‘সত্য পিঞ্জর’
পর্ব ১০.
তাবিনা মাহনূর
__________
দুই দিনের ছুটি কাটিয়ে অফিসের দায়িত্ব পালনে চলে এলো আরশ। জাহাঙ্গীরের কাছে আফজাল ও লাবিবের খবরাখবর জেনে কার্তিকের কাছে গেল সে। কার্তিক হতাশ হয়ে চেয়ারের উপর হেলান দিয়ে বসে আছেন। তাকে দেখে তিনি সোজা হয়ে বসে বললেন, ‘আরশ, বিয়েটা তাহলে করলে?’
আরশ মুচকি হেসে চেয়ারে বসলো। কার্তিক বললেন, ‘এমনিই মামলা নিয়ে ঝামেলা চলছে। এর মধ্যে বিয়ে করে আরেক ঝামেলা আনলে আরশ।’
আরশ মুচকি হাসলো। প্রসঙ্গ বদলে গম্ভীর হয়ে বললো, ‘মামলার কি কোনো কূল কিনারা হয়নি স্যার?’
– না। আমি খুব চিন্তিত বুঝলে? সজল কোনো কাজ এগিয়ে দিতে পারেনি। তাই তাকে জেলে না ঢুকিয়ে জরিমানা চেয়েছি। ওই ব্যাটা জেল খাটবে না, টাকাও দিবে না। কাজও ঠিকঠাক করতে পারলো না। রক্ষীর চাকরিটা ছেড়ে দিবে বেয়াদবটা।
– এরপর কি করলেন স্যার?
– রাশেদকে বলে জেলে ঢুকিয়ে দিয়েছি। এক সমস্যার মধ্যে আরেক সমস্যার চাপ নেয়ার কি দরকার। সুযোগ দিয়েছিলাম ব্যাটাকে, হাতছাড়া করলে আমাদের কি করার আছে? ভেবেছিলাম টোপ দিয়ে টোপ ফেলবো। তা আর হলো না।
আরশ কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললো, ‘স্যার, এমন কি হতে পারে না যে সজলকে মূল অপরাধী আতিকের ফোন চুরি করতে বলেছিল, এখন আবার জেলে থাকতে বলেছে যেন তাকে সন্দেহ করা না হয়?’
– এমন হওয়ার সম্ভাবনা কম আরশ। ওরা তাহলে সজলকে গুম করে ফেলতো, অথবা মেরে ফেলতো। এতটা ঝুঁকি নিতো না যে পুলিশের কাছে সাক্ষী রেখে দিবে।
– এটাও ঠিক। তাহলে সজলের বিষয়টা এখানেই থেমে গেল?
– হুম, তাছাড়া আর কি করার আছে! ওই ব্যাটার চ্যাপ্টার ক্লোজ। বিয়ের ছুটি মাত্র দুদিন কাটালে?
কার্তিক শুধুই বিয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি হাসতে হাসতে একটা খোঁটা দিয়ে দিলেন, ‘মো-ল্লা মানুষেরা দাওয়াত টাওয়াত দেয় না! টাকা খরচে খুব হিসেবি হয়। ভালো ভালো। ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।’
আরশ বিরক্ত হলেও সেটা প্রকাশ করলো না। কৈফিয়ত দেয়ারও চেষ্টা করলো না। সে বললো, ‘স্যার, একটা কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছি না আসলে। এজন্য ছুটি বেশি নিইনি। এই দুদিনও নিতে চাইনি, রাজীব ভাই ম্যানেজ করে দিলেন বিয়ের উপহার স্বরূপ।’
উপহারের কথা শুনে কার্তিক বিয়ে নিয়ে আর কথা বললেন না। আরশ মনে মনে হাসছে। সে বিয়েতে উপহার নিতে চায়নি। এ বিষয়টা তার অপছন্দ। তবে কার্তিকের মতো হাড় কিপ্টে লোককে থামাতে টাকা-উপহারের কথা আনতেই হলো। সে তো আর মিথ্যে বলেনি!
