সিনিয়র খালাতো বোন পর্ব-১৭

0
1894

#সিনিয়র_খালাতো_বোন
#part_17
#writer_srabon

আমি আজকেই ঢাকা ফিরে যাব। আবার আগের মতো করে নিজের জীবন শুরু করব।
তখনই নিচে আমার ডাক পরল। ভাবি শ্রাবন শ্রাবন বলে ডাকতেছে অনেক্ক্ষণ ধরে। তাই আমি আর বসে না থেকে নিচের দিকে ড্রয়িং রুমের দিকে যেতে লাগলাম। আর ভাবতে লাগলাম এখনই সবাইকে সবটা জানিয়ে সকালের নাস্তা আম্মুর সাথে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিব।।

নিচে এসে দেখি বাসার সকলে এখানে উপস্থিত আছে।।

— আম্মু একটা কথা জানানোর ছিল তোমাদেরকে। (আমি)

— কথা পরে বলা যাবে। তার আগে এই নে মিষ্টি। মিষ্টি খা..! (ভাইয়া)

আমি ভাইয়ার হাতে মিষ্টির প্যাকেট দেখে একটু অবাক হলাম। ভাইয়া সকাল সকাল হাতে মিষ্টি নিয়ে কি করে.? ভাইয়ার প্রমোশন হয়েছে হয়তো। তাই হয়তো সকালবেলা সবাইকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে।

— না,,না আমি এখন সকালবেলা মিষ্টি খাব না। (আমি)

— আচ্ছা..! ঠিক আছে। তোর ভাগেরটা রেখে দিলাম। (ভাইয়া)

পরিবারের সকলের দিকে লক্ষ্য করে দেখলাম সবাইকে অনেক খুশি খুশি লাগতেছে। তাই আর অপেক্ষা না করে ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করেই বসলাম,,,

— ভাইয়া,,,মিষ্টি কিসের জন্য..?(আমি)

— এই তো আমি জানতাম তুই এই প্রশ্নটাই জিজ্ঞেস করবি আগে। তুই তো শিমলাকে আর পছন্দ করিস না। তাছাড়া বিয়েও করতে চাস না। মেয়েটা আর কতকাল একা একা থাকবে.? তাই আমরা সকলে মিলে শিমলার বিয়ে ঠিক করেছি। (ভাইয়া)

ভাইয়ার মুখে শিমলার বিয়ের কথা শুনে আমি আসমান থেকে পরি। এইটা আমার কল্পনায়ও ছিল না যে এত তাড়াতাড়ি শিমলার বিয়ের খবর পাব। আমি জোরে বপে উঠলাম….

— বিয়ে….??? কার সাথে..?(আমি)

আমি এতটা উত্তেজিত হয়ে কথাটা বললাম কিন্তু কেউ কোন রিয়েকশন না দেখিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বলল,,

— হুম বিয়ে…! আমার কলিগের একটা ছোট ভাই আছে। তার সাথেই বিয়ের কথা ফাইনাল করে এসেছি। ওর নাকি শিমলাকে খুব পছন্দ। আর তাছাড়া ছেলেটা ভালো একটা চাকরিও করে। তাই আমি আর না বলি নাই। (ভাইয়া)

আমার বুকটা কেমন ফাকা ফাকা লাগতেছে। কেন এমন হচ্ছে বুঝতেছি না। কেমন যেন মনে হচ্ছে আমার খুব প্রিয় একটা জিনিস কেউ আমার কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে। এখন আমার কি করা উচিত..?

— শ্রাবন..? শ্রাবন শ্রাবন..? কি ভাবতেছিস..? কথা বলিস না কেন.?(ভাইয়া আমাকে ধাক্কা দিয়ে)

এতক্ষণ আমি ভাবনার জগতে ডুবে ছিলাম। ভাইয়ার ডাকে একটু চমকে উঠলাম।

— না না..! কিছু ভাবি না। এটা তো ভালো খবর..! বিয়ের তারিখ ঠিক করলে কবে..?(আমি)

— এই তো,, আজ থেকে ৫ দিন পর ১২ তারিখ শুক্রবার। (আব্বু)

— ওহহহ ভালো..!!!!.(আমি)

আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম। সবার মুখে হাসি। এমনকি স্পর্শির মুখেও হাসি। এটলিস্ট ও তো জানতো আমি উপর দিয়ে রাগ দেখালেও মন থেকে শিমলাকেই ভালোবাসি।
আশেপাশে কোথাও শিমলাকে দেখতে পাচ্ছি না। হয়তো আমার কারনে এখানে আসে নাই।

সবাই বিয়ে নিয়ে অনেক হাসি ঠাট্টা করতেছে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমার কাছে সবকিছু কেন এত অতিষ্ঠ লাগতেছে.?? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতেছি।

ইচ্ছে করতেছে এখনি সকলের সামনে চিৎকার করে বলে দেই শিমলা শুধু আমার। আমি ওকে আজও নিজের থেকে বেশি ভালোবাসি। কিন্তু কোন একটা বাধার কারনে মুখ ফুটে বলতে পারতেছি না।

না এখানে আর থাকা সম্ভব হবে না। আমি ওকে ছাড়া এতদিন থেকেছি। সামনেও পারব। প্রথম কিছু দিন একটু কষ্ট হবে কিন্তু আমি জানি পরে সব ঠিক হয়ে যাবে।।
তখনই হটাৎ করে আব্বু বলে উঠল,,,

— শ্রাবন তুমি যেন কি বলতে এসেছিলে আমাদেরকে..?(আব্বু)

— ও হ্যাঁ..! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। আমি আজকে ঢাকা চলে যাচ্ছি। অফিস থেকে কল এসেছে। কালকে একটা ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং আছে। যেখানে আমাকে উপস্থিত থাকতেই হবে। (আমি)

— মানে কি..? তুমি বিয়েটা এ্যাটেন্ড না করেই চলে যাবে..?(আব্বু)

— হুম..! আই এম সরি। তোমাদের এত সুন্দর একটা মুহুর্তে অমি উপস্থিত হতে পারব না। (আমি)

— বাবা তুই আমাকে একা রেখে আবার চলে যাবি..?(আম্মু)

— একা কোথায় আম্মু..?সবাই আছে না তোমার কাছে। আর তোমার যখনই আমার সাথে দেখা করতে ইচ্ছে করবে আমাকে শুধু একটা ফোন করবে আমি উড়ে চলে আসব। (আমি)

— একি তোর চোখে পানি কেন.? (ভাইয়া)

— ময়লা গেছে হয়তো..! (আমি)

এটা বলেই আমি সোজা উপরে আমার রুমে চলে এলাম। আর কিছুক্ষণ ওখানে থাকলেই হয়তো কেদে ফেলতাম। তাই পালিয়ে এখানে চলে এলাম।

রুমাল দিয়ে চোখ মুছে নিয়ে নিজের জামাকাপড় সব কিছু গুছাতে লাগলাম।
আএ এক মুহুর্তও থাকব না এখানে। ভেবেছিলাম যাওয়ার আগে সকলের সাথে বসে নাস্তা করে তবেই যাব। কি সেটা আর সম্ভব না।

————————————

সব কিছু গুছানো শেষ। নিজের রুমটার দিকে একবার ভালো করে তাকিয়ে বাইরে বের হতেই যাব তখনই শিমলার সাথে একটা ধাক্কা খেলাম।
হয়তো আমার রুমেই আসতেছিল।

— পালিয়ে চলে যাচ্ছ…??(শিমলা)

আমি শিমলার চোখের দিকে তাকাতে পারতেছিলাম না। তাই নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,

— অনেক আগেই পালিয়ে গিয়েছিলাম। তখন যেহেতু কেউ খোজ খবর নেয় নি তাহলে এখন হারিয়ে গেলেই বা কি..?(আমি)

শিমলা এইবার আমার জামার কলার ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো…
আমি কিছুই বলতেছি না শুধু নিরবে দেখে যাচ্ছি কি করে…

— আর একটা কথাও বলবি না তুই…তুই কি ভেবেছিস.?? তুই আমার উপরে রাগ করে পালিয়ে গিয়ে অনেক বড় কাজ করে ফেলেছিস..? তুই একাই শুধু কষ্ট পেয়েছিস.? আমি পাই নি.? আজ চার চারটা বছর।। (শিমলা কান্না করতে করতে বলল)

