সবটা অন্যরকম♥ পর্ব-২১

0
391

সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_২১
Writer-Afnan Lara
.
আহনাফ ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখলো দিবা আহনাফের বারান্দায় দাঁড়িয়ে উঁকি দিয়ে কি যেন দেখার চেষ্টা করছে
.
তুমি?
.
দিবা চমকে পিছনে ফিরে তাকালো,,এগিয়ে এসে বললো”আসলে আপনার হাতের ব্যাথা কমেছে কিনা দেখতে এলাম”
.
আহনাফ জায়নামাজ হাতে নিয়ে মাথায় টুপি দিয়ে বললো”আই এম ফাইন”
.
দিবা মাথা নাড়িয়ে চলেই যাচ্ছিলো তখনই আহনাফ ওকে থামতে বলে জিজ্ঞেস করলো ওর মাথার ব্যান্ডেজ কই
.
আসলে আমার অস্বস্তি লাগছিলো বলে খুলে ফেলেছি
.
অসুখের ঔষুধ খেতেও তো আমাদের অস্বস্তি লাগে তো তাই বলে কি আমরা ঔষুধ খাই না?ব্যান্ডেজটা একদিন ধরে লাগিয়ে রাখতে বলেছিল দোকানদার
এখনও গোটা একদিন হয়নি
.
দিবা চুপচাপ চলে আসলো নিজের রুমে,সকাল সকাল ঘাউড়ামি করে ঝগড়া করতে চায় না সে
আহমাফ ও আর বেশি কিছু বললো না,নামাজের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে
দিবা ছাদে এসেছে এই ভোরবেলায়,,হুট করে চোখ থেকে ঘুমটাই চলে গেছে ওর,সারারাত বসে বসে ঘড়ির কাঁটা দেখছিলো আর এখন এই ভোরবেলাতেও তার ঘুম নেই,,পুরো ছাদটা ফাঁকা,,দিবা ছাদের শেষ সীমান্তে এসে দাঁড়ালো,ওখান থেকে বাসার কাছের সেই পার্কটা স্পষ্ট দেখা যায়,এখনও কেউ পার্কটাতে আসেনি,,দিবা বসে বসে গাছ গুনছে,,,মৃদু বাতাসে ঠাণ্ডা শীতল পরশ অনুভব হয় গায়ে,,চোখ বন্ধ করলেই এসি এসি ফিলিং লাগে
শ্বাস নিলেও দারুন লাগে,ভোরবেলা এত মিষ্টি কেন?
আচ্ছা ছাদে এভাবে বসে না থেকে পার্কে গেলে কেমন হয়??মনটাও ভালো হয়ে যাবে তাহলে,একটু থেকে আবার নাস্তা বানাতে চলে আসবো আমি
.
দিবা তাই করলো,ছাদ থেকে একেবারে পার্কে গেলো সে
সেদিনের মাইক ফুলের গাছটা ফুলে ফুলে ভর্তি হয়ে আছে
দিবা অনেকগুলো ফুল কুড়িয়ে নিয়ে উপরের দিকে ছুঁড়ে মারলো সব এসে তার মুখে পড়লো আবার,,
এরপর নিজেই হেসে ফেললো,,,হাসি থামিয়ে আবারও ফুল কুড়ালো ছুঁড়ে মারবে বলে
অনেকগুলো ফুল জোট করে উপরে মারলো সে
এবার পুরোটাই আহনাফের গায়ের উপর পড়েছে
আহনাফ চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে,,দিবা মুখে হাত দিয়ে একটু পিছিয়ে গেলো,,হুট করে এসময়ে আহনাফকে এখানে দেখবে সে জানত না একদমই,তখনই ওর মাথায় আসলো আহনাফ নামাজ পড়ে জগিং করতে বের হয় সবসময়,,আজ আবার সেই কালো পোশাক,আহনাফ কেন যে এত কালো পছন্দ করে কে জানে
সবসময় তার গায়ে কালো জ্যাকেট আর প্যান্ট থাকবেই থাকবে
এমন না যে তার খালি একটাই কালো জামা,আলমারি ভর্তি সব কালো পোশাক,একদিন একটা পরে
.
আহনাফ ব্রু কুঁচকে বললো”তোমার না শরীর খারাপ?এত সকাল সকাল এখানে কি করো তুমি?”
.
