#সুইটহার্ট
#Sohani_Simu
২১.
নতুন সিম পেয়ে আমার আনন্দ আর দেখে কে।সব ফ্রেন্ডের সাথে কথা বললাম।ফেসবুক,মেসেন্জার,ইনস্টাগ্রাম,টিক টক,লাইকিতে আইডি খুলে সারাদিন ফোন নিয়ে পরে আছি।সন্ধ্যায় রকির সাথে ভিডিও কলে কথা বলছি।আমি মুৃখ ফুলিয়ে রকিকে বললাম,
“তুমি জানো?শ্রাবণ ভাইয়া আমাকে কালো পেত্নী বলে।তুমি বলো তো, আমি কালো?”
রকি হাসতে হাসতে বলল,”আরে না তুমি কালো হতে যাবা কেন।তুমি তো অনেক কিউট।”
আমি মুচকি হেসে বললাম,”আচ্ছা শোনো আমি তো প্রায় কলেজে উঠেই গেছি চলো সিগারেট খাই।”
রকি বলল,”সিগারেট খাবা?স্মোক করা তো ভাল কথা নয়,স্মোকিং কজেস ক্যান্সার জানো না?”
আমি রুমের মধ্যেই হাঁটতে হাঁটতে বললাম,”ওসব মিথ্যে কথা। সিজান সেই কবে থেকে সিগারেট খায় কই সিজানের তো ক্যান্সার হলো না।আর কোন কথা নয় আমি ছাদে যাচ্ছি তুমি সিগারেট নিয়ে এসো।”
বলেই কল কেটে দিয়ে ফোন জিন্সের পকেটে ঢুকিয়ে ছাদে যেতে লাগলাম।ড্রইং রুমে এসে দেখি কুলসুম টিভিতে সিরিয়াল দেখছে।আমি ভাবলাম রোজ রোজ সিরিয়াল দেখে আমাদের কু্লসুম আফা মনে হয় বিরক্ত হয়ে গেছে।আজ আমার সাথে একটা সিগারেট খেলে একদম চাঙ্গা হয়ে যাবে।আমি জোর করে কুলসুম কে নিয়ে ছাদে চলে আসলাম।ছাদে কেউ নেই।কুলসুম তো ভয়ে অস্থির।আমি ওর হাত ধরে রেখেছি যাতে ও পালাতে না পারে।দুজন রকির জন্য ওয়েট করছিলাম তখনই ছাদে শ্রাবণ আসলো।উনি আমাদের দেখেই রাগী কন্ঠে বললেন,”জুঁই,এত রাতে এখানে এসেছিস কেন?”
আমি বিরক্ত হয়ে মনে মনে বললাম এই বালডার জন্য মনে হয় আজকে সিগারেট খাওয়া হবে না।কুলসুম তাড়াতাড়ি ছাদ থেকে যেতে যেতে বলল,”সিরিয়ালডা বোধ হয় এখনও চলতাসে যাই গিয়া দেখি।”
আমি কুলসুম এর পেছনে যেতে যেতে চেঁচিয়ে বললাম,”এই কুলসুম আফা দাঁড়াও বলছি।আমাকে রেখে গেলে তোমার সিরিয়াল দেখার বারোটা বাজিয়ে দিব।”
কুলসুম তো এক দৌঁড়। শ্রাবণ আমার সামনে এসে না দাঁড়ালে আমিও দৌঁড় দিতাম।উনি আমার দুই বাহুতে হাত রেখে দুষ্টু হেসে বললেন,”কোথায় পালাচ্ছ সুইটহার্ট?সারাদিন তো পালালে কিন্তু দেখো তোমাকে ঘুরে ফিরে সেই আমার সামনে আসতেই হলো।”
আমি মুখ কাচু মাচু করে বললাম,”আমি কিছু করিনি,কফিতে কিছু মিশাইনি।”
শ্রাবণ মুচকি হেসে আমার গাল টেনে বললেন,”অ আমার খরগোশ।”
আমি রেগে উনার হাত সরিয়ে দিলাম।উনি রাগী কন্ঠে বললেন,”সিগারেট খাওয়ার খুব শখ না তোর?চল তোকে আজ ইচ্ছে মতো সিগারেট খাওয়াবো।”
বলেই উনি আমাকে নিয়ে ছাদের এক কোনায় গেলেন।প্যান্টের পকেট থেকে এক প্যাকেট সিগারেট বের করে একটা সিগারেটে লাইটার দিয়ে আগুন ধরিয়ে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে রাগী কন্ঠে বললেন,”নে খা।”
সিগারেট টা কিভাবে হাতে নিব বুঝতে পারছিনা।এদিকে সিগারেটের কটু গন্ধে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।আমি হাত দিয়ে নাক চেপে ধরে বললাম,
“কিভাবে খাবো?”