_____
আজ শুক্রবার। আরশের অফিসের কাজ নেই। বাড়ির পুরুষ মানুষগুলো জুম্মার সালাত পড়তে যাবে। যেহেতু বাড়িতে সব ছেলেরা এই দিনেই একত্র হয়, তাই শুক্রবারে নাজিফা সুস্বাদু খাবার রাঁধেন। চেষ্টা করেন সকলের প্রিয় খাবার রাঁধতে। দিনটাকে তারা ঈদের মতো উদযাপন করে। যেমন, আজ নাজিফা ও ফাতিহা মিলে লুকমানের প্রিয় সরিষা ইলিশ, আরশের পছন্দের চিংড়ির মালাইকারি আর আমান ও আনিকার প্রিয় গরুর মাংস রাঁধবে। ফাতিহার এই সব খাবারই পছন্দ। তাই তার জন্য বিশেষ করে শুধু জর্দা সেমাই রান্না করবেন নাজিফা। নাজিফার হাতের সেমাই খুব স্বাদের হয়।
সকাল থেকে রান্নাঘরে নানান আয়োজন চলছে। অনুষ্ঠানের মতো ভাব দেখে রিশতা একবার ভাবলো, আজ মনে হয় মেহমান আসবে। এ কথা আনিকাকে বললে সে বলে, ‘আজ আমার স্বামী আসবেন। এছাড়া আর কেউ আসবে না সুন্দরী!’
আনিকা রিশতাকে সুন্দরী বলে ডাকে। রিশতার খুব আপন মনে হয় তাকে। রিশতা রান্নাঘরে গিয়ে ফাতিহাকে দেখে বললো, ‘ভাবি, এবার আর বলবেন না আমি নতুন বউ। চার পাঁচ দিন হয়ে গেল বিয়ের। পুরোনো হয়ে গিয়েছি। এবার অন্তত কোনো কাজ করতে দিন?’
ফাতিহা হেসে হাত বাড়িয়ে রান্নাঘরে নিয়ে এলো রিশতাকে। তাকে পেঁয়াজ, রসুন কাটার দায়িত্ব দিলো ফাতিহা। রিশতার কাজের মাঝে নাজিফা এলেন। তিনি রিশতার সাথে কিছুটা সহজ হতে পেরেছেন। দুই বউকে কাজে সাহায্য করতে করতে তিনি বললেন, ‘রিশতা, তোমার পছন্দের খাবার কি?’
রিশতা মুচকি হেসে বললো, ‘আমার চিংড়ি মাছ খুব পছন্দ।’
– ভালোই হলো। আরশের প্রিয় খাবার এটা।
রিশতা কৌতূহলী হয়ে সবার প্রিয় খাবারের তালিকা শুনে নিলো। তার ইচ্ছে আছে, এমন এক শুক্রবারে সে সবাইকে রেঁধে খাওয়াবে। তার হাতের রান্নাও দারুণ!
সালাতে যাওয়ার আগে সবাই গোসল সেরে নিলো। আরশ গোসল শেষে ঘরে রিশতাকে দেখতে পেল না। গায়ের পানি মুছতে মুছতে সে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। সেসময় বেশ দ্রুত হেঁটে আসতে দেখলো রিশতাকে। রিশতা এসেই বিছানায় শুয়ে পড়লো। তাকে এমন হন্তদন্ত হয়ে আসতে দেখে তার সামনে দাঁড়ালো আরশ।
– কি হয়েছে আপনার? শরীর খারাপ লাগছে?
রিশতার চোখ বন্ধ। মুখ গুঁজে রেখেছে বালিশে। আরশ উত্তর না পাওয়ায় বেশি কিছু জিজ্ঞেস করলো না। সালাতে যাওয়ার জন্য তৈরি হতেই রিশতা উঠে বসে বললো, ‘আমি আজিমপুর যাবো। আমাকে অনুমতি দিন।’
এ কথা বলে রিশতা নিজের পরিবর্তনে বেশ অবাক হলো। রুদ্রর কাছে সে কখনোই কোনো কিছুর জন্য অনুমতি চায়নি। অথচ মাত্র কিছুদিনের সম্পর্কে সে এখনই অনুমতি চাইছে। এই বিষয়টা তার মাঝে হঠাৎ চলে এসেছে।
রিশতার কথা শুনে আরশ পিছন ফিরে বললো, ‘কেন?’
