সবটা অন্যরকম♥
পর্ব_৩৯
Writer-Afnan Lara
.
রাত দশটা বাজতেই এক এক করে সব মেহমান চলে গেলো
বাকি থাকলো আহনাফরা
ডিনার করা শেষ বলে এখন যে যার ঘুমানোর জায়গা নিয়ে ব্যস্ত
আরিফ আর আদনানের সাথে আজ আহনাফ সহ ঘুমাবে
মা বাবা এক রুমে আছেন
মণিতার সাথে দিবা ঘুমাবে।বাকি রইলো দিদুন
তার সাথে আনাফ ঘুমাবে
মণিতা বেশ দেরি করে ঘুমিয়েছে।দুনিয়ার যত কথা আছে জন্টুর সাথে সে বলছে
দিবা মিনির গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে সেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছে
মিনি আজ সুযোগ পেয়েছে আহনাফের সাথে ঘুমানোর
দিবা ঘুমিয়ে পড়তেই সে চুপিচুপি বিছানা থেকে নেমে দরজার ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে চললো আহনাফ যে রুমে আছে সে রুমের দিকে
সেই রুমটার দরজাও খোলা। ভেতরে ঢুকে সে বিছানার উপরে উঠে চুপ করে বসে থাকলো
কিণারায় আহনাফ শুয়ে ছিলো
মিনি সেই জায়গায় বসে আহনাফকে খুঁজছে
হঠাৎ আহনাফ একটা হাঁচি দিয়ে নড়েচড়ে উঠতেই মিনি বুঝেছে ওটাই আহনাফ
সে গুটিগুটি পায়ে আহনাফের কাছে গিয়ে শুয়ে পড়লো
সারাটা রাত ধরে আহনাফ হাঁচি দিয়েছে
শেষে ভোররাতে উঠে পড়লো হাঁচির জ্বালায়
নিজের ফোনটা বের করে ফ্ল্যাশ অন করতেই নিজের পাশে মিনিকে সে দেখতে পেলো
মিনি আরামসে চোখ বুজে ঘুমায়।এত মেজাজ উঠলো আহনাফের তা বলার বাহিরে
পুরো রাতের ঘুম উঠায় দিসে বেড়ালটা।এমনি এমনি কি একে আজাইরা বলা হয়?
আহনাফ নাক ডলে মিনিকে মুঠো করে ধরে বিছানা থেকে নেমে গেলো
রুম থেকে বেরিয়ে মণিতার রুমের কাছে এসে দরজার ফাঁক দিয়ে মিনিকে ভেতরে ঢুকিয়ে দরজাটা টেনে দিলো সে
তারপর সোফায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো।এখানে যদি একটু শান্তি পাওয়া যায়
ওদিকে মিনি অসহায়ের মতন বন্ধ দরজাটার দিকে চেয়ে আছে
তার কি দোষ ছিল যে আহনাফ ওরে ভোররাতে বের করে দিলো।আবার দরজাটাও টেনে দিছে।দরজাটা তো খোলার সাধ্য তার নেই।কি করা যায় তাহলে?
.
সকালে সবার আগে ফুফু আর খালামণি উঠেছেন।আজ অনেক কাজ
গায়ে হলুদ বলে কথা।ওদের কাজের শব্দ কানে আসতেই দিবাও উঠে পড়েছে।কিন্তু মণিতা এখনও উঠেনি।সারারাত ননস্টপ কথা বলে এখন সে ঘুমায়
দিবা ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো মিনির দরজার কাছে বসে আছে।মনে হয় এখানেই ঘুমিয়েছিল
ওকে আর কিছু না বলে রুম থেকে বের হলো সে।সোফায় হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে আহনাফ
বিষয়টা গোলমেলে নাহ?আহনাফ যে কিনা ভোরবেলা উঠে পড়ে সে কিনা সকাল আটটা অবদি ঘুমাচ্ছে
ওকে দেখতে দেখতে দিবা খালামণির কাছে চলে গেলো
খালামণি বললেন হলুদের দিনে তিনি এবং অন্য মুরব্বীরা হাতে টাটকা মেহেদি লাগাবেন।পাশের বাসার ছাদে একটা মেহেদি গাছ আছে।তারা সবাই মিলে এখন সেটা থেকে মেহেদি আনতে যাবে। দিবাও যেন সাথে আসে
