#শেষ_রাত
#পর্বঃ৪
#সাইয়ারা_হোসাইন_কায়ানাত
‘কি হলো! এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছিস কেন?’
আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলাম সামনের মানুষটার দিকে। অপরিচিত একটা মেয়েকে কত সুন্দর নির্দ্বিধায় ‘তুই’ সম্মোধন করে কথা বলছে। যেন আমি তার চিরচেনা খুবই কাছের একজন মানুষ। আমি এবার সত্যিই তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলাম। জানালা দিয়ে হুড়মুড়িয়ে সূর্যের আলো এসে পরেছে তার গায়ে। হাল্কা ব্রাউন কালারের চোখ দুটো চিকচিক করছে আলোতে। অগোছালো চুল আর হাল্কা ভাজ পরা সাদা শার্টটে কি অদ্ভুতই না দেখাচ্ছে তাকে। গাল ভর্তি দাঁড়ি গুলোও একদম অবাঞ্চিত মনে হচ্ছে। যেন বহু অবহেলায় বেড়ে উঠেছে তারা। বেপরোয়া একজন মানুষ। এই মানুষটাকে আমি আগে কখনই দেখিনি। দেখেছি বলে মনেও পরছে না আমার।
‘তোকে কি এখন নিমন্ত্রণ দিতে হবে বসার জন্য! আম্মু তো আমাকে বলেনি একথা৷ আমার জানা থাকলে অবশ্যই একটা নিমন্ত্রণ পত্র নিয়ে আসতাম। এখন যেহেতু আনিনি তাই চুপচাপ বসে পর অনু।’
লোকটার কথায় বুঝলাম তিনিই ধ্রুব। আমার মনে থাকা ক্ষীণ সন্দেহ দূর হলো। আমি আমার হতচকিত ভাব কাটিয়ে উঠলাম। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে তার সামনের চেয়ারে বসলাম মূর্তির মতো। আমি বসার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি আবারও কথা বলা শুরু করলেন। কন্ঠে হতাশা প্রকাশ করে বললেন-
‘আমি লাস্ট তোকে দেখেছিলাম তখন তোর বয়স ছয় কিংবা সাত বছর ছিল। তবুও আমি তোকে দেখা মাত্রই চিনে ফেললাম। আর আমি তো তখন কত বড় ছিলাম তারপরও তুই আমাকে চিনতে পারলি না। এটা কেমন কথা!’
আমি সরু চোখে তার দিকে তাকালাম। বেশ স্বাভাবিক ভাবে নরম সুরে বললাম-
‘আপনার মুখভর্তি দাঁডি কিংবা এমন অগোছালো ভাব আগে ছিল না তো তাই চিনতে পারিনি। আর হ্যাঁ আপনি যে বার বার আমাকে ‘তুই’ সম্মোধন করছেন, এটা আমাকে বিভ্রান্ত করার জন্যই করছেন। তা আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি।’
‘কিভাবে বুঝলি!’
আমি নিজেকে যথাসাধ্য গম্ভীর করে তুললাম। চাহনি তীক্ষ্ণ করে কড়া গলায় বললাম-
‘আপনার সাথে কোনো কালেই আমার এতটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো না। যে এতদিন পর দেখা হওয়ায় এভাবে আন্তরিক ভঙ্গিতে কথা বলতে হবে। তাই দয়া করে আমার সাথে এভাবে কথা না বললেই আমি খুশি হবো।’
‘ওকে ওকে রেগে যেতে হবে না। আমি তো জাস্ট আপনার সাথে মজা করছিলাম। তবে আমি কিন্তু আগে আপনাকে তুই করেই বলতাম। তা হয়তো আপনার মনে নেই।’
ধ্রুবর কথায় আমি গম্ভীরমুখে বললাম-
‘ছোট ছিলাম তাই এসব মনে না থাকারই কথা।’
ধ্রুব নির্বিকার ভঙ্গিতে চেয়ারে গাঁ এলিয়ে দিলেন। ভ্রু জোড়া ঈষৎ কুচকে স্থির তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। কি দেখছেন এভাবে? যাকে বিয়ে করবে তার রূপ আছে কি-না! নাকি কোনো খুঁত খুঁজে বের করতে চাচ্ছেন! উনি নিশ্চয়ই ভেবেছিলেন কোনো রূপবতী মেয়ে হবে ওনার বউ। ওনার জীবনসঙ্গী। তবে আমি সেই রূপবতী নই। এখন হয়তো আমার মতো শ্যামবর্ণা মেয়ে দেখে কিছুটা হতাশ হয়েছেন। আফসোস হচ্ছে নিশ্চয়ই!!