—…….. (আমি চুপ)

— আর আজকেও আমাকে একা ফেলে চলে যাচ্ছিস.??আমি পারব না তোকে ছাড়া থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। (শিমলা)

—……… (চুপ)

— চুপ করে আছিস কেন..? কিছু তো বল…(শিমলা)

— আমি তো স্মৃতির কালো আঁধারে হারিয়ে যাব। আর তুমি না হয় ভালো থেকো অন্য কারো আলোকিত শহরে। (আমি)

— না না না….!(শিমলা কান্না করে)

— প্লিজ আমাকে যেতে দিন। আমি আর নিতে পারতেছি না। মাথার ব্যাথাটাও শুরু হয়ে গেছে। (আমি)

আমি জানি শিমলা আমাকে এইভাবে ছাড়বে না। আর আজকে আমার ক্ষমতা নেই যে শিমলাকে আমি কিছু বলে আটকাতে পারব। তাই মাথা ব্যাথার অযুহাত দিলাম।

এটা বলার সাথে সাথে শিমলা আমার জামার কলার ছেড়ে দিল। কিছুটা শান্ত হয়ে বলল।

— আমি তোমাকে ভালোবাসি। প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না।(শিমলা)

— আর হয়তো দেখা হবে না। মনে আছে,,আমি আপনাকে প্রায়ই বলতাম যে, বিয়ের দিন আপনাকে আমি মন ভরে দেখব। যে দেখার কোন শেষ নেই। কিন্তু আমার সেই ইচ্ছেটা অপূর্ণই রয়ে গেল। কারন আমি যে আপনার জীবিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনে উপস্থিত হতে পারব না। আর উপস্থিত হলে শিওর আপনার জামাই মাইন্ড করবে যদি আমি এইভাবে তাকিয়ে থাকি। তাই এটাই শেষ দেখা। (আমি)

— আমার শেষ একটা ইচ্ছে পূরণ করবে..?(শিমলা কান্না করতে করতে বলল)

— হুম….

— তোমাকে শেষবারের মতো একবার জরিয়ে ধরব.??(শিমলা)

আমিও আর না করতে পারলাম না। মাথা নারিয়ে সম্মতি দিলাম।।

সাথে সাথেই শিমলা আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরল। যেন আমাকে আর যেতেই দিবে না।

প্রায় ৫ মিনিট পরে আমি বললাম,,,

— আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে,,,(আমি)

শিমলা আমাকে ছেড়ে দিল। নিজের চোখের পানি মুছে বলল,,,

— আমি বিয়ের হওয়ার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করবো তোমার জন্য। (শিমলা)

— ভালো থাকবেন..!!!!

এটা বলেই আমি রুমের বাইরে চলে এলাম।
আমার চোখেও পানি চলে এসেছে। একটা হাসি দিয়ে চোখের পানি মুছে নিচে সকলের কাছে চলে এলাম।
নিচে এসে দেখি ভাবি সকলের জন্য খাবার রেডি করতেছে। আর কাউকে দেখতে পেলাম না।

— ভাবি আমি আসতেছি….(আমি)

— দাঁড়াও আমি সকলকে ডেকে নিয়ে আসি। সবাই পাশের রুমে আছে। বিয়ের কার্ড ডিজাইন করতেছে। (ভাবি)

— দরকার নেই। রনির দিকে খেয়াল রেখো…! আসি (আমি)

আমি এটা বলেই বাসার বাইরে চলে এলাম।।।
নিজেকে অনেক শক্তিশালী মনে হচ্ছে। তা না হলে নিজের ভালোবাসাকে এইভাবে একা ফেলে রেখে চলে আসতে পারতাম না।

এগুলো ভাবতে ভাবতে একটা রিকশা পেয়ে গেলাম।
রিকশা করে ১৫ মিনিট পরে বাসস্ট্যান্ডে চলে এলাম।

