সবটা অন্যরকম♥ পর্ব-২

0
627

সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_২
Writer-Afnan Lara
.
মিয়াও!!মিয়াও
.
মিনি এখন তোকে খাবার দেওয়ার মতন কিছু নাই আমার কাছে,,বাসায় গিয়ে দেবো,,একটু ওয়েট কর ভাই আমার
.
মেয়েটার মুখে ওমন উদ্ভট কথা শুনে আহনাফ ব্রু কুঁচকে পাশে তাকালো,,ন্যাকামো দেখে ওর মন চাচ্ছে দুটোকে ধরে জানালা দিয়ে ছুঁড়ে মারতে কিন্তু নাহ,রাগ কন্ট্রোল রাখতে হবে,,নাকটা ডলে সে আরেকটু সরে বসলো,,ঢাকা পৌঁছাতে আর এক ঘন্টার মতন লাগবে
আহনাফের কল আসলো ওর অফিস থেকে
তারা জানালো আজকে একটু জলদি আসতে ওকে,,সে ঠিক আছে বলে ফোন রাখলো
পাশের মেয়েটা মিনিকে চেপে ধরে মাথা উঁচু করে ককন্ডাকটরকে দেখে জিজ্ঞেস করলো ঢাকা আসতে আর কতক্ষণ লাগবে
উনি বললেন আর ঘন্টাখানেক লাগবে
সে মন খারাপ করে ফেললো,খিধায় মরে যাচ্ছে সে,আবার সায়দাবাদ নেমে ঐ পরিবারের লোকদের খুঁজতেও তো ঘন্টার মতন লাগবে,না জানি খিধায় জ্ঞান টাই হারিয়ে ফেলি আমি
এসব ভেবে ফোন হাতে নিয়ে মাকে একবার কল করলো সে
বাজতে বাজতে কল কাটা যাবে ঠিক সেই মূহুর্তে মা ফোন রিসিভ করলেন
.
মা??ফোন ধরছিলে না কেন?
.
আজকেই শেষবার,এরপরে আর আমাকে ফোন করবি না,যাদের কাছে পাঠাচ্ছি তাদের বাসায় গিয়ে নিজেকে মানিয়ে নিবি কথাটা কতবার বলতে হবে?
আর যদি সেই বাসাতেও মানিয়ে নিতে না পারিস তো জাহান্নামে যা,তাও আমাকে মুক্তি দে
.
মা লাইন কেটে দিলেন,কান্নার জন্য আর কিছু বলতে পারলেন না
মেয়েটির চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে মিনির মাথায় পড়তেই মিনি নড়েচড়ে উপরে তাকালো
মেয়েটি চোখ মুছতে গিয়ে ভ্যাত করে কেঁদেই দিলো
মেয়েরা নিঃশব্ধে কান্না করতে পারে,তবে এই মেয়েটা পারে না
সে যখনই কান্নাকে কাবু করার জন্য চোখ মুছতে যায় ঠিক তখনই তার সজোরে কান্না এসে যায়
আহনাফ ফোনে গেমস খেলা বাদ দিয়ে পাশে তাকালো,,মেয়েটি কেঁদেই যাচ্ছে,মিনি এক দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে চেয়ে আছে
আহনাফের তাকানো দেখে মেয়েটি মুখ ঘুরিয়ে লুকিয়ে ফেললো
আহনাফ আর তাকালো না,গেমস খেলায় মন দিলো আবার
সায়দাবাদ এসে বাসটা থামতেই আহনাফ ব্যাকটা কাঁধে তুললে এক লাফে বাস থেকে নেমে পড়লো,,এদিক ওদিকে তাকালো কোথাও গোলাপি রঙের জামা পরা সংয়ের মতন দাঁড়িয়ে থাকা দিবা নামের কোনো মেয়ে আছে কিনা তা দেখার জন্য
বাসের সেই মেয়েটি মিনিকে কোলে নিয়ে সাইড ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে নামলো বাস থেকে,কন্ডাক্টর ওর থেকে রিসিট নিয়ে ওর ট্রলি ব্যাগ ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো আরেক পেসেঞ্জারের ব্যাগ বের করতে
.
আহনাফ এদিক ওদিকে চোখ বুলাতে গিয়ে সেই আবারও মিনি সমেত ঐমেয়েটাকে দেখে বিরক্তি নিয়ে একটু সামনে এগিয়ে গেলো
.
এই দিবারে কই পাবো এখন,,,হ্যালো ইভান??
.
কিরে ভাই,এখনও পেলি না?
.
