“মা তোমার ফেইসবুক আইডির নাম কি? ”
ভদ্রলোকের এহেন প্রশ্নে বেশ অবাক হলাম। এর আগে যারা দেখতে এসেছিলো তাদের সবাই জিজ্ঞেস করেছে, মা তোমার নাম কি! আর আজকের ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করছে ফেইসবুক আইডির নাম কি।
-কি হলো মা সংকোচ কিসের এত? আজকালকার ছেলে মেয়েরা তো সবাই ফেইসবুক চালায় এ আর নতুন কি! বলো তোমার আইডি নাম টা।
ভদ্রলোকের দিকে দু সেকেন্ড তাকিয়ে জবাব দিলাম,
-জ্বী অবনী রায়।
– বেশ সুন্দর নাম। তা মা ছবি কার দেওয়া আছে?
-আমার।
উনি পকেট থেকে ফোন বের করে কিছুক্ষণ টিপাটিপি করলে আর তারপর বললেন,
-বাহ পোস্ট গুলো বেশ রোমান্টিক, আমার পছন্দ হয়েছে। তোমাকে ছেলের বৌ করতে আমার আপত্তি নেই। তুমি এখন ঘরে যাও মা।
সবার সামনে থেকে উঠে আসার সময় উনি আবার পিছু ডাকলেন,
-শোন প্রিন্সেস অবনী, আমার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট টা একসেপ্ট করিয়ো।
ঘরে বসে ভাবছি এ ও কি সম্ভব ? হবু শ্বশুর মশাই ফেইসবুক আইডি ও চালায়। বেশ মজার মানুষ তো। সাত পাচঁ ভেবে ফেইসবুকে লগইন করলাম আইডি, ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট চেক করে অবাক, “রিয়াক্ট বয় দীসু’ এইটা কেমন আইডি নাম?
যতদুর শুনেছি ভদ্রলোকের নাম দীনেশ।আর এখানে দেখি সংক্ষেপে দীসু। আইডি ঘুরে আরেক দফায় অবাক হয়ে গেলাম, কি সব লিখে রেখেছে বায়োতে।
“শোন মেয়ে ভাব দেখাবেনা তোমার ভাব দেখার সময় নেই আমার।
“ইজি বাপের বিজি পোলা।
“পাশে থাকবি, পাশে পাবি।
“সলিট রিয়াক্টর।
“ওগো মেয়ে তোমার রুপে পাগল আমি সে কি বুঝো?
“শোন মেয়ে তোমার আজাইরা ভাব দেখার সময় নাই, তুমি যে স্কুলে ভাব শিখছো আমি ওই স্কুলের হেড মাষ্টার।
মাথায় হাত পড়ে গেলো আমার এসব কিহ? মাকে দেখাতেই মা বলল,
-অবনী হতে পারে কেউ বদমাইশি করে এসব লিখে দিয়েছে। ভদ্রলোক হয়ত কারো থেকে খুলে নিয়েছে আইডি টা।আর তাছাড়া শোভনের বাপের আইডি তে কি আসে যায়, শোভন বেশ ভদ্র ছেলে। ভালো চাকরি করে, স্যালারী ও বেশ ভালোই। তুই যাই বলিশ না কেন এই বিয়ে আমি ভাঙতে পারব না,তোর শোভন কেই বিয়ে করতে হবে।
বেশ কিছুক্ষণ ভাবলাম বসে।
আসলেই তো শোভন কে বিয়ে না করার কোন কারণ হয়না ওর এই বাপের আইডির জন্য।
সাত পাচঁ না ভেবে বিয়ের পিড়িতে বসলাম।
বিয়ের একমাস নিলয়দার ফোন,