উনি বাম হাতের দুই আঙুলের ফাঁকে সিগারেট ধরলেন।আমার নাক থেকে হাত সরিয়ে দিয়ে চোখ মুখ শুক্ত করে নিজেই সিগারেটে একটা টান দিয়ে সব ধোয়া আমার মুখের উপর ছেড়ে দিলেন।উনিও কাশছেন আমিও কাশছি।উনি আমার হাতে সিগারেট ধরিয়ে দিয়ে বললেন,”আমি যেভাবে খেলাম সেভাবে খা।”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,”এটা ভাল নয়,গন্ধ খুব।”
উনি খুশি হয়ে বললেন,”তাহলে খাবিনা?”
আমি বললাম,”হ্যা খাবো তো।”
আমি সিগারেট টা মুখে দিব তার আগেই উনি আমার হাত থেকে সিগারেট নিয়ে নিচে ফেলে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,”ইউ!!!”
আমি কিছু বলবো তার আগেই উনি আমার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলেন।আমি চোখ বড় বড় করে উনাকে ধাক্কা দিতেই উনি আমার দুই হাত উনার এক হাত দিয়ে ধরে রাখলেন আর অন্য হাত রাখলেন আমার ঘাড়ের পেছনে।আতংকে আমার কাঁপা কাঁপি শুরু হয়ে গিয়েছে। এর আগেও উনি একবার এরকম করেছিলেন।আগের বার একটুর জন্য আমার ঠোঁট খেয়ে ফেলেননি,কামড় দিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলেন।এবার কামড় দিচ্ছেন না ছেড়েও দিচ্ছেন না, তাহলে উনি কি করছেন??টিভির মতো করে কিস দিচ্ছেন?কিন্তু টিভিতে তো হাত ধরে থাকেনা!!তাহলে কি করছেন উনি!!
