#সুপ্ত_ভালোবাসা
#পর্ব_১১
#Tahmina_Akther
রোকন জামান পেশায় একজন এসআই পুলিশ। চাকরির প্রতি তিনি অনেক নিষ্ঠাবান।স্ত্রী রেহনুমা জামান।তাদের দুটি সন্তান;এক ছেলে অভিক আর এক মেয়ে অরিন। ছেলেটা বড্ড ভয় পায় বাবাকে কখনো যদি কোনো জিনিস ওর প্রয়োজন হতো সে নিজে কখনো মুখ ফুটে বলতো না। তার মা’কে তার প্রয়োজনের কথা বলতো। আর তার মা রেহনুমা বলতো রোকনকে।
তবুও তিনি তার ছেলেকে প্রচন্ড ভালোবাসেন। অপেক্ষায় ছিলেন কোনো একদিন ছেলে তার কিছু না কিছু তো অবশ্যই চাইবে। কিন্তু, সেইদিন যে এত ভয়াবহ হবে সেটা তিনি ভাবতেও পারেন নি। গতকাল, অফিসিয়াল এক গুরত্বপূর্ণ ফাইল ভুল করে রেখে চলে যাওয়ায় বাড়িতে পূনরায় আসেন ফাইল নিতে। কিন্তু, বাড়িতে ঢুকতেই হিয়ার চিৎকার ভেসে আসে রোকন জামানের কানে।তড়িঘড়ি করে উপরে চলে আসেন। অভিকের রুম থেকে বেশ শোরগোল শুনতে পেয়ে রুমের দরজা সামনে দাড়াতেই উনার পা দু’টো যেন স্থীর হয়ে গেলো।অভিককে নিঝুম যেভাবে মারছিলো আরেকটু হলে হয়তো অভিক মরে যেতো। সবাই শুধু চেয়ে দেখছে নিঝুমকে থামাবার চেষ্টা মাত্র নেই কারো কাছে।রেহনুমা শুধু নিঝুমকে থামতে বলছিলো।
রোকন জামানের রাগ জমে গেলো পরিবারের সকলের উপর, নিঝুমকে ডাক দিয়ে থামিয়ে দিলেন এরপর এগিয়ে গিয়ে দেখলেন বুকের মানিক অভিককে বেশ মেরেছে ঠোঁটের একপাশে কেটে রক্ত বের হচ্ছে।
ভাবনাগুলো আবারও চোখের সামনে দৃশ্যমান হতেই চোখ ঝাপসা হয়ে এলো রোকন জামানের। তিনি চোখের পানি পাঞ্জাবির হাতায় মুছলেন। রুমে ঢুকতেই স্বামীকে চোখ মুছতে দেখে স্বামীর পাশে গিয়ে দাড়ালেন রেহনুমা জামান।পাশে নিজের স্ত্রীর উপস্থিতি টের পেয়ে বললেন,
-রেহনুমা, তুমি কি জানতে অভিক হিয়াকে ভালোবাসে? আর যদি জেনে থাকো তাহলে আমাকে বলোনি কেন?
-হু জানতাম। কিন্তু, ওদের বয়সের দিক দিয়ে খেয়াল করলেই এই বিষয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করতো না তোমার সঙ্গে।
-তুমি তো সবসময়ই বলতে আমি নাকি অভিককে যতটা ভালোবাসি তুমি নাকি এরচেয়েও বেশি ভালোবাসো। তাহলে কোথায় গেলো তোমার ছেলের প্রতি ভালোবাসা। আমার ছেলেটা প্রতিটা রাত হয়তো গুমরে মরেছে আর আমি বাবা হয়ে জানতে পারলাম না।আমার সাথে অভিকের কেন এত দূরত্ব আমি আজ বুঝলাম না হয়তো বাবা হিসেবে আমি ব্যর্থ। কিন্তু আর না আমার ছেলের জীবনের সিদ্ধান্ত এবার আমি নিব।আশা করি আমার নেয়া সিদ্ধান্তে তোমার কোনো আপত্তি নেই,রেহনুমা?