-অবনী এটা কি হচ্ছে? তুই আমার মামাতো বোন বলেই আজ তোর শ্বশুর কে কিছু বললাম না। কিন্ত ওনাকে বলে দিস এভাবে যদি আমার মানসম্মান নিয়ে টানাটানি করে তাহলে ওনাকে ছেড়ে কথা বলব না আমি। আমি ভুলে যাব উনি আমার আত্নীয়। ছি ছি এই বুড়ো বয়সে ভীমরতি।
নিলয়দাকে কাঠখড় পুড়িয়ে শান্ত করলাম আর তারপর জানতে পারলাম ওর রাগের কারণ।
আজ সকালে পিসিমনি ফেইসবুকে নতুন ছবি আপলোড করেছে আর তাতেই আমার রিয়াক্ট বয় দীসু শ্বশুর মশাই কমেন্ট করেছে,
“তুমিও একা আমিও একা লাগে কি যে ভালো ওপ্রিয়।
ব্যাস মুহুর্তেই কমেন্ট এ গোটা পঞ্চাশেক হাহা রিয়াক্ট আর সাথে পরিচিত মানুষদের কমেন্ট।
বেশ লজ্জায় পড়ে গেলাম ব্যাপার টা নিয়ে।একদিকে উনি গুরুজন আবার আরেকদিকে শ্বশুরমশাই। না পাচ্ছি কিছু বলতে আর না পাচ্ছি ওনার এসব কাজকর্ম সহ্য করতে।
শোভন বাড়ি আসতেই ওকে রেগে বললাম,
-বাবাকে ঠিক করবে নাকি আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাব?
শোভন বেশ অবাক হয়ে গেল আমার কথায়। জিজ্ঞেস করলো,
-অবনী কি করেছে বাবা?
-কি করে নাই বলো?
বেশ ঝাঝালো কন্ঠে বললাম।
শোভন সব শুনে বলল,
-দেখো আমার বাবা সারাজীবন আমার জন্য কষ্ট করে গেছে। যখন ছয়মাস বয়স আমার ঠিক তখন মা মারা যায়। উনি সেই ছয়মাস বয়স থেকে আমাকে কষ্ট করে বড় করেছেন। একটা মা যেমন সন্তান কে বড় করার পাশাপাশি কাজ করে যায় ঠিক তেমন ভাবেই আমার বাবা আমাকে সামলিয়ে অফিস করেছে আবার আমাকে কোলে নিয়ে রান্না পর্যন্ত করে গেছে। নিজে কষ্ট করার পরেও আমাকে কখনো কোন কিছুর অভাব বুঝতে দেয়নি আর এতদিন পর সেই বাবাই আমার থেকে অনুমতি নিয়েছে একটু নিজের মতো চলার, আমি তাকে বাধা দিতে পারিনা। আর দিবোও না।আমার বাবাকে না দোষ দিয়ে নিজের পিসিমনির দিকে একটু তাকাও, নিশ্চয়ই উনি প্রশ্রয় দিয়েছেন।
-তুমি এসব কি বলছো ?
-দেখো অবনী, আমার বাবা কোন খারাপ কথা বলেনাই তোমার পিসিমনিকে।একটা ছেলে একটা মেয়েকে টোন কাটবে এটাই স্বাভাবিক। আর তুমিও একা আমিও একা লাগে কি যে ভালো, ও প্রিয় এটা কোন অশ্লীল কমেন্ট নয়।
শোভনের কথা শুনে আর কথা বাড়ালাম না তবে শেষ বারের মতো জিজ্ঞেস করলাম,
-তুমি বাবাকে কিছু বলবে না?
শোভন ঠান্ডা স্বরে জবাব দিলো, “প্রশ্নই আসে না।
সেদিনের মতো চুপচাপ রইলাম। এর বেশ কিছুদিন পর আমার বান্ধবী ফোন দিয়ে বলল,
-কি রে অবনী এটা আমি কি দেখছি?
– তুই কি দেখছিস আমি কি জানি আশ্চর্য।
-আরে শোন শোন, তোর শ্বশুর কোথায় রে?