কি করে পাবো?যারে কখনও দেখি নাই,শুধু তার ড্রেসআপ আর নাম দিয়ে আমি এত মানুষের ভিড়ে তাকে পেয়ে যাব??তুই জানিস আজ কত ভিড়?
.
তোকে তো বললাম পথের মাঝে সংয়ের মতন দাঁড়িয়ে থাকবে,ছোটাছুটি করবে না সে,,খুঁজে পেয়ে যাবি

কেউ কি আমাকে নিতে আসেনি?আমি কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবো,,যদি সত্যি কেউ না আসে তাহলে আমি কি করবো?ইভান ভাইয়া তো ফোন ও ধরছে না
.
আহনাফ মেয়েটার পিছনে একটু দূরে দাঁড়িয়ে মুখটা ভার করে ওকেই দেখছে,ইভানের কথা মতন সব কিছু এই মেয়েটার সাথে মিলে যাচ্ছে,পরনে গোলাপি রঙের লং ফ্রক,,,
আহনাফ সিউর হলো এটাই সেই মেয়েটা,,এগিয়ে এসে হাত ধরে এক টান দিয়ে নিজের দিকে ফিরাতেই আহনাফ গেলো চমকে
সাথে মেয়েটাও চমকে গেলো
.
তুমি!
.
আপনি?!!!
আজব তো আমার হাত ধরলেন কেন,বাসে তো খুব দেমাগ দেখালেন এখন একেবারে হাত ধরেই টান দিলেন,হাত ছাড়ুন আমার
আসলে কথা হলো সব ছেলেরা এক!খালি মেয়েদের টিজ করার বাহানা খুজে তারা সবসময়
.
আহনাফ হাত ছেড়ে দিয়ে একটু পিছিয়ে গেলো তারপর হালকা কেশে বললো”আমার এত শখ নাই তোমার হাত ধরার,আমি অন্য একটা মেয়ের সাথে তোমাকে গুলিয়ে ফেলেছি,এত উপরে উঠছো কেন তুমি?নিজেকে কি ভাবো?মহারানী ভিক্টোরিয়া?”
.
আমি আমাকে আমিই ভাবী যেটা মহারানী ভিক্টোরিয়াও হতে পারবে না,সবাই যার যার মতন আলাদা পার্সোনালিটির মানুষ
যাই হোক আপনার সাথে আমি এত কথা ক্যান বলছি
.
রাগে ক্ষোভে আহনাফ চলে যেতে গিয়ে আবারও থামলো,,ইভানের কথামত পুরোটাই মিলছে এই মেয়েটার সাথে,,তারপর আবারও ওর দিকে ফিরে বললো”আচ্ছা তোমার নাম কি সেটা বলো”
.
আমার নাম কি সেটা আপনাকে কেন বলবো আমি,অচেনা কারোর সাথে আমি কথাও বলি না,নাম তো দূরে থাক
.
আহনাফ চোখ বন্ধ করে হাত মুঠো করে রেখে রাগ কমানোর চেষ্টা করলো তারপর ভাবলো”আল্লাহ এই মেয়েটা যেন সেই মেয়েটা না হয়,আমাকে ভুল প্রমাণ করিয়ে দাও
দিবা!!!!?????
.
দিবা শুনে মেয়েটি “হুম” বলে পিছনে তাকিয়ে চোখ বড় করে ফেললো,তারপর ঢোক গিলে বললো”আপনি আমার নাম জানলেন কি করে??”
.
দিবা নাম তোমার?
.
আগে বলুন আমার নাম জানলেন কি করে?
.
আহনাফ মূর্তির মতন লুক নিয়ে দিবার দিকে চেয়ে আছে,,মায়ের কল এসেছে ঠিক তখন
ফোন পকেট থেকে বের করে কানের সাথে লাগাতেই মা জিজ্ঞেস করলেন”পেয়েছিস?”
.
হুম,,
.
বাসায় নিয়ে আয় তাহলে
.
আহনাফ ফোন আবারও পকেটে ঢুকিয়ে বললো”সব ছেলেরা এক??আমি সুযোগ খুঁজেছি তোমার হাত ধরার??আমি টিজ করেছি?
.
হ্যাঁ
.
আহনাফ মুখটা বাঁকিয়ে ডান পাশে তাকালো,,একটা ছেলে আসছে ব্রিজের উপর দিয়ে,বাইক থামিয়ে ইশারা করলো সে,,আহনাফ ওকে নিচে আসার জন্য ডাকলো
দিবা একটু সরে দাঁড়িয়ে বললো”আপনার আম্মুর নাম কি মৌ??”
.