দিবা মুখ বাঁকিয়ে বললো”কে বলেছে আমার শরীর খারাপ,আমি বলেছি?”
.
না বলোনি,কাল যা হইছে তোমার জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে থাকলে বিছানায় কাইত হয়ে শুয়ে থাকতো
.
আমার শরীর একদম ঠিক আছে
.
আহনাফ তার জ্যাকেটে আটকে থাকা ফুল ফেলে চলে গেলো,দিবা কোমড়ে হাত দিয়ে ওর চলে যাওয়া দেখছে
ওমা ওর সাথে সাথে দেখি মিনিও যাচ্ছে,মিনি এতক্ষণ কই ছিলো,ওকে তো দেখলাম না,আজকাল আমার চেয়ে ওর আহনাফের প্রতি প্রেম ভালোবাসা বেশি,লোকটা এত ঝাড়ি দেয় ওরে আর ও কিনা সবসময় দেখে শুনে ঐ লোকটার সাথেই চিপকুর মতন লেগে থাকে
.
আহনাফ দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে গিয়ে ডানে বামে তাকালো,,তারপর বড় করে নিশ্বাস ফেলে বললো”যাক বাবা আজ আর ঐ আজাইরা বিড়াল আমার পিছু নেয়নি,উফ বাঁচলাম,হাইচ্চু!!”
.
আহনাফ নাক ডলে পিছনে তাকিয়ে দেখলো মিনি চোরের মতন তাকিয়ে আছে ওর দিকে
.
উফ!!এই বিড়ালটা আসলেই আজাইরা,,সবসময় আমাকেই তার ফলো করতে হবে,কিভাবে টাইম মেইন্টেন করে আল্লাহ খোদা জানে!
যাও তোমার বইনের কাছে,সে এখন ফুল নিয়ে খেলছে ওর কাছে গিয়ে খেলো যাও,য়াও
.
মিনি তার পাশে থাকা সবুজ ঘাসগুলোর দিকে তাকিয়ে সেগুলো চেটে নিলো,এমন ভাব করলো যেন সে আহনাফের কথা শুনলোই না,
আহনাফ এসুযোগে এক দৌড় দিলো
ওমা মিনিও ছুটেছে
দৌড় খেলা হচ্ছে এখন ফাঁকা পার্কে
দিবা ফুলগাছটার তলায় দাঁড়িয়ে আহনাফ আর মিনির দৌড়াদৌড়ি দেখছে,মিনি তো সেই লেভেলে ছুটে যাচ্ছে
আহনাফ হাসতে হাসতে বললো”দেখি কত দৌড়াতে পারো”
.
মিনির দিকে তাকিয়ে দৌড়াতে গিয়ে আহনাফ এবার দিবার সাথে জোরেশোরে এক ধাক্কা খেয়ে দুজন মিলো ধপাস করে পড়লো মাটিতে
দিবা আবারও কপালে হাত দিয়ে ‘আউ’ করে এক চিৎকার দিলো
মিনি আহনাফের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে আবার,আহনাফ মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো”আমি নাহয় মিনির দিকে চেয়ে ছুটছিলাম,তুমি দেখতে পাওনি আমি যে এদিকে আসছিলাম?”
.
আমি খেয়াল করিনি ঠিক
.
আহনাফ বিড়বিড় করে কি যেন পড়ে নিজেকে ফু দিলো তারপর দিবাকেও ফু দিলো এরপর বাসার দিকে চললো
দিবা পিছু পিছু আসতে আসতে বললো”কি পড়ে ফু দিলেন?আর কেনো?”
.
যাতে তোমার আমার আকর্ষণ সৃষ্টি নাহয়
.
কিহ!আমার আর আপনার?
আপনার মাথা ঠিক আছে??আমরা ভাইবোন হই,আমাদের আবার কিসের আকর্ষণ?
.
সেটাই তো,,সে জন্যই তো আমি একটা দোয়া পড়ে ফু দিলাম,,যাতে সকল খারাপ কিছু থেকে আমরা বিরত থাকতে পারি
.
ছিঃ!আপনি এত কিছু ভাবেন?
.
আহনাফ থেমে গিয়ে পিছন ফিরে দিবার দিকে তাকালো এরপর কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”কবে বললাম আমি এসব ভাবি??আমি জাস্ট আগে থেকে সাবধান হচ্ছি,আমি চাই না আমার ওয়াইফ এসে জানুক যে আমি দিনে দুইশবার আমার খালাতো বোনের সাথে ঝগড়া করি,,তার আজাইরা বিড়ালের আজাইরা প্যাচালে পড়ে তার কাছাকাছি থাকি,ইত্যাদি”
.
