শেষ_থেকে_শুরু পর্ব_৮

শেষ_থেকে_শুরু
পর্ব_৮
#নন্দিনী_চৌধুরী

১৫.
আজকে মুগ্ধদের কলেজে অনুষ্ঠান।সাদিয়া সেই ১ঘন্টাযাবত বসে আছে মুগ্ধের রুমে সোফায়।কারন মুগ্ধ বুজতেই পারছেনা ও কি পরবে।একবার শাড়ি হাতে নেয় তো একবার থ্রিপিজ।সাদিয়া এভার রেগে বলে উঠে,

সাদিয়া:তুই কি আজকে ঘরে বসে এই কাজ করবি নাকি যাবিও কোনটা?
মুগ্ধ:কি করবো বল বুজতেই তো পারছিনা কি পরবো।
সাদিয়া:ওই খারা আমি তোরে চুজ কইরা দেই। নাইলে তুই চুজ করলে আজকে অনুষ্ঠান শেষ হইবো। তারপর তোর চুজ করা হইব।

সাদিয়া সব জামাশাড়ি চেক করে একটা লাল সোনালি রং মিশানো শাড়ি পছন্দ করলো।

সাদিয়া:এই নে এটা অনেক সুন্দর।তুই এটা পর।
মুগ্ধ শাড়িটা দেখে দেখলো এটা আরিশের দেওয়া বিয়ের প্রথমদিকের শাড়ি।মুগ্ধ শাড়িটা হাতে নিয়ে মুখ মলিন করে বলে,

মুগ্ধ:নারে এই শাড়ি আমি পরতে পারবোনা।
সাদিয়া:এ কেন এতো কষ্ট করে খুজে বেরকরলাম। আর তুই বলস পরবিনা।
মুগ্ধ:বইন দেখ ওখানে অনেক গরম লাগবে। তার মধ্য এই শাড়ি পরলে আমি মরে যামু।তার থেকে আমি বরং এই নীল রং এর শাড়িটা পরি।
সাদিয়া:উম আচ্ছা তাড়াতাড়ি কর।

মুগ্ধ শাড়িটা নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো।একটু পর চ্যাঞ্জ করে বেরিয়ে আসলো।এরপর ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে হালকা সেজে নিলো।তারপর চুলগুলা খোপা করে খোপার মাঝে একটা গাজরা লাগালো।

সাদিয়া:বাপরে তোকে তো একদম নীল পরী লাগতাছে রে মুলা😲।
মুগ্ধ:তোকেও কিউট লাগতাছে সাদু পাদু🥱।
সাদিয়া:আচ্ছা চল।

এরপর মুগ্ধ সাদিয়া নিচে আসে।মেহের আর রুহি যাবে পরে।আগে সাদিয়া আর মুগ্ধ যাচ্ছে।

মুগ্ধ:আচ্ছা ভাইয়া আমরা গেলাম।
মেহের:আচ্ছা এই ধর টাকা। আর আমরা পরে আসছি সাবধানে যাবি কেমন।
মুগ্ধ:আচ্ছা ঠিক আছে আসি।

এরপর মুগ্ধ আর সাদিয়া চলে আসলো কলেজে।

সাদাফ আজকে অনেক আগে এসেছে কলেজে।সাদাফ গেটে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো ফোনে। হঠ্যাৎ সামনে তাকিয়ে থমকে যায় সে।একটা নীল পরী এগিয়ে আসছে তার দিকে।সাদাফ অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে মুগ্ধের দিকে।আপনা আপনি মুখ থেকে বের হয়,,

মাসাল্লাহ মেয়েটার নামটাই শুধু মুগ্ধনা মেয়েটার মাঝেও একটা মুগ্ধতা আছে।

মুগ্ধ সাদাফকে খেয়াল না করেই ভিতরে ডুকে যায়।সাদাফ ও তারপর ফোনে কথা বলায় মোনোযোগ দেয়।

সায়মা নিজের রুমে বসে রেডি হচ্চে।আরিশের সাথে তাকে যেতে হবে কলেজের অনুষ্ঠানে।সায়মা রেডি হচ্চিলো তখন ওর ফোনে ওর মায়ের কল আসে।

সায়মা:হ্যা মা বলো।
সালমা:শোন আগামিকাল তোর বাবা কিছুদিনের জন্য বাহিরে যাচ্ছে।তুই আরিশকে কিছু একটা বাহানা দিয়ে বাসায় আসিস।
সায়মা:আচ্ছা দেখি।আরিশ তো বেবির খবর শুনে আমাকে চোখে চোখে রাখে।আমার একদম এসব ভালোলাগছেনা।
সায়মা:এইতো মা আর কিছুদিন একটু ম্যানেজ করে নে এরপর এই বেবির ঝামেলাও চুকে যাবে।
সায়মা:আচ্ছা ঠিক আছে রাখছি।

