সিনিয়র খালাতো বোন পর্ব-৬

0
1789

#সিনিয়র_খালাতো_বোন
#part_06
#writer_srabon

কিন্তু ভিতরে প্রবেশ করেই একশ ভোল্টের আরেকটা শক খেলাম।জানি না এক দিনে আমি কত সারপ্রাইজড হব…!
কারন আমার সামনে শিমলা একটা ছেলেকে কোলে নিয়ে বসে আছে।।

আমি শিমলাকে দেখেই প্রচুর অবাক হলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম শিমলা হয়তো এখানে আসে নি। কিন্তু আমার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।
শিমলা এখানে এসেছে। কিন্তু সাথে এই ছেলেটা কে.??
দেখে অনেক চেনা চেনা লাগতেছে। কিন্তু ঠিক চিনতে পারতেছি না।
শিমলা ছেলেটাকে নিয়ে বিছানায় বসে মোবাইলে গেমস খেলতেছে। আর মাঝে মাঝে দুজনেই হেসে উঠতেছে।
আমি আর এই হাসিতে নিজেকে জরাতে চাই না।
তাই সব কিছু মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে
হালকা একটা কাশি দিলাম।

সাথে সাথেই শিমলা দরজার দিকে তাকাল।
আমাকে দেখতে পেয়ে বিছানা থেকে উঠে দাড়াল।।

— বাবু,,,চলো আমরা নিচে যাই..! তোমার মামনি নিচে আছে।।(শিমলা ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বলল)

ছেলেটা শিমলার কথা মতো ওর হাত ধরে হাটা শুরু করল।।
আমি হালকা একটা হাসি দিলাম।
প্রথমে তো ভেবেছিলাম এটা শিমলার পোলা। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেল কিভাবে.?? কিন্তু আমার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। এটা অন্য কারো ছেলে। যাই হোক আমি দরজা থেকে সরে দাড়ালাম।
শিমলা আমাকে ওভার টেক করে চলে গেল। কিন্তু হটাৎ করে দাঁড়িয়ে গেল।।।

আমার মুখে মাস্ক দেওয়া। চেনার কোন উপায় নেই।
কিন্তু শিমলা হটাৎ করে থেমে গেল কেন।।

— এক্সকিউজ মি..! কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করতে পারি..?(শিমলা)

আমি গলার কন্ঠ একটু মোটা করে বললাম,,

— হুম,,বলুন..(আমি)

— আপনার নামটা কি জানতে পারি..??(শিমলা)

— শ্রাবন আহমেদ ইমন…..!!(আমি)

আমার নামটা শুনেই শিমলা কেমন যেন অস্থির হয়ে গেল।
আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে দেখতে লাগল। মাস্কের আরালে কে আছে এইটা বোঝার চেষ্টা করতেছে। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারতেছে না।।।

— না,,মানে নামটার সাথে আমি খুব পরিচিত…(শিমলা)

— ও আচ্ছা…

এরপর কিছু সময় নিরবতা। আবার শিমলা বলে উঠল,,,

— যদি কিছু মনে না করেন,,তাহলে আপনার মুখটা একটু দেখা যাবে। মানে মাক্সটা যদি একটু খুলতেন।।।(শিমলা)

আমি শিমলার কথা শুনে অবাকের উপরে অবাক হচ্ছি। আগে জানতাম ছেলেরা মেয়েদের সাথে এমন ভাবে কথা বলত৷ কিন্তু এখন দেখি জামানা পাল্টে গেছে। মেয়েরাই উল্টে ছেলেদের সাথে এমন করে করে কথা বলে।।।

— সরি….আপনার কথা ঠিক বুঝলাম না..(আমি না বুঝার ভান করে)

— না না,,,,কিছু না। আমি আসি..! সরি (শিমলা)

শিমলা এটা বলেই পিচ্চি বাবুটাকে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে চলে গেল।।।
আমি রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়ে বিছানার কাছে এসেই আমার কাধের ব্যাগটাকে ছুড়ে মারলাম। এরপর সোজা আয়নার কাছে চলে গেলাম।
নিজের মুখের মাক্সটা খুলে ফেললাম।
এরপর ডান গালে হাত দিয়ে নিজেকে ভালোভাবে দেখতে লাগলাম। সেই দিনের ঘটনা মনে পরলেই কান্না আসে৷ কিন্তু আজকে কেন জানি খুব হাসি পাচ্ছে।।
এখনো আমার কানে ভাসে শিমলার বলা সেই কথাগুলো।
শিমলা নিজের হাত দিয়ে আমাকে পরস্পর দুইটা থাপ্পড় দিয়েছিল। কি করে ভুলে যাব সেই দিনটাকে.??
যাইহোক আমি আর এতকিছু না ভেবে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।।
ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখি আংকেল আন্টি(স্পর্শির বাবা,মা) রুমে বসে আছে।
আমি আংকেল কে দেখে সালাম দিলাম….

