শেষ রাত পর্ব-৩

0
1925

#শেষ_রাত
#পর্বঃ৩
#সাইয়ারা_হোসাইন_কায়ানাত

‘তুলতুল ওনার প্রথম সংসারের মেয়ে না। বরং আমিই ওনার প্রথম এবং একমাত্র স্ত্রী। আর তুলতুল ওনার বড় বোনের মেয়ে। যে কি-না তুলতুলকে জন্ম দিতে গিয়েই মারা গেছেন। তবে হ্যাঁ তুলতুল এখন থেকে আমাদের মেয়ে। আমার মনে হচ্ছে আপনার মাথায় কিছু ভুল ধারণা বাসা বেধেছিল আন্টি। আশাকরি সেই ভুল ধারণা এখন চলে গেছে। আর আন্টি আপনি তো বড় মানুষ। তাই বলবো অবুঝের মতো সঠিক বিষয় না জেনেই কাউকে কিছু বলবেন না।’

আন্টি মুখ অন্ধকার করে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন। মুখ দিয়ে আর দ্বিতীয় কোনো বাক্য বের করার সাহস বোধহয় পেলেন না। আমি পেছন ঘুরে ড্রয়িং রুমের জন্য পা বাড়াতেই মুখোমুখি হলাম ধ্রুবর। দারুণ শান্ত শীতল তার চাহনি। চোখ দুটো যেন কিছু বলতে চাইছে আমাকে। কিন্তু কি? আমি বুঝতে পারলেন না। আমার চোখাচোখি হতেই ওনার দৃষ্টি নামিয়ে নিলেন। পাশেই ভাইয়া তুলতুলকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি মলিন হাসলাম৷ হাত বাড়িয়ে তুলতুলকে নিজের কাছের নিতে চাইলাম৷ তুলতুল অনায়াসেই আমার কোলে আসলো৷ আশ্চর্যজনক ভাবেই মেয়েটা আমার কোল থেকে হাত বাড়িয়ে আন্টির কোলে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলো। আমি কপাল কুচকালাম। একটু আগেই তো আন্টি তুলতুলকে তুচ্ছ করে কথা বললেন। আর এই মেয়ে কি-না তার কোলেই যেতে চাইছে!! আমাকে অবাক করে দিয়ে আন্টি হাসি মুখেই তুলতুলকে কোলে নিলেন। খুব আদুরে গলায় কথা বলতে লাগলেন তুলতুলের সঙ্গে। আমি নিঃশব্দে দেখলাম কিন্তু তেমন কিছু বললাম না। ধ্রুবর দিকে ফিরে তাকাতেই খেয়াল করলাম তিনি এখানে নেই। চলে গেছেন হয়তো কিছুক্ষণ আগেই। আমি আর সেদিকে পাত্তা দিলাম না। উনি ওনার মতো থাকবেন। আমি তার বিষয়ে কোনো প্রকার নাক গলাবো না এটাই তো ছিলো আমাদের শর্তে। আমি ছোট একটা শ্বাস ফেলে ভাইয়ার সঙ্গে চলে গেলাম।

রাতের খাবার শেষ হয়েছে প্রায় ঘন্টা খানেক আগে। তবুও আমি ড্রয়িং রুমে ঠায় বসে আছি। এর কারণ হলো আমার রুমে যেতে ইচ্ছে করছে না। ধ্রুব আমার রুমে থাকায় অস্বস্তিবোধ করছি খুব৷ ভেবেছিলাম তুলতুল আমাদের সাথেই থাকবে আমার রুমে। কিন্তু তা আর হলো না। তুলতুল ভাইয়ার গলা জড়িয়ে ধরে অনেক আগেই ভাইয়ার রুমে ঘুমিয়ে গেছে। খুব চেষ্টা করেও তাকে আনা গেল না। আর কোনো উপায় না পেয়ে হতাশ হয়ে আমার রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম। রুমের পাশে বেশ খানিকটা সময় পায়চারি করে অবশেষে রুমে গেলাম। রুমের ভেতরে আসতেই আমার মেজাজ খারাপ হলো। তরতর করে মাথায় রক্ত উঠে গেল। শরীরের প্রতিটি শিরায় শিরায় বয়ে গেল অবাঞ্ছিত রাগ, জেদ আর ক্ষোভ। জীবনে প্রথম আমার এতটা রাগ উপলব্ধি করলাম৷ রাগের চোটে সাথেই সাথেই আমার মাথায় যন্ত্রণা শুরু হলো। কোনো কিছু না ভেবেচিন্তেই ছোঁ মেরে ধ্রুবর হাত থেকে আমার ডায়েরিটা ছিনিয়ে নিলাম। ধ্রুব মাথা তুলে নির্বিকার ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকালেন। থরথর করে কাঁপতে লাগলো আমার হাত। হাতের ডায়েরিটার দিকে এক নজর তাকিয়ে রাগে গর্জে উঠে বললাম-

