#সিনিয়র_খালাতো_বোন
#part_13
#writer_srabon
আমি তো আকাশ থেকে পরলাম। চেনা নেই জানা নেই হুট করে কোথা থেকে এসেই তুই তুকারি করতেছে।
— কে আপনি..? আর আমাকে তুই করে বলতেছেন কেন.?? আমি কি আপনাকে চিনি.? (আমি)
ছেলেটা কিছু না বলে আমার হাত ধরে টেনে একটা ফাকা জায়গায় নিয়ে এলো।
আমি তো কিছুই বুঝতেছি না। ছেলেটা কি করার চেষ্টা করতেছে শুধু সেইটা বোঝার চেষ্টা করতেছি।।
— আরে ভাই,,,কে আপনি..? আর আমাকে এখানে নিয়ে এলেন কেন..?(আমি)
এইবার ছেলেটা আমার জামার কলার ধরে বলল,,
— ওই তুই আগে আমাকে বল তোর নাম কি..? আর ওই বাসায় এসেছিস কেন.? (ছেলেটা)
ইচ্ছে করতেছে ছেলেটাকে ইচ্ছে মতো ক্যালানি দেই। কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করে শান্ত হয়ে বললাম,,,
— আমি শ্রাবন আহমেদ। আর এইটা আমার কাজিনের বাসা। বিয়ে উপলক্ষে যাস্ট কয়েকদিনের জন্য ঘুরতে এসেছি এখানে। কিন্তু আপনি আমাকে এগুলো জিজ্ঞেস করতেছেন কেন..?(আমি মিথ্যা বললাম)
— ওই ব্যাটা,, ঘুরতে এসেছিস ভালো কথা। কিন্তু ছাদে বসে শিমলার সাথে কি কাজ তোর…? (ছেলেটা)
এইবার আমার কাছে সবটা পরিষ্কার হয়ে গেল। আমার মন হয় এই ছেলেটা শিমলাকে পছন্দ করে বা শিমলা আর এই ছেলেটা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড।
— ও আচ্ছা,,এই ব্যাপার। এইটা আপনি আমাকে আগে বলবেন না.?(আমি)
— হুম,,হুম ঠিক আছে। এরপর থেকে তোকে জেন আমি আর শিমলার আশেপাশেও না দেখি। (ছেলেটা)
— জী ভাই..! কিন্তু (আমি)
— কিন্তু কি..?(ছেলেটা)
— শিমলা কি আপনাকে পছন্দ করে..? মানে আপনি কি আপনারা মনের কথা তাকে বলেছেন.?(আমি)
— সেটা তোর জানার দরকার নেই। ফারদার তোকে জেন ওর কাছে আর না দেখি। যা এখন…..
ছেলেটা আরো কিছু বলতে যাবে তখনই,,, অসীম বাইক নিয়ে চলে এলো।
অসীমকে দেখে ছেলেটা আমার জামার কলার ছেড়ে দিয়ে,,,
— আসসালামু আলাইকুম ভাই..! কেমন আছেন.? (ছেলেটা)
আমি শুধু মনে মনে ভাবতেছি ছেলেটার এইবার কি হবে.? আমি তো ভালো হয়ে গেছি। কিন্তু অসীম তো আগের থেকেও.. তখনই
অসীম ঠাসসসস করে একটা চড় বসিয়ে দিল ছেলেটার গালে।।।
— ওই,,,তোকে এত সাহস কে দিয়েছি..? থাকিস আমার এলাকায়। আর আমার এলাকায় থেকেই ভাইয়ের জামার কলার ধরিস.??(অসীম)
— ভাই আমি তো কিছুই বুঝতেছি না..?(ছেলেটা)
— তুই জানিস এই যে কে..?(আমাকে দেখিয়ে)
— উনি কে ভাই.??(ছেলেটা)
— আমার বড় ভাইয়ের থেকে বেশি কিছু….. (অসীম)
— সরি ভাই,,ভুল হয়ে গেছে। আর কখন এমন হবে না। ভাইয়া আমাকে মাপ করে দেন। (ছেলেটা)
— আচ্ছা,,ঠিক আছে যাও তুমি.. (আমি)
— ওই খারা..! কই যাস তুই.?? আগে বল কি কারনে ভাইয়ের জামার কলার ধরেছিলি..?(অসীম)
— আসলে ভাইয়,,আমি শিমলা নামের একটা মেয়েকে পছন্দ করি আরকি। এই ভাই যে কাজিনের বাসায় এসেছে সেই..(সবটা খুলে বলল)
অসীম সবটা শুনে চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকায়। আমি কিছু না বলে মুচকি মুচকি হাসতে থাকি।
আবারো ঠাসসসস ঠাসসসস করে দুইটা থাপ্পড় পরল ছেলেটার গালে। ছেলেটা মুখে হাত দিয়ে অসীমের দিকে তাকিয়ে আছে।।
— তুই জানিস ভাই কার বাসায় এসেছে..?(অসীম)
— কাজিনের বাসায়। (ছেলেটা)
— ভাই তার নিজের বাসায় এসেছে। আর শিমলা তার খালাতো বোন হয়। (অসীম)
— সরি ভাইয়া…!(ছেলেটা)
— এখন থেকে শিমলাকে কি বলে ডাকবি বল..?(অসীম)
— আপু…!