-তুমি কিন্তু আমাকে ভুল বুঝেছো?আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো এই সম্পর্কটা মেনে নিবে না। তাই আমি বহুবার অভিককে মানা করেছিলাম কিন্তু ও আমার কোনো কথাই মানে নি। যেহেতু এখন তুমি সব জেনেছ এবং রাজি হয়েছো তাহলে আমার আর আপত্তি কিসের? শুধু আমার একটাই চাওয়া আমার অভিক যেন সুখে থাকে।
-অভিকের কাছে গিয়েছিলে তুমি? কি করছে সে?
-ঘুমাচ্ছে ; আচ্ছা, তুমি কেন এভাবে চাপ প্রয়োগ করছো হিয়ার উপর? তাছাড়া তুমি তো ভাইয়াকে এক টাকাও দাওনি তাহলে মিথ্যে বললে কেন ওদের সাথে?
– কেন বলেছি আস্তে আস্তে জানতে পারবে। শুধু এটুকু জেনে রেখো আমি যেই মিথ্যা কথা বলেছি সেটা আমাকে বড় ভাইজান বলতে বলেছে হিয়ার কাছে।
-তার মানে বড় ভাইজান রাজি আছে। তুমি,আর ভাইজান মিলে এই সব করছো!
————–
চারদিক জুড়ে নিস্তব্ধতায় বিদীর্ণ;রাত বেশ গভীর কেউ জেগে নেই।ফ্যানের বাতাসের শো শো শব্দ শোনা যাচ্ছে। ঘড়ির সেকেন্ড কাটা টিক টিক শব্দের প্রতিধ্বনি তুলছে। এত নিস্তব্ধতার মাঝে জেগে আছে এক বিষন্নতায় ঘেরা নারী। চোখের কোণা দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে বালিশের মাঝে। একপাশ হয়তো ভিজেও গেছে তবুও হেলদোল নেই হিয়ার। তার যেন আজ চোখের পানি ফুরোচ্ছে না। ঠিক কোন অপরাধে তার জীবন এত দুঃখে জর্জড়িত? আহানকে ভালোবেসে ভেবেছিলো হয়তো এই তো জীবনের সকল পূর্ণতা বুঝি পেয়েই গেলো। কিন্তু, না পূর্ণতা পেলো না তার আর আহানের ভালোবাসা। চলে গেলে আহান তাকে একলা করে এই ধরনী থেকে।
আবার সব ভুলে যখন নতুন করে জীবন শুরু করতে চাইলো তখন এলো নিঝুম নামক ঝড় যার তান্ডবে ভেঙে গুড়িয়ে গেলো অভিক।
না না এ আমি কি বলছি? অভিক ভেঙে গুড়িয়ে যায় নি বরং সে আমাকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে। আমি কি এমন অপরাধ করেছি যার খেসারত আমাকে অভিককে বিয়ে করে দিতে হবে?
-চাচ্চু, তুমি কি ভাবে পারলে ওমন করে কথাগুলো বলতে?একটিবারও বুক কাপলো না তোমার। অভিক আমি তোকে কখনোই মাফ করবো না;কখনোই না।
বলেই হু হু করে কাঁদতে শুরু করলো হিয়া।
এতসব হয়ে গেলো কিছুটির খবর ঘূর্ণাক্ষরে পেলো না অভিক।অভিকের কি এমন অপরাধে সে আজ অপরাধী হিয়ার কাছে? শুধুই কি হিয়াকে ভালোবেসেছে বলে?