এসব না ভাবলেই হয়,এসব ভাবলেই আকর্ষণ বাড়ে,,
.
আমার আর কাজ নাই যে আমি এসব ভাবতে যাবো,তোমাকে কাল কি বলেছিলাম??আমার চোখের সামনে আসবা না আর তুমি কিনা সকাল সকাল আমার চোখের সামনে সামনে থাকলা?
.
ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আপনি এসে সবেমাত্র আমার গায়ে পড়েছিলেন তাও নিজের ভুলে
.
যা হচ্ছে সব তোমার ঐ বিড়ালের কারনে হচ্ছে,ওকে নিয়ে দূরে থাকবা তুমি,আমি যেন তোমাকে আর আমার সামনেও না দেখি,,খুব শীঘ্রই আমাদের বাসায় আমার ওয়াইফ এসে যাবে,তখন সে সবটা সামলাবে,তোমায় ও ধরে একটা পাগল ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দেবো
ব্যস হয়ে গেলো
.
দেখুন!আপনি বিয়ে করলে করুন,আমি এখন করবো না,আমার পড়াশুনা শেষ করে চাকরি নেওয়ার দরকার,,তারপর আমি সেই টাকা দিয়ে আমার বারান্দা সাজাবো,আরও কত কি দরকার আমার ওসব করবো
.
করো,যা খুশি করে,আপাতত আমার সামনে আসবে না তুমি
আর এই নাও পঞ্চাশ টাকা,,এগুলো দিয়ে আজ ভার্সিটিতে যাবা,আমি আর তোমায় আমার বাইকেও বসাবো না,কারণ ডিল ইজ ডিল
.
দিবা টাকার নোটটা উল্টালো পাল্টালো,,আহনাফ চলে গেছে
ভাড়া ৩০ টাকার বেশি যাবে না,বাকি বিশ টাকা দিয়ে একটা ফুল গাছ পাওয়া যাবে
ইয়াহু!!!
.
দিবা নাচতে নাচতে মিনিকে নিয়ে চললো বাসার দিকে
আহনাফ নিজের রুমে এসে বইখাতা গুছানোয় মন দিয়েছে,দিবা রান্নাঘরে ঢুকতে গেলো নাস্তা বানাবে বলে
খালামণি এমন ধমক দিলো আপাতত সে এখন নিজের রুমে
খালামণি ধমক দিলেন কারণ দিবা শরীর খারাপের ভেতরে এসেছে নাস্তা বানাতে,ধমক দেওয়ারই কথা
.
আহনাফ বইখাতা ব্যাগে ঢুকিয়ে ফোন করলো জিসানকে যে নোট নিয়ে আসতে
জিসান ফোন ধরে যখন শুনলো আহনাফ ভার্সিটিতে আসছে তখন সে জানালো আজ সে মিশকাকে ঠিক করার মোক্ষম চাল চালবে
আহনাফ ওকে মানা করলো যেন ও কিছু না করে কারণ ও অলরেডি ম্যাটারটাকে ধামাচাপা দিয়ে দিয়েছে
.
দিবা বারান্দার কোন জায়গায় ফুল রাখবে সেটাও ঠিক করে ফেলেছে
খুশিতে একটা ডান্স দিয়ে দিলো সে
পাগলু ডান্স,,নাচতে নাচতে ও দেখলো আহনাফ বারান্দায়, দড়িতে টাঙানো তোয়ালেটা নিতে এসেছিলো সে
দিবাকে দেখে মুখটা বোকার মতন করে তাকিয়ে ছিলো সে
দিবা এক দৌড়ে রুমে চলে গেলো,,লজ্জায় মরে যাইতে ইচ্ছে করছে,ইস!আমি যেখানে থাকি লোকটা ঠিক সেখানেই এসে হাজির হয় সবসময়
.
দিবা!!আহনাফ,এসে নাস্তা করে যা,,তোদের তো আবার ভার্সিটিতে যেতে হবে
.