ভয়ে আমার দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো।একটু পর উনি আমার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন,”সরি,আম্মুৃকে বলো না।”
আমি হাত ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে করতে বললাম,”এখনই ফুপ্পিকে বলে দিব।টিভি দেখে শিখেছেন না এসব?টিভিতে হাত ধরেনা।হাত ছাড়ুন, সব বলে দিবো ফুপ্পিকে।”
শ্রাবণ আমাকে উল্টো দিকে ঘুড়িয়ে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আমার কাঁধে থুতনি রেখে বললেন,
“ওকে আম্মুকে যেয়ে বলবা শ্রাবণ জুঁইকে অনেক গুলো লিপ কিস দিয়েছে আর বলবা প্রতিদিন এরকম কিস দিবে।এগুলো জোড়ে জোড়ে বলবা যেন বাবাও শুনতে পায়।আর এই যে আমি তোমার পেটে হাত দিলাম এটাও বলবা,এত টাইডলি হাগ করলাম এটাও বলবা।ঘাড়ে একটা কিউট লাভ বাইট দিলাম এটা দেখাবা।কিছু বাদ দিবা না,যা খুশি বলবা।তারপর দেখো একটা ম্যাজিক হবে,রাতারাতি আমি তোমার জাওজুন হয়ে যাবো।”
বলেই উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন।আমি ঘাড়ে হাত ডলতে ডলতে বললাম,” ******* তোকে আজ দেখ কি করি।”
আমি এক দৌঁড়ে ছাদ থেকে চলে আসলাম,পেছন পেছন শ্রাবণ ও প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে হাসতে হাসতে আসলো।কলিং বেল বাজাতেই কুলসুম এসে দরজা খুলে দিল।আমি আগে ভেতরে ঢুকেই ড্রইং রুমে দাঁড়িয়ে ফুপ্পিকে ডাকলাম।শ্রাবণ মুচকি হেসে নিজের রুমে চলে গেলেন।ফুপ্পি আসার আগে ফুপ্পা নিউজ পেপার হাতে নিয়ে সোফায় বসে বলল,”তোর ফুপ্পি নামাজ পড়ছে।এখনই হয়ে যাবে।”
আমি সোফায় বসে রাগে ফুসতে থাকলাম।একটু পর ফুপ্পি আসতেই আমি বসা থেকে দাঁড়িয়ে অভিযোগের সুরে ফুপ্পিকে বললাম,
“ফুপ্পি দেখো শ্রাবণ ভাইয়া আমার ঘাড়ে কামড় দিয়েছে আর আমার দুই হাত শক্ত করে ধরে লিপ কিস করেছে আর জামার ভেতর দিয়ে হাত.. ”
এটুকু বলতেই ফুপ্পা কাশতে কাশতে রুমের দিকে চলে গেল।কুলসুম হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর ফুপ্পি প্রথম বারের মতো আমার গালে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে চেঁচিয়ে বলল,”এত বেয়াদব হয়েছিস কেন তুই?কার থেকে শিখেছিস এসব হ্যা?তৌসিকে দেখে কিছু শিখতে পারিসনা?কুলসুম কে দেখেও তো শিখতে পারিস।বড় বোনরা কিভাবে কথা বলে আর তুই কিভাবে কথা বলিস ভেবেছিস একবারও?”
বলেই ফুপ্পি চলে গেল।ফুপ্পি আমাকে এভাবে কোনদিন বকেনি আর কখনও মারেও নি।আমি এতক্ষণ গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে কাঁদছিলাম এবার উল্টো দিকে ঘুড়ে ধীরে ধীরে বাসা থেকে বেড়িয়ে আসলাম।আমার চলে আসা দেখে কুলসুম জোড়ে জোড়ে বলল,”খালাম্মা জুঁই চইলা যাইতেছে,ও খালাম্মা!!
আমি আমাদের বাসায় এসে গেস্ট রুমে ঢুকে দরজা লক করে দিলাম কারন আমার রুমে নিতু আপু থাকে।আমি যে বাসায় এসেছি রহিমা খালা ছাড়া আমাকে কেউ দেখতে পায়নি।গেস্ট রুমের ফ্লোরে শুয়ে আমি কান্না করছি তখনই পকেটে আমার ফোন বেজে উঠলো।আমি পকেট থেকে ফোন বের করে দেখি শ্রাবণ।কল কেটে ফোন অফ করে ফ্লোরে উপুর হয়ে শুয়ে থাকলাম।
