সবটা অন্যরকম♥
পর্ব_৪৮
Writer-Afnan Lara
.
দিবা এবার ঠিক করে নিলো আহনাফকে সে সবটা জানাবে।সাহস নিয়ে এগিয়ে যাওয়া ধরতেই কলিং বেল বেজে উঠলো সেসময়।নানা নানু এসেছেন মনে হয়
দিবা গিয়ে আগে দরজাটা খুলে দিলো।তারা দুজনেই দিবাকে দেখে বুঝে গেছেন এই হয়ত তাদের নাতিন
দুজনে এগিয়ে এসে আগে ওকে জড়িয়ে ধরলো
দিবা চুপ করে আছে।এরপর হাত বাড়িয়ে নিজে থেকেই ওদের ধরলো সে
খালামণি রুম থেকে বাহিরে বের হয়ে ওদের দেখতে পেয়ে হেসে এগিয়ে আসলেন
.
দিবাকে ছেড়ে উানারা সোফায় এসে বসলেন দুজনে।দিবা সালাম দিয়ে এগিয়ে এসে দাঁড়ালো।খালামণি উনাদের জড়িয়ে ধরে নিজেও সালাম দিলেন।তারপর আরিফ আর আহনাফকে ডাকলেন আসার জন্য
খালু উনাদের ব্যাগ নিয়ে আসছেন নিচ থেকে।নানা নানুর কথা শুনে আহনাফ তার রুমের দরজা খুলে বের হলো
এসে সালাম করে তাদের পাশে বসলো সে।দিবার দিকে তাকায়নি এখনও।দিবা ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল। নানু দিবার হাত ধরে তাদের মাঝখানে বসিয়ে দিয়ে বললেন”এতদিন এর কথা মৌসুমী আমাদের জানায়নি।এর তো কোনো দোষ ছিল না”
.
-ঠিক বলছো মা।মৌসুমী বেশি জেদ ধরে আছে।ওর জেদের কারণে দিবা বহুত কষ্ট সহ্য করেছে এখনও করছে।সাদাত তো এখন বলে বসেছে সে দিবাকে নিয়ে যাবেই যাবে।দিবা বাধ্য হয়ে রাজি হয়েছে কারণ সাদাত মৌসুমীকে জ্বালানো শুরু করে দিয়েছে এবার
ইতির বিয়ের কথা চলছে তো তাই রিস্ক নিতে চাইলো না মৌসুমী
মৌসুমীর কথাতেই দিবা যাবে বলে ঠিক করেছে
.
দিবার চলে যাওয়ার কথা শুনে আহনাফ চোখ তুলে দিবার দিকে তাকালো
দিবা ভয়ার্ত চোখে ওকে দেখছে।আহনাফ উঠে সোজা নিজের রুমে চলে গেছে হনহনিয়ে
দিবা দু মিনিট এখানে থেকে সেও ছুটে গেলে ওদিকে
খালামণি সব হিস্ট্রি বলে যাচ্ছেন নানা নানুকে
আহনাফ তার বারান্দায় এসে গ্রিলে হাত রেখে চুপ করে আছে
দিবা ওর কাছে এসে বললো”আমার কিছু করার ছিল না।মা কেঁদে ফেলছিল এসব বলতে গিয়ে।তাকে বাবা এত ডিস্টার্ব করছে যে আমি না গেলে আরও খারাপের দিকে যাবে।তার উপর ইতির বিয়ে যদি ভেঙ্গে যায়?”
.
আহনাফ গ্রিল মুঠো করে ধরে রাখলো এবার
দিবা এক কদম এগিয়ে আহনাফকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো তারপর আস্তে করে বললো”দূরত্ব হবে না এটা।ভার্সিটিতে প্রতিদিন আমাদের দেখা হবে”
.
আহনাফ পিছন ফিরে দিবার মুখের দিকে চেয়ে রইলো।দিবা আহনাফের চুলে হাত বুলিয়ে বললো”আমি জানি আপনার কষ্ট…”
আহনাফ ওকে কথা বলার সুযোগ দিল না।শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ওকে।দিবা ওর ঘাঁড়ে হাত রেখে বললো”আপনি এরকম করলে আমার যেতে অনেক কষ্ট হবে।বাচ্চাদের মতন বিহেভ কেন করছেন বলুন তে?আপনি কি কাঁদছেন।দেখি মুখ দেখান আমায়”
.