সালমা ফোন রেখে খাটে বসে বলতে লাগে,

এই মেহেজাবিনের জন্য না আমি জীবনে সুখি হতে পেরেছি। মরে গিয়েও শান্তি দেয়নি।আর এখন ও মেয়ের জন্য আমার মেয়েটা সুখি হতে পারছেনা।উফফ কই যে রেখেগেছে মরার আগে পেপারগুলা।

মুগ্ধ সাদিয়া আর কলেজের বাকি সবাই মিলে কলেজে সব গুছিয়ে ঠিকঠাক করে নিলো।চিপ গেস্টদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা দিতে গেটে মুগ্ধ সাদিয়া আর চারজন দাঁড়াবে।সেই মতো মুগ্ধ,সাদিয়া আর বাকি চারজন ফুল নিয়ে গেটে এসে দাঁড়ালো।একটু পর চলে আসলো অনুষ্ঠানে চিপ গেস্টরা।প্রথমে এসেছে সাদাফের বাবা মুগ্ধ তাকে ফুল দিয়ে স্বাগতম জানালো।এরপর আসলো মেহের রুহি মুগ্ধ আর সাদিয়া ওদের হাতে ফুল দিয়ে স্বাগতম জানালো।এভার পালা আরিশ সায়মার।আরিশ সায়মাকে দেখে মুগ্ধ সাদিয়াকে বললো,

মুগ্ধ:শোন আমার একটু কাজ আছে তুই বাকিরা মিলে এদের সামলা আমি আসছি।
বলেই মুগ্ধ চলে আসলো।সে কোনো আরিশের সামনে পরতে চায়না।আরিশ সায়মাকে বাকিরা ফুল দিয়ে স্বাগতম জানালো।

স্টেজে গিয়ে যে যার যার আসনে বসলো।বসার সময় মেহের আরিশের চোখাচোখি হয়।মেহেরের তো আরিশকে দেখেলেই রাগ উঠে যায়।কিন্তু এটা একটা অনুষ্টানের জায়গা এখানে সে কোনো ঝামেলা করতে চায়না।তাই চুপচাপ বসে পরলো।

এরপর যথারীতো অনুষ্ঠান শুরু হলো।সবাই যার যার মতো পার্ফম করছে।মুগ্ধ সাদিয়া বসে বসে দেখছে।মুগ্ধ যেনো আরিশেএ নজরে না আসে তাই সএ স্টেজের থেকে অনেক দূরে বসে আছে।মুগ্ধ সাদিয়া অনুষ্টান দেখছে তখন মুগ্ধের শাড়িতে জুস ফেলে দিলো রিজবি।

রিজবি:সরি সরি মুগ্ধ আমি খেয়াল করিনি।ধাক্কা লেগে পরেগেছে আমি সরি।

মুগ্ধ:ইটস ওকে।সাদিয়া তুই এখানে থাক আমি এটা ধুয়ে আসছিম

রিজবি:এটাইতো চাই(মনেমনে)

মুগ্ধ ওয়াশরুমে গেলো শাড়িটা পরিষ্কার করতে।মুগ্ধ এক খেয়ালে শাড়ি পরিষ্কার করছে যে ওর খেয়াল নেই কেউ ওয়াশরুমে এসেছে।মুগ্ধ কোমরে কারো স্পর্শে চমকে উঠে পিছনে তাকিয়ে দেখে রিজবি দাঁড়ানো। রিজবিকে দেখে চমকে উঠে মুগ্ধ। একদম ধাক্কায় শরিয়ে দেয় রিজবিকে।

মুগ্ধ:একি রিজবি তুমি এখানে আর তুমি আমার কোমরে হাত দিচ্ছো কেন?

রিজবি:জানেমান এখন তো শুধু কোমরে হাত দিয়েছি একটুপর সব জায়গায় হাত দেবো।
বলেই মুগ্ধের দিকে এগোতে লাগলো।

মুগ্ধ:দেখো রিজবি তুমি আমার দিকে এগোবে না। তুমি ইচ্ছা করে জুশটা আমার শাড়িতে ফেলছো।

