শেষ_থেকে_শুরু পর্ব_৯

শেষ_থেকে_শুরু
পর্ব_৯
#নন্দিনী_চৌধুরী

১৮.
সকালের দিকে জ্ঞান ফিরেছে মুগ্ধের।হাতের সেলাইনটা খুলে দেওয়া হয়েছে।মেহের আর রুহি কালকে থেকে এখানেই আছে।সকালে নার্স এসে খাওয়ার আগের মেডিসিন গুলো খাইয়েদিয়ে গেছে।মেহের এখন নাস্তা কিনতে যাবে বাহিরে।মেহের বের হবে এমন সময় সাদিয়া এসে হাজির।হাতে খাবার ফল নিয়ে আসছে।পিছনে সাদাফ ও আসছে।

সাদাফ:আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।
মেহের:ওলাইকুমুস সালাম।আসো সাদাফ।
সাদাফ:ভাইয়া কালকে থেকে আপনি ভাবি এখানে। আপনারা এখন বাসায় যান।ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিয়ে আসেন।আমি আর সাদিয়া এখানে আছি।
মেহের:না থাক তোমরা কেন কষ্ট করতে যাবে তাছাড়া তোমার তো কলেজে আজকে ক্লাস আছেনা।
সাদাফ:আমি প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে কথা বলে নিয়েছি।আজকে জন্য ছুটি নিয়েছি।আপনারা যান ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিয়ে আসুন।আমরা এখানে আছি।
মেহের:আচ্ছা আমরা তাড়াতাড়ি এসে পরবো।

এরপর মেহের রুহিকে নিয়ে বাসায় চলে যায়।আর সাদিয়া সাদাফ মুগ্ধের কাছে থাকে।মুগ্ধ ঘুমিয়ে আছে।সাদিয়া আসতে করে ওর পাশে বসে মুগ্ধকে ডাক দিলো,

সাদিয়া:মুলা এই মুলা।

মুগ্ধ আসতে করে চোখ খুললো।সাদিয়াকে দেখে হালকা হাসলো মুগ্ধ।সাদিয়া আসতে করে মুগ্ধকে উঠিয়ে বসালো।মুগ্ধ আসে পাশে তাকিয়ে দেখে ভাইয়া ভাবি নেই।মুগ্ধ আসতে করে বলে উঠে,

মুগ্ধ:ভাইয়া আর ভাবিপু কই সাদু?
সাদিয়া:ভাইয়া আর ভাবিকে কিছুক্ষন হলো বাসায় পাঠাইছে ভাইয়া।কাল থেকে তারা এখানে। তাই এখন ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিতে পাঠিয়েছে ভাইয়া।
মুগ্ধ:অহ আচ্ছা।
সাদিয়া:আচ্ছা নে এখন এই স্যুপ্টা খেয়ে নে।

সাদিয়া একটু একটু করে স্যুপটা খাইয়ে দিচ্ছে মুগ্ধকে। তখন সাদাফ রুমে আসলো।মুগ্ধ সাদাফের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়।সাদিয়া মুগ্ধকে স্যুপ্টা খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে শুইয়ে দিলো।সাদিয়া ফোনের দিকে তাকিয়ে সাদাফকে বলে,

সাদিয়া:ভাইয়া আমি ক্লাসে গেলাম।তুমি থাকো।আমি দুইটা ক্লাস করেই চলে আসবো।
সাদাফ:আচ্ছা গাড়ি নিয়ে যা।
সাদিয়া:আচ্ছা।

সাদিয়া চলে আসলো।মুগ্ধ তাকিয়ে আছে সাদাফের দিকে সাদাফ তাকাতেই দৃষ্টি সরিয়ে নিলো সে।সাদাফ আসতে করে মুগ্ধের পাশের চেয়ারে বসলো।

সাদাফ:সরি মিস মেহুরানী।
মুগ্ধ সাদাফের মুখ থেকে মেহুরানী ডাকটা শুনে থমকে গেলো।এক আলাদা শিহরণবয়ে গেলো তার শরীরে।
মুগ্ধ:সরি কিসের জন্য স্যার?
সাদাফ:কালকের ব্যাবহারের জন্য।আমার ব্যাবহারে আপনি কষ্ট পেয়ে কাঁদছিলেন।
মুগ্ধের কালকের ঘটনা গুলো মনে পরে গেলো আর মনে মনে বলতে লাগলো,
না স্যার আপনার কথায় আমি কাঁদিনি।আপনি তো কাল আমাকে বাঁচিয়েছিলেন।আমিতো কেঁদেছি ওই মানুষগুলোর জন্য যাদের কাছে আমি মুল্যহীন।
মুগ্ধ আসতে করে বলে,
মুগ্ধ:না স্যার আপনার কথায় আমি কষ্ট পাইনি।বরং আপনাকে ধন্যবাদ কাল আমাকে বাঁচানোর জন্য।
সাদাফ:আচ্ছা।এখন তুমি রেস্ট নেও।আমি এখানেই আছি।কিছু লাগলে বলো।

