সিনিয়র খালাতো বোন পর্ব-১৬

0
1748

#সিনিয়র_খালাতো_বোন
#part_16
#writer_srabon

আমি শিমলার চোখের দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলতে পারলাম না।
হাতে ব্যান্ডেজ শেষ করেই শিমলা কিছু না বলে চলে গেল।

আমি খাবার খেতে গিয়ে ব্যর্থ হই। কারন হাতে ব্যান্ডেজ করা।
খাবার প্লেট টেবিলেই রেখে দিলাম।
তখনই শিমলা আবার আমার রুমে এলো।।

খাবার প্লেট হাতে নিয়ে আমার সামনে চলে এলো।
আমি শুধু অবাক হয়ে শিমলার কান্ড দেখতেছি।
এক পর্যায়ে শিমলা আমাকে নিজের হাতে খায়িয়ে দিতে লাগল। আমি শুধু চুপচাপ খাবার খেতে লাগলাম।

আমার জীবনের সবচেয়ে অসাধারণ মুহুর্ত গুলোর মধ্যে এই মুহুর্তটা ছিল অন্যতম। আমি চাইলেও এই দিনটার কথা কোন দিনও ভুলতে পারব না। কারনে আজকেই প্রথম শিমলা আমাকে নিজের হাতে খাবার খায়িয়ে দিল।
আমি সম্পূর্ণ একটা ঘোরের মধ্যে চলে এসেছি।

খাবার শেষ করে শিমলা প্লেট নিয়ে চলে গেল।
আমি শুধু তাকিয়ে রইলাম। কি হয়ে গেল এইটুকু সময়ের মধ্যে.? সব কিছুই জেন মাথার উপর দিয়ে গেল।
যাকে দেখলে আমার মাথা গরম হয়ে যেত আর আজকে তাকে দেখলেই মনের মধ্যে একটা ভালো লাগা কাজ করে। কেন হচ্ছে এমন.??
কিছুই আমার মাথায় আসতেছে না।

এইসব কিছু ভাবতে ভাবতে দুপুর হয়ে গেল।

তাই আর দেড়ি না করে শাওয়ার নিতে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।।
শাওয়ার নিয়ে বাইরে এসে আমি একটু অবাক হয়ে যাই।
কারন বিছানার উপরে আমার পছন্দের একটা প্যান্ট এবং শার্ট রাখা আছে।
এটা যে শিমলার কাজ তা বুঝতে আর বাকি নেই আমার।
কারন এর আগে যখনই শিমলা আমাদের বাসায় আসত তখনই এমন করত।

কিন্তু শিমলা কেন আবার এগুলো করতেছে.? এগুলো করে ও কি বুঝাতে চাচ্ছে এখন..?
আমার মাথায় কিছুই আসতেছে না। আর দেড়ি না করে রেডি হয়ে নিলাম।।

তখনই আমার রুমে মি. রনি সাহেবের আগমন।।।

— চাচ্চু,,চাচ্চু,,ও চাচ্চু…! (রনি)

— হুম বাবা বলো কি হয়েছে.? এইভাবে চাচ্চুকে খুজতেছ কেন.? (আমি রনিকে কোলে তুলে বললাম)

— আচ্ছা,,চাচ্চু তুমি সারা দিন রুমে বসে কি করো.? (রনি)

— কি আর করব বলো.? আমাকে কেউ তো আর ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার মতো নেই। তাই সারা দিন একাই রুমে বসে থাকি। (আমি)

— চাচ্চু তুমি খুব চালাক। আমি ভাবছিলাম তোমাকে বলব যে,, এখন আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে। কিন্তু তুমিই উল্টে আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলতেছে। হুহ ভেবেছ আমি কিছুই বুঝি না। (রনি কোল থেকে নেমে)

— ওরে বাবা রে,,,কত চালাক আমার আব্বুটা..!( আমি রনির গাল টেনে বললাম)

— চাচ্চু,,,আমাকে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে এখন। (রনি)

— এখন.? (আমি)

— হুম.! এখন,,,তুমি একটু অপেক্ষা করো,,আমি রেডি হয়ে আসতেছি। (রনি)

— হুম যাও…(আমি)

