সবটা অন্যরকম♥
পর্ব_২৪
Writer-Afnan Lara
.
দিবা কাঁদতে কাঁদতে ফোন টেবিলের উপর রেখে দিয়ে আবারও চলে আসলো নিজের রুমে,,আসার পথে ধাক্কা খেয়ে গেলো আহনাফের সাথে
আহনাফ রেডি হয়ে ডিউটিতে যচ্ছিলো তখন
দিবাকে কাঁদতে দেখলো সে,দিবা কেনোদিকে না তাকিয়েই নিজের রুমে চলে গেছে
.
এই মেয়েটা একবার হাসিখুশি থাকে,একবার শয়তানি মুড নিয়ে থাকে,একবার ঝগড়া মুড নিয়ে থাকে,আবার কেয়ার মুড এট লাস্টে সেন্টিমেন্টাল মুড,,একটা মানুষের এতগুলো মুড থাকে বোঝা দায়
.
আহনাফ চলে গেলো আর থাকলো না ওখানে,,দিবার কান্নার কারণ ওর ফ্যামিলি ছাড়া যে আর কেউ না ওর খুব ভালোমতন জানা আছে
যাই হোক আজ ডিউটিটা মনে হয় ভালোভাবে শেষ করা যাবে কারণ আজ মিশকা জ্বালাতে আসবে না
এই ভেবে খুশি খুশি বাইক চালিয়ে আহনাফ বারের সামনে এসে থামলো,,মুখে মাস্ক আর চোখে সানগ্লাসটা দিয়ে বারের ভেতর ঢুকে গেলো সে,,রিসিপশান খালি,নাহিদ আসেনি এখনও মনে হয়
আহনাফ সেখানে বসে কাগজে এটেন্ডেন্স সই করে কাগজটা সরিয়ে রাখলো,,বারের ওয়েটার প্রিতম ডাকছে আহনাফকে
কাস্টমার নেই বলে আহনাফ উঠে গেলো সেদিকে,,গোল টুলে বসে বললো”কিরে.কি খবর?”
.
বিয়ার খাইবা?
.
বস জানলে বিপদ আছে রে
.
জানবে না,এটার অর্ধেক কাল এক স্যার খাইছিলো গ্লাসে ঢালি,,বাকিটা তো আর লাগবে না,উনি বাকিটার বিল দিয়ে চলে গেছে,আমি এটা লুকাই রাখছি
.
আরেহ বাহ,,দে চল খাই,নাহিদ একবার জোর করে খাওয়াইছিলো তারপর থকে খেতে মন চায় তাও মনকে বুঝাই যে এটা খাওয়া ভালো না বাট এটার টেস্ট ভুলতে পারি না আমি
.
নাও ধরো খাও
.
আহনাফ এক গ্লাস খেয়ে মুখটা হাতের এপিঠ দিয়ে মুছে নিলো,কাশি শুরু হয়ে গেছে,,চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষন চুপ থাকলো সে,,গলার উপর কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে তাকালো আহনাফ
মিশকা দাঁড়িয়ে আছে পাশে
মিশকাকে দেখে আহনাফ টুল থেকে উঠে দূরে সরে গেলো
.
মিশকা সেই টুলে বসে পায়ের উপর পা তুলে বাকি যে বোতলটা আছে তার ছিপি খুললো
.
আহনাফ চলে যাওয়া ধরতেই মিশকা ওর জ্যাকেট টেনে ধরে ওকে আটকালো তারপর বললো”কি বলেছিলে যেন??তোমরা পরিবারকে না জানিয়ে লুকিয়ে চুরিয়ে এঙ্গেজমেন্ট করেছো?
বাট আমি যে খবর নিয়ে দেখলাম তোমার জীবনে কোনো মেয়েই নাই,তাহলে এঙ্গেজমেন্টটা কার সাথে করলা?আর তোমার হাতটা দেখি,আংটি কই??”
.
আহনাফ জ্যাকেট ছাড়িয়ে চলে গেলো রিসিপশানে,,মদের নেশাতে গোল গোল ঘুরাচ্ছে ওরে
এর ভিতরে মিশকা এসেছে দিন খারাপ করতে
মিশকা বিয়ারের বোতলটা নিয়ে পিছু পিছু চলে আসলো,,আগের মতন আহনাফের সামনের টেবিলটার উপর বসেছে সে
বিয়ার এক চুমুক নিয়ে সে বললো”কি হলো??উত্তর দিলে না”
.
