শেষ রাত পর্ব-১০

0
1702

#শেষ_রাত
#পর্বঃ১০
#সাইয়ারা_হোসাইন_কায়ানাত

‘কোথায় যাবেন ম্যাডাম? আপনি যেখানে যেতে চাইবেন সেখানেই আপনাকে নিয়ে যাবো।’

ধ্রুবর কথায় আমি বিস্মিত হলাম। বিস্ময়ের দৃষ্টি স্থির করলাম তার দিকে। ধ্রুব আমার হাত ধরে হাঁটছেন খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে। আমার থেকে এক দু পা এগিয়ে আছেন যার কারণে ওনার হাতের বাঁধন খানিকটা শক্ত হয়ে আমার হাতে টান পরছে। আমি হাঁটছি নিঃশব্দে ভাবলেশহীন হয়ে। চোখদুটো যেন জ্বলন্ত আঙ্গার। কান্নার ফলে ক্ষনে ক্ষনে ভারি উত্তপ্ত নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসছে বুক চিড়ে। মাথার মধ্যে কিছু অবাঞ্ছিত, অনুচিত অনুভূতি ঝটলা পাঁকিয়ে আছে নির্দ্বিধায়। আমি যথাসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলাম। দৃষ্টি নামিয়ে ক্ষীণ স্বরে থেমে থেমে বললাম-

‘বাসায় যাবো। তুলতুল অপেক্ষা করছে হয়তো।’

ধ্রুব ঘাড় বাঁকিয়ে আমার দিকে একঝলক তাকালেন। ঠোঁটে এক চিলতে হাসি নিয়ে বললেন-

‘এখন তো বাসায় যাওয়া যাবে না মিসেস ধ্রুব হাসান। আর তুলতুলকে নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে না। আম্মু আছে ওর সাথে আর আমিও কিছুক্ষন আগে কল দিয়েছিলাম। তুলতুল এখন ঘুমাচ্ছে।’

‘কেন! বাসায় যাওয়া হবে না কেন?’

আমি ভীষণ কৌতুহল নিয়েই তৎক্ষনাৎ প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব থামলেন। হাত ছেড়ে পেছন ঘুরে দাঁড়ালেন আমার মুখোমুখি হয়ে। খানিকক্ষণ আমার মুখের দিকে স্থির চেয়ে থেকে নরম স্বরে বললেন-

‘কেঁদেকেটে নিজের যা হাল করেছেন, এই অবস্থা আপনাকে বাসায় নিয়ে গেলে আম্মুর হাজারো প্রশ্নের জবাবদিহি করতে হবে। আর প্রশ্নের যথাযথ জবাব দিতে না পারলে উনি ভাববেন আমি আপনাকে কাঁদিয়েছি। তার চেয়ে বরং আপনি নিজেকে পুরোপুরি স্বাভাবিক করে ঘন্টাখানেক পর বাসা যান। আর আমারও অফিসে কোনো কাজ নেই। তাই আপনাকে কোম্পানি দেওয়াই আমার জন্য ভালো মনে হচ্ছে।’

আমি চুপ থেকে ভাবলাম। ধ্রুবর কথা গুলো যুক্তিসঙ্গত বলেই মনে হলো। কান্নাকাটি করে নিজের যে হাল করেছি এই অবস্থায় বাসায় গেলে মনি মা তার প্রশ্নের ঝুড়ি খুলে বসবেন নিশ্চিত। ওনার প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার চেয়ে ভালো কিছুক্ষন বাহিরে থেকে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেওয়া। আমি মাথা তুলে ধ্রবর দিকে চাইলাম। আমার মতামত শোনার জন্যই হয়তো বেশ আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমি সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে বললাম-

‘আচ্ছা, আপনার যেখানে ইচ্ছে সেখানেই নিয়ে চলুন।’

