শেষ রাত পর্ব-২

0
2112

#শেষ_রাত
#পর্বঃ২
#সাইয়ারা_হোসাইন_কায়ানাত

‘এই বার তুমি চলে গেলে আমাকে আর কখনও ফিরে পাবে না সাদাফ।’

আমার কথায় সাদাফ মিষ্টি করে হাসলো। আমার পাশে বসে নরম স্বরে বলল-

‘পারবে না-কি আমাকে ছেড়ে থাকতে?’

আমি শান্ত চোখে চেয়ে রইলাম সাদাফের হাসি মুখের দিকে। ওর এই স্বভাবটা সব সময় আমার মন খারাপের কারণ হয়। অভিমান আর রাগের কারণ হয়। এই মানুষটার সঙ্গে যতই সিরিয়াস কথা বলি না কেন তার মধ্যে কোনো প্রকার প্রতিক্রিয়া কিংবা ভাবাবেগ দেখা যায় না। সব সময়ই একটা গাঁ ছাড়া ভাব তার মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। যেন কিছুই হয়নি। কোনো কিছু নিয়েই তার কোনো মাথা ব্যথা নেই। সব কিছুই যেন স্বাভাবিক। অতি স্বাভাবিক। আমি নিজেকে যথাসাধ্য শান্ত রাখার চেষ্টা করে বললাম-

‘তুমি কি কখনও আমাকে নিয়ে সিরিয়াস ছিলে সাদাফ?’

‘এভাবে কেন কথা বলছো অনন্যা? আমি তোমাকে ঠিক কতটা ভালোবাসি তা নিশ্চয়ই তোমার অজানা নয়। তবুও কেন এসব কথা বলছো?’

সাদাফের কথায় আমি তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে হাসলাম। হাসলো বিষন্ন মনটাও। সাদাফের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম অদুরে। চাপা কষ্ট বুকে রেখে কঠিন গলায় বললাম-

‘তোমার মাস্টার্স কমপ্লিট হয়েছে দেড় বছর হলো। অথচ তুমি এখনও ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো প্রকার চিন্তাভাবনা করছো না। কয়েক দিন পর পর ট্যুরে যাচ্ছো আর আমার সাথে সপ্তাহ খানেকের জন্য যোগাযোগ একেবারেই বিছিন্ন করে দিচ্ছ। যা এক প্রকার বিচ্ছেদের মতোই। তোমার সাথে যোগাযোগ করতে চেয়ে আমি বরাবরই ব্যর্থ হই। হতাশ হই। অভিমান নিয়ে বসে রই। কিন্তু এতে তো তোমার কিছুই যায় আসে না। তুমি তোমার মতোই বন্ধুদের সঙ্গে বেশ আনন্দে থাকো। তোমাকে আমি আগেও বলেছি আব্বু আম্মু আমার বিয়ের জন্য পাত্র দেখা শুরু করে দিয়েছে। অথচ এসব নিয়েও তোমার কোনো প্রকার মাথা ব্যথা নেই। এত কিছুর পরেও আমি কিভাবে ভেবে নিবো তুমি আমাকে নিয়ে সিরিয়াস! তুমি কি সত্যিই আমার বিষয়ে সিরিয়াস?’

‘শোনো অনন্যা এত চিন্তা করে লাভ নেই। আমি তো বলেছি তোমার বিয়ে ঠিক হওয়ার আগেই আমি তোমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে হাজির হবো।’

সাদাফের কথায় আমি হতাশ হলাম। বুক চিড়ে বেরিয়ে এলো এক হতাশ ভরা নিঃশ্বাস। চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলালাম। ক্লান্ত গলায় বললাম-

‘কোনো বেকার ছেলের সাথে আমার বাবা কি মনে করে আমাকে বিয়ে দিবে শুনি!’