প্রয়োজন মনে করি না,,আমার লাইফে যে আছে তাকে আমি দুনিয়ার মানুষ থেকে লুকিয়ে রাখবো নাকি সাজিয়ে দেখাবো সেটা একান্তই আমার ব্যাপার,আর হ্যাঁ ওরে আমি অজানায় রেখেছি,আপনি কখনও ওর নাগাল পাবেন না,আংটি খুলে রেখেছি কারণ আমি আগেও বলেছি পরিবারকে বিষয়টা জানাইনি আমি
.
কাম অন!!আমি তোমাকে ট্রাস্ট করি তার মানে এই না যে আমি তোমার এই সিলি স্টোরি ও বিশ্বাস করবো?
বাদ দাও এই টপিক,তুমি কলিজা কাটি বললেও আমি মানবো না য তোনার লাইফে আমি ছাড়া অন্য কেউ আছে
.
আমার লাইফে আপনি নাই,এখন সরুন এখান থেকে আদারওয়াইজ আই উইল থ্রো ইউ আউট
.
ফেলে দিবে??ফেলো,,তোমার টাচ টা আমার প্রয়োজন
.
আহনাফ সিটে বসে হেলান দিয়ে প্রিতমকে ডাক দিলো
“প্রিতম এই ম্যাডামকে সুন্দর করে কোলে তুলে ফ্লোরে ফেলে দাও”
.
প্রিতম মুচকি হেসে মিশকাকে ধরতে গেলো
.
আমাকে টাচ করবা না,,যে সে এসে আমায় টাচ করতে পারে না,, আমাকে টাচ করলে শুধু নাফি টাচ করবে,দূরে থাকো
.
আহনাফ মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে,
“এই মেয়েটা কবে আমার জীবন থেকে যাবে উফ!”
.
মিশকা টেবিল থেকে নেমে দূরে টুল একটা নিয়ে এদিকেই ফিরে বসলো,,আহনাফ চুপচাপ ফোন দেখছে,আজকে কাস্টমার কম,,বোরিং সময় কাটছে,নাহিদ ও আসছে না,আর সামনে এই মেয়েটা বসে বেকুবের মতন তাকিয়ে আছে
আহনাফ ফোনের গ্যালারি ঘাটতে গিয়ে নিজেই টাসকি খেয়ে গেলো
মিনির ছবি,,ছবি তোলার ধরন দেখে মনে হচ্ছে ছবিটা মিনি নিজে তুলেছে
ফোনের উপর দাঁড়িয়ে সে নড়াচড়া করছিলো আর ছবিটা ক্লিক হয়ে গেলো সেসময়ে,,ওর পেট ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না,আহনাফ ফিক করে হেসে দিলো মিনির এমন কাজে
ওর ফোন লক করা থাকে সবসময় তবে লকে নোটিফিকেশন বারে ক্যামেরা এপসটা থাকে যার কারণে মিনির হাত পা ওখানে লেগেছে আর ছবিটা তুলে গেছে
এই বিড়ালটা আস্ত একটা বদের হাড্ডি
.
প্রিতম আরেকটা গ্লাস এনে আহনাফের সামনে রেখে দিয়ে বললো”নাও বাকি গ্লাস আমি খাচ্ছি”
.
আহনাফ মানা করতে গিয়েও করলো না,,ফ্রিতে পেয়ে কে না করবে
তাই মুচকি হেসে মাস্ক খুলে এই গ্লাসের মদটুকু ও সে সাবাড় করে নিলো
♣
দিবা,, আরিফ ডিনার করতে আসো,,
.
দিবা মিনিকে নিয়ে আসলো ডাইনিংয়ে,এতক্ষণ ওড়ছিলো সে,,আরিফ তো আরিশার সাথে চ্যাট করছিলো,সেও এলো,,খালু আজ তাড়াতাড়ি খেয়ে বেরিয়ে গেছেন আদনানের বাবা মানিকের সাথে,,মণিতার বিয়ের কার্ড ছাপাতে হবে,,ফিরতে রাত হবে তার,,
মানিকের অফিস ছিলো বলে এসময়ে কার্ড ছাপাতে বের হতে হলো
সবাই ডিনারটা সেরে নিলো,,দিবা নিজের রুমে আসতে নিতেই খালামণি ডেকে বললেন উনি পাশের বাসায় যাচ্ছেন,ঐ বাসার মেয়েরা এসেছে বেড়াতে তাই উনি দেখতে যাচ্ছেন,অনেকদিন ওদের দেখা হয় না
এদিকে আরিফ ও লুকিয়ে চুরিয়ে ছাদে চলে গেছে আরিশার সাথে প্রাণখুলে কথা বলবে বলে
এবার বাসায় দিবা সম্পূর্ন একা,অবশ্য মিনিও আছে কিন্তু তাতে কি?