দিবার হাতে ডালা দিলেন ফুপু।সেটাতে চিনির বাটি।হলুদের বাটি আরও কত কি আছে।নিয়ম করে কিছু মেহেদি আবার নিয়ে হলুদের সাথে রাখতে হবে
দিবা ডালা নিয়ে তাদের পিছু পিছু গেছে।আহনাফ ঘুম থেকপ উঠে সারা বাসা খুঁজেও নিজের জামাকাপড়ের ব্যাগটা পেলে না
দিদুন বললেন মা আর ফুফু নাকি পাশের বাসার ছাদে গেছে
মাথার চুলগুলোকে এলিয়ে দিতে দিতে আহনাফ সেদিকেই ছুটলো
নিজের তোয়ালেটা পর্যন্ত ঐ ব্যাগে আছে
আরেকজনের তোয়ালে গামছা ব্যবহার করতে অভ্যস্ত না সে
মেহেদি পাতা ছিঁড়তে ছিঁড়তে সবাই একে অপরকে চিনি খাওয়াচ্ছে
দিবা একবার খালামণিকে খাওয়ালো আবার ফুফুকে।বাকি যারা ছিলো পাশের বাসার আন্টিরা তাদের ও এক এক করে খাওয়াচ্ছে সে
আহনাফ ছাদ পর্যন্ত এসে মা বলার জন্য হা করতেই দিবা কোথা থেকে এসে ওর মুখের ভেতরে চিনি ঢুকিয়ে চলে গেছে
পরে মাথায় আসলো ও কিছুক্ষন আগে আহনাফের মুখের ভেতর চিনি ঢুকিয়েছে
জিভে কামড় দিয়ে আবারও ওর সমানে এসে বললো” সরি”
.
-মা?
.
-কিরে?তুই এখানে কি করিস?চোখ মুখ ফুলে আছে কেন তোর।ফ্রেশ হোসনি?
.
-কি করে হবো।আমার তোয়ালে তো ব্যাগের ভেতর।আর সেই ব্যাগটাকে কোথায় রাখছো সেটা তো শুধু তুমিই জানো
.
-মনে পড়ছে না রে।খুঁজে দেখতে হবে।এখন কাজ করছি রে বাবা।আদনানের তোয়ালে দিয়ে কর না
.
-মা তুমি জানো আমি আরেকজনের জিনিস ইউজ করতে পারি না।
.
-আমার তোয়ালেটা আমরা যে রুমে ছিলাম ওখানে ঝুলিয়ে রেখেছি। আপাতত ওটাই নে যা
.
আহনাফ মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো।খালামনি দিবাকে বললেন আহনাফ কেন এসেছিলো।
তার রুমে ঝুলানো তোয়ালে তার ঠিক আছে তবে তার পাশের গোলাপি তোয়ালেটা দিবার।অন্য কেউ ইউজ করবে বলে সে খালামণির রুমে রেখে এসেছিলো
কি বিপদ!আহনাফ আবার ওটা না নিয়ে নেয়
দিবা ছুটে গেলো আহনাফের পিছু পিছু
আহনাফ ততক্ষণে ফোনে কথা বলতে বলতে মায়ের তোয়ালেটার জায়গায় দিবার তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেছে
দিবা অনেক দৌড়েও নাগাল পেলো না।যেমনটা ভেবে ছিলো তেমনটাই হলো
আহনাফ ভুল করে ওর তোয়ালেটাই নিয়েছে
দিবা গালে হাত দিয়ে চেয়ারে বসে আহনাফের অপেক্ষা করছে এখন
দশ মিনিট পর আহনাফ তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বের হতেই দিবা ওর হাত থেকে ছোঁ মেরে ওটা নিয়ে বললো”নিজের মায়ের তোয়ালে চিনেন না আপনি?”
.
-কেন চিনবো না।মায়ের তোয়ালে তো ইয়েলো
.
-তো এটা কি?
.
-এটা তো পিংক।!এক মিনিট।এটা কার?
.
-আমার!!দেখে নিবেন না??আজিব!
.
-ফোনে কথা বলছিলাম তো তাই খেয়াল করিনি
তাই তো বলি ওরকম পারফিউমের গন্ধ আসছিলো কেন
.
-পারফিউমের সুবাস হয়। গন্ধ হয় না
.
