সবটা অন্যরকম♥
পর্ব_৪৭
Writer-Afnan Lara
.
-আচ্ছা আর জ্বালাতন করবো না।হাত ছাড়ুন
.
-তোমায় বিশ্বাস নাই।আমার ডিউটি এখনও দুই তিন ঘন্টা আছে
.
-তো ততক্ষণ আমার হাত আটকে রাখবেন নাকি?
.
-আচ্ছা ছেড়ে দিলাম।চুপ করে বসে থাকো।আস্তে আস্তে কাজের চাপ বাড়ছে আমার।মাথা ধরছে
.
দিবা হাত বাড়িয়ে আহনাফের চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো।আহনাফ মুচকি হেসে কাগজে লিখছে
দিবা ওর পিঠের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে
আহনাফ সেটা টের পেয়ে বেশি নড়ছে না
দিবাকে ঘুমাতে দিয়ে নিজের কাজটা সে করছে
.
রাত বারোটা বাজলো এবার।আহনাফের কাজ ও শেষ হলো
দিবা ঘুম থেকে উঠেছে আরও আগে।তারপর আবারও ঘুমিয়ে পড়েছে টেবিলে মাথা রেখে।মা দুবার ফোন করে ওর খবর নিয়েছিল
আহনাফ উঠে দাঁড়িয়ে দিবাকে কয়েকবার ডাকতেই ও জেগে গেলো।চোখ ডলতে ডলতে বললো”সকাল হয়ে গেছে?”
.
-নাহ!রাতই শেষ হলো না।চলো আমার ডিউটি শেষ।এবার বাসায় ফিরি
.
আহনাফ দিবার হাত ধরে হেঁটে চললো।দিবা এখনও ঘুমের ঘোরে
এলোমেলো করে হাঁটছে সে।আহনাফের সাথে বাইকে উঠে ওকে জড়িয়ে ধরে আবারও মাথাটা ওর পিঠের উপর রাখলো দিবা
.
-কাল ভার্সিটিতে গেলে যদি সাদাত স্যার আবারও জোরাজুরি করে?
.
-করলে করুক।আমি যাব না হুহ!
.
আহনাফের আজ অনেক টায়ার্ড ফিল হচ্ছে।এর বেশি কথা সে বলেনি।বাসায় ফেরার পর চুপচাপ নিজের বিছানায় এসে দুম করে শুয়ে পড়েছে সে।না ফ্রেশ হলো।আর না খেতে আসলো
দিবা ফ্রেশ হয়ে খাবার বেড়ে বসে আহনাফের অপেক্ষা করলো অনেকক্ষণ ধরে তাও ও আসছে না দেখে নিজে গেলো দেখতে
এসে দেখলো আহনাফ গভীর ঘুমে আছে এখন।দিবা এগিয়ে এসে ওর পায়ের জুতাটা খুলে নিচে রাখলো তারপর চলে যেতে নিতেই কি মনে করে ওর কাছে এসে বসলো।মাথায় হাত বুলিয়ে ভাবলো”পরিবারের জন্য কত কি করেন উনি।আজ উনার কাজ দেখে বুঝলাম একটা টাকাও কত পরিশ্রমের পর আসে।উনার এই কাজের বেতন যেমন খাটনিও তেমন।কোনো বিরক্তি না নিয়ে উনি কি সুন্দর সব কাজ করে গেলেন।
.
দিবা আহনাফের চুলে হাত বুলিয়ে ওর গায়ের থেকে জ্যাকেটটা খুলে এক পাশে রেখে লাইট অফ করে চলে গেলো রুম থেকে
নিজেও খেলো না।খাবার ফ্রিজে রেখে দিয়ে সে ঘুমাতে চলে আসলো নিজের রুমে
.
সকালে ঘুম থকে ওঠার পর আহনাফের মনে পড়ে গেলো কাল রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিলো সে।পেটের খুধায় টের পেলো না খাওয়ার কথা
পেটে হাত দিয়ে মুখ না ধুয়েই রুম থেকে বের হলো সে।দিবা ব্যস্ত হয়ে নাস্তা বানাচ্ছিল তখন।আহনাফকে দেখতে পেয়ে খুন্তি হাতে এগিয়ে এসে বললো”কি ব্যাপার?না ফ্রেশ হয়েই খেতে চলে আসলেন?জানি আপনার খিধে পেয়েছে।তাই বলে মুখ না ধুয়েই খাবেন?যান গিয়ে মুখ ধুয়ে আসুন”
.