যাকে তাকে আমার মায়ের নাম বলি না আমি,,অপরিচিত মেয়েদের শরীরের দিকেও তাকাই না আবার আমার মায়ের নাম বলতে যাব?,হু দ্যা হেল আর ইউ?
.
দিবা রাগে কটমট করতে করতে আরেকদিকে ফিরে দাঁড়ালো
ছেলেটা বাইক নিয়ে আহনাফের সামনে থেমে বাইক থেকে নামলো,,গায়ে পেস্ট কালারের পাঞ্জাবি পরা, সাজগোজ দেখে মনে হয় বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবে
চাবি এগিয়ে ধরে সে বললো”আসতে এত লেট করলা কেন ভাইয়া?”
.
আম্মু একটা পেত্নিকে খুঁজতে দিয়েছিলো,পেতে এত সময় লাগলো,,তুই কোথায় যাচ্ছিলি এ সময়ে??
.
ছেলেটা মাথা চুলকিয়ে বললো”আরিশার বোনের আজকে বিয়ে,,বলেছিলাম তো তোমাকে”
.
ওহ হ্যাঁ ভুলে গিয়েছিলাম,,ওকে যা তাহলে,,
.
ছেলেটা চলে গেলো একটা রিকশা নিয়ে
.
আহনাফ বাইকে বসে পিছনে তাকিয়ে বললো”ইভান আমাকে বলেছে তোমাকে নিয়ে আমাদের বাসায় যেতে!”
.
দিবা মিনিকে জড়িয়ে বললো”আপনাকে বিশ্বাস করি না আমি”
.
আহনাফ ফোন বের করে ইভানকে কল করে ফোন এগিয়ে ধরে বললো”ধরেন,ইভানের সাথে কথা বলে সিউর হয়ে আমাকে উদ্ধার করেন”
.
দিবা কিসব ভেবে আহনাফের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে কানে ধরতেই এক গাদা ঝাড়ি খেলো ইভানের থেকে
.
তোর এত কিসের হ্যাসিটেশন??সারাজীবনের জন্য বিদায় দিলাম তোরে আর তুই কিনা যাওয়ার সময় সারাজীবনের প্যারা একদিনে দিয়েই যাচ্ছিস?
.
ভাইয়া আসলে আমি লোকটাকে ঠিক চিনি না তাই, হুট করে যে কাউকে তো আর বিশ্বাস করা যায় না
.
তোকে কিডন্যাপ করার সময় নাই কিডন্যাপারের,ইহ!উনার জন্য আবার আলাদা লোক থাকবপ উনাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য
.
দিবা ফোনটা আহনাফের দিকে ধরলো,আহনাফ ফোন পকেটে ঢুকিয়ে বললো”বসো,”
.
ব্যাগটা?
.
ব্যাগ কোলে নাও তোমার
.
ব্যাগ নিলে মিনিকে কি করে নিব?
.
তো তুমি কি চাও,তোমার এই খাম্বামার্কা ব্যাগ বাইকের সামনে রাখি আমি.তাহলে তো রোড ও ঠিকমত দেখবো না
.
আমি ব্যাগ কোলে নিচ্ছি,আপনি বরং মিনিকে…..
.
খবরদার!ওরে আমি আমার সামনে বসালে আজ আর বিছানা থেকে উঠতে পারবো না
.
দিবা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো,তারপর হালকা করে নিশ্বাস ফেলে বললো”তাহলে আমাকে বাসার এড্রেস লিখে দিন,আমি বাসে করে যেতে পারবো”
.
তোমার বয়স অনুযায়ী কথার ধরন একদমই মেলে না,বয়স এই টুকুন আর কথা বলে বিরাট বিরাট,ইভান বললো ঢাকার “ঢ” ও চেনো না আর সেই তুমি বাস ধরে এড্রেস অনুযায়ী পৌঁছাতেও পারবে?বাহ!!
এতক্ষণ কষ্ট করলাম এবার নাহয় বাকিটাও করি,,আমার মায়ের কথা আমি কখনও ফেলি না বলে এখন তোমার মিনিকে বাইকের সামনে বসাচ্ছি নাহলে যে কি করতাম আমি সেটা আল্লাহই ভালো জানেন
.
দিবা খুশি হয়ে মিনিকে আহনাফের সামনে বসিয়ে নিজেও বসলো বাইকে,ব্যাগটা কোলে নিয়ে ভাবলো আহনাফকে ধরবে নাকি ধরবে না
আহনাফ বাইক স্টার্ট দিতেই দিবা দুম করে ব্যাগ সমেত নিচে পড়ে গিয়ে হাতে অনেকখানি চোট ও পেয়ে গেলো
মিনি উঁকি দিয়ে দিবার দিকে চেয়ে এক লাফে রোডে নেমে দিবার গা ঘেষে দাঁড়িয়ে পড়লো,আহনাফ বাইক থেকে নেমে কড়া গলায় বললো”বাইকে উঠতে পারো না তো আগে বলবা না??!কিছুই দেখি জানো না,,আমার কাঁধে হাত রাখলেই হতো”
.
