সিনিয়র খালাতো বোন পর্ব-১১

0
1360

#সিনিয়র_খালাতো_বোন
#part_11
#writer_srabon

উদ্দেশ্য আমার সেই পুরনো কলেজ ক্যাম্পাস। কলেজ ক্যাম্পাসের আশেপাশে অনেক রকমের দোকান আছে। রনির আবদার সে নাকি ওখানে গিয়ে ফুচকা খাবে।
আর আমিও অনেক দিন ধরে কাছ থেকে কলেজ ক্যাম্পাসটা দেখি না। তাই ভাবলাম আজকে ওখান থেকেই ঘুরে আসি।।।

যেইভাব সেই কাজ। কিছু সময় পরে আমরা আবার সেই পুরনো কলেজ ক্যাম্পাসে চলে এলাম।
শিমলা বাইক থেকে নেমে রনিকে কোলে তুলে নিল।
আমিও বাইক এক সাইডে রেখে শিমলা আর রনির কাছে চলে এলাম।।

— তো মি. রনি সাহেব,,,এইবার বলুন আপনি কি খাবেন..? (আমি)

— এত গুলো চকলেট, ফুচকা, আইসক্রিম আরো অনেক কিছু খাবো… (রনি)

— ওহ মাই গড…বাবা এই টুকু পেটে এত গুলো জিনিস ধরবে..?(আমি হেসে)

— হুম..! চাচ্চু তুমি কথা না বলে ওইদিকে চলো ! (রনি)

— আচ্ছা চলো তাহলে…!

এরপর রনি শিমলার কোল থেকে নেমে আমাদের সাথে হাটতে লাগল। এর মাঝে শিমলা একটা কথাও বলে নাই। হয়তো কথা বলার সাহস পায় নি। শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছে।।

ফুচকাওয়ালা মামার কাছে এসে ফুচকা বানাতে বলব তখনই আমার নাম ধরে কেউ ডাক দিলো..! আমি পিছনে ফিরে তাকালাম…!

— শ্রাবন…. ওই তুমি শ্রাবন না…? (একটা মেয়ে)

আমি পিছনে ফিরে তাকিয়ে একটু অবাক হলাম। তবে একটা লম্বা হাসি দিয়ে বললাম,,

— হুম আপু,,আমিই শ্রাবন। এই কয়দিনেই ভুলে গেলে..?(আমি)

[আমাদের পাশের বাসার একটা বড় আপু। আমার সাথে বেশ ভালোই ভাব ছিল। অনেক মজা করত আপু আমার সাথে। ]

— আজব তো। তোমাকে ভুলে যাব.? তাও আবার এত সহজে..?(আপু)

— ভুলে না গেলে কি আর কেউ, তুমি তুমি বলে ডাকে.? আগে তো তুই বলেই ডাকতে…(আমি)

— শ্রাবন তোর সাথে আমি কোন দিনও কথায় পেরেছি বল.? এত দিন কোথায় ছিলি..? আর হটাৎ করে কোথা থেকেই বা এলি.? (আপু)

— আপু সে অনেক বড় কাহিনি। অন্য কোন সময় বলব। (আমি)

— আচ্ছা..!তোর ইচ্ছে।

শিমলা চুপচাপ আমাদের কথা শুনে যাচ্ছে। কোন কিছুই বলতেছে না। শুধু চোখ দিয়ে দেখেই যাচ্ছে।।

— আচ্ছা চলো,,আপু আজকে আমি তোমাকে ফুচকার ট্রিট দিব। (আমি)

— ব্বাহ,,তুই দেখি আজকাল অনেক দয়াশীল হয়েছিস। যাক ভালোই।(আপু)

— মামা,,,তিন প্লেট ফুচকা দেন। দুইটায় বেশি করে ঝাল আর একটায় কম। (আমি)

— চাচ্চু তিনটা কেন..? আমরা তো মোট চারজন। (রনি)