সাদাফ উঠে যায়।আর মুগ্ধ চোখ বন্ধ করে ফেলে।মেডিসিনের ডোজ কড়া থাকায় ঘুমিয়ে যায় একটু পড়েই।সাদাফ ঘুমন্ত মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে আছে,ভাবছে এক কৈশরি মেয়ের হিজাবের মধ্য ফুটে থাকা দুটি আঁখির প্রেমে পড়েছিলো সে।সেই আঁখির মালিক তার দিকে তাকালেই এক আলাদা প্রশান্তি লাগতো তার।কিন্তু কেউ এই পবিত্র আঁখি অন্যায় কাজে লাগিয়েছে ভাবতেই সাদাফের রাগ লাগে।এতো বড় বোকামি সে কি করে করলো।আজ তার বোকামিতেই সে তার প্রেয়শীকে হারিয়েছিলো।

সালমা বেগমের রুমে মাথায় দুই দিয়ে বসে আছে সায়মা।সালমা বেগম সোফায় বসে আছে।

সায়মা:মা তুমি কেন মুগ্ধকে মারতে গেলে।এখন তো যদি কেউ জেনে যায়। তাহলে বুজতে পারছো কতবড় ঝামেলায় তুমি আমি পরবো।
সালমা:আমি কি জানতাম যে সাদাফ ওখানে।সাদাফ ওই কলেজেই আছে যেই কলেজে মুগ্ধ পড়ে।আর তুই কিভাবে গাধা মতো কাজ করস এটা আমি সেটা বুজলাম না।
সায়মা:মা আমার খুব চিন্তা হচ্চে।সাদাফ তো সিওর মুগ্ধের সাথে হাসপাতালে যদি ও সব জেনে যায় তাহলে আমাকে তো ধরে ফেলবে।

সালমা:কিছু হবেনা তুই ভয় পাস না।দরকার হলে আমি আরো একটা খুন করবো।তবুও আমার মেয়ের কিছু হতে দেবোনা।মেহেজাবীনকে যেভাবে সরিয়েছি ওর মেয়েকেও মারবো।(মনে মনে)
সায়মা:মা এখন আমি কি করবো?
সালমা:শোন তুই অই কলেজে ডুকে পর।তারপর নজর রাখবি সাদাফ আর মুগ্ধের উপর।
সায়মা:ওই কলেজে কিন্তু আরিশ কি দেবে যেতে।এই বেবির কথা বলে আমি পুরা ফেঁসে গেছি।
সালমা:কালকেই এই বেবির গল্প শেষ।তুই কোনো চিন্তা করিস না।
সায়মা:সত্যি!
সালমা:হুম সত্যি।
সায়মা:আচ্ছা মা একটা কথা বলি?
সালমা:বল।
সায়মা:আচ্ছা মা মেহেজাবীন আন্টির সাথে তোমার কিসের শত্রুতাছিলো।নাহলে তুমিতো শুধু সম্পত্তির জন্য এমন করছো বলে আমার মনে হয়না।
সালমা:শত্রুতা অনেক কিছুর।কিন্তু ওর সাথে আমার সব থেকে বড় শত্রুতা ও আমার সব সুখ কেড়ে নিয়েছিলো তাই আমি ওর জীবন্টাই ওর থেকে কেড়ে নিয়েছি।
সায়মা:মানে?
সালমা:এতো মানে তোর জানতে হবেনা।তুই এটা বল ফাইল গুলো পেয়েছিস?
সায়মা:না মা পাইনি বুজতে পারছিনা ফাইল গুলো কই।কিন্তু মা তুমি বললানা কেন মারতে চাইলে তুমি মুগ্ধকে?
সালমা:কারণ মুগ্ধকে না মারলে সম্পত্তি কোনোদিন তোর হবেনা।
সায়মা:মানে?
সালমা:আমি মেহেজাবীনের উকিলের সাথে কথা বলেছিলাম। সে আমাকে জানিয়েছে মেহেজাবীন মুগ্ধের নামের যেই সম্পত্তি রেখে গেছে। সেটা মুগ্ধ ১৮ বছর হলেই ওর নামে হয়ে যাবে।কিন্তু কোনো ভাবে মুগ্ধের যদি মৃত্যু হয় তাহলে সেই সম্পত্তি মুগ্ধের বাবা মা বা ভাই পাবে।এখন মুগ্ধের মা তো নেই।মেহের তো এই সম্পত্তি কোনোদিন নেবেনা।বাকি তোর বাপ। তার কাছে সম্পত্তি চলে আসলে সেটা হাতিয়ে নেওয়া আমার জন্য আমার কোনো সমস্যা হবেনা।কিন্তু তার জন্য আগে মুগ্ধকে মরতে হবে।
সায়মা:আমার আর এইসব ভালো লাগছেনা।ভয় লাগছে এখন।
সালমা:ভয় পাস না যা তুই এখন রুমে যা।
সায়মা:আচ্ছা।
সায়মা রুমে চলে গেলো।আর সালমা মনে মনে বলতে লাগলো,

