#সিনিয়র_খালাতো_বোন
#part_10
#writer_srabon
তখনই আমার রুমে একটা ৩/৪ বছর বয়সী বাচ্চা আসে।
বাচ্চাটার দিকে ভালো করে খেয়াল করে দেখি এটা তো সেই দিনের বাচ্চাটি। মানে স্পর্শিদের বাসায় শিমলার কাছে যে বাচ্চাটাকে দেখেছিলাম।
কিন্তু ঠিক বুঝে উঠতে পারতেছি না এইটা কে.? আর কাউকে জিজ্ঞেসও করতে পারতেছি না।
তখনই বাচ্চাটা বলে উঠল,,,
— আম্মু,,তুমি এখানে.? আর আমি তোমাকে সব জায়গায় খুজতেছি। (পিচ্চি)
আমি ছোট পিচ্চিটার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। তার মানে এটাই হচ্ছে ভাইয়া আর ভাবির ছেলে। ইসসস আমার মাথায়ই ছিল না। আমি যখন বাসা ছেড়ে যাই তখন পিচ্চি খুব ছোট ছিল।
আর এখন তো অনেক বড় হয়ে গেছে। আর দেখতে তো একদম মাশাল্লাহ। কিছুটা ভাবির মতো হয়েছে দেখতে।
— আব্বু,,,তুমি নিচে যাও। আমরা একটা জরুরি কথা বলতেছি। (ভাবি)
— হুম,,,দাদু ভাই তুমি নিচে গিয়ে বাকিদের সাথে খেলা করো৷ আমি আর তোমার আম্মু একটু পরে আসতেছি। (আম্মু)
— না,,আম্মু..! আমি তোমার সাথে থাকব…!(পিচ্চি)
আমি শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পিচ্চির কান্ড দেখতেছিলাম। তখনই পিচ্চিটার চোখ আমার দিকে আসে।
— আম্মু,,,এইটা কে..? সেই বিয়ের দিন থেকেই দেখে আসতেছি। (পিচ্চি)
— ও,,হ্যাঁ। তোমাকে তো বলাই হয় নি। এটা হচ্ছে তোমার ছোট চাচ্চু। (ভাবি)
— ও এই সেই চাচ্চু,,যার কথা তোমরা সবাই বলতে..?
— হুম বাবা,,এই সেই চাচ্চু তোমার। (ভাবি)
বেশি কথা শুনতে আমার ভালো লাগতেছিল না। তাই আমি একটু গম্ভীর ভাবে বললাম,,,
— আম্মু,,,এখন তোমরা যাও। আমার একটা কাজ আছে। (আমি)
— আচ্ছা…!
আম্মু আর ভাবি চলে যেতে লাগল। কিন্তু পিচ্চিটা যাবে না। সে নাকি আমার সাথে থাকবে। একদম কান্না শুরু করে দিছে। ভাবি তো বকা দিয়েও নিতে পারতেছে না।
তাই আমি বাধ্য হয়ে বললাম,,,
— ভাবি,,,তুমি যাও তো তোমার ছেলেকে রেখে..!(আমি)
ভাবি আমার মুখে ভাবি ডাক শুনে অবাক হয়ে তাকল। এবং একটা হাসি দিয়ে চলে গেল।
উফফফ আমারও যে মাঝে মাঝে কি হয় কে জানে..? এত রাগ দেখালাম ভাবির উপরে। কিন্তু এই পিচ্চির কারনে সবটা ভেস্তে গেল।
আমি বিছানায় গিয়ে বসলাম।।
তখনই পিচ্চিটা আমার পাশে এসে বসে পরল।।।
— হায়,,আমি রনি..! আর তুমি..?(পিচ্চি)
পিচ্চির সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। কিন্তু একটু হাসিও পেল। নিজের ভাইয়ের পোলা বলে কথা৷ আমিও আর রেগে থাকতে পারলাম না। একটা হাসি দিয়ে বললাম,,
— আমি শ্রাবন..! (আমি)
— আচ্ছা,,আমি তোমাকে কি বলে ডাকব..?(রনি)
— আমি যেহেতু তোমার চাচা লাগি সেহেতু চাচ্চু বলেই ডাকতে পারেন আপনি। (আমি)
