শেষ বিকেলের তুমি❤part:2

#শেষ বিকেলের তুমি❤part:2
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤



শুভ্রর মাথা নষ্ট প্রায়,,এসব কি হচ্ছে তার সাথে??এই মেয়ে তার রুমে কি করে??এটা কিভাবে সম্ভব?বাড়িতে এতোগুলো মানুষ অথচ এই মেয়েকে কেউ বাড়িতে ঢুকতে দেখলো না, স্ট্রেঞ্জ।।শুভ্র আবারো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকালো,,লাল শাড়িতে অপরূপা সুন্দরী যাকে বলে,, ঠিক তেমন সুন্দর মেয়েটি।।এমন সুন্দর একটা মেয়ে নিজেকে তার বউ হিসেবে দাবি করছে তাতে শুভ্রর খুশিতে নাগিন ডান্স দেওয়া উচিত কিন্তু শুভ্রর মধ্যে কোনো খুশি খুশি ভাব দেখা যাচ্ছে না।।বরং তার চোখে মুখে বিরক্তি স্পষ্ট,,আর কপালের ভাঁজ তার চিন্তার আকার প্রকাশ করে চলেছে ক্রমাগত।।তার মাথায় এখন শুধু একটাই প্রশ্ন কে এই মেয়ে??শুভ্রর ভাবনার সুতোকে ছিন্ন বিন্ন করে মেয়েটি লাফিয়ে তার সামনে এসে দাঁড়ালো,,

শুভ্র,,,তুমি চলে এসেছো??এতো লেট কেনো করো অলওয়েজ?আমি তোমার উপর রেগে ছিলাম কিন্তু দেখো তোমার মুখ দেখার সাথে সাথে সব রাগ হাওয়া,,(মুচকি হেসে)

মেয়েটি কথাটা বলেই শুভ্রকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো,,এমন কিছু হবে তা শুভ্র চিন্তায় করতে পারে নি।।তার শরীরে যেনো বিদ্যুৎ খেলে গেলো।।এতোক্ষণ শুভ্র ভাবছিলো হয়তো তার সাথে হেলোসিনেশন টাইপ কিছু হচ্ছে,,বাট এখন মনে হচ্ছে ব্যাপারটা বাস্তব,,কিন্তু….??আবার সেই কিন্তু,,শুভ্র সব চিন্তাভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে মেয়েটিকে একঝটকায় নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলো।।

এই মেয়ে কে আপনি হ্যা?একজন অপরিচিত মানুষের বেডরুমে বউ সেজে বসে আছেন আবার মাখামাখি করতে আসছেন,,লজ্জা শরম নেই নাকি??আর ইউ লস্টেট?

মেয়েটি ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে,,যেনো এমন কিছু হবে সেটা সে প্রত্যাশা করে নি।।তার চোখে যেনো হাজার অভিযোগ হাজার প্রশ্ন,,

শুভ্র তুমি এমন কেনো করছো?কি করেছি আমি??বিকেল থেকে অদ্ভূত ব্যবহার করছো…দেখো তুমি যদি মজা করে থাকো তো এখন এসব বন্ধ করো আমার মোটেও ভালো লাগছে না বলে দিলাম,,,এবার রাগ করলে তুমি আমাকে কিছুতেই মানাতে পারবে না হুহ,,,(কাঁদো কাঁদো গলায়)

চুপ,এসব নেকা কান্না বন্ধ করুন।।আপনি রাগ করুন বা সুইসাইড করুন। আই ডোন্ট কেয়ার বাট আপাতত আমার ঘর থেকে ইভেন আমার বাড়ি থেকে বিদেয় হোন,,নয়তো পুলিশ ডেকে হ্যারেজমেন্টের কেস দিয়ে দিবো,,গেট লস্ট(রাগে চিৎকার করে)

শুভ্র?তুমি আমার মৃত্যু কামনা করছো??আর কি বললে আমি বাড়ি থেকে যাবো?? পাগল হয়ে গেছো তুমি??কি আাজেবাজে বকছো??(রাগী গলায়)

যা বলছি তাই,,,জাস্ট গেট লস্ট….