মেহেজাবীন আমার শত্রু। ওর পুরা পরিবার আমার শত্রু।ওর জন্য আমি কোনো সুখ পাইনি আমার মা ওর মায়ের জন্য সুখ পায়নি।আর এখন ওর মেয়ের জন্য আমার মেয়ে সুখ পাচ্ছেনা।

১২টার দিকে মেহের রুহি আসলো হাসপাতালে।সাদাফ তখন বসে ছিলো।মেহের কে দেখে উঠে দাঁড়ালো।মুগ্ধ তখোনো ঘুম।

মেহের:খেয়েছে নাস্তা?
সাদাফ:হ্যা সাদিয়া খাইয়ে মেডিসিন দিয়ে কলেজে গেছে।
মেহের:অহ তোমাদের খুব ধন্যবাদ।আমাদের পাশে এভাবে থাকার জন্য।
সাদাফ:ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবেন না।
মেহের:ডাক্তারের সাথে কথা বললাম। ডাক্তার বললো চাইলে আমরা ওকে নিয়ে যেতে পারি। তবে বাসায় নার্স রাখতে হবে ফুল দেখাশুনা করতে হবে।আমি ভাবছি ওকে নিয়ে যাবো দুটো নার্স রাখবো আর রুহিতো আছেই।
সাদাফ:আচ্ছা আমারো মনে হয় বাসায় নিয়ে যাওয়া উচিত।
মেহের:হ্যা আমি সব ফোরামালিটি করে নিয়ে যাবো এখন।
সাদাফ:তাহলে আমি আসি আজকে।
মেহের:আচ্ছা তবে বাসায় কিন্তু আসবে।সাদিয়াকে নিয়ে কেমন।
সাদাফ:জি আচ্ছা।

সাদাফ চলে যাওয়ার পর মেহের সব গুছগাছ করিয়ে মুগ্ধকে বাসায় নিয়ে আসে।সাথে দুইজন নার্স নেয়।

মুগ্ধ বাসায় আসছে আজকে দুইদিন।এই দুইদিন মুগ্ধের প্রপার সেবা করেছে রুহি আর নার্স মিলে।মেহের এখনো বোনের সাথে কথা বলেনি।মুগ্ধ বুজতে পারছে ভাইয়ের অভিমান।বিকালে মুগ্ধ খাটে পিছনে বালিশ দিয়ে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।তখন মেহের ওর রুমে আসে।ভাইয়কে দেখে হালকা হাসলো মুগ্ধ।মেহের মুগ্ধের সামনে বসে বোনের হাত দুটো ধরে বলতে থাকে,

মেহের:সত্যি করে বলতো চড়ুইপাখি।সেদিন তুই মাঝ রাস্তায় গেলি কিভাবে।তুইতো কলেজে ছিলি।
মুগ্ধ:…………
মেহের:কি হলো বল।বলবিনা তাইতো।আচ্ছা বলিস না আমি বলছি আরিশ সায়মা তোকে অপমান করে। আর তুই কেঁদে বের হোস রাস্তায়। আর একটা গাড়ি এসে তোকে ধাক্কা মারে।তাই তো।
মুগ্ধ ভাইয়ের কথা শুনে অবাক।
মুগ্ধ:ভাইয়া তুমি!
মেহের:হ্যা আমি জানি তোর কি মনে হয় তোর গায়ে কেউ একটা আচড় দিলে আমি তা টের পাবোনা।তোকে খোদার কসম করে বলছি অই মিসেস সালমার মেয়ের জীবন আমি বিশিয়ে দেবো আর আরিশ ওকে তো আমি রাস্তার ভিক্ষারি করে দেবো।এটা আমার প্রতিজ্ঞা।
মুগ্ধ:না ভাইয়া কোনো ঝামেলা করতে যেওনা।
মেহের:তুই চুপ কর।এতোদিন অনেক সয্য করেছি কিন্তু আর না এভার ওদের পাপেএ সাজার পালা।
মুগ্ধ ভাইয়ের কথায় খুব চিন্তায় পরে যায়।সে চায়না ভাইয়ের কোনো ক্ষতি হোক।