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি বেডে শুয়ে আছি আর দরজাও খোলা।ঘুমের মধ্যে হয়তো আমিই দরজা খুলে বেডে এসে শুয়ে ছিলাম,দরজা খুলে রাখা আমার অভ্যাস।রাতের কথা মনে হতেই আমি উঠে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম।মনে মনে বললাম আমি বেয়াদব তাই কোনদিন কারও সামনে না যাওয়ায় ভাল।
ফ্রেশ হয়ে বেলকুনিতে এসে বসে থাকলাম।প্রায় দুঘন্টা একভাবে বসে থেকে হাত পা লেগে গিয়েছে তাই একটু হাটাহাটি করলাম।রুমে এসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সকাল দশটা বাজে।রুমের মধ্যে থাকতে বিরক্ত লাগছে তাই ভাবলাম একটু বাহিরে থেকে ঘুরে আসি।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করে ফোন নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম।ড্রইং রুমে এসে ভাবি আর নিতু আপুকে দেখলাম।ওরা কথা বললেও আমি ওদের সাথে কথা না বলে বেড়িয়ে আসলাম।বাহিরে এসে ফুপ্পিদের ফ্ল্যাটের দিকে একবার তাকিয়ে মন খারাপ করে নিচে চলে আসলাম।কোথায় যাব বুঝতে পারছিনা।এক্সাম শেষ হয়ে গেল কোথাও ঘুরতে যাওয়া হলোনা।হঠাৎ মনে হলো অনেকদিন হলো আম্মুর কবরে যাওয়া হয়নি তাই রিক্সা নিয়ে চলে আসলাম করবস্থানে।
আম্মুর কবরে সিমেন্টের বেদির উপর বসে আছি।আশেপাশে অনেক কবর।দূরে নতুন একটা কবর হচ্ছে।আমার খুব শরীর খারাপ লাগছে।আম্মুকে বললাম,
“আম্মু আমার শরীর খারাপ লাগছে,বাসায় যাবো?”
তারপর একা একাই বললাম,”নাহ্ বাসায় আর যাসনা।ওরা কেউ ভাল না,কেউ তোকে ভালোবাসেনা।”
পকেট থেকে ফোন বের করে দেখি ফোন এখনও অফই আছে।অন করে দেখি দুপুর বারোটা বাজে।কাল রাত থেকে কিছু খাওয়া হয়নি তাই হয়তো শরীর খারাপ করছে,মাথা ঘুরছে।আমার পুরো পৃথীবি লাটিমের মতো বন বন করে ঘুরছে,আমি আম্মুর কবরের উপরই শুয়ে পরলাম।
কারও কথা শুনে ঘুম ভেঙে গেল।তাকিয়ে দেখি এটা কোন ডক্টরের চেম্বার।হাত নাড়াতে গেলেই দেখি হাতে স্যালাইন লাগানো আছে।চার পাশে সাদা পর্দার জন্য কিছু দেখতে পাচ্ছি না।মনে হচ্ছে ডক্টরের রুমের মধ্যেই এই রুম।ডক্টরের কথা শুনতে পাচ্ছি,
“আপনারা বুঝতে পারছেন না।আমি ওকে ছোটবেলা থেকে চিনি।ওর শারীরিক সমস্যার থেকে মানসিক সমস্যা বেশি।”
আরে এটা তো আমাদের ডক্টর অ্যাঙ্কেলের কন্ঠ!আমি এখানে আসলাম কিভাবে?তখনই ফুপ্পির কথা শুনতে পেলাম,
“মানে?কি বলছেন আপনি?”
ডক্টর বললেন,”জুঁই মানসিকভাবে অসুস্থ।”
আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।উঠে বসে স্যালাইন টান দিয়ে খুলে ফেলে বাহিরে এসে দেখি ফুপ্পি আর শ্রাবণ ভাইয়া ডক্টর অ্যাঙ্কেলের সাথে কথা বলছে।আমাকে দেখেই ডক্টর বললেন,
“একি জুঁই তুমি উঠে এসেছ কেন?”
ফুপ্পি আর শ্রাবণ আমার দিকে তাকালো।আমি একবার ওদের দিকে তাকিয়ে তারপর ডক্টরের দিকে তাকিয়ে বললাম,
“ডক্টর অ্যাঙ্কেল আমি কি পাগল?”
