সবটা অন্যরকম♥ পর্ব-১৬

0
345

সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_১৬
Writer-Afnan Lara
.
দিবা উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে মিসেস রহমানের কথা শুনে,,তারপর কি যেন ভেবে কপালের ঘামটুকু মুছে ফেললো হাতের ওপিঠ দিয়ে,,চোখের শত্রু লোকটা কিনা আমার বর হবে,কখনওই না
মিনিকে কোলে তুলে দিবা বাসা থেকে বেরিয়ে আসলো একেবারে
মিসেস রহমান মুচকি হেসে বললেন”সে লজ্জা পেয়েছে মনে হয়”

দিবা মিনিকে নিয়ে হাঁটছে,,বাসার কাছের পার্কটাতে,,রঙিন পোশাক পরে সব কাপল,,,আবার পরিবার নিয়েও অনেকে ঘুরছে,,দিবা মিনিকে নিচে নামিয়ে গেলো সামনের একটা ফুলগাছের কাছে,,সেখানের কয়েকটা ফুলে হাত বুলিয়ে মুখে হাসি ফোটালো সে,,ফুলগুলো হলুদ রঙের,,তার মতে এগুলো মাইক ফুল,দেখতে মাইক ফুলের মতই
দিবা একটা ফুল মাটি থেকে তুলে কানে পরে নিলো,,তারপর মুচকি হেসে পিছন ফিরে তাকালো সে
তাকাতেই মুখোমুখি হলো এক সুদর্শন পুরুষের,,যেন আহনাফের প্রতিচ্ছবি
এক মূহুর্তের জন্য দিবা ভেবেছিলো ওটা আহনাফ
তবে গালে আহনাফের মতন চাপা দাঁড়ি না থাকায় বুঝতে পারলো ওটা আহনাফ না,তাছাড়া এরকম জমকালো রঙের পোশাক আজ আহনাফ পরেনি,আহনাফের পাঞ্জাবিটা ছিলো সাদা রঙের তাতে ঢাক ঢোলের লাল রঙের প্রিন্ট করা
আর এই ছেলেটার গায়ে পুরোটাই লাল রঙের পাঞ্জাবি
দিবা একটু পিছিয়ে দাঁড়ালো,,ছেলেটা এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন সে দিবাকে আগ থেকেই চেনে
দিবার থেকে চোখ সরিয়ে সে তার লম্বা হাত দিয়ে মাইক ফুলের গাছটাকে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে দিলো
দিবা ইয়া বড় হা করে তাকিয়ে আছে,,মিনি ঠিক বুঝেছে গাছে নাড়া দেওয়া মানে ফুলপাতা ঝরে পড়বে আর এটা তার অনেক প্রিয় একটা জিনিস,গাছ থেকে পাতা ঝরতে পড়া দেখলেই সে ছুটে ঐ গাছের তলায় এসে দাঁড়ায় তাই এখনও তাই,,সে মাইকফুলের গাছটার নিচপ দিবার পায়ের কাছে লুকিয়ে আছে
ছেলেটার হাতের ঝাঁকুনিতে গাছের বেশ কয়েকটা ফুল ঝরে দিবার গায়ে এসে পড়লো
দিবা মাটিতে পড়ে থাকা ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে,কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না
ছেলেটা আবারও একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো,কিছুই বললো না
দিবা মাটি থেকে ফুলগুলো কুড়িয়ে নিয়ে মিনিকে বললো”ছেলেটা আহনাফের কিছু হয় নাকি,চেহারায় এত মিল ক্যান!”
ওমা ছেলেটা দেখি আমাদের বাসার দিকেই যাচ্ছে
দিবা ফুলগুলো নিয়ে ছুটলো সেদিকে,মিনি দেখলো একটা ফুল নিচে পড়ে গেছে দিবার হাত থেকে,সে ওটা মুখে ধরে সেও ছুটলো দিবার পিছু পিছু
ছেলেটা আহনাফদের বাসার দরজার কাছে এসে কলিংবেলে চাপ দিলো
দিবা দূর থেকে চেয়ে আছে,,ছেলেটা কে আগে সেটা সিউর হতে হবে পরে বাকিটা দেখা যাবে
দরজা খুললো খালু,,ছেলেটাকে দেখেই হাসি দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলেন আর হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেলেন,দিবা আগামাথা কিছুই বুঝলো না,,দরজা খোলা দেখে সেও ভেতরে ঢুকলো
ছেলেটা সোফায় বসতেই সামনে দিবাকে দেখে চমকে গেছে,,কিছুক্ষন আগে পার্কে থাকা লাল সাদা রঙে সজ্জিত যে মেয়েকে দেখে কিঞ্চিত মুগ্ধতা তার মনে এসেছিলো সে মেয়ে কিনা এই বাসায়
খালু হেসে বললেন”আরে দিবা যে,,এটা আমার বোনের ছেলে আদনান,,আমার ভাগ্নে,,আর আদনান ও হলো দিবা,তোমার মামির বোনের মেয়ে”
.