১৯.
সাদিয়া আর সাদাফ এসেছে মুগ্ধকে সন্ধ্যায় দেখতে।সাদাফ সাদিয়া মেহের মুগ্ধের রুমে বসা।সাদিয়া মুগ্ধের পাশে।আর সাফাফ সামনের সোফায়।মেহের দরজার পাশের চেয়ারে বসা।

মেহের:সাদাফ তোমার বাবাকেও নিয়ে আসতে।
সাদাফ:বাবা আসবে ভাইয়া আজকেই আসতো কিন্তু একটু কাজের চাপে আসতে পারেনি।
মেহের:আচ্ছা হ্যা উনি আসলে আমার খুব ভালো লাগবে।
এমন সময় সার্ভেন্ট এলো,
সার্ভেন্ট:স্যার ম্যাম অনাদের নিয়ে নিচে আসতে বলেছে নাস্তা করার জন্য।
মেহের:আচ্ছা তুমি যাও আসছি আমরা।সাদাফ সাদিয়া আসো।
সাদাফ:জি আপনি এগোন আসছি আমরা।
মেহের চলে গেলো।সাদাফ সাদিয়াকে ইশারা করতেই সাদিয়া মুচকি হেসে চলে গেলো।
মুগ্ধ আর সাদাফ এখন একা রুমে।মুগ্ধের কেমন জানি লাগছে।সাদাফ আসতে করে উঠে মুগ্ধের সামনে এলো।তারপর একটা বক্স দিলো এগিয়ে।মুগ্ধ বক্সটার দিকে তাকিয়ে আছে।সাদাফ বুজতে পেরে বলে,

সাদাফ:ধরো এটা।
মুগ্ধ আসতে করে ধরে বক্সটা।
সাদাফ:আমরা যাওয়ার পর বক্সটা খুলবা।
মুগ্ধ:জি আচ্ছা।
সাদাফ:হুম আসি টেক কেয়ার।

সাদাফ চলে গেলো।মুগ্ধ সাদাফের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।

সাদাফ সাদিয়া নাস্তা করে আরো কিছুক্ষন মেহেরের সাথে কথা বলে চলে গেলো।

মুগ্ধকে রাতের খাবার মেডিসিন খাইয়ে নার্স চলে গেছে।মুগ্ধ পাশে থাকা বক্সটা হাতে নিয়ে ভাবছে খুলবে কিনা।ভাবতে ভাবতে বক্সটা খুলে ফেললো।

বক্সটা খুলে দেখে তার ভিতর অনেক গুলা চোকলেট,আর তিনটা চিরকুট।

মুগ্ধ চিরকুট তিনটা হাতে নিয়ে একটা করে খুল্লো।

প্রথম চিরকুট,
“তুমি কি জানো যে তোমাকে কাঁদলে পুরা পেত্নির মতো লাগে মেহুরানী।”শুনো আর কোনোদিন কারো কথায় কাঁদবেনা।উচিত জবাবতাকে দেবে।”

দ্বিতীয় চিরকুট,
“পৃথীবিতে কেউ যখন তোমাকে বোঝার চেষ্টা করেনা, তখন এই টুকু মনে রাখবে আল্লাহ তোমাকে বুঝেন আর ভালোবাসেন”।

তৃতীয় চিরকুট,
“চাইবে শুধু আল্লাহর কাছে,পাইলেও চাইবে না পাইলেও চাইবে।আল্লাহ চাইলে অনেক খারাপ রাখতে পারতো।কিন্তু আল্লাহ তোমাকে অনেক ভালো রেখেছে। আলহামদুলিল্লাহ”।

মুগ্ধ চিরকুট গুলা পরে মুগ্ধ হয়ে গেছে।আসলেই আল্লাহ চাইলে কত খারাপ রাখতে পারতো।কিন্তু কত ভালো আছে সে।একটা এতো ভালো ভাই ভাবি পেয়েছে।সত্যি কেন সে সেদিন মৃত্যু চেয়েছিলো।