– রু.. রুদ্রকে দেখতে যাবো।
আরশ সামনে ফিরে পাঞ্জাবি ঠিক করছে। যেন সে শুনেইনি কি বলেছে রিশতা। রিশতা আবার বললো, ‘দেখুন, আমি জানি আমার এই কাজটা ঠিক হচ্ছে না। এজন্য আমি চেয়েছিলাম আজকে না গিয়ে নিজেকে দমিয়ে রাখতে। কিন্তু আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। এটা এমন না যে রুদ্রকে আমি ভালোবাসি। এটা আসলে একটা অভ্যাস। যেমন, আপনাকে প্রতিদিন বাসায় থাকতে বললে আপনি অফিসে যেতে চাইবেন। তেমন আমারও প্রতি শুক্রবার…’
– তাহলে মেয়েটা আপনিই।
ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো রিশতা, ‘মানে?’
আরশ একবার রিশতার দিকে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিয়ে বললো, ‘আজিমপুর কবরস্থানে একটা মেয়ে প্রতি শুক্রবার জুম্মার আগে স্বামীর কবর দেখতে যায়। ইমাম তারিক তাকে এই অনুমতি দিয়েছে।’
রিশতা বিস্ময় নিয়ে বললো, ‘মানুষের জীবন সত্যিই সীমাবদ্ধ। কিসের সাথে কি মিলে গেল!’
আরশ মুসাল্লা হাতে নিয়ে বললো, ‘এখন যেতে পারবেন না।’
দাঁড়িয়ে গেল রিশতা, ‘আপনিও চলুন না হয়।’
– জুম্মার সালাত?
– তাহলে আমি একাই যাই?
আরশের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। স্বামী মারা গিয়েছে ছয় মাসের বেশি সময় হয়ে গেল। আরেকটা বিয়ে হয়ে গেল। তবু জড় পদার্থ দেখার জন্য অসুস্থ হয়ে পড়ছে মেয়েটা!আরশ রাগ দমনের বহু চেষ্টা করেও শেষে তা রক্ষা হলো না। শীতল কণ্ঠে বললো, ‘আপনার যেখানে খুশি সেখানে যান।’ বলেই সে আর অপেক্ষা না করে চলে গেল। তার ইচ্ছে ছিল আজ খুব অনুরোধ করে রিশতার কাছে রাসূলের সুন্নাহ আদায়ের জন্য আবদার করবে। তার আর রিশতার সম্পর্ক এখনো অপরিচিতর মতো। সেটা আজ থেকে স্বাভাবিক হতে পারতো, যদি না এই ঘটনা ঘটতো।
সালাত থেকে খাবারের পর্ব, এই সময়টুকু রিশতার খুব খারাপ কাটলো। সে আরশকে বন্ধু ভেবেছিল। তার ভাবনা সাগর বানিয়ে লোকটা রাগ দেখিয়ে চলে গেল। এখন বসে বসে খাচ্ছে আর মুখ গম্ভীর করে রেখেছে। দুই একবার রান্নার সুনাম করেছে। রিশতা রান্নাঘর থেকে সব দেখছে। সে আর ফাতিহা খাবার টেবিলের কাছে যাচ্ছে না।
ঘরে যেতে অস্বস্তি হচ্ছে রিশতার। তবু যেতে হলো সুন্দর শাড়ি পরার জন্য। বিকালে ফাতিহার মা বাবা আসবেন। তাদের সামনে রিশতাকে নতুন বউ হিসেবে পরিপাটি হয়ে থাকতে বলেছেন নাজিফা। রিশতা আলমারিতে শাড়ি দেখছে, এমন সময় আরশ বলে উঠলো, ‘বোরকা পরে নিন। আজিমপুর যাবো।’
রিশতার একবার মনে হলো সে বলবে, ‘যাবো না।’ আবার অন্য চিন্তা মাথায় এনে সে বললো, ‘কোন রঙের শাড়ি পরবো?’
আরশ রিশতাকে দেখে তার মনোভাব বোঝার চেষ্টা করলো। তার দিকে রিশতা উত্তরের আশায় চেয়ে আছে। আরশ চোখ বন্ধ করে সোফায় হেলান দিয়ে বসে বললো, ‘কোন রঙের শাড়ি আছে?’