ধ্রুব অমায়িক ভঙ্গিতে হাসলেন। তার হাস্যজ্বল মুখ নিয়ে এগিয়ে এলেন আমার কাছাকাছি। দু’হাত দিয়ে খুব যত্নসহকারে আমার মুখের উপর এসে পরা এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করে দিলেন। ওড়ানটাও খুব সচেতনতার সঙ্গে ঠিক করে দিয়ে সহজ গলায় বললেন-

‘একটু অগোছালো লাগছিল তবে এবার একদম পারফেক্ট। চলুন এখন যাওয়া যাক।’

ধ্রুব আমার প্রতিত্তোরে অপেক্ষা না করেই হাত ধরে হাঁটা শুরু করলেন। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে তার সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে লাগলাম। ধ্রুবর কাজে আমি হতবাক। হঠাৎ করেই আমার এত খেয়াল রাখছেন। নির্দ্বিধায় যখন তখন আমার হাত চেপে ধরে হাঁটছেন। কান্নার কারণ জানতে চেয়েও আমাকে অস্বস্তিতে ফেলেন নি৷ কিন্তু কেন? এসব কেন করছেন তিনি? কিছুক্ষন আগে মনের ভেতর ছাড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনুভূতি গুলো অস্পষ্ট, ঝাপসা হতে লাগলো। মস্তিষ্কে ঘুরতে লাগলো নানানরকম প্রশ্ন আর কিছু নতুন অনুভূতি। এলোমেলো অশান্ত মনটা অবুঝের মতোই প্রশ্ন করল- ‘ধ্রুব কেন এমন করছেন? সব কিছু জেনেশুনেও কেন এতটা নির্লিপ্ত তিনি? কেন এমন স্বাভাবিক ব্যবহার করছেন?’ অশান্ত মনটাকে শান্ত করার মতো কোনো জবাব মস্তিষ্ক থেকে খুঁজে পাওয়া গেল না। নিরুত্তর, হতাশ মন নিয়েই ধ্রুবর পাশাপাশি হাঁটতে লাগলাম।

ফেব্রুয়ারির শেষ সময়। ফাল্গুনের এক উজ্জ্বল দুপুর ধীরে ধীরেই আঁধারে নিমজ্জিত হলো। আকাশ হলো মেঘাচ্ছন্ন। শীতল ঠান্ডা হাওয়া বইতে লাগলো চারপাশে৷ ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হলো। বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতেই এদিক ওদিকে ছুটোছুটি করে যেতে লাগল সবাই। মিনিট খানেকের মাঝেই খালি হয়ে এলো জনমানবে পরিপূর্ণ রাস্তা। আশেপাশের লোকজনের এত অস্থিরতার মাঝেও ধ্রুব নির্বিকার। তার মাঝে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হলো না। বৃষ্টির পানি স্পর্শ করতে পারেনি তার নির্লিপ্ততাকে। আধভেজা শরীর নিয়ে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যেই আমার হাত ধরে হাঁটছেন। আজ হয়তো আমার হাত ছাড়া পাবে না। আজ সারাক্ষন আমার হাত নিজের হাতের মুঠোয় বন্দী করে রাখার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন হয়তো। চলতে চলতেই আমার চোখ আটকে গেল। কিছুটা দূরে রাস্তার ডান পাশে একটা কদম গাছে। অসময়ের ছোট্ট ছোট্ট কদমফুল। বৃষ্টিস্নাত ভেজা কদম। আমার পূর্নাঙ্গ দৃষ্টি এবং মনোযোগ দুটোই স্থির হলো সেই গাছটায়।

‘খুব সুন্দর তাই না!’