রিজবি:রাইট জানেমান।তোমাকে দেখার পর থেকে ঘুম উড়ে গেছে।আই লাভ ইউ জানেমান।

মুগ্ধ:রিজবি আমি কিন্তু চিৎকার করবো বলছি।

রিজবি:করো অনূষ্টানের কাইকের সাউন্ডে তোমার গোলার সাউন্ড শুনা যাবেনা।

বলেই রিজবি মুগ্ধের দিকে হাত বাড়াতে লাগলো।মুগ্ধ ভয়ে শেষ সে কি করবে বুজতে পারছেনা চোখ থেকে পানি পরছে।সব সময় কেন তার সাথেই এমন হয়।রিজবি মুগ্ধের শাড়ির আঁচলে হাত দিতেই পিছন থেকে কেউ ওকে পিঠে ঘুষি মারে রিজবি ছিটকে শরে যায় রেগে চিৎকার করে বলে,

রিজবি:কোন কুত্তা*****আমার গায়ে হাত দিছে।

রিজবি পিছনে ফিরে দেখে সাদাফ দাঁড়ানো।সাদাফের চোখ রাগে লাল হয়ে আছে।হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আছে।রিজবি কোনারকম ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলে,

রিজবি:স.স্যার আপনি।
সাদাফ:পালানোর জন্য দুই মিনিট দিচ্ছি দুই মিনিটে পালাবি। এরপর যেনো কলেজে না দেখি।আজকে কলেজে অনুষ্ঠান বলে বেঁচে গেলি।

রিজবি সাদাফের কথা শুনে একদম ভোঁ দৌড়।

সাদাফ এভার মুগ্ধের দিকে এগিয়ে চিৎকার করে বলে,

সাদাফ:মিনিমাম কোমন সেন্স নেই আপনার মাঝে। একা একা আসছেন ওয়াশরুমে সাদিয়াকে নিয়ে আসতে পারতেন। ডু ইউ হেব এনি আইডিয়া যে আমি যদি এখন না আসতাম তাহলে কি হতো।ভাগ্য ভালো সাদিয়া আমাকে বলেছিলো আপনি একা ওয়াশরুমে আসছেন। আর রিজবি আপনার পিছনে আসছে।এখন কান্না কাটি অফ করে নিচে যান।

মুগ্ধ:জ জি স্যার।

মুগ্ধ আর ওখানে না দাঁড়িয়ে নিচে চলে গেলো।

সায়মা বসে বসে অসয্য লাগছে তাই উঠে কলেজটা ঘুরে দেখছিলো তখন ওর চোখ গেলো একজনের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সে মানুষটার দিকে তারপর মুখ থেকে বেরিয়ে আসলো,

মুগ্ধ!!

সায়মা আরেকটু ভালো করে তাকিয়ে দেখে মুগ্ধ হেটে আসছে আর সাদাফ ওর পিছনে।
সাদাফ মাস্ক পরে থাকায় ভালো করে চেহারাটা বুজা যাচ্ছেনা।সায়মা এভার মুগ্ধের সামনে এসে দাঁড়ায় তারপর মুখ বাকিয়ে বলতে লাগলো

সায়মা:অহ তাহলে তুই এই কলেজে পরিস।আচ্ছা আপু তুই কি বলতো একটু লজ্জা করেনা জানিশ আজকে এখানে আরিশ আসবে জেনেও এভাবে বেহায়ার মতো সেজে এসেছিস।উম তা কাকে দেখাতে এসছিস আরিশকে নাকি অন্য কোনো প্রেমিককে।আহ আমিও না কাকে কি বলছি।

১৬.

সায়মা মুগ্ধকে কথা গুলো বলছে সাদাফের কান তা এড়ায়নি।কিন্তু সাদাফ কিছু বলবে তার আগে সেখানে আরিশ আসে সায়মাকে খুজতে খুজতে এখানে এসে দেখে সায়মা এখানে।

আরিশ:সায়মা তুমি এখা.. আরিশ আর কিছু বলবে তার চোখ যায় মুগ্ধের দিকে।অনেকদিন পর সেই চেনা মুখটা সে দেখলো।আরিশ নিজেকে স্বাভাবিক রেখে সায়মার কাছে এগিয়ে এসে বললো,

আরিশ:এখানে কি করছো তুমি?তোমাকে আমি তখন থেকে খুজতেছি।
সায়মা:এমনি ভালো লাগছিলোনা তাই হাটছিলাম আর হাটতে হাটতে আপুর সাথে দেখা।দেখোনা আরিশ আপুকে দেখে মনেই হচ্ছেনা তোমাকে ছেড়ে আপু খারাপ আছে।দেখো কত সেজেগুজে আসছে।
আরিশ:লোভি মেয়েরা এমনি হয়।এরা হাজার জনকে ছেড়ে আসলেও কষ্ট লাগেনা।এদের চরিত্রটাই এমন।