দিবা হাতের কুনুই ধরে মিনির দিকে তাকিয়ে আছে,আহনাফ হাত বাড়িয়ে ধরে বললো”উঠো!তোমার জন্য আজ আমার ভার্সিটিতে দেরি হয়ে যাবে”
.
দিবা আহনাফের হাত ধরে উঠলো,,আহনাফ মিনির দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো”এই আরেক আজাইরা,এক্সিডেন্ট দেখে দর্শক হিসেবে দেখতে নেমে গেছে
আহনাফ বিরক্তি নিয়ে হাত বাড়িয়ে মিনিকে খপ করে ধরে ওকেও বাইকে বসালো,,,দিবা এবার আহনাফের কাঁধে মজবুত করে হাত রেখেছে,,আহানফ চুপচাপ বাইক চালিয়ে যাচ্ছে
দিবা মিনির দিকে খেয়াল রাখছে কিছুক্ষণ পরপর,মিনি ভালো বিড়ালের মতন এক জায়গায় বসে ঢাকা শহর দেখছে
সায়দাবাদ থেকে উত্তরায় আসতে ঘন্টাখানেক লাগলো,,,এসময়টাতে আহনাফ ৪৯টার মতন হাঁচি দিয়েছে
কলিংবেলে চাপ দিয়ে সে আরেকটা হাঁচি দিলো এবং হাঁচির হাফ সেঞ্চুরি করলো
মিনি বোকার মতন দিবার কোলে বসে আছে,দিবা ব্যাগ এক পাশে রেখে আহনাফদের বাসাটা দেখছে,,বহুতল ভবন,,,আহনাফ ওকে নিয়ে ৭তম তলায় এসেছে,ওখানেই ওদের ফ্ল্যাট
দুমিনিট পর আহনাফের মা এসে দরজা খুললেন,,আহনাফ নাকে রুমাল চেপে তার রুমের দিকে ছুটলো
মা আহনাফের চলে যাওয়া দেখে বললেন”কিরে?তোর কি হলো আবার?এলার্জি বেড়েছে?”
কথা শেষ করে দিবার কোলে বিড়াল দেখে চোখ বড় করলেন তিনি তারপর বললেন”ওহ এবার বুঝলাম,,আচ্ছা তুমি দিবা?”
.
আসসালামু আলাইকুম,জ্বী আন্টি আমি দিবা
.
ওয়ালাইকুম আসসালাম,,,আচ্ছা!ভেতরে আসো,,
.
দিবা ভেতরে ঢুকলো ব্যাগটাকেও ঢুকালো,,আহনাফের মা ফোন খুঁজে কল করলো ইভানের আম্মুকে
তিনি রিসিভ করে বললেন ভিডিও কলে আসতে,,আহনাফ আর আরিফ,এবং দুলাভাইকেও ডাকতে কলে তারপর বলবেন যা বলার
মা আহনাফকে ডেকে বললেন ওর বাবাকে নিয়ে আসতে,ওর বাবা ঘুমোচ্ছে,আর আরিফ তো তার বান্ধুবীর বোনের বিয়েতে গেছে
.
আহনাফ চোখ মুখে পানি দিয়ে গেলো বাবাকে ডাকতে
দিবা রুমের এক কোণায় দাঁড়িয়ে টেবিলের উপরে থাকা মাছের কাটা গুলোর দিকে চেয়ে আছে,মিনির এটা অনেক প্রিয়,,,কিন্তু কার না কার বাসায় সে এসেছে,কিছুতে হাত না দেওয়ায় ভালো,,মিনিকে আগলে ধরে সে আহনাফের মায়ের দিকে চেয়ে আছে,চেহারা একদম তার মায়ের মতন,মনে হয় যেন জমজ বোন,,উনি কে তাহলে??আমি তো কখনও উনার ছবিও দেখলাম না,জীবনে প্রথম দেখলাম উনাকে,,
.
আহনাফ বাবাকে ডেকে নিজেও এসেছে ড্রয়িং রুমের দিকে
দিবার দিকে এক নজর তাকিয়ে সে মায়ের পাশে বসে ফোনের দিকে চেয়ে বললো”খালামণি কি খবর তোমার?”
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here