এরপর রনি দৌড়ে রুমের বাইরে চলে গেল।
আমিও রুমে একা একা বোর হচ্ছিলাম। তাই রনির কথায় রাজি হয়ে গেলাম।

—————————————-

রুমে বসে রনির জন্য অপেক্ষা করতেছিলাম। তখনই আমার রুমে স্পর্শি এলো,,

— কি,,,মহারাজা রুমে একা একা বসে কি করে..?(স্পর্শি)

— কি আর করব.? একজন যে তলে তলে এত বড় গর্ত খুড়তে পারে সেইটা ভাভতেছি। (আমি)

— একটা দিব.! আমি যা করেছি তোর ভালোর জন্য করেছি। (স্পর্শি)

— ভালো….(আমি)

— নিজে যে,,তলে তলে টেম্পু চালাচ্ছিস সেটা কি আমি জানি না ভেবেছিস.?(স্পর্শি)

— মানে.?(আমি)

— ভালোই তো দুজনে প্রেম চালিয়ে যাচ্ছিস। সে কি প্রেম রে ভাই..! ভাত মাখিয়ে আবার খায়িয়ে দিচ্ছে। আল্লাহ… ভালোবাসা দেখে বাঁচি না (স্পর্শি মুখ বাকিয়ে বলল)

আমি শিমলার কথায় একটু লজ্জা পেয়ে যাই। তার মানে এই মেয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে সব দেখেছে। ছি ছি আমার মানসম্মান আর রইল না।

— ত,তুই সব দেখেছিস..?(আমি)

— হ (স্পর্শি)

— শালা চোর কোথাকার..! চোরের অভ্যাস কোন দিনও বদলানোর না। (আমি)

— তুই চোর,,তোর চোদ্দগুষ্টি চোর..(স্পর্শি)

আমি আরো কিছু বলতে যাব তখনই রনি আমার রুমে চলে এলো,,

— চাচ্চু তোমরা এগুলো কি বলো..?(রনি)

আমি আর স্পর্শি দুজনেই চুপ হয়ে গেলাম। একের পর এক বিপদ। কি যে কপাল আমার।

— ও কিছু না। চলো আমরা ঘুরতে যাই।। (আমি)

এরপর রনিকে কোলে নিয়ে তাড়াতাড়ি বাইরে চলে এলাম।
কিন্তু বাইরে এসেই শিমলার সাথে দেখা।।
রনি নাকি তাকে ছাড়া ঘুরতে যাবে না।

কি কপাল আমার। একটা জিনিস ভেবে প্রচন্ড রাগ হচ্ছিল। আবার কোন একটা অজানা কারনে ভালোও লাগতেছিল।

— চাচ্চু এইভাবে কি ভাবতেছ..? সেই কখন থেকে ডাকতেছি তোমাকে। (রনি)

— হুম,,,এসো..!

এরপর রনি আর শিমলাকে বাইকে বসিয়ে ভালো একটা রেস্টুরেন্টের দিকে রওনা দিলাম।
কারনে দুপুরের খাবার আমদের তিনজনের মধ্যে কেউ খায় নি।
কোন একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবার খেয়ে নেওয়াটাই বেটার হবে।।।

তবে একটা জিনিস না বললেই নয়,,আজকে শিমলাকে জেন একটু বেশিই সুন্দর লাগতেছে। বাসা থেকে বের হওয়ার পরেই শিমলাকে দেখে ১০০ ভোল্টের একটা শক খেয়েছিলাম নিজের মনের মধ্যে। চোখই ফেরাতে পারতেছিলাম না। এ যেন এক অসাধারণ মুহুর্ত। কিন্তু কোন এক রাগ অভিমানের কারনে এক নিমিষেই সব মুছে গেল।

শিমলার রুপের বর্ননা দিয়ে দিতাম তবে,,আপনার নজর দিতে পারেন তাই কিছুই বললাম না।🌚

যাই হোক প্রায় ২৫ মিনিট বাইক চালানোর পরে ভালো একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে বাইক থামালাম।

শিমলা আর রনি বাইক থেকে নেমে গেল।।
আমিও বাইক পার্ক করে ওদেরকে নিয়ে রেস্টুরেন্টের ভিতরে প্রবেশ করলাম।।

সকলের পছন্দ মতো খাবার ওর্ডার করলাম।
শিমলার কাছে না শুনেই খাবার ওর্ডার করে দিলাম। কারন আমার থেকে ভালো আর কেউ জানে না যে শিমলা রেস্টুরেন্টের কোন খাবারটা বেশি পছন্দ করে।

খাবার খেতেই যাব তখনই,,,,
পিছ থেকে একটা মেয়ে কন্ঠ আমার নাম ধরে ডাক দিল..!