— আমি এই সব হাবিজাবি খাই না। (আমি)

— শ্রাবন আমি সত্যিই অবাকের চরম পর্যায়ে চলে যাচ্ছি। (আপু)

— হাহাহাহাহা,,আরো অনেক কিছু দেখতে বাকি আছে। আপু তোমরা খেতে থাকো। আমি একটু কলেজের ভিতরটা দেখে আসি। অনেক দিন দেখি না। (আমি)

— আচ্ছা…!(আপু)

এরপর আমি ফুচকার বিল পেইড করে কলেজের মেইন গেটের সামনে চলে এলাম।
বড় করে কলেজের নাম লেখা আছে। আমি সেইটা একবার দেখে একটা হাসি দিয়ে ভিতরে ঢুকে পরলাম।

এই কয়েক বছরে তেমন কোন পরিবর্তন না ঘটলেও অনেক কিছু নতুন দেখতেছি। বেশ কয়েকটি বসার বেঞ্চ আছে। সাথে ছোট ছোট বকুল গাছ। আর তার নিচে বসে আছে বেশ কিছু ছেলেমেয়ে। এরাই হয়তো কলেজের স্টুডেন্ট।

আমি চারিদিকে ঘুরে দেখতে লাগলাম। কলেজ ক্যাম্পাস ঘুরে অসিমের কথা খুব মনে পরে গেল।
হুম সেই অসিম। যার কারনে আমি আমার সব কিছু হারিয়েছি।

যাই হোক জীবন থেকে যেটা চলে গেছে। সেইটা মনে না রাখাটাই বেটার।।
চারিদিকে শুধু অপরিচিত লোকজন। কাউকেই চিনি না।
হাটতে হাটতে কলেজের পশ্চিম পাশের পুকুর পারে চলে এলাম।
পুকুরের পাশেই দুইটা বসার জন্য বেঞ্চ ছিল। এখনো আছে।
সব বন্ধুরা মিলে কতই না আড্ডা দিয়েছি এইখানে বসে।
তাই না বসে থাকতে পারলাম না।

বেশ কিছুক্ষণ পরে বসা থেকে উঠে কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে যাব বলে ঠিক করলাম। আর তখনই আমার চোখ চলে গেল একটা চায়ের দোকানের দিকে।
এই সেই চায়ের দোকানটা। যেখানের চা আর বিস্কুট না খেলে আমার দিনটাই শুরু হতো না।
মামাটাও এখনো একই আছে।

মনে মনে ভাবলাম আমার কি ওখানে যাওয়া উচিত..? আর মামা কি আমাকে দেখলে চিনতে পারবে.?
আস্তে আস্তে দোকানের সামনে চলে এলাম।

— মামা,,,এক কাপ চা। করা করে চিনি একটু…..(আমাকে থামিয়ে দিয়ে মামা বলল…)

— করা করে চিনি একটু বেশি, হালকা লেবুর রস আর এক টুকরো আঁদা তাই তো নাকি..?(মামা হেসে)

আমি প্রচুর অবাক হয়ে গেলাম।
এর মানে মামা আমাকে চিনতে পেরে গেছে। আমি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললাম

— মনে আছে এখনো..?(আমি)

— তোমাকে এত সহজে ভুলে যাব.? তা হটাৎ করে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে.? আর আজকে হটাৎ করে কোথা থেকে..?