— আচ্ছা,,,চাচু একটা কথা বলো তো..(রনি)
— কি কথা..?(আমি)
— তুমি এতদিন কই ছিলে.?? জানো তোমার জন্য বাসার সকলে অনেক মন খারাপ করে থাকে৷ (রনি)
— তাই নাকি.??(আমি হেসে)
— হুম,,,তাই। আর তুমি যেহেতু এতদিন আমার কাছে ছিলে না। তাই আমাকে অনেক অনেক জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে। আর অনেক খাবার কিনে দিতে হবে। (রনি)
— আচ্ছা বাবা সব দিব..! (আমি)
কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের ভিতরে সুন্দর একটা ভাব তৈরি হয়ে গেল। যেটা সব চাচা ভাতিজার মধ্যে থাকে।
কিছু সময় পরে,,,,,
আমি আর রনি বসে বসে গল্প করতেছিলাম তখনই আমার রুমে শিমলা এলো…
আমি দেখেও না দেখার ভান করে রইলাম।।
— রনি,, বাবু নিচে চলো..! আমরা সবাই এখন সকালের নাস্তা করব.। (শিমলা)
— চাচ্চু,,,নিচে চলো.. খাবার খেতে হবে। আমার খুব খুদা লেগেছে। (রনি)
— আমার এখন খুদা নেই। তুমি গিয়ে খেয়ে নাও।(আমি)
— নিচে তোমার জন্য সবাই অপেক্ষা করতেছে। তুমি যদি এখন খাবার না খেতে যাও। তাহলে সবাই না খেয়ে থাকবে। (শিমলা)
— চাচ্চু,, প্লিজ চলো না।।।।(রনি)
— আচ্ছা,,,রনি সাহেব চলুন তাহলে…!(আমি বাধ্য হয়ে যেতে রাজি হলাম)
এরপর শিমলা নিচে চলে গেল। মেয়েটার আসলে লজ্জা বলতে কিছু নেই। সেই দিন কিভাবে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। আর এখন নাচতে নাচতে চলে এসেছে আমার রুমে। একটু লজ্জা বলতে কিছু নেই।
যাই হোক আমি রনির সাথে নিচে যেতে লাগলাম।।
নিচে এসে দেখি বাসার সবাই এখানে উপস্থিত আছে।
এই বিষয়টি আমার বেশ পছন্দের। আমাদের বাসায় সকালের এবং রাতের খাবার সর্বদা সকলে মিলে একসাথে করা হতো। আর এখনো সেই নিয়ম আছে।
খাবার টেবিলের সবগুলো চেয়ারই ভরাট। শুধু দুইটা চেয়ার বাদে। রনি দৌড়ে গিয়ে একটা চেয়ারে বসে পরল।
এরপর আমি সব দিকে লক্ষ্য করে দেখে নিলাম। শিমলার সামনের চেয়ারটা শুধু ফাকা আছে। বিষয়টি আমার মোটেই ভালো লাগল না। তবুও বাধ্য হয়ে বসে পরলাম।
আম্মু আর ভাবি খাবার বেরে দিচ্ছে সবাইকে।
আম্মু আর ভাবি যেন আমার পাশ থেকে যাচ্ছেই না। আমাকে একটার পরে একটা খাবারের ডিশ দিয়েই যাচ্ছে। আমি জীবনে এত খাবার খাওয়া তো দূরের কথা কল্পনাই করতে পারি না। কিন্তু কি করার,,,বাধ্য হয়ে খেতে লাগলাম।
তবে এটা আর বেশি স্থায়ী হলো না।
আমি সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি শিমলা আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর মিটমিট করে হাসতেছে। এটা দেখে আমার মেজাজটা ভিষণ খারাপ হয়ে গেল।
তাই কাউকে কিছু না বলে খাবার প্লেটে পানি দিয়ে নিজের রুমে চলে এলাম।
