সিন্ধু ইগল – (২০)

সিন্ধু ইগল – (২০)
ইসরাত জাহান দ্যুতি

ডাকঘরের পাশে জায়িন উৎফুল্লতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আজও তার চেহারাতে ছদ্মরূপের প্রলেপ। কেন যেন নিজের গায়ের প্রকৃত বর্ণের থেকে জায়িন তার শ্যাম বর্ণের এই ছদ্মরূপেই থাকতে পছন্দ করে ইদানীং। অভ্যাসটা এখন স্থায়ীরূপ নিয়েছে তার। নিজের কিছু কিছু কাণ্ড কারখানায় সে নিজেই হতবাক হয়ে মুচকি মুচকি হাসে মাঝেমাঝে। তার মতো মানুষও যে সাংঘাতিক প্রেমে পড়তে পারে, এ ব্যাপারটা শুরুতে তাকে যেমন অবাক করত তেমনই জাকিরও হয়েছে গতকাল৷ ভীষণ বিস্মিত হয়েছে জাকির। তবে বিশ্বাস করতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে ভাইয়ের, তা বুঝতে পেরেছে জায়িন।

এখন সে রাস্তার পাশের লাল বর্ণের ডাকঘরের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষাতে আছে সারার জন্য। সারার সাথে পরিচয়টা নাটকীয়ভাবেই শুরু করতে হয়েছে তাকে। শেষমেশ পাকিস্তানিও যে বাদ পড়বে না তার প্রেমিকাদের তালিকা থেকে, তা সে ভাবেনি। তবে সারা মেয়েটা বেশ দুঃখি৷ একটা ভরসার হাত খোঁজে সে। জায়িনের সাথে পরিচয় হবার পর থেকে সারা নিজেই আগ্রহ নিয়ে তার সাথে দ্বিতীয়বার যোগাযোগ করেছিল। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে চায় সে জায়িনের সাথে। এমন একটা আবদার নিয়েই দ্বিতীয়বার দেখা করে জায়িনের সাথে। মাত্র আটদিনের পরিচয়৷ জায়িন তার প্রতি খুব বেশি আগ্রহ না দেখালেও সারার সাথে রোজ দেখা করে সে কখনো বিকালে, কখনো সন্ধ্যার পর। আর তা সারার আবদারেই। দু’জন নিরিবিলি সময় কাটায় কোনো কফিশপে বসে। তবে আজ সারা নতুন আরেক আবদার নিয়ে আসবে তার কাছে, তা সে জানে। এটা ভেবেই তার ঠোঁটের কোণায় হাসি। নিজের চেহারা নিয়ে তার অহংকার না থাকলেও এই চেহারাকে সে খুব ধন্যবাদ জানায়। মানুষ যেন কী করে খুব দ্রুতই তাকে বিশ্বাস করে নেয় শুধু তার এই কায়া দেখেই।

দুদিন আগের আগের ঘটনা। সেদিন সারা কফিশপে দেখা করার বদলে বার রেস্টুরেন্ট আসে জায়িনকে নিয়ে। অনেক সময় দু’জন গল্পগুজব করে। সারার সময়ের দিকে হুঁশ না থাকলেও জায়িনের ঠিকই ছিল। কিন্তু সে চুপচাপ সময়ের ব্যাপারটা এড়িয়ে দেখে যাচ্ছিল সারাকে, এরপর কী করতে চায় মেয়েটা তা বোঝার জন্য। সারা সেদিন ইচ্ছা করেই যে অতিরিক্ত মদ খেয়েছিল তা জায়িন শুরুর দিকে টের না পেলেও পরে টের পায়। যখন সারা মাতাল হয়ে নিজের ঠিকানা ভুলে গেছে বলে জানায় তাকে। স্পষ্টভাবে জায়িন বুঝতে পারে সারার বাসনা। সেও তখন আর দ্বিরুক্তি করেনি। হোটেল নিয়ে চলে আসে সে সারাকে। তবে নিজেকে তখনো ধরা দেয়নি ওর কাছে। সারা কতটুকু মরিহা তা দেখার জন্য সে ওর থেকে দূরে সরে সরে থেকে অপেক্ষা করতে থাকে। আর সেই অপেক্ষা খুব বেশি সময়ও করতে হয়নি। কারণ, সারা নিজেই ধৈর্যহীনতার পরিচয় দিয়েছিল। পরের দিন সকালে সারা তার থেকে হাসিখুশিভাবে বিদায় নিয়ে চলে যায়। কিন্তু জায়িন ইচ্ছা করেই সেই দিন থেকে পুরো একদিন একেবারে সারার সাথে যোগাযোগ করে না। তাই গতরাতেই সারা পাগল হয়ে তার সঙ্গে দেখা করবে বলে ইমেইল করে জানায়।

