সবটা অন্যরকম♥ পর্ব_৪০

সবটা অন্যরকম♥
পর্ব_৪০
Writer-Afnan Lara
.
-আমার মনে হয় কথাটা তোর নিজে গিয়ে দিবাকে বলা উচিত!মাকে বলার আগে
.
-কই সে এখন?দেখেছিস?আজ তো শাড়ী পরেছে।খুব সুন্দর লাগছিলো ওকে
.
আহনাফ মুচকি হেসে বললো”যাই আমি।মা ডাকছে মনে হয়।তোর ও তো কাজ কম না।জলদি কাজে লেগে পড়”
.
আহনাফ চলে গেলো ওখান থেকে।দিবা মিনিকে নিয়ে মণিতার রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে।
বারান্দা এমন একটা জায়গা যেখানে বৃষ্টি হলে এক অন্যরকম ভালো লাগা অনুভব করা যায়।সাথে যদি থাকে গোটাকয়েক ফুল গাছ তাহলে অনুভূতিটা আরেকটু বেড়ে যায়
একটা চেয়ার হলে মন্দ হতো না।বসে দেখতে আরও ভাল্লাগবে
দিবা পিছনে তাকালো রুমে চেয়ার আছে কিনা দেখার জন্য ঠিক তখন আদনান একটা চেয়ার সমেত এদিকে এসে দাঁড়িয়েছে
দিবার দিকে চেয়ারেটা ঠেলে দিয়ে বললো”এই সুন্দর অনুভূতি চেয়ারে বসেও নেওয়া যায়”
.
দিবা বললো”না থাক।আপনি বসুন”
.
-তোমার জন্য আনলাম।বসার মুড আমার নাই
.
দিবা চেয়ারটা নিজের দিকে টেনে একটু দূরে গিয়ে বসলো।
.
আদনান কাঁচুমাচু করছে।কথাটা কি করে বলবে তাই ভেবে পাচ্ছে না।মেয়েদের প্রোপোজ করা বড়ই কঠিন জিনিস।আর সেই মেয়েটা যদি হয় গম্ভীর তাহলে তো কথাই নেই
হালকা কেশে গ্রিলে হাত রাখলো আদনান
আহনাফ মণিতার রুমের সামনে দিয়ে মায়ের রুমে যাওয়ার পথে ওদের দুজনকে বারান্দায় দেখে থেমে গেলো।রুমের খোলা জানালা দিয়ে সম্পূর্ন বারান্দাটা দেখা যায়
.
আদনান বড় করে শ্বাস নিলো।বুকটা ফুলিয়ে বললো”দিবা আমায় বিয়ে করবে?”
.
দিবা চমকে আদনানের দিকে তাকিয়ে আছে।
আদনান দিবার তাকানো দেখে চোখটা নামিয়ে ফেলে বললো”পছন্দ করি তোমাকে।”
.
দিবা মুখটা ঘুরিয়ে ফেললো।আদনান তার উত্তরের আশায় দাঁড়িয়ে আছে এখনও
.
দিবা বুঝেছে তার উত্তর না শুনে আদনান যাবে না এখান থেকে
সে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো”ভাইয়া আপনি ভালো মানুষ।কিন্তু আমি আপনার যোগ্য নই।তাছাড়া আমার জীবনটা যেরকম হয়ে আছে জন্মের পর থেকেই এরপরে আর আমি বিয়ে বিষয়টাকে প্রাধান্য দিতে চাচ্ছি না
সব মেয়ের মতন আমারও বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন ছিল।তবে মায়ের সাথে হয়ে যাওয়া ঘটনার শুনার পর থেকে আমার মন থেকে উঠে গেছে ঐ শব্দটা
একটা মেয়ের জীবনে বিয়েই সব কিছু হয়না
আমি পড়ালেখা করে নিজের একটা পরিচয় তৈরি করতে চাই।আপাতত আমি বিয়ে নিয়ে ভাবছি না।তাছাড়া আপনাকে নিয়ে এসব আমি ভাবিনি আগে।আমার কাছে আপনি খালামণির ননদের ছেলেই।এর বেশি কিছু না
আর আদৌ আমি বিয়ে করবো কিনা এবং সেটা কবে তা আমি নিজেও জানি না।সুতরাং আমায় মাফ করবেন
আমি এসবের মধ্যে নেই”
.
আদনান দিবার হাতটা ধরলো মুঠো করে তারপর বললো” অপেক্ষা করবো”
.