আহনাফ ঘড়ি পরতে পরতে চেয়ার টেনে বসলো,দিবা বের হতে যেতেই ডিলের কথা মাথা এসে যাওয়ায় আর বের হলো না সে,বসে থাকলো বিছানায়
আহনাফ বুঝেছে দিবা ইচ্ছে করেই আসছে না,সে খুশি হলো এই ভেবে যে দিবা তার কথা রাখছে
.
কিরে দিবা আসছিস না কেন?শরীর খারাপ করছে তোর??আজকে ভার্সিটিতে না গেলে হয় না?
.
দিবা সাথে সাথপ বললো”না না,আজ মিস করা যাবে না,,
(ফুল গাছ কিনবো কি করে আজ না গেলে,আমার যে আর দেরি সয় না)”
.
কিরে?খাবি না?আর আহনাফ তুই উঠে কই যাস?দিবা তোর সাথে যাবে না?
.
দিবা বলেছে তার বাইকে উঠতে ভয় লাগে তাই ওরে আমি ভাড়া দিয়ে দিছি,ও রিকশা নিয়ে আসবে
.
ওহ,আচ্ছা তাও ভালো
.
দিবা উঁকি দিয়ে দেখলে আহনাফ চলে গেছে,,তার পরেই সে এসে বসলো নাস্তা করতে
.
খালামণি দিবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন”শরীর এখন কেমন লাগে তোর?”
.
এখন ঠিক আছি আমি,,

দিবা জলদি করে নাস্তা সেরে বের হলো বাসা থেকে,,আজ সে আকাশী রঙের একটা থ্রি পিস পরেছে,,প্রচুর গরম,,এ সময়ে হালকা রঙের সুতির জামা পরাই ভালো
চুলগুলোকে খেজুর বেনি করে এপাশে এনে রেখেছে সে,,রিকশার খোঁজ করতে করতে সে এগিয়ে চলেছে অনেকটা পথ ধরে,,সেই কখন থেকপ বাইকের আওয়াজ কানের কাছে আসছে
দিবা বিরক্ত হয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখলো সেই ছেলেটা যে ওকে ভার্সিটির প্রথম দিন ডিস্টার্ব করছিলো
ছেলেটা মুচকি হেসে বললো”যাবে নাকি?”
.
দিবা মুখ ঘুরিয়ে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলো,,ছেলেটাও বাইক ওর সাথে সাথে নিয়ে চলছে
দিবা পথে কেনো রিকশাই পাচ্ছে না,,ছেলেটাও পিছু ছাড়ছে না,আজ আহনাফকে বলে ভালো পিটান পিটাবো এই অসভ্যটাকে
কিন্তু উনি তো বলেছিলেন উনার সামনে না আসতে,,তাহলে দিবা তুমি নিজেই নিজের সেফটিপিন হয়ে যাও
সেফটিপিনের কথায় মনে পড়লো আমার ওড়নায় তো সেফটিপিন আছে,আরে হ্যাঁ তাই তো!!
.
দিবা সেফটিপিনটা খুলে ছেলেটার দিকে ধরে বললো”খবরদার বলছি!”
.
হেহে,তুমি এটা আমার পেটে ঢুকাবে?আহারে তাইলে তো আমি মরে যাবো
বাঁচাও আমাকে,এই মেয়েটা সেফটিপিন আমার পেটে ঢুকাবে বলছে
.
কে বললো আমি সেফটিপিন আপনার পেটে ঢুকাবো?
.
তাহলে?
.
চোখে ঢুকাবো
.
দিবা কথাটা বলে সেফটিপিনটা ছেলেটার চোখের দিকে ছুঁড়ে মারলো
ছেলেটা চোখে হাত দিয়ে ফেললো আচমকা ভয় পেয়ে,সে ভাবলো দিবা সত্যি সত্যি তার চোখে সেফটিপিন ঢুকিয়ে দেবে
দিবা দিসে এক দৌড়,,পারলে চোখেই ঢুকিয়ে দিতো কিন্তু দেয়নি এত সাহস আবার ওর নাই,তবে ভয় দেখানোর মোক্ষম সাহস তার আছে,,ছুটতে ছুটতে রিকশাও পেয়ে গেলে দিবা
এখন রিকসায় বসে চিল করছে সে,,কপালের ঘাম মুছে আহনাফকে অজস্র গালি দিলো দিবা
কি হতো আমাকে বাইকে উঠালে?অসভ্য লোক একটা!!আমাকে এত বিপদে ফেললো আজ,,
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here