– লাল, কালো, নীল পাড়ের সাদা শাড়ি, গাঢ় সবুজ…
– গাঢ় সবুজ। এর সাথে খোঁপা করা চুল। খোঁপায় থাকবে বকুল ফুল।
– বকুল কোথায় পাবো?
আরশ উঠে দাঁড়িয়ে বললো, ‘তৈরি হয়ে নিন। সব হাজির হয়ে যাবে।’
_____
– রুদ্র, আমি বিয়ে করেছি। কিন্তু আমার কোনো অনুভূতি নেই। না ভালো, না খারাপ। তবে জানো? আমার মাঝে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমি যা করছি, কিছুই অভিনয় নয়। সবটা আমার ভেতর থেকে কেউ যেন বলে উঠছে। এইযে সবুজ শাড়ি পরেছি, এটা উনার পছন্দে।
রিশতা মনে মনে কথা বলে। জোরেই বলতো কিন্তু আশেপাশের মানুষ তাকে পাগল ভাববে বলে মনের মাঝে রুদ্রর সাথে কথোপকথন চালিয়ে যায় সে। তার থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আরশ এখানকার শ্রমিক আক্কাসের সাথে কথা বলছে। ইমাম সম্পর্কে জেনে তার তেমন কোনো সন্দেহ হলো না। এই ইমামের পরিবারের অবস্থা খুব নিম্ন পর্যায়ে। এজন্য পড়াশোনার পাশাপাশি ইমামের দায়িত্বটা নিয়েছে সে। এছাড়া মসজিদে বিনা পয়সায় থাকছে, তাই থাকার খরচ বহন করতে হচ্ছে না।
আরশ কথা শেষে রিশতার দিকে তাকালো। সে দেখতে পেলো, ইমাম তারিক হাঁটতে হাঁটতে সেদিকে যাচ্ছে। আরশও সেদিকে যেতে শুরু করলো।
– আসসালামু আলাইকুম।
ইমামের সালাম পেয়ে রিশতা উত্তর দিলো, ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম।’
– কিছু মনে করবেন না, আজ মুখ ঢেকেছেন দেখছি?
– মুখ ঢাকা কি পর্দার অংশ নয়?
বিব্রত ভঙ্গিতে হেসে বললেন ইমাম, ‘অবশ্যই এটা পর্দার অংশ। এজন্যই জিজ্ঞেস করেছি। আলহামদুলিল্লাহ! দেখে ভালো লাগলো। আপনি আর কতদিন আসবেন এখানে?’
আক্কাস চাচা যা জিজ্ঞেস করতেন, ইমাম তাই জিজ্ঞেস করতে শুরু করেছেন। রিশতা ছোট্ট শ্বাস ফেলে বললো, ‘আর আসবো না।’
বিস্মিত হলেন ইমাম, ‘কেন?’
সেসময় আরশ এলো। রিশতা সেদিকে গিয়ে আরশের হাত ধরে মনে মনে বললো, ‘রুদ্র দেখো, আমার স্বামী।’
আরশ রিশতার এমন কাজে হতভম্ব হয়ে গেল। পরক্ষণেই তার মনে হলো, হয়তো ইমামকে দেখে নিজেকে অনিরাপদ ভাবছে রিশতা। আরশ হাতটা শক্ত করে ধরে বললো, ‘ইমাম তারিক, পড়াশোনার কি অবস্থা আপনার?’
ইমাম ভ্রু কুঁচকে বললেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কে?’
– আমি উনার স্বামী।
চমকে উঠলেন ইমাম, ‘কিন্তু উনার স্বামী…’
ইমামকে থামিয়ে আরশ বলে উঠলো, ‘আমিই স্বামী। আগেরটা অতীত। মানুষ নিজের পরিচয় অতীত দিয়ে দেয় না। বর্তমান দিয়ে নিজেকে পরিচিত করে। আপনি কি সবাইকে বলেন যে আপনি শের ই বাংলা স্কুলে পড়েন? নিশ্চয়ই তা বলেন না।’
ইমাম বুঝতে পারলেন আরশ তার জীবনী বেশ ভালোভাবেই জেনে এসেছে। গম্ভীর কণ্ঠে বললেন তিনি, ‘এত বিস্তারিত বোঝানোর প্রয়োজন নেই।’
ইমামকে বেশ রাগান্বিত মনে হলো। রিশতা দুজনের শীতল কথোপকথন দেখে বুঝতে পারলো, এদের মাঝে কোনো দ্বন্দ্ব আছে। আরশ রিশতার হাত ধরে বেরিয়ে এলো। ইমামের দৃষ্টি তার মোটেও সুবিধার মনে হয়নি। এখানে থাকলে সে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।
হাঁটতে হাঁটতে বকুল তলায় গেল আরশ। রিশতার হাত ছেড়ে সে হাটু গেড়ে বসলো। পরে থাকা তাজা বকুলগুলো কুড়িয়ে হাতের মুঠোয় জমা করছে সে। রিশতা মুচকি হেসে দেখছে। আরশের দুই হাত ভরে গেলে সে রিশতাকে ডাকলো, ‘এদিকে আসুন তো!’