কোনো মেয়ের কাছে পৌঁছতেও যে জায়িন মাহতাবকে এক কাঠখড় পোড়াতে হবে, এমনটা সে নিজেও নিজের থেকে আশা করেনি। কথাটা ভেবেই সে আয়মানের মুখটা চোখ বন্ধ করে কল্পনা করল একবার।

সারা আগের দিনগুলোর তুলনায় আজ আরও বেশি পরিপাটি, সাজসোজ্জা রূপ নিয়ে এসে দাঁড়াল জায়িনের সামনে। সকাল এগারোটা বাজে এখন। আজ সারা তার কর্মস্থানে যাবে না৷ জায়িন প্যান্টের পকেট থেকে বাঁ হাতটা বের করে মুচকি হেসে হাতটা বাড়িয়ে দিলো সারার দিকে। সারা প্রাণবন্ত হাসিটা মুখে ঝুলিয়ে জায়িনের হাতটা আঁকড়ে ধরে পেভমেন্ট ধরে হেঁটে সামনে এগোলো৷ ফুটওয়ে কফিশপে বসল তারা। কিছু সময় দু’জন এটা সেটা বলে সময় কাটাতে থাকল। কফিতে চুমুক দিয়ে সারা হঠাৎ করেই জায়িনকে জিজ্ঞেস করল, ‘আমাকে তোমার কেমন লাগে, রাজ?’
প্রশ্নটার জন্য জায়িন পূর্ব থেকেই প্রস্তুত ছিল। ঠোঁটের প্রশংসিত হাসিটা ধরে রেখে উত্তর দিলো, ‘ফেসবুকে অ্যাবরোড এর বহু মেয়ের সাথেই পরিচয়, কথাবার্তা হয়েছে। তাদের মাঝে পাকিস্তানি প্রিটি গার্লসও ছিল৷ বরাবরই তোমরা সৌন্দর্যের আরেক প্রতীক।’
সারা মাথাটা নেড়ে বলল, ‘উহুঁ, শুধু সৌন্দর্য নয়৷ আমি জিজ্ঞেস করছি পুরো আমিটাকে তোমার কেমন লাগে?’
জায়িন এবার সারার গালটা টেনে বলল, ‘স্ট্রেইট বলছ না কেন আমি তোমাকে পছন্দ করি কি না?’
সারা হেসে ফেলল, ‘আমি অল্প কিছুদিনেই তোমার ওপর ফল করে গেছি।’
ফিচেল হেসে জায়িন জিজ্ঞেস করল, ‘দু’দিন আগের রাতটার জন্য এমনটা মনে হচ্ছে না তো তোমার?’
-‘একদমই না। তোমার সাথে পরিচয় হবার পর থেকেই ভালো লেগেছিল তোমাকে। এ জন্যই তোমাকে বিরক্ত করতাম দেখা করার আবদার ধরে। আর তারপর তোমার সম্পর্কে জানার পর, কিছুদিনে কথা হবার পর বুঝতে পারছি আমি সেকেণ্ড টাইম আবারও ভালোবাসতে চাইছি কাউকে।’
কেমন রহস্য ভরা সুরে বলল জায়িন, ‘যদি প্রথমবারের মতো এবারও ঠকে যাও? এতটা বিশ্বাস করা কি উচিত?’
সারা হেসেই উত্তর জানাল, ‘তুমি সেই শুরু থেকে নিজেকে ব্যাড গায় বলে দাবি করে আসছ৷ যে খারাপ সে কি এভাবে অ্যালার্ট করে?’
-‘ভালো হলে কি তোমাকে আমার সঙ্গে হোটেল নিয়ে এসে তোমার থেকে সুযোগ নিতাম?’
প্রশ্নটায় সারা একটু বিব্রতবোধ করল, তারপর বলল, ‘সুযোগটা আমিই তোমাকে দিয়েছিলাম, রাজ।’
জায়িন এবার হাসল। সারার হাতটা ধরে বলল, ‘আমি তোমার থেকে সুযোগ অবশ্যই নিয়েছি। চাইলেই পারতাম তোমার থেকে দূরে থাকার। এভাবে হুট করে ডিসিশন নিয়ো না। আর কিছুদিন আমাকে জানো, বুঝতে চেষ্টা করো। তারপর ফাইনাল ডিসিশন জানাও। যেটাই জানাবে তখন, মেনে নেব সেটাই।’
কথাগুলো সারার এতটা ভালো লাগল যে, খুব বলতে ইচ্ছা করল তার জায়িনকে, ‘আমি যে এবার আরও বেশি ফল করে যাচ্ছি, রাজ।’
জায়িনের হাতটা দু’হাতে জড়িয়ে ধরে প্রশস্ত হেসে সম্মতি জানাল ওকে।