আরিশের কথা গুলো শুনে মুগ্ধের কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে।আরিশ তাকে চরিত্রহীনা লোভি বললো।সাদাফ এত্তখন লক্ষ্য করছিলো যে সায়মা আরিশকে মুগ্ধকে কিছু বলছে হয়ত খারাপ কিছু বলছে তাইতো মুগ্ধ কান্না করছে।সাদাফ এভার ওদের দিকে এগিয়ে এসে বলে,

সাদাফ:এক্সকিউজ মি এখানে কি হচ্ছে?
সায়মা:কিছুনা কথা বলছিলাম আমরা ওর সাথে আপনি কে?
সাদাফ:আমি এই কলেজের প্রফেসোর সাদমান হাসান সাদাফ।আপনারা আমার ছাত্রীকে কি বলেছেন যার কারনে সে কাঁদছে?
সায়মা সাদাফ নামটা শুনে চমকে যায়।কপালে ঘাম ঝরতে শুরু করে।
আরিশ:কিছুইনা।উনি কেন কাঁদছে আমরা সেটা জানিনা।
সাদাফ:মিস মুগ্ধ কি হয়েছে আপনি কাঁদছেন কেন?
মুগ্ধ:কিছুনা স্যার আমি আসছি।

বলেই মুগ্ধ দৌড়ে চলে গেলো।সাদাফ আরিশ সায়মার দিকে তাকিয়ে চলে আসলো।আরিশ সায়মাকে নিয়ে আবার স্টেজে আসলো।সায়মার মাথায় এখন একটাই কথা ঘুরছে।

সাদাফ এই কলেজের প্রফেসোর।আর মুগ্ধ এই কলেজেই পড়ে।যদি সাদাফ জেনে যায় সত্যিটা যে আমি মুগ্ধ সেজে ওর সাথে নাটক করেছিলাম।মুগ্ধ কিছুই করেনি।না না এটা হতে দেওয়া যাবেনা।যেভাবেই হোক এই কলেজ থেকে মুগ্ধকে বের করতে হবে।

মুগ্ধ কলেজ থেকে বের হয়ে এসে চিৎকার করে কান্না করছে।যেই কান্না আল্লাহ বেতিতো কেউ দেখছেনা।

আল্লাহ হয় আমাকে নিয়ে যাও নাহলে এসব থেকে মুক্তি দেও আমি আর পারছিনা।যারা অন্যায় করছে তারা দিব্বি ভালো আছে।কিন্তু আমি কোনো অন্যায় না করেও কষ্ট পাচ্ছি। হ্যা আল্লাহ আমাকে নিয়ে যাও আমার মায়ের কাছে নিয়ে যাও।মাকে যে বড্ডো মনে পরছে।

মুগ্ধ একা একা কথা গুলো বলতে বলতে রাস্তার মাঝে এসে পরছে খেয়াল করেনি হঠ্যাৎ একটা গাড়ির স্প্রিডে আসলো মুগ্ধ কিছু বুজে উঠার আগেই……….।

সবাই কলেজের অনুষ্ঠানে মগ্ন এমন সময় দাড়োয়ান দৌড়ে চিৎকার করতে করতে এসে বলছে,

দাড়োয়ান:স্যার স্যার আমাগো কলেজের একটা মাইয়া অই রোডে গাড়ি এক্সসিডেন্টে কইরা পইরা আছে।

দাড়োয়ানের কথা শুনে সবাই চমকে যায় প্রিন্সিপাল সাহেব চিন্তিত হয়ে বলে,

কার এক্সসিডেন্টে হয়েছে?
দাড়োয়ান:মুগ্ধ নামের মেয়েটার এক্সসিডেন্টে হয়েছে।
মুগ্ধের নাম শুনে মেহের বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়।সাদাফ না দাঁড়িয়ে দৌড়ে বাহিরে এসে দেখে মুগ্ধ পরে আছে আর রক্তে ভেসে যাচ্ছে রাস্তা।সাদাফ সাথে সাথে মুগ্ধের কাছে গিয়ে ওকে কোলে উঠিয়ে নেয়।মেহের ও দৌড়ে এসে দেখে মুগ্ধের অবস্থা খারাপ মেহের সাদাফকে বলে মুগ্ধকে নিয়ে গাড়িতে উঠতে।সাদাফ মুগ্ধকে নিয়ে পিছনে সিটে বসে মেহের ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।সাদিয়া আর রুহি সাদিয়াদের গাড়িতে করে অদের পিছনে ছোটে।আড়াল থেকে একটা লোক বেরিয়ে আসে ফোন হাতে নিয়ে কল দেয় একজনকে,