ছেলেটা মুচকি হেসে বললো”হাই?”
.
দিবা হ্যালো বলে চলে গেলো রুমের দিকে,,খালু গিয়ে খালামণিকে ডেকে আনলেন,,দিবা বারান্দায় এসে ফ্লোরে বসে মাইক ফুল দিয়ে গয়না বানাচ্ছে,,ফুল পেলেই তার গয়না বানাতে হবে নাহলে চোখে ঘুম আসবে না,,শান্তি হবে না,তাই সে এখন গলার মালা বানাতে ব্যস্ত
আদনান খালামণির সাথে কথা বলছিলো সেসময়ে আরিফ ও এসেছে বাসায়,,দুই ভাই মিলে হইচই লেগে গেছে,আহনাফ হলে গড়া পূর্ন হতো
দিবা মালাটা পরে ঘুরাঘুরি করে মিনিকে দেখালো,,একটা ফুল মিনির মাথায় গুজে দিয়ে দরজার কাছে এসে উঁকি মারলো সে
আদনান যেন এদিকেই তাকিয়ে ছিলো,দিবার চোখে চোখ পড়তেই চোখ নামিয়ে নিলো সে
.
তো ভাইয়া কি মনে করে এলে??ফুফু -ফুফা,,মণিতা আনাফ ওরা কই?ওদের নিয়ে আসলে না কেন?
.
আসলে,, আমি এসেছি তোমাদের দাওয়াত করতে,,আজ আমাদের বাসায় ডিনারে তোমাদের সবার দাওয়াত,,বিকাল হতেই চলে আসবা,মায়ের কড়া আদেশ
.
আমরা সবাই গেলেও আহনাফ মনে হয় না যেতে পারবে
.
কেন পারবে না মামা??আহনাফ না গেলে ওকে কোলে তুলে নিয়ে যাব আমি
.
জানিস তো ওর ডিউটি সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়,আর আজ নাকি ওর অফিসে ফাংশান আছে
.
না আমি শুনবো না,ওকে যেতেই হবে,আচ্ছা আমি ফোনে কথা বলে নেবো ওর সাথে
.
চা খেয়ে যা বস,,
.
না,,মজিদ মামাকেও দাওয়াত দিতে যেতে হবে,,সময় নেই,আপনারা সবাই আমাদের বাসায় চা খেতে আসবেন একেবারে বিকালের সময়,এখন আমি আসি
.
আদনান উঠে দাঁড়িয়ে দিবার দিকে আবারও তাকালো,দিবা তখন মিনির কপালে ফুলটা আটকানোয় ব্যস্ত ছিলো
আদনান চলে গেলো তখন
.
খালামণি দিবাকে বললেন রেডি হয়ে থাকতে,,দিবা ভাবছে মিনিকেও নিয়ে যাবে,,একা রেখে যাওয়া যাবে না ওকে,,তাছাড়া ওকে রেখে গেলে টেনসন থাকবে,,বাসা তো খালি থাকবে তাই
বিরিয়ানি বক্সে পুরে দিবা বের হলো সেই টেইলারের দোকানের মালিককে দেবে বলে,,আস্তে আস্তে হেঁটে চলছে সে
তার পাশ দিয়েই আহনাফ হেঁটে যাচ্ছিলো বাসার দিকে,ফোনে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলো সে,,সে বলছিলো”নাহিদ আজকে বারে কি কোনে অনুষ্ঠান হবে?তুই সিউর?”
.
দিবা কথাটা শুনতে পেয়ে পিছন ফিরে তাকালো,,কপাল কুঁচকে ভাবলো”উনি বারে যান নাকি,ছিঃ!!তার মানে মদগাঁজাও??”
.