তারপর সারাদিনটাই জায়িন সারার সঙ্গে ঘুরেফিরে কাটাল। আজও সারার চোখে সে পূর্বের দিনের বাসনা দেখেছিল। কিন্তু ইচ্ছা করেই সে আজ এড়িয়ে গেছে। তবে সত্যি করে মনে প্রাণে চাইছিল সে, রাতে সারার মতো চমৎকার সুন্দরীর মাঝে ডুবে থাকতে। তবে সারাকে আজ সে চায় না।
◑_______

ভারী চোখের পাতা খুব কষ্টে টেনে টেনে খোলার অতীব চেষ্টা করছে জায়িন। চোখের সামনে বোধ হয় কড়া কোনো আলো। যার জন্য চোখজোড়া খোলার পরও তাকিয়ে থাকা দুষ্কর লাগছে তার। চোখদু’টো ডলার জন্য হাতটাও নাড়াতে পারছে না সে৷ দু’চার মিনিট সময় কাটল অজানা ঘোর থেকে বেরিয়ে পরিস্কারভাবে দেখার জন্য। হ্যাঁ, সে কোথাও শুয়ে আছে৷ তার চোখের সামনে সাদা রঙা দেয়াল, ছাদ। চারপাশটা তাকিয়ে বুঝল কোনো ঘরে আছে সে এই মুহূর্তে৷ আর ঘরটাতে লাইট জ্বলছে। মস্তিষ্ক উঠে বসার জন্য তাড়া দিলেও হাত, পা, শরীর, কিছুই নড়ছে না। তার আদেশ যেন মানছে না অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো। অবস্থা তাহলে কি খুব ভয়াবহ?

সারার সঙ্গে সারাদিনে সময় কাটিয়ে গিয়েছিল সে শপিং সেন্টার। শপিং শেষে বেরিয়ে রোজকার মতো আয়মানের আড্ডা দেওয়ার জায়গাটিতে চলে যায়, তাকে কিছু সময় শুধু দেখার জন্য। দেখতে পেয়েছিলও আয়মানকে। কয়েকজন মেয়েদের সঙ্গে বসে ড্রিঙ্কস নিচ্ছে আর গল্প করছে। বিশ মিনিটের মতো ছিল হয়তো সে আয়মানের আশেপাশে। রাত বাজে তখন দশটা। বরাবরের মতোই মাসকটের রাস্তাঘাট শুনশান। হোটেলে ফেরার জন্য সেন্ট্রাল রেল স্টেশনের দিকে আবার এগোয়। কিন্তু সেখানে পৌঁছবার পূর্বে খুব কাছ থেকে কারও ডাক শুনতে পায় সে। মেয়েলী কণ্ঠ। জায়িন বলেই ডাকছিল সে। আর ভুলটা করল তখনই জায়িন। পিছু ফিরে তাকাতে দেরি কিন্তু পাওডার জাতীয় স্প্রে তার নাকে মুখে মারতে দেরি নেই৷

কত সময় বাদে জ্ঞান ফিরল তা জানা নেই। তবে এত দারুণ একটি কাজ যে আয়মান ছাড়া কারও দ্বারা সম্ভব নয়, তা নিশ্চিত জায়িন। কীভাবে আয়মান অবধি পৌঁছল তার খবর? নিশা জানিয়ে তাকে অ্যালার্ট করেছিল কি? উহুঁ, তা সম্ভব নয়। নিশা বা এহসান যাতে কেউ আয়মানকে কোনো কিছু না জানায় তার জন্য নিশার ভাইয়ের পিছে সব সময় দু’জন লোক ঠিক করে এসেছে সে। তাহলে শেষমেশ মেগানের দ্বারাই ক্ষতিটা হলো তার? মেগানকে স্পেশাল টর্চার থ্যারাপি দিয়ে ওর থেকে যে সবটা জেনে নিয়েছে আয়মান সেদিনই, তা এখন বুঝতে পারল জায়িন। আর মেগানকেও নিশ্চয়ই আয়মান তার নিজের শিখিয়ে দেওয়া বুলিই আওড়াতে বলেছিল যে, সে জায়িনের বিষয়ে কোনো কিছুই জানায়নি ওদেরকে৷ জায়িন যাতে সাবধান না হতে পারে, এ কারণেই মেগানকে দিয়ে মিথ্যা বলানো হয়েছে।