“মানুষের জীবনে অনেক কিছু ঘটে তাই বলে মৃত্যু কামনা করা একদম ঠিকনা।দুনিয়াতে শুধু আমি একা কি ডিভোর্সি নাকি।অনেকে আছে তারা তাদের জীবনের শেষ থেকে শুরু করতে পারলে আমিও পারবো।আমকে আমার জীবনে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।হ্যা আমি পারবোই।”

#চলবে

এখন কয়েক পর্বে আমি সাদাফ মুগ্ধকে আনবো।এরপর সায়মাকে ধরবো।তবে মাঝখানে মাঝখানে একটু একটু করে সায়মার ধংস দেখাবো।এরপর একবারে ধরবো মিসের সালমা আর সায়মাকে।আর হ্যা কেউ আবার বইলেন না আপু তুমি স্যার ছাত্রির প্রেম দেখাচ্ছো ছিহ।না ভাই আমি স্যার ছাত্রির প্রেম না একটা বাস্তবতা দেখাচ্ছি+কিছুটা কাল্পনিক।সো কেউ আবার বাজে মন্তব্য কইরেন না।ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।💁‍♀️🖤

#শেষ_থেকে_শুরু
#বোনাস
#নন্দিনী_চৌধুরী

২৫.
সাদিয়া আর রাজীবের এংগেজমেন্ট।সাদিয়া আর রাজীব দুই বছর রিলেশনে ছিলো।রাজীব একজন সিনিওর পুলিশ অফিসার।চাকরি পাওয়ার পরপরেই সাদিয়ার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়।সাদিয়ার ফ্যামিলির সবাইও রাজী হয়ে যায়।সাদিয়া অবশেষে তার ভালোবাসাকে পাচ্ছে।

সাদাফ আড়ালে আড়ালে মুগ্ধকে দেখে যাচ্ছে।যেনো হাজার বছর পর আজ দেখছে সে মুগ্ধকে।মুগ্ধ সাদিয়ার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে মাঝে মাঝে একটু ছবি তুলছে।সাদাফ ৫০টার বেশি ছবি উঠিয়ে রেখেছে ফোনে মুগ্ধের।সাদাফের এক বন্ধু সাদাফের কাছে এসে ওর হাতে একটা গিটার দিয়ে বললো,

সাদাফ:দোস্ত আমাদের আজকে একটা গান শোনা তোর বোনের বিয়ে উপল্লখ্যে।
সাদিয়া:হ্যা ভাইয়া শোনা না।
সাফাফ:আচ্ছা

সাদাফ:”তুমি না ডাকলে আসবোনা”
“কাছে না এসে ভালোবাসবোনা”
“দুরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়”
“নাকি চলে যাওয়ার বাহনা বানায়”
“দুরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পপটা পুরোনো
“ডুবে ডুবে ভালোবাসি তুমি না
বাসলেও আমি বাসি”

পুরা গানটা সাদাফ মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে গাইলো।সাদাফের গানের মাঝে একদম হারিয়েগেছিলো মুগ্ধ।সাদাফের গানের গলা খুব ভালোলেগেছে মুগ্ধের।সাদাফ গান শেষে উঠে চলে যায়।মুগ্ধ সাদাফের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।রাতে সবাই খাওয়া দাওয়া করে নিলো।সাদিয়া আজকে জোর করে মুগ্ধকে রেখে দিয়েছে তাদের বাসায়।মেহের প্রথমে রাজী হচ্ছিলোনা।পরে সাদাফ আসস্ত করলো যে মুগ্ধের কোনো সমস্যা হবেনা।মেহেররা চলে যাওয়ার পর।সাদিয়া মুগ্ধ ফ্রেশ হয়ে নেয়।সাদিয়া মুগ্ধকে একটা সুতির জামা দিলো পরতে।ফ্রেশ হয়ে মুগ্ধ সেটা পরে নেয়।অনেক ক্লান্ত থাকায় সাদিয়া বিছানায় শুতেই ঘুমিয়ে যায়।কিন্তু মুগ্ধের ঘুম আসছেনা।এটা তার একটা সমস্যা নতুন জায়গায় ঘুমাতে পারেনা।তাই মুগ্ধ আসতে করে উঠে যায় বিছানা থেকে।রুম থেকে বেরিয়ে আসে।এই ২য় তোলায় দুইটা রুম সামনে একটা বড় বেলকোনি।মুগ্ধ আসতে করে বেলকোনিতে যায়।বেলকোনিতে চারটা সোফা।অনেকগুলা ফুলের গাছ মরিচ বাতি লাগানো নানা রংএর।মুগ্ধ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।ভালোই লাগছে তার এখানে।তখন পিছন থেকে সাদাফ বলে উঠে,