শুভ্রর কথাটা শেষ হতে না হতেই মেয়েটি শুভ্রকে টেনে বিছানায় ফেলে দিয়ে শুভ্রর উপরে উঠে বসলো,,,

কি সমস্যা তোর??কি?বিকাল থেকে খেয়াল করছি….খুব বাড় বেড়েছে না?কোন মেয়ের সাথে প্রেমলিলা করে বেড়াচ্ছিস যে আমাকে ভুলে গেছিস,,বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলছিস,,বল??(কলার টেনে)

শুভ্র ঘটনার আকস্মিকতায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে।।ওর মাথাটা যেনো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।।কোনো মেয়ের এতোটা কাছে আসা হয়নি কখনো,, কথাগুলো যেন সব আগাছালো হয়ে জড়িয়ে যাচ্ছে…..

দ,,দেখুন…..সরুন বলছি।ভা…ভালো হচ্ছে না কিন্তু…সরুন(কাঁপা গলায়)

শশশশশ…কি আপনি আপনি করছো বেবি?কার কাছে মধুর চাক পাইছো যে আমি এখন আপনি হয়ে গেছি..হুম..হুম??

মেয়েটি কথা বলতে বলতে শুভ্রর ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসতেই…শুভ্রর হার্টবিট বেরিয়ে আসার উপক্রম।।কোনোরকম চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো সে…কপালে এই শীতেও অল্প অল্প ঘামের ছড়াছড়ি…হঠাৎই শুভ্র তার মুখে হালকা বাতাস অনুভব করে চোখ মেলে তাকালো।।মেয়েটি তার মুখে ফু দিচ্ছে।।শুভ্র তাকাতেই খিলখিল করে হেসে উঠে…মুখ ভেঙিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।।সবকিছুই যেনো মাথার উপর দিয়ে গেলো তার।।তারাতারি উঠে বসে কয়েকদফা শ্বাস টেনে নিলো,,উফফ আরেকটু হলেই হয়তো শ্বাস আটকে যেতো।।এসব কিছু রিয়েলিটি হতেই পারে না…নিশ্চয় এসব শুভ্রর হেলুসিনেশন….হ্যা তাই হবে…কাল সকালেই শুভ্র সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে যাবে….এভাবে কাল্পনিক বউয়ের প্যারা নিয়ে বেঁচে থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়।।কিছুতেই নয়।।ভাবতে ভাবতে ডানপাশের দেয়ালটাতে তাকিয়ে আবারো একচোট অবাক হতে হলো তাকে,,,একি??এতো শুভ্রর বিয়ের ছবি….আর পাশে বউ সেজে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিও তার পরিচিত….এই সেই মেয়ে যার সাথে কিছুক্ষণ আগেই সে ঝগড়া করলো।।কিন্তু এটা কি করে সম্ভব??হাউ হাউ??তার ভাবনার মাঝ পথেই কানে ভেসে এলো তুমুল হাসির শব্দ।সবাই মিলে এমন পাগলের মতো হাসছে কেনো শুভ্র বুঝতে পারছে না।।এই মাঝরাতে হাসির কম্পিটিশন শুরু করলো নাকি??শুভ্র রুম থেকে বেরিয়ে সোজা নিচে নেমে গেলো…ডাইনিং এ সবাই বসে আছে….সবার সাথে আছে সাহেল আর তার একদিনের বউ।।সাহেলের কথার প্রতিউত্তরেই যে সবাই এভাবে হেসে উঠছে তা বুঝতে আর বাকি রইলো না শুভ্রর।।কিন্তু এই আহাম্মকটা এতো রাতে তাদের বাসায় কি করছে??

