#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিক্তিকা ইসলাম
পর্ব : ৫১
🌼
-কি বলো জান? আমাদের তো বিয়ে হয়ে গেছে!!আমরা না স্বামী স্ত্রী? সে হিসেবে তো আমার শ্বশুর বাড়ি আসারই ছিল তাই না?আফটার অল.. হ্যাপি ম্যারিড হাজবেন্ড ওয়াইফ আমরা। তুমিও এটাই চাইছিলে না?সেজন্যই তো আমাকে কিডন্যাপ করেছিলে।যাতে বিয়েটা ভেঙে যায় আর আমি তোমার কাছে চলে আসি।ঠিক বলেছি না বেবি?
আদির কুচকানো ভ্রু জোড়া মুহূর্তেই কুচকে গেল।এই মেয়ের মাথায় নিশ্চয় কিছু চলছে।এমনি এমনি তো এখানে নিশ্চয় আসে নি..!!পিয়ার প্ল্যানটা ঠিক ধরতে পারছে না সে।পিয়া এবার বাংলা সিনেমার নায়িকাদের মত লজ্জায় যেন মরে যাচ্ছে এমন একটা ভান করে বলল,
-এভাবে তাকিও না বেবি।আমি জানি আমি দেখতে সুন্দর। কিন্তু লজ্জা বলেও তো একটা ব্যাপার আছে।আমি লজ্জা পাচ্ছি বেবি।
আদি এবার বিরক্তি ভরে তাকাল।ক্রুদ্ধ গলায় বলল,
-কথায় কথায় এতো বেবি বেবি করো ক্যান? আর এমন লজ্জায় নেতিয়ে পড়ার মানে কি? প্ল্যান কি তোমার?
পিয়া এবার বাংলা সিনেমার পুরোনো নায়িকা ববিতার মত কান চেপে কান্নার ভান করে বলল,
-প্ল্যান…!!!!কিসের প্ল্যান? তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারলে? হায় আল্লাহ….!!এটা শোনার আগে আমার মৃত্যু কেন দিলে না।মৃত্যু কেন দিলে না খোদা……।
আদির এবার রাগ হচ্ছে।এই মেয়ে তো কথায় কথায় ওভার এ্যাক্টিং করে বসছে।আদি এবার কয়েক পা সামনে এগিয়ে গিয়ে গলার স্বর উচু করে বলে উঠল,
-একদম ড্রামা করবে না।সোজা সোজা বলে দাও এখানে কেন এসেছো?কি চাও তুমি?
পিয়ার মুখের ভঙ্গিটা হঠাৎই বদলে গেল।এবার যেন নিজের রুপে ফিরে এল সে। কয়েক পা এগিয়ে এসে আদির মুখোমুখি দাড়িয়ে চোখে চোখ রেখে চোয়াল শক্ত করে দাড়ালো,
-আওয়াজ নিচে আর দু কদম পিছে।আমার সাথে উচু গলায় কথা বলার সাহসও করো না মিষ্টার আদিল চৌধুরি।নয়ত তোমার এমন অবস্থা করবো নিজেই নিজেকে চিনতে পারবে না।আর কি যেন বলছিলে…? প্ল্যান..!!!প্ল্যান তো একটা অবশ্যই আছে।তোমার লাইফটাকে হেল বানাতে এসেছি।পুরো জাহান্নাম।
কথাটা বলেই চোখ টিপে পিছিয়ে গেল পিয়া।আদি ওভাবেই বোকা বোকা চোখে চেয়ে রইল।এখন বুঝতে পারছে কতো বড় ভুল সে করেছে কিডন্যাপ করে।নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছে।এই গুন্ডী মেয়ে তো তার লাইফটাকে সত্যি সত্যিই হেল বানিয়ে ছাড়বে।
——-