লোকটা:কাজ হয়েগেছে মেডাম।মনে হয়না বাঁচবে।

মেহেরের হাত খুব কাঁপছে।সে পারে তো উড়ে যায় হাসপাতালে।চোখ থেকে পানির স্রোত বয়ে যাচ্ছে।সাদাফ মুগ্ধের মাথা কোলে নিয়ে বসে আছে মনে হচ্ছে খুব কাছের কেউ দুড়ে চলে যাচ্ছে।

আরিশ সায়মা দুজনের এখনো দাঁড়ানো কলেজে।মুগ্ধের এক্সসিডেন্টে হয়েছে শুনে আরিশের বুকটা ধক করে উঠেছে।কিন্তু ইগোর কারনে সে যেতে পারছেনা।আর সায়মা ভাবছে সাদাফকে কিভাবে মুগ্ধের থেকে দূরে রাখা যাবে।

২০মিনিটের মাথায় ল্যাবেইট হাসপাতালে এসে পৌছালো মেহেররা।সাদাফ মুগ্ধকে কোলে করে হাসপাতালের ভিতরে ডুকলো।মেহের আগেই কল করে দিছে হাসপাতালে।মুগ্ধকে ইমার্জেন্সিতে নেওয়া হয়েছে।সাদাফের কালো শার্ট রক্তে ভিজে গেছে।রুহি আর সাদিয়া এসে কান্না ভেংগে পরেছে।মেহের চেয়ারের এক কোণায় বসে ডুকরে কাঁদছে।মাকে যেভাবে হারিয়েছে।বোনটাকেও কি আল্লাহ সেভাবে কেরে নেবে।ভাবতেই মেহেরের চোখ বারবার ভিজে যাচ্ছে।

#চলবে

🙆‍♀️ঝটকা কেমন লাগলো।আগামিকাল সাদাফ তার প্রেয়শীর পরিচয় পাবে💁‍♀️।প্লিজ কেউ বকা দিয়েন না🥺।ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।

#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_বোনাস
#নন্দিনী_চৌধুরী

২০.
নিজের অফিসের চেয়ারে বসে ল্যাপ্টপে কাজ করছে মেহের।ফাঁকে ফাঁকে একটু করে কফি খাচ্ছে।মেহেরের অফিসের ম্যানেজার মেহেরের কেবিনে আসলো।

ম্যানেজার:May I coming Sir?
মেহের:Yes Coming.
ম্যানেজার:স্যার আপনার কথা মতো ArS কম্পানির সাথে আমাদের +অন্যসব কম্পানির ডিল ক্যান্সেল করিয়ে দিয়েছি।এখন আগামি ৫মাসেও তারা কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারবেনা।
মেহের:আগামি ৫মাস কেন আমি চাই তারা রাস্তায় নেমে যাক।সেই ব্যাবস্থা তুমি করো।কোনো এশিয়ান কাম্পানি জেনো ওদের সাথে ডিল না করে।
ম্যানেজার:জি আচ্ছা স্যার আমি এখন আসছি।
ম্যানেজার যাওয়ার পর মেহের চেহারে হেলান দিয়ে বসে বলতে লাগলো,

মেহের:”আরিশ তুই আমার বোনের চোখের পানি ঝরিয়েছিস।আমার বোনকে অপমান করেছিস।তোকে আমি রাস্তায় নামিয়ে আনবো।মিসেস সালমার যেই অর্থের জন্য তোর কাছে মেয়েকে লিলিয়ে দিছে অই অর্থই আমি কেড়ে নেবো।তুই জানোস না আমার বোন আমার কাছে কি।আমার বোনের চোখের পানির দাম তো তোকে আর সায়মাকে দিতেই হবে।Just wait And Watch Mr.Arish.”

নিজের রুমে বসে চোকলেট খাচ্ছে মুগ্ধ আর কার্টুন দেখছে।এক সপ্তাহে অনেক সুস্থ হয়ে গেছে মুগ্ধ পাশাপাশি নিজের আগের জীবনে ফিরে আসছে সে।মেহের রুহি এটা দেখে খুব খুশি।যে অবশেষে মেয়েটা ঠিক হচ্ছে।মুগ্ধ চোকলেট খাচ্ছে এর মাঝে ওর ফোনে কল আসে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে বোবা ভুত লেখা।মুগ্ধ চোখ মুখ কুচকে বলে উঠে,

আজকেও উফফ!