কি রে শুভ্র??ভাবির হাতের খাবারের টানে আমি তিনঘন্টার জ্যাম ঠেলেঠুলে মাঝরাতে হাজির আর তুই এভাবে ভেটকিমাছের মতো ভেটকায় আছোস কেন??(ভ্রু কুঁচকে)

“ভাবি” শব্দটা শুনেই বুঝতে পারলো সাহেলও এই মেয়েটাকে তার বউ বলে সম্বোধন করছে।।কি আশ্চর্যের বিষয় যার বউ তারই মনে নাই আর বাকি সবার আনন্দের সীমা নাই।।।কি ঝামেলা।

শুভ্র?দাঁড়িয়ে আসিস কেন বাবা?শরীর খারাপ?এখনো তো ফ্রেশই হোস নি…জলদি গিয়ে কাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে আই,,,খেতে হবে তো নাকি??

না মামনি,,ছেড়ে দাও…আজ ওর ক্ষুধা নেই…. আজকাল বাইরের মধু বেশি মিষ্টি লাগছে কিনা…. ঘরের ভাত গলা দিয়ে নামবে না।।

কি বলছো এসব বউমা??(অবাক চোখে)

ভাবি তোমার কথায় রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি,,কাহিনী কি বলো তো?

কিছু না…উনার পেট ভরা তাই বললাম…ব্যস এইটুকুই(খাবার বাড়তে বাড়তে)

শুভ্র আর কথা বাড়ালো না চুপচাপ রুমে ফিরে এলো।।টেনশনে ক্ষুধা তৃষ্ণা সব মরে গেছে বলে মনে হচ্ছে।।ওদের কথাগুলো খুব স্বাভাবিক ছিলো।।ওদের কথায় এটাই স্পষ্ট মেয়েটা শুভ্রর বউ….কিন্তু তার কিছু মনে পড়ছে না কেন??লাইফের বাকিসব ঠিকঠাক শুধুমাত্র এই বউ বিষয়টি চেঞ্জ হয়ে গেল কিভাবে…এটা কিভাবে হতে পারে??শুভ্রর এখন কি করা উচিত?মেয়েটিকে মেনে নিয়ে সবার সাথে তাল মেলাবে??নাকি বলে দিবে যে তার কিছু মনে নেই?মেয়েটির নামটা পর্যন্ত জানে না শুভ্র,, কিভাবে মানিয়ে নিবে সে???তখনি দরজা খোলার শব্দে ফিরে তাকালো শুভ্র,,হ্যা মেয়েটা এসেছে…যে নাকি তার বউ।।শুভ্র বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় বসে ছিলো।।মেয়েটিকে দেখেই কিছুটা নেড়ে চড়ে বসে বলে উঠলো,,,

শুনুন??

কি সমস্যা??আবার আপনি আপনি শুরু করছো??(রাগী গলায়)

না মানে শুনো,,

জি বলো (দাঁতে দাঁত চেপে)

ত,,তোমার নাম কি??

কথাটা শুনেই মেয়েটা এদিক ওদিক কিছু একটা খুঁজতে লাগলো,,,

কি ব্যাপার… কি খুজঁছো?(ভ্রু কুচঁকে)

ঝাড়ু(দাঁত কেলিয়ে)

কেনো??(অবাক হয়ে)

বিয়ের একবছর পর… তুমি আমার নাম ভুলে গেছো… অসাধারণ না ব্যাপারটা??তাই ভাবছি ঝাড়ুর বাড়ি দিয়ে অভিবাধন জানাবো….কথায় আছে না মারের উপর ঔষধ নেই(রাগী গলায়)

এই না না,লাগবে না।।আমি ঘুমুচ্ছি।।

“একবছর” লাইক সিরিয়াসলি??আমি একবছর ধরে ম্যারিড….আর আমি নিজেই জানি না??উফফফ…এতো কনফিউশান নিয়ে বাঁচা যায়??

#চলবে❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here