সারা রাতে এক ফোঁটাও ঘুম হয় নি আদির।সব সময় নরম বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে অভ্যস্ত সে।হঠাৎ সোফাতে কি আর ঘুম হয়?অথচ তারই সাধের বিছানা দখল করে কত আরামে ঘুমিয়েছে পিয়া।এই এক দিনেই তার জিবনটাকে জাহান্নাম করে তুলেছে মেয়েটা।প্রথমে তার রুম দখল করেছে,পরে আলমারি আর এখন বিছানা!! আর সে কিছু বলতে গেলেই বার বার হুমকি দিচ্ছে কিডন্যাপের বিষয়টা অধিরকে জানিয়ে দিবে।কি একটা ঝামেলায় পড়েছে সে!!পিয়া ওয়াশরুম থেকে বেরোতেই দেখল আদি সোফায় মুখ কুচকে বসে আছে।পিয়া সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে হাত মুখ মুচতে লাগল।আদি বিরক্ত চোখে তাকালো।এই মেয়ের মাথা ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে তার।ম্যানহোলের নোংরা পানিতে কয়েক বার ইচ্ছে মত চুবাতে পারলে বেশ হতো।আদির ভাবনার মাঝেই ফোন বেজে উঠল।আদি ভাবনা থেকে বেরিয়ে ফোন তুলে নিল হাতে।নিরব ফোন করেছে।আদি ফোন কানে ধরে বলল,
-হ্যা দোস্ত বল।
ওপাশ থেকে প্রায় সাথে সাথেই একরাশ কৌতুহল নিয়ে কেউ বলে উঠল,
-মামা!!!শুনলাম বিয়া করছো?এইডা করতে পারলা? আমাগো না জানাইয়া ক্যামনে কি?যাই হোক ট্রিট কবে দিতাছোস তাই ক?
আদি ধমকে উঠল। বলল,
-চুপ কর শালা।এমনিতেই ভিষন প্যারায় অাছি।এখন ট্রিট ফ্রিট চেয়ে মাথা গরম করাছ না।
ওপাশ থেকে শয়তানি গলা শোনা গেল,
-এমন কইরা কইতাছোস ক্যান শালা? বাসর টাসর করোস নাই নাকি?
কথাটা বলেই হু হা করে হেসে উঠল ওপাশের ব্যক্তি।আদি প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে ধমকে উঠল।ধমকে কাজ হল বলে মনে হয় না।ওপাশের ব্যক্তির হাসির আওয়াজ বাড়ল বৈ কমল না।আদি আবারো ধমকে উঠল,
-থামবি?
-আচ্ছা যা থামলাম।এবার বল কাহিনি কি?সব মেয়েদের ড্রীম বয় হঠাৎ বিয়ে করে ফেলল যে? কাহিনি কি?
-লম্বা কাহিনি।দেখা হলে সামনা সামনি বলবো।বন্ধু বহুত প্যারায় অাছি রে।
শেষের কথাটা শুনে প্রশ্ন ছুড়ল নিরব,
-ক্যান কি হইছে?
আদি বিরস গলায় বলতে শুরু করল,
-কি বলবো ইয়ার…!!!নিজেরই রুমে নিজে মেহমান হয়ে গেছি রে।সোফায় শুতে হচ্ছে।কোনো দিন ভাবি নি এমন দিনও দেখতে হবে!!জিবনটা বোধহয় দুনিয়াতেই হেল হয়ে গেল!!!!
আদি আরো কিছু বলার আগেই পিয়া ছোঁ মেরে কেড়ে নিল ফোন। লাইনটা কেটে দিতেই ভ্রু কুচকে তাকালো আদি,
-এটা কি হল?ফোন দাও আমার।
-তুমি আমার নামে বাজে কথা কেন বলছিলে?
আদি সরু চোখে তাকালো।বলল,
-আমি কখন তোমার নামে বাজে কথা বললাম?আর যদি বলেও থাকি বেশ করেছি।আমি তোমার কুকীর্তির কথা আমার ফ্রেন্ডকে বলি বা খবরের কাগজে ছাপায় তাতে তোমার কি হ্যা? আমার যা ইচ্ছা আমি তাই করবো।আমার মর্জি।বুঝেছো?
