সুপ্ত ভালোবাসা❤পর্ব-১০

0
1235

#সুপ্ত_ভালোবাসা

#পর্ব:১০

#Tahmina_Akther

আরও কিছু বলতে চাইছিলো অভিক কিন্তু মূহুর্তের মাঝে ওর গালে সপাটে চড় মেরে দিলো হিয়া। অভিক শুধু চেয়ে থাকলো হিয়ার দিকে যেন সে জানতো ওর অব্যক্ত অনূভুতির কথা যেদিন হিয়া জানতে পারবে সেদিন ঠিক এইভাবে আচরণ করবে তার সাথে।

-আমি কখনো ভাবতে পারিনি তুই এরকম একটা জঘন্য কাজ করবি?আমি তোর বড় হওয়া সত্তেও তুই আমাকে ফুল বলে সম্বোধন করেছিস মানা করিনি হয়তো আদর করে ডাকিস এই ভেবে।আমি তোকে সবসময় আমার ভালো বন্ধু হিসেবে আমার পাশে চাইতাম আর সেই তুই কি করলি? আমার এখন তোকে দেখতেও ঘৃনা লাগছে।

আজ যেন হিয়ার কোনো কথার প্রতিউত্তর দিতে ইচ্ছে করছে না অভিকের। সে শুধু তাকিয়ে আছে হিয়ার দিকে আর মুখে লেগে আছে এক অমলিন হাসি।

দরজার করাঘাতে এবার হিয়ার টনক নড়লো।সে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।কিন্তু, কে যেন হাওয়ার বেগে এসে অভিককে বেধমভাবে মারা শুরু করলো?
অভিকের মা চিৎকার করে উঠে বললেন,

-নিঝুম এটা তুমি কি করলে?অভিকের কোনো দোষ নেই। ওকে আর মেরো না। আমার ছেলেটা মরে যাবে নিঝুম ছাড়ো ওকে।বুবু আপনার ছেলেকে বলুন না আমার অভিককে ছেড়ে দিতে।

হিয়া যেন বাকরূদ্ধ হয়ে পড়লো,ও তো এরকমটা চায়নি তাহলে, কেন ওর জীবনে এত অশান্তির সৃষ্টি? ও এগিয়ে যেতে চাইলেও ওর মা’কে আটকে ফেললো।

-আম্মু, ছাড়ো আমাকে। অভিকের কোনো দোষ নেই ওকে কেন মারছে নিঝুম ভাইয়া? আমার হাত ছাড়ো।

-ও তোকে একা রুমে পেয়ে নিশ্চয়ই উলটাপালটা আচরণ করেছিলো তাই না এজন্যই তুই চিৎকার করেছিলি? আমরা এতবার দরজা ধাক্কা দিলাম তাও দরজা খুলিস নি কেন?

-আম্মু তোমরা যা ভাবছো আসলে তার কিছুই হয়নি। আমি তোমাদের পরে বুঝিয়ে বলছি। আমাকে ছাড়ো আম্মু।

-নিঝুমমম,
বেশ জোরেই ডাক দিলেন অভিকের বাবা। নিঝুম অভিককে ছেড়ে দিয়ে পিছনে তাকাতেই দেখতে পেলো ওর ছোট মামা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। নিঝুম ভয়ে বারকয়েক ঢোক গিললো, কারণ, তার দুই মামার মাঝে ছোট মামা বড্ড রাগি, একগুয়ে মানুষ।

অভিকের কাছে এসে বসলো ওর বাবা। দেখছে ছেলের ঠোঁটের একপাশ কেটে রক্ত বের হচ্ছে আর মুখের বেশ কয়েক জায়গা কেটে রক্ত বের হচ্ছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছেলেকে টেনে তুলে খাটের উপর শুইয়ে দিলেন। এরপর মোবাইল বের করে কল করলেন ডাক্তারের কাছে।

————–

ড্রইংরুমে সবাই বসে আছে শুধু অভিক বাদে। সোফায় বসে আছে অভিকের বাবা, হিয়ার বাবা, নিঝুমের মা।একপাশে দাড়িয়ে আছে হিয়ার মা ও অভিকের মা। নিঝুম ওর মায়ের পাশেই দাড়িয়ে আছে। আর হিয়া সবার মধ্যমনি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। খানিক সময় পরপর হিয়া ওর চোখের পানি মুছছে।