কথাটা বলেই হাত ছেড়ে সে চলো গেলো
আহনাফ দূর থেকে সবটা শুনেছে।
.
দিবা আবার চেয়ারে বসে মিনিকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো”আমার মা যাকে ভালোবেসেছিল সে তাকে ঠকিয়েছে
আর আমি কখনও কারোর ভালোবাসায় নিজেকে আকৃষ্ট করবো না
আমার লক্ষ্য আমি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তুলবো।ব্যস এই টুকুই।
ঠকানোর আগে আমার বাবা সাদাত ও মায়ের কাছে রাজকুমারই ছিলো।মা কি জানত তার সেই রাজকুমার তাকে ঠকাবে??।তাহলে আমি কি করে একটা মানুষকে বিশ্বাস করি”
.
বৃষ্টি থেমেছে সবেমাত্র।না থামলে হয়ত বাসাতেই স্বল্প পরিসরে হলুদের অনুষ্ঠান করতে হতো
এখন বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় সবাই ছাদে এসে পড়েছে
বিশ ত্রিশটার মতন চেয়ার সাজানো।যারা হলুদ লাগাবে তাদের রেখে বাকি সবাই চেয়ারে এসে বসেছে।তৃতীয় সারিতে দিবা একটা চেয়ার বেছে বসে থাকলো
মণিতার খালাতো বোনেরা ওকে হলুদ লাগাতে ব্যস্ত
বাকি মুরব্বীরা তৈরি হচ্ছেন লাগাবেন বলে
সন্ধ্যা সাতটা বাজে এখন।অন্ধকার নেমে এসেছে।ডেকোরেশনের আলোতেই যা দেখা যায় আর কি
তবে বৃষ্টি হয়ে যাওয়ার পর সেই লাইট গুলো ডিস্টার্ব করছে বারবার
একবার জ্বলছে তো একবার নিভছে
.
মিনি দিবার কোলে বসে আছে ভালো বেড়ালের মতন।তবে তার চোখ আনাফের দিকে।আনাফকে কি করে আবার জ্বালাবে সেটাই ভাবছে মিনি
দিবার মাথায় ঘুরঘুর করছে আদনানকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথাটা
হয়ত হ্যাঁ বলা উচিত ছিল কিন্তু তার যে আদনানের প্রতি কোনো ফিলিংসই তৈরি হয়নি।তাছাড়া এসবের ভয়েই তো সে খুলনা ছেড়ে এতদূর আসলো
.
স্টেজ খালি পেয়ে আহনাফ গেলো মণিতাকে হলুদ ছোঁয়াতে।বাটিতে চার আঙ্গুল দিয়ে হলুদ নিয়ে মনিতার গালে লাগিয়ে দিলো সে তারপর স্টেজ ছেড়ে চলে আসলো
দিবার পাশের সিটটা খালি দেখে ওখানে এসেই বসেছে সে
আরিফ কখন থেকে লাইট ঠিক করার কাজ করছে
ঠিক করতে গিয়ে আরও বেমিল করে ফেললো
এবার লাইট গেলে আবার আসতে অনেক দেরি হয়ে যায়
শেষে পাকনামো করে কিসের একটা তার টান দিতেই পুরো ছাদের লাইট এক্কেবারে অফই হয়ে গেলো
আহনাফ দিবার পাশে বসাই ওর কানের ঝুমকোর আওয়াজ,হাতের চুড়ির আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে
অন্ধকার বলে দিবা নড়াচড়া করছে তাই
আহনাফ তার হাতটা বাড়িয়ে দিবার গাল আন্দাজ করে হলুদ ছুঁয়ে চলে গেলো
দিবা ছোঁয়াটা টের পেয়েছে ঠিক! কিন্তু পরে ভেবে নিলো ভুল ধারনা
কারণ আহনাফ এমনটা করবে না সে জানে
আহনাফ উঠে চলে যাওয়ার পাঁচ মিনিট পর আলো জ্বললো
দিবা পাশে চেয়ে আহনাফকে দেখতে পেলো না
আলো আবারও জ্বলছে আর নিভছে
খালামণি ওকে ডাকছে এসে মণিতাকে হলুদ লাগিয়ে দেওয়ার জন্যে
দিবা মিনিকে চেয়ারে রেখে গেলো হলুদ লাগাবে বলে
মণিতার পাশে বসতেই মণিতা হেসে বললো”কিরে!আগে ভাগে হলুদ লাগালি।আবিয়াতি মেয়েরা কিন্তু নিজের গায়ে আরেকজনের বিয়ের হলুদ লাগাতে পারে না”
.