আমি পিছে তাকাতেই যাব তখনই পিছ থেকে কেউ একজন আমাকে জরিয়ে ধরল। আমি তো লজ্জায় শেষ। কারন আশেপাশে অনেক লোকজন। আর সকলের আমার দিকে তাকিয়ে আছে। শিমলার দিকে তাকিয়ে দেখি চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে।
কিন্তু কিছুতেই বুঝতেছি না মেয়েটা কে??

অবশেষে মেয়েটা আমার সামনে এলো। আমি ওকে দেখে তো পুরাই অবাক।

— আরে,,,,সর্না তুই..?? এখানে.? (আমি অবাক হয়ে)

সর্না আমার পাশের চেয়ারে বসে বলতে লাগল,,

— মনে আছে তাহলে। আমি তো ভেবেছিলাম নতুন কাউকে পেয়ে আমাকে ভুলেই গিয়েছিস। (সর্না)

— কি যে বলিস না তুই। তোকা ভুলে যাব এত সহজে.? (আমি)

— ওহহ আচ্ছা..! তা এতদিন কই ছিলি.? টানা ৪ বছর তোর কোন খোঁজ নেই। ক্যামনে সম্ভব এটা.?(সর্না)

— সে অনেক কাহিনি। অন্য একদিন বলব। তোর খবর কি.?(আমি)

— বিয়ে করে ফেলেছি হারামি। আর মাত্র ৫ মাস আগে তোর সাথে দেখা হলে আমি তোর বউ আর তুই আমার স্বামী হইতিস।। (সর্না)

— মানে তুই বিয়ে করে ফেলেছিস.? ওহহ শিট (আমি মজা করে)

আমাদের এমন কথা শুনে শিমলা যেন রাগে ফায়ার হয়ে যাচ্ছিল। আমি তো সেই মজা পাচ্ছিলাম। তাই আরো বেশি করে মজা নিচ্ছিলাম।

— শ্রাবন এই যে কে.?? তোর গার্লফ্রেন্ড নাকি.?(সর্না)

— ওহ সরি। আমার তো মনেই ছিল না। এই হচ্ছে আমার খালাতো বোন। আমার থেকে কিছুটা বড়। আর এই হচ্ছে আমার বড় ভাইয়ের একমাত্র ছেলে রনি। তুই জানিস হয়তো। (আমি)

— হায় আপু…! আর রনিকে তো চিনি। (সর্না)

শিমলা একটা ফ্যাকাসে হাসি দিয়ে যাস্ট বলল,,

— হায়..!!(শিমলা)

— আর শিমলা আপু,,এই হচ্ছে আমার কলেজ লাইফের ফ্রেন্ড সর্না। (আমি শিমলাকে রাগানোর জন্য এমন করে বললাম)

শিমলা আমার মুখ থেকে আপু ডাক শুনে আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। হয়তো কষ্ট পেয়েছে। তাতে আমার ক.?

— ওই হারামি,,,ফ্রেন্ড নাকি গার্লফ্রেন্ড.? (সর্না)

— ওই হলো গার্লফ্রেন্ড… (আমি)
দুজনে একসাথে হেসে উঠলাম।।।

এরপর কিছুক্ষণ পরে সর্না আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। ও নাকি এখানে খাবার খেতে এসেছিল। আর খাবার খেয়ে চলেই যাচ্ছিল তখনই নাকি আমাকে দেখে ফেলল। আর কথা বলতে চলে এলো।।

এক পর্যায়ে আমার ভালোও হলো। কারন শিমলাকে কষ্ট দিতে পেরেছি।
খাবার শেষ করে ভেবেছিলাম রনি আর শিমলাকে নিয়ে পার্কে গিয়ে কিছু সময় ঘুরব। কিন্তু শিমলা আর এক মুহুর্তও এখানে থাকতে রাজি না। তার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি চোখ টলমল টলমল করতেছে। এর কারন আমার অজানা নেই। আমার তো ভিষন হাসি পাচ্ছে।

আগে তো শিমলার কারনে কোন মেয়েই আমার কাছে আসতে পারত না। আর আজকে তো সর্না এসে আমাকে পুরাই জরিয়ে ধরেছে। এটা কি করে কেউ সহ্য করবে.?