আহনাফ মুখটা লুকিয়ে রেখেছে দিবার ওড়নার সাথে
দিবা ওকে সরাতে গিয়েও পারছে না।বেশ কিছুক্ষণ পর আহনাফ ওকে ছাড়লো
চোখমুখ লাল হয়ে আছে।কান্না আসার আগ মূহুর্ত।আহনাফ ওকে কিছু না বলেই বিছানার উপর এসে বসলো এবার
দিবা বারান্দা থেকে এসে ওর পাশে বসে বললো”সব ঠিক হয়ে যাবে একদিন”
.
-কোনদিন?
.
-যেদিন আপনি আমায় বিয়ে করে আনবেন সেদিন।তবে তার মানে এই না যে আমি দূরে কাল চলে যাচ্ছি আর আপনি পরশু বিয়ে করতে আসবেন।এখন যে সিচুয়েশন চলছে বাবা রাগের মাথায় বিয়েতে না ও বলে দিতে পারে
.
-তো।তোমার বাবা না বললে তুমি আমায় বিয়ে করবে না?
.
-সেটা নয়।এতদিন তিনি আমার জীবনের কোনো সিদ্ধান্ত নেননি এখন এসে আমার জীবনের জরুরি সিদ্ধান্তে আগ বাড়াবেন তা তো আমি হতে দিব না।আমি আপনাকে পরে এসব ভাবতে বললাম কারণ এরপরে দেখবেন পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাওয়ার পর আমাদের বিয়েতে কেনো বাধা আসবে না।
কি?বিয়ে করবেন তো নাকি অন্য ভাবনা চিন্তা আছে?
.
আহনাফ দিবার মুখ টিপে ধরে বললো”আমায় বিয়ে না করলে তুলে নিয়ে আসবো তোমায়”
.
-তুলে আনতে হবে না
আমি নিজেই হেঁটে আসতে পারবো।
.
খালামণি দিবাকে ডাকলেন তখন।দিবা সাথে সাথে উঠে চলে গেলো তার কাছে
আহনাফ মুখটা ফ্যাকাসে করে পর্দার দিকে তাকিয়ে আছে
পর্দা ফুলে আছে তার মানে মিনি ওখানে।ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে পর্দা সরিয়ে মিনিকে কোলে তুলে নিলো সে।
দিবার সাথে সাথে মিনিটাও চলে যাবে।আরও খারাপ লাগছে।বাসাটা ফাঁকা হয়ে যাবে
মিনি কিছুই বুঝছে না আহনাফ কেন তাকে কোলে নিলো
.
দিবা চা নাস্তা বানাতে রান্নাঘরে গেছে।খালামণি মাকে ফোন করছেন কারণ নানা নানু তার সাথে কথা বলতে চাইছেন
আহনাফ মিনিকে নিয়ে সোজা রান্নাঘরের দিকে গেলো।মিনিকে নিচে ছেড়ে দিয়ে দিবার পাশে তাকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো সে
দিবা চুপচাপ চা বসিয়ে নুডুলসের প্যাকেট নিচ্ছে নুডুলস বানাবে বলে।আহনাফ দিবাকে দেখছে মন দিয়ে
দিবার এখানে না থাকা তাকে অনেক বেশি আঘাত করবে তা সে বেশ বুঝতে পারছে।চেয়েও কিছু করতে পারছে না সে
দিবা ওর সামনে সব কাজ করে খাবার নিয়ে আবার নানা নানুর কাছে গেলো।তারা রাত আটটা পর্যন্ত ছিলেন তারপর চলে গেলেন ডাক্তার দেখাতে।ঢাকায় আসছেন যখন ডাক্তার দেখিয়েই যাবেন বলে ঠিক করলেন
আরিফ উনাদের নিয়ে হসপিটালে গেছে
বাসায় আহনাফ আছে।আজ ডিউটিতে যায়নি।মা বুঝেছে ও কেন যায়নি।দিবা কাল চলে যাবে তাই হয়ত
দিবা তার রুমে ব্যাগ গুছাচ্ছে এক এক করে
মিনি ফুল গাছের ঢাল নিয়ে যুদ্ধ করছে বারান্দায়
আহনাফ তার বারান্দা থেকে অনেকক্ষণ ধরে মিনিকে দেখলো তারপর যখন টের পেলো দিবা আসছে না এদিকে তখন নিজেই গেলো দিবার রুমের দিকে
দিবা তখন ওড়না গুছিয়ে নিচ্ছিলো।আহনাফ ওর রুমে ঢুকার সময় রুমের লাইটটা অফ করে দিয়েছে
দিবা চমকে সামনে তাকিয়ে কিছুই দেখতে পেলো না অন্ধকারের কারণে।
দু সেকেন্ডের মাঝেই নিজের হাতে কারোর হাতের স্পর্শ পেলো সে
স্পর্শটা আহনাফের তা সে বেশ বুঝেছে।আহনাফ হাতটা ধরে ওর দিকে এগোচ্ছে আর দিবা পিছিয়ে যাচ্ছে।বারান্দায় যাওয়ার দরজাটা অবদি এসে পাশের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো দিবা
আহনাফ অন্ধাকারে ওর মুখে হাত দিয়ে বললো”ছুঁতে পারি?”