মুগ্ধ কল রিসিভ করে হ্যালো বললো,

মুগ্ধ:হ্যালো।কে? আচ্ছা আপনি কথা বলেন না কেন ফোন দিয়ে হ্যা বোবা নাকি আপনি?বোবা হলেও তো একটু পুতপুত আওয়াজ করে তাও তো করেন না।নাকি বোবা ভূতে ধরছে আপনাকে কোনটা।শুনেন এরপর যদি কল দেন তাহলে একদম খবর করে দেবো।

কথা গুলো বলেই মুগ্ধ কল কেটে দিলো।বিগত এক সপ্তাহ ধরে এই নাম্বারটা থেকে কল আসে কিন্তু কেউ কথা বলেনা।প্রথমে মুগ্ধ ভাবতো হয়তো তাকে কেউ চেতানোর জন্য এমন করছে কিন্তু প্রত্যেকদিন কল আসে কিন্তু কেউ কথা বলেনা।মুগ্ধ একদিন রেগে কল ধরছিলোনা কিন্তু ফোনদাতা ফোন দিয়ে যাচ্ছিলো তো দিয়েই যাচ্ছিলো।শেষমেষ বাধ্য হয়ে কল রিসিভ করে মুগ্ধ সেই চুপ থাকে।তাই মুগ্ধ এর নাম দিয়েছে বোবা ভূত।মুগ্ধ ফোন হাত থেকে রাখতে যাবে দেখে ফোনে বোবা ভূতের ম্যাসেজ আসছে,

বোবাভূত:আগামিকাল নীল জামাটা পরে আসবা কলেজে ওকে।

মুগ্ধ ম্যাসেজ দেখে অবাক।বোবা ভূত দেখি কলেজ ও চিনে।কিন্তু এই বেটার কথা আমি শুনুম কেন পরমুনা নীল জামা হুহ।মুগ্ধ নিজের মনে মনে এসন আওড়াতে আওড়াতে নিচে চলে আসলো।

রুহি বসে বসে আচাড় খাচ্ছে।রুহিকে আচাড় খেতে দেখে মুগ্ধ ওর পাশে এসে বসে বলে,

মুগ্ধ:উহুম উহুম কি আমাদের বাসায় কি জুনিওর মেহের আসছে নাকি।
রুহি মুগ্ধের কথা শুনে লজ্জা লাল হয়ে যায়।রুহিকে লজ্জা পেতে দেখে মুগ্ধ খুশি হয়ে বলে,

মুগ্ধ:ভাবিপু সত্যি?
রুহি:হুম🙈।
মুগ্ধ:ইয়েস আমি ফুপি আম্মু হবো।উফ আমার এখোনি কি যে ভাল্লাগছে।ভাইয়াকে জানাবে কখন?
রুহি:বাসায় আসলেই।
মুগ্ধ:আচ্ছা।

কথা বলার মাঝে মেহের বাসায় আসে।হাতে তার দুই প্যাকেট ছানার মিষ্টি।বাসায় ডুকে মিষ্টি গুলো রেখে রুহিকে কোলে তুলে নেয় মেহের।রুহিতো লজ্জা শেষ🙆‍♀️।মুগ্ধ মুখ টিপে হাসছে।সে আসতে করে রুমে চলে আসলো।

মেহের রুহিকে কোল থেকে নামিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বললো,

মেহের:ধন্যবাদ আমাকে এতো বড় উপহার দেওয়ার জন্য।
রুহি:তুমি!
মেহের:তোমার রিপোর্ট ডাক্তার আমার কাছে পাঠিয়েছে আমি আগেই জেনেছি।
রুহি:ভালোবাসি।
মেহের:ভালোবাসি বউ।

মুগ্ধ নিজের রুমে হাসতে হাসতে চলে আসলো।আজকে তার ভাই কত খুশি।ইসস তার ও এরকম হ্যাপি একটা ফ্যামিলি হতে পারতো। কিন্তু তার ভাগ্যে হয়ত সেই সুখ নেই।মুগ্ধ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।টেবিলে রাখা মায়ের ফোটো ফ্রেমটা বুকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।যখন মুগ্ধ ছোট ছিলো তখন খেলতে গিয়ে ব্যাথা পেলে কাঁদতে কাঁদতে মায়ের কোলে মুখ লুকাতো।রাতে মা তাকে ভাইকে গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়াতো।কত আদর করতো।কিন্তু মাকে আল্লাহ নিয়ে গেলো।মুগ্ধ মায়ের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো।মেহের ফ্রেশ হয়ে এসে বোনের রুমে দেখে মুগ্ধ ঘুম।মায়ের ফোটো ফ্রেম বুকে জরিয়ে ঘুমিয়ে গেছে।মেহের আসতে করে ফোটো ফ্রেমটা সরিয়ে কাথা গায়ে দিয়ে দিলো।ড্রিম লাইয় জ্বালিয়ে মুগ্ধের কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলো।