-হলুদ?আমার গালে হলুদ আসবে কই থেকে…..
(তখন তাহলে সত্যি সত্যি আহনাফ ভাইয়া আমার গালে হাত লাগিয়েছিলো?)
.
দিবা সোজা আহনাফের সামনে এসে দাঁড়ালো।আহনাফ ফোনে নাহিদের সাথে কথা বলছিল।ওকে দেখে ফোন রেখে দিলো
.
-কিছু বলবা?
.
-আপনি আমার গালে হলুদ লাগিয়েছেন?
.
-আহনাফ দিবার দিকে এক নজর তাকিয়ে মুখটা ঘুরিয়ে বললো”হ্যাঁ।”
.
-আমি জানতে চাই “কেন?”
.
-কারণ আমার মন চেয়েছে তাই।লাগাতে পারি না?
.
-না পারেন না।একটা অবিবাহিত মেয়ের গালে একজন পুরুষ হলুদ লাগাতে পারে না
.
-আমি তোমার রিলেটিভ হই।সো আমি লাগাতেই পারি।আদনান লাগালে খুশি হতে?
.
-এখানে আদনান ভাইয়া আসছে কই থেকে।আমি জানতে চাচ্ছি হুট করে আপনি কেন হলুদ লাগালেন?
.
আহনাফ আবারও দিবার দিকে তাকিয়ে মুখটা একটু নিচু করে ফিসফিস করে বললো”আমার মন চেয়েছে তাই আর কোনো অবজেকশান দেখালে এই অন্ধকারে আবারও হলুদ লাগাতে ভয় পাব না আমি”
.
দিবা কপাল কুচঁকে চলে আসলো ওখান থেকে
গালে হাত দিয়ে মুছতে মুছতে চেয়ারে বসে পড়েছে সে।আজ সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তার।আদনানের প্রোপোজ করা,আবার উনার এরকম ব্যবহার!!যেগুলো ভাবিনি ঠিক সেগুলোই হচ্ছে।
.
দিবা আঁচল দিয়ে মুখ ঘষে পাশে কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে চেয়ে দেখলো আহনাফ আবার এসে বসেছে
দিবা একটু নড়েচড়ে বসলো।আলো জ্বলছে এখন ঠিকঠাক
আহনাফ মিনির গাল টেনে দিয়ে চুপ করে থাকলো
আহনাফ ওর গাল টেনেছে বলে সে দিবার কোল থেকে আহনাফের কোলে চলে এসেছে।
আহনাফ আর কি করবে নাক ডলে ওর গাল আবারও টিপে দিলো
.
দিবা বিরক্তি নিয়ে উঠে খালামণির পাশে এসে বসতে যেতেই ওখানে ফুফু এসে বসে পড়লেন
দিবা উপায় না পেয়ে পিছন ফিরে তাকালো।আহনাফ মুচকি মুচকি হাসছে।
.
একটা সিট ও খালি নেই।আরিফ আর আদনান আর কিছু ছেলে সহ গানে নাচবে তাই যে যার জায়গা দখল করে বসেছে
দিবা তাই আবার আগের জায়গাতেই এসে বসলো
.
-আমি তোমায় হলুদ লাগালাম।প্রতিশোধ হিসেবে তুমি যদি আমায় হলুদ লাগাও আমি কিছু মনে করবো না
.
-আমার এত আজাইরা কাজ নাই।
.
-ভালো।আদনান তোমায় কি বলছিল তখন?
.
-আপনি নাহয় সেটা উনার থেকেই জেনে নিয়েন।আমার কিছু মনে নেই।ভুলে গেছি
.
-ওহ।ভুলে গেছো?তাহলে আমি যে হলুদ লাগালাম ওটাও ভুলে যাও
.
-হলুদ লাগানো আর…
.
-আর?
.
-কিছু না।বাদ দেন।ভুলে গেছি সব।
.
আহনাফ পকেট থেকে সানগ্লাস নিয়ে সেটা পরে মিনিকে দিবার কাছে দিয়ে গেলো নাচে জয়েন হতে
.
কাল রাতে তারা বাসায় ফিরে যাবে।বিয়ে শেষ হলেই
.