মিনি মশাই তো এখন ঘুমাচ্ছেন যার কারণে দিবা এখন এসেছে আহনাফের রুমে,,সকালে আহনাফের বারান্দা থেকে দূরের একটা বারান্দা দেখতে পেয়েছিলো সে যেখানে অনেক সুন্দর করে টব ঝুলানো ছিলো,,ভালো করে সিস্টেমটা দেখে নিবে সে যাতে করে সেও এমন করে সাজাতে পারে
বারান্দা অন্ধকার বলে দিবা ভালোমতন দেখলোই না
ধুর!
দিবা মন খারাপ করে হেঁটে চলে যাচ্ছিলো হঠাৎ ওর গায়ের সাথে লেগে আহনাফের টেবিলের উপর থেকে একটা ব্যাগ পড়ে গেলো
ব্যাগের চেইন খোলা ছিলো বলে ভেতর থেকে কাগজপত্র সব বেরিয়ে এলোমেলো হয়ে গেছে
দিবা ফ্লোরে বসে কাগজ সব এক এক করে হাতে নিতে থাকলো,,সব একসাথ করে একটা কাগজের দিকে সে মন দিয়ে তাকালো
সেখানে লিখা আছে
Customer Number 1-Mr.Rishad
Customer Number 2-Mr.Momen
এমন করে সব লিখা ছিলো,,এটা কিসের লিস্ট সেটাই দিবার মাথায় ঢুকছে না,,তাই কাগজ সবগুলো এক এক করে বের করে সে খুঁজতে থাকলো অন্য কিছু তথ্য
পরে সে জানতে পারলো এটা একটা বারের লিস্ট
কারণ একটা ককাগজে কালো করে প্রিন্ট করা ছিলো বারের নাম
দিবার আগে থেকেই সন্দেহ হয়েছিলো আহনাফের সাথে বারের কিছু একটা সম্বন্ধ আছে আজ সেই সন্দেহ আরও কড়া হলো
কিন্তু সব কেমন ঝাপসা মনে হয়,,ঠিক বুঝতে পারি না উনার সাথে বারের কি সম্পর্ক,উনাকে দেখে তো বারে যাওয়া পাবলিক মনে হয় না কোনো দিক দিয়েই
তাহলে বারবার উনার সাথে এই বার নামটা জড়ায় কি জন্য
রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি, এই রহস্যটা সলভ্ করতে হবে আমায়,,কিন্তু কি করে??
.
দিবা ভাবতে ভাবতে কাগজগুলো ব্যাগে ভরে টেবিলে রাখলো ব্যাগটা
তারপর পিছনে তাকাতেই ভয়ে ওর গলাটা শুকিয়ে গেলো একদম,,আহনাফ দাঁড়িয়ে আছে ওর একদম সামনে
দিবা ভয়ে দেয়ালের সাথ লেগে দাঁড়িয়ে পড়েছে
.
আহনাফ চোখ ডলে তার হাতের ব্যাগটা বিছানার উপর রেখে এগিয়ে আসলো
দিবার ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে,সে ভাবছে সে তো মেইন দরজা লক করেছিলো আরিফ ভাইয়া বের হবার পরে তাহলে আহনাফ ভেতরে আসলো কি করে
তার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে আহনাফ তার হাতের চাবিটা টেবিলের উপর রাখলো
তার কাছে বাসার এক্সট্রা চাবি থাকে সবসময়
দিবা ঢোক গিলে সরতে নিতেই আহনাফ তার বাম হাত দিবার পাশের দেয়ালে রাখলো
.
দিবা ভয়ে মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে আছে,কি দিয়ে কি শুরু করবে সেটাই বুঝছে না সে,কি বাহানা দেবে এখন??
কাগজ দেখছিলাম সেটা দেখে ফেলেনি তো?
আহনাফ দিবার থুতনিটা ধরে বললো”তুমি দিবা না??আমার রুমে কি করো তুমি?রাতের কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে তোমার?”
.
(উনি এমন করে কথা বলছেন কেন?)