সকালে,

মুগ্ধ উঠে নামাজ পরে নিলো।হালকা পড়া পরে রেডি হলো কলেজের জন্য।একটা হলুদ কালারের কূর্তি পরলো সাথে নেবিব্লু কালারের স্ক্রাফ বাদলো মাথায়।রেডি হয়ে নিচে এসে তাড়াতাড়ি নাস্তা করে বেরিয়ে পরলো।আজকে রিকশা করে যাবে মুগ্ধ।মেহেরকে খুব কষ্টে রাজি করিয়েছে।মেহেরতো ওকে একা ছাড়তেই রাজিনা।তবুও খুব কষ্টে রাজি করিয়ে এসেছে।মুগ্ধ রোডে দাঁড়িয়ে রিকশা খুজতেছে গতকাত রাতে বৃষ্টি হইছে তাই রোড সব কাদা পানিতে ভোরা।মুগ্ধ এক কোণায় দাঁড়িয়ে রিকশা খুজতেছে তখন একটা গাড়ি একদম ওর পাশ থেকে এসে ওর জামায় কাদা ছিটিয়ে দিলো।মুগ্ধ তা দেখে অবাক হয়ে রেগে চিৎকার করে বলে,

মুগ্ধ:এই চোখে দেখে গাড়ি চালাতে পারেন না। আমার জামাটা নষ্ট করে দিলেন।

মুগ্ধের চিৎকার শুনে গাড়িওয়ালা গাড়ি থামিয়ে বেরিয়ে আসে গাড়ি থেকে।গাড়ি থেকে সাদাফকে নামতে দেখে আরো অবাক হয় মুগ্ধ।একটু অভিমান ও হচ্ছে এই এক সপ্তাহে সাদাফ আর একবার ও আসেনি ওকে দেখতে সাদিয়া সাদিয়ার বাবা মা এসেছিলো কিন্তু সাদাফ আসেনি।সাদাফ চোখের সানগ্লাসটা খুলে পকেটে রেখে মুগ্ধের দিকে এগিয়ে এসে বলে,

সাদাফ:ইইইইই যা আপনার ড্রেসতো নষ্ট হয়ে গেলো মিস মুগ্ধ।এখন কি হবে।
মুগ্ধ:আপনার জন্যই তো হলো।গাড়ি দেখে শুনে চালান না কেন স্যার।
সাদাফ:ইস আমি সরি রিয়েলি সরি।এক মিনিট দাঁড়ান।

সাদাফ আবার নিজের গাড়ির কাছে গিয়ে গেট খুলে একটা ব্যাগ বের করলো তারপর আবার মুগ্ধের কাছে এসে ব্যাগটা হাতে দিয়ে বললো,

সাদাফ:এইখানে একটা ড্রেস আছে।এটা সাদিয়ার জন্য নিছিলাম এখন আপনি এটা চ্যাঞ্জ করে পরে নেন।

মুগ্ধ:আমি কি এটা এখানে চ্যাঞ্জ করবো।এখানে কই আছে চ্যাঞ্জ করার জায়গা?

সাদাফ:মিস মুগ্ধ আপনি মনে হয় চোখে কম দেখেন আপনার হাতের পাশেই তো একটা মল।ওখানে গিয়ে চ্যাঞ্জ করে নেন।

মুগ্ধ সাদাফের কথা শুনে পাশে তাকিয়ে দেখে আসলেই একটা শপিংমল মুগ্ধ তাড়াতাড়ি সেখানে গিয়ে চ্যাঞ্জ করে নিলো।একটা নীল রং এর কামিজ।মুগ্ধ চ্যাঞ্জ করে বেরিয়ে আসে। সাদাফ তখন রাস্তায় গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো।মুগ্ধকে দেখে ঠিক হয়ে দাঁড়ায়।নীল জামার সাথে নীল স্কাফ কোনো সাজ নেই তবুও দেখতে ভালো লাগছে।সাদাফ মুচকি হাসি দেয়।মুগ্ধ এসে দাঁড়াতেই সাদাফ একটা রিকশা ঠিক করে দেয় তারপর মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে বলে,

সাদাফ:সাদু নানা বাসায়।ও কলেজে আসবেনা কিছুদিন।তো এখন কয়েকদিন বান্ধুবিকে ছাড়া ক্লাস করতে হবে।নেন এখন যান।আর হ্যা সাবধানে আবার কারো গাড়ি দিয়ে কাদা মাখাইয়েন না।