আহনাফ কি ভেবে থেমে গেছে তার মনে হলো সে দিবাকে দেখেছে
ফোন রেখে পিছনে তাকালে সে,,দিবা এখনও তাকিয়ে আছে ওর দিকে তা দেখে আহনাফের কলিজা কেঁপে উঠেছে,,ওর কথা শুনে ফেলেনি তো?শুনলে মহাবিপদ
.
দিবা একটু এগিয়ে এসে বললো”আপনি বারে যান?”
.
কই,কিসের বার,হোয়াট ইজ বার?
.
আপনি মাত্র বললেন বারে আজ কোনো ফাংশান হবে কিনা
.
ওহ আচ্ছা,আমি বললাম সোমবারে কোনো ফাংশান হবে কিনা,, কানে কি কম শুনো নাকি??বার শুনলা আর সোম শুনলা নাহ,,তাহলে আর শুনার কি দরকার ছিল??আমার দোষ খোঁজা ছাড়া কি তোমার আর কাজ নাই??
এখন বক্স হাতে কোথায় যাও তুমি?
.
আপনাকে কেন বলবো?নিজের কাজে যান
.
দিবা আবারও চললো সামনের দিকে
আহনাফ গাল ফুলিয়ে চলে গেলো বাসার দিকে,,দিবার সাথে কথা বলা মানে শুধু শুধু মুড নষ্ট করা
.
দিবা ঐ আঙ্কেলকে বক্সটা দিয়ে আবারও ফিরে আসলো বাসায়,কারণ এখন সে তার নিজের হাতের বানানো বিরিয়ানি খাওয়াবে সবাইকে
ছুটে এসে রান্নাঘরে গেলো দিবা,এক এক করে প্লেট আনছে সে
আহনাফকে আদনান ফোন করেছে সবে
আহনাফ পাঞ্জাবি বদলাচ্ছিল তখন,,ফোন হাতে নিতেই মুখে হাসি ফুটলো তার আদনানের কল দেখে,,রিসিভ করে বললো”কিরে কি খবর,,এই দিনে মনে পড়লো আমাকে?”
.
আমি কিছু শুনতে চাই না
.
কেন কেন?কি করলাম আবার?
.
তুই আজ সবার সাথে আমাদের বাসায় আসছিস দ্যাটস্ ফাইনাল
.
ভাই প্লিস বোঝার চেষ্টা কর,,আমার অফিস আছে
.
অফিস আমারও আছে তাই বলে কি আমি পরিবারকে? সময় দেই না?
সময় করে তো তোর পরিবারকে দাওয়াত ও দিয়া আসছি আমি,,,ধর আমার নানুর সাথে কথা বল
.
হ্যালো দিদুন,,আসসালামু আলাইকুম
.
ওয়ালাইকুম আসসালাম,,কি আনাফ!!আমারে কি তোমার মনে পড়ে না?এই তো আসবো এবার তোমাদের বাসায় বেড়াতে,এখন আপাতত মেয়ের বাসায় বেড়াচ্ছি
.
দিদুন আমি আনাফ না আহনাফ
.
ঐ একই হলো,তুই যদি আজ না আসিস তো তোর সাথে আমার কথা নাই,,এতদিন পর নাতিপুতি দের একটু দেখতে চাইলাম তাও তোদের কাজের বাহানা দেখাস,ছুটির দিনে কিসের কাজ,আসবি মানে আসবি,আল্লাহ হাফেজ!!
.
আরে দিদুন শুনো তো!
.
হেহে!!একেবারে মাকেই ধরিয়ে দিয়েছে আদনান?
.
বাবা!!দেখো না দিদুন কি করছে,,আমার সত্যিই আজ কাজ আছে,না গেলে মাইনে কাটা যাবে
.
কত যাবে বল,,আমার কাছে এক হাজার টাকার একটা নোট আছে,ওটা রাখ তাও চল আমাদের সাথে
.
বাবা,ওটা তোমার চা খাওয়ার টাকা যেটা আলাদাভাবে আমি তোমায় প্রতি মাসে দিই,ওটা আমি রাখবো না
.
রাখিস না,তাও চল
.
ফাইন,,কাজে বসে কিছুক্ষন থেকে ডিনার টাইমে আসবো,ঠিক আছে?
.
আমি জানি না,, মা যদি রাগ করে তাহলে আমাকে কিছু বলতে আসিস না,আমি আমার মত সেধেছি
.
আহনাফ মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছে,,কি ঝামেলা,,কাল কেও ছুটি ছিলো আর আজ আবার ছুটি??এই বারের চাকরি আমার হাত থেকে ফসকে গেলো বলে,কি করি এখন
.