সাদাফ আমার দিকে ফিরে বাঁকা হয়ে বসলো। বরাবরের মতোই শান্ত ও ভ্রুক্ষেপহীন মুখে আমার দিকে চাইলো। অতি সহজ ভঙ্গিতে বলল-

‘আব্বুর এত বড় ব্যবসা সবটাই তো আমার। যাইহোক এখন এসব কথা রাখো। আর এক ঘন্টা পরই আমার ফ্লাইট। আমার ফ্রেন্ডরা সবাই হয়তো এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছে আমার জন্য। আমাকে এখন যেতে হবে। আর হ্যাঁ, এসব নিয়ে তুমি এতো প্রেশার নিও না তো অনুপাখি। আমি কয়েকটা দেশ ঘুরেই এক দেড় মাসের মধ্যে ফিরে আসবো৷ এসেই প্রথমে তোমার সাথে দেখা করবো প্রমিজ। তবুও এত চিন্তা করো না প্লিজ।’

ধপধপ করেই রাগে উঠে গেল আমার মাথায়। সব সময় শান্ত, চুপচাপ মেয়ে হয়েও আমিটা-ও রেগে গেলাম৷ চোখমুখ শক্ত হয়ে এলো। দাঁতে দাঁত চেপে রাগান্বিত কন্ঠে বললাম-

‘আমি তো বলেছি এবার চলে গেলে তুমি আমাকে আর কখনও ফিরে পাবে না। প্রতিবারের মতো আমি আবারও তোমার কথায় গলে গিয়ে নতুন করে রিলেশন শুরু করবো না। আর অপেক্ষাও করবো না তোমার জন্য৷ প্রতিবারের মতো তোমার সাথে যোগাযোগ করার জন্য ব্যস্তও হবো না।’

আমার রাগ প্রকাশ করা ব্যর্থ হলো। মনে মনে আফসোস হলো ভীষণ। কেন রাগ প্রকাশ করলাম এই নির্বিকার মানুষটার সামনে!! সাদাফ তার স্বভাবগত হাসি দিয়ে বেঞ্চি থেকে উঠে দাঁড়ালো৷ আমার দিকে কয়েক সেকেন্ড হাসি মুখে তাকিয়ে রইলো নিঃশব্দে। হয়তো এবারও আমার কথা, আমার অভিমান উপেক্ষা করে তার বিদায় নেওয়ার সময় এসেছে। সাদাফ পেছন ফিরে চলে যেতে যেতে বলল-

‘তা না হয় আমি আসলেই দেখে নিবো অনুপাখি।’

আমি স্থির চেয়ে রইলাম সাদাফের যাওয়ার পথে। কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই চোখের আড়াল হয়ে মানুষটা। সেই সাথে আড়াল হলো আমার ভালোবাসা৷ আমার অনুভূতি, আমার সবটা। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এলো আমার। বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করলাম। মনের ব্যথা। বিচ্ছেদের ব্যথা। সকল কষ্ট যেন অশ্রুবিন্দু হয়ে উপচে পরতে চাচ্ছে আমার চোখদুটো দিয়ে। এই মানুষটার অপেক্ষায় থাকা আমার জন্য দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। প্রতিবার হতো সপ্তাহ খানেকের বিচ্ছেদ। আকাশস্পর্শী পর্বতের সমান অভিমান নিয়ে অপেক্ষা করেছি তার ফিরে আসার। সব কিছু ভুলে আবারও তার ভালোবাসায় ডুবে গিয়ে নতুন করে শুরু করেছি সবটা। কিন্তু আজকের বিচ্ছেদ দীর্ঘদিনের৷ আজকের দূরত্ব কয়েক কিলোমিটার কিংবা শহরের নয়। যোজন খানিক দূরত্ব নিয়ে পাড়ি জমিয়েছে ভিন্ন দেশে। আমার সকল অনুভূতি, অভিমান আর সকল অপেক্ষাকে তুচ্ছ করে দিয়ে চলে গেছে মানুষটা। অসহ্য যন্ত্রণায় বিষিয়ে উঠলো আমার মন। মাথা নিচু করে দুহাতে মুখ চেপে বসে রইলাম পার্কের বেঞ্চিতে। ঠিক তখনই কেউ একজন আমার এলোচুল আলতো করে টেনে ধরলো। অস্পষ্ট স্বরে আধো আধো গলায় ডাকলো-

‘মাম্মা! মাম্মা!’