আহনাফ ব্রু কুঁচকে বললো”আমার বাসা।এখানে কে এসে দেখবে যে আমি মুখ ধুই নাই।খুব খিধে পেয়েছে আমার
জলদি করে খাবার দাও তুমি”
.
-ছিঃ!কি খবিশ।গিয়ে মুখ ধুয়ে আসুন তা নাহলে দেবো না
.
আহনাফ মুচকি হেসে বললো”খবিশ?”
.
এগিয়ে যেতে যেতে সে আবারও বললো”মুখ না ধুয়ে তোমায় টাচ করলে কিছু হবে দিবা ম্যাডাম?থুরি স্যারের মেয়ে”
.
দিবা পিছিয়ে যেতে যেতে ফ্রিজের সাথে লেগে গিয়ে বললো”কককককেন টাচ করবেন?”
.
-মুখ না ধুয়ে খেতে আসছি বলে চেঁচাচ্ছো।তাই ভাবলাম এমন অবস্থায় তোমায় জড়িয়ে ধরলে তোমার কেমন লাগবে
.
-এই খবরদার।খুন্তি দিয়ে একটা বাড়ি দিয়ে দেবো
.
-দাও।বাড়ি খাওয়ার পর ও ধরবো
.
দিবা ফ্রিজের সাথে লেগে ছিল।আহনাফ এগিয়ে আসছে দেখে ছুটে রান্নাঘরের দিকে যাওয়া ধরতেই আহনাফ ওর হাতটা ধরে ফেললো
দিবা থেমে গেলো তাও পিছনে তাকালো না।আহনাফ কাছে এসে ফিসফিস করে বললো”থাক ধরলাম না।মুখ ধুয়ে আসি বরং”
.
কথাটা বলে আহনাফ চলে গেছে।দিবা উঁকি দিয়ে ওর চলে যাওয়া দেখে আবারও খুন্তি নিয়ে কাজে লেগে পড়ে গেলো
আহনাফ আজ আর জগিংয়ে গেলো না।ফ্রেশ হয়ে সোজা ডাইনিংয়ে এসে বসেছে।
খালামণি তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে এদিকে এসে আহনাফকে দেখে বললেন”কিরে?তুই এসময়ে খেতে বসেছিস?রাতে খাসনি?”
.
-না ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
.
দিবা খাবার এনে আহনাফের সামনে রেখে বললো”আমি ডাকতে গিয়ে দেখি ঘুমায় তাই আর উঠাইনি”
.
-ভালো করেছিস।ওরে কাঁচা ঘুম থেকে উঠাতে গেলে কোপাইতে আসে
.
দিবা ব্রু কুঁচকে বললো”তাই নাকি?”
.
আহনাফ চোরের মতন খেয়ে যাচ্ছে।।দিবা আহনাফের পাশে বসে বললো”খালামণি তুমিও বসো।একসাথে নাস্তা করি”
.
-এখন কটা বাজে জানিস?আটটা বাজে
এসময়ে আমি নাস্তা করি নাকি?তোরা খা।দুটোই মিলে তো মনে হয় কাল রাতে কিছু খাসনি।আমার ছেলে খায়নি বলে আরেকজনেও খায়নি।
.
দিবা মুচকি হাসছে নিচের দিকে তাকিয়ে।আহনাফ ভেংচি কেটে বললো”তুমি খাইলে কি আমি বকতাম তোমারে?”
.
দিবা নিচে দিয়ে পা নিয়ে আহনাফের পা কে খোঁচা দিয়ে বললো”বুঝো না কেন খাই নাই?”
.
খালামণি চলে গেছে ততক্ষণে।আহনাফ গালে হাত দিয়ে বললো”উফ বুঝলাম না!!!”
.
দিবা ফিক করে হেসে দিয়ে আহনাফের চুলগুলো টেনে দিয়ে বললো”জলদি করে খান।খিধায় পাগল করে দিচ্ছিলো আমায় আর এখন না খেয়ে শয়তানি করছে”
♣
মিনি দরজার কাছে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল জগিংয়ে যাবে বলে পরে আহনাফকে খেতে বসতে দেখে বুঝলো আজ আর সে যাবে না।কারণ আহনাফ জগিংয়ের পরেই খায় আগে খায় না কখনও
আহনাফ রুটি মুখে দিয়ে বললো”তুমি এত কিছু জানো তোমায় দেখলে বোঝা যায় না
এতদিন আমার থেকে দূরে দূরে থাকতে আর এখন পা দিয়ে খোঁচানো ও হয়?”