.
দিবা বড় বড় করে শ্বাস নিতে নিতে বললো”কি রকম?”
.
-অন্যরকম
.
-অন্যরকম মানে?
.
-আমার ছোঁয়াতে সবটা অন্যরকম মনে হবে তোমার।
.
কথা শেষ করে আহনাফ তার হাত দিয়ে দিবার চুলে বিলি কেটে হাতটা নিয়ে দিবার হাতের উপর দিয়ে স্ক্রল করে হাতের কব্জি পর্যন্ত এসে থামিয়ে ফেললো তারপর বললো”ফিল হয়?”
.
-খালামণি এসে পড়বে।
.
আহনাফ দিবার হাতে থাকা ওড়নাটা মুঠো করে ধরে টান দেওয়ায় দিবা ওর কাছে চলে আসলো আরও।
দিবা ওড়নাটা সম্পূর্ন ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো বারান্দায়
আহনাফ সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে এখনও। দিবার কাছে আসছে না সে
সামনের দালানগুলো থেকে আসা আলোয় দিবাকে স্পষ্ট দেখা যায়।আহনাফ চলে যেতে গিয়েও পারলো না।
পা বাড়িয়ে দিবার কাছে আসলো সে।দিবার পাশ দিয়ে হাতটা গ্রিলের উপর রেখে ওর পিঠে মাথাটা ঠেকিয়ে বললো”যেও না”
.
দিবা ঘাঁড় ঘুরাতেই আহনাফের মুখের সাথে তার মুখটা লেগে গেলো
ঢোক গিলে সে বললো”আমার হাতে আর কোনো উপায় নেই।আপনি বলুন আছে কি?এভাবে কেন আমায় মায়ায় ফেলছেন?”
.
আহনাফ দিবার হাতটা শক্ত করে ধরে বললো”কেন এসেছিলে আমার বাসায়?মায়া তো তুমি লাগাইছো!তোমার কাছে এসব সহজ হতে পারে কিন্তু আমার কাছে সহজ না।আমি পারছি না সহ্য করতে।তুমি এখনও যাও নাই তাও আমার এত কষ্ট হচ্ছে, তুমি চলে গেলে কি হবে ভাবতে পারছো?”
.
-আমার ও একই রকম ভাবে খারাপ লাগছে।তফাৎ হলো আমি আপনার মতন প্রকাশ করতপ পারি না।পারলে আপনি বুঝতেন আমি কতটা কষ্ট পাচ্ছি
.
-আমি কিছু জানি না।আমি সাদাত স্যারের সাথে কথা বলবো তোমায় নিয়ে।যা হবার হবে
.
-না আপনি বলবেন না।
.
-তুমি চুপ থাকো।গিয়ে থাকো বাবার কাছে।বাকিটা যা দেখার আমি দেখবো।আমার ফিলিংসের কেনো দাম নাই
.
কথাটা বলে আহনাফ বিছানায় এসে বসলো
দিবা ও ওর পাশে বসে হাঁটুতে হাত রেখে বললো”দাম আছে বলেই… ”
.
-বলেই?কি করছো তুমি.?দাম যে আছে তার জন্য কি করছো বা বলছো যে আমি ভাবতাম তোমার কাছে আমার ফিলিংসের দাম আছে?
.