পিয়া হঠাৎই ফিচেল হেসে উঠল।পিয়ার এমন হাসির কারনটা ধরতে পারছে না আদি।নিশ্চয় মনে মনে কোন ফন্দি আঁটছে।
-হাসছো কেন?
-আমি বরং অধির ভাইয়াকে ফোন করে কিডন্যাপের বিষয়টা বলে দিই।তারপর সব শুনে উনি কার উপর কি রিয়্যাক্ট করবে সেটা ওনার ব্যাপার।
আদির মুখটা এবার ফাটা বেলুনের মত চুপসে গেল।করুন গলা বলল,
-প্লিজ ভাইয়াকে কিছু বলো না।ভাইয়া জানলে আমাকে মেরে একদম তক্তা বানিয়ে দিবে।
-তোমায় তক্তা করুক বা কাঠের গুড়ো,,,, তাতে আমার কি? আমি তোমার কুকীর্তির কথা অধির ভাইয়াকে বলি বা খবরের কাগজে ছাপায় তাকে তোমার কি হ্যা? আমার যা ইচ্ছা আমি তাই করবো।আমার মর্জি।বুঝেছো?
শেষের কথা গুলো অনেকটা তার মত করেই বলল পিয়া।আদি করুন গলায় বলল,
-আচ্ছা সরি।আর বলবো না।প্লিজ ভাইয়াকে বলো না।
পিয়ার মুখে দুষ্টু হাসি।ভেজা তোয়ালেটা বারান্দায় মেলে দিয়ে এসে বলল
-আমি রোশনির সাথে দেখা করতে যেতে চাই।
-তো?
-তো কি? তুমি নিয়ে যাবে আমায়।
আদি কিছু বলতে যাবে তার আগেই চোখ চোখ ছোট করে তাকালো পিয়া,
-তুমি কি চাচ্ছো আমি ভাইয়াকে ফোন দিই?
আদি আর কথা বাড়ালো না।ওয়াশরুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
-গেলে এখনই যেতে হবে।দশটাই আমার ভার্সিটি যেতে হবে।ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা।যেতে চাইলে রেডি হয়ে নাও।আর বার বার ভাইয়াকে বলে দেওয়ার ব্লাকমেইলটা দেওয়া বন্ধ করো।
বিশ মিনিটের মাথায় গাড়িতে গিয়ে বসল দুজন।গাড়ি চলল নির্দিষ্ট গন্তব্যে।চৌধুরি ম্যানশনের চিকন রাস্তা পেরিয়ে মেইন রোডে উঠতেই পার্স থেকে নুড রঙের লিপস্টিক বের করল পিয়া।আদি আড় চোখে তাকাতেই চোখ মুখ কুচকে গেল।পরমুহূর্তেই দারুন একটা বুদ্ধি খেলে গেল মাথায়।তার রুম,আলমারি এমনকি বিছানা দখলের শাস্তি দারুন ভাবে দেওয়া যাবে।আদি শয়তানি হাসল।পিয়া গাড়ির মিররের দিকে তাকিয়ে ঠোটে লিপস্টিক দিতে নিতেই আঁকা বাঁকা ভাবে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগল আদি।ব্যস যা হবার তাই হল।লিপস্টিক সারা মুখে ছড়িয়ে গেল।আদি এবার পিয়ার দিকে তাকাতেই হো হো করে হেসে উঠল।পিয়ার মেজাজ তুঙ্গে।সে তো ভুলেই গেছিল,,, এই ছেলে বিশাল আকারের পাঁজি।দেখতে নিষ্পাপ লাগলেও ভেতরে একটা বদমাশ লুকানো।পিয়া মিররে তাকাতেই নিজের বিভৎস মুখটা স্পষ্ট হল।রাগ আর বিরক্তিতে তার কান্না পাচ্ছে। কুংফু স্টাইলে লাথি মেরে গাড়িতে থেকে আদিকে ফেলে দিতে ইচ্ছে করছে।মাথার চুল গুলো টেনে ছিড়ে ফেলতে পারলে যদি একটু শান্তি মিলত।