গায়ে হলুদটা শেষ হলো মণিতার চাচাতো বোনদের নাচের মাধ্যমে
দিবা কোনো কিছুতেই পার্টিসিপেট করেনি
বাসায় ফিরে শাড়ীটা পাল্টে একটা নীল রঙের থ্রি পিস পরে নিলো।মেহমানরা সব চলে গেছে
খালামণি ডিনারের জন্য ডাকছেন।তখন বিরিয়ানি মেহমানরা খেলেও বাসার কেউ খায়নি
এখন খেতে বসেছে সবাই।দিবা চেয়ারে টেনে বসতেই ওর পাশে আহনাফ এসে বসলো আজ
দিবা তো অবাক।আহনাফ জীবনেও ওর পাশে বসে না
হঠাৎ আজ বসলো।অথচ সামনের সবগুলো সিট খালি এখনও
দিবা চুপচাপ খাওয়াতে মন দিয়েছে
আহনাফ বাম হাতটা টেবিলের উপর রেখে বারবার দিবার হাতের সাথে লাগাচ্ছে
দিবা ভ্রু কুঁচকালো।এখনও বাকিরা খেতে আসেনি
দিবা বললো”কি সমস্যা বলুন তো।এরকম খোঁচাচ্ছেন কেন?”
.
-তাহলে পা দিয়ে খোঁচাবো?
.
দিবা চোখ কপালে তুলে ফেলো আহনাফের কথা শুনে।তারপর ঢোক গিলে হাতটা আরেকটু খিঁচিয়ে খাবার খাওয়া শুরু করলো
আহনাফ মুচকি হাসছে আর খাবার খাচ্ছে
দিবা জলদি জলদি খাবার শেষ করে ছুটে চলে গেলো রুমের দিকে
আসার সময় মিনির জন্য বিরিয়ানির মাংস বেছে নিয়ে আসলো
মিনিকে রুমেই খাওয়াবে।ওখানে আর যাবে না
-লোকটার হলোটা কি?এতদিন আমার দিকে চোখ তুলেও তাকাতো না
সারাদিন হবু হবু করত আর সন্ধ্যা থেকে কিনা তার সম্পূর্ন রুপটাই পাল্টে গেলো?
মিনি?তুই খেয়াল করেছিস?তোকেও তো আজ কোলে নিলো।জীবনে এই প্রথম!!!কিরকম ঘটকা লাগছে তাই না?
আমারও তাই মনে হয়
কিন্তু উনি এমন কেন করছেন?প্রেমে টেমে পড়ছেন নাকি?না তা কেন হবে।আমাকে তো উনি পছন্দই করেন না।পছন্দ করার প্রশ্নই উঠে না
তাহলে এসবের কারণ কি।আদনান ভাইয়াকে না করে দেওয়ায় উনি আবার আহনাফ ভাইয়াকে বলেননি তো আমার সাথে এই টাইপ মজা করার জন্যে?
কিন্তু আহনাফ ভাইয়া তো এমন করার মানুষ না।তাহলে কি নিজ থেকেই এসব করছেন?হলুদ লাগানো,ইচ্ছে করে হাতে হাত লাগানো,মিনিকে আদর করা, কোলে নেওয়া।আমার মাথা কাজ করছে না
.
-কিরে দিবা মাথা ধরে রেখেছিস কেন?চা খাবি?
.
-খাওয়া দরকার।কিন্তু এখন তো কাজ আর কাজ রান্নাঘরে
.
-এখন খালি দেখলাম।বানাবি?আমি অনেক টায়ার্ড। নাহলে আমি বানাতাম
.
-আচ্ছা বসো।আমি বানিয়ে আনছি
.
দিবা রান্নাঘরে গেলো চা বানাতে।ডাইনিংয়ে আদনান,আরিফ,খালামণি আর বাকিরা ডিনার করছে
দিবা তার আর মণিতার জন্য চা বসাচ্ছে
আহনাফ সোফায় বসা ছিলো।দূর থেকে দিবাকে দেখা যায় সে চায়ের পাতিলে কাপ মেপে পানি নিচ্ছে
আহনাফ বললো”আমার জন্য ও এক কাপ”
.
দিবা চমকে ঘাঁড় ঘুরিয়ে আহনাফকে দেখে আবারও মুখটা লুকিয়ে ফেললো।ভয় লাগে এখন,উনার এরকম হাবভাবের সাথে পরিচিত না বলে হয়ত
আগে আর কি কি করবেন কে জানে।এই নিয়ে খোলসা করে কথা বলতে হবে উনার সাথে
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here