-হিয়া, কান্না বন্ধ করো। অভিক মরে যায়নি যে এভাবে কাঁদছো। বাড়ির সবাই যা বলছে তা কি সঠিক? অভিক তোমার সঙ্গে খারাপ কিছু?
আর বাকি কথাটুকু বের করতে পারলেন না অভিকের বাবা রোকন জামান।

-না, চাচ্চু সবাই যা ভাবছে আসলে এমন কিছুই ঘটেনি।

-তাহলে, তুমি চিৎকার করছিলে কেন? আর যখন সবাই রুমের দরজা ধাক্কা দিচ্ছিলো তখন কেন দরজা খুললে না? এমন কি ঘটেছে ওই বদ্ধ রুমটির ভিতরে? আমাকে বলো হিয়া।

-আসলে, চাচ্চু অভিক একটু রেগে গিয়েছিলো তাই।

-কথা ঘুরানো যাবে না হিয়া সত্যি করে বলো। বেশ ধমক দিয়ে কথাটি বললেন অভিকের বাবা।

-ও নাকি আমাকে ভালোবাসে। আমি যেন নিঝুম ভাইয়াকে বিয়ে না করি? আমি ওর কথাগুলো সহ্য করতে পারিনি তাই ওকে থাপ্পড় মেরেছিলাম চাচ্চু। আর আমি চিৎকার করেছিলাম এই জন্যই কারণ যখন আমি অভিককে বলেছি যে আমি নিঝুম ভাইয়াকে বিয়ে করতে রাজি ঠিক তখনি ও দেয়ালে ঘুসি মেরে বসলো। আমি তখন ভয়েই চিৎকার করি আর বাড়ির সবাই উল্টাপাল্টা ভেবে বসে আছে চাচ্চু।
চোখ বন্ধ করেই কথাগুলো দুইশ্বাসে শেষ করলো হিয়া।

উপস্থিত সকলে যেন হিয়ার মুখ থেকে কথাগুলো শুনে বোবা বনে গেলো। এবার মুখ খুললেন হিয়ার ফুপি,

-ছোট ভাইজান, আমি আরো আগে থেকে ভাবিকে বলেছিলাম যেন ছেলেকে হাতের মুঠোয় রাখে। যখন ও হিয়াকে ফুল বলে ডাকা শুরু করলো তখনই আমি বুঝেছি এর ভিতর নিশ্চয়ই কোনো ঘাপলা আছে। আজ সকালে অভিককে বলেছিলাম, কেন ও হিয়াকে ফুল বলে ডাকে? সে আমাকে কি উত্তর দিয়েছে জানেন? সে বলেছে আমাদের হাজারটা সমস্যা এতে নাকি ওর কোনো কেয়ারই নেই।
এখন অভিকের বিচারটা নাহয় আপনি করবেন কারণ, সে আমার হবু পুত্রবধুর সঙ্গে খারাপ বিহেব করেছে, ভাইজান।

-শালিনী, তোর কথা শেষ হয়েছে? তাহলে এবার আমি কি বলি শোন? এইযে বললি তুই তোর ভাবিকে বলেছিস,ছেলেকে হাতের মুঠোয় রাখতে। তুই পেরেছিস তোর ছেলে নিঝুমকে হাতের মুঠোয় রাখতে। তোরা আমেরিকায় থাকলে কি হবে? আমরা বাংলাদেশে বসেই সকল খবরাখবর পাই। তোর ছেলের যে চরিত্রে সমস্যা আছে এটা আমি আরো দুবছর আগে থেকেই জানি। তুই এখানে কাউকে জ্ঞানের পট্টি বেঁধে দিস না।

-আর ভাইজান,আপনি আমার সাথে একটু রুমে আসুন। আপনার সঙ্গে আমার একান্তে কিছু কথা আছে। হিয়ার বাবার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললেন অভিকের বাবা।

হিয়ার বাবা উঠে চলে গেলেন অভিকের বাবার সঙ্গে। ওনাদের দুজনের কি এমন কথা ছিলো যে আর কারো সামনে বলতে পারবে না।

———

সময়টা তখন রাত ১০.০০টা। হিয়ার বাবা আর এখানে উপস্থিত হননি। তিনি কিছু হালকা খাবার খেয়ে ঘুমোতে চলে গেলেন। এখন শুধু অভিক, হিয়ার বাবা এবং সাদাফ-অরিন ছাড়া সবাই উপস্থিত।

-হিয়া তুমি কত তারিখে বাংলাদেশে এসেছিলে?