-যাই হোক। নাস্তা দাও।আমার খুব খিধে পেয়েছে।তোমার ঐ আজাইরা বেড়াল আমাকে সারারাত জ্বালিয়েছে
ও কি করছে জানো?ও আমার পাশে গিয়ে ঘুমাচ্ছিল
পরে আমি ওরে তোমাদের রুমে রেখে দরজা লাগিয়ে সোফায় এসে শুয়েছিলাম।ঠিক করে ঘুমাতেই পারলাম না
.
-সরি।আমি ওকে বকে দিব
.
আহনাফ গিয়ে সোফায় বসে টিভিটা অন করলো চুপচাপ
দিবা তোয়ালে রেখে রান্নাঘরে গেলো দেখার জন্য যে খাবারে কি আছে।ফিরনি বানানো
মনে হয় ফুফু বানিয়েছেন
দিবা ফিরনি এক বাটি এনে আহনাফের সামনে রেখে বললো”এটাই পেলাম।আর কিছু নেই।রুটি বানিয়ে দেবো?”
.
-না থাক।এটাতেই হবে।মিনি কি খাবে?
.
-ফুফুকে বলে ওরে আমি ফ্রিজ থেকে দুধ নিয়ে এক বাটি খাওয়াইছি
.
-বেশ ভালো।
.
দিবা আবারও খালামণির কাছে ফেরত চলে গিয়েছিলো
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানটা শুরু হয়েছে সেদিন সন্ধ্যা থেকে
মণিতাকে তার চাচাতো বোনেরা সাজাচ্ছে।দিবার আর কাজ না থাকায় সে নিজেই রেডি হয়ে নিচ্ছে এখন।আহনাফের দেওয়া হলুদ শাড়ীটা পরেছে সে
চুলগুলোকে খোঁপা করবে নাকি ছেড়ে দেবে তা নিয়ে বেশ অনেকক্ষণ ধরে কনফিউজড ছিল সে
পরে এক্সট্রা বেলি ফুলের মালা পেয়ে চুলে খোঁপাই করে নিলো শেষমেষ
হলুদ শাড়ী।লাল পার।মাথায় সাদা ফুল।হাতে লাল চুড়ি
ঠোঁটে হালকা লাল লিপস্টিক, কানে দুল।সব ফিনিস করে দিবা বিছানার এক কোণায় বসে বসে পা দুলাচ্ছে
বাকিরা মণিতাকে সাজিয়ে এবার তারা সাজছে
খালামণি দিবাকে ডাকলেন তার শাড়ীতে সেফটিপিন লাগিয়ে দিতে
দিবা সেদিকে গিয়ে দেখলো খালামণির কুচি গুলো সোজা হয়নি ঠিকঠাক
তাই সে নিচে বসলো কুচি ধরার জনন্য
একই সময়ে আহনাফ ও বসলো কুচি ধরতে
দুজনে এক জায়গায় একসাথে বসে একে অপরকে দেখছে
আহনাফের গায়ের পাঞ্জাবিটা সম্পূর্ন লাল রঙের ছিল
দিবা চোখ নামিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে খালামণির পিছনে চলে গেলো শাড়ীতে সেফটিপিন লাগাতে
চোখের পলকে দিবা সরে গেলো
আহনাফ কি দেখলো না দেখলো মনে করতেই পারছে না
মায়ের কুচিটা ধরে সে ও চলে গেছে।দ্বিতীয়বার আর তাকায় নিই
খালামণি কাজল একটু দিবার কানের পেছনে লাগিয়ে দিয়ে বললেন “নজর লাগতে পারে”
.
দিবা মুচকি হেসে চলে গেলো মণিতার কাছে।ওকে নিয়ে এবার ছাদে যাবে সবাই
ছাদে আসতে না আসতেই হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো
অবশ্য এতক্ষণ মেঘলা ছিলো।হালকা রোদ উঠত মাঝে মাঝে
তাই সবাই ধরেই নিয়েছিল বৃষ্টি হবে না
এরকম বৃষ্টিতে সবাই ভিজে একাকার হয়ে গেছে
দিবা সব চাইতে বেশি ভিজেছে কারণ সে সবার সামনে ছিল
সবাই আবারও বাসায় ফেরত চলে এসেছে
দিবা নিজের শাড়ী থেকে বৃষ্টির পানি ঝাড়তে ঝাড়তে বাসায় ঢুকতেই আহনাফের সামনে পড়লো
আহনাফের মনে হলো সে তার কল্পনার সেই প্রেয়সীকে দেখে ফেলেছে আজ
|সে খোঁপা করে রাখবে।খোঁপায় বেলি ফুলের মালা ঝুলাবে।ঠোঁটে লাল টুকটুকে লিপস্টিক থাকবে।নাকে ছোট সাদা পাথরের নাকফুল আর কানে ছোট দুল।তার গায়ের রঙ হবে আনকমন
সাদা ও না,কালো ও না।এমনকি শ্যামলাও না
জাস্ট এমন একটা রঙ যেটায় পানি পড়লে ঝলক মেরে ওঠে
তার কথাবার্তায় আমি দিন দিন তার প্রেমে পড়ে যাবো
আর সে মিশকা টাইপ মেয়ে হবে না।সে অনেক লজ্জাবতী হবে|
.