‘আমার ডায়েরি ধরার অনুমতি আমি কাউকে দেইনি। আপনার মধ্যে কি এই কমনসেন্স টুকু নেই যে কারও পারমিশন ছাড়া তার পারসোনাল জিনিস ধরতে হয় না৷’

‘তুলতুলের আম্মু, আমি শুধুমাত্র বোরিংনেস কাটানোর জন্যই ডায়েরিটা সামনে দেখে পড়তে বসছিলাম।’

ধ্রুব সহজ সরল স্বীকারোক্তি আমার রাগ বৃদ্ধির কারণ হলো। পুরনো বিষাক্ত স্মৃতি গুলোর কথা মনে পড়তেই রাগ বাড়তে লাগলো। আমি এমনটা ছিলাম না। কখনই না। রাগ প্রকাশ করা আমার স্বভাবের মধ্যে কখনোই ছিল না। কিন্তু আজ পারলাম না নিজের রাগ সামলিয়ে রাখতে। কিছুতেই পারলাম না আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে।

‘কারও পারসোনাল ডায়েরি পড়া কোনো গল্পের বই পড়ার মতো না। নিজের বোরিংনেস কাটানোর জন্য হয়তো গল্পের বই পড়া যায়। তবে কারও একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতি গুলোর ব্যবহার করা মোটেও সামান্য বিষয় না।’

আমি রাগে ফুসতে লাগলাম। তবে ধ্রুব মাঝে কোনো প্রকার ভাবান্তর ঘটলো। ঠিক যেন সাদাফের মতোই নির্বিকার, নির্লিপ্ত। সব কিছুই স্বাভাবিক যেন কিছুই হয়নি। কিছু ঘটেই নি এখানে।

‘আপনি শুধু শুধুই রেগে যাচ্ছেন তুলতুলের আম্মু। ডায়রি পড়ায় কোনো সমস্যা হওয়ার কারণ তো আমি দেখছি না। আপনার প্রাক্তনের কথা তো আমি আগে থেকেই জানি। তবে আপনার প্রাক্তন যে এতটা বেপরোয়া তা এখন জানলাম।’

আমার রাগের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেল। কিছু বলার শক্তি পেলাম না। গলার মাঝেই আটকে গেল সকল কথা। অসহায় বোধ করলাম রাগ প্রকাশ করতে না পেরে। দুচোখ দিয়ে উপচে পরতে লাগলো নোনাজল। আর কোনো কথা না বাড়িয়ে ছুটে চলে আসলাম বারান্দায়। দরজা লাগিয়ে নিজেকে বন্দী করে নিলাম অন্ধকার বারান্দার মাঝে। এই অন্ধকারটাই এখন আমার শান্তির জায়গায়। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা।

একুশ দিন আগের স্মৃতি গুলো চড়ে বসলো মাথায়। বিচ্ছেদের দাহনে পুড়তে লাগলো আমার মন। কে বুঝবে এই অসহ্য যন্ত্রণা! মানুষটা কি আদোও জানতে পেরেছে আমার বিয়ের কথা! সত্যি সত্যি আমাদের বিচ্ছেদে কথা? আমার ব্যর্থতা আর তার বেখেয়ালির কথা! বারান্দার এক কোণে চুপটি মেরে বসলাম। মাথায় তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। বিষাক্ত স্মৃতি গুলো মস্তিষ্কে দিশেহারা হয়ে ছুটে চলছে। সব কিছুই যেন এলোমেলো লাগলো।