ধ্রুবর কথায় আমি সেইদিকে দৃষ্টি দিয়েই ঘোর লাগা কন্ঠে বললাম-

‘হুম হুম। অনেক বেশিই সুন্দর।’

ধ্রুব আমার হাত ছেড়ে দিলেন। আমার হুশ ফিরলো। ধ্রুব দিকে তাকাতেই স্নিগ্ধ হাসি উপহার দিলেন তিনি। শীতল কন্ঠে বললেন-

‘একদম আপনার মতোই সুন্দর।’

ধ্রুব একটু থেমে কিছু একটা ভাবলেন। ভাবুকতার সঙ্গে বললেন-

‘দাঁড়ান আমি আসছি।’

ধ্রুব চলে গেল সেই গাছটার দিকে। ওনার গায়ে জড়ানো খয়েরী রঙের শার্ট। ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ওনার শার্ট পুরোপুরি না ভিজলেও কাধের দিকটা ভিজে একদম চুপচুপে অবস্থা। আমাকে অবাক করে দিয়ে ধ্রুব কদম ফুল ছেঁড়ার চেষ্টা করতে লাগল। বেশি কষ্ট করতে হলো না। হাত উঁচু করে একবার লাফ দিতেই গাছের ডাল ওনার হাতের মুঠোয় চলে আসলো। অনেক গুলো ফুল থাকা স্বত্তেও তিনি মাত্র দুটি ফুল এনে আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন। মুখে সহজাত হাসি টেনে নিয়ে গাঢ় স্বরে বললেন-

‘গাছের ফুল গাছেই সুন্দর মানায়। কিন্তু বৃষ্টিস্নাত রমনীর হাতে ভেজা কদম ফুল থাকবে না এটা বড্ড বেশিই বেমানান। তবে আমি গাছ থেকে পারমিশন নিয়েই তার ফুল ছিঁড়েছি। গাছটা খুব গম্ভীর গলায় আমাকে অনুমতি দিয়েছে। বলেছে- দুজন মানুষের জন্য শুধু দুটো ফুল দেওয়া যাবে। এর বেশি নিতে চাইলে তার গাছের ফুল হ’ত্যার দায়ে আমাকে এই গাছের ডালেই ফাঁ’সিতে ঝুলতে হবে।’

ধ্রুবর কথা শুনে আমি ফিক করেই হেসে ফেললাম। খেয়াল করলাম। ধ্রুবর ঠোঁটের হাসি আরও প্রসারিত হলো। খানিকক্ষণ হাসার পর ফুল হাতে নিয়ে বললাম-

‘আপনি এসব আজগুবি চিন্তাভাবনা করেন কিভাবে? মাথায় আসে কিভাবে এসব!’

‘বিয়ের আগেই কিছু না করে এক বাচ্চার বাপ হয়ে গেলাম। সেখানে এসব চিন্তাভাবনা করা তো খুবই তুচ্ছ ব্যাপার।’

ওনার দাম্ভিকতা পূর্ন কথায় আমার কপাল কুচকে এলো। ভ্রু জোড়া মাঝে সুতীক্ষ্ম রেখা ফুটে উঠলো। ধ্রুবর বাহুতে হাল্কা আঘাত করে তিক্ত গলায় বললাম-

‘ছিঃ রাস্তাঘাটে এসব কি বলছেন আপনি!’

ধ্রুব এবার শব্দ করেই হাসলেন। প্রাণোচ্ছল হাসিতে ফেটে পরলেন তিনি। আমার হাত ধরে ফিরতি পথে হাঁটতে হাঁটতে বললেন-

‘আচ্ছা এবার চলুন। বাকি কথা না হয় আমাদের রুমে একা একা ফিসফিস করে বলবো।’

দমকা শীতল বাতাসে কাঁপিয়ে দিয়ে গেল আমার অর্ধ ভেজা শরীর। বাতাসের সাথেই তাল মিলিয়ে ধ্রুবর ঝংকার তোলা হাসির শব্দে থরথর করেই কেঁপে উঠলো আমার ভেতরটা। লজ্জারা এসে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আমাকে। অযাচিত লজ্জায় নুয়ে গেল আমার চোখ দুটো। আমি আটকাতে পারলাম না চোখের লজ্জা ভাব। চোখ তুলে চাইতে পারলাম না। ধ্রুবর এই অসহ্যকর হাসিতে লজ্জারা আরও বেশিই উৎসাহ পেতে লাগল। খুব ইচ্ছে করলো কান দুটো তালা দিয়ে রাখি। কিন্তু তা সম্ভব হলো না। আমাকে লজ্জার কাছে মাথা নত করতে হলো। আমাকে অসহায় করে দিয়ে ধ্রুব তার অসহ্যকর হাসিতে আমাকে লজ্জায় ফেলতে লাগলো।