যাই হোক আমি এক প্রকার বাধ্য হয়ে শিমলা আর রনিকে বাইকে উঠিয়ে বাসার দিকে রওনা হলাম।

বাইকে বসে রনি আমার কাছে জিজ্ঞেস করল,,

— চাচ্চু ওই আপুটা তোমার সাথে ওমন করে কথা বলতেছিল কেন..?(রনি)

— তুমি বুঝবে না..! আগে বড় হয়ে নাও। (আমি)

— ভেবেছ আমি কিছু বুঝি না.? আব্বুকে আজকেই বাসায় গিয়ে বলব তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে। (রনি)

— আল্লাহ..!!

————————————

বাসায় আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেল।।
রনি আর শিমলা বাসার ভিতরে চলে গেল।
আমিও বাইক গ্যারাজে রেখে বাসার ভিতরে সোজা আমার রুমে চলে গেলাম।

রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে ল্যাপটপ নিয়ে ছাদে চলে এলাম।
অফিসে অনেক দিন যাওয়া হয় না। তাই ভাবলাম অফিসের সকলের সাথে একটু কথা বলি।

অনেক সময় ধরে সকলের সাথে কথা বললাম।
ল্যাপটপ অফ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বুজে ছিলাম। তখনই অনুভব করলাম কেউ একজন এসেছে।
চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি শিমলা হাতে চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে..!

আমি একটা হাসি দিয়ে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বললাম,,,

— Thanks..! (আমি)

কিছু সময় চুপ করে থাকার পরে শিমলা বলল,,,

— আমাকে কষ্ট দিয়ে তুমি খুব আনন্দ পাও তাই না..?(শিমলা)

— আমি সেই গল্পের বই..! যেটা বোঝার ক্ষমতা কারো নেই। (আমি)

— আমি জানি আমার এই সামান্য কষ্ট তোমার কষ্টের কাছে কিছুই না। আমি জানি তুমি আমার কারনে শুধু মাত্র আমার কারনে তোমার পরিবার থেকে দূড়ে থেকেছ। আমি এর জন্য দায়ী। (শিমলা)

— আপনার চা যতবারই খাই ততবারই যেন আমি হারিয়ে যাই..!(আমি)

— ভালোই কথা ঘুরানো শিখে গেছ। আচ্ছা আমি আসি। তবে এইটুকু মনে রেখ,, কোন একদিন তুমিও আফসোস করে বলবে যে, ওর থেকে ভালো আমাকে আর কেউ বাসেনি..!(শিমলা)

শিমলা এটা বলেই দৌড়ে চলে গেল। আমি জানি এই মেয়ে এখন কান্না করবে। আমি চায়ের কাপ শেষ করে নিজের রুমে চলে গেলাম। আমি জানি না আমার এখন কি করা উচিৎ।।

এইভাবে দেখতে দেখতে তিনদিন কেটে গেল।
এই তিনদিন রোজ একইভাবে শিমলা আমাকে ঘুম থেকে তুলে দয়েছে। রোজ রোজ দুই বেলা চা বানিয়ে দিয়েছে। নিয়মিত খাবার দেওয়া থেকে শুরু করে সব কিছুতেই খেয়াল রাখত। আমার কাছে বিষয় গুলো প্রথম প্রথম বিরক্তিকর লাগলেও পরে ভালো লাগতে শুরু করল।।

————————————

আজকে সকালে নিজের রুমে বসে ভাবতে লাগলাম,,
এইভাবে আর বেশিদিন চলতে দেওয়া যাবে না। আমি আস্তে আস্তে ওর প্রতি নির্ভর আর দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। এইভাবে আর চলতে পারে না। আমি একা ছিলাম একা আছি আর একাই থাকব।
আমি আজকেই ঢাকা ফিরে যাব। আবার আগের মতো করে নিজের জীবন শুরু করব।
তখনই………
.
.
.
.
.
.
#চলবে….??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here