একুশ দিন আগে,

আচমকাই চুলে টান পড়ায় আমি মাথা তুলে তাকালাম। সাথে সাথেই ছোট্ট বাচ্চা একটা মেয়ে তার আধো আধো গলায় ‘মাম্মা’ বলে ডাকলো আমায়। আমি থমকে গেলাম। অদ্ভুত এক অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত হলাম। জীবনে প্রথম মাম্মা ডাক শোনার এক অদ্ভুত অনুভূতি। হাতের উল্টো পিঠে চোখের জল মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেওয়ার চেষ্টা করলাম খুব। বাচ্চা মেয়েটা আবারও আমায় ‘মাম্মা’ বলে ডাকলো। আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম-

‘তুমি এখানে একা কেন বাবু?’

আমার কথা শুনে মেয়েটা কি বুঝলো জানি না। তবে দেখে মনে হলো বেশ খুশি হয়েছে। আমার জামা টেনে ধরে কোলে উঠতে চাইলো। ছোট্ট বাচ্চা আমার বরাবরই খুব ভালো লাগে। আর এই মেয়েটা একটু বেশিই মায়াবী আর কিউট। তাই হয়তো আমার মন খারাপ নিমিষেই উবে গেল। আমি তাকে কোলে নিতেই এক মধ্যবয়সী মহিলার কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম-

‘নতুন নতুন হাঁটা শিখেছে। তাই বাহিরে আসতেই বেশি তরতর করা শুরু করেছে পাকনিটা।’

আমি নিখুঁত চোখে দেখতে লাগলাম ভদ্রমহিলাকে। কেন যেন খুব পরিচিত মনে হচ্ছে। তিনিও আমার দিকে কিভাবে যেন তাকিয়ে আছেন। খানিকটা সময় পর ভদ্রমহিলা উৎকন্ঠিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন-

‘তোমার নাম কি অনন্যা! তোমার মায়ের নাম নাহার না!’

আমি চমকাল। থমথমে গলায় ছোট করে ‘হুম হুম’ বললাম। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি আমার পাশে বসে পরলেন। খুশিতে আত্মহারা হয়ে আমাকে হাল্কা জড়িয়ে ধরে বললেন-

‘আমি তোর মনি আন্টি। ভুলে গেছিস! ছোট বেলা তো মনি আন্টি মনি আন্টি বলে জান দিয়ে দিতি।’

আমি হতভম্ব হয়ে বসে রইলাম। মেয়েটা এখনো আমার কোলে বসে আছে। আমার চুল গুলো নিয়ে খেলছে। আমি কিছুটা সময় চুপ থেকে ভাবলাম। তারপর হাসি মুখে বললাম-

‘চেনা চেনা লাগছিল কিন্তু অনেক দিন পর দেখলাম তোমায় তাই প্রথমে চিনিতে পারিনি। কিন্তু এই বাবুটা কে?’

‘আমার নাতনি পূর্নতা। ডাকনাম তুলতুল।’

আমি হাসলাম। তুলতুলের নরম গালে হাত রেখে বললাম-

‘তুলতুল নাম কে রাখলো! অনেক কিউট নাম।’

‘কে আবার ধ্রুব।’

আমি মৃদু হাসলাম। তুলতুলকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম-

‘তুলতুল কি মোহনা আপুর মেয়ে?’

আমার কথা শোনার সাথে সাথে খেয়াল করলাম মনি আন্টির চোখে জল এসে পরলো। আমি কৌতূহলী চোখে চেয়ে রইলাম ওনার দিকে। তিনি কিছুটা সময় নিয়ে মলিন মুখে বললেন-

‘হুম মোহনার মেয়ে। কিন্তু মোহনা বেঁচে নেই অনু। তুলতুলের জন্মের কয়েকঘন্টার মাথায় আমার মেয়েটা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে৷’