—————
কারো মৃদু কন্ঠের ডাকে ঘুম থেকে জাগ্রত হলো অভিক। বহুকষ্টে চোখ খুলতেই দেখতে পেলো ওর মা ওকে ডাকছে।জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখতে পেলো সকাল হয়ে গেছে।
এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলো তাই হয়তো ব্যাথা অনূভুত হয়নি কিন্তু এখন যেন সারা গায়ে ব্যাথাদের আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে।
বহুকষ্টে উঠে বসলো অভিক এবার খেয়াল করলো তার মা ছাড়াও এই রুমে আরো অনেকেই আছে,যেমনঃচাচ্চু(হিয়ার বাবা),চাচী (হিয়ার মা),ফুপি আর নিঝুম যে কিনা রুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। অভিক বুঝতে পারলো না এত সকালে সবাই কেন তার এসে উপস্থিত হলো। তাই ওর মা’কে বহুকষ্টে জিজ্ঞেস করলো,
-মা,সবাই আমার রুমে কিছু কি হয়েছে?
-না , অভিক কিছুই হয়নি। আসলে হিয়া আমাদের কিছু কথা বলবে তাই আমাদের সঙ্গে তুমিও ওর কথাগুলো শুনবে।কই হিয়া রুমে আয়?
বলেই রুমের ভিতর প্রবেশ করলেন অভিকের বাবা। আর উনার পিছু পিছু হিয়া এসে রুমে দাড়ালো।
অভিক একনজর তাকালো হিয়ার দিকে। আশ্চর্য,এই মেয়ের আবার কি হলো? কান্না করে চোখমুখ ফুলিয়ে রেখেছে আবার কি এমন কথা বলবে যে সবাইকে নিয়ে আমার রুমে এসে হাজির!
-হিয়া বলো তাহলে তোমার কি সিদ্ধান্ত এই বিয়ের ব্যাপারে?
-কিসের বিয়ের ব্যাপার চাচ্চু আমি বলেছি না ফুল নিঝুম ভাইয়াকে বিয়ে করতে পারবে না মানে পারবে না। তাহলে আজ আবার এই কথা কেন?
অভিক বেশ রেগে কথাগুলো গড়গড়িয়ে বলে ফেললো।
-আহ, অভিক একটু চুপ থাকো। হিয়া কি বলে আগে সেটা শুনো তারপর তোমার যা ইচ্ছা তাই বলো;
অভিকের মা বললেন।
-আসলে, চাচ্চু আমি রাজি অভিককে বিয়ে করতে।
-আলহামদুলিল্লাহ
সবাই বলে উঠলো শুধু নিঝুম আর ও মা বাদে।
আর অভিক সে ভাবছে আমি কি কোনো ভুলভাল শুনছি কানে, অভিককে বিয়ে করতে রাজি মানে? আমার সাথে ওর বিয়ে কিভাবে সম্ভব?
-অভিক, তোর কি মতামত? তুই হিয়াকে বিয়ে করতে রাজি আছিস?
-মানে, আমি বুঝতে পারছি না কি বলছো তোমরা?
-মানে হচ্ছে তোর সঙ্গে হিয়ার বিয়ে ঠিক করেছে বড়মামা আর ছোটমামা। হিয়া রাজি হয়েছে তোকে বিয়ে করতে এখন তুই কি রাজি আছিস হিয়াকে বিয়ে করতে এইটাই জিজ্ঞেস করছে ছোটমামা?
কথাগুলো বলেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো নোভা।
অভিকের মস্তিষ্কের নিউরনে যখন কথাগুলো পৌঁছালো ঠিক তখনই সে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো। পরক্ষনেই কি যেন ভাবতেই ওর খুশি মূহুর্তের মাঝে মিলিয়ে গেলো।
তারপর, চোখমুখ কঠিন রুপ করে বললো,
-ফুল আমাকে ঠিক কি কারণে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে বাবা? আমি তো জানি ও আমাকে কখনোই বিয়ে করতে রাজি হবে না। তাহলে হঠাৎ করেই কেন ও রাজি হলো?
#চলবে