.
দিবা চোখ মেরে বললো “আরও কত কি দেখবেন আপনি”
.
-আর দরকার নাই।দেখছি আপনি কেমন।যান গিয়ে রেস্ট নেন।সকাল থেকে অনেক খাটনি গেছে আপনার।আমি মিনিকে নিয়ে জগিং করে আসি ততক্ষণে তারপর ভার্সিটিতে যাব
.
দিবা মাথা নাড়ালো।আহনাফ উঠে গিয়ে হাত ধুয়ে মিনিকে খুঁজে বের করলো সোফার কোণা থেকে।তারপর ওকে নিয়ে গেলো জগিং করতে
দিবা নিজের রুমে এসে বই একটা হাতে নিতেই মায়ের ফোন আসলো।সাথে সাথে রিসিভ করলো সে
মা বললেন”দিবা!তোর বাবা আমাকে বারবার ফোন করে ধমকাচ্ছে।
ও চায় তুই ওর কাছে গিয়ে থাক।আমায় ফোন দিচ্ছে,জসিমকে দিচ্ছে। সবার নাম্বার কই পেয়েছে জানি না
ইতির বিয়ে নিয়ে আমরা সবাই ব্যস্ত এর ভেতরে সাদাত আমায় আরও টেনসনে ফেলছে।কি করবো আমি বল!”
.
-আমি উনার কাছে গেলে উনি তো আর তোমায় ডিস্টার্ব করবে না তাই তো?
.
-জানি না আমি।কিছু জানি না
ভালো লাগছে না এসব। এখন মনে হয় সব দোষ শুধুই আমার।
.
-মা এভাবে বলো না।আমি বরং বাবার কাছে গিয়ে থাকবো
আমি চাই না আর তোমায় কষ্ট দিতে।এমনিতেও তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছো এই জীবনে
.
মা কেঁদেই চলেছেন কিছু বলতেও পারছেন না।দিবা লাইনটা কেটে চুপ করে বসে থাকলো।আহনাফ এটা শুনলে কেমন রিয়েক্ট করবে?উনাকে ঠাণ্ডা মাথায় বুঝাতে হবে।শুরুতে অনেক রাগ করবে আমি জানি।কিন্তু আমার কিছু করার নেই।আমি তো চাই না বাবার কাছে গিয়ে থাকতে। না গেলে তো বাবা মাকে বারবার কষ্ট দিবে একবার একজনকে ফোন দিয়ে দিয়ে।
যদি এ কারণে ইতির বিয়ে ভেঙ্গে যায় তাহলে জসিম বাবা তো মাকে বাসা থেকে বের করে দিবেন
তখন কি হবে?
.
আহনাফ জগিং করে এসে দেখলো দিবা আনমনা হয়ে সোফার কুশন পরিষ্কার করছে
মা নেই কোথাও তাই আহনাফ দিবাকে ধরে কাছে নিয়ে আসলো
হঠাৎ আহনাফকে দেখে দিবা চমকে উঠেছে
আহনাফ ওর মুখে হাত রেখে বললো”আমি!!!মুখটা ওমন রেখেছো কেন?কি হয়েছে?”
.
দিবা চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে।আহনাফ ওর থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো”কবে পাবো তোমায় নিজের করে?”
.
দিবা ঢোক গিলে আহনাফকে ছাড়িয়ে একটু পিছিয়ে গেলো।মুখ দিয়ে বলতেই পারছে না যে সে আর এই বাসায় থাকবে না।কিছুতেই সাহস জোগাতে পারছে না
আহনাফ আরও কিছু বলতে চাইলো কিন্তু মা এসে যাওয়ায় আর বলতে পারলো না
মা এসে বললেন”আজ বিকালে আহনাফের নানা নানু আসবেন
দিবার কথা শুনে উনারা আসছেন ওকে দেখতে।ওরা যেন ভার্সিটি থেকে জলদি আসে
.