আমি থমকে গেলাম। হঠাৎ করেই যেন গুলিয়ে গেল সব কিছু। ছোট বেলা মোহনা আপুর কাছে এটা ওটা নিয়ে বায়না করেছি অনেক। দেখা হলেই তার পিছু পিছু লেগে থাকতাম। যেদিন শুনেছিলাম ওনারা সবাই ঢাকা থেকে চলে যাবেন সেদিন খুব কান্না করেছিলাম। শুধু মাত্র মোহনা আপুর জন্য। আজ শুনছি সেই হাস্যজ্বল কিশোরীটা নেই। বুকটা ধক করে কেঁপে উঠলো আমার। পনেরো বছরে একটা বারও দেখার সুযোগ পেলাম না মোহনা আপুর। তবুও সেই পুরনো মায়াটা আবারও জাগ্রত হলো। চুলে টান পড়ায় আমার হুশ ফিরলো। তুলতুলের দিকে তাকাতেই মন খারাপেরা ঝেঁকে বসলো আমার মাথায়। তুলতুলের কথা ভেবেই বিষাদে ছেয়ে গেল আমার মন। মা ছাড়া কিভাবে ছিল এই টুকু বাচ্চা মেয়েটা! আর বাকিটা জীবনই বা কিভাবে থাকবে! নিজেকে কোনো রকম সামলিয়ে ক্ষীণ স্বরে প্রশ্ন করলাম-

‘তুলতুলের বাবা কোথায়?’

মনি আন্টি তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে হেসে বলল-

‘বিয়ে করেছে দু-মাসে হলো। তুলতুল এতদিন আমার কাছেই ছিল। কিন্তু ওর বাবার বিয়ের পর ওনাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে তুলতুল নিয়ে একেবারের জন্য ঢাকা চলে এসেছি। আমি চাই না তুলতুল ওর বাবার পরিচয় জানুক। যে কিনা নিজের সন্তানের কথা ভাবার সময় পায় না তার পরিচয় নিয়ে বড় না হওয়াই ভালো।’

দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আমি। আর কোনো কথা বাড়ালাম না এই বিষয় নিয়ে। মনি আন্টি আর তুলতুলকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। এতগুলো বছর পর মনি আন্টিকে দেখেই আমার মা কেঁদেকেটে বুক ভাসালেন। তারপর সবাই মিলে আবারও পুরোনো দিনের মতো আড্ডার আসর জমালেন। তবে এবার নতুন সদস্য হিসেবে তুলতুলও আছে সবার মাঝে। এতে যেন সবার আনন্দের পরিমাণ আরও দ্বিগুণ হলো।

কি অদ্ভুত মায়ায় জড়িয়েছে মেয়েটা আমার সাথে। প্রতিদিন আমার সাথে দেখা না করলেই তার চেচামেচি শুরু হয়। খেলাধুলা, খাওয়া দাওয়া সব কিছু বন্ধ করে সারাক্ষণ মাম্মা মাম্মা বলেই কান্নাকাটি করে মেয়েটা। জেদ নিয়ে বসে থাকে সারাদিন। মনি আন্টি বাধ্য হয়েই তুলতুলকে নিয়ে প্রতিদিন আমাদের বাসায় আসেন। ঘন্টা খানেক সময় থেকে চলে যেতে চাইলেই আবারও তুলতুলের পাগলামো শুরু হয়। এভাবেই যাচ্ছিলো কিছুদিন। তারপর একদিন হুট করেই মনি আন্টি আম্মুর কাছে তার ছেলের জন্য আমার হাত চাইলেন। আমাকে তার ছেলের বউ করে তুলতুলের মা হওয়ার সুযোগও দিতে চাইলেন। আমার হাত ধরে অনুরোধ করলেন তিনি। তবে আমি কিছু বললাম না। হতভম্ব হয়ে শুধু শুনে গেলাম মনি আন্টির কথা। রাত হতেই অস্থির হয়ে গেলাম সাদাফকে খুঁজেতে। বার বার ফোন করে তার সাথে কথা বলতে চাইলাম। কিন্তু অসহায় হলো আমার ভাগ্য। বরাবরের মতোই ব্যর্থ হলাম সাদাফের সাথে যোগাযোগ করতে৷ এই প্রথম ভীষণ ভীষণ ভীষণ কষ্ট হলো সাদাফের বেখেয়ালিতে। তার বেপরোয়া স্বভাবের জন্য নিজেকেই খুব দূর্ভাগা মনে হলো। ঘর বন্দী করে নিলাম নিজেকে। দিনের পর দিন হন্য হয়ে সাদাফের সাথে একটু কথা বলার সুযোগ খুঁজে বেড়াতাম। রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটাতে লাগলাম। কান্না করে দুচোখ ফুলিয়ে আবারও চোখে পানির ঝাপটা দিতে বসে থাকতাম। তবুও ফিরে পেলাম না আমার ভালোবাসা। আর না যোগাযোগ করতে পারলাম সাদাফের সঙ্গে। অভিমান নিয়ে বলা আমার কথাটাই যেন এবার সত্যি হতে লাগলো। সত্যিই মনে হতে লাগলো সাদাফ ট্যুর থেকে ফিয়ে এসে আমাকে আর পাবে না। অভিমানে বলা কথা এভাবেই সত্যি হয়ে যাবে জানলে কখনোই মুখ দিতে এই কথা বের করতাম না। আর অন্যদিকে তুলতুলের প্রতিও আমার মায়া জন্মে গেল। মেয়েটা আমার কাছেই মায়ের ভালোবাসা খুঁজে বেড়াতো৷ আর মনি আন্টি!! তার ভালোবাসার কাছে আমি বরাবরই অসহায়। কোনো কিছুই আর আটকানোর সম্ভব হলো না। একদিন হুট করে মনি আন্টি ফোন করে বললেন-