সবটা মানতে পারলেও নিজের দেহের অসার ভাব মানতে পারছে না জায়িন। সে খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করছে, তার শরীরের প্রতিটা অঙ্গ অচল রূপে আছে। কী করা হয়েছে তার সাথে? বেশ ঘাবড়ে গেল জায়িন। তাকে ধরে ফেলাতে একটুও বিচলিত হয়নি সে। কিন্তু শরীরের এই দশা মেনে নিতে পারছে না সে একেবারেই। তবে চুপচাপ রইল। শুধু কানটা খাঁড়া করে রইল, কারও আসার আওয়াজ শোনার অপেক্ষায়। চোখদু’টো বুজে রইল, এখনো ঝিমুনি ভাবটা আছে বলে।

আধা ঘণ্টা অতিবাহিত হতেই ঠিক শোনা গেল, ঘরে কেউ আসছে। ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় জানান দিলো জায়িনকে আয়মান তার সামনে এসে দাঁড়াবে, মুখে সরল হাসিটা নিয়ে। তার ধারণা সঠিক হলো বটে, তবে সাথে আরও একটি মুখ আবিষ্কার করল সে। যাকে সে চেনে না। আয়মানের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে৷ অচেনা মেয়েটিকে চেনার বৃথা চেষ্টা না করে সে আয়মানের মুখটাতেই চেয়ে রইল। সত্যিই ওর হাসিটা দেখে জায়িন নিজেও মৃদু হেসে উঠল। কালো ফুল স্লিভ টি শার্ট আর ধূসর রঙা লেডিস মোবাইল প্যান্ট পরনে আয়মানের। টি শার্টের স্লিভ কনুই অবধি গুটিয়ে রেখে প্যান্টের পকেটে দু’হাত পুরে দাঁড়িয়ে জায়িনের দিকে চেয়ে মুচকি মুচকি হাসছে সে। এই পরিস্থিতিতেও জায়িন আয়মানের হাসি নিয়ে চিন্তা করে দারুণ একটি ব্যাপার আবিষ্কার করে ফেলল। তার আর আয়মানের মুচকি হাসির ধরনটা একেবারে একইরকম। সে এও ভাবল, নিজের সাথে আরও অনেক কিছুরই মিল পাবে সে আয়মানের।

জাইমাকে ইশারায় আদেশ করল আয়মান, হুইল চেয়ারটা নিয়ে আসার জন্য। অতি দ্রুতই সে আদেশ মান্য করে একটা হুইল চেয়ার নিয়ে এল বিছানার সামনে। তারপর দু’জন মিলে জায়িনকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে দিলো। জাইমাকে আবার ইশারা করল ঘরের বাইরে গিয়ে দাঁড়াতে৷ মাথা নেড়ে সায় দিয়ে জাইমা বেরিয়ে যেতেই আয়মান মৃদু হাস্যযুক্ত অভিব্যক্তি নিয়ে হাঁটু গেঁড়ে বসল জায়িনের সামনে৷ শরীরটাকে নিথর বানিয়ে রেখেছে আয়মান। এটা ভাবতেই আকাশ সমান রাগ লাগছে জায়িনের। তবে চেহারাতে তা এক ফোঁটাও প্রকাশ করছে না সে। স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আয়মানের দিকে। নব্বই দশকের পিক্সি হেয়ার কাট দেওয়া চুলগুলো মাথার দুদিকে এবং পেছনে চুল ছোট করে কাটা। আর সামনের দিকে এবং কপালের উপর লম্বা, চপি লেয়ার। গোলগাল মুখটার সামনের দিকে চুল বেশি বড় রেখেছে সে। অস্ট্রেলিয়াতে আসার পর একদমই ভিন্নরূপে দেখছে জায়িন আয়মানকে। তবে আজই এত কাছ থেকে দেখার সুযোগ হলো। এই মেয়েটিকে যে সামনে আরও নানাভাবে আবিষ্কার করবে সে, তা বুঝতে পারছে।