— সে অনেক কথা। অন্য কোন একদিন বলব। আপনি বরং তাড়াতাড়ি চা বানিয়ে দিন। (আমি)

চায়ের কাপে চুমুক দিতেই সেই একটা ফিলিংস চলে এলো।
এক হাত দিয়ে মোবাইল চালাচ্ছিলাম। আর অন্য হাত দিয়ে চা খাচ্ছিলাম।

— কি একা একা চা খাওয়া হচ্ছে..?(শিমলা)

আমি একটু অবাক হয়ে সামনে তাকালাম,, সামনে তাকিয়ে দেখি শিমলা।
আমার পাশে বসে পরল। আমি একটু সরে বসলাম। আর বললাম,,,

— একি আপনি এখানে..? তাহলে রনি কোথায়..?(আমি)

— আপুর কাছে আছে চিন্তার কোন কারন নেই। (শিমলা)

আমি আবার নিজের কাজে মন দিলাম।
বেশ কিছু সময় চুপ থাকার পরে শিমলা বলে উঠল,,

— আমি কিন্তু আমার উত্তর পেলাম না।।।(শিমলা)

— আসলে বলুন তো কি? একা থাকতে থাকতে অভ্যাস হয়ে গেছে। এখন আর কারো কথা মনে থাকে না।।
মামা আরেক কাপ চা। হালকা করে চিনি পরিমাণ মতো। (আমি)

— আচ্ছা,,একটু অপেক্ষা করো।।(মামা)

— তোমার তাহলে মনে আছে। আমি কেমন চা পছন্দ করতাম..?(শিমলা)

— কিছু কিছু জিনিস চাইলেই ভুলে যাওয়া যায় না। সেই জিনিস গুলো আজীবন আমাদের মনে থাকে। (আমি)

— কথার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আজকাল অনেক রহস্যময় কথা বলতেছ। (শিমলা)

— আমার জীবনটাই রহস্যময়। (আমি হেসে)

শিমলা চায়ের কাপে মুখ দিয়ে বলল,,

— আমার সম্পর্কে কিছু জানতে চাইবে না.??(শিমলা)

— সেই অধিকারটা আমার নেই। আর আমি একটা জিনিস ভিষণ মেনে চলি,,সেটা হচ্ছে নিজের অধিকারের বাইরে কিছুই করি না। (আমি)

মুহুর্তেই শিমলার মুখ কালো হয়ে গেল।

আমি চা শেষ করে উঠতে যাব তখনই কোথা থেকে একটা ছেলে এসে আমার পা জরিয়ে ধরল। আমি প্রচন্ড অবাক গয়ে গেলাম।
আমি ছেলেটাকে টেনে উপরে তুললাম। কিন্তু মুখটা দেখে আমি একটু অবাক হলাম। এটা তো অসীম।।

— ভাই,,আমাকে মাপ করে দিন। বিশ্বাস করেন ভাই আমি ওই দিন ইচ্ছে করে ছেলেটাকে…. (অসীম)

— ব্যাস আর কিছু বলার দরকার নেই। (আমি)

— ভাই,,,একবার আমার কথাটা শুনুন প্লিজ ভাই একবার (অসীম)

— কি শুনব আমি.?? কি বলবি আমাকে বল..? আর কি বাকি আছে আমার শুনতে.? যা হওয়ার তা তো অলরেডি হয়ে গেছে। (আমি একটু জোরে বললাম)

আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি আসিমের সামনে থেকে উঠে এসে মামাকে চায়ের বিল দিলাম।।

— আপনি গেলে আসুন। আমি যাচ্ছি..!(আমি শিমলাকে উদ্দেশ্য করে বললাম)

— হুম,,,কিন্তু ছেলেটা এমন করতেছে কেন.?(শিমলা)

— ভাই,,আপনাকে আজকে আমার কথা শুনতেই হবে। এই চার বছর অনেক জায়গায় খুজেছি আছি। কিন্তু কোন লাভ হয় নি। আর আজকে রিয়াদ যখন ফোন করে বলল যে আপনি কলেজ ক্যাম্পাসে এসেছেন। সাথে সাথেই আমি ছুটে চলে এসেছি। ভাই প্লিজ…!(আসীম)

আমি কিছু সময় ভাবলাম, এরপর আসীমকে বললাম,,

— আচ্ছা,,বল তাহলে। (আমি)

— ভাই আপনার কথা অনুযায়ী…(আমি অসীমকে থামিয়ে)