রিশতা কাছে গেলে তার হাতে ফুলগুলো দিয়ে আরশ বললো, ‘গাছতলায় বসুন।’
আরশ আরো কিছু ফুল নিয়ে রিশতার পাশে বসে পড়লো। গাছের নিচে বসার জন্য সিমেন্টের তৈরি গোল একটা বসার জায়গা আছে। রিশতার কাছে বাকি ফুল দিয়ে বললো, ‘বাসায় গিয়ে সুতোয় গেঁথে দিব।’
অবাক হলো রিশতা, ‘আপনি মালা বানাবেন?’
পাল্টা প্রশ্ন করলো আরশ, ‘খুব কঠিন নাকি?’
মুচকি হেসে উত্তর দিলো রিশতা, ‘উহু।’
আর কোনো কথা নেই। বকুলের সুবাস মন জুড়িয়ে দেয়। শান্ত স্নিগ্ধ আবহাওয়ায় হতাশা এক নিমিষে ঝরে পড়ে, ঠিক বকুল ফুলের মতো।
রিশতা তার বোরকার পকেটে সব বকুল রেখে একটা আরশের দাঁড়িতে গুঁজে দিলো। আরশ একটু জোরে হেসে বললো, ‘কি করছেন?’
রিশতা হাসছে আর বলছে, ‘বাবুদের মতো দেখাচ্ছে।’
আরশের চোখ দুটো মুহূর্তেই অন্যরকম হয়ে গেল। রিশতার ভয় হয় সেই চোখে তাকিয়ে থাকতে। শুভ্র শীতল হাওয়ায় মন মাতানো মাতাল দৃষ্টি, এই চিত্রে এক রাশ কালো কালি মাখিয়ে রিশতা আরশের দাড়ি থেকে ফুল নিয়ে বললো, ‘একদম ভালো দেখাচ্ছে না। মেয়ে মেয়ে লাগছে। এটা আমার জন্যই থাক।’
আরশ চোখ বন্ধ করে গাছের সাথে হেলান দিয়ে বসলো। কিছুক্ষণ নীরবতা। রিশতার ভেতরে সংকোচ কাজ করছে। সে বুঝতে পারছে আরশের সাথে তার সম্পর্ক অন্য স্বামী-স্ত্রীদের মতো নয়। এটা যত বাড়বে, তাদের সম্পর্ক ততই ভঙ্গুর হবে।
নিস্তব্ধতা কাটিয়ে আরশ বলে উঠলো, ‘আপনাকে বিকেলে আনলাম ইচ্ছে করে। জুম্মার আগে অনেক ব্যস্ত থাকে সবাই। সেই সময়ে আপনার এই নেশাটা উপযুক্ত নয়। বিকেলে নেশা করা ভালো।’
রিশতা হাতে থাকা বকুলগুলো নিয়ে খেলছে। আপনমনে খেলতে খেলতে সে উত্তর দিলো, ‘নেশা কোনো সময়েই ভালো নয়।’
আরশ তবু তাকালো না, কিছু বললো না। তবে রিশতার শেষ কথায় সে চোখ খুললো।
– আমি এই নেশা একেবারে ছেড়ে দিয়েছি। রুদ্রকে বলেছি আমার বিয়ের কথা। আর কোনোদিন আসবো না ওর কাছে। হয়তো স্বার্থপরতা হয়ে গেল। কিন্তু মানুষ বর্তমান নিয়েই বাঁচে। তাই না?
__________
- (চলবে ইন শা আল্লাহ)