পিয়া কিছুক্ষন কটমট করে তাকিয়ে থেকে টিস্যু দিয়ে লিপস্টক উঠাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।আদির মুখে তখনো তৃপ্তির হাসি।যেন অনেক বড় যুদ্ধে সে জয়লাভ করেছে।নিউটন যখন তার প্রথম সূত্র অাবিষ্কার করেছিলেন তখন তিনিও বোধ হয় এতোটা খুশি হন নি।পিয়া আদির দিকে আর তাকাল না।এই ছেলের দিকে তাকানো মানেই গাড়ি থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়ার ইচ্ছে জাগ্রত হওয়া।এই মুহূর্তে সে এমন কিছু করতে চাইছে না।রোশনিরা যেখানে থাকে তার অ্যাড্রেস এবং রাস্তা কোনোটাই চেনা নেই তার।তাই ওদের অবধি পৌছাতে হলে এই অসহ্য বান্দরটাকে জিবিত রাখাটা আবশ্যক।পরে নাহয় এর থেকে সে বদলা নিবে।এতো সহজে যে তো ছেড়ে দেওয়া যায় না।
——–
সকালে ঘুম ভাঙতেই নিজেকে বেলকোনিতে আবিষ্কার করল অধির।মষ্তিষ্কে কিছুটা চাপ দিতেই রাতের কথা মনে পড়ল তার।আশে পাশে তাকিয়ে রোশনিকে খোঁজার চেষ্টা চালিয়েও লাভ বিশেষ হল না।অধির হাই তুলে উঠে দাড়ালো।কাল রাতে বৃষ্টির পর সকালটা বেশ স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে।গাছের পাতা গুলোও নিজেদের রঙ ফিরে পেয়েছে।দোতলার টালি থেকে এখনো ফোটায় ফোটায় পানি পড়ছে।রাতে বৃষ্টির প্রোকপ কম থাকলেও ভোর রাতের দিকে বৃষ্টির গতি বেড়েছিল।অধির উঠে দাড়াতেই ঘাড়ে ব্যাথা অনুভব করল।সোফায় শোবার কারনেই বোধ হয় ব্যাথার উৎপত্তি হয়েছে। বাম হাতে ঘাড় ঘষে রুমে এল অধির।রোশনিকে রুমে না পেয়ে হতাশ হল।ওয়াশ রুম থেকে একে বারে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামল ।সিড়ি দিয়ে নামতে নামতেই চোখ গেল রান্না ঘরে রান্না করতে থাকা রমনির দিকে।শাড়ির আচল ঘুরিয়ে কোমরে গুজে রুটি বেলতে ব্যস্ত নেশাময় সেই রমনি।খোপা থেকে বেরিয়ে আসা উন্মুক্ত চুলগুলো চোখে মুখে আচড়ে পড়তেই বিরক্তিকে মুখ কুচকাচ্ছে সে।অধির বাম হাতে ভ্রু চুলকে রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে আসল।রান্না ঘরের দরজায় হেলান দিয়ে পলক হীন তাকিয়ে রইল রান্নায় ব্যস্ত রমনির দিকে।ঘোর লাগা চোখের দৃষ্টি ছুটে চলল নিষিদ্ধ কিছু জায়গায়।অধির তবুও দৃষ্টি সরালো না।বেহায়ার মতোই তাকিয়ে রইল। অধিরের নিজেকে আজ সত্যিই বেহায়া মনে হচ্ছে।তবে নিজের বউকে এভাবে দেখলে যদি বেহায়া উপাধি পেতে হয় তাতেও খুব বেশি আপত্তি নেই তার।রোশনি রুটি বানানো শেষ করে কড়াইতে ভাজি বসালো।ব্যস্ত হাতে খুন্তি নাড়তে নাড়তে বাম হাতে গলার ঘাম মুছল।