আসার সময় আম্মু অনেকবার ডেকেছিল। কিন্তু আমি না শুনেই চলে এসেছি।
রুমে এসে অফিসের বসের নাম্বারে একটা কল করলাম,,,
— হ্যাঁ মি. শ্রাবন..! বলুন কি জন্য আমাকে ফোন দিলেন..? (বস)
— স্যার,,,একটা সমস্যা হয়ে গেছে। (আমি)
— সমস্যা নেই। আমি জানি..! তুমি নিশ্চয়ই এটা বলবে যে তোমার আর্জেন্ট কিছু দিনের ছুটি দরকার..?(বস)
— হুম স্যার। কিন্তু আপনি জানলেন কি করে.??(আমি অবাক হয়ে)
— স্পর্শি আমাকে ফোনে সবটা বলেছে। সমস্যা নেই। তোমার যতদিন ইচ্ছে ততদিন খুলনা থাকতে পার। এদিকটা আমি সামলে নিব। (বস)
— ধন্যবাদ স্যার…!(আমি)
— মোস্ট ওয়েলকাম..!
এরপর আমি ফোন কেটে দিলাম।
মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখি সকাল ১১ টা বেজে গেছে।।
————————————
অপরদিকে খাবার টেবিলে….
— কিছুই তো বুঝলাম না। সব কিছুই তো ঠিকঠাক ছিল। তাহলে হটাৎ করে ওর কি হলো.???(বড় ভাইয়া)
— কি জানি,,, ও অনেক বদলে গেছে। এত রাগলে কি চলে.??
— আমার কারনে হয়েছে সবটা। আমিই এর জন্য দায়ী। (শিমলা)
— এইটা আমরা কেউ বলেছি তোকে.?? আর একবারও নিজেকে দোষ দিবি না। (ভাইয়া)
— হুম….!!
— অনেক দিন তো হলো। তা এইবার বিয়েটা কবে হচ্ছে..?(আব্বু)
— বাবা,,এই কথা এখন বলার কোন দরকার নেই। শ্রাবন অনেক রেগে আছে। পরিবেশ একটু ঠান্ডা হোক। এরপর এই বিষয়ে আলোচনা করলেই হবে। (ভাবি)
— হুম..! এই সব প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে এইবার সকলে খাবারটা শেষ কর।
————————————
রুমে বসে মোবাইল গুতাগুতি করতেছিলাম। তখনই রনি সাহেবের আগমন,,
— চাচ্চু,,,,তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও। (রনি)
— কেন.? কোথায় যাব এখন.??(আমি অবাক হয়ে)
— এখনই ভুলে গেলে.?? আমরা না একটু আগে প্লান করালাম সকাল ১১ টার পরে বাইকে করে ঘুরতে যাব। (রনি)
— ওহহহ শিট আমার তো মনেই ছিল না। কিন্তু… (আমি)
— কিন্তু কি.??(রনি)
— আমার তো বাইক নেই। তাহলে বাইক পাব কোথায়.?? (আমি)
— সমস্যা নেই। আমি আব্বুর বাইকের চাবি আমার সাথে করে নিয়ে এসেছি। এই নাও চাবি। (রনি)
— ওরে,,, রনি। তুমি তো ভিষণ দুষ্টু। (আমি)
— হুম…..
এরপর আমি ড়েডি হয়ে রনিকে আমার রুমে ডাক দিলাম,,,
ড্রয়িং রুম দিয়ে যখন বাইরে বের হব তখনই আম্মুর ডাক,,,
— বাবা,,কোথায় যাচ্ছিস..?(আম্মু)
— আম্মু,,আর বলো না,,,তোমার এই নাতি যে পরিমাণ জেদি। আমাকে এখন নাকি তাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে হবে। (আমি)
— হাহাহাহাহা,,,ভালো হয়েছে। এবার বুঝো কত ধানে কত চাল। (আম্মু)
— আসি আম্মু..!!!