‘অনু মা একটু কষ্ট করে তোদের বাসার কাছে যে রেস্টুরেন্ট আছে সেখানে যাবি! আর তিনদিন পরেই তো বিয়ে। আমি চাই ধ্রুবর সাথে বিয়ের আগে তুই একবার দেখা করে নে। আমার এই অনুরোধটা তুই রাখ।’

অনুরোধ! ওনার মুখে কি অনুরোধ শব্দটা মানায়!! মোটেও না। যে মানুষটা আমাকে নিজের মেয়ের জায়গায় বসিয়েছে আধোও কি তার কথার বিপক্ষে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব??
আমি ক্ষীণ স্বরে জিজ্ঞেস করলাম-

‘কখন যেতে হবে মনি আন্টি!’

মনি আন্টি খুশি হয়ে বললেন-

‘আধ ঘন্টার মধ্যে গেলেই হবে। আমি ধ্রুবকে বলবো তোর জন্য অপেক্ষা করতে। তাই তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই।’

আমি ফোন রেখে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালায়। আয়নায় নিজেকে দেখতেই বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। মাত্র ষোলো দিনেই শরীরের স্বাস্থ্য হ্রাস পেয়েছে অস্বাভাবিক মাত্রায়। চোখের নিচে পরেছে নিখুঁত কালো কালির রেখা। ঠোঁট মুখ শুকিয়ে একদমই বিধস্ত অবস্থা। এভাবে কি ধ্রুবর সামনে যাওয়া ঠিক হবে?? আকাশপাতাল চিন্তাভাবনা করে অবশেষে রওনা হলাম। প্রায় চল্লিশ মিনিট সময় নিয়েছি রেস্টুরেন্টে আসার জন্য। রেস্টুরেন্টে আসার সাথে সাথেই মনে পরলো আমি ধ্রুবকে চিনি না। ছোট বেলা দেখেছিলাম কিন্তু বড় হওয়ার পর দেখা হয়নি। রেস্টুরেন্টের ভেতরে এসেই থমকে দাঁড়ালাম। আশেপাশে নজর দিয়েও কাউকে ধ্রুব হিসেবে চিনতে পারলাম না। হঠাৎ করেই খেয়াল করলাম কর্নারের একটা টেবিল থেকে এক লোক হাতের ইশারায় আমাকে ডাকছে। আমি কিছুক্ষন চেয়ে থেকে সেদিকে পা বাড়ালাম। টেবিলের সামনে এসে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে রইলাম। এই মানুষটাই ধ্রুব কি-না তা নিয়ে এখনও ক্ষীণ সন্দেহ আছে।

‘কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? বসে পর।’

চলবে…

[অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখিত। অনেক বড় পর্ব দিয়েছে। ভালো লাগলে সবাই রেসপন্স করবেন। আর ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাইকে ধন্যবাদ আর ভালোবাসা।❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here