টিকিট কাউন্টারে এসে একটা টিকিট কেটেই বাসে উঠে পরলাম। ৩০ মিনিট পরেই বাস ছেড়ে দিবে।
নিজের সিটে এসেই হেলান দিয়ে বসে পরলাম।
মাথাটা হালকা ব্যাথা করতেছে।

তখনই আমার চোখ নিজের বুকের কাছের শার্টের অংশে যায়। একদম ভিজে আছে। এটা যে শিমলার চোখের পানি এটা বুঝতে আর বাকি নেই। মেয়েটার জন্য মাঝে মাঝে কষ্ট হয়। কিন্তু কি করার..? আসলে আমি এমনই।
যেটা একবার মাথায় ঢুকে যায় ওটা না করে ছাড়ি না।

জানি না ভবিষ্যতে কি হবে। যেভাবে চলতেছে ওইভাবেই চলতে থাক।।

আমি মনে মনে এগুলো ভাবতেছিলাম। তখনই টের পেলাম বাস ছেড়ে দিয়েছে। জানালা দিয়ে নিজের শহরটা একবার দেখে আবার চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে রইলাম সিটে।।।

—————————————–

বিকাল ৫ টার দিকে ব্যস্ত শহর ঢাকায় এসে পৌছালাম। আশেপাশে তাকিয়ে একটা হাসি দিলাম।আবার শুরু হতে চলেছে নিজের ব্যস্ত লাইফ। হয়তো সারা দিনের কাজের চাপেই সব কিছু ভুলে যাব।

বাস থেকে নেমে একটা রিকশা নিয়ে বাসায় চলে এলাম।
বাসায় এসে সব কিছু ঠিকঠাক করে গুছিয়ে নিলাম।
এরপর অনলাইনে খাবার অর্ডার করতে হবে। তাই ফোনটা হাতে নিলাম।
হাতে নিয়ে দেখি অনেক গুলো মিসড কল। সাইলেন্ট করা ছিল। সবচেয়ে বেশি কল আম্মুর ছিল। আমি জানি আম্মু হয়তো অনেক রাগ করেছে। আসার সময় তার সাথে দেখা না করায়।
এটা আমি ইচ্ছে করেই করেছে। কি করে আম্মুকে রেখে আসতাম আমি.? তার থেকে ভালো না দেখেই চলে এসেছি।

আর কিছু না ভেবে স্পর্শিকে ফোন করে জানিয়ে দিলাম যে বাসায় চলে এসেছি।
এরপর অনলাইনে খাবার অর্ডার করে নিলাম।
তখনই মনে পরল যে কাল থেকে অফিস জয়েক করতে হবে। তাই বসকে ফোন দিলাম,,,

— আসসালামু আলাইকুম স্যার…(আমি)

— ওয়ালাইকুম আসসালাম..! (বস)

— স্যার কাল থেকে অফিসে জয়েন করতে চাচ্ছি। (আমি)

— আচ্ছা,,আচ্ছা…! তোমার সাথে অনেক কথা আছে আমার। অফিসে এসেই আগে আমার কেবিনে আসবে কালকে। (বস)

— ওকে স্যার… (আমি)

এরপর ফোন রেখে দিলাম।
একে একে সবাইকে জানিয়ে দিলাম যে আমি আবার ঢাকায় চলে এসেছি। ব্যাস আগের মতোই শুরু হতে চলেছে সব কিছু..! কিন্তু মাথা থেকে কিছুতেই এই শিমলার বিয়ের ব্যপারটা মুছতে পারতেছি না।।

রাতের খাবার খেতে ইচ্ছে করতেছিল না। কারন এর আগে স্পর্শি নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াত। আর মাঝখানে বাসায় গিয়ে তো ভাবির হাতের রান্না খেলাম। এখন এই হোটেলের খাবার কার ভালো লাগবে বলুন.?? অনেক কষ্টে খাবার শেষ করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরলাম। কারণ কালকে সকালে অফিস যেতে হবে।।

————————————

সকালবেলা বিভোর ঘুমে তলিয়ে ছিলাম। তখনই ফোনের রিংটোনের আওয়াজে ঘুমটা ভেঙে গেল কিছুটা। ঘুম ঘুম চোখেই ফোনটা রিসিভ………..
.
.
.
.
.
.
.
#চলবে…….????

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here