সাদাফ:”এতো রাতে এখানে কি করছেন মিস মেহুরানী।”

সাদাফের হঠ্যাৎ কথায় চমকে যায় মুগ্ধ।তাড়াতাড়ি পিছনে ফিরে দেখে সাদাফ দুইহাত ভাজ করে দাঁড়ানো।সাদাফের পরনে একটা ব্লাক গেঞ্জি আর টাউজার।সাদাফকে দেখে মুগ্ধ মাথা নিচু করে বলে,

মুগ্ধ:জ.জি.ঘ.ঘুম আ.আসছিলোনা ত.তাই এখানে আসছিলাম।
সাদাফ:আ.আপনি ত.তোতলানো বন্ধ করে তারপর কথা বলেন।
মুগ্ধ:জ.জি।
সাদাফ:আমি বাঘ না ভাল্লুক ও না।তাই নরমাল হোন আগে।
মুগ্ধ:জি

সাদাফ মুগ্ধকে ক্রোস করে বেলকনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,

সাদাফ:আচ্ছা মিস মেহুরানী আপনি কি কোনোদিন কারো চোখ থেকে প্রেমে পড়েছেন?

সাদাফের কথাটা শুনে চমকে যায় মুগ্ধ।প্রেম কি জিনিশ সেটা সে কোনোদিন জেনেনি।যখন কৈশোরে পা দিয়েছে তখনই ছোট মা বিয়ে দিয়ে দিলো আরিশের সাথে।বিয়ের পর আরিশের সাথে মানিয়ে নিতে অনেক সময় লেগেছিলো।আরিশের কেয়ার দেখে সে তার ছোট মনের এককোণায় জায়গা দিয়েছিলো আরিশকে কিন্তু সে ঠকালো তাকে।ভালোবায়ায়া জিনিশটা বুঝার আগেই ভালোবাসা জিনিশটার প্রতি অবিশ্বাস এসেগেছে তার।

মুগ্ধ আসতে করে উত্তর দিলো,

মুগ্ধ:নাহ্।
সাদাফ:হুম পিচ্চি মানুষ কেম্নে প্রেমে পড়বেন বলেন।আমি পড়েছি একটা ছোট পরীর চোখের প্রেমে।
মুগ্ধ:তাই কিভাবে।
সাদাফ:আমি যখন ভার্সিটতে তখন আমাদের ভার্সিটির সামনে একটা গার্লস স্কুল ছিলো।সেখানে অনেক মেয়েরা পড়তো।আমি কোনোদিন কোনো মেয়ের দিকে সেভাবে তাকাতাম না।কিন্তু একদিন একটা মেয়ের সাথে আসার পথে ধাক্কা লাগে।মেয়েটা সম্ভবত খুব দুর্বল ছিলো তাই আসতে ধাক্কাও পরে যায়।আমার অপরাধ বোধ কাজ করায় তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই।সেও আমার হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো।তার সেই মায়াবি চোখ দুটো দিয়ে একটু সময় আমার দিকে তাকিয়ে ছুটে চলে যায় স্কুলে।মেয়েটার মুখ স্কাফ দিয়ে বাধা তাই মুখ দেখতে পাইনি।শুধু চোখ দুটো দেখেছিলাম।আর সেই চোখ দুটোর প্রেমেই আমি পড়েযাই।

মুগ্ধ:তারপর তাকে বলেদিয়েছেন মনের কথা?

সাদাফ:নাহ্ বলা হয়নি তাকে মনের কথা তার আগে তাকে হারিয়ে ফেলেছি।

মুগ্ধ:অহ।

সাদাফ:হুম।জানেন মিস মেহুরানী এই দুনিয়াটা গোল। আমার বিশ্বাস একদিন তার সাথে আমার দেখা হবে। আর আমার মনের কথা আমি তাকে জানাবো।
মুগ্ধ:হ্যা নিশ্চই।আচ্ছা আমি এখন যাই।কাল সকালে আবার ক্লাস আছে।

বলেই মুগ্ধ রুমে চলে যায়।সাদাফ তখনো রেলিং ধরে বাহিরে তাকানো।

“ঠকায় একজন তবে বিশ্বাস উঠে যায় সবার থেকে।আমি জানি মুগ্ধ তুমিও সেই অবস্থায় আছো।কিন্তু আমি তোমাকে নতুন করে ভালোবাসতে শিখাবো।যেখানে তোমার সব শেষ সেখান থেকে একটা নতুন শুরু করবে শেষ থেকে শুরু করবে।”