দিবা তার ঠোঁটজোড়া আহনাফের গলার সাথে লাগিয়ে মুচকি হাসলো। কিছুই বললো না।
আহনাফের রাগ সব যেন নিমিষেই উধাও।উঠে দাঁড়িয়ে সে দিবার দিকে না তাকিয়েই বললো”আমি বলি নাই এভাবে আমায় থামাও।আমার রাগ ভাঙ্গাও।আমি জানতে চেয়েছি দাম আছে কিনা।জানা হয়ে গেছে।যাও এখনই যাও বাপের বাড়ি”
আহনাফ হনহনিয়ে চলে গেলো নিজের রুমের দিকে।দিবা হেসে ফেললো তারপর এগিয়ে এসে রুমের লাইটটা অন করলো সে।
মিনি বিছানার মাঝখানে এসে বসেছিল আরও আগে।অন্ধকারে আহনাফ দিবার ভালোবাসার মূহুর্ত দেখছিল যদিও আগামাথা কিছুই বোঝেনি সে
সে ভাবছে আহনাফ কেন তারে কোলে নেয় নাই।দিবাও তো নেয় নাই
এই ভেবে অভিমান করে তাকলো সে।আজ মাছের কাটা কম খেয়ে বুঝিয়ে দেবে তার অভিমান হয়েছে
.
আহনাফ গাল ফুলিয়ে সোফায় বসে একবার এক চ্যানেল পাল্টাচ্ছে।দিবা ব্যাগ গুছানো শেষ করে উঁকি দিয়ে আহনাফকে দেখতে গেলো ওর রুমের দিকে
রুম ফাঁকা দেখে দিবা কোমড়ে হাত দিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে এখন
আহনাফ সোফায় বসে থেকে বললো”আমি এখানে”
.
দিবা চমকে পিছনে তাকিয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো”ঐ আসলে বলার ছিল ডিনার করবেন?খাবার বাড়ি?”
.
-নাহ।খিধে নেই আমার।যেটার খিধে ছিল সেটা বিকাল থেকে যাই যাই করে একেবারে কালকেই চলে যাবে
.
দিবা ব্রু কুঁচকে চলে গেলো খালামণির রুমের দিকে।খালামণির ও মন খারাপ দিবা চলে যাবে বলে।ওদিকে সাদাত স্যার বাসা সাজাচ্ছেন দিবা আসবে বলে
বাসায় এখন তার মা আর একজন কাজের বুয়া আছেন।বাসাটা পরিষ্কার করে গাছগাছালিতে পানি দিয়ে সব ঠিকঠাক করে ফেললেন তিনি।কাল তার মেয়ে আসবে এই বাড়িতে তার কতই না আনন্দ হচ্ছে।তার আনন্দ দেখে মা অনেক খুশি হলেন ভাবলেন অতীতে এদের মেনে নিলে হয়ত এতদিন এত কষ্ট ভোগ করতে হতো না
.
আহনাফ আজ ডিনার করতে আসেনি।তখন টিভি দেখা শেষ করে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়েছে লাইট অফ করে।
দিবা খালামণি, আরিফ আর খালুকে খাবার বেড়ে দিয়ে বললো সে আহনাফের সাথে পরে খাবে।তাই সবাই খেয়ে যার যার রুমে চলেও গেছে।
দিবা আহনাফের রুমের কাছে এসে দরজাটা একটু ফাঁক করে উঁকি দিলো।আহনাফ শুয়ে থেকে এদিকেই তাকিয়ে ছিল
দিবাকে দেখে বললো”কি হয়েছে?”
.
-খাবেন না?আমিও খাইনি কিন্তু।
.
-আমার শরীর ভালো না।জ্বর জ্বর লাগে।তুমি খেয়ে নাও
.
জ্বরের কথা শুনে দিবা মুখ বাঁকিয়ে বললো”যত বাহানা”
.
খাবার এক প্লেট হাতে নিয়ে আহনাফের রুমে ঢুকলো সে।লাইটটা জ্বালিয়ে দেখলো ফ্যান অফ তার উপর এই গরমে আহনাফ চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে।দিবা প্লেটটা টেবিলের উপর রেখে আহনাফের কাছে এসে ওর কপালে হাত রাখলো
-সত্যি সত্যি জ্বর
.
আহনাফ মুখটা চাদর দিয়ে ঢেকে বললো”নায়িকাদের মতন ভেজা কাপড় কপালে দিয়ে জ্বর কমাতে এসো না।ধরে মাইর দিব”
.
-ভালো করতে গেলে মারবেন ক্যান?
.
-মেজাজ খারাপ তাই।আমার এতই মেজাজ খারাপ যে আমি জ্বরকেও পাত্তা দিচ্ছি না আপাতত
চলবে♥