.
কি হলো?উত্তর দেও না কেন?
.
না মানে আসলে মিনি….
.
ওহ!তোমার ঐ আজাইরা বিড়াল বুঝি আবার আমার রুমে এসেছে?হাহ!!ও এরকম ক্যান,সবসময় আমার রুমেই থাকে
.
আহনাফ হাসতে হাসতে দিবাকে চেপে ধরে বললো”কি ভাবো?আমাকে নেশায় ধরছে,হুমম???ধরে নাই,আমাকে নেশা ধরে নাই,জাস্ট দু গ্লাসে নেশা আমাকে ধরতে পারে না বুঝলে??নাকি ধরেছে?
তুমি বলতো ধরেছে কিনা?
.
এই লোকটা কি পাগল হয়ে গেলো,এমন করছে কেন?
.
আহনাফ দিবার হাত ছেড়ে দিয়ে গায়ের জ্যাকেটের চেইন খুলতে খুলতে বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো,,তারপর মাথার চুলগুলোতে হাত ঢুকিয়ে টানতে টানতে বললো”এক কাপ চা বানিয়ে আনো,কড়া লিকারের,মাথা ধরছে আমার”
.
দিবা প্রাণ নিয়ে কোনো মতে পালিয়ে চলে আসলো,,যে ভাবে পাকড়াও করেছিলো মনে হয় এই বুঝি খুন করে ফেলে আমায়,রাত বারোটা বেজে গেছে,খালামণি আসছে না কেন,আরিফ ভাইয়াও আসার নাম নিচ্ছে না,আর কতক্ষণ এই লোকটার সাথে একা বাসায় থাকবো
.
আহনাফ বিছানায় শুয়ে পড়েছে ফ্রেশ না হয়েই,,দিবা চা বানিয়ে এসে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে,,আহনাফকে ডাকবে নাকি ডাকবে না তা ভাবছে সে
পরেই ওর মাথায় আসলো আহনাফের সাথে বারের কি সম্পর্ক সেটা বের করার এটা মোক্ষম সুযোগ,একে হাতছাড়া করা বোকামি হবে
দিবা চায়ের কাপটা টপবিলে রেখে পা টিপে টিপে আহননাফের কাছে এসে বসলো,তারপর ওর জ্যাকেটের পকেটে হাত ঢুকালো আইডিকার্ডটা বের করবে বলে
আইডিকার্ডটা হাতের সাথে লাগতেই দিবা এক টান দিলো বের করার জন্য ঠিক সেসময়ে আহনাফের হাত এসে আটকালো ওর হাতটাকে
দিবার তো ভয়ে মনে হয় হার্ট এ্যাটাক করে এখন মরেই যাবে
আহনাফ দিবাকে টান দিয়ে বিছানার সাথে চেপে ধরে বললো”এত শখ আমার ব্যাপারে ইনফরমেশন বের করার?”
.
না মানে,,ইয়ে না মানে!
.
চুপ!!একদম চুপ!!তুমি কি ভাবছো আমাকে নেশায় ধরছে??হুম ধরছিলো বাট বেশি সময়ের জন্য না,,কি বলছিলে যেন??মিনির জন্য আমার রুমে এসেছো??মিনি যদি আসত তাহলে আমার একবার হলেও হাঁচি আসত বাট আমার কোনো হাঁচি আসেনি তার মানে তুমি মিথ্যা বলছো ,তুমি আমার রুমে আসছো জাস্ট আমার ব্যাপারে ইনফরমেশন বের করতে
.
না এটা সত্যি না
.
এটাই সত্যি,বলো কেন জানতে চাও এসব?কি লাভ তোমার
.
দিবা হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বললো”আমার কোনো লাভ নাই,আমি তো পাশের বাসার বারান্দা দেখতে আসছিলাম”
.
ওহ তাই?তাহলে এখন আমার আইডিকার্ড নিতে ছিলে কেন তাও চোরের মতন,বলো
.
হাত ছাড়ুন বলছি,, নাহলে…
.
নাহলে কি?
.
আমি খালামণিকে বলে দিব আপনি মদ খেয়ে আসছেন আজকে
.
আহনাফ দিবার হাত ছেড়ে দিয়ে উঠে বসলো,,, দিবা ও উঠে হাতের কব্জি ডলতে ডলতে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো তারপর বললো”চা ঠাণ্ডা হচ্ছে খেয়ে নিন”
চলবে♥