— আংকেল, আন্টি আপনারা কিছু বলবেন..?(আমি)

— হুম,,,তোমার কাছে একটা রিকুয়েষ্ট নিয়ে এসেছি আমার.. (আংকেল)

— জি,,আংকেল বলুন…!

— তুমি জানো হয়তো..! তুমি লেট করে আসায় আমার মেয়েটা এক বিশাল কান্ড ঘটিয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম এখানেই সব শেষ। কিন্তু,, এখন মেয়ের একটাই কথা ওর সাথে তোমাকেও যেতে হবে৷ সেখানে গিয়ে মাত্র ৪/৫ দিন থাকলেই হবে৷ (আংকেল)

আংকেলের কথা শুনে আমার মাথায় বাজ পরল। যে বাসায় ৩ বছর ধরে যাই না। সেখানে কি করে যাই.? তাও আবার স্পর্শির সাথে। আমার আব্বু যে রাগী,,জানি না তিনি কিভাবে নিবে বিষয়টি…

— আংকেল এইটা আমি চাইলেও সম্ভব না৷ আমার অফিস আছে৷ তাছাড়া আমি সেখানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত নই। (আমি)

আন্টি আমার হাত ধরে বলল,,,

— বাবা,,আমার মেয়েটা ছোট বেলা থেকে যা যা চেয়েছে আমরা সব কিছুই ওকে দিয়েছি। মেয়েটা শেষ বারের মতো একটা কথা বলল এটা যদি না রাখতে পারি। তাহলে কেমন হয়ে যায় না..!

অবশেষে আংকেল আন্টির কথায় আমাকে রাজি হতে হল..! কিছুই করার নেই।
আমি রুমে বসে তৈরি হয়ে নিলাম। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে,,
আমি কি সকলের সামনে আমার চেহারা দেখিয়ে দিব.? নাকি এইভাবেই মাক্স পরে যাব..?
জানি না কি হবে.. আমি রুম থেকে বেরিয়ে স্পর্শির কাছে গেলাম।।
বরযাত্রীরা মোটামুটি সকলেই গাড়িতে উঠে পরেছে। শুধু স্পর্শি, ভাইয়া আর আমি বাকি.

— ওই,, তুই এত লেট কেন সব কিছুতে…??(স্পর্শি)

— আমি কোন গাড়িতে যাব..??(আমি)

— আমাদের গাড়িতে চল। (স্পর্শি)

— দেখ,,আমি এইসব গাড়িতে যেতে পারব না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসতেছে এমনিতেই। তার উপরে আবার গাড়ি.. বাইক থাকলে বল। আর না হলে বায়…!(আমি)

— ওয়েট ওয়েট..! সমস্যা নেই। আমি দেখতেছি ব্যাপারটা। (ভাইয়া)

এরপর ভাইয়া কাকে একটা যেন ফোন দিল.! কি কথা বলেছে আমি শুনি নাই। কিছু সময়ের মধ্যেই আমার সামনে একটা ছেলে বাইক নিয়ে এলো.!.

— আসসালামু আলাইকুম ভাই..!(ছেলেটি)

— বেটা ফাজলামো করিস.?? এই হচ্ছে শ্রাবন ওকে তোর সাথে নিয়ে বাসায় যা। (ভাইয়া)

— নামটা চেনা চেনা লাগতেছে… (ছেলেটি)

— হাতে সময় নেই। তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে। তোরা যা আমি গাড়িতে উঠলাম। (ভাইয়া)

— হী,,,ভাই আসেন..!