দিবা মাথা নাড়িয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।আহনাফের দিকে একটিবারও তাকালো না
আহনাফের মনে ঘটকা লেগেছে ঠিক সেই কারণেই
দিবাকে কেমন উদাস উদাস লাগছিলো কিছু তো একটা হয়েছে
.
ভার্সিটিতে আসার পথেও দিবা আহনাফের সাথে কোনো কথা বলেনি।আহনাফ ভেবেছে বাবার কথা নিয়ে ডিপ্রেসড্ হয়তবা
ক্লাসে সাদাত স্যার ঢুকেই দিবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন
দিবা নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।স্যার পড়ানো শেষ করে যাওয়ার সময় দিবাকে বললেন লাইব্রেরীতে আসতে
দিবা চুপচাপ সেখানে গেলো।উনি কিছু বলার আগেই সে বলে দিলো সে কাল চলে আসবে বাসায়
সাদাত তো মহাখুশি দিবার মুখে এমন কথা শুনে।দিবাকে জড়িয়ে ধরতে আসতেই দিবা সরে দাঁড়ালো।হাত দিয়ে থামিয়ে বললো”আপনার বাসায় গিয়ে থাকবো তার মানে এই না যে আপনাকে আমি মেনে নিয়েছি।আপনি আমার মাকে বিরক্ত করছেন বলেই আমি এই সিদ্ধান্তটা নিয়েছি বাধ্য হয়েই।সুতরাং এরকম কেয়ার করার নাটক দেখাতে হবে না
আমার মাকে চিট করার পরেও আপনি এখন এই সময়ে এসেও তাকে কষ্ট দিয়ে যাচ্ছেন।আপনার কি খারাপ লাগে না?একদিন ও কি তাকে ভালোবাসেননি আপনি?
ভালোবাসার মানুষকে এভাবে কষ্ট দেয় কেউ?”
.
-আমায় ভুল ভাবছো দিবা
.
-যা সত্যি তার সবটা জানি আমি।সুতরাং সাফায় দিতে হবে না
.
দিবা চলে আসলো ওখান থেকে।করিডোর দিয়ে ক্লাসে ফেরার সময় ক্যামপাসের দিকে এক নজর তাকাতেই আহনাফকে দেখতে পেলো সে
আহনাফ ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল।মুখে হাসি নিয়ে চোখ মারলো সে
দিবা থমকে গিয়ে আহনাফের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো।আহনাফের সাথে থাকতে থাকতে এখন এমন সিচুয়েশন হয়েছে যে কাল থেকে সবাইকে ছাড়া কি করে একা থাকবে তাই ভেবে খুব খারাপ লাগে।বিশেষ করে আহনাফকে বেশি মনে পড়বে।
.
মন খারাপ করে দিবা ক্লাসে ফিরে আসলো।ছুটি হওয়ার পর যখন সে আহনাফের বাইকের কাছে গেলো উঠবে বলে তখন আহনাফ ওকে থামিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে এনে বললো”তোমার কি হয়েছে বলোতো?সকালেও তো ঠিক ছিলে।আমি জগিং থেকে আসার পরেই খেয়াল করছি তুমি কেমন উদাস হয়ে গেছো।কি হয়েছে আমায় বলো??আমি ঠিক করতে পারি কিনা দেখছি”
.
-নাহ কিছু হয়নি।
.
-নিশ্চয় হয়েছে।বলো আমায়
.
-বাসায় গিয়ে বলি?
.
-ঠিক আছে
.
আহনাফ বাইক স্টার্ট করলো
দিবা আজ ঘাঁড়ে হাত না রেখে আহনাফের বুকের সামনে দিয়ে হাত নিয়ে জড়িয়ে ধরলো ওকে।তারপর মাথাটা ঠেকিয়ে ধরলো পিঠের সাথে
.
আহনাফ বাসায় ঢুকার পর থেকে যেই কাজ করছে দিবার দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকাচ্ছে কারণ কথা ছিল দিবা বাসায় এসে ওকে সবটা জানাবে
দিবা বারবার আহনাফের চোখ এড়িয়ে নিজের কাজ করছে
শেষে আহনাফ রাগ করে আর জানতে চাইলো না
নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে ফেলেছে সে।বুঝাতে চাইলো দিবার এমন আচরণে তার রাগ হয়েছে
চলবে♥