এর সব কিছুই খুব মন দিয়ে দেখছে অধির।রোশনি এখনো অবধি অধিরকে খেয়াল করেনি।পাকা রাঁধুনির মত রান্নাতেই তার যত ব্যস্ততা।অধির ছোট ছোট পা ফেলে এগিয়ে এল।রোশনির খুব কাছাকাছি দাড়িয়ে পেছন থেকেই জড়িয়ে নিয়ে উন্মুক্ত ঘাড়ে ঠোট ছোঁয়াল।রোশনি চমকে কেপে উঠল।হাত থেকে খুন্তি পড়ে যেতে যেতেও সামলে নিল।অধিরের গরম নিশ্বাস তখন ঘাড় আর কানে আচড়ে পড়ছে।হাত দুটোও নিযুক্ত হয়ে গিয়েছে তাকে অসহ্য অত্যাচার করতে।শাড়ি ভেদ করে খোলা পেটে অবাধ্য ভাবে বিচরন করছে তার বলিষ্ঠ দুটো হাত।রোশনির নিজেকে কেমন শূন্যে ভাসছে বলে মনে হচ্ছে।শরির যেন ভার ছেড়ে দিতে চাইছে।অধিরের হাতের আর ঠোটের ছোয়া গভির হতেই অস্ফুট স্বরে বলল,
-অধির… কি করছেন? প্লিজ ছাড়ুন।
অধির ঘাড়ে মুখ রেখেই বলল,
-আই নিড ইউ সুইটহার্ট। একদম নিজের করে পেতে চাই।সম্পূর্ন নিজের করে।এতোটা নিজের করে যে অন্য কেউ যেন আমার থেকে তোমাকে দূরে নিয়ে যেতে না পারে।তোমার শরিরে অধির নামক স্ট্যাম্প লাগাতে চাই যাতে তোমার দিকে কেউ তাকাতে পর্যন্ত না পারে।আই কান্ট এক্সসেপ্ট ইউ উইথ আদারস পার্সোন সুইটহার্ট।
হঠাৎ করেই রোশনি উপলব্ধি করলো তার শরির মারাত্বক রকম কাঁপছে।কণ্ঠনালী শুকিয়ে অাসছে। নিশ্বাস ভারি হচ্ছে।কাল রাতে তার করা ছোট্ট পাগলামিতেই বেসামাল হয়ে উঠেছে অধির।কেন করতে গেল ওমন সাংঘাতিক এক কাজ? কিভাবে পারলো সে? কি দরকার ছিল ক্ষুধার্ত সিংহকে জাগিয়ে তোলার?রোশনির শরিরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যখন কাঁপুনি দিচ্ছে তখন শ্বাসটাকে চেপে রেখে কোনো রকমে কয়েটা শব্দ আওড়ালো রোশনি,
-অধির ছাড়ুন।তরকারি পুড়ছে।
অধির ছাঁড়ল না।হাতের বাঁধন শক্ত হল।ঠোটের ছোঁয়া গভির হল।নিজকে আজ উন্মাদ মনে হচ্ছে তার।হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে প্রিয়তমাতে।আঁলতো পরশে রাঙিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।ইচ্ছে করছে নিষিদ্ধ কিছু স্পর্শ দিয়ে প্রিয়তমাকে লজ্জায় মোড়াতে।অধিরের নির্মম অত্যাচারে নড়ার ক্ষমতা টুকুও হারিয়ে ফেলেছে রোশনি।দলা বেধে আসা কথা গুলো কণ্ঠনালীতেই আটকা পড়ছে বারবার।অধির উদম ঘাড়ে আরো একবার ঠোঁট ছোয়াল।ঘোর লাগা গলায় বলল,
-পুড়তে দাও।আমি বৃষ্টি নামিয়ে সবটা শীতল করে দিবো সুইটহার্ট। তুমি শুধু আমার বৃষ্টি বিলাসী হয়ে ভিজতে থাকো।