!
এইটা বলেই আমি বাইরে চলে এলাম।
কিন্তু বাইরে এসে প্রচুর পরিমানে অবাক হলাম।।।
কারন বাইরে বাইকের কাছে শিমলা দাঁড়িয়ে আছে।
আমি রনির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,,
— এই রনি,,এই মেয়ে এখানে কি করে..?(আমি)
— ওহ,,,ফুফু তো আমাদের সাথে ঘুরতে যাবে। তাই তো আমি ফুফুকে আগে থেকেই রেডি হয়ে থাকতে বলেছি। (রনি)
— মানে..? এই মেয়ে গেলে আমি যাবো না। (আমি)
— চাচ্চু,,তুমি তো খুব পচা। তুমি না একটু আগে আমাকে কথা দিয়েছিলে যে আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবে..?(রনি)
— হুম,,বলেছিলাম, কিন্তু এই মেয়ের সাথে আমি এক বাইকে যেতে পারব না। (আমি)
শিমলা আমাদের দিকে করুন ভাবে চেয়ে আছে।।।
— চাচ্চু এইবার কিন্তু আমি কান্না করে দিব। আমি ফুফুকে ছাড়া কোথাও ঘুরতে যাই না। আর এখনও ফুফুকে নিয়ে তারপরে যাব। (রনি)
এ কি মুশকিল পরলাম..? নিজেই নিজেকে গাধা বলতে ইচ্ছে করতেছে এখন। কেন যে সেধে বলতে গিয়েছিলাম যে ঘুরতে যাব.?
কিন্তু একটা বিষয় আমি ভালো বুঝলাম না। শিমলার তো বিয়ে হয়ে গেছে। তাহলে ও তো ওর জামাইকে নিয়েই ঘুরতে যাবে। শুধু শুধু কেন আমার সাথে যেতে চাচ্ছে..? কি বেহায়া মেয়েরে বাবা। একটাতে হয় না বোধহয়। আর শিমলা কি আমাদের বাসায়ই থাকে নাকি.? রনি একটু আগে বলল যে ও নাকি সবসময় শিমলার সাথে ঘুরতে যায়। কিছুই মাথায় ঢুকতেছে না। এইসব রনির কাছে জিজ্ঞেস না করাই ভালো। ছোট মানুষ ও কি করে এত কিছু জানবে.? তার চেয়ে ভালো আমি ভাবির কাছে জিজ্ঞেস করে নিবনে৷।।
— কি হলো চাচ্চু.?? চুপ করে দাঁড়িয়ে আছ কেন.??(আমাকে ধাক্কা দিয়ে)
— আচ্ছা,,,ঠিক আছে। চল..
।
— ইয়েএএএ…!
এরপর আমি বাইকে উঠে স্টার্ট দিলাম। সামনে রনিকে বসিয়ে নিলাম। এরপর পিছনে শিমলাকে উঠার জন্য চোখের ইশারা দিলাম।।
শিমলা আমার কাধে হাতে দিয়ে বাইকে উঠে পরল। তখন আমি কিছু সময়ের জন্য অন্য জগতে চলে গয়েছিলাম।কিন্তু নিজেকে সংযত করে বাইক চালানো শুরু করে দিলাম।
উদ্দেশ্য আমার সেই পুরনো কলেজ ক্যাম্পাস। কলেজ ক্যাম্পাসের আশেপাশে অনেক রকমের দোকান আছে। রনির আবদার সে নাকি ওখানে গিয়ে ফুচকা খাবে।
আর আমিও অনেক দিন ধরে কাছ থেকে কলেজ ক্যাম্পাসটা দেখি না। তাই ভাবলাম আজকে ওখান থেকেই ঘুরে আসি।।।
যেইভাব সেই কাজ। কিছু সময়………..
.
.
.
.
.
#চলবে…..??