— আপু না। শিমলা তোর ভাবী হয় এখন থেকে। (অসীম)
— মানে..?(ছেলেটা অবাক হয়ে)
— শ্রাবন ভাইয়া খুব তাড়াতাড়ি শিমলাকে বিয়ে করতে চলেছে। (অসীম)
অসীমের কথা শুনে আমি ওর দিকে রাগি ভাবে তাকাই।
— মানে,,, খালাতো বোনরে বিয়ে করবে.?(অবাক হয়ে)
— হুম…!
এরপর আমি আর অসীম বাইকে করে একটা রেস্টুরেন্টে চলে এলাম।।।
— ভাই এই অসময়ে রেস্টুরেন্টে কেন..?(অসীম)
— ধুর,,,আর বলিস না। দুপুরে রাগ করে ঠিক মতো খাবার খেতে পারি নাই।।(আমি)
— ও আচ্ছা..! ভাই একটা কথা জিজ্ঞেস করব..?(অসীম)
— হুম বলতে থাক..(অসীম)
— ভাই,,আপনি কি ভাবিকে আর ভালোবাসেন না.???(অসীম)
— ওর চেহারা কথা বাদই দিলাম, আমার তো ওর নামটা শুনলেও কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায়। এটা যদি ভালোবাসা হয়ে থাকে তাহলে হুম ভালোবাসি..!(আমি)
— তাহলে ভাই,,আপনি সব কিছু ঠিক করে নিচ্ছেন না কেন.?? আর আগে যখন ভাবিকে কেউ চোখ তুলে দেখত তখন তো আপনি তার ১২ টা বাজায় দিতেন। আর এখন কিছুই বলেন না। কারনটা কি ভাই..?(অসীম)
— সত্যি বলতে আমি কারো আলোকিত শহরে থাকতে চাই না। নিখোঁজ হয়ে থাকতে চাই আমি আমার শহরে। (আমি)
— মানে..??(অসীম)
খাবার খেতে খেতে আবার বলতে শুরু করলাম,,
— মানে,,আর কয়েকদিন পরে আবার ঢাকায় চলে যাব। সেখানে গিয়ে আবার আগের মতো হয়ে যাব। অফিস, খেলাধুলা আর ঘুম। বিন্দাস লাইফরে ভাই। কোন প্যারা নাই। (আমি)
— ভাই আমি জানি এটা আপনার মনের কথা না। আপনি ভাবির উপরে অভিমান করে এটা বলতেছেন। (অসীম)
— বাদ দে তো এই টপিক..! এখন বল তোর কি খবর.?? আর এই রেশমীটা কে.?? (আমি)
— ভাই ভালো আর কই থাকলাম যেদিন থেকে এই মেয়ে আমার লাইফে এসেছে। (অসীম)
— কেন খুব প্যারা দেয় নাকি.?(আমি)
— হুম ভাই,,তবে আমার কাছে বিষয়টা ভালোই লাগে। (অসীম হেসে)
— হাহাহাহাহা……!!!
— ভাই,,,খাবার খাওয়া শেষ হলে আপনাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাব। (অসীম)
— কোথায়..??(আমি)
— এখন বলব না। সেখানে গেলেই বুঝতে পারবেন। (অসীম)
— আচ্ছা..! ঠিক আছে চল..! আমার খাওয়া শেষ (আমি)
এরপর রেস্টুরেন্টের বিল মিটিয়ে অসীমের বাইকের পিছে উঠে পরলাম। কোথায় নিয়ে যায় দেখি..
প্রায় ২০ মিনিট পরে একটা বাসার সামনে এসে বাইক দাড় করালো অসীম।
বাসাটা বেশ বড়ই। তবে কার বাসা সেটা আমার জানা নেই।
— ভাই,,ভিতরে আসুন…(অসীম)
— কার বাসা এইটা..? আর আমকে এখানে নিয়ে এলি কেন..?(আমি)
— ভিতরে চলুন। ভিতরে গেলেই বুঝতে পারবেন।।(অসীম)
— আমার কিন্তু ভয় করতেছে। কি জানি আবার কোন কাজে ফাসিয়ে দিস। (আমি)
— ভাই আপনি অনেক ফান করতে পারেন। (অসীম হেসে)
অসীম বাসার সামনে এসে কলিং বেল বাজাতেই কেউ একজন এসে দরজা খুলে দিল।
— একি তুই একা কেন…? শ্রাবন আসে নাই.?