আমি ঝট করেই চোখে মেলে তাকালাম। সিলিং-এর ঘুর্নায়মান পাখার দিকে চেয়ে ঘনঘন শ্বাস নিতে লাগলাম। হু হু করে উঠলো৷ আমার বুকের ভেতর। সেই বিষাক্ত দিনের মতোই তুলতুলের প্রথম মাম্মা মাম্মা ডাক কানে এসে বারি খেল। বিষাক্ততা কেটে গেল তুলতুলের মিষ্টি, আদুরে ডাকে। সকাল শুরু হলো খুবই বিচিত্রতার সঙ্গে। অন্য সব সকাল থেকে বড্ড বেশিই ভিন্ন হলো আজকের সকাল। অন্যান্য সকালের মতো পাখির কিচিরমিচির ডাক কিংবা আম্মুর চিল্লাচিল্লিতে ঘুম ভাঙলো না। আজ ঘুম ভেঙেছে তুলতুলের মায়া কাড়া ডাকে। তার জুতার পে পু শব্দ আর দরজায় পরা মৃদু আঘাতের শব্দে। ঘাড় কাত করে পাশে তাকাতেই চোখের সামনে একজন ঘুমন্ত মানুষের মুখ ভেসে উঠলো। ধ্রুবর মুখের দিকে কয়েক সেকেন্ড স্থির চেয়ে রইলাম৷ পরপর কয়েকবার চোখের পলক ফেলেই ধরফরিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলাম। কয়েক মিনিট সময় লাগল এই নিষ্ঠুরতম সত্যটা মেনে নিতে। অবশেষে বুঝলাম আজ থেকে এটাই হবে আমার নতুন জীবন। আমার নতুন সকাল। প্রতিটি সকালে এই মানুষটার ঘুমন্ত মুখ দেখেই আমাকে অভ্যস্ত হতে হবে। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। চুলগুলো হাত খোঁপা করে গায়ে ভালো করে ওড়না জড়িয়ে নিলাম। দরজায় আবারও আঘাত পরছে। অনবরত পে পু শব্দ বেজেই যাচ্ছে। আমি মুচকি হাসলাম। বিছানা থেকে উঠে এসে দরজা খুলে তাকালাম সেদিকে। ছোট্ট একটা লাল পরি পেছন ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। একা একাই হেলছে দুলছে। জুতোজোড়ায় নিজের ইচ্ছায় চাপ দিয়ে পে পু শব্দ তুলছে। দরজা খুলে গেছে তা হয়তো পরিটা টের পায়নি। আমি দরজায় একটু শব্দ করে তার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলাম। সঙ্গে সঙ্গেই তুলতুল তার পে পু জুতো পড়া পায়ে ছোট ছোট কদম ফেলে ভেতরে আসলো। খুশিতে আত্মহারা হয়ে জড়িয়ে ধরলো আমার পা। দু হাত উঁচু করে কোলে আসার জন্য ‘মাম্মা’ ‘মাম্মা’ বলে অনুনয় করল। আমি কোলে তুলে নিলাম তাকে। কি সুন্দর সকাল! মিষ্টি একটা সকাল। অন্যসব সকাল থেকে বড্ড বেশিই সুন্দর আর পবিত্র। আমি তুলতুলকে কোলে নিয়ে বিছানায় এসে বসলাম। একটু পরেই তুলতুল হামাগুড়ি দিয়ে আমার কোল থেকে নেমে গেল। পরমুহূর্তেই লাফিয়ে পরলো ধ্রুবর বুকে। ছোট ছোট হাতে ওনার গালে থাপ্পড় দিয়ে অনবরত ডেকে যাচ্ছে-

‘মাম্মা.. মাম্মা ঘুম ওঠ।’

আমি মৃদু হাসলাম। বুঝলাম তুলতুল ধ্রুবকেও মাম্মা বলেই ডাকে। তুলতুলের ডাকে ধ্রুব চোখমুখ কুচকে ফেললেন। চোখ ছোট ছোট করে দৃষ্টি দেয় তার বুকে উপর বসে থাকা তুলতুলের দিকে। খানিকটা বিস্মিত হয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে জিজ্ঞেস করল-

‘আম্মু তুমি রুমে আসলে কীভাবে? আর দরজাই বা খুললে কীভাবে?’

‘আমি দরজা খুলেছি।’

আমার কথা শুনেই ধ্রুব চমকে গিয়ে আমার দিকে তাকালেন। চোখজোড়া বড় বড় করে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে এক প্রকার লাফিয়ে উঠে বসলেন তিনি। তুলতুলকে কোলে আগলে নিয়ে নিজের শার্ট ঠিক করতে করতে অপ্রস্তুত হয়ে বললেন-

‘অহ আপনি! আপনি আমার বউ! কাল আমাদের বিয়ে হয়েছে তাই না!!’