‘পেছনের সিটে তোয়ালে আছে সেটা মাথাটা একটু মুছে নিন।’

ধ্রুবর কথা মতোই গাড়িতে বসে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে লাগলাম। ধ্রুব এসে ড্রাইভিং সিটে বসলেন। তার চুল বেয়ে টপটপ করে পানি পরছে। আমি তোয়ালে এগিয়ে দিয়ে বললাম-

‘নিন মাথা মুছে নিন। এখন কি বাসায় যাবেন নাকি অন্য কোথাও?’

ধ্রুব মাথা মুছতে মুছতেই উত্তর দিল,

‘নাহ একেবারে লাঞ্চ করেই ফিরবো।’

আমি আর কিছু বললাম না। ভেজা শরীর নিয়ে বাসায় ফেরাও ঠিক হবে না। তারচেয়ে বরং আর কিছুটা সময় পাড় হলেই যাওয়া ঠিক হবে। এখন ওনার কথা মতো চলাই শ্রেয় মনে হচ্ছে।

‘তুলতুলের আম্মু! আপনার কি অস্বস্তি লাগছে আমার সামনে বসে থাকতে? তখনকার ঘটনার জন্য আমি আপনাকে কিছু বলিনি এই নিয়েই হয়তো মনে মনে অস্বস্তিবোধ করছেন তাই না!’

আমি অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে অনবরত কাটা চামচ দিয়ে খাবার নাড়তে লাগলাম। খানিকক্ষণ সময় নিয়ে ইতস্তত করে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম। ধ্রুব মৃদু হাসলেন। টেবিলের উপরে দু’হাতে তুলে দিয়ে কিছুটা ঝুঁকে এলেন। শান্ত গলায় বললেন-

‘শুনন অনন্য৷ আমি আপনার উপর কোনো প্রকার চাপ সৃষ্টি করতে চাই না। আমি জানি আপনার জন্য এই মুহুর্ত গুলো খুবই কষ্টদায়ক। মনের ভেতরে কষ্ট পুষে রেখে প্রতিটি মুহুর্ত সবার সামনে স্বাভাবিকভাবে থাকা এটা নির্দ্বিধায় খুব কঠিন একটা কাজ। আপনি প্রতিনিয়ত এই কঠিন কাজটাই করে যাচ্ছেন। নিজেকে শক্ত রাখছেন। এর মধ্যে আমি আপনার প্রাক্তনের কথা তুলে আপনার মন ভাঙতে চাই না। ক্ষত জায়গায় নতুন করে আঘাত করতে চাই না। আমি চাইলেই পারতাম বিয়ে হওয়ার পর পরই আপনার উপর স্বামীর অধিকার খাটাতে। অতীত ভুলে যাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত আপনাকে চাপ দিয়ে বাধ্য করতে৷ কিন্তু এসব করে কি লাভ! আমি কোনো কাপুরুষ নই, যে মেয়েদের উপর জোর খাটাবো। সব কিছুতে জোর খাটানো গেলেও কারও মনের উপর জোর খাটানো যায় না। আপনি আপনার ভালোবাসার মানুষ হারিয়েছেন বুঝলাম। এই সত্যটা মেনে নিয়ে নতুন করে সংসার করতেও যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন এটাও আমি বুঝি। কিন্তু আপনি সেই সময় টুকু পাননি। তাই আমি আপনাকে স্পেস দিচ্ছি। নিজের মতো করে থাকার সুযোগ দিচ্ছি। আপনি যেন নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারেন। অতীত মেনে নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে। এবার নিশ্চয়ই বুঝেছেন কেন আমি আপনার ব্যাপারে উদাসীন, নির্লিপ্ত।’