দিবা প্লেটে খাবার নিয়ে এবার মিনির বাটিতে হাঁড় সহ মাংস রাখলো,মিনি ঘুরে ঘুরে লাফাচ্ছে,মাংসের হাঁড় তার খুব প্রিয়,গন্ধতেই টের পেয়েছে সে
দিবা মুচকি হেসে বাটিটা ওর সামনে রাখলো,এক এক করে সবাই আসছে খেতে
আহনাফ মুখ ধুয়ে এসে বসলো,,বিরিয়ানি দেখে তার তো খুশিতে মাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে,,আগে যখন বাবার চাকরি ছিল তখন মা প্রতি শক্রবারে বিরিয়ানি রাঁধতেন,এরপর বাবার অসুখ হওয়ার পর চাকরি অফ আর আহনাফের চাকরি যুদ্ধ শুরু,ওর এমন বেতনে সংসারের খরচ এড়িয়ে প্রতি সপ্তাহের বিরিয়ানির খরচ জোটে না বলে মা অনেক মাস হলো বিরিয়ানি রাঁধেন না,তবে আজ কি করে?
তার প্রশ্নের জবাব দিলেন মা,বললেন দিবা নাকি মুদি দোকান থেকে সবগুলো মশলা দশ টাকা দামে করে করে অল্প অল্প কিনে এনেছে যাতে একবারই বানানো যায়,,খরচ খুব কম গেছে,ফ্রিজে মুরগীর মাংস,দই ছিলো আর বাসায় পোলাও চাল ব্যস সব খুঁজে দিবা আজ বানিয়েছে
দিবার নাম শুনে আহনাফের মাথায় ঘুরলো তার মানে বিরিয়ানি জোস হয়েছে,,সত্যিই তাই,এত ভালো হয়েছে যে আহনাফ পরপর লোকমা দিয়েই যাচ্ছে,সবাই খাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে গেছে,অনেকদিন পর বিরিয়ানি পেয়ে সবাই বিজি এখন খাওয়া নিয়ে
দিবা আস্তে আস্তে খাচ্ছে আর মিনি আহনাফের খাওয়া দেখছে মুখে হাসি ফুটিয়ে,,কারোর জন্য কিছু রান্না করলে তার খাওয়ার তৃপ্তি দেখেই মনে সন্তুষ্টি আসে,,দিবার ও হয়েছে তাই,,তার তো সবার খাওয়া দেখে পেট ভরে গেছে অনেকখানি
.
দুপুরের ঘুম দিতে আহনাফ এখন নিজের রুমে
বাকিরা রেডি হচ্ছে আদনান দের বাসায় যাবে বলে,,বাসায় যেতে এক ঘন্টার বেশি লাগে না,বাস ধরলেই হয়ে যাবে
আর আহনাফ তো রাতে যাবে,এখন যাবে না
দিবা বালিশ বুকে ধরে চুপ করে শুয়ে আছে,,যাদের বাসায় যাবে তারা সবাই ওর অপরিচিত,,কাউকেই সে চেনে না,,আহনাফের ফুফুর বাসা,,একটামাত্র ফুফু ওর,,আর চাচা একজন,মজিদ চাচা,,আর আদনানের দুজন মামা একজন মজিদ আর একজন আহনাফের বাবা,,
এসব সে খালামণির থেকে শুনেছে
যাই হোক কারোর বাসায় দাওয়াতে যেতে ওর ভালোই লাগে তবে মা কখনও ওকে দাওয়াতে নিতো না,বাসায় ওকে আর মিনিকে একা রেখে যেতো,যার বাসায় যাচ্ছেন তাকে দিবার পরিচয় হিসেবে কি বলতেন সে ভয়ে নিতেন না
যদিও নিজের মেয়ে বলতেন কেউ বিশ্বাস করতো না কারণ জসিমের আর তার চেহারার একটুও প্রতিফলন দিবার মধ্যে নেই,ও সম্পূর্ন ওর বাবা সাদাতের মতন হয়েছে তাই মিথ্যে বলেও যে পার পাওয়া যাবে না সেটা তাদের জানা আছে আর তাই ওকে নেওয়া হতো না,,দিবার খুব ইচ্ছে হতো এরকম দাওয়াতে যেতে কিন্তু কখনও তার ইচ্ছেটা পূরন হতো না
আজ এভাবে পূরন হবে তা একদমই জানা ছিল না ওর
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here