সাদাফ আপনমনে কথা গুলো বলে নিজের রুমে চলে আসলো।দুইজন দুই প্রান্তে একজন ভালোবাসার জন্য মরিয়া আরেকজন জীবন সামনে নেওয়ার জন্য।

সকালে,,,,

সাদাফ,মুগ্ধ,সাদিয়া তিনজন কলেজে চলে আসলো।সাদিয়া আর মুগ্ধকে ক্লাসে পাঠিয়ে সাদার টিচার রুমে চলে আসলো।ক্লাসে আসতেই মুগ্ধ দেখলো সায়মা আর আরো কিছু মেয়ে একসাথে বসে কথা বলছে।মুগ্ধ তাদের পাত্তা না দিয়ে সাদিয়ার সাথে অন্য এক বেঞ্চে গিয়ে বসলো।কিছুক্ষনের মধ্য অই মেয়েগুলোর ভিতর থেকে একটা মেয়ে এসে মুগ্ধের সামনে দাঁড়ালো।

মেয়েটা:মুগ্ধ আমি শুনলাম তুমি নাকি ডিভোর্সি।
মেয়েটার কথা শুনে চমকে যায় মুগ্ধ তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,,
মুগ্ধঃমানে কি বলছো এগুলা?
মেয়েটাঃঢং করোনাতো জেনো ভাজা মাছ উলটে খেতে পারোনা।সব শুনেছি তোমার ব্যাপারে।হুহ তুমি ডিভোর্সি। তোমার স্বামী তোমাকে ছেড়ে দিয়েছে।তাইতো বলি আমাদের থেকে তোমাকে অনেক বড় বড় লাগে।কিন্তু তুমি কলেজ ফরমে অবিবাহিত লিখেছো কেন।অহ আচ্ছা বুজেছি নিশ্চইন কলেজে কোনো ছেলে পটানোর জন্য রাইট।
মুগ্ধ মেয়েটার কথা শুনে এভার রেগে গেলো উঠেই মেয়েটার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পর লাগিয়ে দিলো।তারপর চিৎকার করে বলতে লাগলো,

মুগ্ধঃমাইন্ড ইউর ল্যাংগোয়েজ।কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা কি শেখানো হয়নি তোমাকে।দেখেতো ভালো ঘরের মনে হয় কিন্তু ব্যবহারতো রাস্তার মেয়েদের মতো।লিসেন হ্যা আমি একজন ডিভোর্সি। তাতে কোন মহাভারত অসুদ্ধ হয়েছে।আমি ডিভোর্সি তাতে তোমাদের কি সমস্যা তোমরা কি আমাকে এক বেলা এসে খাবার দিচ্ছো।নাকি আমাকে এসে শান্তনা দিচ্ছো।নাকি আমি তোমাদের কোনো পাকাধানে মই দিয়েছি।আরে ডিভোর্সি বলে যা ইচ্ছা তাই বলে যাবে।শুনো মেয়ে বাংলাদেশে গড়ে হিসাব করলে প্রতিদিন ৩০টার বেশি ডিভোর্স হয়।সেই সবগুলা ডিভোর্সে শুধু মেয়েটার দোষ থাকেনা।ছেলেদের ও থাকে।মেয়েদের চেয়ে একটা ছেলে একটা সম্পর্ক অনায়াসে ভেংগে ফেলে।জাস্ট মোহে পরে ভুলে যায় তার যে একটা স্ত্রী আছে।একটা পুরুষ প্রথমে হয় ছেলে তারপর হয় স্বামী তারপর হয় বাবা।এই ভুমিকা গুলো পালন করা এতোটা সহজ না তেমনি একটা মেয়ে প্রথম মেয়ে তারপর স্ত্রী তারপর মা হয়।এই দায়িত্ব পালন করে একটা সম্পর্ক মজবুত হয়।কিন্তু একটা পুরুষ সে কি করে একটা পরোনাড়ীর পাল্লায় পরে নিজের এই দায়িত্ব গুলা ভুলে যায়।জরিয়ে যায় পরোকীয়ায়।তেমনি একটা নারীয়ও জরিয়ে যায়।এক পর্যায় ডিভোর্স হলে দোষ শুধু মেয়েদের।মেয়ে স্বামীকে সুখ দিতে পারেনি,চোখে চোখে রাখতে পারেনি আঁচলে বেধে রাখতে পারেনি তাই আজ ছেড়ে গেলো।এখন বলোতো একটা বিয়ে মানে কি শুধুই শারীরিক চাহিদা এটা পেলেই কি সংসার একদম সুখের হয়ে গেলো।না কোনোদিন না বিয়ে একটা পবিত্র সম্পর্ক হারাম কে হালাল করে বিয়ে।বিয়ের সম্পর্ক টা মজবুত থাকে বিশ্বাস,ভরসা,আস্থা,পাশে থাকে এই সব প্রতিশ্রুতি নিয়ে।তাহলে কেন বিয়ে করে স্বামীকে আচঁলে বেঁধে রাখবো চোখে চোখে রাখবো।আমি তাকে বিশ্বাস করলে আমার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখার দায়িত্ব তার তাই না।কিন্তু না রাখেনি।এইযে তুমি বলছো কলেজের ফরমে কেন আমি ডিভোর্স তা লেখিনি।শোনো কোনো আইনে এটা লেখা নেই যে ডিভোর্সি হলে তা সব জায়গায় ঢোল বাজিয়ে বলতে হবে।আর জানি কি বলছিলে অন্য ছেলে পটাবো শুনো আমি তাদের মতোনা যারা ডিভোর্সের চারদিনের মাথায় অন্য কাউকে বিয়ে করবো।সো আশা করি নেক্সট টাইম বুঝে শুনে কথা বলবা।আদার ওয়াইজ আমি প্রিন্সিপালকে জানাবো।