-কোথায় আবার বাজারে হয়তো।কিন্ত তুই আমার শ্বশুর কে খুজছিস কেন?
রিক্তা হাসতে হাসতে বলল তোকে একটা পিকচার পাঠিয়ে দিচ্ছি ইনবক্স চেক কর।
কল কেটে মেসেঞ্জারে ঢুকলাম, দেখি শ্বশুরের ছবি পাঠিয়েছে,কি সব অদ্ভুত ড্রেস পরে আছেন তিনি।
পড়নে ছেড়াঁ জিন্স হাতা কাটা গেঞ্জি গলায় একটা লম্বা লকেট আবার মাথায় একটা লাল চশমা তুলে রাখা।
এইটা আমার শ্বশুর নাকি তার মতো দেখতে অন্যকেউ? কয়েক মিনিট তাকিয়ে মনে হলো না আর যাই হোক না কেন এটা আমার শ্বশুর হতে পারেনা।ভদ্রলোক আর যাই হোক এমন ড্রেসাপে ঘুরে বেড়াবে এটা হতেই পারেনা।
বান্ধবীর সাথে এই নিয়ে একরকম তর্ক হয়ে গেলো।ও বলে এইটাই তোর শ্বশুর আর আমি বলি না।শেষ মেষ হাজার টাকা বাজি ধরাও হয়ে গেলো।
বাসায় বসে অপেক্ষা করছি কখন শ্বশুর মশাই আসে, কিছুক্ষণের মধ্যে অপেক্ষার অবশন ঘটিয়ে তার আগমন।
-হেই বৌমা দেখো তো আমায় কেমন দেখাচ্ছে?
শ্বশুরের পা থেকে মাথা অব্দি পাচঁ ছয়বার তাকালাম,
-বাবা এসব কি?
মুচকি হেসে জবাব দিলেন,
-ফ্যাশন বৌমা। আগে বলো তো কেমন লাগছে আমায়।
এমন অবস্থা একেতো আমি বাজিতে হেরে গেছি এক হাজার টাকা গচ্ছা গেলো আবার তার উপর শ্বশুরের এমন কথা, মুখের উপর কিছু বলতেও পাচ্ছিনা।
-জ্বী বাবা ভালো লাগছে৷
-দেখেছো চুলটা কালার করেছি আর এই জুতা টা এটাও আজ কিনেছি।
প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে বললাম,
-ঠিক আছে বাবা আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাবার দিচ্ছি।
-আরে বৌমা শোনো শোনো, কোথায় যাচ্ছো আগে একটা ছবি তুলে দাও আমার।
এখন কিছু বলে লাভ ও নাই, এক প্রকার নাছোড়বান্দা তিনি।বাধ্য হয়েই ছবি তুলে দিলাম সে কি পোজ ওনার । দুহাত দিয়ে লাভ এঙ্গেলে দাড়িয়ে।
রাতের সব কাজ সেরে ফেইসবুকে ঢুকলাম, শোভন এখনো আসেনি ও এলে খেয়ে ঘুমাবো।নিউজ ফিড ক্রল করতে করতে শ্বশুরের পোস্ট সামনে এসে হাজির।
লাভ এঙ্গেলের ছবি ছেড়ে ক্যাপশন দিয়েছে,
“বালিকা এই বুকটায় শুধু তোমারি ঠিকানা।
পোস্ট এ শতাধিক লাভ রিয়াক্ট। কমেন্ট বক্স ঢুকে দেখে এর মধ্যে শোভন ও কমেন্ট করে ফেলেছে,
“ওয়াও বাবা দারুণ লাগছে তোমায়”
পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেলো বাপ বেড়াচ্ছে ঢং করে আর ছেলে তাতে সায় দিয়ে যাচ্ছে। শোভন রে তুই শুধু বাড়ি আয় একবার আর তোরে খাইছি।
…
চলবে…
#সীমারেখা
@অবনী