ডক্টর বললেন,”না।”
আমি ভ্রু কুচকে ডক্টরের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।মনে মনে ভাবলাম মানুষ এত মিথ্যুক হয় কি করে?একটু আগেই বলছিল আমি মানসিকভাবে অসুস্থ তারমানে তো আমি মানসিক রোগী আর মানসিক রোগী মানেই তো পাগল।শ্রাবণ চেয়ার থেকে উঠে এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বললেন,
“চল বাসায় যাবো।”
বলেই উনি আমার হাত ধরে হাঁটা দিলেন।আমি ফুপ্পির দিকে তাকিয়ে দেখি এখনও বসে আছে।শ্রাবণ ভাইয়া আমার কাছে আসলো এটা মনে হয় ফুপ্পির পছন্দ হলো না।বাহিরে এসে গাড়িতে উঠেই শ্রাবণ গাড়ি স্টার্ট দিলেন।আমি অবাক হয়ে বললাম,”ফুপ্পি যাবেনা?”
উনি কিছু বললেন না।আমি জানালার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“ডক্টর অ্যাঙ্কেল আমাকে পাগল বলল কেন?আমি কি পাগলামি করেছি?আমি এখানে আসলাম কিভাবে?”
শ্রাবণ এখনও চুপ।উনি কিছু বলছেন না দেখে আমিও চুপ থাকলাম।গাড়ি এসে একটা দোতলা বাসার সামনে থামলো।গাড়ি থেকে নেমে আমি বললাম,”এটা কার বাসা?”
শ্রাবণ আমার হাত ধরে নরম কন্ঠে বললেন,”এটা আমাদের বাসা,আজ থেকে আমরা এখানে থাকবো।”
আমি অবাক হয়ে বললাম,”এখানে থাকবো?সবাই এখানে চলে এসেছে?”
উনি আমাকে নিয়ে ভেতরে যেতে যেতে বললেন,”সবাই নয় শুধু আমরা দুজন থাকবো।”
আমি অবাক হয়ে বললাম,”কেন?ওরা আমাকে বাসায় থাকতে দিবেনা?আমি তো কাউকে কিছু বলিনা,আমি পাগল নই।”
উনি মেইন দরজার লক খুলতে খুলতে বললেন,”তুই একটা আশ্চর্য চরিত্র।আপন বলতে তোর কেউ নেই।না আছে, আমি আছি।আমি ছাড়া তোর আর কেউ নেই আর তুই ছাড়া আমারও কেউ নেই বুঝেছিস?পাগলের কথা আর বলবিনা,বললেই মাইর।”
উনি দরজা খুলে আমাকে নিয়ে ভেতরে আসলেন।বাসাটা বাহিরে থেকে নতুন চকচকে হলেও ভেতরে একদম ধূলোবালিতে পূর্ণ।আসবাবপত্র যা আছে সব কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা।জায়গা জায়গা মাকড়শা জাল বুনে রেখেছে।ড্রইং রুম মাঝখানে আর চারপাশে অন্যান্য রুম।আমরা সিঁড়ি দিয়ে উপরে একটা রুমে আসলাম।শ্রাবণ রুমের কাচের জানালা গুলো খুলে দিলেন।রুমে তেমন কিছু নেই,একটা বক্স খাট একটা ড্রেসিং টেবিল আর একটা সোফা তাও প্রচুর ময়লা হয়ে আছে।একপাশে বেলকুনি,ওয়াশরুমও আছে।আমি ভ্রু কুচকে বললাম,”এত নোংরা জায়গায় আমরা কেন থাকবো?চলুন বাসায় যায়।”
উনি নোংরা বেড শিট তুলে মেঝেতে ফেলে দিলেন।আমাকে বেডে বসিয়ে দিয়ে উনি আমার সামনে হাটুতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আমার দুইহাত ধরে বললেন,”মন দিয়ে আমার কথা শোনো।আমি তোমাকে ভালোবাসি এখন থেকে তুমিও আমাকে ভালোবাসবে ওকে?”