কথাগুলো বলে মুগ্ধ ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসলো।আর মেয়েটা মাথা নিচু করে লজ্জায় দাঁড়িয়ে রইলো।

সাদাফ ক্লাসে এসে দেখে মুগ্ধ নেই।সবাইকে এরকম দেখে সাদাফ বলে,

ক্লাসে কি হয়েছে এরকম থমথমে কেন।আর মিস মুগ্ধ কোথায়?

সবাই চুপ করে আছে।সাদাফ তাই সাদিয়াকে জিজ্ঞেশ করলো,

সাদাফঃমিস সাদিয়া কি হয়েছে ক্লাসে?

সাদিয়া শুরু থেকে শেষ সব বলে দিলো।সব শুনে সাদাফের খুব রাগ লাগছে।বেশ ভালোই বুজতে পারছে এগুলা সায়মার কাজ তবুও নিজেকে সামলে বলে,

আজকে যে ঘটেছে সেটা জেনো আর না ঘটে।তাহলে নেক্সট টাইম কলেজ থেকে আউট করে দেওয়া হবে।কারো পার্সোনাল লাইফ নিয়ে কেউ কথা বলবেন না।

সাদাফ কোনো রকম ক্লাস শেষ করে মুগ্ধকে খুঁজতে বেরিয়ে গেলো।মুগ্ধের ফোন ওফ।সাদাফের খুব চিন্তা হচ্ছে।সাদাফ তাই মেহেরকে কল লাগায়।মেহেরতো কথা শুনে পাগল প্রায় বাসায় কল দিয়ে জানতে পারলো মুগ্ধ বাসাও যায়নি।তাহলে মুগ্ধ গেলো কোথায়?

মুগ্ধ আজকে মায়ের কবরের এখানে এসেছে।মায়ের কবরটা খান বাড়ির অপর পাসের সাইডে দেওয়া এখানে শুধুই মায়ের কবর আর বাবার কবর দেওয়া।মায়ের কবরের কাছে এসে মাথা রেখে কাঁদছে। ছোট বেলায় এভাবেই কাঁদতো মুগ্ধ।আজ মাকে খুব মনে পড়ছে।

মুগ্ধঃকেন চলে গেলে মা কেন চলে গেলে।আমি যে এখন কারো কোলে মাথা রেখে কাঁদতে পারিনা।আমাকে যে কেউ এখন আর তোমার মতো আদর করেনা।আজ আমি ডিভোর্সি বলে সবাই যা ইচ্ছা বলে।জানো মা ভাইয়া আছে বলেই আজ বেঁচে আছি নাহলে অনেক আগেই চলে যেতাম তোমার কাছে।আর নিতে পারছিনা এসব।তবুও আমি লড়ে যাচ্ছি রোজ লড়ে যাচ্ছি।ক্লান্ত হয়ে গেছি লড়তে লড়তে।সেই ছোট বেলা থেকে লড়াই করে আসছি।আমার সাথে কেন হয় এমন।

#চলবে

আজকে আমি খুশি কারণ আম্মু আমাকে নতুন ফোন দিয়েছে।তাই এতো খুশি।বাবা নেই আমার বাবার পর মায়ের কাছে এই ফোনের আবদার করেছিলাম।আজকে আম্মু সেটা কিনে দিয়েছে।ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here