‘এই যে সানসাইন! দয়া করে আপনার ঘড়িটা একটু খুলে রাখুন। রোদের আলো আপনার ঘড়িতে পরছে। আর সেখান থেকে তীর্যক রশ্মি এসে আমার চোখে পরছে। ঠিক মতো চোখে দেখতে পারছি না আমি।’
আমি নিঃশব্দে টেবিলের উপর থেকে হাত নিচে নামিয়ে ফেললাম। কথা বাড়ালাম না। ইচ্ছে করছে না কথা বলতে। মাথাটা বড্ড এলোমেলো লাগছে। সাদাফের কথা ওনাকে বলে দিতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কিভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছি না। ওনাকে আগে থেকে সব বলে রাখাই হয়তো উচিত হবে।
‘শুনুন মিস, আমি সোজাসাপ্টা কথা বলার মানুষ। কথা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলা আমার স্বভাবের মধ্যে নেই। তাই আমি কিছু কথা বলছি মনোযোগ দিয়ে শুনুন।’
‘জ্বি বলুন আমি শুনছি।’
ধ্রুব সোজা হয়ে বসলেন। ওয়েটার এসে দু মগ ধোঁয়া ওঠানো কফি দিয়ে গেলেন। ধ্রুব কফির মগের দিকে তাকিয়ে খুবই সহজ গলায় বলতে লাগলেন-
‘এই মুহুর্তে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছেই আমার ছিল না। কিন্তু আম্মু নিজে থেকেই সব কিছু ঠিক করেছে ফেলেছেন। আর ওনার অমতে যাওয়াও আমার পক্ষে সম্ভব না। তাই বিয়েতে রাজি হয়েছি। আর তুলতুলের ব্যাপারটাও আমার মাথায় আছে।’
ধ্রুবর কথায় আমি কোনো প্রতিক্রিয়া করলাম না। ভ্রুক্ষেপহীন গলায় প্রশ্ন করলাম-
‘তো আমাকে কি করতে বলছেন?’
ধ্রুব একরাশ বিরক্তি নিয়ে তাকালেন আমার দিকে। কপালে ভাজ পরেছে। চোখদুটো এখন আর চিকচিক করছে না আগের মতো। সূর্যের আলো এখন আর নেই। আমি এবার টেবিলের উপরে হাত তুলে রাখলাম। ধ্রব আবারও নির্লিপ্ততার সঙ্গে বললেন-
‘আমি স্বাধীন ভাবে চলার মানুষ। আমার দ্বারা বিয়ে নামক সম্পর্কের এত দায়বদ্ধতার মধ্যে থাকা অসম্ভব। এত এত দায়িত্ব কিংবা নিজের স্বাধীনতাকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়া। কোনো কিছু করার আগে অন্য আরেকজনের পারমিশন নেওয়া৷ এটা করলাম কেন! ওটা করলাম কেন! এসবের কৈফিয়ত দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না৷ তাই আমি আগেই বলে রাখছি বিয়ের পর আমার উপর কোনো প্রকার জোর খাটাতে পারবেন না। আমি এটা পছন্দ করি না। আমি আমার মতো চলতেই সাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আমি কি করবো না করবো তা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনে অন্য কারো অধিকার খাটানো সহ্য করবো না। এটা আপনি বিয়ের শর্ত হিসেবে ভাববেন না-কি অন্য কিছু তা আপনার ব্যাপার।
আমি মনে মনে তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে হাসলাম। আমার অবচেতন মন বলছে আমার সামনে সাদাফ বসে আছে। সাদাফের সেই হাসি হাসি মুখটা ভাসছে আমার চোখের সামনে। কিন্তু না আমার সচল মস্তিষ্ক ধ্রুবকে আবিষ্কার করলো আমার সামনে। নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে থাকা মানুষটা ঠিক যেন সাদাফের মতোই মুক্ত পাখির মতো থাকতে চায়৷ সাদাফের মতোই অন্যকারো কোনো কথা শুনবে না। নিজের মতো চলবে, ঘুরবে, খাবে সব করবে। তাকে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা কারও থাকবে না।