আমি প্রতিত্তোরে কিছু বললাম না। ওনার কথা গুলো শুনে হতভম্ব হয়ে বসে রইলাম। ধ্রুব খানিকটা নেড়েচেড়ে আবারও বললেন-

‘আমার সাথে আপনি ফ্রেন্ডলি কথা বলতে পারেন। আমি আপনার হাসবেন্ড হিসেবে না আপনার পূর্বপরিচিত একজন হয়ে কথা বলছি। তোকে তো আমি ছোট থেকেই চিনি। সারাদিন আমার মা আর আপুর পেছনে লেগে থাকতি। আমার পেছনেও ঘুরতি আইসক্রিম খাওয়ার জন্য। তুই ভুলে গেলেও আমি কিন্তু ভুলিনি।’

ধ্রুব কথা গুলো বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম। কিন্তু শেষের কথা গুলো শুনেই হেসে ফেললাম। মানুষটা খুব দ্রুত কথা বলার ধরন পালটে ফেলতে পারেন। ওনার নির্লিপ্ততা এতদিন আমার রাগের কারণ হলেও আজ সব কিছু শুনে ওনার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হলো। খানিকটা ভালো লাগার জন্ম নিলো মনে। আমি মুচকি হাসলাম৷ কিন্তু কিছু বললাম না৷ রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসবো তখনই ধ্রুব চেয়ার ছেড়ে উঠে যেতে যেতে বললেন-

‘আমার হলে পুরোপুরি আমারই হতে হবে।’

ধ্রুব অতি স্বাভাবিক ভঙ্গিতে হেঁটে চলছেন। আমি বিস্ময়ের দৃষ্টিতে ওনার দিকে চেয়ে রইলাম। হঠাৎ করেই এই কথার কি মানে? কেন বললেন এই কথা?

রাত হতেই হু হু করে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে লাগলো। অসময়ের জ্বর কাবু করে নিলো আমাকে। শরীরের ভেতরটা যেন ভ্যাপসা গরমের সিদ্ধ হতে লাগল। চোখদুটো জ্বালা করছে খুব। চোখ মেলে চেয়ে থাকাটাও মুশকিল মনে হচ্ছে। আমি অলস ভঙ্গিতে চিঠি আর ম্যাপল পাতায় আলতোভাবে হাত বুলিয়ে চাপা দিয়ে রাখলাম ডায়েরির ভাঁজে। বারান্দা দিয়ে আসা হিমশীতল বাতাসে পুরো রুম যেন হিমঘরে পরিনত হয়েছে। খালি রুম। অন্য কেউ নেই রুমে। তুলতুল খেলতে খেলতে মনি মা’র রুমেই ঘুমিয়ে পরেছে৷ বাসায় আসার পর থেকেই আমার সাথে চিপকে লেগে ছিল পুরোটা সময়। যেন আমাকে ছেড়ে দিলেই আমি হারিয়ে যাবো। রাতে ধ্রুব অফিস থেকে আসার পরেই আমাকে ছেড়েছে। ধ্রুবও হয়তো মনি মা’র রুমেই এখন। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। টেবিলের ডয়ারে ডায়েরিটা রেখে উঠে দাঁড়ালাম। কি আশ্চর্য। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিটুকুও যেন পাচ্ছি না। ক্ষত বিক্ষত হৃদয়ে যন্ত্রণা যে এখন পুরো শরীরে ছড়িয়ে পরলো। সাদাফের বিষাক্ত ভালোবাসায় বিষিয়ে উঠলো আমার সারা দেহ।

চলবে….

[ঈদ মোবারক। সবাইকে ঈদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। দোয়া করি আপনজনদের সাথে আপনাদের ঈদের খুব আনন্দে কাটুক। হাসিখুশিতে ভরপুর থাকুক ঈদের সহ বাকি দিন গুলো। সবাইকে অনেক অনেক ভালোবাসা আর ধন্যবাদ।❤️❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here