-‘জিহ্বা তো চলবে। ওটাকে নিশ্চল করিনি। কথা বলতে পারবে।’
বলে হাসতে থাকল আয়মান। জায়িন জড়ানো কণ্ঠে বলল, ‘এ কেমন পদ্ধতি শত্রুকে হিট করার? দুর্বলের সামনে বিড়ালও নিজেকে বাঘ মনে করে।’
-‘বাপরে! তুমি যেই লেভেলের রোম্যান্টিক পুরুষ, বলা যায় না কখন হামলে পড়ো আবার চুমু খাওয়ার জন্য।’
জায়িন হেসে উঠল, ‘স্থির অবস্থায় তো কখনো সুযোগটা দেবে না। বাধ্য হয়ে আচমকা আক্রমণ করতে হয়, নয়তো মাতাল সময়ের।’
-‘মাতাল সময়ের?’ জিজ্ঞাসু দৃষ্টি আয়মানের।
জায়িন মিটিমিটি হাসতে হাসতে বলল, ‘স্বাভাবিকভাবে চুমু খেতে দিলে তো আর দেয়াল টপকে লনে এসে চুরি করে খেতাম না। তাই সেদিন ইচ্ছা করেই ঠোঁটদু’টোকে দীর্ঘক্ষণ চেপে ধরে রেখেছিলাম। জানতাম সুযোগ তো সহজে আর পাওয়া যাবে না।’
আয়মান শীতল দৃষ্টিতে চেয়ে রইল জায়িনের। যেন এ কথায় তার মাঝে কোনো ভাবান্তর হয়নি। জায়িন তা দেখে জিজ্ঞেস করল, ‘ভীষণ রাগ হচ্ছে?’
অবিচলভাবেই জবাব দিলো আয়মান, ‘ভীষণ।’
-‘কিন্তু তোমার অভিব্যক্তিতে তা প্রকাশ পাচ্ছে না।’
আয়মান এবার আগের মতো করে হেসে বলল, ‘চেহারাতে প্রকাশ পাওয়া জরুরি নয় যে, তাই।’
জায়িন এবার আরেকটি মিল আবিষ্কাল করল নিজের সাথে আয়মানের। সেও রেগে থাকলে তা চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই৷ এমনই অচঞ্চল দেখায় তাকেও।

উঠে দাঁড়িয়ে জায়িনের দিকে ঝুঁকে পড়ল আয়মান। জায়িনের সারা মুখে চোখদুটো বিচরণ করল তার। বলল, ‘সুন্দর মানুষদের জীবনে বিপদআপদ, ভোগান্তি বেশি থাকে না কি?’
-‘হয়তো। তুমিই তার এক্সাম্পল।’
এ কথার কোনো উত্তর দিলো না আয়মান। ক্ষণিক সময় নিরব থেকে বলল, ‘মৃত্যুদূত তোমার সামনে এসে না দাঁড়ানো অবধি সুন্দর দেহটাকে আর সবল রূপে পাবে না।’
-‘মৃত্যুর আগে আমি কি কিছুই আশা করতে পারি না?’
সামান্য হাসল আয়মান। যে হাসিতে জায়িনের জন্য একটুখানি বদান্যতা আছে। বলল, ‘মৃত্যুর পূর্বে মানুষের কত কিছু খাওয়ার সাধ জাগে! আমিও তোমার যে-কোনো খাবার খাওয়ার সাধ পূরণ করব। আমিও চাই না অতৃপ্ত হয়ে মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করো আর এত দ্রুত আমাকে বিদায় দাও।’
কৃতজ্ঞতা প্রকাশে জায়িন প্রশস্ত হাসি হাসল।

__________________
***পাঠকের পাঠ প্রতিক্রিয়া বা মন্তব্য প্রকাশ ছাড়া কোনো লেখকই লেখার প্রতি আগ্রহ নিয়ে এগোতে পারে না। তাদের বোঝার উপায় নেই, আদৌ তার পাঠক তার লেখা গ্রহণ করছে কি না। আজকে কত নিরব পাঠক মন্তব্য করে আমাকে বোঝালেন। গল্পের প্রতি আপনাদের টান কতটুকু তা প্রকাশ করলেন। অথচ কখনো একটা লাইন গল্পের পর্বগুলোতে লিখে প্রকাশ করেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here