আমি মৃদু হেসে নরম গলায় বললাম-
‘কারও উপর অধিকার খাটানোর ইচ্ছে আমার নেই। আমি বিয়েতে রাজি হয়েছি একমাত্র তুলতুলের জন্য আর মনি আন্টির কথা রাখার জন্য। আপনি কে! আপনি কি করেন বা ভবিষ্যতে কি করবেন এসব দেখার বিষয় আমার না।’
‘যাক তাহলে আর কোনো চিন্তা নেই। এবার নিশ্চিন্তে আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি। তবে এই শর্ত গুলো যেন সব সময় মনে থাকে। বিয়ের পর আবার প্যারাময় স্ত্রী হয়ে আমাকে প্যারা দেওয়ার কথা চিন্তা করবেন না।’
আমি হাল্কা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম। ধ্রুব আর কোনো কথা বললেন না। আমি বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে শক্ত করলাম। নিম্ন স্বরে বললাম-
‘আমারও কিছু কথা বলার ছিল আপনাকে।’
ধ্রুবর নির্লিপ্ত চাহনি এবার আমার মাঝে নিবদ্ধ হলো। নিঃশব্দে চেয়ে রইলো মিনিট খানেক সময়। কফির মগ হাতে নিয়ে দৃষ্টি নামিয়ে অত্যন্ত সহজ গলায় বললেন-
‘নিশ্চয়ই আপনার রিলেশন আর প্রেমিকের কথা তাই তো!’
বিস্ময়ে আমি হতবাক। অবাক দৃষ্টিতে ধ্রুবর দিকে তাকালাম। বুঝতে চেষ্টা করলাম তার ভাবাবেগ। তিনি আগে থেকে কিভাবে বুঝলেন আমি এসব বলতে চাই! উনি কি মানুষের মন পড়তে জানেন! নাকি আমার বিষয়ে আগে থেকে খোঁজ খবর নিতে এসেছেন! আমার মনে প্রশ্নের খেল চলছে। সেই খেলা থামিয়ে দিতে ধ্রুব শান্ত গলায় বললেন-
‘অবাক হওয়ার কিছু নেই। আপনাকে দেখে যে কেউ বুঝতে পারবে আপনি মানসিক চাপের মধ্যে আছেন। দুঃশ্চিন্তা অথবা নির্ঘুমে আপনার চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেছে। আর চোখের অবস্থা না-ই বা বললাম। সবাই হয়তো ভাবছে বিয়ের চিন্তায় এমন হচ্ছে তাই কেউ কিছু বলছে না। তবে আমার মনে হচ্ছে এ বিয়ে নিয়ে আপনার এতটা মানসিক চাপ থাকার কথা না। বাকি আরেকটা কারণ থাকতে পারে তা হলো প্রেমিকের কথা। এখন আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আমার ধারনাটাই ঠিক।’
আমি ফুস করে শ্বাস ছাড়লাম। দৃষ্টি নামিয়ে নিলাম তার থেকে। লোকটাকে বেপরোয়া মনে হলেও তিনি আসলে বেপরোয়া নন। হয়তো কিছু কিছু জিনিস খুব নিখুঁতভাবে শনাক্ত করতে পারেন। খুব মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন তার আশেপাশের সবটা। আর আমি না বললেও হয়তো তিনি সব বুঝে যেতেন।
‘হ্যাঁ আপনার ধারণাই ঠিক। আর আমি আমার অতীত লুকিয়ে রেখে আপনাকে অন্ধকারে রাখতে চাই না। আমি চাইনা পরে অন্য কারও কাছ থেকে এসব শুনে আপনার মনে হোক যে আমি আপনাকে ধোঁকা দিয়েছে, মিথ্যা বলেছি। তাই আমি আমার দিক থেকে সব কিছু ক্লিয়ার করতে চাই।’