এরপর আমি আর কিছু না ভেবেই বাইকের পিছে উঠে পরলাম।
কিন্তু একটা জিনিস দেখে প্রচুর হাসি পেল,,
গাড়িতে উঠার সময় যখন স্পর্শি সকলের কাছ থেকে বিদায় নিবে তখন সবাই কান্না করলেও এই বেটি স্পর্শি একটু কান্না করে নাই। এটা কি মেয়ে নাকি অন্যকিছু.?? বিদায়ের সময় সবাই মোটামুটি কান্না করে কিন্তু এই ডাইনি.??
যাই হোক ছেলেটা বাইক স্টার্ট দিয়ে চালাতে লাগল।।

— ভাই আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না..?(ছেলেটি)

— আমি মেয়ের ফ্রেন্ড..! (আমি)

— ও আচ্ছা,,আপনি সেই ছেলে যার জন্য….

— থাক থাক,,আর বলার দরকার নেই। এই এক কথা শুনতে শুনতে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। (আমি)

— হাহাহাহা…!!!

— আচ্ছা,,এখান থেকে আপনাদের বাসায় যেতে কত সময় লাগবে..?(আমি)

— ৩/৪ ঘন্টা তো লাগবেই।।।(ছেলেটি)

— হায় আল্লাহ..! আজকে আমি শহিদ হয়ে যাব। একই দিনে দুই দুইটা লং জার্নি..(আমি)

— সমস্যা নেই ভাই..! বাসায় গিয়ে সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে।

— হুর…..

এরপর ছেলেটার সাথে বক বক করতে করতে রাত ১০ টার সময় নিজের অতি পরিচিত বাসার সামনে এলাম।।
বাসাটা ঠিক আগের মতোই আছে। তবে বিয়ে উপলক্ষে হয়তো নতুন পেইন্ট করানো হয়েছে। আর লাইটিং এর কারনে তো আরো ভালো লাগতেছে বাসাটাকে।

বাসায় ঢোকার পরে একটা চিল্লাচিল্লির রোল পরে গেছে। এটাই স্বাভাবিক বাড়ির ছেলে বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছে।
আমি বাইক থেকে নেমে এক সাইডে দাড়ালাম।
সকলের কর্মকাণ্ড দেখতে লাগলাম।।

হটাৎ করে একটা লোক আমার সামনে এসে বলল,,,

— স্যার আপনার ব্যাগটা আমার কাছে দিন। আমাকে মেজ স্যার পাঠিয়েছে। আসুন আপনাকে আপনার রুম দেখিয়ে দিচ্ছি..!(বাসার কাজের লোক)

— ও আচ্ছা..! চলুন তাহলে।।

এরপর সকলকে অতিক্রম করে আমি বাসার ভিতরে প্রবেশ করলাম। প্রথম কদম রাখার পরে বুকের ভিতরে কেমন একটা করে উঠল। হয়তো অনেক দিন পরে এসেছি তাই এমন হয়েছে।
আমি বাসার ভিতরটা ভালো করে দেখতে লাগলাম।। ওয়াও।। অনেক সুন্দর। আমি যখন এই বাসায় থাকতাম তখন তো এত সুন্দর ছিল না। যাই হোক আমি লোকটার পিছে পিছে যেতে লাগলাম।।

লোকটা আমাকে অবাক করে দিয়ে উপরে আমার রুমে নিয়ে এসেছে। আশ্চর্য। এটা তো আমার রুম। তার মানে কি আমাকে এখানেই থাকতে দেওয়া হয়েছে..? বাহহ ভালো অবশেষে কমার রুমটাকে গেষ্টরুম বানিয়ে ফেলেছে। দারুন।।।

— স্যার,,আপনি এখন থেকে এখানেই থাকবেন…

— হুম,,,কিন্তু এই রুমটা কার..? আর আনাকেই কেন এখানে থাকতে দেওয়া হল..?(আমি)

— স্যার আমিও তো এই বিষয়টি বুঝতে পারতেছি না। আমি
প্রায় দুই বছর যাবত কাজ করতেছি এই বাসায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই রুমে আমি কাউকে থাকতে দেখি নাই।

— কি জানি…!!! (আমি)

এদিকে আমার প্রচন্ড খুদা পেয়েছে। সেই কখন খেয়েছি মনে নেই।।। তাই লোকটাকে বললাম,,

— চাচা,,,খাবার কিছু পাওয়া যাবে এখন..? প্রচুর খুদা লেগেছে। (আমি)

— ওও,,আমার তো বলতেই মনে ছিল না। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসেন আমি খাবার নিয়ে আসতেছি। (লোকটা)

— আচ্ছা..!!!