রোশনিকে ঘুরিয়ে নিজের দিকে ফেরাতেই চোখ বন্ধ করে নিল রোশনি।শ্বাসটা যেন আটকে আসতে চাইছে।এ কেমন অনুভূতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে অধির!!!রোশনির লজ্জাটা আরো একটু বাড়িয়ে দিতে রোশনির অনবরত কাপতে থাকা ঠোটের দিকে এগিয়ে যেতেই কলিংবেলের তীক্ষ্ণ শব্দে থেমে গেল অধির।চোখ মুখ কুচকে বিরক্তির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে গিয়ে বিড়বিড় করে উঠল,
-দিলো রোমান্সের বারোটা বাজিয়ে।আসার আর টাইম পেল না।
অধির বিরবির করতে করতেই রান্না ঘর ত্যাগ করল।রোশনি তাড়াতাড়ি চুলার আঁচ কমিয়ে কেবিনেটে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়ালো।এতোক্ষনে যেন শরিরে প্রান ফিরে পেল। শরিরটা ভয়ানক রকম কাঁপছে তার।কতোটা ভয়ংকর ছিল অধিরের এক একেকটা স্পর্শ!!!কতোটা গভির ছিল!!!উফফ… ভাবতেই গায়ে কাটা দিচ্ছে রোশনির।
অধির বিরবির করতে করতে দরজা খুলতেই দরজার ওপারে আদিকে দাড়িয়ে থাকতে দেখল।অধির কোনো কথা ছাড়ায় বলে বসল,
-আসার আর সময় পাস নাই???
অধিরের কথাটা ঠিক ধরে উঠতে পারলো না আদি।বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে রইল অধিরের বিরক্তি ভরা মুখটার দিকে।পাশ থেকে পিয়া বলে উঠল,
-কেন ভাইয়া…?ভুল সময়ে এসে গিয়েছি?
অধিরের এতোক্ষনে খেয়াল হল পিয়াও আছে।সে তো খেয়ালই করে নি।অধির বাম হাতে ঘাড় ঘষে কিছুটা হাসার চেষ্টা করে অপ্রুস্তত গলায় বলল,
-না না… ভুল সময় হবে কেন? আমি জাস্ট এমনিই বলছিলাম।
আদি এবার বিরস মুখে বলে উঠল,
-তাহলে দরজা থেকে তো সরে দাড়াও..!!ভেতরে ঢুকতে দাও।এমনিতেও আমি তোমাকে দেখতে নয় আমার প্রিয় ভাবিটাকে দেখতে এসেছি।কোথায় সে?
———
সুপার শপে ঘুরে ঘুরে কিছু প্রয়োজনীয় গ্লোসারির আইটেম কিনছিল জয়।হুট করেই কোথা থেকে যেন রিয়ার আগমন ঘটল।রিয়াকে সুস্থ্য দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেও বিরক্তিতে কপাল কুচকে গেল জয়ের।এই মেয়ে এতো বেশি কথা বলে,,, কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মাথা ধরে যায়।আর ও কি করে জানলো সে এখানে আছে? কি আশ্চর্য!! মেয়েটা কি তাকে ফলো করছে? মেয়েটা সাংঘাতিক।এসব ফলো টলো করা সাংঘাতিক প্রকৃতির মানুষদের কাছে খুব একটা কঠিন কিছু নয়।জয় খুব সাবধানে ওকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো।কিন্তু ভাগ্য তার সহায় হল না।রিয়া ঠিক তার সামনে এসেই দাড়ালো।মুখে সেই সদ্য কিশোরিতে পা দেওয়া স্নিগ্ধ বালিকার মতোই জিবন্ত হাসি।নিষ্ষাপ সেই মুখের সাথে বেশ মানানসই হাসি।সেই হাসির রেখা বজায় রেখেই উৎফুল্ল চোখে তাকালো রিয়া।বলল,
-হাই অ্যাংরি প্রিন্স চার্মিং…..।
চলবে……..