ধ্রুব হাসলেন। খুবই সহজ সরল হাসি৷ কফির মগে চুমুক দিয়েই কপাল কুচকে ফেললেন। হয়তো কফি ঠান্ডা হয়ে গেছে। কফির তিক্ত স্বাদেই মুখ এমন বিকৃতি হয়েছে তার।পরক্ষণেই তিনি কফির মগ রেখে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বললেন-
‘আপনার সাহস দেখে মুগ্ধ হলাম। তবে যাইহোক আপনার অতীত নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই। নিশ্চিন্তে থাকুন। তিনদিন পর বিয়ে তা নিয়ে চিন্তা করুন।’
আমি আর কিছু বললাম না। মিনিট পাঁচেক নিঃশব্দে কাটিয়ে দিলাম দুজনে। খানিকক্ষণ পর আমি ধ্রুবর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে উঠে দাঁড়াতেই ধ্রুব ডাকলেন-
‘এই যে শুনুন!’
আমি ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম ওনার দিকে। উনি বরাবরের মতোই সহজ গলায় বললেন-
‘আপনি একদম তুলতুলের মতো হয়েছেন। সরি মানে তুলতুল দেখতে আপনার মতো হয়েছে। তুলতুলের ঠোঁটের উপরেও আপনার মতো তিল আছে। যদিও তুলতুলের তিলটা ততটা-ও স্পষ্ট এখনও হয়নি তবে আমি খেয়াল করেছি। আর আমার কাছে ওই তিলটা খুব ভালো লাগে। তবে এখন আপনার থুতনির নিচের বড় তিলটা ভালো লাগছে। আই থিংক তুলতুলের থাকলেও ভালো লাগতো।’
আমি হতবিহ্বল চোখে ধ্রুবর দিকে চেয়ে রইলাম। এই লোক এতক্ষণ ধরে আমার মুখের তিল গুলো নিয়ে গবেষণা করেছে!! এইজন্যই কি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন! ওনার কথার প্রতিত্তোরে কি বলা উচিত তা আমার মস্তিষ্ক খুঁজে বের করতে পারলো না। মস্তিষ্ক ব্যর্থ হলো তার কথার জবাব দিতে। আমি মলিন হেসে পা বাড়ালাম রেস্টুরেন্টের সদর দরজার দিকে। পেছন ফিরে তাকালম না। ধ্রুবকে দেখ যতটুকু ধারণা হয়েছে তা অনুযায়ী ধ্রুবর কোনো মাথা ব্যথা নেই আমার নিঃশব্দে চলে আসা নিয়ে। ধ্রুবর গাঁ ছাড়া ভাব সাদাফের মতোই প্রখর। অবশেষে কি তাহলে সাদাফের মতো একজনকে আমার বিয়ে করতে হবে! আমি কি এটা মেনে নিতে পারবো! সারাজীবন কি তাহলে সাদাফের এই বেপরোয়া স্বভাবটা আমাকে ধ্রুবর মাঝে দেখতে হবে! যে স্বভাবের জন্য আমি আজ আমার সুখ হারিয়েছে, আমার ভালোবাসা হারিয়েছে। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি সাদাফের অপেক্ষায়। আমি জানি সাদাফ আসবে না। তবুও ব্যর্থ অপেক্ষা করে নিজেকে স্বান্তনা দিচ্ছি। আমি জানি আমার বিয়ের আগে কিছুতেই আসবে না। আর আমিও পারবো না তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে। সাদাফ হয়তো কোনো এক অচেনা দেশে ট্যুর দিয়ে বেড়াচ্ছে বন্ধুদের সাথে। বেপরোয়া ভাবে। মুক্ত পাখির মতো। তার চিন্তা নেই তার ভালোবাসা নিয়ে। তার অনুপাখিকে নিয়ে। সাদাফ এবার নিজের অজান্তে তার অনু পাখিকে হারিয়ে ফেলল। এই তিক্ত সত্যটা কি মানতে পারবে সাদাফ?