— হুম এসেছে..! পিছে আসতেছে
আমি অসীমের পিছনেই ছিলাম। গলার কন্ঠটা কেমন জানি চেনা চেনা লাগতেছে। কিন্তু ঠিক মনে করতে পারছিলাম না। সামনে এসেছে এসেই পুরো অবাক হয়ে যাই।
কারন আমার সামনে আমার কলেজ লাইফের ফ্রেন্ড রাহুল দাঁড়িয়ে ছিল। ব্যাটা আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরল।।
আমিও কি আর চুপ করি দাঁড়িয়ে থাকি? আমিও ওকে দেখে জরিয়ে ধরলাম।।
কিছু সময় পরে ছেড়ে দিয়ে বলল,,,
— আমাকে চিনতে পেরেছিস..??(রাহুল)
— না তো? কে রে ভাই তুই.?? (আমি)
— শালা হারামি….(রাহুল)
— হাহাহাহা,,,অসীম থ্যাঙ্কিউ। রাহুলের সাথে দেখা করিয়ে দেওয়ার জন্য। (আমি)
— আরে ভাই,,শুধু এটুকু দেখেই খুশি হয়ে গেলেন.? ভিতরে আরো অনেক সারপ্রাইজ বাকি আছে। (অসীম)
— তাই নাকি.?? তাহলে চল ভিতরে যাই…
— হুম..!!!
কিন্তু বাসার ভিতরে প্রবেশ করে তো আমার হার্টফেল করার অবস্থা। কারন ভিতরে প্রায় আমার সকল বন্ধু-বান্ধবীরা আছে। সেই কলেজ লাইফে শেষ বারের জন্য দেখা হয়েছিল। আর আজকে আবার। আমি তো ভেবেছিলাম সবাই আমাকে ভুলে গিয়েছে। কিন্তু এটা দেখছি আমার ভুল ধারণা।।।
— নেতার এতক্ষণে আসার সময় হলো..??(আরিফ)
আমি আরিফের কথা শুনে অনেক অবাক হয়ে গেলাম। কারন তখন আমি একটু কলেজের রাজনীতির ভিতরে ছিলাম। আর জানেনই তো বন্ধুরা কেমন হয়.? আমাকে সব গুলোতে মিলে নেতা নেতা বলে খেপানোর চেষ্টা করত।।
আর আজকে কয়েক বছর পরেও….!! What a surprise… 🥳
আমিও তখন যা বলতাম এখনো তাই বলে দিলাম,,
— আমি আপনাদের মাঝে নেতা হতে আসি না। শুধু আপনাদের মাঝে থেকে সুন্দরী সুন্দরী রমনীদেরকে খুঁজে আমার গার্লফ্রেন্ড বানাতে এসেছি। (আমি)
এইটা বলার সাথে সাথেই বান্ধবী গুলো লাফিয়ে উঠল,,
— হারামি এতদিন কই ছিলি..? তোর জন্য অপেক্ষা করতে করতে আমরা বুড়ী হয়ে গেছি। আর কয়েকটা তো এক বাচ্চার মাও হয়ে গেছে।
সবাই একসাথে হেসে উঠল..!
আমিও হাসতে লাগলাম। হটাৎ করেই এর মাঝে
কয়েকটা হারামি বন্ধু আমার কাছে এসে আমার চুল,নাক,মুখ ইত্যাদি ইত্যাদি টেনে দেখতে লাগল। আমি হা করে ওদের কান্ড দেখতেছি।
— কিরে এগুলো কি করতেছিস তোরা.??(আমি)
— না মানে,,চেক করে দেখতেছি তুই আসল নাকি নকল..!!
— শালা…(আমি)
— আমার বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। এখন আমাকে শালা বলে কন লাভ নেই।
— মানে.? অর্পির বিয়ে হয়ে গেছে.? হায় আল্লাহ আমাকে তুনি উঠাও নাও..🥺(আমি)
— ওরে বাটপার…
— একদমই বদলায় নি হারামি…
— তোরাও আগের মতোই আছিস। শুধু মেয়ে গুলো আগের থেকেও বেশি সুন্দর হয়ে গেছে। কিন্তু আফসোস কেউ যদি আমাকে বিয়ে করত এদের মধ্যে থেকে। (আমি)
সবাই আবার একসাথে হেসে উঠল..এইভাবে অনেক সময় মজা করলাম সকল বন্ধু-বান্ধবী মিলে। এই আড্ডা যেন শেষ হতেই চায় না। সকলের সাথে কথা শেষ করতে করতে প্রায় রাত ১০ টা বেজে গেছে।
এরপর সকলের থেকে কন্টাক্ট নাম্বার নিয়ে বিদায় নিয়ে যে যার বাসার দিকে রওনা দিয়ে যেতে লাগল।
আমি আর অসীম রাহুলকে বিদায় জানিয়ে বাইক নিয়ে বাসার দিকে যেতে লাগলাম।
মোবাইলে রার দশটা বেজে ত্রিশ মিনিট। ঠিক সেই সময় বাসার সামনে চলে এলাম।
— থ্যাংকস অসীম। আজকের রাতটা আমি কোন দিন ভুলব না। (আমি)
— ওয়েলকাম ভাই। আসি….
এরপর অসীম বাইক নিয়ে চলে গেল।
আমি বাসার সামনে এসে কলিং বেল বাজালাম। ভিতর থেকে ভাবি এসে দরজা খুলে দিল। কিন্তু ভিতরে প্রবেশ করেই……….
.
.
.
.
.
#চলবে…..??