সীমারেখা পর্ব ২

#সীমারেখা
০২
______অবনী রায়

শ্বশুরে উৎপাত দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে আরো কিছু করার আগে ওনাকে আটকাতে হবে।
শোভন আসার আগেই গেলাম ওনার ঘরে,এখনো দরজা লাগায় নি।ভেতরে আসতে আরেক দফায় অবাক ,
বক্সে মিকা সিং এর আমি তোর হিরো, আমি তোর হিরো বাকি সব জিরো গান ছেড়ে ধেই ধেই করে নাচছেন উনি।
বক্স টা বন্ধ করে দিতেই উনি বলল,
– একি বৌমা গানটা বন্ধ করলে কেনো?
– বাবা এসব কি করছেন আপনি? এখনো ছোট আছেন?
-আরে ধুর পাগলী মেয়ে। কি যে বলো না তুমি, নাচার কি বয়স আছে মেয়ে? আর তাছাড়া আমায় ফিট থাকতে হবেনা? ওসব ব্যায়াম ট্যায়াম আমার দ্বারা হবেনা। ফিটনেস ধরা রাখার এই সহজ উপায়, নাচো এবং নাচো । এতে মন ও ভালো থাকবে আর শরীর ও।
বলতে এসেছিলাম এক কথা, আর এখানে এসে তা হয়ে গেলো আরেক কথা। কোন কথা না বাড়িয়ে বললাম,
– ঠিক আছে বাবা, আপনি নাচুন আমি বরং আসি।
-আরে বৌমা কোথায় যাও, এদিকে আসো।
দাড়িয়ে পড়লাম ওনার কথায়।
-শোন ঘরে তো তেমন কাজ নাই, আমাদের তিনজনের রান্নাবান্না আর কাপড় কাচা ছাড়া। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখো কেমন তুমি মুটিয়ে যাচ্ছো দিন দিন ।আসো আমার সাথে নাচো ফিট থাকবে।
এ্যা বলে কি শ্বশুর!
আমি নাচব! তাও আবার শ্বশুর মশাইয়ের সাথে? লজ্জা সরম তো কবেই খাইছে ভেজে এই শ্বশুরে বাইরে।এখন দেখি ঘরেও ভীমরতি ধরেছে ওনার।রেগেমেগে ঘরে আসলাম।
আয়না টা চোখে পড়তেই সামনে দাড়ালাম,
নিজের দিকে একবার তাকালাম আসলেই মুটিয়ে যাচ্ছি কিনা।
এরমধ্যে শোভন আসলো,
-কি ব্যাপার অবনী এত আয়নায় কি দেখছো?
শোভন কে দেখে রাগটা মুহুর্তেই বেড়ে গেলো,
-কি ব্যাপার চাস আমার? তোর আর তোর বাপের ব্যাপারেই তো দেখে যাচ্ছি।
-অবনী তুমি তুই তুকারী করছো?
– কেনো রে খুব লাগে তোর তুই বলাতে? কি যেন কমেন্ট করছিস, ওয়াও বাবা দারুণ লাগছে তোমায়। বেশ ভেঙচিয়ে বললাম কথাটা।
– হ্যা তোহ? আমার বাবা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর বাবা। তাকে আমি শুধু দারুণ লাগছে কেনো? হেব্বি লাগছে, কিউট লাগছে আরো অনেক কিছু বলতে পারি।
-শোভন বেশি হয়ে যাচ্ছে বাড়াবাড়ি টা।
-বাড়াবাড়ি টা তুমিই করছো অবনী।সব নরমাল ভাবে নিতে শিখো।
নাহ এদের বাপ ছেলেকে হাজার বার বলেও কোন লাভ নাই। দুজনেই একই গোয়ালের গরু।আর শ্বশুর মশাই, তাকেই বা নতুন করে কি বলবো এমন ভাব নিচ্ছে যেন সে আমার শ্বশুর না, আমার সন্তান। সন্তান যেমন মায়রে জ্বালায়, তিনিও তেমন আ।আমারে জ্বালায়।ছেলে দোষ করলে যেমন মায়ের কাছে নালিশ আসে তেমন শ্বশুর বাইরে টোন টিটকারি মারলে আমার কাছে নালিশ আসে।
যতদুর সম্ভব বাড়ি থেকে বের হওয়াই ছেড়ে দিলাম।আজকাল কেউ দরজায় টোকা মারলেও খুলতে ভয় লাগে। খোলার আগে ফুটোয় চোখ লাগিয়ে দেখি, কেউ নালিশ করতে আসলো কি না।
এইতো গেলো পরশুও পাশের বাসা থেকে নালিশ আসলো।
ও বাড়ির ডিভোর্সি আন্টি নাকি বাজার করতে যাচ্ছিলো ব্যাগ হাতে নিয়ে, আর তাতেই আমার রিয়াক্ট বয় শ্বশুরের আগমন। বাইকে করে উনি পেছনে যাচ্ছে আর গাচ্ছে,
ছেমড়ি চলেছে একা পথে
সঙ্গি হলে দোষ কি তাতে
রাগ করোনা ছেমড়ি গো
ছ্যামড়া আছে তোমার সাথে
ব্যাস হয়েই গেলো, শ্বশুর কে ওখানে কিছু ভালো মন্দ শুনিয়েও ক্ষান্ত হলেন না তিনি।
বাড়ি বয়ে আসলেন নালিশ দিতে,
-বাড়িতে কি একটা আজাংকার পুষে রেখেছেন? ভদ্রলোক ভাবছিলাম আর শেষ এ কিনা লুচ্চা।
শোভন বাড়িতেই ছিলো তখন, ভদ্রমহিলার কথা শুনে বসার ঘরে বের হয়ে আসলো।
-এইযে আন্টি সমস্যা কি আপনার?
শোভনের কথা বেশ ঝাঝিয়ে উঠলো আন্টি।
-সমস্যা আমার না তোমার বাবার, বুড়ো বয়সে ভীমরতিতে ধরেছে রাস্তায় টোন টিটকারি মারে কি দিনকাল আসলো।
-আপনাকে কি বলেছে? আমার বাবা কি খারাপ কিছু বলেছে আপনাকে? কি বলেছে আগে ভালো করে বলুন তারপর দেখছি বাবাকে শাসন করব কিনা।
শোভনের কথা শুনে আন্টি বলল,
-রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম আর তোমার বাবা পেছন থেকে বলছে …
-কি বলেছে বাবা?
আন্টি একটু ইতস্তত করে বলল,

