবারের দায়িত্ব পড়ে আমার উপর।পড়াশোনা প্লাস পার্ট টাইম জব করতাম তখন।ওকে আগের মত আর সময় দিতে পারতাম না।আগে যেখানে চার থেকে পাচ ঘন্টার মত কথা হত সেখানে তখন খুব বেশি হলে দশ থেকে পনেরো মিনিটের মত কথা হত।আগের মত দামি দামি উপহারও দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না।তৃপ্তি…. ওহ সরি,,,,তোমাকে বলা হয় নি। ওর নাম তৃপ্তি….
পিয়া মুচকি হাসল।আরাফ আবারো বলতে শুরু করল,
-বয়ফ্রেন্ড তাকে সময় দিচ্ছে না,,,আগের মত আর দামি দামি গিফট দিচ্ছে না,,, এসব নিয়ে নাকি বান্ধবীদের সামনে তাকে লজ্জা পেতে হত। কথায় আছে না…? অভাবে স্বভাব নষ্ট।আমার অবস্থাও তখন তেমন।তৃপ্তির কথা গুলো ভিষন বিরক্ত লাগতে শুরু করল।এমনিতেই টাকা ইনকামের চিন্তা তার উপর তৃপ্তির এতো অভিযোগ।এরপর দুই মাসের মাথায় আমাদের ব্রেক আপ হয়ে যায়।তবে এতো কিছুর মাঝেও একটা সত্যি হল মেয়েটা আমাকে এখনো ভালবাসে।বান্ধবীর বয়ফ্রেন্ডরা যখন তাদের জন্য দামি দামি গিফট নিয়ে আসত,,,সারা দিন ফোনে কথা বলত সেখানে তৃপ্তির আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ গুলো হয়ত বৈধ ছিল।আমার হয়ত ঠান্ডা মাথায় ওর অভিযোগ গুলো শোনা উচিত ছিল।যাই হোক তারপর গভারমেন্ট জব মিলে গেল।ততোদিনে তৃপ্তির সাথে আমার যোগাযোগ প্রায় বন্ধ ছিল।এরপর মায়ের ইচ্ছে অনুযায়ী তোমার সাথে দেখা করলাম।বিয়ে ঠিক হল।আজ আমার বিয়ে,, সেই খবর শুনেই মেয়েটা সকাল থেকে ফোন দিচ্ছে।
-এখনো ভালবাসেন ওকে?
-ভালবাসাটা তো শেষ হবার জিনিস নয় যে এতো তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যাবে।আচ্ছা আমার কথা ছাড়ো,,,,,,কি ঠিক করলে?
পিয়া ছোট্ট শ্বাস টেনে বলল,
-আদির মুখোমুখি হতে চাই।আপনার কথাটাই ঠিক।আমার সম্মানটা আমি ওর থেকেই ফিরে পেতে চাই।
-দ্যাটস ফাইন।
পিয়া উঠে দাড়াতে দাড়াতে বলল,
-আপনার উচিত তৃপ্তিকে বিয়ে করে নেওয়া।তৃপ্তির জায়গায় আমি থাকলেও আমার অভিযোগ গুলোও বোধহয় এমনই হত।”
হঠাৎ কারো উপস্থিতিতে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এল পিয়া।পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখল আদি দাড়িয়ে আছে।পিয়া সরু চোখে তাকাতেই আদি চোয়াল শক্ত করে বলে উঠল,
-কি উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছো এখানে?কি চলছে তোমার মনে? বিয়ের কথাটা গোপন রাখতে তুমিই আমাকে বলেছিলে,,,তাহলে নিজেই কেন সেটা প্রকাশ করলে? হুয়াই….?
চলবে….