এরপর লোকটা চলে গেল। আর আমি আমার পরিচিত রুমটার সব কিছু দেখতে লাগলাম। এখনো সেই আগের মতোই আছে। একটুও বদলায় নি। কিন্তু কি করে.?? দেখে মনে হচ্ছে রোজ কেউ এসে রুমটা পরিষ্কার করে যায়।।
আমি এত কিছু না ভেবে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।।

বাইরে এসে মুখের মাক্সটা আবার লাগিয়ে নিলাম। কখন কে চলে আসে বলা যায় না।।।
ঠিক তখনই একটা মেয়েলি কন্ঠ বলে উঠল,,

— ভিতরে আসব..??

আমি পিছে ফিরে তাকাই। এটা তো শিমলা। হাতে করে খাবার নিয়ে এসেছে। ভাগ্যিস মুখে মাক্স লাগিয়েছিলাম। না হলে এখনি বাসায় এলাহি কান্ড লেগে যেত।।

— এই নিন আপনার খাবার..! (শিমলা)

আমি কিছু বললাম না। এরপর শিমলা খাবার প্লেট রেখে চলে যেতে লাগল। কিন্তু হটাৎ কি মনে করে আ আবার আমার সামনে এলো..!..

— আপনি কি মাক্স পরেই খাবার খান নাকি..??(শিমলা)

— হুম,,কেন কোন সমস্যা..?(আমি)

— না,,সমস্যা হবে কেন..?

এরপর শিমলা রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
আর মনে মনে বলতে লাগল,,
উফফ আমারও যে কি হয়েছে না.! কেন বার বার আমি এই ছেলেটার কাছে আসি। আর কেনই বা আমার মনটা উতলা হয়ে আছে। কে হতে পারে মাক্সের আড়লে..? আমি কি তাকে চিনি..? যাই হোক এগুলো ভেবে লাভ নেই। বাসায় অনেক লাজ আছে। আগে সেগুলো করে নেই।

এই গুলো বলতে বলতে শিমলা নিচে সকলের কাছে চলে গেল।।

আমি টেবিলের উপরে বসে খাবার গুলো খেয়ে নিলাম।।
এরপর একট সেই লোকটার সাহায্যে প্লেট নিচে পাঠিয়ে দিলাম।।
রুমের আশেপাশে ভালো করে দেখতে লাগলাম।
এই তো এখনো টেবিলের উপরে আমার সেই পুরনো বই গুলো আছে। কিন্তু এগুলো এখনো এখানে কি করে.?? আমি তো ভেবেছিলাম আব্বু এগুলো ফেলে দিয়েছি।
টেবিলের উপরে আমার ছোটবেলার একটা ছবি ছিল। আমি সেইটা হাতে নিয়ে ভালো করে দেখতে লাগলাম।

আমার মাথায় কিছুই আসতেছে না। এই রুমেই বা আমাকে কেন থাকতে দেওয়া হলো.? আর সব কিছু আগের মতো কি করে আছে.? মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
এই সব কিছুর জন্য স্পর্শি দায়ী। আগে জানলে আমি কোন মতেই ওর বিয়েতে আসতাম না।
রুমের বাইরে প্রচুর আওয়াজ হচ্ছে। আওয়াজ হওয়াটাই স্বাভাবিক।
শরীরটা ভিষণ খারাপ লাগতেছিল। তার উপরে এত জার্নি করে এসেছি। তাই প্রচুর ঘুম পাচ্ছিল।
আমি আর কিছু না ভেবে মুখের মাক্স খুলে রুমের আলো নিভিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলাম।
কিছু সময়ের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেলাম।।।

————————————

সকালে আমার তাড়াতাড়ি ঘুম থেলে ওঠার নেই। তার উপরে আবার ক্লান্ত ছিলাম।তাই সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেলে ওঠার কোন প্রশ্নই আসে না।

কিন্তু সকাল সকাল………..

.
.
.
.
#চলবে……????

[তেমন একটা রেসপন্স পাচ্ছি না আপনাদের কাছ থেকে।
তাই গল্প লেখার মুডও তেমন একটা থাকে না। সো প্লিজ নেক্সট, তারপর, এরপর এইসব কমেন্ট না করে গঠন মূলক একটা কমেন্ট করুন। যথেষ্ট সারা পেলে রোজ গল্প পাবেন ইনশাআল্লাহ…]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here