বর্তমান,
‘তুলতুলের আম্মু আপনি ঠিক আছেন তো! দরজাটা খুলুন।’
ধ্রুব কথা গুলো বলার সাথে সাথেই বারান্দার দরজায় আস্তে করে আঘাত করলেন। আমার ধ্যান ফিরলো। খানিকটা নেড়েচেড়ে বসলাম আমি। হাতের উল্টো পিঠে চোখের জল মুছে নিলাম। এখন আর নিজের মধ্যে কোনো প্রকার রাগের উপস্থিতি টের পেলাম না। সকল রাগ এখন মন খারাপে পরিনত হয়েছে।
‘আচ্ছা তুলতুলের আম্মু আমি সরি। আমার ভুল হয়েছে আপনার পারমিশন ছাড়া ডায়েরি ধরা। আমি আমার ভুল স্বীকার করছি। আপনি দয়া করে রুমে আসুন প্লিজ।’
আচমকাই খেয়াল করলাম ধ্রুব বেশ কিছুক্ষণ ধরে আমাকে ‘তুলতুলের আম্মু’ বলে ডাকছে। অতিরিক্ত রাগের কারণে এতক্ষণ খেয়াল করিনি৷ কিন্তু হঠাৎ করে এভাবে ডাকছেন কেন? আন্টির সামনে তুলতুলকে আমাদের মেয়ে বলে পরিচয় দিয়েছি তাই!!
আমি ডায়েরিটা সামনে নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে উঠে বারান্দার দরজা খুলে দিলাম। ধ্রুব হয়তো দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাই দরজা খুলে দেওয়ার সাথে সাথেই ধ্রুব হুড়মুড়িয়ে আমার উপর এসে পরলো। আমি এক হাতে তার বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বললাম-
‘কি করছেন কি! সোজা হয়ে দাঁড়ান।’
ধ্রুব সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে অপ্রস্তুত গলায় বললেন-
‘সরি আসলে খেয়াল করিনি আপনি দরজা খুলে দিয়েছেন।’
ধ্রুব কিছুটা থেমে আবারও বললেন-
‘সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছি তো। এবার আপনি হাত সরান আমার পারসোনাল বুক থেকে।’
ধ্রুবর কথা শুনতেই খেয়াল হলো আমার এক হাত এখনও তার বুকে রাখা। আমি চট করে হাত সরিয়ে ফেললাম। খানিকটা লজ্জাও পেলাম। তারচেয়েও বেশি বিস্মিত হলাম ওনার কথায়। পারসোনাল বুক মানে কি! এসব কি ধরনের উদ্ভব কথাবার্তা! আমাকে চুপ থাকতে দেখে ধ্রুব শান্ত গলায় বললেন-
‘আমি সরি। আমার উচিত হয়নি আপনার পারসোনাল ডায়েরি পড়া। আর আপনার প্রাক্তনকে নিয়ে ওসব কথা বলাও ঠিক হয়নি। আমি সরি তুলতুলের আম্মু।’
আমি কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। ওনার দিকে চেয়ে থেমে থেমে বললাম-
‘ইটস ওকে তুলতুলের আব্বু।’
আমি ধ্রুবকে পাশ কাটিয়ে রুমে আসলাম। পেছন থেকে ওনার মৃদু হাসির শব্দ শুনতে পেলাম। আমিও স্মিত হাসলাম।
চলবে..
[অনেকেই ইনবক্সে মেসেজ দিচ্ছে তাদের একটাই কথা গল্প তাদের নিউজফিডে যাচ্ছে না৷ তাই সবাইকে কমেন্ট করার অনুরোধ করা হলো যেন সকলের কাছে গল্প পৌঁছাতে পারে। সবাইকে ধন্যবাদ আর ভালোবাসা।❤️]