ছ্যামড়ি চলেছে একা পথে
সঙ্গি হলে দোষ কী তাতে।
রাগ করোনা ছ্যামড়ি গো
ছ্যামড়া আছে তোমার সাথে।

শোভন বেশ বিজ্ঞর মতো একটু চুপচাপ থেকে বলল…
-গান টা কি আপনাকে উদ্দেশ্যে করে বলেছে?
-আশ্চর্য আমাকে উদ্দেশ্যে করে না বললে কি আমি এখানে আসি?
-আহা আন্টি রাগ করবেন না, ভালো করে ভেবে বলুন তো ওখানে আপনি ছাড়া ও আরো কেউ ছিলো কিনা।
-দেখিনি আমি।
-বাঃ আপনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন আমার বাবাকেই দেখলেন অন্যকাউকে না দেখে এতে কি ধরে নিব আমি?
-মানে কি, কি বোঝাতে চাচ্ছো তুমি?
-দেখুন আন্টি রাস্তাটা সরকারি সেখানে যে কেউ যেতে পারে আর বাক স্বাধিনতাও সবার রয়েছে। আপনাকে কোন অশালীন কথা বলেনি আর আপনার নাম নিয়েও কোন গান বলিনাই আমার বাবা তাহলে আপনি কিসের ভিত্তিতে অভিযোগ করছেন?
-শোভন তুমি কিন্ত…
ভদ্রমহিলার কথা শেষ হওয়ার আগেই ওনাকে থামিয়ে শোভন বলল,
-দেখুন আন্টি আপনি বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমি আপনার বিরুদ্ধে মানহানীর মামলা করব।
আন্টি আর কিছু বলল না সেদিন কিন্ত রাগে গজগজ করতে করতে বলে গেলো, “তোমাকে আর তোমার বাবাকে দেখে নিব আমি”
এদের বাবা ছেলের কান্ডে সেদিন আমি নিরহ দর্শক। না পারি সহ্য করতে আবার না পারি হাসিও সামলে রাখতে।
প্রায় চার মাস হয়ে গেলো বিয়ের৷ বাইরে তেমন একটা যাইনা, সকালে মা ফোন করে বলল,“অবনী বাড়িতে আয় তোর ছোট মাসি আসছে “।
বাড়ি থেকে শোভন আর শ্বশুর বাবার অনুমতি নিয়ে বাবার বাড়িতে আসলাম।সারাদিন হৈ হুল্লোড় এ কেটে গেলো প্রায় সময়টা। বিকেলে ঘুরতে গিয়ে মাসির সাথে একটা সেলফি তুলে ওটাকে ফেইসবুকে আপলোড দিলাম।
প্রায় ঘন্টা দুয়েক ফেইসবুকে আসিনি, ফ্রি হয়ে লগইন করলাম কে কি কমেন্ট করেছে দেখতে।
অনেক কমেন্ট এর ভীরে আমার শ্বশুর রিয়াক্ট বয় দীসুর কমেন্ট চোখে পড়লো সবার আগে। তিনি লিখেছেন,
“অনেক সুন্দর লাগছে আমার প্রিন্সেস বৌমা। তোমার মাসি কে তো ঝাক্কাস লাগছে উফ নজর ফেরাতে পাচ্ছি না।
যা লুক ওনার।
শোন বৌমা তোমায় লাইক কমেন্ট আমি সব সময় করি তুমি তো তাও করোনা।
পাশে থাকলে পাশে পাবে বুঝলে।
কমেন্ট পড়ে মাথা হ্যাং এ কার পাল্লায় পড়লাম আমি। কিছু বলার আগে কমেন্ট টা দিলাম ডিলিট করে ফোন অফ করে বসে আছি, বাথরুমে গিয়ে একদফা মাথায় জল দিয়ে আসলাম মাথা ঠান্ডা করতে।
কিছুক্ষণ পর শোভন কল দিয়ে বলল,“অবনী ফেইসবুকে আসো আড্ডা দেই৷
ঢুকলাম বরের সাথে কথা বলতে। মেসেজ করছি আর নিউজ ফিড ক্রল করছি এর মধ্যে দেখি মাসিমনির ছবি পোস্ট করা। এই ছবিতো আমি ছাড়া কারো কাছে থাকার কথা না, আইডি চেক করতেই দেখি শ্বশুর মশাইয়ের কাজ।
ক্যাপশনে লিখেছে …
মনের মানুষ পাইলাম রে
বন্ধু এত দিনে
আমি আদর দিয়া
সোহাগ দিয়া
রাখিবো যতনে
মানেটা কি সব কিছুর একটা সীমারেখা আছে আর ইনি যা খুশি তাই করে যাচ্ছে। সহ্যর উর্ধ্বে সব
স্কিন শর্ট করে শোভন কে পাঠালাম আজকে ওর একদিন কি ওর বাপের একদিন। ঢ্যামনামি বের করে দিব…

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here