-এইতো চাচ্চু মার্চের ১৩ তারিখে। হঠাৎ কেন এই প্রশ্ন চাচ্চু?

-কারণ আছে, বড় ভাইজান অসুস্থ হয়ে হসপিটালে ভর্তি হয় ৭মার্চ।তাকে হসপিটালে রেখে হার্টের চিকিৎসা করাতে যেয়ে আমার বেশ অনেক টাকা খরচ করতে হয়। প্রায় ১০লক্ষ টাকার মতোন আর অনেক হিসাবই আছে তবে এখন আমি সেগুলোর হিসাব খুলতে চাচ্ছি না।

-হঠাৎ, কেন এসবের হিসাব করছেন চাচ্চু?
হিয়া তার চাচ্চুকে থামিয়ে দিয়ে বললো।

-কারণ, তো অবশ্যই আছে। তাহলে মেইন পয়েন্টে আসি। তোমার বাবার পিছনে আমি যতটাকা খরচ করেছি আমার এখন সেই টাকাগুলো চাই। আশা করছি তোমরা আমার টাকাগুলো ফেরত দিয়ে দিবে।

– কিন্তু, এখন কোত্থেকে দিবো রোকন? তুই তো জানিস তোর ভাই আজ চারবছর ধরে রিটায়ার্ড হয়ে ঘরে বসে আছে;হিয়ার মা বললেন।

-টাকা তোমাদের এখনই দিতে হবে,ভাবি। আর যদি না দাও তাহলে আমার কাছে অন্য অপশন আছে।

-কি সেই অপশন চাচ্চু?

-বেশি কিছু না শুধু অভিককে তোর বিয়ে করতে হবে। তাহলে আমার সাথে তোদের যত দেনা আছে আমি সব মাফ করে দেবো। আর যদি তুই রাজি না থাকিস তাহলে আমার টাকা দেবার ব্যবস্থা কর।

-ছোট ভাইজান, আপনি কিভাবে এই কথাগুলো বলছেন? হিয়া অভিকের থেকেও বয়সে তিনবছরের বড়। তাহলে ওদের বিয়ে কিভাবে সম্ভব? হিয়ার ফুপি বললেন।

-ঠিক সেভাবে সম্ভব যেভাবে হযরত খাদিজা (র.) এর সাথে আমাদের হযরত মুহাম্মাদ (স.) বিয়ে হয়েছে। উনি কি উনার স্বামীর থেকে বয়সে বড় ছিলেন না? তাহলে, কি ভাবে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে? যেখানে স্বয়ং আল্লাহ তাআলার মর্জি আছে বয়সে নারী বড় বিয়ে করার সেখানে ওরা দুজন বিয়ে করলে কি সমস্যা হবে?

-কিন্তু, ছোট মামা আমিও তো হিয়াকে পছন্দ করি।
এতক্ষণে মুখ খুললো নিঝুম।

-তুমি শুধুমাত্র হিয়াকে পছন্দ করো আর আমার অভিক হিয়াকে ভালোবাসে। তাহলে, কি সবার আগে পছন্দকে প্রাধান্য দেয়া উচিত নাকি ভালোবাসাকে?
হিয়া আজ সারারাত ভেবে আমাকে কাল সকালে তোমার সিদ্ধান্ত জানাবে। আশা করছি তুমি তোমার উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিবে।

বলেই উঠে চলে গেলেন অভিকের বাবা।এরপর, চলে গেলো নিঝুম ও তার মা। শুধু ড্রইংরুমে রয়ে গেলেন হিয়া আর ওর আম্মু।

হিয়ার কাধে হাত রাখলো ওর মা। হিয়া ঘুরে ওর মা’কে জড়িয়ে উচ্চস্বরে কেঁদে উঠলো।
আজ আর মেয়েকে কোনোপ্রকার সান্ত্বনা দিচ্ছে না। কেদে হালকা হোক তার মেয়ের হৃদয় এরপর জীবনের শ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্তটা নাহয় নিজেই নিবে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here