আমি তো শকড।অবাক হয়ে উনাকে বললাম,”আপনি আর কতজনকে ভালোবাসেন শ্রাবণ ভাইয়া?”
উনি বেডের উপর আমার পাশে বসে বললেন,”আমি শুধু তোকেই ভালোবাসি আর কাউকে নয়।শোন আমরা আজকে বিয়ে করবো।”
আমি লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,”কি!!!কখনও না,আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।”
উনি আমার হাত ধরে বেডে বসিয়ে দিয়ে বললেন,”কেন আমাকে বিয়ে করবিনা?করতেই হবে।বিয়ে না করলে তো আমরা একসাথে থাকতে পারবোনা।”
আমি রাগী কন্ঠে বললাম,”আমি আপনার সাথে থাকবোনা,বাসায় যাবো আমি।”
শ্রাবণ ভাইয়া পকেট থেকে ফোন বের করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন।আমি আমার ফোন কোথাও পাচ্ছি না।ধূর কেন যে আসলাম এখানে।রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে এসে মেইন দরজায় অনেক টানাটানি করেও দরজা খুলতে পারলাম না।পেছন থেকে শ্রাবণ বললেন,”
“ঐ লিসেন,কাম হেয়ার।”
আমি রেগে পেছনে তাকালাম।উনি একটু দূরে সোফার ময়লা কাপর গুলো তুলছেন।আমি গট গট করে হেঁটে গিয়ে বললাম,
“এই কুত্তা দরজা খুলে দে বাসায় যাবো আমি।”
উনি সোফায় বসে বললেন,”উফ্ গরম লাগছে ফ্যান এসি কিছুই ঠিক নেই,কালকে সব ঠিক করবো।আচ্ছা তোর কি কি লাগবে সব লিস্ট কর তো আজই কিনতে হবে সব।একটু পর খাবার চলে আসবে,খেয়েই আমরা শপিং এ যাবো। তোকে একটা লাল বেনারসি কিনে দিব,ওটা পরে তুই আমাকে বিয়ে করবি।”
আমি রেগে উনার সাথে মারামারি করার জন্য এগিয়ে গেলাম।উনাকে খামছি দিব তার আগেই উনি আমাকে ধরে আমার পেটে কাতুকুতু দিতে লাগলেন।হাসতে হাসতে আমি শেষ।আমি ফ্লোরেই শুয়ে পরেছি তাও উনি কাতুকুতু দেওয়া থামাননি।উনিও হাসছেন,হাসতে হাসতে বলছেন,”বল আমাকে বিয়ে করবি?বল?”
আমি হাসতে হাসতে বললাম,”ছেড়ে দে হারামি,তোকে কখনও বিয়ে করবোনা। ছাড়,উফ্।”
উনি আরও বেশি কাতুকুতু দিতে দিতে বললেন,”এখন বল বিয়ে করবি?নাহলে কিন্তু..”
“করবো করবো ছাড়ো।”
উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন।আমি উঠে বসে হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম,”আমার বিয়ের বয়স হয়েছে নাকি?ভাবস বলেছে কুড়ি বছরের আগে কোন বিয়ে নয়,আমার তো কেবল ষোল।এখন কেউ বিয়ে করে?বাল্যবিবাহ হলে বাচ্চা হওয়ার সময় মেয়েরা মারা যায়।আমিও তাহলে মারা…।”
উনি আমার মুখ চেপে ধরে বললেন,”তোর কিছু হবে না।আচ্ছা তুই যে এসব বিয়ে-বাচ্চার কথা বলছিস তোর লজ্জা করছে না?”
