সীমারেখা পর্ব ৩

#সীমারেখা
০৩
__________অবনী রায়

শোভন প্রায় রেগেই আমাকে বলল,“তোমার সমস্যা কি অবনী। তুমি সব ছেড়ে আমার বাবার পেছনে কেনো পড়েছো?
আমি অবাক হয়ে যাই এদের বাপ ছেলের ব্যাবহারে। একজন যা তা করে বেড়াচ্ছে আর অপর জন প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। রাগ বেড়ে যাচ্ছে এদিকে তারপর ও কিছু টা শান্ত ভাবেই শোভন কে বললাম,
-দেখো বাবার খারাপ আমি চাইনা কিন্ত ওনার কার্যকলাপ মোটেও ভালো নয়।মানুষ কি এগুলো দেখে খুব ভালো বলে তোমার মনে হয়? মানসম্মান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আর তুমি বসে বসে ইনজয় করছো?
-দেখো অবনী প্রথমত আমি মানুষের খাইনা পড়িনা, কোন কিছুই তাদের নেই না তাহলে তাদের ধার কেনো ধারব? আজকে আমি আর তুমি দু বেলা না খেয়ে থাকলে ওরা খেতে দিবেনা। ইভেন তুমিও আমার পকেট খালি থাকলে বড়জোর একমাস থেকে এক বছর থাকবা, কিন্ত তারপর ঠিকি ছেড়ে চলে যাবা হাজার টা বাহানা নিয়ে।এত কিছু র মধ্যে যদি অন্যেরা আমার কোন কাজে না আসে তাহলে ওদের কথা কেনো শুনব আমি? আমার হাজার অপরাধ, হাজার বাহানা আর হাজার চাওয়া যে মানুষ টা পুরণ করতে পারে তার জন্য আমি কিছু কথা এমনিতেই শুনতে পারি আর তাছাড়া ও তাদের কথায় কিছু যায় আসেনা আমার।যদি পারো তো বাইরের লোকদের জন্য বোবা কালা হয়ে থাকো আর না পারলে তুমি আসতে পারো।

শোভন যা বলেছে তা মন্দ নয়, অন্যের কথায় যে চলে সে কখনো সামনে এগিয়ে যেতে পারেনা। ওকে বলার মতো আর কিছু নাই আমার, আবার রাগ ও হলাম অনেক, কেমন যেন মানুষ টা সোজাসুজি বলে দিলো বোবা কালা না হয়ে থাকতে পারলে তুমি আসতে পারো।অবশ্য মন্দ ও না বাবার থেকে তো আর বউ বেশি হয়না। কিন্ত মাসি মনির ছবি লাগিয়েছে শ্বশুর আমার এটাই বা মানি কি করে।কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই মাসিমনি সামনে এসে খাড়া।
-এসব কি অবনী?
আমার বুঝতে বাকি রইলো না, মাসি কি বলবে। সে রাগী উনি আজ যে আমার পিন্ডি চটকাবে না তার কোন গ্যারান্টি নাই।
না জানার ভাব করে বললাম,
-কি হয়েছে মাসি ?
মাসি তার মোবাইল টা সামনে ধরলেন।
-তোর শ্বশুর এটা কি করছে? সংসার টা কি আমার ভাঙ্গতে চায় উনি? এ ফোন কর ওনাকে।
অবস্থা বেগতিক এখন যদি শ্বশুর মশাইকে কল দিয়ে মাসির হাতে ফোন দেই তাহলে তুলকালাম ঘটে যাবে। আবার যদি না দেই তো আমার বারোটা বেজে যাবে।কোনরকম নিজেকে বাচার তাগিদে বললাম,
-মাসি আমার ফোনের ব্যালেন্স শেষ। তুমি বরং নাম্বার নিয়ে তোমার ফোন দিয়ে কল দাও।
– দে নাম্বার দে আজ বুড়োর একদিন কি আমার একদিন।
প্রায় পাচঁ মিনিট হয়ে গেছে মাসি ফোনে চিল্লাচিল্লি করছে আর আমি বসে বসে শুনছি। অবস্থা বেগতিক প্রায়, মাসি এক পর্যায়ে আপনি থেকে তুই তুকারী তে নেমে গেছে।
এবার মাসি দেখি ডিরেক্ট বলতেছে, “ ওলেলেলে লে আ আলেলেলে,, অনেক কেই দেখেছি আমি যারা ঝগড়া করার সময় কোন নিদিষ্ট গালি যখন খুজে না পায় তখন মুখ থেকে এমন আজব শব্দ সুর করে বের করে।
প্রায় সাত আট মিনিট পর মাসি ফোন কেটে বাইরে বের হয়ে গেলো।বুঝতে পারলাম না কি হলো তবে মাসি যে আমার রিয়াক্ট বয় দীসু শ্বশুর এর কাছে কথায় হেরে গেছে এইটা বুঝতে বাকি রইলো না আমার।

রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে গেছে সবে নয় টা বাজে। কিন্ত এর মধ্যে আমার রিয়াক্ট বয় দীসু শ্বশুর বাড়িতে এসে হাজির।পরনে লাল টিশার্ট, সাথে থ্রি কোয়াটার প্যান্ট।
বেয়াই বাড়িতে এসেছে একটু যদি ভদ্র ড্রেস এ আসতো হায় ভগবান।লুঙ্গি পড়লেও মেনে নিতাম কিন্ত দিন কে দিন ওনার বয়স যৌবনের মৌ বনে ঘোড়াঘুড়ি করছে।
গলায় আবার লম্বা চেইন, হাতে ব্যাচ।
-আরে বৌমা কেমন আছো?
-ভালো আছি বাবা।কিন্ত আপনি সকাল সকাল? সবে তো কাল এলাম আর আজি নিতে এলেন।
-ওই দেখো পাগলী মেয়ের কেমন কথা। আমিতো তোমার জন্য আসিনি।
-এই জন্য আসেন নি, তাহলে বাবা! বাড়িতে কোন সমস্যা হয়নি তো?
-আরে চিল। এত চিন্তা করো কেনো আমাকে দেখো কত চিল মুডে আছি আমি।কিছু হলে তো ভোদরের মত কাদতাম।
এই হলো শুরু, কারো চিল আর কারো কাউয়া।আই মিন শ্বশুরের পৌষ মাস আর আমার সর্বনাশ।
– বৌমা তোমার মাসি কোথায়? ডাকো তাকে।
এর মধ্যে মা এলেন। অবাক নয়নে তার বেয়াই মশাইয়ের পা থেকে মাথা অব্দি পরখ করে নিলেন হা করে।
মায়ের এমন কান্ডে শ্বশুর মশাই হেসে হেসে বলল,
-কি গো বেয়াই কি দেখছেন এমন করে! আচ্ছা বলুন তো আমায় হ্যান্ডু লাগছে না?
মা কিছু না বুঝে বললো,
– হান্ডা! সেকি বেয়াই হান্ডা দিয়ে কি করবেন? আমার বাড়িতে বড় হাড়ি আছে তো।
-ওই দেখো কান্ড। আরে জানের জান বেয়ানী হান্ডা না, হান্ডা না।হ্যান্ডু মানে হ্যান্ডসাম। এইযে দুল টা দেখুন, উনি কানের কাছে হাত দেখে মাকে দেখিয়ে বলল, “ নতুন লাগিয়েছি। আর হেয়ার স্টাইল টাও নিউ একদম সালমান খান এর মতো।
মা সব ব্যাপারে একটু কমই বুঝে,
-কি বললেন, সোলেমান খান! তিনি কে বেয়াই?
-ওহ আপনার সাথে জমবে না আপনার বোন কে ডাকুন।
এই সেরেছে, এতক্ষণে বুঝতে বাকি রইলো না, রিয়াক্ট বয় দীসুর আগমনের কারণ।
মাসি মনি কাল কথায় কথায় বলেছিলো, আপনাকে আমি দেখে নিব। ব্যাস উনি আসছে দেখা দিতে।শ্বশুরের কথা শুনে মাসি ততক্ষণে বসার ঘরে এসে গেছে।
এখানে দাড়ালে আমি কাবাব হব আবার না থাকলে ওরা কাবাব হবে।উপায়ান্তর না দেখে শোভন কে দিলাম কল। সব শুনে শোভন বাবার ফোনে কল দিলেন কিন্ত আমার লাইকার বয় শ্বশুর ঘুরে ফিরে আমাকেই কল রিসিভ করতে দিলেন।
ওনার জন্য নাস্তা বানাতে ছুটলাম রান্নাঘর , আধাঘন্টা পর এসে দেখি ঝগড়া তো দুরের কথা রাগী মাসিটাও হেসে গড়াগড়ি যাচ্ছে শ্বশুর মশাইয়ের গল্প শুনে।
আর যাই হোক মন মানুষিকতায় মানুষ টা মন্দ না।আমিই মাঝেমধ্যে অবাক হয়ে যাই ওনার ব্যাবহারে।এত সরল সহজ ত্যাগী মানুষ খুব একটা চোখে পড়ে না। মুহুর্তেই সবাইকে কেমন আপন করে নেয়।
সেদিনের মতো গেলো সময়৷ দুদিন থেকে আমিও চলে আসলাম স্বামীর বাড়ি। কিন্ত আমি আসার সাথে সাথে অভিযোগ ও আসা শুরু হলো,
এবার তিনি পাশের বাসার গ্লাস ক্রিকেট খেলে ভেঙ্গে ফেলেছেন। আবার তাদের সাথে ঝগড়াও করে এসেছেন।
সকাল সকাল ও বাড়ির কাকু আসলো,
-বৌমা শোভন কোথায়?
-কাকু ও তো অফিসে গেছে। কিছু বলবেন?
– তোমার শ্বশুর কে বলো ভালো হতে এত বড় একটা দামড়া বুড়ো এই বয়সে এসে কি শুরু করেছে?
– কি করেছেন উনি?
– গিয়ে দেখো জানালার গ্লাস টা ভেঙ্গে কি করেছে। তোমার কাকি ওকে যখন বলতে গেলো ও বললো জরিমানা ওর বাপে দিবে।এসব ছাগলামি হচ্ছে এখন কি ওর বাপ চিতা থেকে উঠে আসবে?
বুঝলাম বাপ বলতে শোভন কে বুঝিয়েছে।
-কাকু চিন্তা করবেন না ও বাড়ি আসলে আপনার গ্লাসের দাম দিয়ে দিবে আপনাকে।
– সেটা তো আমি নিয়েই ছাড়বো আমার নাম ও মাখন লাল। একচুল ও ছাড় দিবনা আমি।কিন্ত ও যে আমার বউকে চোখ মেরেছে তার কি হবে?
-কিহ? আমার শ্বশুর আপনার বউকে চোখ মেরেছে?
– এই মেয়ে আমি কি মিথ্যা বলছি? এমন করলে ধরে গনপিটুনি খাওয়াবো মানুষ তো চিনেনাই এখনো।
গজগজিয়ে চলে গেলো উনি আর আমি কপালে হাত দিয়ে বসলাম।
“ওরে শ্বশুর রে আর কত জ্বালাবি তুই?

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here