— এটা একটা পার্সোনাল কথা। আপনি রনির কাছে গেলে খুশি হবো। (আমি)

শিমলা কিছু না বলে আমার দিকে একবার তাকিয়ে চলে গেল।।

— ভাইয়া ভাবিকে পাঠিয়ে দিলেন কেন..? ভাবির সবটা জানা দরকার যে সম্পূর্ণ ভুলটা আমার। আপনি সম্পূর্ণ নির্দোষ। (আসীম)

— এখন শুনে কি লাভ..? তোর যদি এগুলোই বলার থাকে তাহলে আমি যাই। (আমি)

— না না ভাই,,আমি বলতেছি…(অসীম)

এরপর অসীম বলতে শুরু করে,,

— ভাই আপনার কথা মতো আমি আর কয়েকটা ছেলেপেলে মিলে সেই দিন ছেলেটার(যার সাথে শিমলার বিয়ে ঠিক হয়েছিল) রাস্তা আটকাই। এরপর ওকে সরাসরি বলে দেই যেন ভাবির থেকে দূরে সরে যায়। আর আপনি যে ওকে ভালোবাসেন সেটাও বলি। প্রথমে ছেলেটা মানতে চায় না। এরপর টাকার কথা বলায় সরে যেতে রাজি হয়। কিন্তু ওই কুত্তার বাচ্চা ভাবিকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করে। যেটা আপনাকে আমি বলতে পারব না। ও নাকি ভাবিকে কোন মতেই ছাড়তে পারবে না।

আমি সহ ওখানে যারা উপস্থিত ছিল সকলের মাথা গরম হয়ে যায়। আর আমরা সবাই একসাথে মিলে ওকে… (অসীম)

— ভাই এইবার আপনিই বলুন আমার জায়গায় আপনি উপস্থিত থাকলে আপনি কি করতেন..?(অসীম)

— ওই দিন আমাকে ফোন করে বলতি। তাহলে একসাথে মিলে ধোলাই দিতাম ব্যাটাকে। (আমি হেসে)

— ভাই,,,আপনি হাসতেছেন এর মানে আমাকে মাপ করে দিয়েছেন.??(অসীম)

— না,,এত সহজে তোকে মাপ করা যাবে না। (আমি)

— সে না হয় না-ই করলেন। কিন্তু এইবার বলুন আপনার খবর কি..? আর এত দিন কই ছিলেন..?(অসীম)

— অন্য একদিন বলব। তুই বল তোর কি অবস্থা..? (আমি)

— এই তো,, চলছে। (অসীম)

— আরে বেটা ক্যারিয়ার এর কথা বল। (আমি)

— আমার আবার ক্যারিয়ার.. ওই আমাদের মহল্লায় একজন ছিল না,,যার পিছনে সারাদিন ঘুর ঘুর করতাম..(অসীম)

— হুম,,,হায়দার ভাই না..?(আমি)

— হুম,,,হায়দার ভাই তো এখন এখন *** আসনের এমপি। (অসীম)

— আরে ব্যাস। তোকে এখন আর কে পায়..? তাই তো ভাবি,,হাতে বাইকের চাবি,শার্টে চশমা ঝুলায় রাখছিস, চুলগুলো আবার ছেমরি গো মতো লম্বা। (আমি হেসে)

— ভাই আপনি একটুও বদলায় যান নাই। আগের মতোই আছেন। (অসীম)

এরপর অসীমের সাথে কিছু সময় কথা বলে ওকে বিদায় জানিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে চলে এলাম।
বাইরে এসেই দেখি……….
.
.
.
.
.
#চলবে…..???

[গল্পের কিছু যায়গায় ভুল থাকতে পারে। গল্পটা এক দুই মাস আগে শুরু করেছিলাম। তাই গল্পের চরিত্রের সব নাম বা কাহিনি আমার ভালো মনে নেই। ভুল হলে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন। তাহলে খুব উপক্রিত হব। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here