মুগ্ধ সাদাফের কথা শুনে রাগে গজগজ করতে করতে রিকশায় উঠলো।

নিজেই কাদা ছিটালো।আমার দেড়ি করালো।আর এখন বলে সাবধানে যেতে।দেইখেন আপনার কপালে একটা সাতচুন্নি জুটবে হুম।

বকবক করতে করতে মুগ্ধ চলে যায়।আর সাসাফ সেখানে দাঁড়িয়ে হেসে বলে,

“যতোটা মুগ্ধতা নিয়ে আমি তোমার দিকে তাকিয়ে তোমাকে দেখি মেহুরানী,ততোটা মুগ্ধতা নিয়ে আমি ওই দুর আকাশের দিকেও তাকাইনি”।

মনে মনে কথাটা বলে সাদাফ গাড়ি নিয়ে চললো কলেজের পথে।

🌻
নিজের রুমে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে আরিশ।তার জীবনের সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।তার নিজের অংশ পৃথীবিতে আসার আগেই চলেগেলো।এখন বিজনেসে লোস শুরু হয়েছে।সব দিক থেকে সে কেমন শেষ হয়ে যাচ্ছে।একসপ্তাহ আগেও সব কত ভালোছিলো বাচ্চাটাকে নিয়ে আরিশ কত এক্সসাইটেড ছিলো।কিন্তু সব শেষ হয়ে গেলো।এক সপ্তাহ আগে সায়মা ওর মায়ের বাসায় যাওয়ার পরের দিন ওর মা কল করে জানালো সায়মা ওয়াশরুমে পা পিছলে পরে গেছে এখন হাসপাতালে।আরিশ দ্রুত হাসপাতালে যায় কিন্তু ততোখনে সব শেষ বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেছে জানায় ডাক্তার।সায়মা অনেক কেঁদেছিলো আরিশের হাত ধরে আর মাফ চেয়েছে।আরিশ অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে সায়মাকে সামলেছে।এরপর সায়মা ওর মায়ের কাছেই আছে।ওখানে থাকলে সায়মা নরমাল থাকবে আরিশের মনে হয়।এরপর এখন বিজনেসের লোস এতো টাকার লোস হয়ে গেলো এখন কিভাবে কি করবে সে কিছুই বুজতে পারছেনা।সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে তার।

নিজের রুমে আয়েস করে বসে কফি খাচ্ছে সায়মা আর সালমা।অন্তত একটা ঝামেলা মিটলো।এই বাচ্চার ঝামেলা না মিটলে সায়মাকে আরিশ তো চোখের আড়াল করতোই না।এখন ফাইনালি না আছে বাচ্চা আর না এখন আরিশ সায়মাকে চোখে চোখে রাখবে।

সায়মা:উফ মা তুমি বাঁচিয়ে দিলা।হাপিয়ে গিয়েছিলাম এই প্রেগন্যান্ট হবার নাটক করতে করতে।
সালমা:হুম এখন আর আরিশ তোকে পাহারা দেবেনা।
সায়মা:হুম তো কিছু ভাবলে সামনে কি করবে?
সালমা:ভাবছি কি করবো।তোর বাপ তো আজ রাতে আসছে।
সায়মা:অহ আচ্ছা।
সালমা:হুম।

মেহের বাসায় আজকে কারন আজ তার কোনো জরুলি কাজ নেই।মেহের বসে কাজ করছিলো তখন বাসার দাড়োয়ান আসলো।

দাড়োয়াম:স্যার আপনার জন্য চিঠি আসছে।
মেহের:আমার জন্য?
দাড়োয়ান:জি স্যার আপনার জন্য।
মেহের:কে দিলো?
দাড়োয়ান:জানিনা পোষ্টমেন আইসা দিয়া গেলো।
মেহের:আচ্ছা দেও আমাকে।
দাড়োয়ান:এই লোন।
দাড়োয়ান মেহেরকে চিঠি দিয়ে চলে আসলো।মেহের চিঠির খামে দেখলো কিছু লেখা নেই।তাই খাম খুলে চিঠি বের করলো।চিঠিটা খুলতেই অবাক হয়ে গেলো মেহের।

#চলবে

🙆‍♀️বোনাস দিছি আজকেও।আজকে আমার সব পড়া শেষ তাই দিলাম।এই বোনাস দেওয়ায় আপনাদের কাছে একটা জিনিশ চাই সেটা হলো শুধু তো next, nice কমেন্ট করেন।আজকে নাহলে একটা গটন মুলোক মন্ত্যবে আমাকে জানান এই ১ থেকে এই পর্ব পর্যন্ত কোন ক্যাকেটার আপনাদের ভালো লাগছে কোনটা ভালো লাগেনাই।জানালে আমি সত্যি খুব খুশি হবো।ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here