মনে মনে আমি ভীষণ অবাক হলাম। কিন্তু প্রকাশ করলাম না। ওনার কর্মকাণ্ড আর এসব অদ্ভুত কথা শুনে আমি কি বলবো ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে খুবই সহজ ভঙ্গিতে বললাম-

‘আমি সঠিক জানি না। আমি জানলে আপনাকেও জানিয়ে দিবো।’

আমি আর কোনো কিছুই না বলাম। আর ওনার প্রতিত্তোরে অপেক্ষাও করলাম না। উঠে চলে এলাম ওয়াশরুমে। আমি নিশ্চিত উনিও এখন সাদাফের মতোই স্বাভাবিক হয়ে গেছেন। ভাবলেশহীন ভাবেই হয়তো তুলতুলের সঙ্গে খেলা শুরু করেছে। সাদাফের মতোই ধ্রুবর মধ্যে গাঁ ছাড়া ভাব পরিপূর্ণ। সাদাফের এই একটা স্বভাবই আমার ভীষণ অপছন্দ ছিল। ওর এই স্বভাবের কারণেই আমি দিনের পর দিন কষ্ট পেয়েছি। আর এখনও পাচ্ছি। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস ধ্রুবর মাঝেও সাদাফের এই গুণটা ভরপুর। এইদিক দিয়েই এই মানুষ দুটোর মাঝে দারুণ মিল। এইটাই হয়তো আমার নিয়তি।

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হলো। দুপুর থেকে দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা যাবত স্টেজের সোফায় বসে আছি মূর্তির ন্যায়। শরীরের প্রতিটি অঙ্গ যেন অকেজো হয়ে গেছে। পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছে শরীর। এটা বৌভাতের অনুষ্ঠান তো নয় যেন কোনো অত্যাচার চলছে। মনে হচ্ছে কোনো ভুলের জন্য খুব কঠোর শাস্তি দেওয়া হচ্ছে আমাকে৷ মানুষ আসছে কথা বলছে, গিফট দিচ্ছে আর তার বিনিময়ে আমি খুব কষ্টে নিজের সাথে যুদ্ধ করে একটু মুচকি হাসার চেষ্টা করছি। নতুন বউদের এতটা শাস্তি দিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান করা একমুহূর্তে আমার কাছে নেহাৎই বোকামি মনে হচ্ছে। খুবই বড় ধরনের বোকামি। আর আমার পাশের জন মানে ধ্রুব মশাই তিনি বিন্দাস তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছেন। হাসিঠাট্টায় মেতে উঠেছেন তিনি। মাঝেমধ্যে ওনার বন্ধুরা আমাকে ইঙ্গিত করে ধ্রুবকে ক্ষেপাচ্ছেন। এতে ধ্রুব হাসছেন কিন্তু কিছু বলছেন না। আমিও সব শুনে না শোনার ভান ধরে রইলাম।

‘কিরে, তুই এখনও এখানে আড্ডা দিচ্ছিস কেন? বউমাকে নিয়ে ওদের বাসায় যা। শাকিল তো সেই কখনই তুলতুলকে নিয়ে ওদের বাসায় রওনা হয়ে গেছে। আর তুই এখনও মেয়েটাকে বসিয়ে রেখেছিস। মানে তুই কি আমার ছেলে!! আমি তো এমন বেখেয়ালি ছিলাম না তোর বয়সে। তুই কার মতো হলি! নিশ্চয়ই তোর মায়ের মতো।’

আব্বু মানে ধ্রুবর বাবা ভীষণ আক্ষেপ নিয়ে কথা গুলো বললেন। ধ্রুব তার আড্ডা থামিয়ে দিলেন। আর তার বন্ধুরা মিটমিট করে হাসছেন। ধ্রুবকে বসে থাকতে দেখে তিনি আবারও কড়া গলায় বললেন-

‘এখনও হ্যাবলার মতো বসে আছিস কেন! যা তাড়াতাড়ি বউমাকে নিয়ে। ওদের বাসায় হয়তো সবাই অপেক্ষা করছে তোদের জন্য।’