দিবা মাথা নিচু করে আহনাফের পাশ দিয়ে চলে গেছে
আহনাফ ওর চলে যাওয়া দেখছে।আজ সে ঐ মেয়েটাকে দেখলো যাকে সে এতদিন কল্পনা করত
দিবা নিজের তোয়ালেটা খুঁজে মুখ মুছে নিয়ে মিনিকে বললো”এত সুন্দর করে পরিপাটি হওয়া সাজটা নষ্ট করে দিলো এই বৃষ্টি।কেমন লাগে বল তো।তুই তো ছিলি না।নাহলে তুইও ভিজতি
ভাগ্যিস দৌড় দিয়েছিলাম।নাহলে এখন আমায় এই শাড়ীটা বদলাতে হতো”
.
-কিরে আহনাফ?এরকম সংয়ের মতন দাঁড়িয়ে আছিস যে?এদিকে আয় তোর সাথে কথা আছে আমার
.
আদনান আহনাফের হাত শক্ত করে ধরে ওর রুমের বারান্দায় নিয়ে আসলো
.
-কি হয়েছে?কিছু বলবি?
.
-হুম।খুবই জরুরি কথা।দিবাকে নিয়ে
.
-দিবাকে নিয়ে?
.
আদনান গ্রিলের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো”
হ্যাঁ।আসলে কাল আমি তোর সাথে ওরকম বিহেভ করছিলাম কারণ আমি জানতে চেয়েছিলাম তুই দিবাকে পছন্দ করিস কিনা।এরপর সিউর হলাম যে তুই আসলেই দিবাকে বোনের মতন দেখিস।
তো আমি তোকে একটা কথা বলি।তুই পরে মামিকে বলিস।
কথাটা হলো আমি দিবাকে পছন্দ করি।যদি মামি রাজি থাকেন তো আমি দিবাকে বিয়ে করতে চাই
যতদূর জানি দিবার জীবনে কেউ নেই।তো বলবি??”
.
আহনাফ চুপ করে থাকলো তার কিছুক্ষণ পর মুচকি হেসে বললো”হ্যাঁ।বলবো।
সব বুঝলাম।।তাহলে এই সে মেয়ে যার কথা না বলে আমাকে সারপ্রাইজ দিতে চাইছিলি?”
.
-হ্যাঁ।পরে চিন্তা করলাম তোর সাথে কিসের লুকোচুরি। মনের কথাটা তোকে বলেই দিলাম
এবার তুই দেখ আমাদের মিল করাতে পারিস কিনা।আমি এটাও জানি যে দিবা এখন বিয়ে করতে চায় না
এটা কোনো সমস্যা না।ও যখন চাইবে তখনই বিয়েটা হবে কিন্তু ওর সম্মতি আছে কিনা তাও তো আমায় জানতে হবে
.
আহনাফ আদনানের রুমের ভেতরের দিকে চোখ রেখে চুপ করে আছে
ওখানে মিনি বসে চোরের মতন ওকেই দেখছে।মিনিকে দেখে আহনাফ হেসে বললো”দিবাকে মা নিজেই জিজ্ঞেস করবে।আমি করার কে।”
.
দিবা মিনিকে খুঁজে পেলো আদনানের রুমে।তাই রুমে ঢুকে ঝুঁকে মিনিকে নিচ থেকে তুলতেই ওর চোখ গেলো বারান্দার দিকে।সেখানে আহনাফ দাঁড়িয়ে
মুখটা গম্ভীর করে সে এদিকেই তাকিয়ে আছে।দিবাকে দেখে গ্রিলটা শক্ত করে ধরলো। তার পাশেই আদনান নিজের মনের যত কথা আছে দিবাকে নিয়ে সেসব বলেই চলেছে
চলবে♥