আমি মুখ থেকে উনার হাত সরিয়ে দিয়ে বললাম,”লজ্জা করবে কেন?বইয়ে তো এসবই লিখা আছে।বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে আছে।তৌসির ইংলিশ বইয়েও লিখা আছে।লেসনটার নাম কি যেন মনে পরছেনা,একটা ছোট মেয়ের বউ সাজার ছবি দেওয়া আছে ওই লেসনে।”
শ্রাবণ সোফায় উঠে বসলেন।আমি ড্রেসের ময়লা ঝারতে লাগলাম।একটু পর উনি বললেন,”আমি যে তোকে বিয়ে করতে চাইছি তোর লজ্জা করছে না?”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,”না।”
উনি ভ্রু কুচকে বললেন,”কি করলে তুই লজ্জা পাবি?”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,”মানে?”
উনি উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,”এখন লজ্জা করছে?”
আমি উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বললাম,”হুম করছে দূরে যান তো।”
উনি সোফায় হেলান দিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসে কপালের চুল মাথার উপর ঠেলে দিয়ে বললেন,”যাক তাও ভাল।”
আমি উনার দিকে দুধাপ এগিয়ে গিয়ে চিন্তিত হয়ে বললাম,”আমরা বাসায় যাবো না?”
উনি সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললেন,”না,আমরা এখানেই থাকবো।আগে এটা তোর শ্বশুরের বাসা ছিল এখন এটা আমাদের বাসা।”
আমি রেগে বললাম,”আমি তোকে বিয়ে করবো না।”
উনি চোখবন্ধ রেখেই বললেন,”করতেই হবে।”
আমি এবার উনার গলা টিপে ধরে বললাম,”খুন করে ফেলবো তোকে।”
উনি হাসতে হাসতে আমার হাত সরিয়ে দিলেন।আমাকে সোফায় বসিয়ে দিতেই কলিং বেল বেজে উঠলো।উনি চট করে দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে লক খুলে দিলেন।একটা মহিলা আর দুটো পুরুষ এসেছে, তাদের হাতে ব্যাগ।শ্রাবণ উনাদের ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়ে আবার দরজা লক করে বললেন,
“উপরের একটা রুম আগে ক্লিন করুন তারপর ড্রইং,ডাইনিং,কিচেন ক্লিন করবেন।কিছু ফার্নিচার অর্ডার করেছি ওগুলো এখনই চলে আসবে।”
লোক তিনজন উপরে চলে গেল।আমি সোফায় বসে ভ্রু কুচকে সব দেখছি।একটু পর খাবারও চলে আসলো।আমরা দুপুরের খাওয়া শেষ করতেই উপরের রুম পরিষ্কার করা শেষ হলো।এখন ওরা নিচে পরিষ্কার করবে সেজন্য আমরা উপরে গেলাম।আমি রুমে ঢুকেই বললাম,”আহা কি সুন্দর গন্ধ!এটা আমার রুম।”
শ্রাবণ আমাকে পাশ কাটিয়ে যেয়ে বিছানায় শুয়ে বললেন,”হুম তোরই তো।আচ্ছা তোর ঘুম পাচ্ছে না?”
আমি একটা হাই তুলে বললাম,”হুম পাচ্ছে,এত ঘুম পাচ্ছে কেন?”
উনি উঠে বসে বললেন,”খুব ঘুম পাচ্ছে নাকি কম?আর একটু পানি খাবি?”
আমি সোফায় হেলান দিয়ে বসে চিন্তিত হয়ে বললাম,”আপনাকে দুটো দেখতে পাচ্ছি কেন?”
উনি মনে হয় আমার কাছে উঠে আসলেন ততক্ষণে আমি চোখ বন্ধ করে ফেলেছি।উনি আমার হাত ধরতেই আমি চোখ বন্ধ রেখেই বললাম,”ঘুম পাচ্ছে খুব।বাসায় যাবো,বিয়ে করবোনা।আপনি সুন্দর হলেও ভাল মানুষ না।রকিকে বিয়ে করবো,রকি ভাল।”
এর পরও হয়তো অনেক কিছু বলেছি কিন্তু আমার আর কিছু মনে নেই।
চলবে……..