অবশেষে রওনা হলাম নিজের বাসার উদ্দেশ্যে। কাল অব্দি আমি যে বাসার মেয়ে ছিলাম আজ সেই বাসার অতিথি হয়ে যাচ্ছি। এটাই হয়তো মেয়েদের জীবন। গাড়িতে বসতেই শরীর ব্যথা খুব খারাপ ভাবে আঁকড়ে ধরেছে আমাকে। অনুষ্ঠানের ধকলে ক্লান্ত হয়ে পরেছে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ। ভীষণ ক্লান্তিতেই ঘুমে চোখদুটোর পাতা জড়িয়ে যাচ্ছে৷ ঝিমঝিম করছে মাথাটা কিন্তু ঘুমানোর ভরসা পাচ্ছি না৷ ব্যথায় ছটফট করছি ঠিক তখনই একটা হাত এসে খুব যত্নে আমার মাথাটা নিয়ে তার কাধে রাখলেন। আমি কিছু বলার আগেই ধ্রুব বেশ শীতল কন্ঠে বললেন-

‘অসুবিধে নেই। আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেন।’

অজানা কারণেই আমি কিছুটা ভরসা পেলাম। ধীরেধীরে চোখদুটো বন্ধ করে নিলাম। ঠিক কতক্ষণ ঘুমালাম জানি না। তবে ঘুম ভাঙলো ধ্রুবর ডাকে।

‘এই যে মিসেস! ঘুম থেকে উঠুন। আপনাদের বাসায় চলে এসেছি।’

আমি তাড়াতাড়ি করেই ওনার কাধ থেকে মাথা সরিয়ে নিলাম। ওনার দিকে কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে তাকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেলাম নিঃশব্দে।

ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে এসে ধ্রুব, তুলতুল আর ভাইয়া কাউকেই দেখতে পেলাম না। রান্নাঘরে এসে মা’কে জিজ্ঞেস করলাম-

‘মা তুলতুল কোথায়!’

মা রান্নার কাজ করতে করতে বললেন-

‘শাকিল আর ধ্রুবর সাথে হাঁটতে বেরিয়েছে।’

‘রাতের বেলা তুলতুলকে বেহিরে নিয়ে যেতে নিষেধ করলে না কেন?’

আমার কথায় মা কিছুটা অবাক হলেন। আমি নিজেও খানিকটা অবাক হলাম। আমার মধ্যে মাতৃত্ব বোধ চলে এসেছে। মা আমাকে নিয়ে যেভাবে চিন্তা করে আমিও ঠিক সেভাবেই চিন্তিত হলাম তুলতুলের জন্য। মা-ও হয়তো অবাক হলেন তার মেয়ের এই মাতৃত্ব বোধ দেখেই।

‘তুলতুল জেদ ধরেছিল। শাকিলের কোল থেকে নামছিলোই না তাই বাধ্য ওকে নিয়ে গেছে।’

আমাদের কথার মাঝেই এক আন্টি এসে রান্নাঘরে উপস্থিত হলেন। বিয়ে উপলক্ষেই বাসায় মেহমান গিজগিজ করছিল। অনেকে চলে গেছেন। তবে অল্প কয়েকজন রয়ে গেছে। হয়তো বাকিরা কাল সকালেই চলে যাবেন। আন্টি আমাদের সামনে এসে খানিকটা মুখ বিকৃত করে মা’র উদ্দেশ্যে বললেন-

‘বাচ্চাওয়ালা সংসারে তোমার মাইয়ার বিয়া না দিলেই পারতা নাহার। মাইয়া তো আর পইচা যায় নাই যে এক বাচ্চার বাপের লগে বিয়া দিতে হইলো। আমারে বললেই আমি ভালো পাত্র খুঁজে দিতাম।’

চলবে….

[হয়তো অনন্যার অতীত নিয়ে কিছুটা এলোমেলো লাগতে পারে৷ তবে আমি নেক্সট পার্টে চেষ্টা করবো অতীতের সব কিছু ক্লিয়ার করার। ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাইকে ধন্যবাদ আর ভালোবাসা।❤️]

আমার পাঠকমহল-
https://www.facebook.com/groups/240569968030391/?ref=share

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here